#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_২৯
#সারিকা_হোসাইন
রাতের দ্বিতীয় প্রহরে হেভিয়া ব্রাসিলিয়েন্সিস গাছটির পাতার ফাক দিয়ে অল্প চাঁদের আলো এসে মাটিতে ঠেকলো।সেই চাঁদের মৃদু আলোয় আলফ্রেড এবং স্যান্ডি দুজন দুজনকে এক পলকের জন্য দেখে নিলো এবং সাথে সাথেই নিজেদের দৃষ্টিতে লাগাম টানলো।এরূপ ভয়ানক পরিস্থিতিতে বুকের মধ্যে খানে ভালোবাসার ফুরফুরে বাটারফ্লাই উড়াতে বেশ বিরক্ত হলো আলফ্রেড।কঠিন শাসনে নিজেকে শাসিয়ে পুনরায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো ট্যাট্রি পর্বতের পানে।লিও এর সাথে আলফ্রেড একাই আসতে চেয়েছিলো মাঝখানে স্যান্ডি এসে বা হাত ঢুকিয়ে আলফ্রেড এর চিন্তা আরো দশ গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।ট্যাট্রি পর্বতের ভেতর লিও কোন অবস্থানে আছে আলফ্রেড তা জানেনা।লিও এর থেকে স্যান্ডি সম্পর্কিত চিন্তা ভাবনা গুলোই তার মস্তিষ্কে অধিক ঘোরাঘুরি করছে।এমতাবস্থায় কি করনীয় সে বিষয়েও আলফ্রেড অবগত নয়।
“যুবরাজ লিও কি শেহজাদীর দেখা পেয়েছে এতক্ষনে?
অধিক হিমশীতল পরিবেশে কাঁপা কাঁপা নিচু কন্ঠে কথাটি বলে আলফ্রেড এর পানে বড় বড় চোখে তাকিয়ে রইলো স্যান্ডি।স্যান্ডির প্রশ্ন এবং চাহনি দুই ই নাড়িয়ে দিলো আলফ্রেড কে।সমগ্র পোল্যান্ড শহরের বিখ্যাত তান্ত্রিক ‘সাসালা কুয়েরতোয়া’।আলফ্রেড সহ পুরো ভ্যাম্পায়ার সম্প্রদায় তাকে শত শত বছর ধরে চেনে।আজ পর্যন্ত কোনো কাজে অসফল হয়নি সে।এমনকি তার মাধ্যমে লিও মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলো একবার।নেকড়ে রাজ স্যাম কেলভিন কে হত্যার হাতিয়ার ও তার থেকেই পাওয়া।তবে আজ কি তার এসব ক্ষমতা এই ভয়াবহ পর্বতে খাটবে?তার ওই সামান্য জরিবুটি মাখানো তরল পান করলে আসলেই কি অদম্য শক্তিশালী হয়ে পর্বতের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হওয়া সম্ভব?স্যান্ডির প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারে না আলফ্রেড।যেখানে সে নিজেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে সেখানে অন্যকে শান্তনার বাণী দেয়া হাস্যকর ব্যাপার।
মাথার উপর ভয়ংকর শব্দে ডেকে উঠলো নাম না জানা বিশাল পাখি।লুকাস থাকলে হয়তো সেই পাখির ভাষা বুঝতো।কিন্তু লুকাস এখানে নেই।সে হ্যাভেনের সাথে চার্চে গিয়েছে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাতে।শয্যা নেওয়া রাজমাতা এমিলিকে ফেলে আসতে পারেন নি রাজা হেনরি।কিন্তু বিশাল সৈন্য সামন্ত পাঠাতে চেয়েছিলেন।লিও এক বাক্যে সব কিছু নিষেধ করেছে।পুত্রের জেদ আর হুকুমের কাছে টিকতে না পেরে এমিলির কক্ষে খিল আটকেছেন রাজা হেনরি।যদিও আলফ্রেড বুক ফুলিয়ে লিও এর সাথে এখানে এসেছে কিন্তু এই পর্বতের ভয়াবহ চেহারা দেখে একাকী তার বড্ড ভয় করছে।এই ভয় নিজের প্রাণ হারানোর নয়।এই ভয় লিও আর রাজকুমারী ক্যারোলিন এর জন্য।শেহজাদী ম্যপল জুন কি আদৌ পারবে সেই হাজার বছরে একবার ফোটা রক্তাক্ত জুলয়েট গোলাপটি আহরণ করতে?
********
বিশাল বড় ঝোপ আর কাঁটাযুক্ত অদ্ভুত এক কুচকুচে কালো রঙের লতানো গাছ।পাশে থাকা অন্য গাছের সহায়তায় সেই গাছের কান্ড এবং ডগা ছুঁতে চাইছে অসীম আকাশ।গাছটির গড়ন বাকি সব গাছের থেকে আলাদা।পাতার চাইতে কাঁটার সংখ্যাই বেশি।সব চেয়ে ভয়ানক যেই ব্যাপার সেটা হচ্ছে গাছটিতে যেই কাটা গুলো রয়েছে সেগুলো দেখতে ছুরির ধারালো ফলার ন্যয়।নিকষ কালো আধারেও সেগুলো চকচক করছে।সেই ভয়ানক কাটা আগলে রেখেছে ছোট একটা গোলাপের কুড়ি কে।ছোট কুড়িটি থেকে অনবরত চুয়ে চুয়ে ঝরে যাচ্ছে তাজা রক্ত।তবে কি এই কাটা গুলোই কুড়িটিকে আঘাত করছে?
ধীরে ধীরে ম্যাপলের পানে নিজের হাত বাড়ালো লিও।লিও এর হাত বাড়ানো দেখে ছিটকে সরে আসতে চাইলো ম্যপল।কিন্তু গাঁয়ের সমস্ত শক্তি যেনো দৈত্য তুল্য জন্তুটি শুষে নিয়েছে।তবুও লিও কে বাধা দেবার চেষ্টায় মিহি নিভু কন্ঠে ম্যাপল বলে উঠলো
“আমার হাতে দস্তানা নেই।তোমার শরীর ঝলসে যাবে।
ম্যাপলের দুর্বল ছোট সুরের কথায় কিঞ্চিৎ ঠোঁট কামড়ে হাসলো লিও।এরপর তাকে এক ঝটকায় কোলে তুলে ঠোঁটে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে উঠলো
“আজকের রাত টা কেউ আমাকে কিচ্ছুটি করতে পারবে না।কারন এক রাতের জন্য সমগ্র পৃথিবীর চাইতেও বেশি শক্তিশালী হয়ে এসেছি আমি।
লিও এর কথার মানে বুঝলো না ম্যাপল।নিজের হাত দুটো কোনো মতে সরিয়ে রেখে লিও এর চোখে চোখ রাখলো।
সেই চোখে নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে লিও বলে উঠলো
“এভাবে দেখো না।হৃদয় খাক হয়ে যায়।
ম্যাপলের কাছে লিওকে আজকে একটু বেশি ই বাহাদুর আর শেইমলেস মনে হচ্ছে।আগে কখনো এমনটা মনে হয়নি।বরাবরই লিও এর চোখে মুখে কষ্টের ছাপ দেখা গিয়েছে।শুধু তাই নয় গলার স্বর টা বরাবরই আহত ঠেকেছে।তবে আজ লিও এতো স্বতঃস্ফূর্ত কেনো?ক্যারোলিন এর আত্মার মুক্তি মিলবে সে জন্য?
ম্যাপল কে আর ভাবতে না দিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটে চললো পর্বতের এপাড় ওপাড়।কিন্তু এ কি?কোথায় সেই রক্তাক্ত জুলিয়েট গোলাপ?..
হঠাৎই চলতে চলতে বিশাল এক অজগর পথ আগলে দাঁড়ালো তাদের।সেই অজগরের শরীরের আকৃতি দেখে ভয়ে মূর্ছা যাবার অবস্থা হলো ম্যাপলের।নাক দিয়ে যেনো শ্বাস নয় আগুন ঝরছে।বিকট সেই শ্বাস টানের শব্দে লিও এর গলা জড়িয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ম্যাপল।ধীরে ধীরে অজগর এগিয়ে এলো লিও এর সামনে।চোখে মুখে তার বিশাল ক্রুরতা।মাথা উঁচিয়ে ফুসফুস শ্বাস টেনে সেই অজগর বলে উঠলো
“আমাকে পার করলেই মিলবে সেই অসাধ্য ফুল।
সাপের মুখে মানুষের মতো কথা শুনে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছালো ম্যপল।লিও ম্যাপল কে কোল থেকে নামিয়ে একটা নিরাপদ জায়গায় দাঁড় করিয়ে গম্ভীর তেজী কন্ঠে সেই অজগরের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
“চলো তবে তোমার সীমানা পার করা যাক ।
পুনরায় ভয়ানক হাসলো অজগর।এরপর বলে উঠলো
“এই ফুল কেবল তুমিই আহরণ করতে আসোনি এই কালো পর্বতে।সময়ের পরিক্রমায় কতো হাজার পুরুষ আমার উদরে স্থান নিয়েছে সেই খবর কেউ রাখেনি পিচাশ পুরুষ।তোমাদের দুজনকেও স্বাগতম।
অজগরের কথায় ভীত হয়ে ম্যাপল গাছের সাথে ঠেস দিয়ে বসে গেলো।যদি এই ভয়ানক অরণ্যে লিও এর কিছু হয়ে যায় তখন কি হবে তার নিজের সাথে?তার স্থানও কি এই ভয়ানক অজগরের পেটে হবে?তবে ভাগ্য দেবতার সেই প্রতিশ্রুতি?
মুহূর্তেই লেগে গেলো বিশাল যুদ্ধ।আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে লিও এর ছুটে চলা আর অজগরের ফসফস শ্বাস।বার বার নিজের বৃহৎ লেজ দিয়ে লিও কে পেঁচিয়ে ধরার চেষ্টা করছে অজগর টি।কিন্তু লিও যেনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।অজগরের লেজের ধাক্কায় ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে বড় বড় নাম না জানা কালো রঙের বিশালাকার গাছ গুলো।এতো কিছুর মধ্যেও ম্যাপল কে বার বার রক্ষা করে চলেছে লিও।শেষমেষ অজগরটি তার বৃহৎ শক্তিশালী লেজ দিয়ে আঘাত হানতে সক্ষম হলো লিও এর প্রশস্ত পিঠে।সেই আঘাতে মুখ থুবড়ে গাছের সাথে শক্ত ধাক্কা খেলো লিও।লিও এর ধাক্কায় চুরচুর হয়ে ভেঙে পড়লো গাছটি।কপাল এবং গালের কাছটা বেশ করে আঘাত প্রাপ্ত হলো।লিও এর এহেন আহত অবস্থা সহ্য হলো না ম্যপলের।লিও ঠিক আছে কি না দেখার জন্য ছোট হৃদয় খানা চনমনে হয়ে উঠলো।এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো লিও এর কিছু হয়ে গেলে তার পৃথিবী ধু ধু সাহারা মরুভূমির ন্যয় হয়ে উঠবে।তাই লিওয়ের সতর্ক বাণী ভুলে জায়গা ছেড়ে উঠে এসে দৌড়ে লিও এর পানে এগিয়ে আসতে আসতে চিৎকার করলো ম্যাপল।
“লিও!
কিছু বুঝে উঠবার আগেই অদৃশ্য মায়া এসে আটকে দিলো ম্যাপলকে।শক্ত লতা দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে দিলো তাকে।ক্রোধে চোখ জ্বলে উঠলো লিওয়ের।নিজের হিলিং পাওয়ার ব্যবহার করে ক্ষত সারিয়ে কোমরে গুঁজে রাখা নিজের তলোয়ার খানা হাতে তুলে হাওয়ার বেগে কুণ্ডুলি পাকিয়ে অজগরের লক্ষ্য ভ্রষ্ট করলো।চারপাশে খুঁজেও যখন আর লিওকে পাওয়া গেলো না তখন উন্মাদ হয়ে উঠলো অজগর।হা করে লকলকে জিভ বের করে ভয়ানক ফুঁসে উঠে তেড়ে আসতে চাইলো ম্যাপলের দিকে।কিন্তু আকস্মিক ঝড়ের বেগে লিও এসে নিজের বংশপরম্পরায় পাওয়া তলোয়ার খানা খাড়া ভাবে ঢুকিয়ে দিলো অজগরের মাথার উপর দিয়ে।সেই বৃহৎ মন্ত্রপূত তলোয়ার অজগরের মগজ ভেদ করে বেরিয়ে এলো গলা দিয়ে।বিকট ভয়ানক চিৎকার করে নিমিষেই কাঁপিয়ে তুললো ব্ল্যাক পর্বতের চারিধার।থরথর করে ভুমিকম্পের ন্যয় কেঁপে উঠলো মাটি।ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে এলো অজগর।একপর্যায়ে হাওয়ায় মিশে গেলো কুচকুচে কালো রঙের অজগরটি।শুধু মাটিতে পরে রইলো লিও এর তলোয়ার।
তলোয়ার হাতে নিয়ে ম্যাপলের পানে এগুতেই দৃষ্টি হলো বিস্ফারিত।একটি নয় বরং চারটি গাছের সাথে চারজন মানবী বাঁধা।প্রত্যেকেই ম্যাপলের চেহারা আর বেশ ভূষায় নিজেদের সাজিয়েছে।চতুর লিও বুঝতে পারলো পুরোটাই মায়া।মনে মনে কুটিল হেসে এগিয়ে এলো লিও।সকলেই নিজেদের জীবন বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছে লিও এর কাছে।এদিকে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।পাখির ডাকে এতটুকুই বুঝতে পারলো লিও।কিন্তু সূর্যের আলোর কোনো ছিটেফোঁটা ও নেই।হঠাৎ লিও খেয়াল করলো ম্যাপলের সাথের আলোকরশ্মি গুলো এক জায়গায় স্থির হয়ে রয়েছে।সেই আলোয় প্রত্যেকের চোখের দিকে গভীর নজর বুলালো লিও।একই সুরে,একই অঙ্গভঙ্গিতে লিও কে ডেকে চলেছে তারা।প্রত্যেকের চোখেই জলে টইটম্বুর।গোলকধাঁধার এই চক্করে কাকে রেখে কাকে ধরবে লিও?নিজের গভীর নাসারন্ধের সাহায্যে চোরা চোখে খুঁজে চললো ম্যাপলকে।প্রথম জনের কাছে যেতেই মেয়েটি হুহু করে কেঁদে বলে উঠলো
“প্রিয়তম আমাকে মুক্ত করো।হাতে আর বেশি সময় নেই।ফুল তুলে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে আমাদের।
মানবীর আর্তনাদে লিও নাটকীয় ভঙ্গিতে শুধালো
‘ফুল নিয়ে কোথায় ফিরবো আমরা?
উত্তর দিতে পারে না মানবী।ক্রুর হেসে নিজের তলোয়ার দিয়ে এক কোপ বসিয়ে দিলো মেয়েটির গলা বরাবর।মুহূর্তেই আর্তনাদ করে হওয়ায় মিলিয়ে গেলো সেই মানবী।
এহেন ভয়ানক দৃশ্যে বাকি তিন মানবী আহাজারি করে কেঁদে উঠলো।লিও দ্বিতীয় জনের কাছে যেতেই সে বলে উঠলো
“আমি তোমার প্রেয়সী।বাকি সব ধোকা।
আর সময় ব্যয় করলো না লিও।নিজের হাতের শক্তিতে টিপে ধরলো মানবীর গলা।সময়ের ব্যবধানে সেও মিলিয়ে গেলো হাওয়ায়।বাকি রইলো দুজন।
তৃতীয় জনের শরীরের মিষ্টি সুবাসে লিও এর জলন্ত অগ্নি চোখ স্থির হলো সেই সাথে বন্ধ হয়ে এলো চোখের পাতা।অধিক লালচে ঠোঁটে বাঁকা হেসে সম্মোহিত কন্ঠে লিও বলে উঠলো
“এই গন্ধে বার বার মাতাল হয়ে চোখ বুঝতে চাই আমি শেহজাদী ক্যারোলিন ডিসৌজা।
কথাটি বলেই ম্যাপলকে মুক্ত করে নিজের বুকে শক্ত করে চেপে ধরলো।ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে ম্যপল বলে উঠলো
“যদি ভুলে আমাকে তলোয়ার দিয়ে আঘাত করতে তখন?তখন কি হতো এক বারো ভেবে দেখেছো?
ম্যাপল কে আরো শক্ত করে বুকে চেপে ধরে চোখ বুজে লিও বলে উঠলো
“তোমাকে চিনতে ভুল হবার মতো ভুল এই জর্জ লিও কখনোই করতে পারেনা আমার হৃদ্যেশ্বরী।এই গন্ধ যে আমার হৃদয়ে গাঁথা।এই মিষ্টি গন্ধ উপভোগ করে কত শত রাত কেটেছে তা তো তুমি জানো ও না।
ম্যপল লিও কে শক্ত হাতে জড়িয়ে অভিমানী কন্ঠে বলে উঠলো
“জানতে চাই ও না।
ম্যপলের ছোট চিবুক চেপে ধরে লিও বলে উঠলো
“জানতে দেবো ও না।চলো এবার আমার সাথে।
আলোকরশ্মি কে অনুসরণ করে কিছুদূর যেতেই চোখে পরলো সেই রক্তাক্ত গোলাপ।মুখে হাসি ফুটলো ম্যপলের।কিন্তু ভীত হলো লিও।কাটা ভেদ করে কিছুতেই এই গোলাপ তোলা যাবে না।ওখানে হাত বাড়ালেই কেটে টুকরো টুকরো হবে তার প্রেয়সীর নরম পদ্মের ন্যায় হাত দুটো।তাহলে উপায়?
হঠাৎই ম্যাপলের হাতের চিহ্ন টা জ্বলে উঠলো সেই সাথে দৃশ্যায়মান হলো রুপার এক ধারালো তলোয়ার।প্রশস্ত হেসে সেই তলোয়ার দিয়ে ম্যপল ছাটাই করলো ভয়ানক তীক্ষ্ণ ধারালো কাটা গুলো।কাটা গুলো কেটে ফেলার সাথে সাথেই সুন্দর সুগন্ধি বাতাস প্রবাহিত হলো এবং সেই শীতল বাতাসে প্রস্ফুটিত হলো রক্তিম কুঁড়িটা।এরপর বিনা বাধায় সেই ফুল তুলে তৃপ্তির হাসি হাসলো ম্যপল।গাছ থেকে ফুল তুলতেই আগুনে ঝলসে গেলো বৃহত লতানো গাছটি,সেই সাথে বন্ধ হলো পাপড়ি থেকে রক্ত ঝরা।
ফুলটিকে নিজের জামার অস্তিনে ঢুকিয়ে অধিক উচ্ছাসে লিও কে জড়িয়ে ধরে গভীর শ্বাস নিলো ম্যপল।এরপর লিওয়ের লালচে মোহনীয় ঠোঁট আকড়ে ধরে নিজের বহু দিনের খায়েশ মিটিয়ে দীর্ঘ চুমু আকলো।উন্মাদ হতে চাইলো লিও।কিন্তু পারিপার্শ্বিক বিবেচনায় ম্যাপল কে ছাড়িয়ে বলে উঠলো
“পর্বতের বাইরে স্যান্ডি আর আলফ্রেড অপেক্ষা করছে।আমাদের ফিরতে হবে।
পরিস্থিতি বুঝে মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো ম্যপল।এরপর লিও তাকে ছোট শিশুর ন্যয় কোলে তোলে ঝড়ের বেগে ছুটলো ফ্লাকি পর্বতের দিকে।
#চলবে
#দ্যা_লাস্ট_ব্লাড_মুন
#পর্ব_৩০
#সারিকা_হোসাইন
********
হেনরির রাজপ্রাসাদ যেনো কতোকাল পর পুনরায় তার জীবন এবং জৌলুস দুই ই ফিরে পেলো।শেষ কবে দিনের বেলা এই রাজপ্রাসাদ হাসি আনন্দে মেতেছিলো সেটা ভুলে গিয়েছেন এমিলি এবং হেনরি।মানব দাস দাসীর সহায়তায় প্রাসাদের সমস্ত ধুলো ময়লা পরিষ্কার করা হয়েছে ।মৃতপ্রায় ফুল বাগানটির বিশেষ যত্ন নেওয়া হচ্ছে।চারপাশে আনন্দ আর আনন্দ।তান্ত্রিক সাসালা কুয়েরতোয়ার সহায়তায় ক্যারোলিন এর আত্মার মুক্তির সমস্ত আয়োজন করা হচ্ছে।ম্যাপল এবং লিও ভালোয় ভালোয় ফিরে এসেছে এর চাইতে আনন্দের কি হতে পারে?আর তাছাড়া হাজার বছরের অভিশাপ ও কাটতে চলেছে।লিও তার ভালোবাসার মানুষকে একান্ত আপন করে নেবে।এখন আর মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর মতো কিচ্ছুটি নেই।হাজার বছরের অপেক্ষার অবসান খুব দ্রুত ঘটতে চলেছে।
আসার পর থেকেই স্যান্ডি ম্যাপলের বিশেষ যত্নের ব্যবস্থা করেছে।মাঝে মাঝে ওই ভয়ানক ট্যাট্রি পর্বতের ভেতরের ভয়াবহতা জিজ্ঞেস করছে।ক্লান্ত ম্যাপল দুই একটার উত্তর দিতেই ভয়ে পাংশু হলো স্যান্ডির সফেদ রক্তিম মুখশ্রী।ফুল আহরণে যেই উৎফুললতা ছড়িয়ে ছিলো লিওয়ের কড়া পরা অন্তরে নিমিষেই তা ব্যথায় বিষিয়ে উঠলো।উপচে পড়া চোখের জল রোধ করে সকলের অগোচরে এসে দাড়ালো ক্যারোলিন এর কফিন কক্ষে।ধীরে ধীরে কক্ষটির রূপের পরিবর্তন ঘটেছে।পুরো কক্ষ জুড়ে যেই ঘন সাদা সাদা মসৃন বরফের আস্তরণ ছিলো সেগুলো এখন গলতে শুরু করেছে।হাজার বছর ধরে ফুটে থাকা ইরানি বৃহৎ গোলাপ গুলো ও নিজেদের জৌলুস হারিয়ে ঝড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।লিও বুঝতে পারলো মহেন্দ্র ক্ষন খুব নিকটে।বিদায়ের দামামা বেজে গিয়েছে।এবার ক্যারোলিন এর যাবার সময়।
বিষাক্ত শ্বাস গোপন করে কাঁপা কাঁপা হাতে কফিনের ঢাকনা খুলে হাটু মুড়ে ভেজা মেঝেতে বসে গেলো লিও।কফিনে শায়িত ক্যারোলিন এর শরীর এখনো অক্ষত অবস্থায় পরে রয়েছে।এক পলকের জন্য তাকালে মনে হবে পরম ক্লান্তিতে সুখ নিদ্রা গিয়েছে এই শেহজাদী।কিন্তু তার হৃদয়ে যেই কঠিন হাতিয়ারের আধিপত্য তা কি কেউ জানে?
নিজের হাতে ক্যারোলিন এর ফ্যাকাশে গালটা আলতো স্পর্শ করে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো লিও।লিও এর চোখের তেঁতো জল ভিজিয়ে দিলো ক্যারোলিন এর মুখশ্রী।কষ্টে তার বুক ভেঙে যাবার উপক্রম।আজ ক্যারোলিন বেঁচে থাকলে তাকে এতো এতো কষ্ট সহ্য করতে হতো না।আর না এতো বছরের অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো।
“আজ তোমার দেহের মুক্তি মিলবে প্রিয়তমা।অনেক কষ্ট সহ্য করেছো এবং এখনো করে যাচ্ছ তুমি আমার মতো নিকৃষ্ট এক পিচাশ কে ভালোবেসে।বিধাতাও বুঝি তোমার ভালোবাসার কাছে হার মেনেছে।না হলে তোমাকে পুনরায় আপন করে পাওয়া হতো না আমার।শেহজাদী ম্যপলের মধ্যে তোমার বাস হলেও আমি আজীবন ক্যারোলিন নামটাকেই ভালো বেসে যাবো।নামটা যে আমার বড্ড প্রিয়!
কথা গুলো বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে এলো লিওয়ের।ব্যাথায় কন্ঠনালী ছিঁড়ে যাবার উপক্রম হলো।বুক ভার হয়ে মুখে জড়তা এসে ভিড় করলো।হৃদয়ের কষ্টে আর কোনো শব্দ কণা বেরুলো না ঠোঁট গলিয়ে।কফিনের পাটাতন ধরে মাথা ছুঁইয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলো লিও।
পুরোটা দৃশ্য পেছন থেকে দেখে সিক্ত চোখে লিওয়ের পাশে বসে গেলো ম্যপল।এরপর শক্ত হাতে লিওকে বুকে জড়িয়ে কপালে উষ্ণ ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে উঠলো
“কেঁদো না,সব ঠিক হয়ে যাবে।যেই ভালোবাসা বেশি কষ্ট দেয় সেই ভালোবাসাই আবার পরম শান্তি এনে দেয়।আমি আর কখনো তোমায় ফেলে কোত্থাও যাবো না।প্রমিস।
ম্যপলের হাতে চেপে ধরে নিজের গালে ছুঁইয়ে কাতর কন্ঠে লিও বলে উঠে
“আবার আমায় ছেড়ে যদি কোথাও হারিয়ে যাও তবে আগুনে জ্বলে আত্মহুতি দেবো আমি।
লিওয়ের এহেন কথায় নিজের সরু আঙ্গুলি লিও এর লালচে ঠোঁটে চেপে ধরে ব্যথিত কন্ঠে ম্যপল বলে উঠলো
“এমন অলুক্ষনে কথা ভুলেও মুখে এনো না।আমি তোমাকে ফেলে আর কোথাও যাবো না।কঠিন প্রতিশ্রুতি দিলাম ।
হঠাৎই সভাষদে দুজনের ডাক পড়লো।তান্ত্রিকের সমস্ত যোগাড় জন্তু শেষ।এবার ম্যাপলের পবিত্র হাতে কফিনে শায়িত ক্যারোলিন এর বুকে স্থাপন করতে হবে ফুলটি।হাতিয়ার খুলে গেলেই হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে ক্যারোলিন এর পবিত্র দেহ।অজানা ব্যথায় হৃদয় ভার হলো ম্যপলের।বেঁচে থেকেও নিজের দেহের মুক্তি দেয়া কষ্টসাধ্য ব্যপার।তবুও ভাগ্যের পরিক্রমায় তাকে করতে হচ্ছে এই কঠিন কাজটি।
********
ফ্লাকি ঝর্ণার পবিত্র পরিস্কার জলে গোসল করানো হয়েছে ম্যাপল কে।পরিধান করানো হয়েছে বিশেষ মন্ত্রপূত রাজকীয় পোশাক।তান্ত্রিক সাসালা সুনিপুণ ভাবে সমস্ত কিছু গুছিয়ে ম্যপলের উদ্দেশ্যে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“শুভ ক্ষন চলছে।এবার তুমি পবিত্র ফুলটা হাতিয়ার এর ক্ষত বরাবর রেখে ঈশ্বরের প্রার্থনায় হাত জোড় করে হাটু গেড়ে বসে যাও।
তান্ত্রিক এর কথা শুনে ভীত ম্যপল একবার হ্যাভেন আর লিও এর পানে চাইলো।সামনে কি ঘটনা ঘটবে এ বিষয়ে কেউ কিচ্ছুটি জানে না।তবুও শেষ ভরসা হিসেবে লিও চোখের ইশারায় ম্যপল কে আশ্বস্ত করলো এবং হ্যাভেন ব্যথিত চোখে কফিনের পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।কিন্তু রাজমাতা এমিলি নিজের ভার ছেড়ে দিয়ে রাজা হেনরির বুকে লুটিয়ে পড়লেন।ছেলের দুর্দশা আর চোখে দেখতে পারবেন না তিনি।
ম্যপলের হৃদযন্ত্রে দ্রিম দ্রিম শব্দে হাতুড়ি পেটাচ্ছে কে যেনো।মেঝে থেকে পদ যুগল উঠতে চাইছে না।অসাড় হয়ে আসছে সমস্ত শরীর।গায়ের সফেদ রঙা রেশমি হালকা পোশাক হাজার মণ ওজন ঠেকছে।হিম শীতল শৈত প্রবাহেও গলা শুকিয়ে কাঠ হলো।
ম্যপল কে স্থির দেখে দ্বিতীয় বার তান্ত্রিক বলে উঠলেন
“সময় বেশি খন থাকবে না।ভয়ের কিছুই নেই মা।মনে বিশ্বাস রেখে কার্য সম্পন্ন করো।
তান্ত্রিকের কথা কর্ণপাত হতেই স্যান্ডির পানে কাতর দৃষ্টি দিলো ম্যপল।স্যান্ডি মাথা ঝাকিয়ে সাহস যুগাতেই শীর্ন হাতে কফিনের ঢাকনা খুলে সজল চোখে বলে উঠলো
“অন্যের দেহে বেঁচে থেকে নিজের দেহকে মুক্তি দেয়া কতোটা নির্মম তা কেবল যার সাথে ঘটেছে সেই বুঝবে।
আর অপেক্ষা করলো না ম্যপল।হাতের গোলাপটি ক্যারোলিন এর বুকে ছোয়াতেই তরতাজা রক্তে ভেসে গেলো ক্যারোলিন এর বক্ষ।যেই ফুল কিছুক্ষন আগেও সাধারণ একটা গোলাপ ছিলো মুহূর্তের ব্যবধানেই তা রক্তের ধারায় রূপ নিলো।ধীরে ধীরে নিঃশেষ হলো ফুল এবং প্রবাহিত হলো মিষ্টি উষ্ণ সুগন্ধি বাতাস।ফ্যাকাশে ক্যারোলিন রাতারাতি পূর্বের ন্যয় আভাযুক্ত হলো।স্বর্গীয় সৌন্দর্য এসে ভর করলো ক্যারোলিন এর সর্বাঙ্গে।ধীরে ধীরে বুকের ছাতি থেকে খুলে এলো মন্ত্রপূত অমর হাতিয়ার।হাওয়ার দাপটে কফিনের বাইরে এসে হাওয়ায় ভাসতে লাগলো সেই ধারালো হাতিয়ার।মনের খেয়ালে হাত বাড়িয়ে সেই হাতিয়ার স্পর্শ করে ফেললো ম্যপল।মুহূর্তেই বাতাসে ভেসে এলো অদৃশ্য আওয়াজ।
“আজ থেকে তুমি অমর শেহজাদী।তোমার ভালোবাসা পরিপূর্ণতা পাক।সুখী এবং সমৃদ্ধি এসে ঘিরে ধরুক তোমাদের।
কিছু বুঝে উঠবার আগেই চোখ খুলে তাকালো ক্যারোলিন।কফিন ছেড়ে উঠে এসে ধীরপদে লিও এর সামনে এসে দাড়ালো।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ছোট বাচ্চার ন্যয় কেঁদে উঠলো লিও।লুকাস কে বুকে জড়িয়ে সমানে অশ্রু বিসর্জন দিলো হ্যাভেন।ক্যারোলিন কে পুনরায় এভাবে দেখতে পাবে এটা তার সুখময় স্বপ্ন।
লিও এর চোখের জল মুছিয়ে ক্যারোলিন বলে উঠলো
“দৈহিক ভাবে তোমাকে ছেড়ে যাচ্চি আত্মিক নয়।শেহজাদী ম্যপল এর মধ্যেই আমাকে পাবে তুমি।নামে কি আসে যায়?মানুষ তো একই।
লিও কে ছেড়ে হ্যাভেনের কাছে এসে প্রশস্ত হাসলো ক্যারোলিন।এরপর হ্যাভেন কে বুকে জড়িয়ে বলে উঠলো
“বিশ্বসভাজন আর ভরসাযোগ্য হিসেবে তোমার কাছে লিও কে রেখে যাচ্ছি।জানি অবশ্যই দেখে রাখবে।কখনো হাত ছেড়োনা বন্ধু।তোমার জন্যই যে মুক্তি পেলাম।এই প্রাপ্তি কি করে শোধ করি বলো তো?
কান্নার দমকে কথা বলার বুলি হারালো হ্যাভেন।শুধু ভাঙা স্বরে বলে উঠলো
“আমার হৃদয়ে আজীবন জীবন্ত তুমি ক্যারোলিন।
আর কিছু বলার মতো সময় পেলো না ক্যারোলিন।মিষ্টি হাওয়া এসে ঘেরাও করলো তাকে।বাইরে শুরু হলো ভারী তুষারপাত।আকাশে মেঘ আর বজ্রপাতের কঠিন খেলা।স্মিত হাসলো ক্যারোলিন।লিও এর দুই হাত চেপে ধরে আহত কন্ঠে বলে উঠলো
“আসছি তবে,ভালো থেকো!
ধীরে ধীরে ক্ষয় হলো ক্যারোলিন এর দেহ সেই সাথে বাহিরে ঝরতে লাগলো তুষার বৃষ্টি।
*******
পেরিয়ে গিয়েছে এক পক্ষ সময় কাল।ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে সব কিছু।লিও আর ম্যপলের জীবনে নতুন কোনো বিপদ আসেনি।
হ্যাভেন তার প্রিয়তমা ইভাকে বিবাহ করে হেনরির প্রাসাদে এসেই উঠেছে।কেননা ম্যপল বা লিও কেউ তাকে ছাড়েনি।
এদিকে হেনরির রাজপ্রাসাদ এ এক সপ্তাহ ধরে লিও আর ম্যপলের বিবাহের আয়োজন চলছে।রাজা হেনরি একমাত্র পুত্রের বিবাহে কোনো কিছুর কমতি রাখতে চান না।দূর দুরান্তের নিকট আত্মীয় দেরও নিমন্ত্রণ করেছেন নিজে উপস্থিত হয়ে।পোল্যান্ড শহরের নামজাদা প্রখ্যাত কারিগর দিয়ে বানানো হয়েছে ম্যাপল আর লিও এর বিবাহের দামি পোশাক।ভুতুড়ে মাকড়ের জালে আবৃত জীর্ণ প্রাসাদ আলো রোশনাই এ ঝা চকচকে অবস্থা।সর্বদা তাজা ফুলের গন্ধে ম ম করছে চারিধার।আলফ্রেড আর স্যান্ডির প্রেমটাও ধীরে ধীরে গাঢ় হয়েছে।সুঠাম দেহের অধিকারী সুদর্শন আলফ্রেড সাধারণ মানবীর প্রতি বেশ যত্নশীল ও বটে।সারাখন চোখে চোখে হারায় স্যান্ডি কে সে।ম্যাপলের খাস কাছের লোক হিসেবে স্যান্ডি অবস্থান করছে হেনরির প্রাসাদে।
রাতের দ্বিপ্রহর গড়াতেই ঘুমের প্রস্তুতি নিতে চললো ম্যপল।কারন আগামী সূর্যদয় হলেই লিও আর সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে।সারাদিন প্রচুর ধকল যাবে সেই সাথে অসভ্য লিও তো রয়েছেই।লিও এর কথা মনে পড়তেই লাজুক হেসে বেলকনির দরজা আটকে কক্ষে ফিরে এলো ম্যাপল।স্যান্ডি আজ আসেনি তার কক্ষে।ইভা আর সে মিলে বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত।কারন ভ্যাম্পায়ার রা বিয়ের বিষয়ে সেরকম কোনো জ্ঞান রাখেনা।
এজন্য সকল দায়িত্ব পড়েছে হ্যাভেন এর উপর।বিয়ে পরানোর দায়িত্ত্ব সে ই পালন করবে।
“দরজা আটকে দিলেই কি আমি তোমার কাছে ঘেঁষতে পারবো না শেহজাদী?
আকস্মিক সম্মোহিত পুরুষালি কন্ঠে ধরফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায় ম্যপল।বাতি দানে থাকা মোমের হলদেটে শিখায় প্রেমিক পুরুষের আকর্ষণীয় মুখশ্রী বেশ করে নজর কাড়ছে।হৃদযন্ত্রের ধুকপুক শব্দে বেতাল হয়ে প্ৰম্প গাউন খামচে ধরে চোখ বুজে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো ম্যপল।এই দৃশ্য দেখে অমায়িক হাসলো লিও।ধীরপায়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিজের বাহু দিয়ে প্রেয়সীর কোমর আগলে হেচকা টানে বুকে মিশিয়ে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো
“আজকের রাত এতো দীর্ঘ কেনো বলতে পারো?
লিওয়ের শীতল শরীর ম্যাপল এর উষ্ণ শরীরটাকে যেনো জমিয়ে দিচ্ছে।শ্বাস হীন লিও এর গভীর চোখে তাকিয়ে তিরতির করে কেঁপে উঠলো ম্যাপল এর গোলাপি ঠোঁট জোড়া।সেই কম্পনে নিজের খেই হারিয়ে লিও বলে উঠলো
“অনেক বড় বড় ভুল গুলো যদি আজই করে ফেলি খুব পাপ হবে কি?
লিও এর প্রশ্নে চোখ খুলে স্মিত লাজুক হাসলো ম্যপল।এরপর লিও এর কলার খামচে ধরে শক্ত চোখে শুধালো
“পিচাশ প্রেমিক আজ পাপ পুণ্যের হিসেব কষছে কেনো?
ম্যাপল কে শক্ত করে জড়িয়ে বুকে চেপে ধরে তৃপ্তির স্বরে লিও বলে উঠলো
“নিজের জন্য নয়,স্বয়ং শেহজাদীর জন্যই এই ভাবনা।
“তাহলে সবুর করো।
“করতে পারছি না।মস্তিষ্ক পাগল করে তুলেছে আমাকে।সেই সাথে কামনার আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিচ্ছে প্রতি মুহূর্তে।
“একটা রাত সহ্য হচ্ছে না?
“এরকম হাজার রাত পারি দিয়েছি আমি সুইটহার্ট।
“তবে আজ কেনো এতো অধৈয্য ?
“কারন তোমাকে ছুঁতে কোনো বাধা নেই।
বিগলিত হেসে দেয়ালে ঝোলানো তলোয়ার চট করে হাতে তুলে লিও এর এডাম অ্যাপল বরাবর তাক করে ম্যাপল বলে উঠলো
“আর এক পা এগুলো ধর থেকে মাথা আলাদা করবো।
ছোট ছোট চোখে লিও বাঁকা হেসে বলে উঠলো
“এর শোধ কাল আমি অবশ্যই তুলবো।
“দেখা যাবে।
“বাইরে ঘুরতে যাবে আমার সাথে?ফ্লাকি পর্বতের সর্বোচ্চ চূড়ায়??
লিও এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আরো প্রশস্ত হেসে ম্যাপল শুধালো
“আজ রাত আমার সাথে কাটানোর খুব ইচ্ছে দেখা যাচ্ছে?
‘এই ইচ্ছে আমার হাজার বছরের।কিন্তু মন্দ ভাগ্যের কারনে সম্ভব হয়নি।
লিও এর হাত জড়িয়ে ম্যাপল বলে উঠলো
“আলবাত যাবো।তবে একটা শর্ত আছে।
“কি শর্ত মহারানী?
“ডেইজি ফুলের বৃষ্টি দেখতে চাই।
প্রভুভক্ত দাসের ন্যয় মাথা নিচু করে আরেক হাত বুকে ভাঁজ করে লিও বলে উঠলো
“স্পেশাল আতিথেয়তার ব্যাবস্থা রয়েছে সেখানে আপনার জন্য।উপভোগ করতে চাইলে চাঁদের আলো বিদ্যমান থাকতেই যেতে হবে।
লিও এর গলা জড়িয়ে চোখে চোখ রেখে ম্যাপল শুধালো
“তবে দেরি কেনো?
“আপনার জন্য।
#চলবে