#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_১৭
#সারিকা_হোসাইন
গহীন অরণ্যের অন্ধকার কেটে গিয়ে নরম ঝলমলে আলোর হাতছানি।চারপাশ থেকে সমধুর পাখির সুর ভেসে আসছে।মনে জমানো ভয় গুলো যেনো নিমিষেই বিদেয় নিয়েছে।ভাগ্য দেবতার কুঁড়ে ঘর পরিত্যাগ করার আগে জো কে নির্দেশ করে হ্যাভেন দৃঢ় কন্ঠে বলে উঠলো
“সে আমার সহযাত্রী।আমরা এখানে মায়া হরিণ শিকারে এসেছিলাম।বাকি সব ঘটনা সম্পর্কেই আপনি অবগত।বাড়িতে তার অন্ধ মা আছে।তাকে একা কিভাবে ছাড়ি?
দেবতা হ্যাভেন এর মনের কথা বুঝতে পেরে জো এর দিকে হাত বাড়িয়ে একটা ছোট রঙিন পাখি দিয়ে বলে উঠলো
“এই পাখি তোমাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেবে আর বাড়িতে গিয়ে দেখবে তোমার মা ঠিক পূর্বের ন্যয় চোখে দেখতে পাচ্ছে”
ভাগ্য দেবতা অ্যাপোলোর প্রতি মাথা নিচু করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পাখিটি গ্রহণ হ্যাভেন এর থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাড়ি অভিমুখে যাত্রা শুরু করলো জো।জো আর হ্যাভেনের বিদায়ে তপ্ত শ্বাস ছাড়লেন দেবতা।এরপর মনে মনে বলে উঠলেন
“আজ থেকে আমারও মুক্তি।প্রতিশ্রুতি বড়োই ভয়ংকর দায়িত্ব।এই দায়িত্ব আমাকে পালন করতেই হতো।পবিত্র আত্মার কাছে বরাবর ই আমি প্রতিজ্ঞা বদ্ধ।
******
হাতের ছোট পুটলি আর স্বর্গীয় আপেল দুটো নিয়ে হ্যাভেন পুনরায় ছুটে চললো ফ্লাকি পর্বতের ভ্যাম্পায়ার প্রাসাদের দিকে।যুবরাজ লিও কে নিজের পরিচয় দিয়ে খুঁজে বের করতে হবে শেহজাদী ক্যারোলিন এর পুনর্জন্ম।তার হাতে আপেল দুটো আর এই পুটলি টা বুঝিয়ে দিতে পারলেই অর্ধেক দায়িত্ব সম্পন্ন হবে।
পথ চলতে চলতে নিজের অনাথ প্রিয়তমার কথা মনে পড়তেই বিষাদের মেঘ এসে ভর করলো হ্যাভেনের নরম হৃদয়ে।।প্রেয়সীর নির্মল ফ্যাকাশে মুখশ্রী মনে পড়তেই দুই চোখ গড়িয়ে ঝরে পড়লো নোনা জলের ধারা।
“জানিনা বেঁচে ফিরতে পারবো কি না।আর আমাদের দেখা হবে কিনা!কিন্তু আমি তোমাকে হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে ভালোবাসি প্রিয়তমা।সৃষ্টিকর্তার কাছে খুব করে চাইবো ফের আমাদের দেখা হোক।তোমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চাই আমি।
নিজের মনের বিষাদ কাটিয়ে পূর্ব জন্মের বন্ধুর প্রেম পরিণতি ঘটানোর খুশিতে মনের উৎফুল্ল শক্তিতে পথ চলতে লাগলো হ্যাভেন।আজ যেনো তার পায়ে ঢের জোর।নিমিষেই যেনো পথের দূরত্ব কমে আসছে।
সারাদিনের পথ চলতে চলতে বিকেল গড়ানোর একটু পর পর সেই পতিতালয় এ ফিরতে সক্ষম হলো হ্যাভেন।চারদিকে যেনো বিশ্ৰী উল্লাসে মেতে রয়েছে সবাই।কারো দিকে কারোর ধ্যান নেই।অর্ধ উলঙ্গ মেয়ে গুলো বিশ্ৰী ইশারায় ডেকে চলেছে হ্যাভেন কে।শরাব আফিম আর কোকেইন এর গন্ধে চারপাশ উটকো গন্ধে ছেয়ে আছে।কিন্তু হ্যাভেনের এসবে মাথা ব্যাথা নেই।হ্যাভেনের দুই চোখ চাতকের মতো খুঁজে চলেছে সেই কচুয়ান কে।হ্যাভেনের ধারণা এখানেই কোথাও একটা রয়েছে সেই কচুয়ান।
চার পাশের দুনিয়াবী নরক ঠেলে শরাবের দোকানের নিকট এসে দাড়ালো হ্যাভেন।শকুনি চোখে নজর বুলাতেই চোখের সামনে ধরা দিলো সেই কচুয়ান।দোকানের কোনার এক আধ ভাঙা টেবিলে বসে শরাব গিলছে আর ঝিমুচ্ছে।কচুয়ান কে দেখতে পেয়ে খুশিতে চকচক করে উঠলো হ্যাভেনের নীল চোখ জোড়া।মুখে তৃপ্তির হাসি টেনে দ্রুত পদে উপস্থিত হলো সেই টেবিলটার কাছে।
ইতোমধ্যে কচুয়ান মাথার ভর ছেড়ে দিয়ে উপুড় হয়ে দুই হাতের বাহুতে মুখ গুজে ঢলে পড়েছে।
কচুয়ানের কাছে দাঁড়িয়ে হ্যাভেন আভিজাত্য ভরা কন্ঠে বলে উঠলো
“হেনরির রাজ প্রাসাদে নিয়ে চলো আমাকে।যুবরাজ লিও এর সাথে জরুরি সাক্ষাৎ আছে আমার”
লিও এর নাম শুনতে পেতেই ধরফড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো কচুয়ান।শরীরে তার এক বিন্দু বল অবশিষ্ট নেই।সামনে দাঁড়ানো যুবকের চেহারা দেখার চেষ্টা করলো নিভু নিভু দুই অক্ষি দিয়ে।কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হলো।শরীর এক জায়গায় স্থির থাকছে না।তবুও জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠে শুধালো
“ক ক ক কে তুমি?
হ্যাভেন বুক ফুলিয়ে মুখে বাঁকা হাসি টেনে গাম্ভীর্য ভরা কন্ঠে বলে উঠলো
“শেহজাদী ক্যারোলিন এর বন্ধু আমি।
নেশাক্ত কচুয়ান কি ভাবলো কে জানে?টেবিলের উপর চামড়ার থলে থেকে ঢকঢক করে পানি খেয়ে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে মাথা নিচু করে বাধ্য দাসের ন্যায় বলে উঠলো
“অপরাধ মার্জনা করবেন।চলুন আমার সাথে।
কচুয়ান কে অনুসরণ করে ফিটনের দিকে এগিয়ে গেলো হ্যাভেন।আজ থেকে তার অনেক দায়িত্ব।সঠিক রূপে সকল দায়িত্ব পূরণ করতে পারলে তবেই মিলবে স্বস্তি।
মুহূর্তেই কচুয়ান নিজের আসনে বসে চাবুকাঘাত করলো ঘোড়া দুটির কেস যুক্ত পিঠে।চি চি রবে সামনের দুই পা উঁচু করে নিজেদের প্রস্তুতি নিলো সাদা কালো ঘোড়া দুটি।এরপর টগবগিয়ে দৌড়াতে লাগলো নিজের গন্তব্যে।
********
ধরনীতে অন্ধকার ঘনিয়েছে অল্প কিছুক্ষন আগে।আকাশে ঘুরে বেড়ানো খেঁচর গুলো নিজেদের নীড়ে ফিরে গিয়েছে।সারি বেঁধে কালো বাদুড়ের ঝাঁক পুব পশ্চিমে শিকারের আশায় ছুটে চলেছে।আকাশের মস্ত বড় চাঁদ টুকু ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে চলছে।নিজের বৃহৎ বেলকনি থেকে দিনের অস্তমিত রূপ অবলোকন করলো শেহজাদী ম্যাপল।এরপর তপ্ত শ্বাস ফেলে কক্ষে প্রবেশ করলো।হঠাই তার মনে হলো দিন পনেরো হয়ে গিয়েছে সম্রাট সিগমুন্ড এর সাথে তার কোনো কথা হয়নি।পিতা হয়ে কন্যার প্রতি এমন বেখেয়াল অবস্থা মনে পড়তেই দুই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়লো মুক্তার ন্যয় উষ্ণ জল।
নিজের মনে কষ্ট চেপে নিজের বিশাল ঘের যুক্ত গাউন দুই হাতে উঁচু করে ধরে দরজা অভিমুখে বেরিয়ে এলো।
দরজায় থাকা প্রহরী নিজেদের হাতে থাকা তলোয়ার দিয়ে রাজকুমারীর পথ আগলে দাঁড়ালো।
“অপরাধ মার্জনা করবেন শেহজাদী।আমরা আপনার পথ ছাড়তে পারবো না।রাজকুমার ফেলিক্স কঠিন নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের।
মনের জমানো কষ্ট আর বিষাদ মুহূর্তেই জলন্ত ক্রোধে রূপ নিলো ম্যাপলের।চৌকস বুদ্ধিমতী রাজকুমারী প্রহরীর হাত থেকে কৌশলে তলোয়ার কেড়ে নিয়ে গাম্ভীর্য ভরা তেজী উঁচু কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি এখনো পতি রূপে রাজকুমার ফেলিক্স কে গ্রহণ করিনি।আমার ব্যক্তিগত ব্যপারে উনি হস্তক্ষেপ না করলেই আমি খুশি হবো।
শেহজাদীর হঠাৎ রণচন্ডী রূপে বেশ ভীত হলো দ্বার প্রহরী দুজন।মাথা নিচু করে ধীর কন্ঠে তারা বলে উঠলো
“আমরা এই রাজ প্রাসাদের অনুগত ভৃত্য মাত্র”
রাজকুমারী আর এক মুহূর্ত নিজের কক্ষের সামনে দাড়ালেন না।তলোয়ার উঁচিয়ে হনহন করে নিজের পিতার কর্ম শালার দিকে ছুটলেন।আজ একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বে সে।
“কোন কারণে এতো গুলো বছর আমাকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে তার জবাব আপনাকে দিতে হবে বাবা মশাই”
********
নিজ কক্ষে রাজকীয় চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছেন সম্রাট সিগমুন্ড।পাশেই দাঁড়ানো জেনারেল এইডেন।চোখে মুখে তার খুশির ঝিলিক।ভাবখানা এমন যেনো খুবই আনন্দের সংবাদ শুনেছে সে এই মাত্রই।হঠাৎই সেই কক্ষে রাজকুমারী ম্যাপলের আগমনে সিগমুন্ড এবং এইডেন দুজনেই ভড়কে গেলো সেই সাথে অবাকের স্বরে সিগমুন্ড শুধালেন
“সে কি ম্যাপল?তুমি নিজের কক্ষ ছেড়ে কেনো বাইরে এসেছো?
“এসে কি খুব অন্যায় করে ফেলেছি বাবা?
ম্যাপলের চোখে মুখে গাম্ভীর্য পূর্ণ জিজ্ঞাসুর ছাপ।মেয়ের এহেন গাম্ভীর্য পূর্ণ চেহারা এর আগে সিগমুন্ড কখনোই দেখেননি।নিজের কৃত কর্মের কথা চিন্তা করে বেশ অনুতপ্ত হলেন সম্রাট এবং মাথা নত করে লজ্জা যুক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন
“আ আ আসলে রাজ্যের কাজে একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই এই ক’দিন তোমার কোনো খুজ খবর নিতে পারিনি।
” রাজ্যের কাজ কি আমার চাইতেও বেশি প্রাধান্য পূর্ণ বাবা?
আর কথা বললেন না সিগমুন্ড।মাতৃ হীন মেয়ের প্রতি তিনি অনেকটাই উদাসীনতা দেখিয়ে ফেলেছেন এই পর্যন্ত।এই উদাসীনতা ইচ্ছাকৃতভাবে নাকি অনিচ্ছাকৃত তা তিনি নিজেও জানেন না।
“আপনার জন্য বাইরের পরিবেশ মোটেও সঠিক নয় রাজকুমারী!
গলায় কাঠিন্য এনে বুক টান করে কথাটি বলে শক্ত চোখে ম্যাপলের দিকে তাকিয়ে রইলো এইডেন।
তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো ম্যাপল।এরপর এক ধাপ এগিয়ে এইডেন এর সামনে দাঁড়িয়ে তেজী কন্ঠে বলে উঠলো
“আমি আমার বাবার সাথে কথা বলছি জেনারেল এইডেন।যেখানে শেহজাদী আর সম্রাটের কথা হচ্ছে সেখানে আপনার উপস্থিতি ই কাম্য নয় জেনারেল”
রাজকুমারীর শক্ত কথায় বেশ দমে গেলেন এইডেন।বলার মতো কোনো ভাষা না পেয়ে মাথা নত করে কক্ষের বাইরে বেরিয়ে এলো এইডেন।
“আজকাল রাজকুমারীর ব্যক্তিগত বিষয়ে সেনাপতি ও কথা বলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে বাবা?
সিগমুন্ড এর উদ্দেশ্যে পুনরায় প্রশ্ন খানা করে উত্তরের আশায় তাকিয়ে রইলো ম্যাপল।।মেয়েকে আজকে যেনো নতুন ভাবে আবিষ্কার করলেন সিগমুন্ড।এ যেনো ম্যাপল নয়।যে যেনো শক্তিশালী অন্য কোনো শেহজাদী সত্তা।আগের ম্যাপল আর এই ম্যাপলের মধ্যে রাত দিন পার্থক্য।তবে কি পূর্ব জন্মের সাহসী সত্তা জেগে উঠেছে?নাকি প্রাপ্ত বয়সী হবার তেজ?
“রাজকুমার ফেলিক্স কে আমার পক্ষে বিবাহ করা সম্ভব নয় বাবা।তাকে বলে দেবেন সে যেনো আমার ব্যাক্তিগত বিষয়ে হাত না বাড়ায়”
শান্ত গলায় কথাটি বলে প্রস্থান করতে নিলেই সিগমুন্ড বলে উঠলো
“সম্রাট সিগমুন্ড যাকে প্রতিশ্রুতি দেয় তা কখনো ভঙ্গ করে না”
নিজ পিতার মুখে এহেন কথা শুনে পিছন ফিরে পিতার মুখ পানে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ম্যাপল।এরপর বাঁকা হেসে বলে উঠলো
“আপনার প্রতিশ্রুতি দুই দিনের।আর আমার প্রতিশ্রুতি হাজার বছরের।
মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে থরথর করে কেঁপে উঠলেন সিগমুন্ড।দুই হাত মুষ্ঠি বদ্ধ করে নিজের ক্রোধ সংবরন করে দাঁতে দাঁত পিষে বলে উঠলেন
“আজ রাতেই তোমাকে ফেলিক্স এর প্রাসাদে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।নিজের সব কিছু গুছিয়ে তৈরি হয়ে নাও।জেনারেল এইডেন অল্প কিছুক্ষন পরেই তোমাকে নিয়ে প্রাসাদ ত্যাগ করবে।
“দেহে এক বিন্দু প্রাণ থাকতে আমি ফেলিক্স এর প্রাসাদের উদ্দেশ্যে পা বাড়াবো না বাবা।
“তোমাকে যেতেই হবে।নয়তো ফেলিক্স আমার রাজ্যের ক্ষতি করবে।তোমার জন্য আমার রাজ্যের মানুষের ক্ষতি হবে এ আমি কিছুতেই মানবো না।
“নিজের এক মাত্র কন্যাকে কোরবানি দিতে লজ্জা লাগছে না আপনার?
” নিজের ভ্রান্ত ধারনায় ডুবে আছো তুমি।পিতা হিসেবে তোমাকে সঠিক পথে নিয়ে যাওয়া আমার দায়িত্ব।
“দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনছেন না তো?
মেয়ের উঁচু আওয়াজ আর দুধর্ষ সাহস দেখে চিৎকার করে ধমকে উঠলেন সিগমুন্ড
,”নিজের সীমা অতিক্রম করো না ম্যপল।যাও নিজের কক্ষে যাও।
নিজের পিতার এহেন অবহেলা আর অন্যায় আবদারে ম্যাপলের দুই চোখ ফেটে জল এলো।নিজের ঘের যুক্ত গাউন দুই হাতে খামচে ধরে চোখের জল লুকিয়ে দৌড়ে নিজের কক্ষে এসে কপাট লাগিয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো
দরজায় হেলান দিয়ে হাটু ভাঁজ করে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে সমানে কেঁদে যাচ্ছে ম্যাপল।হঠাৎই তার চতুর মস্তিষ্কে চমৎকার এক বুদ্ধি খেলে গেলো।লম্বা সরু তুলতুলে আঙ্গুলি দিয়ে চোখের জল মুছে ম্যাপল বলে উঠলো
“যদি আমি এই প্রাসাদ ত্যাগ করি তবে ফেলিক্স আমার নাগাল পাবে কিভাবে?
********
রাতের গভীর অন্ধকার নেমে এসেছে ফ্লাকি পর্বতের কোল ঘেঁষে।হেনরির রাজ প্রাসাদের চারপাশে নিশাচর প্রাণী গুলো ভয়ানক আওয়াজে ডেকে চলেছে।অদূরের ঘন ঝোপ থেকে বনজ শূকরের ঘুৎ ঘুৎ আওয়াজ ভেসে আসছে কিঞ্চিৎ।ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদের মৃদু আলোয় সুউচ্চ প্রাসাদ দৃষ্টি গত।মুহূর্তেই গতি কমে এলো চলতি ফিটনের।ধীরে ধীরে থেমে গেলো ঘোড়ার ক্ষুরের আওয়াজ।ফিটনের কাঠের জানালা সামান্য ফাঁকা করে বাইরে নজর বুলালো হ্যাভেন।পরিচিত প্রাসাদ চিনতে কোনো বেগ পেতে হলো না তাকে।ফিটনের দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে অশ্রু সিক্ত নয়নে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো প্রাসাদের প্রধান ফটকের দিকে।
চোখের ভারী বর্ষণ রোধ না করে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো হ্যাভেন
আজ এই পিচাশ পুরি তে এসে বুক কাঁপছে না তার।কোনো রূপ ভয় তাকে কাবু করতে পারছে না।আজ শুধু কাবু করছে অতীত বিষাক্ত স্মৃতিরা।বুকের ছাতিতে অসহনীয় ব্যথার উপস্থিতি।
নিজেকে টেনে হিচড়ে প্রাসাদের বিশাল ফটক হাতে ঠেলে খুলে ফেললো হ্যাভেন।এরপর সিক্ত অদূরে কন্ঠে ডেকে উঠলো
“লুকাস,আমার বাচ্চা”
#চলবে
#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_১৮
#সারিকা_হোসাইন
রাতের নিকষ গভীরতা নামার সাথে সাথেই হেনরির রাজপ্রাসাদ যেনো প্রাণ ফিরে পেয়েছে।সমস্ত প্রাসাদ জাগ্রত হয়েছে সেই সাথে চারিধার থেকে ভয়ংকর আওয়াজ ভেসে আসছে।বার্চ গাছের ডালে বসা হুতুম পেঁচাটাও যেনো মুহূর্তেই ডাকতে ভুলে গেলো।কারু কাজের নকশা জুড়ে তৈরি করা জাল থেকে ছুটে পালাচ্ছে মাকড়ের দল।অদূরে বন্য নেকড়ের পাল হাউলিং করে উঠলো।হিসহিস করে আশপাশ ঘেষে অজগর ছুটে চলেছে তার প্রমান স্পষ্ট।কিন্তু এতো কিছুর মধ্যেও কোনো প্রকার ভয় ছুঁতে পারছে না হ্যাভেন কে।সেই পুনরায় সিক্ত কণ্ঠে ডেকে উঠলো
“লুকাস”
মানুষের গন্ধ পেতেই উন্মাদ হয় উঠলো পিচাশের দল।নিজেদের প্রখর গন্ধ ক্ষমতায় ছুটে চললো প্রাসাদে আগত আগন্তুক এর দিকে।কিন্তু তারা কি জানে কার র/ক্তে/র নেশায় ছুটছে তারা?
ঘুমন্ত লুকাস সহসাই জাগ্রত হলো।তার কানে বার বার বাড়ি খাচ্ছে
“লুকাস আমার বাচ্চা” কথাটি।
দীর্ঘদিন ,দীর্ঘ শতাব্দী পরে নিজের মনিবের কন্ঠ সুর পেতেই চমকে উঠলো বর প্রাপ্ত প্রাণীটি।হোক সে সরীসৃপ অনুভূতি তো আছে তার।আর যেই মানুষটা মৃ/ত্যু/র দিন পর্যন্ত তাকে আগলে রেখেছে সেই মানুষকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাবার মতো অকৃতজ্ঞ লুকাস নয়।মনিবের সাথে কাটানো শত শত স্মৃতি চোখে ভাসতেই সিক্ত হলো সবুজ মনি দ্বয়।নিজের দৈহিক শক্তি বলে খুলে ফেললো কফিনের ঢাকনা।এরপর ইন্দ্রিয় শক্তিতে বোঝার চেষ্টা করলো ডাকের উৎস।
প্রাসাদের ভেতরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে লাগলো হ্যাভেন।মেঝের যেই পাশটায় জমে যাওয়া নিথর ক্যারোলিন পরে ছিলো সেখানে নজর বুলাতেই হুহু করে বুক ভেঙে কেঁদে উঠলো হ্যাভেন।চোখের জল যেন আজ বাঁধ মানছে না।বুকের ক্ষ/ত নতুন করে তাজা হয়েছে।হয়তো প্রাসাদে লুকাস নেই।নয়তো লিও লুকাসের যত্ন নিতে পারেনি।নিজের মনে মনে লুকাস সম্পর্কে নানান ভয়ানক ভাবনা ভেবে ধূলার আস্তরনে ঢাকা পরা মার্বেল পাথরের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো হ্যাভেন।ক্যারোলি এর সমাধি তার নখদর্পণে।কষ্ট আর বেদনায় অসাড় হয়ে আসা শরীর টেনে নিয়ে সেই কক্ষের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো হ্যাভেন।বলিষ্ঠ হাতের ধাক্কায় খুলে ফেললো বড় পাল্লা যুক্ত আধ ভাঙা রাজকীয় দরজা।
ঘরটি আগের মতোই চকচকে আর গোলাপের সুবাসে সুবাসিত।মৃদু মোমের আলোয় কফিনটি চকচক করছে।কক্ষটি হিম শীতল আর সাদা তুষারে আবৃত।
এক পা দু’পা করে কক্ষের ভেতর এগিয়ে গেলো হ্যাভেন।
এরপর হাটু মুড়ে কফিনের পাশে বসে ডুকরে উঠলো
“ক্যারোলিন আমার বন্ধু।দেখো আমি তোমার বিশ্বস্ত বন্ধু ক্রিস্টিয়ান পুনরায় তোমার সেবক রূপে ফিরে এসেছি।উঠো ,আমাকে বরণ করে নাও।
ইতিমধ্যে পুরো প্রাসাদ ছেয়ে গিয়েছে পিচাশের দলে।হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে আগত উষ্ণ র/ক্তের মানব কে।এমিলি আর হেনরি দু জনেই ক্রোধে ফেটে পড়ে সেনাপ্রধান ড্রাকো কে চিৎকার করে ডেকে উঠলো।
মনিব ভীত জেনারেল হাওয়ার বেগে এসে হেনরির সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো
“আদেশ করুন কাউন্ট।
হেনরি চোখে মুখে ক্রোধ নিয়ে গর্জে উঠে বলে উঠলো
“কে সেই দুর্বল মানুষের জাত?ধরে নিয়ে এসো আমার সামনে।যে নিজে থেকে মৃ/ত্যু দেখতে চায় তার আশা কিভাবে অপূর্ণ রাখি?
দ্রাকো মাথা নিচু করে ভীত কণ্ঠে বলে উঠলো
“মানুষটি শেহজাদীর কক্ষে অবস্থান করছে।লুকাস ছাড়া কেউ ই ওই কক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না কাউন্ট।
শেহজাদী ক্যারোলিন এর কক্ষে পুনরায় সাধারণ মানুষ রূপী লোভী জানোয়ার এর কথা কর্ণ পাত হতেই সজোড়ে দেয়ালে ঘুষি বসিয়ে দিলেন হেনরি।পুরো প্রাসাদ যেনো ভূমিকম্পের ন্যয় দুলে উঠলো মুহুর্তেই।
মানুষের গন্ধে কফিন ছেড়ে উঠে বসলো লিও।তার চোখ দুটি যেনো টকটকে আগুনের ন্যয় জ্বলছে।দন্ত শলাকা বেরিয়ে এসেছে টকটকে কালচে লাল ঠোঁট গলিয়ে।কফিন থেকে তড়িৎ গতিতে নেমে গর্জে উঠলো লিও
“আলফ্রেড”
আশেপাশে কোথাও আলফ্রেড এর দেখা পাওয়া গেলো না।মনিবের সেবায় নিজেকে সপে দেয়া আলফ্রেড কোথায় গিয়েছে চেতনায় আসলো না লিও এর।অবশেষে ক্রোধে চিৎকার করে ডেকে উঠলো
“লুকাস”
একি লুকাস ও যে নেই।
হঠাৎই লুকাসের কফিনের দিকে নজর মেলতেই তা খোলা দেখতে পেলো লিও।মানুষের গন্ধে প্রচুর অস্বস্তিতে শুকিয়ে উঠলো লিও এর গলা।পিপাসায় চূড়ান্ত কাতর হলো সে।হাওয়ার বেগে কুণ্ডুলি পাকিয়ে ছুটে চললো সেই মানুষের উদ্দেশ্য।আজকে পৃথিবীর কঠিন তম সাজা দেবে লিও তাকে।
পুরো প্রাসাদ মুহূর্তে চিৎকার,তর্জন,গর্জনে ফেটে পড়লো।কিন্তু হ্যাভেন যেনো কিচ্ছুটি শুনছে না এসবের।
বিশাল দেহি লুকাস খুঁজতে খুঁজতে ক্যারোলিন এর কক্ষের সামনে এসে স্থির হলো।কক্ষের ভেতর ক্রন্দনরত হ্যাভেনের চেহারা স্পষ্ট।সিক্ত হলো লুকাসের চোখ।
ঐতো সেই মনিব যার প্রতীক্ষায় এতোগুলো দিন অপেক্ষা করছে সে।ইথারকে হ/ত্যা/র পর সেই পরিচিত গন্ধে উন্মাদের ন্যায় পুরো প্রাসাদ ঘুরেছে লুকাস।তার মনে হয়েছে কোথাও না কোথাও এই প্রাসাদেই তার মনিব আছে।অবলা জীব কথা বলতে পারেনা তার কথা কেউ বুঝে না।যে বুঝতো সে তো হাজার বছর আগেই পৃথিবী ছেড়ে স্বর্গে পাড়ি জমিয়েছে।লুকাসের বুকের খাঁচায় হাজার বছরে হাজারো কথা জমে আছে।নিজের অনুভূতি টুকুও সে এতোগুলো বছর কারো কাছে ব্যক্ত করতে পারেনি।আজ কি তবে সেই মাহেন্দ্রক্ষন?
ধীরে ধীরে বুকে ভর দিয়ে দিয়ে হ্যাভেন এর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো লুকাস।লুকাসের গায়ের গন্ধে কান্না থামিয়ে অবাক সিক্ত নয়নে লুকাসের পানে দৃষ্টি দিলো হ্যাভেন।মুহূর্তেই চোখা চোখি হলো দুই জোড়া সিক্ত অক্ষি যুগল।বিশাল ফনা তুলে বুকে ভর দিয়ে দাঁড়ালো লুকাস।হ্যাভেন দাঁড়িয়ে লুকাসের সেই ফনা জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠলো
“আমার বাচ্চা, আমার লুকাস।তোমাকে দেখতে না পেয়ে প্রাণ টা যে উড়ে যাচ্ছিলো।অজানা ভয়ে শঙ্কিত হয়েছি আমি।তুমি ঠিক আছো চোখে দেখতে পেয়ে প্রাণে শান্তি লাগছে।
হিসহিস করে জিভ বের করলো লুকাস।তার কুচকুচে কালো শরীর বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল।সেই সিক্ত চোখের ভাষা পড়তে একটুও কষ্ট হলো না হ্যাভেনের।
“আপনার প্রতিক্ষায় প্রতিটি দিন প্রতিটি রাত ভাগ্য দেবতার কাছে প্রার্থনা করেছি যাতে পুনরায় আপনাকে দেখতে পারি।বুকে অনেক অনেক কথা জমেছে।হাজার বছর গড়ানোর সাথে সাথে কি কি হয়েছে সব আপনাকে বলার জন্য বুকের ছাতি ফেটেছে।আপনার কফিনটি আজো আমি শ্রদ্ধাভরে পাহারা দিচ্ছি।আমার বিশ্বাস ছিলো আপনি ঠিক ফিরে আসবেন।
লুকাসের জল মুছিয়ে হ্যাভেন শুধালো
“এই প্রাসাদে কেউ তোমাকে কষ্ট দিয়েছে আমার বাচ্চা?
পুনরায় জিভ বের করে হিসহিস করলো লুকাস
“আপনার মৃত্যুর পরের দিন ই যুবরাজ লিও জেগে উঠেছিলো।ভবিষৎ বানীমতে শেহজাদী ক্যারোলিন এর পুনরায় জন্ম হয়েছিলো।জীবন্মৃত হয়ে থাকায় যুবরাজ লিও আপনার সব কথা শুনতো।তাই আমাকে চিনতে তার অসুবিধে হয়নি।উনি আমাকে বন্ধু রূপে আগলে নিয়েছে।আমার কোনো কষ্ট হয়নি মনিব।আমার শুধু আপনার জন্য কষ্ট হয়েছে।আপ্নাকে আমি নিজের চাইতে বেশি ভালোবাসি।এবার যখন আপনাকে আমি পেয়েছি আর হারাতে দেবো না।আমার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না আপনাকে।
দরজার অদূরে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা অবলোকন করে অশ্রুসজল হলো লিও এর চোখ।দ্রুত হাতে চোখের জল মুছে লিও আওড়ালো
“ক্রিস্টিয়ান?
এই যেনো সেই হাজার বছর আগের ক্রিস্টিয়ান যার চেহারা পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে সেই আগের মতোই।শুধু পোশাকে আর সৌন্দর্যে পরিবর্তন এসেছে।হয়তো কালের ব্যবধানে।
লুকাস কে মাথায় হাত বুলিয়ে হ্যাভেন বলে উঠলো
“যুবরাজ লিও এর কাছে চলো, আমাদের অনেক দায়িত্ব বাকি এখনো।ক্যারোলিন এর আত্মার মুক্তির সময় এসেছে যে”
**********
রাতের গভীরতা নামার সাথে সাথে নিজ কক্ষে সমান তালে পায়চারি করছে ম্যাপল।চরম অস্বস্তি আর ভয়ে হৃদযন্ত্র ঘোড়ার গতিতে লাফাচ্ছে ।লিও এর অপেক্ষায় তার হৃদয় উচাটন হয়েছে।প্রাসাদ নামক এই নরক থেকে একমাত্র লিও ই তাকে উদ্ধার করতে পারবে।কারন তার নিজের পক্ষে জেনারেল এইডেন এর চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রাসাদ ছেড়ে পালানো ওতোটাও সহজ হবে না।যুবরাজ ফেলিক্স কে মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না।এই ফেলিক্স আর তার চোখে দেখা ফেলিক্স এর মধ্যে হাজার গুণ তফাৎ।কবে কবে এতোটা অমানবিক হয়েছে বন্ধুরূপী যুবরাজ ফেলিক্স?
পূর্বে কখনো ম্যপল ফেলিক্স এর চোখে তার জন্য প্রেম ভালোবাসার ছিটেফোঁটা দেখেনি।সেতো শুনেছিলো শেহজাদী এলিস কে ভালবাসে ফেলিক্স।তবে হঠাৎ তাকেই বিবাহ করতে কেনো মরিয়া হয়েছে সে?
আর শেহজাদী এলিস এর ই বা কি হবে?নাকি এসবের পেছনে তৃতীয় পক্ষ গুটি চালাচ্ছে?আর যদি তৃতীয় পক্ষ থেকেই থাকে তবে কে সেই ব্যক্তি?
ম্যাপল কে বিশেষ ভাবে ভাবাচ্ছে যেই বিষয়টা তা হলো ফেলিক্স এর হাতের গভীর শুকনো ক্ষত গুলো।দিন পনেরো আগেই শিকার থেকে ফিরে তার সাথে দেখা করতে এসেছিলো ফেলিক্স তখনো তার ফর্সা বলিষ্ঠ হাত দুটো মসৃন ছিলো।হঠাৎই কি এমন হলো যে হাতে এতোগুলো ক্ষত হলো।আর সেই দাগ দেখে মনে হচ্ছে ক্ষত গুলো বহু আগের।এতো বড় ক্ষত পনেরো দিনে কখনোই শুকিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।অবশ্যই এখানে বড় কোনো রহস্য আছে।তবে কি সেটা?
আর ভাবতে পারে না ম্যাপল।ছোট মস্তিষ্কে এতো ভাবনা কুলাচ্ছে না।লিও ছাড়া এই জটিল রহস্যের পর্দা উন্মোচন করা সম্ভব নয়।
“যুবরাজ লিও এর কোনো বিপদ হলো না তো?
*********
ফেলিক্স এর সামনে ক্রোধিত নজরে ফসফস করে শ্বাস নিচ্ছে এইডেন।মানুষরূপী সুন্দর চোখ গুলো আজ যেনো একটু বেশি ই হিংস্র।কিছুক্ষন ফুসফুস করে নিজেকে আয়ত্তে এনে গর্জে উঠা ভয়ানক কন্ঠে এইডেন বলে উঠলো
“আপনি শুধু একবার হুকুম করুন মহারাজ।পুরো প্রাসাদে হলি খেলবো।রাজকন্যা রাজত্ব দুই ই হবে আপনার।
এইডেন এর ক্রোধিত চোখের পানে তাকিয়ে খানিক উচ্চস্বরে হাসলো ফেলিক্স এরপর মোহনীয় স্বরে বলে উঠলো
“ক্রোধ দিয়ে সবসময় সবকিছু অর্জন করা যায় না জেনারেল এইডেন।বুদ্ধি দিয়ে হাসিল করতে হয় নিজের প্রাপ্য।
“সারাদিন ওই সাধারণ মানুষের গোলামী করতে আমার মোটেও ভালো লাগে না মহারাজ”
মুখে বিরক্ত আর বিতৃষ্ণা নিয়ে অগ্নি ঝরা চোখে জবাব দিলো এইডেন।
এইডেন এর কথায় যুবক আরো খানিক নাটকীয় স্বরে হাসলো।এরপর পুনরায় ভঙ্গিতে বলে উঠলো
“শেহজাদী আমার কারাগারে বন্দি না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে গোলামী করতেই হবে এইডেন।অন্যের গোলামী করলে তবেই না পুরো পৃথিবীকে গোলাম বানানোর স্বাদ পাবে।নিজে গোলাম না হলে জানবে কি করে যে,গোলামের উপর মনিবের প্রভাব কি হতে পারে?
আর কথা বাড়ালো না এইডেন।এই ধূর্ত লোকের সাথে কথায় সে কোনোভাবেই পারবে না।এই লোকের সাথে কথা বলা মানে নিজের কথার অপচয় শুধু।
“আর কিছুক্ষন পর ভোরের আলো ফুটবে ,প্রাসাদে ফিরে যাও এইডেন।আমি চাইনা সমুদ্রের কিনারায় এসে তোমার জন্য তরী ডুবুক।এই মুহূর্তে তোমাকে কেউ সন্দেহ করলে আমার জন্য বিরাট ক্ষতি।
গাম্ভীর্য পূর্ণ কন্ঠে কথাটি বলে নিজের প্রাসাদ অভিমুখে হাটতে শুরু করলো যুবরাজ ফেলিক্স।
আর কোনো কথা বলার সুযোগ পেলো না এইডেন।মনিবের যাবার পানে তাকিয়ে মাথা নিচু করে জ্বলন্ত চোখ নিয়ে গহীন অরণ্যের দিকে হাটতে লাগলো।
নিজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সারাটা রাত ধরে লিও এর জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে ম্যাপল।হৃদ যন্ত্রনায় আর বিভিন্ন হতাশায় নেত্র বারী ঝরছে সমানে।দুই হাতে সেগুলো মোছার প্রয়োজন মনে করলো না শেহজাদী।ভোরের আলো আর কিছুক্ষন পরেই ফুটবে।অন্ধকার প্রায় কেটে গিয়েছে।এখন আর লিও তার কাছে আসতে পারবে না।পুরোটা রাত লিও বিহনে অসহনীয় যন্ত্রণায় কাটলো তার।হঠাৎই প্রাসাদের অদূরে জঙ্গলে নজর পড়তেই শিউরে উঠলো ম্যপল।।
বিশাল আকারের এক নেকড়ে হেলেদুলে প্রাসাদ অভিমুখে আসছে।আলোর তারতম্যের কারনে তার গায়ের রঙ অস্পস্ট।ভারী পর্দার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে নেকড়ের গতিবিধি লক্ষ্য করতে প্রস্তুত হলো ম্যপল।
প্রাসাদের পেছনের কালো গোলাপ বাগানের নিকট এসে স্থির হয়ে দাঁড়ালো নেকড়ে।
নেকড়ের আকার আর রঙ দেখে পর্দার ভেতর ই থরথর করে কেঁপে উঠলো ম্যাপল।অজানা আতংকে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো।সাদা পর্দা খামচে ধরে ঈশ্বর কে ডেকে উঠলো শেহজাদী।
হঠাৎই নিজের রূপ পরিবর্তন করলো নেকড়ে টি।
নেকড়ের রূপে বিস্ফারিত হলো শেহজাদীর বড় বড় অক্ষিদ্বয়।শুষ্ক ঠোঁট আউড়িয়ে বিড়বিড় করলো
“জেনারেল এইডেন!
#চলবে
#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_১৯
#সারিকা_হোসাইন
ভেজা দুর্গন্ধ যুক্ত পাহাড়ের গুহায় আটকে রাখা হয়েছে সুদর্শন এক যুবক কে।চেহারায় চোখে মুখে আভিজাত্যের ছাপ স্পষ্ট।যুবকের গায়ে রাজকীয় পোশাক।কিন্তু কোনো প্রাণীর আক্রমণে তার সারা শরীর র/ক্তা/ক্ত ক্ষতবিক্ষত।চেহারায় নেতিয়ে পড়া মলিনতা।তবুও এসব যুবকের আভিজাত্য কে একবিন্দু ছুঁতে পারেনি।যুবকের দুই হাতে বেঁধে দেয়া হয়েছে মোটা মোটা লোহার শিকল ।তার অদূরেই পরে রয়েছে মানুষের পঁচে যাওয়া মাংস সমেত হাড়গোড় আর মাথার খুলি।বিশ্ৰী উটকো গন্ধে পেট গুলিয়ে বমি করে উঠলো যুবক।ক্লান্ত দুটি চোখ মেলে গুহার চারপাশে নজর বুলালো।কতদিন ধরে সে এখানে বন্দি তা সে জানেনা।এমনকি কোন অপরাধে তাকে এখানে আনা হয়েছে এটাও তার অজানা।
প্রচন্ড পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো যুবকের।অস্ফুট দুর্বল শরীরে নিভু নিভু আওয়াজে ডেকে উঠলো
“পানি…কেউ আছেন?আমাকে একটু পানি দিয়ে সাহায্য করুন।
কিন্তু যুবকের মিইয়ে যাওয়া সুর কারো কানে লাগলো না বোধ হয়।
পিপাসায় চোখ ফেটে জল এলো যুবকের।সেই নোনা জল ঠোটের কাছে গড়াতেই জিভ দিয়ে লেহন করে গলা ভেজানোর বৃথা চেষ্টা করলো।
কারো পায়ের শব্দ সচকিত হলো যুবক।বোধ হয় কেউ এদিকটায় আসছে।বুকে আশা জাগলো।হয়তো কিছু খাবার বা পানি পাওয়া যাবে।ধীরে ধীরে পদ শব্দ প্রখর হলো।খুলে গেলো গুহার দরজা।
ধীর পায়ে এগিয়ে এলো সেই মানুষ টি।
নিচু হওয়া দৃষ্টি উপরে তুলতেই বিস্ফারিত নেত্রে নিজের পিপাসা ভুলে গেল যুবক।সামনে দাঁড়ানো হুবুহু তারই অবয়ব।মুখের আঠালো লালা দিয়ে জিভ লেহন করে ভাঙা দুর্বল কন্ঠে শুধালো
“ক ক কে তুমি?
যুবকের প্রশ্নে হো হো শব্দ তুলে হাসলে সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তি।যেনো খুব মজার কোনো কথা শুনেছে সে এই মুহূর্তে।আনন্দে তার ফেটে পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।ইচ্ছে মতো এক চোট হেসে বলে উঠলো
“কেনো খুব আগ্রহ হচ্ছে আমাকে নিয়ে তোমার রাজ কুমার ফেলিক্স?
আগন্তুক এর মুখে নিজের নাম শুনে কেঁপে উঠলো ফেলিক্স ।কিছুটা ভীত ও হলো বটে।তবুও বুকে সাহস সঞ্চয় করে বলে উঠলো
“কি চাও তুমি?
“রাজকুমারী ম্যপল কে”
গম্ভীর কন্ঠে কথাটি বলে রাজকুমার ফেলিক্স এর সামনের সুন্দর চুলের গাছি টেনে ধরলো আগন্তুক।
ব্যাথায় আর্তনাদ করে গুঙ্গিয়ে উঠলো ফেলিক্স।একে তো ক্ষুধার্ত পিপাসিত শরীর তার উপর এহেন অত্যাচার কুলালো না ফেলিক্স এর।কন্ঠে অসহায়ত্ব এনে অনুরোধ করলো
“রাজকুমারীর সাথে আমার কোনো লেনাদেনা নেই।সে শুধু আমার বন্ধু।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি।
এতেও যেনো সন্তুষ্ট হতে পারলো না আগন্তুক।ফেলিক্স এর কথা শুনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো
“তোমার এসব গল্প কেচ্ছা শুনতে আসিনি নি রাজকুমার।দেখতে এসেছি শুধু তোমার প্রাণ আর কতদূর বাকী।তোমাকে তো মরতে দিতে পারি না আমি।তুমি ম/রলে যে এই রূপ আমি আর পাবো না।তাই তোমাকে বাঁচাতে খাবার নিয়ে এসেছি।
মুহূর্তেই দুজন ভৃত্য এসে থালা ভর্তি খাবার এনে ফেলিক্স এর সামনে রাখলো।ক্ষুধার্ত ফেলিক্স কিছু বাছবিচার না করেই দুই হাতে উন্মাদের ন্যয় খাবার খেতে লাগলো।সেটা দেখে আগন্তুক খুব হাসলো।এরপর ধীর স্বরে বলে উঠলো
“খুব সুস্বাদু মানুষের মাংস তাই না?
আগন্তুকের মুখে মানুষের মাং/স কথাটি শুনেই খাওয়া থামিয়ে মুখের খাবার উগলে দিলো ফেলিক্স।মাথার মগজ পর্যন্ত ঘুরে সমস্ত খাবার উগলে আসতে চাইলো।
ফেলিক্স এর এমন শোচনীয় অবস্থা দেখে আরো খিকখিক করে হেসে আগন্তুক বলে উঠলো
“এই মানুষের জাত গুলোকে একদম দেখতে ইচ্ছে করে না আমার।এরা বড়োই নাটকবাজ।
আগন্তুক এর পানে কাতরতা প্রকাশ করে ফেলিক্স ডুকরে কেঁদে বলে উঠলো
“কেনো এমন করছো আমার সাথে?কি ক্ষতি করেছি আমি তোমার?দয়া করে আমাকে ছেড়ে দাও।
ফেলিক্স এর কথা শুনে এক গাল হাসলো আগন্তুক।এরপর হিসিসিয়ে বলে উঠলো
“ছেড়ে দেবার জন্য এতো কষ্ট করে ধরে এনেছি নাকি?আগে রাজকুমারী আমার হোক পরে তোমার কথা ভাবা যাবে যুবরাজ ফেলিক্স।এতো তাড়া কিসের?স্যাম কেলভিন এর বিবাহের দাওয়াত না খেয়েই চলে যাবে?
আর দাঁড়ালো না স্যম।এসব মানুষের প্রতি তার চরম ঘেন্না।দুই দন্ড এদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলা মানে নিজের সময় অপচয় করা।হনহন করে বেরিয়ে আসার আগে প্রহরীর উদ্দেশ্যে গর্জে উঠে বলে উঠলো
“রাজকুমারের চেহারা মলিন হয়ে যাচ্চে।তাকে কিছু ফলমূল খেতে দাও।স্যাম কেলভিন এতোটাও নির্দয় নয়।সামনে আমার বিবাহ।চেহারা মলিন হলে রাজকুমারী অপছন্দ করবে বুঝো না?
প্রহরী দুজন মাথা নিচু করে আজ্ঞা পালনের সায় জানালো।
*********
লিও আর হ্যাভেন বসে আছে মুখোমুখি।দুজনের চোখেই ব্যাথার জল।লুকাস এক মুহূর্তের জন্য হ্যাভেনের সাথ ছাড়ছে না।তার ধারণা সে ঘুমালেই মনিব চলে যাবে।নিজের প্রকান্ড মাথাটা হ্যাভেনের কোলের উপর রেখে ঝিমুচ্ছে শুধু।হ্যাভেন ও তার মমতা ভরা হাত দুটো লুকাসের মাথায় রেখে আলতো করে বুলিয়ে দিচ্ছে।
সকল নীরবতা ভেঙে লিও বলে উঠলো
“সময় করে তোমাকে শেহজাদী ম্যাপলের কাছে তোমাকে নিয়ে যাবো।সব কিছু খুলে বললেই বুঝে যাবে সে।কিন্তু ওই প্রাসাদ ছেড়ে বের হওয়া তার জন্য সহজ হবে না।কঠিন শৃঙ্খলে রাখা হয় তাকে।
লিও এর কথায় কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঞ্চন হলো হ্যাভেনের ফর্সা মুখে।বিস্ময় মিশ্রিত কন্ঠে শুধালো
“তাকে কঠিন পাহারায় কেনো রাখা হচ্ছে?
“আমাকে বধ করবার জন্য।
সাবলীল উত্তর দিয়ে চুপচাপ বসে রইলো লিও।
পূর্ব জন্মের কথা মনে পড়তেই হ্যাভেনের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।আবারো একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি সে দেখতে পারবে না।একজন প্রেমিক পুরুষ আরেকজন মানবী সারা জীবন শুধু বিচ্ছেদের অনলে পুড়ে ম/র/বে এটা হ্যাভেন কিছুতেই মানবে না।লিও এর কথায় ঘোর প্রতিবাদ করে হ্যাভেন বলে উঠলো
“তোমাদের এক না করে আমি দম ফেলবো না যুবরাজ ।এই জন্মে রাজকুমারী অবশ্যই তোমার হবে”
হ্যাভেন এর কথায় স্মিত হাসলো লিও।এরপর বিষাদ মাখা কন্ঠে বলে উঠলো
“সে আমাকে খালি হাতে ছুঁয়ে দিলেই আমার ধ্বংস অনিবার্য।
“মানে?
“তার হাতে একটা চিহ্ন রয়েছে।আমার সংস্পর্শে আসলেই তা জ্বলে উঠে।একবার রাজকুমারী নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলেই আমি জ্বলে যাবো।নিয়তি বোধ হয় আমাদের মিলন ই রাখেনি।
আফসোসের স্বরে কথাটি বলে নিজের চোখের জল লুকালো লিও।
জামার আস্তিন থেকে ছোট পুটলিটা বের করে লিও এর সামনে মেলে ধরে হ্যাভেন বলে উঠলো
“ভয় পেয়ো না যুবরাজ।সব কিছুর ব্যবস্থা করে তবেই ফিরেছি আমি।দুষ্ট শক্তি ব্যতীত সব কিছুই তোমাদের অনুকূলে।এবার যে স্বয়ং ভাগ্য তোমাদের সাথে রয়েছে।শুধু আমাকে ওই রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত পৌঁছে দাও।
হ্যাভেনের কথায় সামান্য আশা খুঁজে পেলো লিও।মুখে শুকনো হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলো
“আলফ্রেড কে বলে দেবো আগামী কাল তোমাকে যেনো ওই প্রাসাদে পৌঁছে দেয়।
“আমি আজ রাতেই যেতে চাই যুবরাজ।ব্লাড মুনের আর যে বেশি সময় নেই।
হ্যাভেনের কথায় কিছুটা মনোক্ষুণ্ণ হয়ে লিও বলে উঠলো
“আজকের রাত আমার জন্য কাল রাত।আমি যে আজ প্রাসাদ ছেড়ে বেরুতে পারবো না।
লিও এর কথায় ব্যাথিত হয়ে নীরবে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো হ্যাভেন।নিজের বন্ধুর সাথে কথা বলার জন্য তার হৃদয় খাখা করে উঠছে বারবার।আজকের পুরো দিন আর দীর্ঘ রাত কিভাবে কাটবে তার?
*********
আকাশের টকটকে সূর্যটা অস্তমিত হতে আর বেশি সময় বাকি নেই।চারপাশে ধূসর রঙা বিকেলের উপস্থিতি।বেলকনি তে দাঁড়িয়ে ভোর রাতের কথা গুলো সমানে ভেবে চলেছে ম্যাপল।জেনারেল এইডেন এর এই রূপ কোনো ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না তার।মানুষের আড়ালে নেকড়ে?
হঠাৎই কক্ষে প্রবেশ করলো স্যান্ডি।অচম্বিত শব্দে ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো ম্যপল।স্যান্ডি ম্যাপলের ভীত মুখের পানে তাকিয়ে আদুরে স্বরে বলে উঠলো
“কিছু হয়েছে শেহজাদী?আপনাকে বিধ্বস্ত লাগছে।
এই প্রাসাদে স্যান্ডি একমাত্র ম্যাপলের বিশ্বস্ত মানুষ।তার জীবনের এমন কোনো কথা নেই যা এই স্যান্ডি না জানে।এইডেন এর কথাটা স্যান্ডিকে বলার জন্য ম্যাপলের মন খচখচ করে উঠলো।
স্যান্ডি তার নরম হাত খানা পরম মমতায় ম্যাপলের গালে রেখে শুধালো
“কি চিন্তায় ভীত হয়েছেন রাজকুমারী?
স্যান্ডির চোখে চোখ রেখে কিছুক্ষন ইতস্তত করলো ম্যাপল।এরপর নিচু স্বরে শুধালো
“মানুষ কখনো পশুর রূপ ধরতে পারে?বা পশু মানুষের রূপ?
রাজকুমারীর কথায় বেশ খটকা লাগলো স্যান্ডির মনে।মানুষ আবার পশু হয় কিভাবে?
নিজের মনের উচাটন দমিয়ে স্যান্ডি শুধালো
“মানুষ কি রূপে পশু হবে শেহজাদী?
স্যান্ডির হাত চেপে ধরে শক্ত চোখে ম্যাপল বলে উঠলো
“আমি নিজ চোখে দেখেছি স্যান্ডি।
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে স্যান্ডি শুধালো
“সবকিছু খুলে বিলীন শেহজাদী।আমি আপনার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না।
স্যান্ডির দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে ম্যাপল মিহি স্বরে ভীত কন্ঠে বলে উঠলো
“জেনারেল এইডেন মানুষ নয় স্যান্ডি।আমি নিজে তাকে নেকড়ে থেকে মানুষে পরিণত হতে দেখেছি”
ম্যাপলের কথা শুনে ভয়ে শিউরে উঠলো স্যান্ডি।
“এসব কি বলছেন আপনি?
“হ্যা স্যান্ডি।আমি ভুল কিছু দেখিনি।আমার চোখ কোনো ভাবেই ভুল হতে পারে না।
“তবে যে আজকাল যুবরাজ ফেলিক্স এইডেন এর সাথে মাখামাখি সম্পর্ক পাতিয়েছে?
জিজ্ঞাসু স্বরে কথাটি বলে ম্যাপলের উত্তরের আশায় রইলো স্যান্ডি।
দরজার পানে সতর্ক নজর বুলিয়ে ফিসফিস করে ম্যাপল বলে উঠলো
“সে রাজকুমার ফেলিক্স নয়।
“তাহলে কে?
“আমি নিজেও জানিনা।কিন্তু এতো টুকু সঠিক হয়েছি আমি সে ফেলিক্স নয়।ফেলিক্স আমাকে বরাবর বন্ধু হিসেবে দেখে এসেছে।আর সে এলিস কে ভালোবাসে।আমাকে বিবাহ করার প্রশ্নই আসে না তার।পিতা মশাই কে কোনো ভাবে বোকা বানানো হয়েছে।তুমি গুপ্ত চরের মাধ্যমে ফেলিক্স এর খবর নাও স্যান্ডি।আমার মনে হচ্ছে ফেলিক্স ওই প্রাসাদে নেই।
আজ যেনো স্যান্ডি চমকের উপর চমকিত হচ্ছে।সমস্ত কিছু শোনার পর নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছে না।চতুর স্যান্ডি মনে মনে ভাবলো একবার জেনারেল এইডেন এর উপর নজরদারি রাখা যাক।
ম্যাপলকে সাবধানী সতর্ক বাণী ছুড়ে নিজের কাজে বেরিয়ে এলো স্যান্ডি।সারা প্রাসাদে একবার সতর্ক নজর বুলাতেই জেনারেল এইডেন কে চোখে পড়লো।হন্তদন্ত করে কোথাও একটা যাচ্ছেন তিনি।
প্রাসাদের বড় পিলারের পেছনে লুকিয়ে সবটাই অবলোকন করে এইডেন এর পিছু পিছু প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে এলো স্যান্ডি।সন্ধ্যার কালিমা ভেদ করে অরণ্যের দিকে ছুটছে এইডেন।প্রথমে ভীত হলেও ম্যাপলের কথা মাথায় রেখে গাছের ঝোপে লুকিয়ে লুকিয়ে এইডেনের পানে ছুটলো স্যান্ডি।
একপর্যায়ে গহীন অরণ্যে প্রবেশ করলো এইডেন।বড় পাইন গাছের আড়ালে লুকিয়ে এইডেন এর কাজকর্ম দেখতে লাগলো স্যান্ডি।
অন্ধকারে এইডেন কে আর দেখা যাচ্ছে না।কিন্তু সে কারো সাথে ভয়ানক গলায় কথা বলছে যা স্পষ্ট শুনতে পেলো স্যান্ডি।
“মহারাজ আমি অনেক বার বুঝিয়েছি সম্রাট সিগমুন্ড কে।হঠাৎই মেয়ের প্রতি তার দরদ উথলে উঠেছে।মেয়েকে তিনি প্রাসাদের বাইরে পাঠাতে চাচ্ছেন না।হঠাৎই কেনো বেঁকে বসেছে এটাও বুঝতে পারছি না।
এইডেন এর কথা শেষ হতেই ক্রোধে গর্জে উঠলো ওপাশের ব্যক্তি।সেই গর্জনে ভীত হয়ে থরথর করে কেঁপে উঠলো স্যান্ডি।গাছে থাকা হুতুম পেঁচাও ডানা মেলে অন্যত্র পালিয়ে গেলো।
নিজের গর্জন থামিয়ে ওপাশের ব্যক্তি বলে উঠলো
“সম্রাট সিগমুন্ড এর প্রাসাদে হলি খেলার আয়োজন করো এইডেন।মানুষ গুলোর এতো নাটক আর সহ্য হচ্ছে না।লিও এর সাথে ওই শেহজাদীর প্রেম হয়ে গিয়েছে আমি গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি।এবার যে করেই হোক ওই শেহজাদী আর হাতিয়ার আমাকে পেতেই হবে।না হলে আমার ধ্বংস সন্নিকটে।ভবিষ্যৎ কে খন্ডন করবো আমি।রাজকুমারী হবে আমার।জ্বলে ছাই হবে লিও।
#চলবে