#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#দ্বিতীয়_পর্ব
#সারিকা_হোসাইন
*********
কার্পাথিয়ান পর্বত সীমা থেকে সামান্য দূরে অবস্থিত উইলিয়াম সাম্রাজ্য।পোল্যান্ড এর জনবহুল এই গ্র্যাবো শহরেই প্রায় পাঁচশত বছর ধরে খুবই গর্বের সাথে রাজ্য পরিচালনার কাজ করে যাচ্ছেন উইলিয়াম জেনারেশন।সারা পোল্যান্ড জুড়ে এক প্রকার শান্ত ,নির্মল এবং ওয়ার্ল্ড হ্যাভেন হিসেবেই পরিচিত এই সাম্রাজ্য।সকল মানব সমাজ উইলিয়াম সাম্রাজ্যের অনুগত থাকায় অন্য কোনো শাসক এখানে কখনো দখল নিতে পারেনি।এমনকি সুষ্ঠু বিচারেও রয়েছে বিশাল সুখ্যাতি।
সারাদিনের ব্যাস্ত কাজ কর্ম শেশেষে সকলেই যখন ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় পুরো রাজ্য জুড়ে ডঙ্কা বেজে উঠলো
“সকলেই সাবধান ,রাজ্যে গুপ্ত ঘাতক ঢুকেছে”
বাতাসের বেগে পুরো রাজ্য জুড়ে মুহূর্তেই ফলাও হয়ে গেলো ভয়ঙ্কর খবর খানা।নিজেদের কাজ ফেলে শক্ত হাতে তলোয়ার সমেত জোড়ায় জোড়ায় প্রহরীরা রাজ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের দরজার সামনে এসে প্রতিরোধ প্রস্তুতি নিলো।
সারা পৃথিবী ধ্বসে যাক।নিজের জীবন দিয়ে হলেও রাজ পরিবারের সবাইকে রক্ষা করতে হবে এটাই একমাত্র পণ তাদের।
কেবলই নিজের শাসন কার্য শেষ করে শয়ন কক্ষে ফিরেছে রাজা উইলিয়াম সিগমুন্ড।আকস্মিক এমন খবরে বেশ চিন্তিত হলেন তিনি।আসে পাশে সেরকম কোনো বড় রাজ্য নেই যে তাকে আক্রমন করবে।এছাড়া দূর প্রদেশের শাসক দের সাথেও তার সম্পর্ক বেশ জোড়ালো।তার শাসন ব্যাবস্থায় সকল জনগন খুশি।
“তবে এ কিসের গুপ্তচর?
গুপ্ত চড়ের চিন্তার চাইতেও একমাত্র কন্যার চিন্তায় আতঙ্কে হৃদপিন্ড লাফিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো সিগমুন্ডের।ইদানিং চর মারফত প্রায়শই কুমারী মেয়ে নিখোঁজের গোপন ভয়াবহ লোমহর্ষক ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে।যদিও তার রাজ্য থেকে এখনো কোনো কুমারী কন্যা নিখোঁজ হয়নি।তবুও কারোর প্রতি বিন্দু মাত্র ভরসা নেই।যখন তখন যা খুশি হয়ে যেতে পারে।
উইলিয়াম সিগমুন্ড নিজের কাজ ফেলে দেয়ালে আটকানো সোর্ড হ্যাঙ্গার থেকে নিজের ধারালো বংশীয় পরম্পরার তলোয়ার খানা হাতে নিয়ে ছুটে চললেন মেয়ের কক্ষের পানে।
***********
আগত তীর থেকে ফুল আর চিঠি দুই ই নিজের হাতে নিয়ে আনমনে নানান ভাবনা ভাবতে ভাবতে নিজ কক্ষে প্রবেশ করলো ম্যাপল।
ফুল গুলো দেখে মনে হচ্ছে কেবলই কুড়ি থেকে প্রস্ফুটিত হয়েছে।যেমন মাতাল করা সুঘ্রাণ সেরকম সৌন্দর্যে ভরপুর।আর রঙিন চিঠিটা?
চিঠি টায় কি আছে ম্যাপল তা জানেনা।সে শুধু জানে চিঠি টাতে অনন্য এক সম্মোহন আছে।যা তাকে বার বার পড়তে ব্যাকুল করে তুলছে।
“তুমি কে তোমাকে আমি চিনিও না জানিও না।তবে তোমার এই বার্তা আমার মন কেড়েছে।আর প্রাপ্ত ফুল গুলো……
কথাটি ভেবে সামান্য মুচকি হাসলো ম্যাপল।এরপর দুই হাতে ফুলগুলোকে জড়িয়ে গভীর সুঘ্রাণ টেনে লাজুক ভঙ্গিতে বলে উঠলো
“আমার জীবনের প্রাপ্ত সব চাইতে দামি উপহার এটা।”
হঠাৎই খুট করে শব্দ হয়ে খোলে গেলো ম্যাপলের কক্ষের বিশাল দরজা খানা।আকস্মিক শব্দে নিজের বিশাল ঘের যুক্ত গাউনের ভাঁজে ফুলের তোড়া আর চিঠি লুকিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
“কি ব্যাপার ম্যাপল তুমি এখনো ঘুমাও নি ?আর এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?
কথাটি বলতে বলতেই উইলিয়াম সিগমুন্ড ম্যাপল এর কক্ষের চারপাশে নজর বুলিয়ে সতর্ক ভঙ্গিতে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেলেন।
এই দৃশ্য দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে পিপাসায় মরিয়া হয়ে উঠলো কিশোরী ম্যাপল ।
“বেলকনিতে কেনো যাচ্ছেন বাবা?
মেয়ের প্রশ্নের তোয়াক্কা না করেই বেলকনিতে এসে চারপাশে নজর বুলিয়ে স্বাভাবিক বদনে মেয়ের সামনে এসে দাড়ালেন তিনি।
নিজের বাবার মুখে কোনো প্রকার সন্দেহের ছাপ দেখতে না পেয়ে বেশ অবাক হলো ম্যাপল।
আগ্রহ ধরে রাখতে না পেরে নিজেও বেলকনিতে নজর দিয়ে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেলো।
বেলকনিতে যেই তীরখানা কিছুক্ষন আগে এসে শক্ত হয়ে গেঁথে ছিলো সেটা এখন একদম গায়েব সেই সাথে জায়গাটাতে পর্যন্ত কোনো দাগ নেই।
তীর টা লুকাতে ম্যাপল কম টানা হ্যাচড়া করেনি।তুলতুলে নরম দুই হাত তীরের শক্তিতে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে তবুও ম্যাপল ব্যার্থ হয়েছে।
“আর এদিকে আপনা আপনি তীর খানা গেলো কোথায়?
নিজের চরম অবাকতা চাপিয়ে রাখতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে ম্যাপল ডেকে উঠলো
“বাবা মশাই!
**********
“করছেন কি এসব রাজকুমার?কেউ দেখে নিলে যে বড্ড কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।আর ওই রাজবাড়ীতেই কিন্তু আপনার মৃ*ত্যু*ফাঁদ!”
আলফ্রেড এর প্যান প্যানানি কানে যেতেই বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে মুখ কালো করে মাছি মারার ভঙ্গিতে লিও বলে উঠলো
“আহ আলফ্রেড!তুমি বড্ড বেশি কথা বলো।মৃত্যুর কাছে হার মেনে হাজার বছরের ভালোবাসা ভুলে যাবার মতো কাপুরুষ আমি নই এটা তুমি খুব ভালো করেই জানো।তবে বার বার কিসের এতো সতর্ক বার্তা?
লিও এর কঠিন কন্ঠের প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারলো না আলফ্রেড।লিও এর জন্য তার চিন্তা হওয়া অস্বাভাবিক কিছুই না।কারো সাথে দুদিন এক টানা সময় কাটালেই তার প্রতি একটা মায়া জন্মে।সেখানে নিরানব্বই টি বছর সাধারণ কোনো কথা নয়।মায়া আর ভালোবাসা দুটোই যে স্থায়ী ভাবে বসে গিয়েছে!
“আমি আপনার কঠিন মৃত্যু যন্ত্রনা নিজ চোখে দেখেছি রাজকুমার!দেহ আছে প্রাণ নেই এর চাইতে কঠিন বিষয় পৃথিবীতে দ্বিতীয় কি আছে বলতে পারেন?আমি জানিনা এই এক হাজার বছরে কতবার আপনার মৃ*ত্যু হয়েছে।
কথাটি বলেই মাথা নিচু করে দুই হাত বুকে ভাঁজ করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলো আলফ্রেড।রাজকুমারের মৃ*ত্যু হবে এটা ভাবলেই তার কঠিন কড়া পড়া হৃদয় দগ্ধ যন্ত্রনায় মুষড়ে উঠে।পুরো পৃথিবী ধ্বংস হোক।আলফ্রেডের নিজেরও কঠিন যন্ত্রনা দায়ক মৃ*ত্যু হোক ।মৃত্যুর মিছিলে ভরে যাক পুরো বিশ্ব।তবুও বেঁচে থাকুক রাজকুমার জর্জ লিও।
“এই এক হাজার বছরের অভিশপ্ত জীবনে আমার তিনশত তেত্রিশ বার মৃ*ত্যু হয়েছে আলফ্রেড।আর প্রত্যেকবার আমি কঠিন থেকে কঠিন তম মৃ*তু যন্ত্রনা পেয়েছি।কিন্তু কোনো মৃ*ত্যু যন্ত্রনাই আমার প্রিয়তমা কে হারানোর যন্ত্রণার সমকক্ষ হতে পারেনি।আগ্নেয় গিরির অঙ্গার এর ন্যায় যেই যন্ত্রনা প্রতিনিয়ত আমাকে কষ্ট দিচ্ছে এর সামনে মৃত্যু যন্ত্রনা তো কিছুঁই নয় আলফ্রেড।
কথা গুলো বলতে বলতে লিও এর গলা ধরে এলো।কালো কোনো শক্তি বল তার শক্ত হাতের থাবায় লিও এর কন্ঠ নালি চেপে ধরলো যেনো।বেদনা দায়ক গলা চিড়ে আর কোনো স্বর বের করতে সক্ষম হলো না লিও।
লিও এর জীবন মরনের সমস্ত হিসেব নিকেশ আলফ্রেড এর নখ দর্পণে।ভালোবাসার কঠিন অনলে ঝাঁপ দিয়ে এই মৃ*ত্যুকে আলিঙ্গন করেছে রাজকুমার জর্জ লিও।ভ্যাম্পায়ার দেবতা এম্ব্রজিও এর আদেশ অমান্য করে সাধারণ মানুষকে ভালোবাসার অপরাধে নিষ্ঠুর দেবতা তাকে অভিশপ্ত করেছে।সেই কঠিন অভিশাপের বাণী গুলো ভাবলেই ভয়ে গা শিউরে ওঠে আলফ্রেড এর।সেই লাস্ট ব্লাড মুন কবে আসবে তা আলফ্রেড জানে না।শুধু আলফ্রেড না স্বয়ং ভ্যাম্পায়ার রাজা রানী ও যদি সেই দিনক্ষণ জানতেন তবে অবশ্যই প্রানপ্রিয় পুত্রের জীবন বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠতেন।এতো এতো দেব দেবতা আর তান্ত্রিক ঘেঁটে শুধু এতো টুকুন জানা গিয়েছে রাজকুমারী ম্যাপল জুন ই শেষ রমণী।এই রাজকুমারীর মৃ*ত্যু হলে আর কোনোদিন ও লিও এর মানবী হৃদ্যেশ্বরী ক্যারোলিন এর পুনর্জন্ম হবে না।পুনর্জন্ম না হলে এখানেই থেমে যাবে ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স জর্জ লিও এর প্রাণ বায়ু! তাই যেকোনো মূল্যে রাজকুমারী ম্যাপল কে লাস্ট ব্লাড মুন পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।কারন আগের সবাই ব্লাড মুনের আগেই নৃশংস ভাবে প্রাণ হারিয়েছে।
কথাগুলো অবনত মস্তকে ভাবতে ভাবতে লিও এর দিকে চোখ তুলে তাকালো আলফ্রেড।সহসাই লিও এর জলন্ত কয়লার ন্যায় টকটকে চোখ দেখে ভয়ে কেঁপে উঠলো আলফ্রেড।ব্যতিব্যস্ত হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই লিও এর রক্ত জবার ন্যায় অত্যাধিক লাল ঠোঁট গলিয়ে বেরিয়ে এলো দন্ত শলাকা।
“রাজ প্রাসাদে কে প্রবেশ করেছে খুজ নাও আলফ্রেড”
গর্জে ওঠা কন্ঠে হুংকার ছেড়ে উঠলো লিও।আদেশ আজ্ঞা বহ করে নিজের গভীর দূরদর্শী নজরে অজ্ঞাত ব্যাক্তির সন্ধান চালাতে লাগলো আলফ্রেড ।নিমিষেই তাকে খুঁজে পেয়ে রাগে থর থর করে কাঁপতে লাগলো আলফ্রেড।
“কে সেই সাহসী হৃদয়ের শয়তান?একবার তার নাম বলো বুকের পাটা খুবলে কলিজা বের করে আনবো।”
দাঁতে দাঁত পিষে কথা গুলো বলে আলফ্রেড এর উত্তরের প্রতীক্ষায় উন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো লিও।
“জ্যাস্পার এসেছে রাজকুমার”
গম্ভীর মোটা কন্ঠে কথাটি বলে হাতের জাদু শক্তি বলে একটি আগুনের বলয় তৈরি করলো আলফ্রেড।সেই আগুনের কমলা রঙা লেলিহান শিখায় জ্যাস্পার এর চেহারা স্পষ্ট।
নিজের ফেটে পড়া ক্রোধ কোনো মতে নিয়ন্ত্রণ করে আলফ্রেড এর উদ্দেশ্যে লিও শুধালো
“ওই নেকড়ের এখানে কি কাজ?
“রাজ কুমারীর ছিন্নভিন্ন দেহ”
#চলবে
#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_৩
#সারিকা_হোসাইন
*********
রাতের দ্বিতীয় প্রহর।
নিগুড় নিস্তব্ধ শুনশান অন্ধকার ঘুটঘুটে কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাত।চারিধারে ধুম্র জলের ন্যায় ঘন কুশায়া প্রভাব বিস্তার করেছে।কুয়াশার এমন বেষ্টনীর কারনে এক হাত দূরের জিনিস পর্যন্ত দৃষ্টি গত হচ্ছে না।মাঝে মাঝেই অদূরের ঘন জঙ্গল থেকে হুটহাট কেমন অদ্ভুত সব পশুপাখির আওয়াজ কর্ণকুহরে এসে ধাক্কা খাচ্ছে।সেই আওয়াজে কেমন যেনো একটা গা ছমছমে ভাব বিরাজমান।আবার থেকে থেকেই ওক গাছের খাঁজ কাটা পাতার ঝোপে কি যেনো ছড়ছড় শব্দের উৎপত্তি ঘটাচ্ছে।
চারপাশে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলাতেই হঠাৎই মালবেরি গাছের বড় ঝোপ টায় কিসের যেনো গড়গড় আওয়াজ হলো।সেই আওয়াজে সেনাপতি এইডেন এর কান সজাগ হলো।সেই সাথে সতর্ক হলো প্রতিটা নিউরন।হাতের ইশারায় সৈন্য দের থামতে বলে কোমরের খাবলি থেকে বড় তলোয়ার খানা বের করে মশাল হাতে একাই চললেন ঝোপ অভিমুখে।
এইডেন এর উপর কথা বলার দুঃসাহস কোনো সেনার নেই।এইডেন এক হাতে একশত পালোয়ান এর ধর থেকে মাথা আলাদা করতে পারার বিশেষ কৌশল অর্জন করেছে।রাজ্যের যে কোনো সমস্যা এইডেন একাই সামাল দিতে পারে।সৈন্যদের এইডেন এর প্রতি সেই বিশ্বাস আছে।কিন্তু আজ যেনো সবকিছুই কেমন ভয়ংকর অদ্ভুত।তার মধ্যে চারপাশ থেকে আসা ভয়ংকর সব খবর সৈন্যদের মনে অজানা আতঙ্কের সৃষ্টি করলো।
মশাল হাতে দাঁড়ানো বাহিনীরা এইডেন এর আসন্ন ঝুঁকিতে অস্থির হয়ে উঠলো।তবুও কিছু বলার মতো সাহসে কুলালো না।শেষমেশ নিজের উদ্বিগ্নতা ধরে রাখতে না পেরে একজন সেনা তলোয়ার উঁচিয়ে বলে উঠলো
“জেনারেল এইডেন আমরা এগুতে চাই,দয়া করে আমাদের অনুমতি দিন।চারপাশের অদ্ভুত পরিস্থিতি আমাদের কারোর ই ভালো ঠেকছে না।
এইডেন সেনা সদস্যের কথা কানে না নিয়ে হাতে থাকা মশাল দিয়ে সজোড়ে ঝোপটিতে বাড়ি মারলো।বাড়ির আঘাতে ঝোপ নড়েচড়ে উঠতেই মাঝারি উচ্চতার একটি হিংস্র বন্য শূকর বিশ্রী হুংকার ছেড়ে এইডেন এর উপর ঝাপিয়ে পড়তে চাইলো।
শূকর টি দেখেই সেনা সদস্য রা দৌড়ে ঝোপের চারপাশে ঘিরে ফেললো।
এইডেন এর উপস্থিত বুদ্ধির প্রভাবে অল্পের জন্য এইডেন এর মুখে শু*য়ো*র টি তার চৌখানে খুরের আঘাত দিতে ব্যার্থ হলো।
শুয়োর টিকে কুপোকাত করতে সকলেই আগুন ওয়ালা মশাল নিয়ে ভয় দেখাতে চাইলো।কিন্তু ভয়ের পরিবর্তে শূকর দ্বিগুন হিংস্র আচরণ করতে লাগলো।তার হিংস্রাত্বক নমুনা দেখে মনে হচ্ছে এইডেন এর উষ্ণ কলিজাই পারবে এইমুহূর্তে তাকে শীতল করতে।
শুয়োর এর অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়ি এইডেন এই মস্তিষ্কে ক্রোধ চাপিয়ে দিলো।নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে নিজের ধারালো তলোয়ার খানা উপরে উচালো। মশালের ঝকঝকে আলোয় এইডেন এর কাঁচের মতো চকচকে তলোয়ার টি গায়ে হিম ধরালো।কেউ কিছু বুঝে উঠবার আগেই এইডেন তার হাতে থাকা অতীব ধারালো তলোয়ার দিয়ে এক কোপে দ্বিখন্ডিত করে ফেললো শূকর টিকে।মুন্ডু হীন শুয়োর এর খন্ডিত দেহ ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লো সেই সাথে র*ক্তে ভিজে উঠলো শিশির ভেজা ঘাস আর এইডেন এর শরীর।
কিছুক্ষন ছটফট করে শুঁ*য়ো*র টি প্রাণ ত্যাগ করে নিথর হয়ে পড়ে রইলো।
শুয়োর এর নিষ্প্রাণ দেহের পানে তাকিয়ে এইডেন তার সহযোগী এমিল কে বলে উঠলো
“দুর্গে নিয়ে চলো একে।রাতে ভালো ভোজন হবে”!
এমিল নিজের বলিষ্ঠ হাতে শুয়োরটির চার পা মুড়িয়ে ধরে কাঁধে তুলে দুর্গ অভিমুখে যেতে যেতে বলে উঠলো
“খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে”
এমিল চলে যেতেই বাকি সৈনিক দের নিয়ে প্রাসাদের চারপাশে বেশ কয়েকবার চক্কর কাটলো এইডেন।কিন্তু অত্যন্ত হতাশা জনক সংবাদ হলো রাতের দ্বিপ্রহর পেরিয়ে যাবার পরেও সকল প্রহরী আর সেনাপতি মিলে সারা রাজ্য ঘুরেও কোনো সন্দেহ জনক কিছুর খুজ পেলো না।মিথ্যে সংবাদ ভেবে সকলেই স্বস্তির শ্বাস ফেলে নিজ নিজ দায়িত্বে ফিরে গেলো এবং এইডেন প্রাসাদ অভিমুখে চললো ।
“সম্রাট সিগমুন্ড কে সকল তথ্য উপস্থাপন করা জরুরি”
********
এইডেন এর কাছে সবিস্তারে সকল ঘটনা শুনেও সিগমুন্ড এর ভাবনা কমছে না।কিছুতেই যেনো দুশ্চিন্তা সরে অক্ষিপটে ঘুম ধরা দিচ্ছে না।
“এত গুলো যুগ পেরিয়ে যাবার পর আজ ই কেনো হঠাৎ গুপ্ত ঘাতকের সংবাদ চার পাশে হাওয়ার বেগে ছড়ালো?”
সারা ঘরময় পায়চারি করে চিন্তা ভাবনার কোনো কুলকিনারা না পেয়ে বাতি দানে থাকা আলোকিত প্রজ্জ্বলিত মোমবাতি নিভিয়ে অন্ধকারে মিশে গেলেন সিগমুন্ড।
“অন্ধকার হচ্ছে একমাত্র মাধ্যম যেখানে কঠিন রহস্যের উন্মোচন ঘটে”
*********
গায়ে ভারী ব্ল্যাঙকেট জড়িয়ে গভীর নিদ্রায় পাড়ি জমিয়েছে ম্যাপল।হাতে তার এখনো কালো গোলাপের সেই তোড়া আর চিঠি ধরা।এগুলো নিয়েই বোধ হয় কল্পনার রাজ্যে ভাসতে ভাসতে নিদ্রা গিয়েছে।
চলছে রাতের তৃতীয় প্রহর।কুয়াশায় ঝাপসা চাঁদের ক্ষীন আলো ম্যাপলের কক্ষের জানালা ডিঙিয়ে মার্বেল পাথরের মোজাইক করা মেঝেটিতে গড়াগড়ি খাচ্চে।জানালার ভারী পর্দা গুলো টেনে একপাশে সাটানো।বেলকনির দরজা খানা অর্ধ খোলা।
হঠাৎই অদ্ভুত ভয়ানক শব্দে ম্যাপল কিছুটা তন্দ্রাচ্যুত হলো।কিঞ্চিৎ অক্ষি পল্লব মেলে মনের ভুল বা দুঃস্বপ্ন ভেবে আবার চোখ বুঝলো।কিন্তু এবারের শব্দটা আরো বিকট।
শব্দ টা কিসের ম্যাপল তা জানেন।এমন ভয়ানক শব্দ সে আগে কখনো শুনেও নি।তবুও তার মস্তিষ্ক অনুধাবন করলো এটা কোনো পশুর শব্দ।
শব্দের সাথে সাথেই পুরো কক্ষ জুড়ে বিশ্রী গন্ধের উপস্থিতি টের পাওয়া গেলো।সেই বিশ্রী উটকো গন্ধে নিমিষেই পেট গুলিয়ে উঠলো ম্যাপলের।আকস্মিক এহেন পরিস্থিতিতে ভয়ে জড়সড় হলো ম্যাপল।গলা উঁচিয়ে কাউকে ডাকার মতো সৎসাহস হলো না।আর এই গভীর রাতে তার মিহি কন্ঠের স্বর ভারী দরজা আর দেয়াল ভেদ করে কারোর ই কর্ণকুহরে প্রবেশ করবে না।
হঠাৎই নিজের মৃ*ত মায়ের মায়াভরা মুখ খানা মনে করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ম্যাপল।
“আমি ভয় পাচ্ছি মা।আমি অনেক ভয় পাচ্ছি।
মনে মনে কথা গুলো ভেবে নিজেকে নিজেই বুক চাপড়ে সাহস জোগালো।ধীরে ধীরে বালিশের নীচে থাকা ছোট প্রতিরক্ষা চাকুটি হাতে নিয়ে শোয়া থেকে শব্দ হীন উঠে বসলো ম্যাপল।এরপর সতর্ক নজর বুলালো পুরো কক্ষ ময়। চাঁদের অল্প আলোয় অদ্ভুত এক প্রাণীর ছায়া মিললো সেখানে।
ধীরে ধীরে জন্তুটির ভয়ানক গরগর শব্দ শ্রবনেন্দ্রিয়ে আঘাত হানছে।সেই শব্দে পুরো কক্ষ যেনো দুলে দুলে উঠছে সেই সাথে ম্যাপলের বিছানা।
ছোট কিশোরী ম্যাপল এহেন শব্দে পুরোপুরি কাবু হলো।যতটুকু সাহস মনে সঞ্চার হয়েছিলো শব্দের মাত্রা বাড়তে থাকার সাথে সাথে তা মিইয়ে গেলো।
বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে তার আগেই কুণ্ডুলি পাকানো কালো ছায়া যেনো সব কিছু ভেঙে চূড়ে আছড়ে পড়লো ম্যাপলের কক্ষে।
কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই শো শো শব্দে আবার বাইরে বেরিয়ে গেলো সেই ছায়া।মুহূর্তের ব্যাবধানে কক্ষ হলো নীরব নিস্তব্ধ।নেই কোনো গরগর শব্দের অস্তিত্ব সেই সাথে ভারী বাতাসের শো শো আওয়াজ।নিমিষের ব্যাবধানে এমন ভয়ানক ঘটনায় সত্যি সত্যি বুক ভেঙে কান্না পেলো ম্যাপলের।রূপকথার গল্পে অনেক ঘোস্ট স্টোরি শুনা হয়েছে।কিন্তু নিজ চোখে কখনো দেখা হয়নি।
“তবে কি আমি ভুতের পাল্লায় পড়েছি?
আর ভাবতে পারেনা ম্যাপল।দ্রুত হাতে ভারী কম্বলে নিজের পুরো শরীর লুকিয়ে পাঠ করতে থাকে চার্চের ফাদারের শিখিয়ে দেয়া নানান আত্মরক্ষার মন্ত্র।
*******
প্রাসাদের বাইরে প্রাসাদ থেকে অনেক দূরে কার্পাথিয়ান জঙ্গলে বার্চ আর পাইন গাছের মাঝামাঝি জায়গায় সজোড়ে নেকড়ে জ্যাস্পার কে ছুড়ে মারলো লিও।
রাগে তার সমস্ত শরীর থর থর করে কাঁপছে।চোখ দুটোও অস্বাভাবিক লাল।মনে হচ্ছে লিও যেদিকে দৃষ্টি দেবে সেদিকেই আগুন লেগে কয়লা হয়ে যাবে।
বার্চ গাছের মোটা গুড়িতে আছাড় খেয়ে ককিয়ে উঠলো জ্যাস্পার।সেই সাথে শরীর ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
জ্যাস্পার উঠে দাঁড়ানোর আগেই ঝড়ের বেগে লিও দ্বিতীয় আঘাত করলো।
এবারের আঘাতে বেশ কাবু হলো জ্যাস্পার।নিজের জম কে সামনে দেখতে পেয়ে চতুর জ্যাস্পার মানুষের রূপে ফিরে এলো।
“আমার সাথে তোমার কিসের শত্রুতা লিও?এসো শত্রুতা ভুলে যাই।হাত মেলাই আমরা”!
ঠোঁটের কোনার ঝরে যাওয়া র*ক্ত ধারা হাত দিয়ে মুছতে মুছতে কথাটি বলে উঠলো জ্যাস্পার।
জ্যাস্পার বিশ্রী মুখশ্রী দেখেই পুনরায় ক্রোধান্বিত হলো লিও।
ধুলো উড়িয়ে হাওয়ায় মিশে সেকেন্ডের ব্যাবধানে জ্যাস্পার এর কাছে এসে লম্বা কালো নখ যুক্ত হতে জ্যাস্পার এর গলা চেপে ধরলো লিও।
“কার সাথে হাত মেলাতে চাইছিস তুই?একটা নগন্য পশু হয়ে ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স কে তোর দলে আহ্বান করছিস?যেখানে আমি সব কিছুর উর্ধে?
গর্জে উঠা ভয়ানক কন্ঠে আগুন লাল চোখে কথাটি বলেই শূন্যে ছুড়ে মারতে উদ্দত হলো জ্যাস্পার কে লিও।
চতুর জ্যাস্পার মুহূর্তেই নেকড়ের রূপ নিয়ে নিজের চৌখানে খুরের ধারালো নখ দিয়ে লিও এর গালে সামান্য আঘাত হানলো।
এবার যেনো চরম অপরাধটি ই করে ফেললো জ্যাস্পার।
লিও এর আভা যুক্ত ধবধবে ফর্সা গাল ছিলে নীল র*ক্তের ধারা প্রবাহিত হলো।
হাতের সহিত গাল ছুঁয়ে হো হো করে হেসে উঠলো লিও।সেই হাসির শব্দে কার্পাথিয়ান জঙ্গলের সকল নিশাচর প্রাণী দৌড়ে পালালো।গাছে গাছে ঝুলে থাকা বাদুর বিশাল কালো ডানা মেলে লিও এর মাথার উপর বিশ্রী শব্দ তুলে চক্রাকারে ঘুরতে লাগলো।
নিজের হিলিং পাওয়ার কাজে লাগিয়ে মুহূর্তেই সরিয়ে তুললো সেই ক্ষত।এরপর দ্বিগুন শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো জ্যাস্পার এর উপর।লিও এর শক্তির কাছে টিকতে না পেরে পালিয়ে যেতে চাইলো জ্যাস্পার।
কিন্তু সকল পথ যেনো আজ রুদ্ধ।
“আমার থেকে কোথায় পালাবি জ্যাস্পার?আমাকে দেখা মানে সাক্ষাৎ মৃ*ত্যুকে বরণ করে নেয়া।তুই কি এখনো বেঁচে থাকার সুখময় স্বপ্ন দেখছিস?
নেকড়ে রুপি জ্যাস্পার এক পা দু পা করে পিছাতে থাকলো শুধু।কিন্তু শেষ রক্ষা আর করতে পারলো না।জ্যাস্পার এর চারপাশে অসংখ্য লিও যেনো ঘুরে বেড়াচ্ছে।কোনটা আসল লিও আর কোনটা মায়া ঠাহর করতে পারলো না জ্যাস্পার।
নির্দয় লিও জ্যাস্পার কে শূন্যে তুলে দুই হাতের শক্তিতে চোয়াল হা করিয়ে টেনে ধরলো।
এরপর গাছের সাথে সজোড়ে আঘাত করে নীচে ফেলে টেনে হিচড়ে ছিড়ে ফেললো জ্যাস্পার এর পিছনের পা।ধারালো চোখা নখের সাহায্যে তুলে আনলো সবুজ মনি যুক্ত চোখ জোড়া।
“তোকে নৃশংস ভাবে মা*র*তে আমার মোটেও খারাপ লাগছে না।বরং আমি আনন্দিত হচ্ছি।আমার প্রিয়তমার সাথেও তো তুই ঠিক এই আচরণ টাই করতে চেয়ে ছিলিস তাই না?
আহত জ্যসপার কোনো শব্দ করতে পারে না।অসহনীয় যন্ত্রনায় সমস্ত শরীর বেশ কাবু।সারা শরীরের হাড় গুলো বুঝি ঝুরঝুরে হয়ে রয়েছে।দেহে অল্প প্রানের সঞ্চার ধিকিধিকি চলছে।এটাও মেনে নিলো না লিও।
নিজের লম্বা লম্বা আঙ্গুলি চালিয়ে দিলো জ্যাস্পার এর বুক বরাবর।সেই সাথে বুকের খাঁচা ভেদ করে বের করে আনলো উষ্ণ রক্তাক্ত কলিজা খানা।
এবার যেনো জ্যাস্পার এর সকল শক্তি ফুরিয়ে এলো।অন্ধ চোখ জোড়া দিয়েও আর লিও এর হিংস্র চেহারা খানা দেখার ভাগ্য হলো না।মিনিট দুয়েক ছটফট করে নিথর হয়ে শীতল মাটিতে পড়ে রইলো সে।
জ্যাস্পার এর প্রাণ ফুরিয়ে যেতেই বাদুর গুলো তাদের বিশ্রী উল্লাস থামিয়ে পাখা ঝাপটিয়ে উড়ে চলে গেলো।
শান্ত হলো লিও।
জ্যাস্পার এর নিথর দেহের পানে তাকিয়ে শ্লেষত্বক হাসলো।
“এবার যে আমার প্রাণেশ্বরীর দিকে হাত বাড়াবে তাদের প্রত্যেকের একই হাল হবে”
আর এক মুহূর্ত এখানে দাঁড়াতে চাইলো না লিও।কঠিন কন্ঠে ডেকে উঠলো
“আলফ্রেড?
সেবক আলফ্রেড অদূরেই দাঁড়ানো ছিলো।মালিকের হুকুম পাওয়া মাত্র মাথা নিচু করে সামনে এসে দাড়ালো।
“আদেশ করুন রাজকুমার”
“একে জ্বা*লি*য়ে দিয়ে অবশিষ্ট ছাই মাটিতে পুঁতে দাও”আমাকে একবার প্রিয়তমা ম্যাপল এর কাছে যেতে হবে।সে যে বড্ড ভীতু আলফ্রেড”
#চলবে