ভ্যাম্পায়ার কুইন পর্ব-৩২+৩৩

0
1

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ৩২
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
ড্রাগনদের হঠাৎ আক্রমনে আমাদের সেনা অনেকটা চমকে উঠলো। কেউ ভাবে নি এভাবে হঠাৎ হামলা করবে তারা। তাদের হামলায় আমাদের আরো সেনা আহত কিংবা নিহত হতো যদি না ইগড্রাসিল নিজের ফর্মে না আসতো। ইগড্রাসিল বিশাল একটা গর্জন করলো। ওর গর্জন শুনে সমস্ত ড্রাগন গুলো ভয় পেয়ে গেলো। ভয় পাবারই কথা। কারন ইগড্রাসিল তাদের পুরাতন রাজা ছিলো, যাকে ধোকা দিয়ে ড্রাগোনিয়া থেকে বের করে দিয়েছিলো তাদের নতুন রাজা। ড্রাগনদের সংখ্যা প্রায় এক হাজারের মতো। এতো সংখ্যক ড্রাগনদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে সেটা আমি ধারনা করি নি। হঠাৎ ভিরু বলে উঠলো,
.
–আমার নাম ভি রু দা ইগড্রাসিল। দ্যা ফায়ার ড্রাগন। ফায়ার রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী ড্রাগন আমি। ডেভিল কিং আমার পার্টনার। যদি কোনো ড্রাগন ডেভিল কিং এর বিরুদ্ধে লড়তে চাই, তাহলে তাকে আমার সাথে লড়তে হবে প্রথমে।(ভিরু)
।।।
।।।
ভিরুর কথায় সমস্ত ড্রাগন ভয় পেয়ে গেলো। এমনিতেও তারা অবাক ও হয়েছে ভিরুকে আমার সাথে দেখে। এখন তারা কি করবে সেটা হয়তো ভেবে পাচ্ছে না। এই সুযোগে আমার সমস্ত সেনা গেইটের মাধ্যমে যুদ্ধের ময়দানে চলে এসেছে। ভিরুর এন্ট্রিটা অনেকটা কাজে দিয়েছে। ড্রাগনরা কিছু সময় চুপ থাকলেও, হঠাৎ তাদের মধ্যে থেকে একজন বিশাল ড্রাগন চলে আসলো। দেখে মনে হচ্ছে সেই নতুন ড্রাগন রাজা।
.
–আমার নাম বেলপিস্ট। আমি ফায়ার ড্রাগন কিং। ইগড্রাসিল আপনি হয়তো এক সময় শক্তিশালী ছিলেন। কিন্তু সেই সময় শেষ। এখন ফায়ার রাজ্যের শক্তিশালী ড্রাগন আমি।(বেলপিস্ট)
.
–বেলপিস্ট আমি ভুলি নি আমাকে যে ধোকাটা তুমি দিয়েছিলে। আমি আশা করছিলাম তুমি নিজে এখানে আসবে। আজ সেই ধোকার ফল পাবে তুমি।(ভিরু)
.
–সেটা দেখা যাবে।(বেলপিস্ট)
।।।
।।।
বেলপিস্ট তার সেনাকে সামলাতে লাগলো, যেহেতু সেই এখন রাজা, তাই সমস্ত ড্রাগনকে তার হুকুমই মানতে হবে। সমস্ত এক হাজার ড্রাগনের বিশাল সেনা আকাশে উড়তে লাগলো, আর লোকির এজগার্ডের সেনারা দাড়িয়ে আছে আমাদের সামনে। মূলত কোনো ভাইকিংস কোনো ধরনের ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারে না। ভাইকিংস দের রাজার বংশের লোকেরাই ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারে। তাছাড়া বাকি সবাইকে নিডাভেলির ডয়ারফস দের বানানো অস্ত্রের সাহায্য নিতে হয়। ডয়ারফস রা পরিচিত তাদের বানানো ম্যাজিকাল অস্ত্রের জন্য। তারা যেকোনো ধরনের অস্ত্র বানাতে পারে। আমার হাতে যে এক্সোনিয়া রয়েছে, সেটাও ডয়ারফসদের বানানো। তাছাড়া এজগার্ডের সকল ভাইকিংস সেনাদের কাছে ডয়ারফসদের বানানো ম্যাজিকাল অস্ত্র রয়েছে। যেগুলো আমাদের সেনাকে টক্কর দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর তাছাড়া তাদের কাছে ড্রাগন এবং ডার্ক এল্ফসদের সাহায্য রয়েছে। লাইট এল্ফসদের থেকে ডার্ক এল্ফসদের থাকে ভয়ানক ম্যাজিকাল ক্ষমতা। কিন্তু ডার্ক এল্ফসদের বেশীর ভাগ স্পেল উচু বর্নের লোকেরাই ব্যবহার করে, তাই তাদের সেনা এতোটাও শক্তিশালী নই। আর আমাদের না জানিয়ে যদি অন্য কোনো দুনিয়ার সাহায্য লোকি নিয়ে থাকে তাহলে আমাদের জন্য কষ্ট হতে পারে।


বেলপিস্ট তার সেনাকে নিয়ে পিছনে চলে গেলো। বুঝতে পারছি না লোকি কি প্লান করছে। যা প্লান করছে হয়তো ভয়ানক কিছুই করছে। আমাকে সব দিক দিয়েই সতর্ক থাকতে হবে।
.
–লুসেফার, কর্ডিজ, লুইস, অর্নিজ।(আমি)
.
–জ্বী মাই কিং।(সকল জেনারেল)
.
–আমি মনস্টার সেনাদের কাছে একটু যাচ্ছি। তাদের জেনারেলের সাথে কথা বলতে। তোমরা চারজন নিজেদের সেনা ঠিক করো। লোকির যে কোনো সেনা আমাদের উপরে আক্রমন করলে সেটা রুখে দিয়ো আপাতোতো। আমরা কিছুক্ষনের জন্য ডিফেন্সিভ মোডে থাকবো।(আমি)
.
–ঠিক আছে, মাই কিং।(সকল জেনারেল)
।।।
।।।
আমি থরের সাথে করে যেতে লাগলাম মনস্টার সেনাদের দিকে।
.
–ডেভিল কিং আপনার কি কোনো সলিট প্লান আছে?(থর)
.
–আমি আগে কখনো যুদ্ধ করি নি। সব সময় কাহিনী শুনেছি যুদ্ধের। নিজের চোখে প্রথম কোনো আসল যুদ্ধ দেখতে পেলাম আজ।(আমি)
.
–আমি জানি আপনি অনেক নার্ভাস এখন। আমিও ছিলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে এটা অভ্যাস হয়ে যাবে। আমার জীবনে এটা কততম লড়াই হতে চলেছে আমি ঠিক জানি না। প্রতিটা যুদ্ধে হার জিত থাকেই, মূল বিষয় হলো আমরা সেটা থেকে কি শিখতে পারি। লোকির সাথে এটা আমার কততম লড়াই সেটা আমি সঠিক জানি না। কিন্তু আমি একটা জিনিস জেনেছি সেটা হলো ও আমার ছোট ভাই, যত কিছুই হোক আমি ওকে মারতে পারবো না কখনো।(থর)
.
–আপনি না হয় কিছু শিখেছেন, কিছু জেনেছেন, কিন্তু আপনার ভাই লোকি মনে হয় “”চেষ্টা করলে সবই করা যায়”” এই উক্তিকে মুখস্ত করে বসে আছে।(আমি)
.
–যাইহোক আমি একটা বিষয়ই আপনার কাছে রিকোয়েস্ট করবো আর, সেটা হলো লোকিকে জানে মারবেন না। তাকে আমার হাতে তুলে দিবেন।(থর)
.
–আচ্ছা ঠিক আছে।(আমি)
।।।
।।।
আমি মূলত যুদ্ধে নামতে চাচ্ছি না। আমার চার জেনারেলের কাছে লোকি কিছু না। কিন্তু আমি আপাতোতো প্রস্তুত নয় কোনো যুদ্ধের জন্য। আমার ডেভিল পাওয়ার বেশী ব্যবহার করলে ডেভিল সাইড বেশী শক্তিশালী হয়ে যাবে। আর যুদ্ধের সময় সকল ভয়ানক ভয়ানক স্পেলই ব্যবহার করতে হয়। যেহেতু লোকিও ম্যাজিক জানে তাই মোটেও ওর সাথে লড়াই টা সহজ হবে না। কিন্তু আমার চার জেনারেল এর আগেও লোকির সাথে লড়েছে এবং তাকে হারিয়েছে। তাই এই কাজটা তাদেরকেই করতে হবে আবার। আমার শুধু দেখা ছাড়া এখানে কোনো কাজ নেই। পরিস্থিতি খারাপ হলে আমাকে তখন কিছু একটা করতে হবে। এমনিতেই আন্ডারওয়ার্ল্ড গেইট খুলে আমার অনেকটা ডেভিল পাওয়ার খরচ হয়েছে, যার জন্য আমার ডেভিল সাইড এখনি যুদ্ধে নামতে চাচ্ছে। শুধু আমাকে এই যুদ্ধে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে হবে। আমি জানি লোকি দুটো জিনিস চাচ্ছে। প্রথমত আমাকে চাচ্ছে ওর পাশে। আর আমি না মানলে থর এবং আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে। লোকি খুব চালাক লোক। ওর স্বপ্ন হলো এই পুরো দুনিয়ার সমস্ত শক্তিশালী লোকদের আস্তে আস্তে ও মেরে ফেলবে, এবং তারপর পুরো দুনিয়াতে সেই শক্তিশালী হয়ে শাসন করবে। এটা কাউকে যদি আমি বলি নিশ্চয় সেটা মানাবে। কারন আমি ডেভিল কিং। লোকির সাথে জিনিসটা যায় না। মাথাটা আস্তে আস্তে ব্যথা ব্যথা শুরু করলো,
হাটতে হাটতে কোনো রকমে মনস্টার সেনাদের কাছে গেলাম। সেখানে একটা ক্যাম্প করা হয়েছে। সেখানে বসে আছে হ্যারি। আমাকে দেখেই হ্যারি কুর্নিশ দিয়ে বলতে লাগলো,
.
–মাই কি, লোকির কোনো বাহিনী এদিকে আক্রমন করছে না।(হ্যারি)
.
–হুমমম দেখতে পেলাম তো সেটা। লোকি হয়তো প্রথমে চাচ্ছে আমাদের ডেভিল সেনাদের হারাতে। তাতে করে তারা যুদ্ধে অনেকটা জয়ের দিকে থাকবে।(আমি)
.
–মনস্টাররা ডেভিলদের থেকে কম না। আমরা ডেভিলদের মতো শক্তিশালী না হলেও, আমাদের সেনার সংখ্যা আপনাদের থেকে দশগুন বেশী। তাই ছোট চোখে দেখবেন না আমাদের।(এনা পিছন থেকে এসে বললো)
.
–তুমি এখানে?(আমি)
.
–আমি কুইন অফ অল মনস্টার, রানী এলিনা কোয়াডার্ট, এখানে এসেছি মনস্টার সেনাদের জেনারেল হিসাবে। আর হ্যা আমি আপনাকে পারশোনাল ভাবে চিনি না, তাই আপনি করে বলুন।(এনা)
.
–ওওও, ঠিক আছে। কিন্তু আপনি এখানে এসেছেন কেনো?(আমি)
.
–সেটা আমার ইচ্ছা। আমি আসবো কি না আসবো সেটা একান্তই আমার ব্যাপার। আপনার এর ভিতর তো কোনো কথা থাকতে পারে না।(এনা)
.
–হ্যা সেটাও ঠিক। তারপরও…(আমাকে থামিয়ে দিয়ে এনা বলতে লাগলো)
.
–আমি কোনো দুর্বল মেয়ে নই, যে যুদ্ধে আসতে পারবো না। আর হয়তো আমার বদলে অন্য কেউ জেনারেল হলে ভয়ে মনস্টারদের কাপুরুষতার পরিচয় দিয়ে যেতো।(এনা)
.
–আচ্ছা এসেছেন ভালো হয়েছে।(আমি)
.
–তো প্লান কি বলুন, আপনাদের সেনা দেখে তো মনে হচ্ছে আমাদের শত্রুদের আক্রমন প্রতিহত করতে হবে।(এনা)
.
–হ্যা। আপাতোতো এটাই প্লান।(আমি)
.
–কিন্তু শত্রু তো আক্রমন করছে না। ওরা যদি আমাদের আক্রমনের অপেক্ষা করে বসে থাকে।(এনা)
.
–লোকি আমাদের আক্রমনের জন্য বসে থাকবে না। যদিও কিছুক্ষন অপেক্ষা করবে, কিন্তু এরপর ও নিজেই আক্রমন করবে আমাদের উপরে।(থর)
.
–হ্যা। সেই সময়ের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।(আমি)
.
–ডেভিল কিং, আমি বলবো আমাদের এই সময়ে ওদের উপরে আক্রমন করা উচিত।(থর)
.
–হ্যা আমাদের শক্তিশালী একটা সেনাদের পাঠিয়ে দেওয়া উচিত তাদের দিকে আক্রমন করার জন্য। আর বাকি সবাই ওদের অপেক্ষা করবে যদি ওরা অন্য কোনো প্লান করে থাকে।(এনা)
.
–হ্যা এটা বেশ ভালো বুদ্ধি।(থর)
.
–আমি এখনো ওদের মাঝে ডার্ক এল্ফসদের দেখতে পাচ্ছি না। আলফাইমের রানী বলেছে ওনারা শুধু ডার্ক এল্ফসদের সামলে নিবে। আর বাকি সেনাদের আমাদেরকেই দেখতে হবে।(আমি)
.
–তাতে তো আরো সহজ হয়ে যাচ্ছে আমাদের কাজ।(এনা)
.
–ওদের রয়েছে এক হাজার ড্রাগন। এখানেই আসল সমস্যা। ড্রাগনদের সাথে লড়তে হলে উড়তে পারে এমন সেনার দরকার। একটা ড্রাগনকে হারাতে কমপক্ষে পঞ্চাশজন মনস্টারের প্রয়োজন। এখন আপনারা বলুন আপনারা ভাগ হয়ে যাবেন নাকি এক পক্ষকেই আক্রমন করবেন?(আমি)
.
–আমাদের যেসব সেনা উড়তে পারে তারা ড্রাগনদেরকে হারাবে। যেহেতু অনেক হান্টার আছে যারা এই পর্যন্ত বেশ কয়েকটা ড্রাগন হারিয়েছে তাই সমস্যা হবে না। আর যেসব সেনা উড়তে পারে না তারা আপনাদের সেনার সাথে এজগার্ডের সেনার মোকাবেলা করবে।(এনা)
.
–ঠিক আছে তাহলে। আমরা হামলা করছি প্রথমে।(আমি)
।।।
।।।
যেহেতু থর ও বললো প্রথমে হামলা করতে তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম। যত তারাতারি যুদ্ধ হবে তত তারাতারি যেতে পারবো। আর আমার এনার রাগটাও ভাঙাতে হবে। অনেক রেগে আছে। মূল কথা হলো আমার চিন্তা হচ্ছে ওর জন্য। এমন একটা পরিস্থিতিতে পরেছি যে ওকে এখন জোর করেও আমি পাঠিয়ে দিতে পারবো না এখান থেকে। ওর কিছু হলে আমার কি হবে।
।।।
।।।
যাইহোক আমি আমার জেনারেলদের আদেশ দিয়ে দিলাম প্রথমে তাদের উপরে আক্রমন করতে। তারা জানে আমি যুদ্ধের বিষয়ে একটু কম বুঝি, তাই নিজেরাই সেনাদের পুরো আদেশ দিতে লাগলো। তা নাহলে সব বিষয়ে আমাকেই জেনারেলদের আদেশ দিতে হতো, এবং তারা তাদের সেনাদের সেটা করতে বলতো। আর এখনতো আমি শুধু বলে দিলাম আক্রমন করতে। বাকিটুকু ওরাই এখন দেখে নেবে। যায় হোক আমাদের এবং মনস্টার সেনারা সবাই একসাথে আক্রমন করতে লাগলো। আমাদের দুই পক্ষের পাঁচ ভাগের তিন ভাগ সেনা সামনে এগিয়ে গেলো। আর দুই ভাগ এখানেই রইলো। যদি লোকির উল্টো কোনো প্লান থাকে তাহলে সেটা দেখে এই দুই ভাগ আক্রমন করবে।
।।।
।।।
আমার এক পাশ থেকে কখন যে এনাও চলে গেছে সেটা আমি জানি না। হ্যারি এখানেই ছিলো। ওর কাছ ছিলো বাকি যে মনস্টার সেনাগুলো এখানে ছিলো তাদেরকে আদেশ দেওয়া। মূলত এই কাজটা এনার ছিলো, কিন্তু এনা হ্যারির উপরে এটা চাপিয়ে দিয়ে নিজে প্রথম সেনাদের সাথে চলে গেছে। আমি জানি না মেয়েটা কি ভাবছে? কখনো কারো সাথে তেমন লড়াই করে নি। হ্যারির সাথেই সেইদিন পারে নি, আজ কিভাবে লড়বে। নিশ্চয় পাগল হয়ে গেছে ও।
।।।
।।।
থর ও আক্রমন করতে গিয়েছে। যুদ্ধটা ওনারও। উনি তো বসে থাকতে পারে না। নিজের হাতে একটা বিশাল চাইনিজ কুরাল নিয়ে নিলো। এবং একটা মনস্টার ঘোড়ার উপরে বসে আক্রমন করতে যাচ্ছে। আমজ যুদ্ধে নামতে চাই নি। কিন্তু আমি চাই না এনার কোনো কিছু হোক। তাই ওকে রক্ষা করার জন্য আমাকেও যেতে হবে। আমি আমার এক জেনারেলকে বলতে পারি ওকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু সেটা খারাপ দেখাবে। আমার ভালোবাসাকে যদি আমিই রক্ষা করতে না পারি তাহলে কেমন আসিক হলাম আমি?
।।।
।।।
যাইহোক আমি ভিরুর পিঠে উঠে বসলাম। ভিরু আজ অনেক আনন্দে আছে। শেষ মেষ ও ওর নিজের প্রতিশোধ নিতে পারবে। অনেক বছর ধরে নিজের মধ্যে আগুন জ্বলছিলো ওর। আজ সেই সব আগুন দিয়ে ও জ্বালিয়ে দিতে প্রস্তুত।
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))

#ভ্যাম্পায়ার_কুইন#
পর্বঃ৩৩
.
.
লেখকঃহৃদয় বাপ্পী
.
.
দুই পক্ষের লড়াই খুব ভালো ভাবে চলছে। এনার মনস্টার সেনার মধ্যে যারা উড়তে জানে তারা সবাই ড্রাগনদের সাথে লড়তে লাগলো, তাতে আমার কিছু সংখ্যক ডেভিল সেনাও সাহায্য করছে। আর বাকি সব যারা আক্রমন করছে সবাই ভাইকিংসদের সাথে লড়তে লাগলো। থর বিশাল জোশের সাথে তার হাতের কুরাল দিয়ে এক এক করে তার রাজ্যের সৈন্যকে আহত করছে। থর চাচ্ছে না তাদেরকে মেরে ফেলতে, তাই সে তাদের বেশী আহত করছে না। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। আমি এনাকে রক্ষা করতেই এগিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এনা যে পুরো হিংস্র পশুর মতো লড়বে সেটা আমি জানতাম না। কিছুদিন হলো এনা পুরো পাল্টে গেছে। সেটা কিভাবে আমি জানি না। কিন্তু ওর মাঝে আমি নতুন কাউকে দেখতে পাচ্ছি এখন। ওর হাতে একটা তলোয়ার। আমি এরকম তলোয়ার কোথাও দেখি নি। এনা তলোয়ারটা দিয়ে একের পর এক শত্রুকে মারতেই আছে। আমি কখনো এনাকে এমন ভাবে দেখতে চাই নি। মনে হচ্ছে ও নিজে একাই এক হাজার শত্রুকে শেষ করতে পারবে। তাছাড়া যখন ও শত্রুদের হাত, পা, মাথা তাদের শরীর থেকে আলাদা করছে কেমন জানি একটা অনুতৃপ্তির হাসি দেখতে পেলাম। জানি না হঠাৎ এনার কি হলো, কিন্তু ওর এই অবাক করা আচরনে আমি তো পুরো ভয় পেয়ে গেলাম। কোথায় ভেবেছিলাম আমি ওকে এখানে রক্ষা করে ওর কাছে হিরো হয়ে যাবে। কিন্তু মনে হচ্ছে আমি এখন কোনো বিপদে পরলে ও নিজেই আমাকে সেই বিপদ থেকে মুক্ত করতে পারবে। ওর কিউট চেহারায় এখন ওর হত্যা করা শত্রুর রক্ত লেগে আছে, যেটা দেখতে মোটেও কিউট লাগছে না। বরং আমার আরো ওর কাছে যেতে ভয় করতে লাগলো।
।।
।।
আমি এখন পর্যন্ত একটা শত্রুকে হত্যা কিংবা আহত করি নাই। আমার আশে পাশে আমার চার জেনারেল ছিলো। তারা আমার কাছে একটা শত্রুও আসতে দেই নি। আমি এই প্রথম আমার চার জেনারেলের আসল পাওয়ার দেখলাম। তারা এতোটা শক্তিশালী হবে আমি সেটা কল্পনাও করি নাই। তাদের এক একটা স্পেলের আঘাতে পঞ্চাশ জনের মতো সেনা আহত হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমার নজর পরলো ড্রাগনরাও তেমন সুবিধা করতে পারছে না। বেশ কিছু ড্রাগন এতোক্ষনে মারা গিয়েছে। মনস্টার সেনাদের কেউই শত্রুকে দয়া দেখাচ্ছে না। বরং তারা পুরো হিংস্রতার সাথে লড়ছে। যেমনটা এনা করছে। এনার একের পর একজন কে মারতেই আছে, কিন্তু হাপাচ্ছে না। আমি বুঝতে পারছি না হঠাৎ এনার কি হলো, এতো ক্ষমতা কোথা থেকে আসলো।
।।
।।
যুদ্ধের পরিস্থিতি অনেকটা আমাদের দিকে চলে এসেছিলো। জয় নিশ্চিত ছিলো। কারন ড্রাগন সেনা পিছনে ফিরে গিয়েছিলো, আর ভাইকিংসদের বেশীর ভাগ আহত কিংবা নিহত হয়েছে। এই যুদ্ধে মৃত এর সংখ্যা অনেক। আমি সব সময় শুনেছি একটা যুদ্ধে অনেকে মারা যায়। কিন্তু যুদ্ধে যারা থাকে তারা কেমন ফিল করে এটা কখনো ভাবি নি। আমাদের সেনার মৃত এর সংখ্যা তেমন না। কিন্তু মনস্টার সেনার মধ্যে অনেকেই নিজেদের জীবন হারিয়েছে। কিন্তু যারা জীবিত আছে আমি তাদের মধ্যে কোনো রকম কষ্ট দেখতে পেলাম না। বরং তারা আরো খুশি আছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না আমার এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে। আমি তো ডেভিল কিং। কারো জীবন মরন নিয়ে আমার ভাবনার কিছু নেই। তারপর ও এতো লোকের লাশ দেখে আমার মন কাদছে৷ আমি বুঝতে পারলাম আমার এন্জেল সাইড ভিতরে ভিতরে হাহাকার করছে। কষ্ট হচ্ছে তার। ভিতর থেকে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে।
.
–মাই কিং লোকির বাকি সেনা পিছনে চলে যাচ্ছে। মনে হয় আমরা জিতে গেছি।(লুসেফার)
.
–এতো সহজে না। হয়তো তোমরা খেয়াল করো নি। আমাদের চারিদিক দিয়ে একটা বিশাল বড় ডার্ক ম্যাজিক ব্যবহার করা হয়েছে।(আমি)
.
–ডার্ক ম্যাজিক?(এনা)
।।।
।।।
হঠাৎ চারিদিকে কুয়াশার মতো হয়ে গেলো। এবং আস্তে আস্তে লড়াইয়ে যত সেনা মরেছিলো সকলেই নরতে লাগলো। এটা একটা ডেভিল ম্যাজিক। এই ম্যাজিকটা ডেভিল কিং ছাড়া অন্য কারো জানা উচিত ছিলো না। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না আমি তো এই স্পেল ব্যবহার করি নি। কিন্তু কে করলো এইটা?
.
–সবাই সাবধান। এটা একটা লেজেন্ডারী ডার্ক স্পেল। এটা খুবই মারাত্মক একটা স্পেল। এই স্পেলের মধ্যে কেউ পরলে এই কুয়াশার মধ্য থেকে কেউ বের হতে পারবে৷ যতই বের হওয়ার চেষ্টা করো, ঘুরেফিরে আবার এই জায়গায় এসে পৌছাবে। আর শুধু তাই না। এটার সাথে আরেকটা লেজেন্ডারী স্পেল ব্যবহার করা হয়েছে। সেটার কাজ হলো সকল মৃত লাশকে জীবিত করা। কিন্তু সেই লাশগুলোর নিজের কোনো জ্ঞান থাকবে না৷ বরং যে তাদের জীবিত করেছে তার আদেশই তারা শুনবে। বলতে গেলো সকল লাশ গুলো zombie হয়ে গেছে।(আমি)
.
–এটা লোকির আরেকটা চাল।(এনা)
.
–না এটা লোকির কোনো চাল হতে পারে না। কারন এই দুটো স্পেল শুধু ডেভিল কিং ছাড়া কেউ ব্যবহার করতে পারে না। যদিও একসময় ডার্ক এল্ফসরা এটা ব্যবহার করতো, কিন্তু এখন এসব স্পেল স্যয়ারতালফাইমে বাতিল করা হয়েছে।(থর)
.
–হ্যা থর ঠিকই বলেছেন। তারপরও ধারনা করা যায় ডার্ক এল্ফসরা এটা ব্যবহার করেছে। কিন্তু তাদের কোনো অস্তিত্ব আমি দেখতে পাচ্ছি না।(আমি)
।।।
।।।
হঠাৎ আমাদের সামনে টেলিপোর্ট হয়ে আসলো আলিয়ানা আলফাইম। সাথে তার অনেক সেনা ও এসেছে।
.
–আমি নিজে এখানে আসতে চাই নি। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেছে আপনাদের, তাই আমাকেই আসতে হলো।(আলিয়ানা)
.
–রানাী আলিয়ানা। কি হয়েছে একটু বলতে পারবেন?(থর)
.
–ম্যালিকিত এর সেনাপতি এসেছে এখানে। তাকে স্যয়ারতালফাইমে ম্যালিকিত এর পরে শক্তিশালী ধারনা করা হয়। আর এই দুটো স্পেল সেই ব্যবহার করেছে।(আলিয়ানা)
.
–এজন্যই তো বলি এই বাতিল করা স্পেল কিভাবে ব্যবহার করতে পারলো ডেভিল কিং ছাড়া। ম্যালিকিত এর সেনাপতির নাম হ্যালিন। অনেক পুরানো ডার্ক স্পেল গুলোর মাস্টার সে।(থর)
.
–আমাদের ডেভিল কিং তো এই বিষয়ে কিছু করতে পারে। কিন্তু না উনি ছোট বাচ্চার মতো দাড়িয়ে দাড়িয়ে সবার লড়াই দেখছে প্রথম থেকেই।(এনা রাগি চেহারা নিয়ে বললো)
.
–এটা কোনো কথা হলো?(আমি)
.
–আপনি ডেভিল কিং, নিন এই স্পেলের কিছু একটা করুন।(এনা)
.
–ডেভিল কিং এর এখন কার অবস্থায় উনি কিছু করতে পারবেন না। এই যুদ্ধটা উনার জন্য খুব তারাতারি হয়ে গেছে। আমাদের পুরাতন ডেভিল কিং এর মেমোরী গুলো আস্তে আস্তে তার মধ্যে আসছে, তাই তার পুরো ক্ষমতা ব্যবহার করতে একটু সময় লাগবে।(লুসেফার)
.
–হ্যা হ্যা। আমরা জানি, ডেভিল কিং ভিতরে ভিতরে বিশাল বড় একটা প্লান করছে। যত হোক সে একজন ডেভিল।(এনা)
।।।
।।।
মূলত আমার পরিস্থিতি অনেক খারাপের দিকে। আমি ভয় পাচ্ছি অনেক। যদিও আমি ডেভিল কিং তারপরও আমার পুরোটা সময় কেটেছে মানুষ হয়ে পৃথিবীতে। এসব কিছু আমার কাছে নতুন। এর আগেও আমি মারামারি দেখেছি, কিন্তু আমার সামনে এতো লোক মারা গেলো এটা দেখে অনেক ভয় করেছে। আর ভয় হলো ডেভিল কিং এর পাওয়ারের মূল উৎস। আশেপাশের লোকজন যত আমাকে দেখে ভয় পাবে আমার ক্ষমতা আস্তে আস্তে তত বারতে থাকবে। আর যদি আমি নিজেই ভয় পাই তাহলে তো নিজেই শক্ত হতে পারবো না। যাইহোক, এমনিই আমি চাচ্ছি না আমার আর কোনো ডেভিল পাওয়ার ব্যবহার করতে। আমি সাধারন ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি নিজের প্রতিরক্ষার জন্য। এতোদিন আমার সাধারন ম্যাজিকের উপরে নজর দেওয়া হয় নি। আমি প্রথমে দেখেছি আমি শুধু ফায়ার ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু আসলে শুধু ফায়ার ম্যাজিক না। বরং আমি সব ধরনের এট্রিবিউটের ম্যাজিক ব্যবহার করতে পারি। এটা চেষ্টা করি নি। কিন্তু যেহেতু আমার মান সম্মান এখন পথে দাড়িয়েছে তাই কিছু একটা করতেই হবে আমাকে। আর এমনিতেও আমার সামনে এখন জীবিত কেউ নেই। বরং আমার শত্রু গুলো এখন মৃত।
.
–মাই কিং এখন আমরা কি করবো।(আমার সকল জেনারেল)
.
–সকল ডার্ক এল্ফসরা এই কুয়াশার মধ্যে প্রবেশ করেছে। তাদেরকে লাইট এল্ফসরা দেখে নিবে। সকল ডেভিল সেনা শুধু লাইট এল্ফসদের সাহায্য করবে। এবং মনস্টার সেনা।(আমাকে আর এনা বলতে দিলো না)
.
–আদেশ করতে হবে না। আমি জানি আমাদের কি করতে হবে। সকল মনস্টার সেনা মৃত জম্বিদের দেখে নিবে।(এনা)
.
–হ্যা। আর হ্যা আমিও কিছুটা সাহায্য করবো তাতে।(আমি)
।।।
।।।
সবাই আদেশ মতো নিজেদের মতো ছড়িয়ে পরলো। আলফাইমের এল্ফসরা ডার্ক এল্ফসদের খুজে খুজে হারাবে। ডেভিল সেনা তাদের সাহায্য করবে। আর আমি আর মনস্টার সেনারা মিলে মৃত জম্বিদের হারাবো। ডেভিল কিং হওয়ার পর আমি আজ প্রথম সাধারন ম্যাজিক ব্যবহার করবো। সাধারন ম্যাজিকের জন্য ডেভিল কিংবা এন্জেল পাওয়ারের প্রয়োজন হয় না। এটা সেগুলো থেকে সম্পূর্ন আলাদা। এনা ওর তলোয়ার নিয়ে ঝাপিয়ে পরলো জম্বিদের দিকে। ও পরোয়া করছে না কিছু। হিংস্র পশুর মতো একের পর এক মারতেই আছে। আমি একটা বিষয়ে অবাক, ও নিজে কোনো ম্যাজিক ব্যবহার করছে না। শুধু ঔ তলেয়ারটা দিয়েই এই পর্যন্ত সবাইকে হত্যা করছে। ওর লড়াই দেখে আমার আর লড়তেই মন চাচ্ছে না। আমিও আমার সাধারন ম্যাজিক ব্যবহার করতে লাগলাম। ইগড্রাসিল এতোক্ষন আমার ছায়ার মধ্যে ছিলো। ও এসব লড়ায় এর মধ্যে পরতে চাইছে না। কারন ওকে ফায়ার ড্রাগন কিং কে হারাতে হবে। তাতেই ওর প্রতিশোধ পূরন হবে। তাই আমাকেই লড়তে হচ্ছে। আমার সাধারন স্পেল গুলোও অনেক মারাত্মক। এগুলো সাধারন মনস্টার কিংবা সেনার জন্য অনেক ক্ষতিকর। কিন্তু আমি কখনো শক্তিশালী কাউকে সাধারন ম্যাজিক দিয়ে হারাতে পারবো না। আমি আমার হাত দিয়ে অসংখ্য আগুনের বল বানিয়ে সেগুলো জম্বিদের দিকে ছুড়ে মারছি। এক একটা আগুনের বল অনেকটা এলাকা জুড়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর সেটুকুর মধ্যে যত জম্বি আছে সেগুলো জ্বলে ছাই হয়ে যাচ্ছে।
।।।।।
।।।।
।।।
।।

(((চলবে)))