সুগন্ধি ফুল পর্ব-০৬

0
1180

#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_৬
#জান্নাত_সুলতানা

-“আবরাজ ফিজা কে ডাকো।”

ইলা বেগম ছেলে কে আদেশ খানা করে আবার রান্না ঘরে গেলো। এতোদিনে একবার ও ফিজা আবরাজ এসছে পর এক সাথে খাবার টেবিলে বসে খাবার খায় নি। ইলা বেগম ভাবছে আবরাজ উপর অভিমান করে ফিজা এক সাথে খাবার খাচ্ছে না। কিন্তু ব্যাপার টা যে সম্পূর্ণ উলটো। সেটা তিনি না বুঝতে পারলেও আবরাজ ঠিক বুঝে। তৃণা মেয়ে টার অতিরিক্ত ন্যাকামি ফিজার জাস্ট অসহ্য লাগে। মেয়ে টা ন্যাকা। অবশ্য হবে নাই বা কেনো! বাবা জার্মানির নামকরা একজন বিজনেসম্যান। আসলে শুধু কি বিজনেসম্যান? না-কি বিজনেস এর আড়ালে ভয়ংকর কিছু রয়েছে? ফিজার এ-সবে ধারণা নেই। সে এসবে আগ্রহী ও নয়। তবে সেদিন মিষ্টির কথায় কিছু টা আন্দাজ হয়েছে তৃণার বাবা বিশেষ ভালো মানুষ নয়। স্বার্থে জন্য সব করতে পারে।
ফিজা রুমে বসে অফিসের কিছু একটা কাজ করছে। ল্যাপটপ এর দিকে দৃষ্টি স্থির মেয়ে টার। আবরাজ কক্ষে প্রবেশ করে না। দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ফিজা সেদিকে খেয়াল নেই। তবে নাসারন্ধ্রে কড়া পারফিউম এর গন্ধ ঠেকছে মেয়ে টার। এমন পারফিউম গন্ধ শুধু আবরাজ খান নামক পুরুষ টা আশেপাশে থাকলে পাওয়া যায়। ফিজা অন্যমনষ্ক হয়ে গালে হাত রাখলো। সোফায় থেকে বেড উপর টানানো বড়ো ফটো টার দিকে তাকালো। কি সুন্দর গম্ভীর পুরুষ টা ফ্রেম বাঁধানো বিশাল একখানা পিকচার। ফিজার এই ছবি টা দেখে কোনো দিন ই আলসেমি লাগে না। পুরনো হয় না। সব সময় মনে হয় এই তো এই প্রথম বার সে ছবি টা দেখলো। প্রতিবারই মেয়ে টা ছবি টার দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যায়। প্রথমবারের ন্যায় প্রতিবার একই অনুভূতি হয়। অদ্ভুত সৌন্দর্যের এই পুরুষ টার গালে দাড়ি হলে কেমন লাগত? আরো সুদর্শন? নিশ্চয়ই। তবে মারাত্মক ফরসা এই আবরাজ খান। ফিজার আচমকাই মনে হলো পুরুষ মানুষ এতো ফরসা ভালো লাগে না। তবে আবরাজ খান কে লাগে কেনো? না-কি ভালোবাসার চোখে দেখে বলে এতো সুন্দর লাগে? না মোটেও এমন নয়। আসলেই আবরাজ খান সুন্দর। ঠিক যেন অল্পবয়সী কোনো রাজা-বাদশা এর মতো। শরীর এর গঠন সাঙ্ঘাতিক। ভয়ংকর নজর কাড়া। বলিষ্ঠ সুঠাম দেহ টায় সব রকম পোশাকআশাকে সৌন্দর্য ফুটে।
আবরাজ দাঁড়িয়ে আছে দরজা। প্যান্ট এর পকেটে হাত গোঁজা। আরেকটা হাতের আঙুল গালে ঠেকানো। গম্ভীর পুরুষ টার মুখ কেমন বাচ্চাদের মতো দেখাচ্ছে। ফিজা হঠাৎ আবরাজ কে এমনতর অবস্থায় দেখে চমকে উঠল। নড়েচড়ে বসে মেয়ে টা। এতো সময় সে আবরাজ এর ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলো আবরাজ কি সেটা দেখে ফেলেছে? ফিজা পরক্ষণেই ভয় গিলে নিলো। বেশ ভাবসাব নিয়ে বসে রইলো। দেখলে কি? সে কি চুরি করছে? মোটেও না। তারই তো জামাই লাগে। এখানে কার কি সমস্যা সে যদি তার বর এর ছবির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে?
ফিজা মনে মনে এসব ভেবে চিল মুডে বসে আবার ল্যাপটপ এর স্ক্রিনে তাকায়। কিন্তু আচমকাই নিজের সামনে কারোর উপস্থিত অনুভব করলো। শুধু উপস্থিত নয়। সামনে দাঁড়ানো মানুষ টা শুধু দাঁড়িয়ে ক্ষান্ত হয় নি। মেয়ে টার একদম গা ঘেঁষে বসে গাল ধরে নিজের দিকে মুখ টা ফিরিয়ে ধরলো দুই আঙুলের সাহায্যে। পরপরই সুর টেনে বলে,

-“মেরি জান পিকচার কেনো? লাইভ দেখো না! এই যে আমি তোমার সামনে। লুক। ভালো করে দেখো। এদিকে দেখো। আমার দিকে দেখো সুগন্ধি ফুল। লুক এট মি”

ফিজা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। কথার খেয়া হারায় মেয়ে টা। শব্দ যেন গলা দিয়ে বেড় হচ্ছে না। এভাবে কেউ মানুষ কে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে ফিজা হয়তো এই পুরুষ টাকে না দেখলে জানতই না। শুধু কি জানা? একদম প্র্যাকটিক্যালি দেখাও হয়ে গেলো।
ফিজার ভাবনার মাঝে ই আবরাজ বাঁকা হেঁসে ফের বলে,

-“তোমারই তো বর আমি।”

-“এতোদিন মনে ছিলো না আপনি কারোর বর?”

কি তীক্ষ্ণ সেই চাহনি। আবরাজ চুপ। কোনো কথা বলে না। তখন ও তাকিয়ে সে বউয়ের রাগান্বিত মুখের দিকে। মেয়ে টা রাগলে গাল কেনো লাল হয়? আবরাজ এসছে পর থেকে দেখে আসছে মেয়ে টা একটু রেগেমেগে কথা বললে গাল লাল হয়। চোখ গুলো ও লাল হয়। আবরাজ কে কিছু বলতে না দেখে ফিজা এবার বেশ ভয়ানক কাণ্ড করে বসলো। আবরাজ এর টি-শার্ট এর কলার ধরে নিলো। হয়তো রাগের মাথায় কি করছে বুঝতেই পারছে না মেয়ে টা। ফিজার রাগান্বিত কঠিন স্বরে আবরাজ এর ভাবনার ছেদ ঘটে।

-“কি হলো? কথা বলুন! এতোদিন হয়ে গেলো এসছেন এখন পর্যন্ত তো নিজ থেকে কিছু ই বললেন না! না-কি কিছু বলবেন না বলে পন করে নিয়েছেন আপনি?”

-“আমার বউয়ের দেখি অনেক রাগ আমার উপর।”

এমন সিরিয়াস মোমেন্টে এমন হেয়ালি স্বরে এরূপ কথায় ফিজাররাগ তরতর করে বাড়লো বৈ কমলো না। কিন্তু হঠাৎ মস্তিষ্ক সজাগ হলো। সে খুব নিকটে বসে আছে আবরাজ এর। কথাখানি মনে পড়তে ঝট করে ফিজা দূরে সরে এলো। কিন্তু আবরাজ এর এটা পছন্দ হলো না। আর সে এটা মোটেও মেনে নেওয়ার পাত্র নয়। অগত্যা সে নিজেই বউয়ের দিকে এগিয়ে এলো। ফিজা পা তুলে বসে ছিলো সোফায়। কোলের উপর রাখা ল্যাপটপ। আবরাজ ল্যাপটপ সেন্টার টেবিলে রাখে। ফিজা তখন শক্ত হয়ে বসে আছে। আর শক্ত স্বরে বলে,

-“কাছে আসবেন না।”

-“আসবো।”

-“দূরে থাকুন।”

-“আই নিড ইউ।”

-“আই ডোন্ট হ্যাভ।”

-“বাট আই নিড ইউ, রাইট নাউ।”

আবরাজ কথা টা বলেই ফিজার গলার ওড়না টা খুলে নিলো। জর্জেট এর ওড়না টার ঠাঁই হলো অদূরে। ফিজার কণ্ঠ কাঁপছে। দুরদুর করে বুক। তবুও মেয়ে টার মন চায় না কিছু হয়ে যাক এই মূহুর্তে। কিছু টা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,

-“আপনার এমন টা কেনো মনে হচ্ছে আপনি যখন যা চাইবেন আপনার যা প্রয়োজন হবে সব আমাকে মেনে নিতে হবে?”

থমকে গেলো সামনে বসা পুরুষ টা। অদ্ভুত ভাবে হাত থামে। মুখের ভাবভঙ্গি বদলে গেলো। দূরত্ব বাড়ায়। দুই হাত মেলে সোফায় মাথা এলিয়ে বসে। নীরবতা চললো কত সময়। ফিজা উত্তর পাবে না জানে। সে আশা ও করে না। তবুও কোনো এক অজানা কারণে বসে আছে সে। আবরাজ এর বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-“আপনি আবার কবে জার্মানি যাচ্ছেন?”

-“কাল সন্ধ্যায়।”

-“হু।”

-“আমি চাইব এবার দেখা আমাদের শেষ দেখা হউক।”

ফিজা থমথমে স্বরে বলে।
আবরাজ মেয়ে টার কথায় বাঁকা চোখে দেখলো বউ কে। মনে মনে বললো,

-“সরি বাট নো সরি, আফটার টোমোররাও ইউ উইল সী অনলি মি।”

একজন সার্ভেন্ট এসে দরজায় নক করতে ফিজা যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসলো। আবরাজ ফ্লোর থেকে ওড়না কুড়িয়ে বউয়ের গায়ে সুন্দর করে জড়িয়ে দেয়। সার্ভেন্ট এসে জানালো ফিজার মা বোন এসছে। অগত্যা ফিজা দ্রুত কক্ষ ত্যাগ করলো। পেছন পেছন আবরাজ ও নিচে এলো।

মিষ্টির সাথে বসে আছে ফিজার ছোট বোন মেহরিন এবং মোহিতা বেগম আড্ডা দিচ্ছে ইলা বেগম এর সাথে। তৃণা একটা সিঙ্গেল সোফায় ফোন হাতে বসে। ফিজা নিচে এসে মা বোন কে দেখে স্বাভাবিক আচরণ করতে লাগলো। অতঃপর সেও মা বোন সাথে বসলো। মোহিতা বেগম এবং মেহরিন কে আজ রাতে ডিনারে ডেকেছে আবরাজ। যদিও ফিজাদের বাড়িতে তার যাওয়ার কথা ছিলো। তবে সময় হাতে নেই বিধায় তাদের ডেকে নিয়েছে। এটা শোনার পর ফিজার একটু ভালো লাগল। তবে কাল আবরাজ চলে যাবে আবার। সেটা মনে পড়ে মন টা কেমন করছে।
কিন্তু কেনো করছে? যদি আবার আগের মতো হারিয়ে যায় সেইজন্য কি? কিন্তু সে তো পুরুষ টার থেকে দূরত্ব চায়। তবে এটাই বা কবে সম্ভব হবে? আদৌও সম্ভব হবে কোনোদিন! ফিজা জানে না। তবে একটা সুযোগ সে আবরাজ খান কে দিতে চায়। কিন্তু এটার জন্য তো সে কোনো রিজন পাচ্ছে না। পুরুষ টা তো তাকে খোলামেলা করে কিছু বলছেও না। সে সব টা না জেনে কি করে কোনো ডিসিশন নিতে পারে? দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে ফিজা।

#চলবে….

[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

#জান্নাত_সুলতানা