তিথি পর্ব-১১

0
351

তিথি – ১১

“বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান,

এইবারে ঘুঘু তোমার বধিব যে প্রাণ”

তিথি ভেবেছিল বারেবারে ফাঁকি দিয়ে বিপদগুলো পার হয়ে যাচ্ছে!
এইবার সত্যিই ও ফাঁদে পড়ে গেল!

এইবার আর ছুটে যাওয়ার উপায় নেই, বিয়ে নামের এই হাড়িকাঠে গলাটা এবার দিতেই হবে। তবুও একবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠল ও।

— ‘অসম্ভব! যে লোকটা আমাকে চিনতেই চাইছে না, তাকে আমি বিয়ে করব কীভাবে? আজ আমি একটা ভুল করে ফেলেছি। বাবা-মায়ের কথা না শুনে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। আমি জানি আমার ভুলের কোনো মাফ নেই। আমার বাবা মা আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করবে না। কিন্তু আপনারা বলেন আজকে আশিক আমাকে অস্বীকার করছে, ওকে বিয়ে করে ওর ঘাড়ে জোর করে চেপে বসা কি আমার উচিত হবে? যতক্ষণ না ও আমার পা ধরে ক্ষমা চাইবে, প্রায়শ্চিত্ত করবে ততক্ষণ কোনো বিয়ে হবে না। হবেই না।’

টলটলে চোখ নিয়ে সবার দিকে তাকালো ও একে একে।

তারপর সবাইকে পিছনে রেখে, লম্বা করে পা ফেলে একেবারে বাসার ভিতরে চলে এলো আর একটা বেডরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।

আশিক হৈহৈ করে উঠল,

—- ‘এই তো, দেখলে এখন? এই মেয়ে ডাকাতি করতে এসেছে। ও কখনোই বিয়ে করবে না। এবার আমার কথা বিশ্বাস হলো? পুলিশ ডাকেন এবার।’

তিথির সুন্দর মুখ আর সরল কথায় লোকগুলো বিভ্রান্ত হয়েছে। বাবা মাকে ছেড়ে পালিয়ে আসার অপরাধের অনুতাপ কিংবা প্রেমিক প্রতারকে পরিণত হাওয়ার কষ্ট, তিথির বেদনাটুকু যেন ছুঁয়ে গেল সবাইকে। আসলেই তো, যার আত্মসম্মানবোধ আছে সে কি করে এই বিয়েতে রাজি হবে? নেহায়েতই, রাতে যাওয়ার জায়গা নেই বলে এই বাড়িতেই থাকতে হচ্ছে তাকে।

দুইতলার বাসিন্দা জয়নাল সাহেব। ওনার একটা মেয়ে আছে। বিয়ে দিয়েছেন। মেয়েকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয়। সেই কষ্টটুকু যেন ছুঁয়ে দিয়ে গেল তিথি। তিনি আশিককে ডাকলেন,

—- ‘আশিক, তুমি কি এই মেয়েকে বিয়ে করবা?’

— ‘না, অসম্ভব!’

— ‘তাহলে এই মেয়েকে তুমি ডাকাত বলো কিভাবে? তুমি নিজেও তো বিয়েটা করতে চাইছ না। আবার মেয়েটা রাজি হচ্ছে না দেখে তাকে ডাকাত বলছ। তুমি তার সাথে যা করেছ তাতে যেকোনো স্বাভাবিক মেয়েই তোমার সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাইবে না। এখন মেয়েটার যাওয়ার যায়গা নেই বলেই ও এখানে থেকে গেল আমি বুঝতে পারছি।’

— ‘ঠিক বলেছেন। আহারে, কী সুন্দর মেয়ে। ঠিক কাজ হইছে, বাপ মায়ের অবাধ্য হলে কপালে লাথিঝাঁটাই জুটে। মেয়েটার শাস্তি পাওয়া দরকার ছিল। সে আশিকের আসল চেহারা ধরতে পারে নাই আগে। কিন্তু আশরাফ সাহেব, আপনার ছেলে এমন লম্পট সেটা কি আপনি কিছুই জানেন নি? এইজন্যই বাচ্চার মাথার উপর মায়ের দরকার আছে। নইলে এভাবেই পোলারা বিগড়ে যায়৷ ছিঃ ছিঃ। বিয়ে করবা না তো মেয়েটার সর্বনাশ কেন করলা?’

পাশের ফ্ল্যাটের হামিদ সাহেব বললেন আশরাফ সাহেবকে উদ্দেশ্য করে।

আশরাফ সাহেব অত্যন্ত রেগে আছেন। বিয়েটা না হওয়াটা তাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। রেহনুমাকে কী কী বলবেন তার পুরো স্ক্রিপ্ট তৈরি করে ফেলেছেন মনে মনে। এমনকি রেহনুমার উত্তরগুলোও নিজেই দিয়ে রেখেছেন। সবকিছুই ভেস্তে গেল তার এই অপদার্থ ছেলের জন্য। অথচ এই ছেলেটাকে তার অন্য দুই ছেলের তুলনায় বুদ্ধিমান বলেই ভাবতেন তিনি। বুদ্ধিমান বলেই ছেলেটা মাকে ছেড়ে বাবাকে বেছে নিয়েছিল।

এখন দেখছেন এটাও বাপের মতোই হাদারাম হয়েছে। এমন একটা মেয়েকে এভাবে হাতছাড়া করে কেউ?

না, তিনি নিজে তো এতটাও বোকা নন। আর্মিতে ঢোকার কারণে বিয়ের জন্য কিছু বিধিনিষেধ ছিল। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিয়ে করা সম্ভব ছিল না। কই উনি তো চাকরির জন্য রেহনুমাকে হাতছাড়া করেননি। গোপনে দুইবাড়ির মুরব্বি নিয়ে বিয়েটা ঠিকই সেরে ফেলেছিলেন। আহ, কী ছিল সেই দিনগুলো! বিবাহিত অথচ লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতে হতো। কী লাজুক ছিলো রেহনুমা! ছুঁয়ে দিলেই যেন টুক করে লজ্জাবতীর লতার মতো বন্ধ হয়ে যেত, নুইয়ে যেত। আর এখন! সাউন্ড এনহেন্সার লাগে না, সেই সাত চড়ে রা কাড়ে না রেহনুমা নিজেই মাইকের মতো কড়াৎ কড়াৎ করতে থাকে কানের উপর।

আশরাফ সাহেব হুংকার দিয়ে বললেন,

—- ‘বিয়ে করবে না মানে কী? অবশ্যই বিয়ে করবে। গাধার বাচ্চা? আজকে রাতের মধ্যেই তুই মেয়েটাকে রাজি করাবি।’

বিয়েটা না হওয়াতে সবাই একটু মনক্ষুণ্ণ হলেন, এদিকে রাতও বাড়ছে। আশরাফ সাহেবের দায়ীত্বে তিথিকে রেখে সবাই যার যার ঘরের উদ্দেশ্য চলে গেলেন।

আশরাফ সাহেব মন খারাপ করে পিনো নোয়ারের বোতলের ছিপি খুললেন। বেডরুমের এক কোনায় তার পিচ্চি সাইজের বার কাউন্টার। ছোট একট ফ্রিজ আছে আর চার পাঁচটা বোতল। ওয়াইন আর হুইস্কি। আনন্দে তিনি হুইস্কির বোতল খোলেন আর কষ্টের তীব্রতা কমাতে বিভিন্ন স্বাদের ওয়াইন লাগেই গলায় ঢালতে। এইটুকুই। এইটুকুর জন্যই রেহনুমার সাথে তার যত সমস্যা। একটা মাতালের সাথে রেহনুমা কিছুতেই এক ছাদের নিচে থাকবে না সাফ জানিয়ে গেছে। তিনি রেহনুমাকে কিছুতেই বোঝাতে পারেননি একটা দশ মিলির ওয়াইন পেগ কাউকে মাতাল বানাতে পারে না। ছোট্ট এক পেগে তার দিব্যি আধাঘন্টা কেটে যায়। এইটুকুকেই তাল বানিয়ে রেহনুমা ঘর ছাড়ল। মনে আজ অনেক কষ্ট আশরাফ সাহেবের। বারটপ থেকে ওয়াইনের গ্লাস টেনে নিলেন। একটু সৌখিন এইদিক থেকে উনি। তুরস্কের একটা অকশন থেকে মাত্র দুটো গ্লাস কিনেছিলেন, ওয়াটারফোর্ড স্টিমলেস এর গবলেট। এমনিতে বারোটা গ্লাসের সেট, প্রতিটা আশি ডলার করে, মাত্র দুটো গ্লাস নিয়েছিলেন তিনশো ডলার দিয়ে। সেদিক দিয়ে জিতই হয়েছে, তিনি এতগুলো গ্লাস দিয়ে কী করতেন?

গ্লাসটা চকচক করছে। এই গ্লাসগুলো বারেকের হাতে দেন না তিনি, নিজে প্রচুর আগ্রহ নিয়ে পরিস্কার করেন। ওয়াইনে কেউ বরফ দেয় না। তাতে বিস্বাদ হয়ে যায় পানীয়। আজকে দিনটা অন্যরকম। গ্লাসে তিন টুকরো বরফ নিয়ে ড্রিংক তৈরি করে তিনি আশিকের পাশে এসে বসলেন। সোফায় মাথা ঠেকিয়ে দিয়ে চুলগুলো দুই হাতে মুঠো করে ধরে ছাদের দিকে তাকিয়ে আছে আশিক। আস্তে করে তার পাশে বসে ওয়াইন গ্লাসে ঠোঁট ভিজিয়ে বললেন,

—- ‘আশিক, তুই কি কোনোভাবে তোর মাকে ভয় পাচ্ছিস? সে কোনোভাবে ঝামেলা করবে ভাবছিস? সে কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। আমি মেজর আশরাফ তোকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি….’

বহুদিন পরে আগের সেনামেজাজ এসে গিয়েছিল আশরাফ সাহেবের কিন্তু আশিক তাকে পাত্তা না দিয়েই উঠে চলে গেল। আশিকের মাথায় নানা চিন্তা ঘুরছে। কোনোকিছুতেই সুবিধা করে ওঠা যাচ্ছে না। বুদ্ধি বের করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত আর্মি মেজরের প্রলাপ শোনার ইচ্ছা তার নেই। এই লোকের সমস্ত চেতনা অবচেতনভাবে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে কীভাবে স্ত্রীকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা যাবে। তিনি জানেন তিনি স্ত্রীকে ঘৃণা করেন, সারাদিন স্ত্রীকে শায়েস্তা করার চিন্তায় থাকেন, কিন্তু মস্তিষ্ক তাকে ধোঁকা দিয়ে চলে। তিনি আসলে সমস্ত দিন তাকে ফিরিয়ে আনার বাহানা খোঁজেন। স্বাভাবিকভাবেই সোজা পথে হাঁটেন না, যতভাবে রেহনুমাকে বিব্রত করা যায় তার সবগুলো পন্থা অনুসরণ করে যান। আর তাই ছেলেদের কোনো গুরুত্ব নেই তাদের কাছে, ছেলেদের ব্যবহার করে বোকার মতো এক একটা ট্রিক খাটান আর মনে মনে ভাবেন বেশ শায়েস্তা করা গেল এবার রেহনুমাকে। আশিকের মনকে তাই তিনি একেবারেই পড়তে পারলেন না। আশিক নিজেই এই গাড্ডা থেকে নিজেকে বের করার উপায় ভাবতে থাকল।

আশিকের ধারণা এটা অবশ্যই বড় কোনো চক্রের কাজ। বড় কোনো মোটিভ আছে এদের। তিথিকে ভালোভাবে ইন্টেরোগেট করা দরকার। কিন্তু মেয়েটা দরজা আটকে বসে আছে। চোর ডাকাত যাই হোক না কেন এত রাতে একটা মেয়ের দরজায় নক করা মোটেও শোভনীয় নয়। কিন্তু ঘরে ডাকাত ঢুকিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমানোও তো যায় না! সকালে যা করার করা হবে, রাতটা কাটুক। সাপোর্টও যোগাড় করতে হবে। আপাতত একটু ঘুমিয়ে ব্রেইনে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা দরকার। সিঙ্গেল একটা সোফা টেনে মেইন দরজার সামনে নিয়ে সেখানে বসে পড়ল আশিক আর বারেককে বলল সেখানেই বিছানা পেতে ঘুমাতে। আর যাই হোক ঘর থেকে বেরুতে গেলে আশিককে ডিঙিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তিথিকে বের হতে গেলে বা কাউকে ঘরে ঢুকাতে গেলে আশিককে আগে ফেস করতে হবে।

তিথির অবস্থাও একইরকম। ডোরলক তুলে দিয়েও শান্তি হয়নি, দরজায় পিঠ লাগিয়ে বসে পড়েছে ফ্লোরে। এই বাসায় কোনো মহিলা থাকে না জানতে পারার পর থেকেই টেনশন শুরু হয়েছে। গার্ড শয়তানটার হাত থেকে বাঁচতে গরম কড়াই থেকে চুলার আগুনে লাফ দিলো না তো? আশিক নামের ছেলেটা তো আছেই, তার বাবাকেও বিশ্বাস করা যায় না কোনোভাবেই। মুখ দেখে মানুষ চেনার ক্ষমতা তো তিথির নেইই, সেটা হাসিবকে দিয়েই প্রমাণ হয়ে গেছে। তাই সব মানুষের পরেও তিথির প্রচন্ড অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। সবাই মুখোশ পরে আছে মনে হয়। এই শ্বাপদের জঙ্গলে নিজেকে বাঁচানোর উপায় নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়। চা বানানোর অজুহাতে তাই প্রথমেই তিথি এই বাসার কিচেনে গিয়ে ঢুকেছিল। খুঁজে এনেছে মাছ কাটার ছুরি, দুটো কাঁটাচামচ আর মরিচের গুঁড়ো। আত্মরক্ষার ব্যবস্থা। রাতটা পার করে এই বাসার ভাব বুঝতে হবে। খারাপ বুঝলে কালই কেটে পড়তে হবে। কিন্তু কালই বা তিথি কোথায় যাবে? এই দুনিয়াতে তিথির যাওয়ার মতো জায়গা কি আরেকটা আছে? রায়নার বাসাও তো তিথির জন্য নিষিদ্ধ জায়গা। কী করবে তিথি? ভাবতে ভাবতেই সেভাবে বসে থেকে ঘুমিয়ে পড়ল ও।

দরজায় নক পড়ার শব্দে তটস্থ হয়ে উঠল তিথি,

—- ‘মা?’ ‘মাগো?’ বলে সুন্দর করে ডাকছেন আশরাফ সাহেব। তিথি তার গলায় মধু মেশানো স্নেহকে পাত্তা দিলো না, ব্যাগের ভিতর রাখা ছুরিটকে মুঠো করে ধরল।

— ‘মাগো, সকাল হয়েছে অনেকক্ষণ। এত দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা ঠিক না। আর্লি টু বেড, আর্লি টু রাইজ। যত রাত করেই ঘুমাই না কেন আজ পর্যন্ত সকালের সূর্য আমার আগে ওঠেনি। দেখো, আজও কেমন ফিট আমি! দুমাইল দৌঁড়াই প্রতিদিন। আজকে পারলাম না। আশিককে জাগাতেই পারলাম না। সে দরজার সামনে বিছানা পেতেছে। কী যে আজকালকার ছেলেমেয়েরা! সারারাত জেগে মোবাইলের ভেতর ঢুকে থাকবে, যতসব আনপ্রডাকটিভ কাজ! সকালে পড়ে পড়ে ঘুমাবে। ভোর কেমন এরা মনে হয় জানেও না!’

আশরাফ সাহেব কতক্ষণ একা একা বকে গেলেন। তিথি সাড়া দিলো না। তারপর খেয়াল হলো, এখন রাত না মোটেও। রাতের আঁধারে কেউ তার দরজা ধাক্কায়নি। রোদে উদ্ভাসিত একটা সকাল এসে গেছে। দেয়ালঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল ঘন্টার কাঁটা নয়ের ঘর ছুঁয়ে গেছে। ও আস্তে আস্তে উঠল। ফ্রেশ হয়ে ঘরের বাইরে এলো। আস্তে আস্তে এদিক সেদিক উঁকি মেরে চলছে ও। বারেক নামের ছেলেটা এখনো বিছানা তোলেনি। রান্নাঘরের মোড়ায় বসে বসে ঢুলছে। ডাইনিং এ এসে দেখল আশরাফ সাহেব বসে নাস্তা করছেন। বাইরে থেকে আনানো খাবার। আগেরদিন দোকান থেকে আনানো হয়েছে। এক্সট্রা ছিল, গরম করে নেওয়া হয়েছে। পরোটা, সবজি, ডাল এমনকি ডিমভাজাটাও বাইরে থেকে আনানো। বাসী পরোটা গরম করায় রাবারের মতো হয়ে আছে, টেনে টেনে ছেঁড়া লাগছে। আশরাফ সাহেব হাসলেন তিথিকে দেখে,

—- ‘গুড মর্নিং। নাস্তা খেয়ে নাও। বারেক রান্না করতে পারে না। আমি পারি সবই, কিন্তু ইচ্ছে করে না। ব্রেডফেডও আছে, জ্যাম – বাটারও আছে। যা ইচ্ছা নিয়ে খাও।’

তিথি এই বাসা ছেড়ে বেরিয়ে যাবে ভাবছে। কিন্তু দরজা জুড়ে এমনভাবে আশিক শুয়ে আছে ওকে পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব না। ও আশরাফ সাহেবের মোবাইলটা চাইল, আতিককে ফোন দেবে বলে। বাড়ির পরিস্থিতিও জানা যাবে আর নড়াইলের কোন ঠিকানায় যেতে হবে সেটাও জানা দরকার। কিন্তু ফোনটা ধরল শিরিন। তিথি কোনো আওয়াজ করল না। আস্তে করে ডিসকানেক্ট করে দিলো। আতিকের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে নেওয়া হয়েছে সম্ভবত। বড় বিপদেই পড়ল তিথি। আতিকের সাথে যোগাযোগ না করতে পারলে কোথায় যেতে হবে ও জানবে কীভাবে? আরও কয়েকদিন এখন এই বাড়িতে থাকতেই হবে ওকে। তিথি মনে মনে সংকুচিত হলো। বিয়ে হয় না হয় না তিথির। এখন বিয়ে নিয়েই জ্বালা হলো। হাসিবের সাথে বিয়ে এড়াতে আতিকের সাথে তিথিকে বিয়ে দিতে চাইলেন শিরিন, আর আতিকের সাথে বিয়ে অসম্ভব বলে পালিয়ে এসে আশিকের সাথে বিয়েটা এখন অনিবার্য হয়ে ঘাড়ে পড়েছে! কিছুক্ষণ অসহায় হয়ে ভাবল তিথি! আর যে যাই জানুক না কেন, আশিক তো জানে সব সত্যিটা। তাই ওর সাথেই একটা সমঝোতায় আসতে হবে এখন। কিংকর্তব্যবিমুঢ় দেখালো ওকে।

আশিক ঘুম থেকে উঠে, রাতের সবকিছু মনে করে লাফ দিয়ে পড়ল। তিথিকে হ্যান্ডেল করার আগে বাসার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা দরকার। টেকনিশিয়ান ডেকে এনে সিসিটিভি ক্যামেরা ইন্সটল করার ব্যবস্থা করল। আজকে অফিস যাবে না আশিক। সারাদিন কী কী করা যায় তার তালিকা করতে বসল। তিথির সাথে কথা বলতে হবে। আসলে কী চায় ওই মেয়ে, ওর ডিমান্ডটাও জানতে হবে। একান্তই ডিল করা না গেলে মাকে ফোন করতে হবে। এমনিতে মায়ের ধারেকাছে না গেলেও এখন মনে হয় শুধুমাত্র রেহনুমাই পারবে এই মেয়ের ঝামেলা থেকে আশিককে বাঁচাতে

চলবে…
আফসানা আশা