অশ্রুজলে বোনা বিয়ে পর্ব-২৫+২৬

0
791

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_25
#ইয়াসমিন_খন্দকার

নিঝুম চুপচাপ বসে ছিল ইমরানের কফিশপের মধ্যে। একটু পর ইমরান এসে তাকে বলে,”চল, তোর থাকার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেছে।”

নিঝুম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আচ্ছা, তুই যা। আমি আসছি।”

বলেই নিঝুম পা বাড়াতে যাবে এমন সময় তা সামনে এসে দাঁড়ায় আবরাজ। হঠাৎ করে আবরাজকে এই সময় নিজের সামনে দেখে নিঝুম অবাক হয়ে যায়। ইমরানও আবরাজকে এখানে আশা করে নি। আবরাজ এসেই নিঝুমের হাত শক্ত করে ধরে বলে,”এখানে আর কোন ড্রামা চাই না। চুপচাপ আমার সাথে বাসায় ফিরে চলো। সেখানে বসে সব কথা হবে।”

নিঝুম নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে,”ছাড়ুন আমায়! আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।”

আবরাজ নিঝুমের হাত আরো শক্ত করে ধরে বলে,”আমি বলছি তো আমি চাই না কোন সিনক্রিয়েট করতে। আশা করি, তুমি আমার কথাটা বুঝবে।”

এরইমধ্যে ইমরান এগিয়ে এসে বলে,”এই থামুন আপনি! আপনি এভাবে নিঝুমের উপর জোর করতে পারেন না। ও একজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট উইম্যান।”

আবরাজ ইমরানকে চোখ রাঙিয়ে বলে,”আমি তোমাকে আগেও বলেছি আমাদের দুজনের মাঝে এসো না। এটা আমাদের পারসোনাল ব্যাপার।”

“পারসোনাল? আপনি নিঝুমের সাথে প্রতারণা করবেন, ওর উপর জোরজবরদস্তি করবেন, ওকে এসল্ট করবেন আর বলবেন এটা পারসোনাল ব্যাপার? শুনে রাখুন, এটা বাংলাদেশ নয় এটা ইউকে। এখানকার আইন অনেক স্ট্রিক্ট, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আপনাকে জেলের ভাত খাওয়ানো আমার কাছে দুই মিনিট এর ব্যাপার।”

আবরাজ নিঝুমকে ছেড়ে দিয়ে ইমরানের কলার চেপে ধরে বলে,”কি বললে তুমি? আমাকে জেলের ভাত খাওয়ানোর ভয় দেখাচ্ছ? প্রয়োজনে তোমায় আমি শেষ করে দেব। আমায় এমন ভয় দেখানোর স্পর্ধা করবে না। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই।”

নিঝুম আবরাজ ও ইমরান এর মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলে,”আপনারা এসব ঝামেলা করা বন্ধ করুন। ইমরান, তুই শান্ত হ। আমি ওনার সাথে বুঝে নিতে পারব।”

আবরাজ বলে উঠল,”শুনলে তো নিঝুম কি বলল? আশা করি, তুমি বুঝতে পেরেছ আমাদের সম্পর্ক টা অন্য ধরনের।”

নিঝুম এবার আবরাজকে বলল,”তবে এটাও মনে রাখবেন, আমি আপনার সাথে ফিরে যাব না। এই ব্যাপারে জোর করবেন না।”

ইমরান বলে,”তুই এই লোকটার জালে ফাঁসিস না। এই লোকটা তোর সাথে অনেক অন্যায় করেছে। তুই এসবের জবাব চাইবি না? তার পর কোন মুখে এনার সাথে কথা বলিস। তোর তো উচিৎ এনার নামে কেইস করা।”

আবরাজ এবার ইমরানকে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ইমরান হতবাক। নিঝুম আবরাজকে বলে,”ওকে ছেড়ে দিন আপনি।”

“ওর সাহস কিভাবে হয় তোমাকে এমন উস্কানি দেবার?”

“আমি ওর কথায় নাচব এতটাও বোকা আমি না। আমার নিজস্ব মতামত বলে তো কিছু একটা আছে। এখন বলুন, আপনি কি বলবেন।”

আবরাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”তুমি যদি বাংলাদেশে ফিরে যেতেই চাও তাহলে তোমার সব পাসপোর্ট, ভিসা সব কিছুর ব্যবস্থা আমি করে দেব। তুমি চলো আমার সাথে।”

নিঝুম বলে,”যদি আপনি আমাকে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন তাহলে ঠিক আছে। আমি যাব আপনার সাথে। তবে আপনাকে কথা দিতে হবে যে আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমায় বাংলাদেশে যাবার ব্যবস্থা করে দেবেন।”

আবরাজ নিঝুমের কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে বলে,”আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমার সিলেটে ফেরার ব্যবস্থা করে দেব। কিন্তু যতদিন তুমি এই লন্ডনে আছ তত গুলো দিন তোমার দায়িত্ব আমার। তাই, তুমি আমার সাথে চলো।”

ইমরান নিঝুম এর উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তুই এনার কথা শুনিস না নিঝুম। এই লোক আবারো নিজের সাথে তোকে নিয়ে গিয়ে তোর উপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। তুই আমার কথা শোন, আমি তোর এখানে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি৷ তোর যত দিন ইচ্ছা তুই থাক। তারপর আমি দেখছি কিভাবে এই লোক তোর পাসপোর্ট, ভিসা নিজের জিম্মায় রাখে। আমি সব এনে দেব তোকে।”

আবরাজ আবারো ইমরানের উপর চড়াও হতে গেলেই নিঝুম আবরাজকে আটকে বলে,”আমি তো বলছি আমি আপনার সাথে যাব। আপনার আর কোন ঝামেলা করার দরকার নেই। চারিদিকে অনেক মানুষ দেখছে। এসব ঠিক হচ্ছে না। আর ইমরান তোকেও আমি বলছি, তুই যে আমার জন্য এত ভেবেছিস সেজন্য তোকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু দয়া করে, তুই আর আমার জন্য জিনিসগুলো কঠিন করে তুলিস না। আমার সিদ্ধান্ত আমি নিয়ে ফেলেছি। আমি এখন মিস্টার আবরাজ এর সাথেই যাব। তুই প্লিজ আর কোন বাধা দেয়ার চেষ্টা করিস না। আমি পরে তোর সাথে যোগাযোগ করব।”

বলেই সে আবরাজকে বলে,”চলুন তাহলে।”

“হুম, এসো।”

~~~~~
আবরাজের সাথে তার এপার্টমেন্টে ফেরে নিঝুম। আবরাজ বাসায় এসেই নিঝুমকে বলে,”তোমাকে কিছু বলার আছে।”

“হ্যাঁ, বলুন।”

“সরি, সরি ফর এভ্রিথিং।”

নিঝুম গম্ভীর স্বরে বলে,”সরি বললেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়?”

“জানি, আমি যা করেছি তার জন্য হয়তো সরি যথেষ্ট নয় কিন্তু..আমি মন থেকে ক্ষমা চাইছি।”

“সব কিছুর ক্ষমা হয়না মিস্টার আবরাজ। যাইহোক, আমি চেষ্টা করবো আপনাকে যতটা পারি ক্ষমা করার। আপনি এখন বলুন, আমি কবে সিলেট যাচ্ছি?”

“আচ্ছা, আমাদের সম্পর্ককে কি একটা সুযোগ দেয়া যায় না?”

“আপনি কিন্তু আমায় সিলেটে ফেরানোর কথা বলেই এখানে নিয়ে এসেছেন। আশা করি, আপনি নিজের কথা রাখবেন।”

“এতটা নিষ্ঠুর হয়ো না। সম্পর্ক্টা কে একটা সুযোগ দাও না।”

নিঝুম বলে,”না। আমার পক্ষে তা সম্ভব না।”

আবরাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”বেশ, আমি আর তোমায় জোর করবো না। তুমি যা চাও তাই হবে। তোমার লন্ডন থেকে সিলেট ফিরে যাবার ফ্লাইটের ব্যবস্থা আমি করছি। তুমি যদি চাও, তাহলে তাই হোক।”

এমন সময় এলিনা আর ম্যাক্স সেখানে চলে আসে। এসেই ম্যাক্স বলে,”এখন তোমাদের কোথাও যাওয়া হবে না।”

নিঝুম তাদের দিকে তাকায়। অবাক স্বরে বলে,”মানে?”

এলিনা এগিয়ে এসে বলে,”আপাতত, তোমাদের কিছু দিন আমাদের সাথে যেতে হবে। আগামী পরশু মানে রবিবার আমার আর ম্যাক্সের বিয়ে। আশা করি, তোমরা দুজন আমাদের বিয়েতে থাকবে।”

এলিনার কথা শুনে নিঝুম বলে,”তোমাদের নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা কিন্তু আমি..?”

“প্লিজ, নিঝুম। তোমাকে আমি নিজের বোনের মতোই দেখি। আমি জানি, তুমি কিছু কারণে আমাদের উপর রেগে আছ। কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ঠকাতে চাই নি। আর..যাইহোক, তোমার কাছে অনুরোধ, দুটো দিনেরই তো ব্যাপার। জানো, আমার না কোন ভাই-বোন নেই। তাই আমি চাই, তুমি আমার আপন জন হয়ে আমার পাশে থাকো। থাকবে না তুমি? আমার এই অনুরোধ টা রেখো প্লিজ। একজন বোন হিসেবে আমাকে বিবেচনা করে দেখো।”

এলিনার এমন অনুরোধ আর ফেলতে পারে না নিঝুম। তাই সে সম্মতি দিয়ে বলে,”বেশ, তুমি যখন এত করে বলছ তখন আমি আর না করব না। তবে তোমার বিয়ের পরই আমি লন্ডন থেকে সিলেটে ফিরব।”

‘ধন্যবাদ তোমাকে নিঝুম।’

বলেই এলিনা নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে।

এদিকে ম্যাক্স তখন আবরাজকে বলছিল,”এই দুই দিনই কিন্তু তোমার কাছে সুযোগ। এর মধ্যে তুমি নিঝুমকে মানানোর চেষ্টা করো। যেন ও তোমায় ছেড়ে না যায়। নিজের সত্যিকারের অনুভূতিটা ওকে বোঝাও।”

“চেষ্টা করব। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার হাতে।”
to be continue…..

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_26
#ইয়াসমিন_খন্দকার

নিঝুম ও আবরাজ বর্তমানে লন্ডনে একটি বিশাল হোটেল The Ritz London এ অবস্থান করছে যা মূলত বিয়ের ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ এখানেই এলা ও ম্যাক্সের বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।

এলাকে যখন সাজানো হচ্ছিল তখন নিঝুম তার পাশেই বসেছিল। নিঝুমকে পাশে পেয়ে এলা অনেক খু্শি ছিল। এলা নিঝুমের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, আমার কথা রাখার জন্য।”

নিঝুম সামান্য হেসে বলে,”ধন্যবাদ দিতে হবে না। তোমার খুশিতে অবদান রাখতে পেরে আমিও খুশি।”

এলা বলে,”জানো, আমার না আপন বলতে কেউ নেই। আমার যখন ৫ বছর বয়স ছিল তখন আমার মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়৷ তারপর আমি আমার মার সাথেই বেড়ে উঠেছি। আমার মা আমার কাছে এক আদর্শ নারী। তিনি যেভাবে একা হাতে আমায় বড় করেছেন তার থেকে আমি অনুপ্রেরণা পেয়েছি। কিন্তু যখন আমার ১৮ বছর বয়স তখন আমার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এরপর থেকে আমি এই দুনিয়ায় সম্পূর্ণ একা।”

এলার জীবনের কাহিনি শুনে নিঝুমের বেশ খারাপ লাগে। সে বলে,”তোমার বাবা আর তোমার খোঁজ নেয় নি?”

“ঐ জঘন্য লোকটার কথা বলো না তো। উনি তো একজন ব্যভিচারী লোক ছিলেন। আমার মায়ের সাথে ডিভোর্স হবার পর থেকে জীবনেও আমাদের খোঁজ নেন নি। মায়ের মৃত্যুর পরেও না। যদিও আমার এতে কিছু যায় আসে নি। আমার মা আমার জন্য কিছু জমানো টাকা রেখে দিয়েছিল তা দিয়েই আমার দিব্যি চলে গেছে। তারপর তো আমি এখন নিজেই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি।”

“বাহ, তোমার বাবাও তো তাহলে আমার বাবার মতোই জঘন্য।”

“হুম, তবে ম্যাক্সের পরিবার কিন্তু ভীষণ সুন্দর। এই আধুনিক যুগে লন্ডনে এমন পরিবার তো আর দেখাই যায় না। ম্যাক্সের দুই ভাই তাদের বউ, ওর মা-বাবা সবাই কি সুন্দর মিলেমিশে থাকে। এমন একটা পরিবার পেয়ে আমি সত্যি ভীষণ লাকি।”

“হুম, ঠিক বলেছ তুমি। আচ্ছা, তোমাকে আর ম্যাক্সকে তো আমি সবসময় বন্ধুই ভাবতাম। তোমাদের মাঝে যে এমন কিছু চলছিল সেটা তো বুঝি নি!”

এলা সামান্য হেসে বলে,”আমরা নিজেও এতগুলো দিন আমাদের সম্পর্কটা বুঝতে পারিনি। তবে কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই ম্যাক্স আমাকে জানায় ওর নাকি আমার প্রতি অদ্ভুত অনুভূতি আছে। যদিও ও এটা বলার সময় ড্রাংক ছিল তাই আমি ওর এই কথাকে খুব একটা পাত্তা দেই না। কিন্তু পরদিন আবার ও আমাকে একই কথা বলে। আমি তো তখন ম্যাক্সকে বলেছিলাম ওকে বন্ধুর থেকে বেশি কিছু ভাবি না। কিন্তু ম্যাক্স তো ছেড়ে দেয়ার পাত্র না। ও তো আমার পেছনেই পড়ে যায়। আর আমার মনও আগে থেকে ম্যাক্সের জন্য কিছুটা হলেও দূর্বল ছিল কিন্তু ওকে শুধু নিজের বন্ধুর নজরে দেখার জন্য আমি ব্যাপার টা বুঝতে পারি নি৷ কিন্তু যখন ও আমায় বলল, ভালোবাসার কথা আর বার বার এভাবে আমাকে মানানোর চেষ্টা করল তখন আমি আমার এই অনুভূতি আর বেশিদিন চেপে রাখতে পারি না। ওকে বলে দেই যে ওকে আমি ভালোবাসি। এরপর ও হঠাৎ বিয়ে করার কথা বলে৷ আমি তো এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতেই চাই নি। কিন্তু শেষ অব্দি ওর জেদের কাছে হার মেনেই নিলাম। আসলে..ম্যাক্স আসলে অনেক ভালো মনের ছেলে। ওকে স্বামী হিসেবে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।”

এলার কথায় নিঝুম হেসে বলে,”তোমাদের ভবিষ্যৎ জীবন সুখের হোক। এই কামনাই করি।”

এলা এবার নিঝুমের কানের কাছে এসে বলল,”তোমায় কিছু বলব..যদি কিছু মনে না করো।”

“হুম, বলো।”

“আবরাজকে তুমি চাইলে একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে পারো। ও কিন্তু সত্যি সত্যি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছে। আমি, ম্যাক্স ও আবরাজ স্কুলজীবন থেকে একে অপরের অনেক ভালো বন্ধু। আমরা একে অপরের পালস বুঝতে পারি। বিশ্বাস করো, আবরাজের চোখে এর আগে অন্য কারো জন্য এমন অনুভূতি আমরা দেখি নি যেমনটা তোমার জন্য দেখেছি। লন্ডনে বেড়ে উঠলেও আবরাজ ছিল সবার থেকে আলাদা। ও কখনো কোন মেয়ের সাথে কোন রিলেশনে যায়নি। ও সব সময় চেয়েছে, বিয়ের পরই তোমাদের ধর্ম মতে হালাল ভাবে কাউকে ভালোবাসবে। এজন্য ওর চারিত্রিক বিশুদ্ধতার গ্যারান্টি আমি তোমাকে দিতে পারি।”

আবরাজের সম্পর্কে এসব কথা শুনে নিঝুমের অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল যদিওবা তবুও সে বলে,”আমি এই ব্যাপারে কথা বলতে বা শুনতে চাই না এলা। আমি এ ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেবার নিয়ে ফেলেছি। মিস্টার আবরাজ এর সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

“একটু ভেবে দেখতে যদি..”

“নো। প্লিজ..এ নিয়ে আর কিছু বলো না।”

বেশ রাগী কন্ঠে বলে নিঝুম। এলা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”বেশ, তুমি যদি অস্বস্তি বোধ করো তাহলে আমি আর এই নিয়ে কথা তুলব না।”

নিঝুম এলাকে নিয়ে এবার বাইরে আসে। এলার সাজ কমপ্লিট। বাইরে বিয়ের প্রস্তুতি করা হয়েছে। এলা একটি লম্বা গাউন পড়েছে নিজের বিয়ে উপলক্ষে, অন্যদিকে ম্যাক্সও সাদা ফর্মাল সার্টের উপর কালো কোর্ট ও টাই পড়েছে যেমনটা লন্ডনে বিয়ের সময় পরা হয়। তবে তাদের বিয়ের একটি বিশেষ রীতি মেয়ের বাবা মেয়েকে লাল কার্পেটের উপর দিয়ে হাটিয়ে ছেলের কাছে নিয়ে যায়। যেহেতু এলার বাবা নেই তাই সে নিঝুমকে বলে,”আজ নাহয় নিয়মের একটু ব্যত্যয় ঘটুক। তুমি নাহয় আমাকে ম্যাক্সের কাছে নিয়ে চলো।”

নিঝুম আপত্তি করে না। এলার হাত ধরে তাকে ম্যাক্সের কাছে নিয়ে যায়। অতঃপর ম্যাক্স ও এলা বিয়ের শপথ বাক্য পাঠ করে সবশেষে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করার মাধ্যমে তাদের বিয়ে সম্পন্ন করে। এরপর সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। আবরাজ ম্যাক্সকে আলিঙ্গন করে বলে,”শুভ কামনা, বন্ধু। তোমার ভবিষ্যৎ জীবন সুখের হোক।”

“তোমারও।”

এটা শুনেই আবরাজ মলিন হাসে। ম্যাক্স বলে,”আমি তো আমার ভালোবাসার মানুষটার মন জয় করে তাকে নিজের করে নিলাম। এবার তোর পালা। তুই এবার গিয়ে তোর বউয়ের মান ভাঙা। তাকে নিজের করে রাখার চেষ্টা কর।”

“তাই করবো।”

“বেস্ট অফ লাক।”

বলেই ম্যাক্স এলার কাছে চলে যায়। দুজনে মিলে কিছু সুন্দর মুহুর্ত কাটায়। এদিকে নিঝুম এককোণে দাঁড়িয়ে ছিল। আবরাজ তার কাছে আসে। আবরাজকে দেখে নিঝুম কিছুটা অবাক হয়। আবরাজ বলে,”তাহলে এখন যাওয়া যাক।”

“জ্বি, চলুন।”

দুজনে বাইরে এসে গাড়িতে বসে পড়ে। আবরাজ গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে নিঝুমকে বলে,”তুমি কি আমাকে আর একটা সুযোগ দেবে না?”

“কালকে আমার সিলেটে ফেরার জন্য ফ্লাইট বুক করে দিন।”

“নিঝুম!”

“আমি নিজের সিদ্ধান্ত বদলাবো না। এই নিয়ে আমায় জোর করে লাভ নেই।”

আবরাজ একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে৷ বলে,”আমায় ক্ষমা করলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে?”

“সব কিছুর ক্ষমা হয় না মিস্টার আবরাজ। আমি চাইলেও আপনাকে ক্ষমা করতে পারব না।”

“কিন্তু..”

“প্লিজ..আমি নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফেলছি। আমাকে আর কিছু বলবেন না। আমি বিব্রত বোধ করছি।”

“বেশ, তোমার জেদই যদি তোমার কাছে বেশি হয় তবে তাই হোক। তুমি ফিরে যাও সিলেট। আমি আর তোমাকে বাঁধা দেব না। তুমি যেভাবে চাও সেভাবেই তোমার জীবন কাটাও। আর তিন মাস পর তো আমাদের বিয়ের ৬ মাস পূর্ণ হবে। তারপর আমি তোমায় ডিভোর্স পেপারও পাঠিয়ে দেব।”

“ধন্যবাদ!”
to be continue…..