তিথি পর্ব-১৩

0
335

তিথি – ১৩
আবারও লজ্জায় জমে গেল তিথি। কিন্তু লজ্জাটা নারীর স্বাভাবিক লাজুকস্বভাবের জন্য, প্রিয় পুরুষের প্রিয় স্পর্শেও সে গুটিয়ে যেতে চায়।
কিন্তু আশিক তো ওর প্রিয় কেউ না। প্রিয় তো দূরের কথা, এ তো একেবারে অচেনা একটা মানুষ। তবুও এমন কেন হলো? তিথির নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করল। কিন্তু আশিককে অস্বস্তি হলো না, ভয় হলো না। পুরুষের বিকৃত চোখের দৃষ্টি এখন চেনে তিথি, আশিকের চোখে তা নেই, সেখানে খানিকটা দুষ্টুমি বাসা বেঁধেছে, দিব্যি হাসছে চোখ দুটো!
তিথি ধাক্কা দিলো আশিককে। আশিকও তিথিকে ছেড়ে দুই হাত একটু উপরে করে ধরল। বলল,
—- ‘শোনো যা ভাবছ তা মোটেও ভেবো না। আমাকে কাবু করার চিন্তাও করো না। নিজেকে অপ্সরী ভাবো নাকি? এইভাবে অন্য কোনো ছেলেকে তোমার আঙ্গুলে নাচাতে পারবে, আমাকে না। আমি কোনো মেয়েটেয়ের আশেপাশেও যাই না। মেয়েদের আমার ভালোই লাগে না।’

তিথি হাসল। হাসতে হাসতে বলল,
— ‘আমি কী ভাবছি তুমি জানলে কীভাবে? আর মেয়েদের পছন্দ করো না, মানে কী? তাহলে কি ওইসব পছন্দ করো? হুহ?’

— ‘ওইসব মানে কী?’

— ‘ওই যে, ছেলে-ছেলে, ওইসব?’

— ‘এই মেয়ে, কানের নিচে মারব একটা। এখন মানে মানে কেটে পড়!’

— ‘কেটে পড়ব মানে কী? আমি বললাম না, আমি কয়েকদিন থাকব এখানে?’

— ‘এই মেয়ে, বেশি তেড়িবেড়ি করলে আমি পুলিশ ডাকব কিন্তু!’

— ‘ডাকো।’

— ‘ভয় পাও না তুমি?’

— ‘না। ভয় পাই না। কারণ তোমার উইক পয়েন্ট আমার দখলে এখন।’

— ‘উইক পয়েন্ট? আমার উইক পয়েন্ট কোনটা?’

— ‘এই যে, বিয়ে তারপর মেয়ে এইসবে এলার্জি আছে তোমার। তুমি কিছুতেই আমাকে বিয়ে করবে না আমি জানি। আর তোমার বাবা তোমাকে বিয়ে দেবেনই। তোমার বিয়ে নিয়ে ওনার অন্য কোনো ইস্যু আছে। সেটা এখনো বুঝিনি। তবে কিছু একটা আছেই। আমি একটা অচেনা মেয়ে, নিজের ছেলের চাইতে আমাকে বেশি বিশ্বাস করলেন? আসলে আমি ব্যাপার না। আমার জায়গায় কোনো মুশকো জোয়ান ছেলে হলেও তোমার বাবা তোমাকে বিয়ে দিতে এরকমই ক্ষেপে যেতেন। মানে বিয়ে একটা তার দরকার। সেটা কার সাথে হলো সেটা জরুরি না।’

আশিক চুপ করে থাকল। এগুলো ওর জানা কথা। নতুন কিছু বলেনি তিথি। তবে ওর অবজার্ভেশন দেখে চমকিত হলো। একটু আগের সাময়িক দুর্বলতাটা কেটে গেছে। তিথিকে তাড়াতেই এখন আবার মরিয়া হয়ে উঠেছে ও। রেগে গিয়ে বলল,

— ‘এখানে উইকনেসের কী হলো?

— ‘এটাই যে তুমি এখন বিয়েটা না করার জন্য আমি যা বলব তাই করতে বাধ্য হবে। হলো না, তোমার দুর্বল জায়গা? তোমার হলো সারা… আমার হলো শুরু… ‘

— ‘এত খুশি হয়ো না। আমি এখনই বাবাকে বলব আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। আমি তাকেই বিয়ে করবো।’

— ‘এত খুশি তুমিও হয়ো না। তুমি এবং তোমার বাবা আর এখন আমিও ভালো করে জানি, তোমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।’

— ‘তুমি তাহলে আমার ব্যাপারে সব খোঁজ-খবর নিয়েই এসেছ? যা ভাবছি, ঠিক তাই। আসলেই ডাকাতি করার মতলবেই এসেছ।’

— ‘খোঁজ করার দরকার নেই। একটু বুদ্ধি থাকলেই বোঝা যায়। এই যে, আমি ডিনাই না করলে কাল তো তোমার বিয়ে হয়েই যাচ্ছিল। তুমি রেগে গিয়েছিলে, ক্ষেপে উঠেছিলে, কিন্তু টেনশন করছিলে না। কোনো দুঃশ্চিন্তার ছাপ তোমার মুখে ছিল না। তারপর ধরো, একবারও তোমার গার্লফ্রেন্ডকে ফোন দিতে দেখলাম না। প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে বিয়ে হচ্ছে সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ। তো সেই অতবড় বিপদের সম্মুখীন হয়েও তুমি একবারও তোমার গার্লফ্রেন্ডকে ফোন দিলে না, মানে তোমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেইই!’

— ‘ওসব বুদ্ধি টুদ্ধি কিছু না। ভালোরকম খোঁজখবর নিয়েই এসেছ তুমি। কোনো লাভ নেই, বুঝেছ, কোনো লাভ নেই? এতকিছু খোঁজ নিয়েছ, এটা জানো না, এই বাসায় নগদ টাকা, অলংকার কিছু থাকে না? সব আমার মায়ের কাছেই থাকে। সংসার খরচের টাকাও মায়ের কাছে। আমার বেতন দিয়ে আমি টেনেটুনে চলি আর বাবার টাকা থেকেই সামান্য হাতখরচ মা বাবাকে দেয়। সবই মায়ের দখলে। মায়ের সাথে সাথে টাকা পয়সাও এই বাড়ি থেকে চলে গেছে।’

— ‘তোমার মা তো আমার মায়ের চাইতেও স্বৈরাচারী?’

— ‘তাই? তোমার মা-ও এরকম?’

— ‘একদম। বাবার এক টাকাও খরচ করার উপায় থাকে না। পাই টু পাই, এক একটা পয়সা করে হিসাব দিতে হয়।’

— ‘হ্যাঁ আমি জানি তো। পৃথিবীতে সব নারীই এইরকম। দজ্জাল। তাই তো নারীর নামেই না আছে। না তে না, না তে নারী। নারীকে না বলতে হয়। আই হেইট উইমেন!’

— ‘আমি সেটা জানি। আর এটাই তোমার উইকনেস। তুমি আমাকে সহ্য করতে পারবে না, বিয়ে তো অনেক দূর। এখন তুমি যদি হেল্প করো আমাকে আমি এসব বিয়েটিয়ে ক্যান্সেল করে দেব।’

— ‘তোমাকে হেল্প করার জন্য আমি বসে আছি নাকি? হুহ, শখ কত?’

— ‘’শখ দেখো নাই? মেটে নাই তোমার শখ? একটুখানি হেল্প যদি করতে, শুধু বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দিতে, তবে এই ঝামেলায় পড়তে হতো না তোমাকে। কিন্তু তুমি সাহায্য করোনি তাই ফেঁসে গেছ। আর এখন যদি আবারও এইটুকু সাহায্য না করো তবে আমি সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেলব তোমাকে। তখন এই না তে নারীজাতিকে গলায় ঝুলিয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে সারাজীবনের জন্য। হ্যাপিলি এভার আফটার!’

— ‘কিন্তু বিয়ে তো তুমিও করতে চাও না। সেটাও তো আমি জানি। এটা তবে তোমার দুর্বলতা।’

— ‘কে বলেছে, আমি বিয়ে করতে চাই না? সেই বড় আপার বিয়ের সময় থেকেই আমার বিয়ের খুব শখ।’

— ‘তবে? বিয়ে করবে না বলেই তো পালিয়েছ?’

— ‘হ্যাঁ বিয়ে করব না বলেই তো। আসলে কী জানো, আমাদের বাবা-মা আমাদেরকে ভালোবাসে। খুব ভালোবাসে। সবার বাবা – মাই ভালোবাসে। আমাদের জন্য যেকোনো কিছু করতে পারে তারা। আর এই যেকোনো কিছু করতে গিয়ে তারা আমাদের উপর যেকোনো কিছু চাপিয়ে দিতেও পারে। সেই ভার আমরা নিতে পারব কি-না, ভারে কুঁজো হয়ে যাব কি-না, সেই ভার বইতে গিয়ে পা ভেঙে উলটে মুখ থুবড়ে পড়ব কি-না সেসব দুবার ভাবে না। আমাকে হাসিবের হাত থেকে বাঁচাতে, বিয়ে দিচ্ছে আতিকের সাথে, পৃথিবীতে অন্তত এই একটা মানুষকে কোনো কিছুর বিনিময়ে স্বামী ভাবা সম্ভব না আমার পক্ষে।’

— ‘তুমি তো বললে, তোমাকে তো তোমার ভাই পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। যদি না করত?’

— ‘মরে যেতাম, তবুও না। এর চেয়ে ভালো আমি ওই হাসিব শয়তানকে বিয়ে করে নিতাম। কোনো গরু, গাধা, মহিষ, হিপোপটেমাসকেও বিয়ে করতে আপত্তি নেই। তোমাকে বিয়ে করতেও আপত্তি করব না বুঝতেই পারছ?’

— ‘কাল তো আপত্তি করেছিলে।’

— ‘কালকে সিচুয়েশন অন্যরকম ছিল। কাল রাতে শুধু একটা রাত কাটানোর ব্যাপারই ছিল। সেখানে বিয়ে করার প্রশ্ন আসে না। একটা রাত নিরাপদ থাকাই প্রায়োরিটি ছিল আমার। কিন্তু এখন সেটা বদলে গেছে। ভাইয়ার কাছে ফোন নেই। আমি বাড়ি কখন ফিরব জানার উপায় নেই। কোথায় যাব সেটাও ভুলে গেছি। ভাইয়ার কাছ থেকেই জানতে হবে সেটা। তো এখন আমি এখানেই থাকব। কতদিন জানি না। তাই বিয়েটা করে ফেলাই ভালো হবে, বলো?’ চোখ টিপল তিথি আশিকের দিকে তাকিয়ে।

আশিকও মুখ ভেংচালো,
—- ‘এহ, আমার বয়েই গেছে বিয়ে করতে। নিজেকে কি অপ্সরা ভাবো নাকি যে রূপ দেখিয়ে আমাকে ইম্প্রেস করে নেবে আর আমি আমার প্রতিজ্ঞা ভুলে তোমাকে বিয়ে করে নেবো? স্বপ্নেও ভেবো না।’

তিথি ঠোঁটের কোনা লম্বা করে বলল,
—- ‘আমি তো সেটা জানিই।’ খাটের উপর আয়েশ করে বসতে বসতে বলল,
—- ‘আমি তো খুব ভালো করে বুঝে গেছি। আর এটাই তোমার উইকপয়েন্ট আমার কাছে। এটা দিয়েই তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করব এখন। টাল্টিবাল্টি করেছ তো, বিয়ে করে ফেলব তোমাকে আর তুমি তোমার ‘চিরকুমার’ পদবী হারাবে।’

— ‘সেই উইক পয়েন্ট তো তোমারও আছে। তুমি একটা মেয়ে, এটাই তোমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। এখানে তোমার সাপোর্ট কই? আমি যদি তোমার কোনো ক্ষতি করি?’
ভুঁরু উঁচু করে জানতে চাইল আশিক। ওর চোখেমুখে আনন্দ। তিথিকে জব্দ করার আনন্দ।

— ‘আমার কী ক্ষতি করবে তুমি?’ একটু ভীত দেখা গেল তিথিকে।

— ‘বুঝে দেখো, কী করব? কী কী করব? কী কী করতে পারি? অনেক কিছুও করা যায়, না? এই ধরো, জড়িয়ে ধরতে পারি। চুমু খেতে পারি। আরও অনেক কিছু করতে পারি। সবকিছুই করতে পারি, তাই না? সবকিছুই… ‘
হাসিহাসি গোবেচারা মুখ করল আশিক।

আশিকের কথায় একটু নার্ভাস হলো তিথি। কিন্তু ওই এক মূহুর্তই। সেটাও আশিকের কথার ভাবে। এই সম্ভাবনা নিয়ে তো আগেই ভেবে রেখেছে ও। উজ্জ্বল হাসিতে ভরে গেল ওর মুখ,
—- ‘না। কোনোকিছুরই সম্ভাবনা নেই। এই বাসায় আমার সাথে খারাপ কিছু ঘটার সম্ভাবনা নেই। একেবারেই নেই।’

— ‘’কীভাবে? একটু আগেও কিন্তু আমি তোমাকে জাপটে ধরেছিলাম।’

— ‘তবুও নেই।’

— ‘’কীভাবে? ওই ছুরি-কাটারির জোরে? ওই দিয়ে আমাকে আটকানোর জোর আছে তোমার? এই বাসায় আমাকে কে বাধা দেবে? বাবা? ধরলাম, তাও দিলো। বাবা বাধাই দিলো। কিন্তু বাবা যখন থাকবে না? বা ধরো রাতে, নিরিবিলিতে? বিপদ তো হতেই পারে৷ তাই না?’

তিথি এবার একটুও ভয় পেলো না। আশিক এতখানি ভয় দেখাতে চেষ্টা করল, তবুও ভয় পেলো না। মুখে হাসি ফুটিয়ে খানিকটা হতাশ হওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
—- ‘নাহ। ছুরিটুরি লাগবে না। গতরাতে লেগেছিল। তখনও সবটা ভাবিনি তো, তাই। এখন আর লাগবে না। কারণ আমি জানি এই বাসায় আমার কোনো বিপদ হবে না। কোনো বিশ্বাস টিশ্বাস না। মানুষের মুখ দেখে তাকে চেনার ক্ষমতা আমার নেই। আমি সিম্পল একটা অবজার্ভেশন থেকে বুঝতে পারছি, এই বাসায় আমার কোনো ভয় নেই। এখন আমি যে এই বাসায় আছি, থাকছি – এই ব্যাপারটা তুমি, তোমার বাবা ছাড়াও আরও অন্তত দশজন জানে। আমার কোনো বিপদ হলে তারা তো চুপ করে থাকবে না। তাই নিজেদের স্বার্থেই তোমরা আমাকে নিরাপদ রাখবে। ঠিক না?’

এরপরে আর কথা বলা চলে না।
আশিক মুখ গোঁজ করে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো। আসলেও চিপায় ফেঁসে গেছে ও। বিয়ে ও কিছুতেই করতে পারবে না। মেয়েদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ ওর মনের ভিতর। আবার বিয়েটা এড়াতে গেলে তিথির আঙ্গুলে নাচতে হবে, কতটা নাচাবে এই মেয়ে তাও আন্দাজ করতে পারছে না। তিথিকে ডাকাত ভাবার সন্দেহটাও মন থেকে দূর হয়নি।

তিথিও বুঝতে পারছে আশিকের মনের দোলাচল। কিন্তু ওর কিছু করার নেই এখন। বিপদগুলোতো আগে থেকে জানান দিয়ে আসে না। এর জন্য তো প্রিপারেশনও নেওয়া থাকে না। যখন যে পরিস্থিতি সামনে আসে তাকে সেইভাবেই সামাল দিতে হয়, বুদ্ধি করে। নিজের সুবিধা করতে গিয়ে অন্যকে হয়তো সাময়িক অসুবিধায় ফেলতে হয় কিন্তু এই সুযোগটুকু এখন তিথিকে নিতেই হবে। ও অপারগ এবং মরিয়া। আশিকের অসহায় মুখ দেখে মায়া হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
—- ‘ আমার ভাইয়াটাও বোকা আছে বুঝেছ? গয়না- টাকা দিয়েছে ব্যাগে কিন্তু আমার মোবাইলটাও দেয়নি আর একটা কোনো জামাও দেয়নি সাথে। তুমি আপাতত দুই সেট জামা কিনে আনো। রেডিমেড কিনবা। সাইজ বুঝতে পারবা তো? আমি ৩৪/৩৬ পরি। তুমি ৩৬ ই এনো। না বুঝলে আটত্রিশও আনতে পারো। অবশ্যই ভালো ব্রান্ডের। ভালো হয় আড়ংয়ে চলে যাও। নরমালের ভিতর নিয়ে আসবে। ঘরে পরার মতো। সুতি দেখে। দামে বেশি হলেও ওদেরটা সাইজে গোলমাল হয় না। ঘরেও পরতে পারব, বাইরেও পরা যাবে! একটু কম দাম দেখে আনবে। লুজফিটিং হলেও সমস্যা নেই। টাইট না হলেই হলো। আর একটা টাওয়েল, একটা চিরুনি, একটা ক্রিম একটা ফেসওয়াশ, শ্যাম্পুও লাগবে, একটা…’

— ‘এই এই দাঁড়াও দাঁড়াও ‘ তিথিকে থামাল আশিক,
— ‘লিস্ট তো বিরাট হতেই যাচ্ছে, হতেই যাচ্ছে, মানে কী এসবের? আমাকে কি ডংকি মনে হচ্ছে তোমার, বাংলায় গর্ধভ? এগুলোর টাকা কে দেবে? আমি কি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর নাকি? টাকার গায়ে আমার ইনিশিয়াল আছে? সই করে দিলেই ‘ইহার বাহককে হাজার হাজার টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে’ লেখা আছে কোথাও? লিস্ট তো রেলগাড়ীর মতো একটার সাথে আরেকটা বগি জোড়া লেগেই যাচ্ছে।’

— ‘না একদম না। গর্দভ ভাবিনি মোটেও। তবে খানিকটা কাছাকাছি।’
মিষ্টি করে হাসল তিথি। ব্যাগ থেকে একটা চেইন বের করল। সেটা আশিকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
—- ‘এটা বেচে দেবে। যা মনে হচ্ছে ছয়-সাত আনা আছে। হাজার পনেরো টাকা পাওয়া যেতে পারে। এটা দিয়েই এই খরচগুলো হয়ে যাবে। তারপর কিছু থাকলে দেখা যাবে।’

— ‘তুমিই সাথে চলো তাহলে? জামাও পছন্দ করে কিনলে আর টাকাটাও নিজেই খরচ করলে?’

আশিকের সফট টোনে গলে গেল না তিথি। ও জানে এটা ওকে এই বাসা থেকে বাইরে বের করার ধান্ধা। একবার দরজার ওপাশে গেলেই তিথির জায়গা হবে রাস্তাতে। আশিক একেবারে বুদ্ধিহীন ছেলে না। হয়তো ঠিকঠাক হিসাব কষে উঠতে পারছে না। এইরকম উটকো পরিস্থিতিও তো খুব একটা সামনে আসে না যে মোকাবেলা করবার উপস্থিত বুদ্ধি চট করে জোগাড় হয়ে যাবে৷ কিন্তু কিছু একটা বুদ্ধি ঠিকই করে ফেলবে আশিক। তার আগে তিথিকেও অন্য কোনো উপায় খুঁজে বের করে ফেলতে হবে। এখন কিছুটা সময় চাই, আর নিরাপদ আশ্রয়।
ও বলল,
— ‘আমাকে বের করাটা এত সহজ হবে না৷ অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে, বুঝেছ? একবার এই বাড়ি থেকে বের হলে আমি যে আর এখানে ঢুকতে পারব না, সেটা আমি জানি। তাই তাড়াতাড়ি যাও। যাও তো, তাড়াতাড়ি যাও। গা চিটচিট করছে। গোসল করতে হবে৷ গোসল করে পরব কী? তুমি নিশ্চয়ই চাও না, আমি ‘দ্য বার্থ অফ ভেনাস’ স্টাইলে তোমাদের বাসার ভেতর ঘুরে বেড়াই! আর আমাকে বের করার জন্য এত বুদ্ধি খাটিও না। তুমি এক চাল দিলে আমি আরেক চাল দেবো, ট্রাম করলে ওভারট্রাম করব। মাৎ দিতে এলে আমিই বাজিমাৎ করব! আমাকে তাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করো না, সময়মতো আমি নিজেই চলে যাব!’
হাসল তিথি।
আশিকের কিছু বলার থাকল না। ও মুখ বেজার করে ঘর ছাড়ল।
একটু আগেও কাছে এসেছিল ও তিথির, অনেকেটা কাছে টেনেছিল। কিন্তু সেই স্পর্শে কোনো নোংরা চাহিদা ছিল না। তিথিকে বিপর্যস্ত, অপর্দস্থ করার সব চেষ্টাই আশিকের আছে, কিন্তু অশালীনতা ও জানে না৷ আবারও তিথিকে বের করে দেওয়ার সব চেষ্টাই করবে ও। তবুও নিজেকে নিরাপদ মনে হচ্ছে ওর৷ আশিকের বেরিয়ে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে তিথি মনে মনে বলল,
— ‘ট্রাম ট্রাম যুদ্ধ হবে, তোমার সাথে আমার সাথে…’

চলবে…
আফসানা আশা