#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_38
#ইয়াসমিন_খন্দকার
নিঝুম নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে ছিল। সেই মুহুর্তে আবরাজও তাকিয়ে ছিল নিঝুমের দিকে। আবরাজ মনে মনে বলল,”আমার সাথে কেন তুমি এমন করলে নিঝুম? আমার সন্তানের পরিচয় এত দিন যাবত আমার থেকে লুকিয়ে রাখলে। এজন্য আমি চাইলেও তোমায় কখনো ক্ষমা করতে পারব না।”
ইমরান এগিয়ে এসে বলে,”জানি, আমার ক্ষমা চাওয়ার কোন মুখ নেই তবে তবুও আমি তোমাদের কাছে আবারো ক্ষমা চাইছি। পারলে আমায় ক্ষমা করো।”
আবরাজ বলে,”তোমার পাপের শাস্তি আল্লাহ তোমায় দিয়েছেন। এখন শেষ দিনগুলো ভালো ভাবে কাটানোর চেষ্টা করো। তুমি যা করেছ তাতে তোমায় ক্ষমা করা কতটা স্বাভাবিক আমি জানি না তবে…আমি চেষ্টা করব।”
অতঃপর সে তার মামা মিজানুর রহমান এর উদ্দ্যেশ্যে বলে,”মামা, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
“কি সিদ্ধান্ত?”
আবরাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আমি দীর্ঘ ৫ বছর যাবত নিজের সন্তানের থেকে বিছিন্ন ছিলাম। তবে এখন আর এক মুহুর্তও আমি আমার সন্তানের থেকে দূরে থাকতে পারব না। তুমি প্লিজ সমস্ত ব্যবস্থা পাকা করে ফেল। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে লন্ডনে যেতে চাই।”
আবরাজের কথা শুনে নিঝুমের বুক কেপে ওঠে। তাহলে কি আবরাজ নিঝুমের থেকে তার সন্তানকে আলাদা করতে চাইছে? এভাবে কি এখন সে এত গুলো বছরের প্রতিশোধ নিতে চাইছে? কিন্তু নিঝুমের পুরো জীবনটাই যে এখন নির্ঝরকে ঘিরে৷ নির্ঝরকে ছাড়া যে বাঁচবে না। তাই নিঝুম বলে ওঠে,”ওকে আপনার সাথে নিয়ে যাবেন মানে?”
আবরাজ গম্ভীর স্বরে বলে,”মানেটা খুবই সহজ। এত গুলো বছর তুমি আমার থেকে আমার সন্তানকে দূরে রেখেছ কিন্তু এখন আর আমি তোমাকে সেই সুযোগ দেব না। আমি যেহেতু ওর বাবা তাই ওর উপর আমার অধিকার সবথেকে বেশি। আমি তাই ওকে আমার সাথে নিয়ে যাব।”
নিঝুম প্রতিবাদ জানিয়ে বলে,”আপনি এটা করতে পারেন না। নির্ঝর আমার ছেলে। আপনি আমার থেকে ওকে দূরে সরাতে পারেন না।”
“ও শুধু তোমার একার ছেলে নয় ও আমারও ছেলে। আর তোমার মুখে এই কথা মানায় না৷ তুমি এত গুলো বছর আমার থেকে আমার ছেলেকে যখন দূরে রেখেছ তখন এসব কথা মনে পড়েনি? এখন আমি মোটেই নিজের অধিকার ছেড়ে দেব না। আমার ছেলের অধিকার আমি বুঝে নেবোই।”
নিঝুম কাতর স্বরে বলে,”নির্ঝর আমার জীবনের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। দয়া করে আমার থেকে ওকে আলাদা করবেন না। আমি যে মরেই যাবো এমন হলে।”
আবরাজ কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। মিজানুর রহমান বলে ওঠেন,”তুমি এতটাও নিষ্ঠুর হয়ো না আবরাজ। মানছি, নিঝুমের প্রতি তোমার রাগ করাটা স্বাভাবিক কিন্তু তাই বলে ওকে এভাবে কঠিন শাস্তি দিও না। ও নিজেও এত গুলো বছর কম কষ্ট সহ্য করেনি। তাছাড়া নিজের ছেলে নির্ঝরের কথাও ভাবো৷ নির্ঝরও নিশ্চয়ই নিজের মাকে ছাড়া ভালো থাকবে না। ছোটবেলা থেকে তো ও মায়ের সান্নিধ্যেই বড় হয়েছে। তাই ওর সুন্দর মানসিক বিকাশের জন্য মা এবং বাবা দুজনেরই সঙ্গ প্রয়োজন।”
আবরাজ বলে,”নিঝুম তো এত দিন আমার প্রতি কোন মায়া দেখায় নি তাহলে আমি কেন মায়া দেখাবো? আমি এত কিছু জানি না। আমি আমার ছেলেকে নিজের সাথে নিয়ে যাবো এটাই আমার শেষ কথা।”
এদিকে নির্ঝর নিজের মাকে কাঁদতে দেখে বলে,”তুমি কাঁদছ কেন আম্মু? তুমি কেঁদো না প্লিজ। আমি কোন দুষ্টামি করবো না আর৷ তবুও তুমি কেঁদো না।”
নিঝুম কান্নারত স্বরে বলে,”তুমি আমার সব নির্ঝর। আমার নাড়িছেঁড়া ধন। মিস্টার আবরাজ..আপনি আমার থেকে আমার সন্তানকে আলাদা করবেন না। এত বড় অন্যায় করবেন না।”
নির্ঝর বলে,”আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও যাব না, আম্মু। আমি তোমার কাছেই থাকব।”
আবরাজ বলে ওঠে,”আমার যা বলার আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। এবার এই নিয়ে আমি আর কোন কথা বাড়াতে চাই না।”
বলেই সে নির্ঝরকে কোলে নিয়ে বের হতে নেয়। নিঝুম আবরাজের পথ আটকে বলে,”কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমার ছেলেকে?”
“আমি এখানে একটা হোস্টেল বুক করেছি। যত দিন সিলেটে আছি আমি সেই হোস্টেলেই থাকব এবং নির্ঝরও আমার সাথে সেখানেই থাকবে।”
“মানে?”
“মানে আবার কি? বাংলা বোঝো না তুমি?”
“আপনি এবার অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছেন। আমার ছেলেকে আমার থেকে আলাদা করার কোন অধিকার নেই আপনার।”
“আমার অধিকার আছে কি নেই সেটা আমায় বুঝে নিতে দাও। সরে যাও সামনে থেকে।”
ছবি বেগম এবার এগিয়ে এসে বলে,”আবরাজ দয়া করে এমন করো না। নিঝুম নির্ঝরের থেকে আলাদা হলে মরেই যাবে। নির্ঝরও নিজের মাকে ছাড়া ভালো থাকবে না। মা-ছেলেকে আলাদা করে এত বড় অন্যায় তুমি করো না।”
“আপনার থেকে আমি ন্যায় অন্যায়ের জ্ঞান শুনতে চাই না। ৫ বছর ধরে যখন আমার থেকে আমার সন্তানের পরিচয় লুকিয়ে রেখেছিলেন তখন কোথায় ছিল আপনার এই সব ন্যায় অন্যায়ের বিচার? এখন আমাকে বাধা দেয়ার কোন নৈতিক অধিকার আপনার নেই।”
বলেই আবরাজ এগিয়ে যেতে থাকে। নিঝুম আর্তনাদ করে বলে ওঠে,”আমার নির্ঝরকে আমার থেকে আলাদা করবেন না…চাইলে আমায় অন্য কোন ভাবে শাস্তি দিন। কিন্তু এত কঠিন শাস্তি না।”
আলমগীর খান এবার নীরবতা ভেঙে বলে,”জানি, আমার কোন অধিকার নেই এই কথা বলার। কিন্তু তবুও বাবা হিসেবে তোমায় একটা সামান্য আবদার করছি। এভাবে মা-ছেলেকে আলাদা করো না। নিঝুম মেয়েটা মরেই যাবে এমন হলে।”
আবিরও বলে,”হ্যাঁ, ভাইয়া প্লিজ.. তুমি চাইলে নিঝুম আপিকে অন্য ভাবে শাস্তি দাও কিন্তু নির্ঝরকে ওর থেকে আলাদা করো না।”
আবরাজ কারো কোন অনুরোধ শুনল না। নির্ঝরকে কোলে করে নিয়ে বেরিয়ে গেল। নিঝুম কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই বসে পড়ল। বলতে লাগল,”আমার নির্ঝর…আমার ছেলে…”
এদিকে নির্ঝরও আবরাজকে বলল,”বাবা. আমায় তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? আম্মু কোথায়? আম্মু আসবে না আমাদের সাথে? আম্মু ওভাবে কাঁদছে কেন?”
আবরাজ বলে,”আমি তোমাকে খুব সুন্দর একটা যায়গায় নিয়ে যাব। দেখবে ওখানে গেলে তোমার অনেক ভালো লাগবে।”
“কিন্তু আমি আম্মুকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাই নি। আম্মু না গেলে আমি যাব না।”
“নির্ঝর…তুমি বাবার সাথে সময় কাটাতে চাও না?”
“হুম..চাই তো কিন্তু আম্মু..”
“আম্মুর কথা আপাতত ভুলে যাও। আমি তোমায় অনেক চকলেট,খেলনা কিনে দেব। তোমার যা যা লাগবে বলবে সেই সমস্ত কিছু তোমায় এনে দেব। তুমি শুধু আম্মু, আম্মু করা বন্ধ করো।”
নির্ঝর এবার কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,”আমার কিচ্ছু লাগবে না..আমাকে শুধু আমার আম্মুকে লাগবে। আমার আম্মুকে চাই।”
আবরাজ এবার ধমক দিয়ে বলে,”এত আম্মু আম্মু করো না তো!”
নির্ঝর এবার কান্না করতে করতে বলে,”তুমি পচা। আমি আম্মুর কাছে যাব। আমি তোম্র সাথে যাব না।”
এমন সময় মিজানুর রহমান বের হয়ে বলেন,”আবরাজ..এতটা কঠিন হয়ো না। নির্ঝর একটা ছোট বাচ্চা..ও নিজের মাকে ছাড়া ভালো লাগবে না। জানি তোমার রাগ করা স্বাভাবিক কিন্তু এমন কিছু করো না যার জন্য তোমার ছেলেকে সাফার করতে হয়।”
আবরাজ বলে,”আমার ছেলেকে কিভাবে বোঝাতে হয় সেটা আমি বুঝে নেব। তোমায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে না, মামা। আমি আসছি।”
বলেই নির্ঝরকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয় আবরাজ। নিঝুম বাইরে বেরিয়ে গাড়ির পেছনে পেছনে ছুটতে ছুটতে বলে,”নির্ঝর..আমার নির্ঝরকে দিয়ে যান..”
বলেই সে রাস্তার মধ্যে ছুটতে থাকে। কিন্তু গাড়ির গতির সাথে পেরে ওঠে না। একসময় রাস্তার মধ্যেই পা পিছলে পড়ে যায়। হাত এবং পায়ের বিভিন্ন স্থানে ছিলে যায়। নির্ঝর সেই অবস্থাতে রাস্তাতে পড়ে থাকা অবস্থাতেই কাঁদতে কাঁদতে বলে,”আমার নির্ঝর..আমার বাচ্চা..”
to be continue…..
#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_39
#ইয়াসমিন_খন্দকার
নিঝুম রাস্তার মধ্যেই নিজের বাচ্চার জন্য কান্নাকাটি করতে লাগল। নির্ঝরই যেন তার জীবনের সবটা জুড়ে ছিল৷ সেই নির্ঝরকে যদি তার থেকে আলাদা করা হয় তাহলে তার জীবনে তো আর কিছুই বেঁচে থাকবে না। এমন সময় ছবি বেগম এসে নিঝুমকে টেনে তোলেন। নিঝুমের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”চিন্তা করো না, তোমার ছেলেকে তুমি ফেরত পাবেই।”
নিঝুম বলে,”প্রয়োজনে আমি আইনের সহায়তা নেব তবুও নিজের সন্তানকে নিজের করে নেব। আবরাজকে কিছুতেই আমার ছেলেকে আমার কাছ থেকে আলাদা করে নিতে দেব না।”
মিজানুর রহমান এসে বলেন,”তোমরা শুরু থেকেই ভুল পথে ঘুরছ। এমন রাগারাগি, ঝগড়াঝাটি করে কোন কিছুরই সমাধান হয় না। ভালো ভাবে বসেও সব সমস্যার সমাধান করা যায়।”
নিঝুম বলে,”মিস্টার আবরাজ আমার থেকে আমার সন্তানকে আলাদা করে নিয়ে গেলেন আর আমি শান্তিমতো বসে কথা বলব!”
“নির্ঝর কিন্তু তোমার একার সন্তান নয় নিঝুম ও আবরাজেরও সন্তান। আর ইসলাম মতে সন্তানের উপর বাবার অধিকারই সবথেকে বেশি৷ তবে এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাচ্চার মায়ের পরিচর্যারও দরকার আছে। একটা বাচ্চার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের জন্য বাবা-মা দুজনেরই সান্নিধ্যের দরকার। তাই আমি তোমার সামনে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, নিজের ইগোকে একটু পাশ কাটানোর চেষ্টা করো। তোমাকে আমি মেয়ের মতোই দেখি। তাই বাবা হিসেবে অনুরোধ করব, আমার কথাটা রাখো।”
ছবি বেগম নিঝুমের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”হ্যাঁ, নিঝুম। উনি একদম ঠিক বলেছেন। এত দিন ধরে আমি তোমার কথা ভেবে তোমার পাশে থেকেছি। তুমি যা চেয়েছ তাতেই সম্মতি দিয়েছি কিন্তু এবার আমিও তোমাকে অনুরোধ করব সবকিছু ঠিক করার চেষ্টা করো। নিজেদের মধ্যকার রাগ, অভিমান এসব কিছু নিজেদের সন্তানের মাঝে টেনে এনো না। নির্ঝরকে একটা সুন্দর জীবন দাও। মা-বাবার মধ্যকার ঝামেলা একটা সন্তানের সুস্থ স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের পথে অন্তরায়। আমি তাই আজ নির্ঝরের দাদি হিসেবে তোমার কাছে অনুরোধ রাখব, এই সম্পর্কটা ঠিক করে নাও।”
নিঝুম বলে,”কিভাবে? কিভাবে আমি সব ঠিক করব? মিস্টার আবরাজ তো কোন কথা না শুনেই আমার ছেলেকে আমার থেকে আলাদা করে নিয়ে গেলেন।”
মিজানুর রহমান বলেন,”ও যাই করেছে রাগের মাথায় করেছে। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ও নিজের সন্তানের থেকে আলাদা ছিল এই বিষয়টাই ওকে ভাবাচ্ছে। তবে তুমি চিন্তা করো না, আমি আবরাজকে বোঝাব। আবরাজ এখন রেগে থাকলেও শীঘ্রই বুঝবে বলে মনে করি।”
নিঝুম কান্নারত স্বরে বলে,”আমার শুধু আমার নির্ঝরকে ফেরত চাই। আর কিছু চাই না আমার।”
মিজানুর রহমান বলেন,”আমি তোমার পাশে আছি৷ তবে তোমাকেও আমাকে একটা কথা দিতে হবে।”
‘কি কথা?’
“তুমি আর আবরাজের থেকে নির্ঝরকে আলাদা করতে চাইবে না। তোমাদের মধ্যে যতই মতপার্থক্য থাকুক না কেন, নিজের সন্তানের কথা হলেও নিজেদের মধ্যকার সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নেবে।”
নিঝুম ভাবনার জগতে হারিয়ে যায়। ছবি বেগম বলেন,”রাজি হয়ে যাও নিঝুম। এতেই সবার জন্য মঙ্গল হবে।”
নিঝুম চোখের জল মুছে বলে,”বেশ, আমি রাজি।”
~~~~~~~~~~~~~~
আবরাজ নির্ঝরকে নিয়ে একটি ফ্ল্যাটে এসেছে। কিন্তু নির্ঝর এখনো পর্যন্ত কেঁদে চলেছে এবং বলছে সে তার মায়ের কাছে যেতে চায়। আবরাজ নির্ঝরকে বোঝানোর জন্য তার গালে হাত রেখে বলে,”এমন করো না বাবু। বাবা যে তোমার সাথে একটু সময় কাটাতে চায়।”
“আম্মু…আম্মুকেও এনে দাও না, বাবা। আম্মুকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না এখানে।”
আবরাজ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠায় সে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়। সাথে সাথেই তার মামা মিজানুর রহমান ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। আবরাজ তাকে দেখে বলে,”মামা, তুমি?”
“হুম। কিছু জরুরি কথা বলতে এলাম।”
“জ্বি, বলো।”
“তোমার ছেলে কই? কেমন আছে এখন ও?”
আবরাজ হতাশ স্বরে বলে,”ও বিছানায় বসে আছে। সমানে কেঁদে চলছে আর বলছে ওর মায়ের সাথে দেখা করতে চায়।”
মিজানুর রহমান স্মিত হেসে বলেন,”এমনটা তো হবারই ছিল। ছোটবেলা থেকেই তো ওর মায়ের কাছেই বড় হয়েছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই মায়ের প্রতি ওর বেশি এটাচমেন্ট থাকবে।”
আবরাজ ব্যথিত স্বরে বলে,”কিন্তু ও তো আমারও সন্তান, আমার রক্ত বইছে ওর শরীরে। ওর উপর কি আমার কোন অধিকার নেই?”
“থাকবে না কেন? অবশ্যই আছে। তবে তোমাকে এটাও বুঝতে হবে ওর জন্য ওর মায়ের প্রয়োজনীয়তা কতটা বেশি। মানছি, নিঝুম তোমার থেকে এত গুলো বছর তোমার সন্তানের কথা লুকিয়ে অনেক বড় অন্যায় করেছে কিন্তু এখন যদি তুমিও সেই একই ভুল করো তাহলে সেটা আরো বড় অন্যায় করা হবে। আমি তাই তোমাদের একটা ভালো প্রস্তাব দিচ্ছি। তোমরা নিজেদের মধ্যকার ভুল বোঝাবুঝির জন্য নিজেদের সন্তানের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলো না। ওর কথা ভেবে হলেও সব কিছু ঠিক করার চেষ্টা করো।”
আবরাজ বলে,”আমি তো সবকিছু ঠিকই করতে চাই। কিন্তু নিঝুম..ওই তো ঝামেলা করছে। ও তো চায় আমার ছেলের থেকে আমাকে বিছিন্ন রাখতে।”
“আমার নিঝুমের সাথে কথা হয়েছে। নিঝুম আমায় কথা দিয়েছে, ও নিজের সন্তানের স্বার্থে সবকিছু ঠিক করতে রাজি আছে।”
” ও সত্যিই এই কথা বলেছে?”
“হুম।৷ তাই আমিও তোমাকে অনুরোধ করব, নিঝুমের ভুলের পুনরাবৃত্তি আর তুমি করো না৷ যদি নির্ঝরের ভালো চাও তাহলে নিজেদের মধ্যকার বিভেদ দূরে ঠেলে নিজেদের সন্তানের স্বার্থে এক হয়ে যাও।”
আবরাজ ক্রন্দনরত নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে,”বেশ, নিজের ছেলের ভালোর জন্য যা করা লাগবে আমি তাই করবো।”
~~~~~~~~~~~~~
দীর্ঘ বহু বছর পর শান্তিপূর্ণ ভাবে একে অপরের পাশাপাশি বসে আছে নিঝুম ও আবরাজ। তাদের মাঝখানেই হাসিমুখে বসে বসে চকলেট খাচ্ছে নির্ঝর। মিজানুর রহমান তাদের দুজনের এই মিলনের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে খান ভিলায় বসে আছে তারা সবাই। ছবি বেগম সবার জন্য চা নিয়ে আসেন। মিজানুর রহমান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন,”বেশ সুন্দর খেতে হয়েছে।”
ছবি বেগম মৃদু হাসেন। মিজানুর রহমান আরেক টা চুমুক দিয়ে বলেন,”এবার আসল কথায় আসি। আবরাজ ও নিঝুমের দুজনেরই পূর্ণ অধিকার আছে নির্ঝরের উপর। তবে কর্মসূত্রে আবরাজকে আবারো লন্ডনে ফিরতে হবে অন্যদিকে নিঝুমও এখানে হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে আছে। তাই তাদের মধ্যকার এই দূরত্বের প্রভাব তাদের সন্তানের উপর যেন না পড়ে সেটা আমাদের ভাবতে হবে। এজন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার নির্ঝর ও নিঝুমও আবরাজের সাথে লন্ডনে যাবে!”
নিঝুম বলে,”কিন্তু আমার পেশা..”
“এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি ইতিমধ্যেই লন্ডনের একটি হসপিটালে কথা বলে রেখেছি। আমার রেকোমেন্ডোশনে ওখানে তোমার জব হয়ে যাবে। তাছাড়া নিজের ছেলের কথাও ভাবো। লন্ডন হলো বিশ্বের অন্যতম সেরা শহর ওখানে গেলে ও অনেক ভালো সুযোগ পাবে জীবনে, সিলেটে যেটা সম্ভব নয়।”
ছবি বেগম বলেন,”আমার মনে হয় উনি ঠিকই বলছে। তুমি আর চিন্তা না করে রাজি হয়ে যাও।”
নিঝুম নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে,”বেশ, এতে যদি আমার ছেলের ভালো হয় তাহলে আমি রাজি আছি।”
মিজানুর রহমান বলেন,”বেশ, তাহলে আমি দ্রুতই তোমাদের লন্ডনে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আবরাজ, তুমি কবে ফিরবে?”
আবরাজ বলে,”এবার আমি সপরিবারে লন্ডনে ফিরতে চাই।”
আবরাজের কথায় নিঝুম তার দিকে তাকায়। আবরাজও তাকিয়ে ছিল নিঝুমের দিকে। দুজনের চোখাচোখি হয়। দুজনের চোখে আর আগের মতো রাগ, আক্রোশ নেই। বরং নিজের সন্তানের কথা ভেবে সমঝোতার বার্তাই শোভা পাচ্ছে দুজনের চোখে। এখন যেই লন্ডনে তাদের জীবনের ঝামেলা কেন্দ্রীভূত হয়েছিল সেই লন্ডনই কি আবার তাদের জীবন সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে চলেছে? সেটাই এখন দেখার।
to be continue…..