#শিরোনামহীন
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন
২.
সামির বাস্তব জীবনে যত উদাসীনই হোক না কেন,প্রেমিক হিসেবে সে ছিলো ভীষণ সিরিয়াস।আমি তাকে দুই দিনের বেশি অপেক্ষা করাতে পারি নি।সে তরু তরু করে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিয়েছিলো।শেষে বাধ্য হয়ে বললাম,’হ্যাঁ সামির।আমিও তোমায় ভালোবাসি।’
সেদিন সামির অকারণেই বাইকে করে পুরো শহরে চক্কর দিয়েছিলো।
সামিরের মা বাবা ছিলো না।সে থাকতো তার বোনের বাড়িতে।দুলাভাইয়ের সাথেও তার সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিলো না।তার দুলাভাই তাকে পছন্দ করতো না।উটকো ঝামেলা ভাবতো।প্রেম হওয়ার পর সামির তার জীবনের গল্প একে একে সবটা আমায় খুলে বলেছিল।সেসব শুনে সামিরের জন্য আমার মায়া হতো।
মায়া শব্দটার অর্থ ব্যাপক,সেই সাথে যথেষ্ট গভীর।একেকজনের জন্য আমাদের একেকরকম মায়া হয়।ধরা যাক,রাস্তার ধাঁরে একটা বেড়াল শুয়ে আছে,অথবা একটা পথশিশু বসে আছে।তার জন্য আমাদের একটা মায়া কাজ করে।আবার আমরা যাদের ভালোবাসি,তাদের জন্য আমাদের অন্যরকম মায়া কাজ করে।এই যেমন তার কিছু হলে আমাদের ঠোঁট ভেঙে কান্না আসে,তার নাম সামনে এলেই আমাদের বুকে অদ্ভুত অনুভূতি হয়।এই মায়াটা অন্যরকম।আমরা বলে বোঝাতে পারি না।শুধু অনুভব করি।
সামিরের প্রতি আমার ভালোবাসা সময়ের সাথে সমানুপাতিক হারে বাড়ছিলো।সামির মানুষটাই এমন ছিলো।তাকে ভালো না বেসে পারা যেত না।ছোট বাচ্চারা তাদের পছন্দের মানুষের পেছনে যেমন করে ঘুরতো,সামির আমার পেছনে ঠিক তেমন করেই ঘুরতো।
সেদিন আমি জানতে চাইলাম,’আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কি সামির?’
সামির কাঁধ উঁচিয়ে বলল,’ভবিষ্যৎ আবার কি হবে?বিয়ে করবো তোমাকে।’
‘বাবা তোমার মতো বেকার লোকের সাথে আমার বিয়ে দিবে?’
‘তুমি মানিয়ে নিবে।’
‘মানিয়ে নেওয়া এতো সহজ?’
সামির জেদ ধরে বলল,’অতো কিছু জানি না।তুমি আমাকে বিয়ে করবে এটাই শেষ কথা।আচ্ছা তরু,তুমিই বলো।তুমি পারবা আমাকে ছাড়া থাকতে?’
আমি থতমত খেয়ে চুপ হয়ে যাই।সামিরকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষেও সম্ভব না।আমি তাকে আমার হৃদয়ের সর্বোচ্চ দিয়ে অনুভব করতাম।আমার প্রতি তার টান,তার ভালোবাসা সবটা আমি বুঝতে পারতাম।এই যে আমার সামান্য শরীর খারাপে সে প্রচন্ড রকম ব্যস্ত আর বিচলিত হয়ে উঠতো,এই বিষয়টা নারী হিসেবে আমাকে খুব বেশি আকর্ষণ করতো।
সেই বার আমার খুব জ্বর হলো।সামির একের পর এক ফোন কলে আমাকে বিরক্ত করে তুলল।তারপর শেষমেশ থাকতে না পেরে রাতেই আমার বাড়ি সামনে চলে এলো।আমি ফোন ধরতেই বলল,’আমি তোমার বাসার সামনের রাস্তায়।দয়া করে একবার বারান্দায় এসে এই অধম কে তোমার মুখ দেখিয়ে যাও।’
আমি তব্দা খেয়ে তার কথা শুনি।তারপর এলোমেলো পায়ে বারান্দায় যাই।সে দাঁড়িয়ে আছে তার খুব প্রিয় বাইকের সাথে হেলান দিয়ে।আমাকে দেখতেই সে কিছুটা চঞ্চল হলো।তবে দৃষ্টি তার স্থির।আমি বিরক্ত হলাম।ইশারায় বললাম,’তোমার সমস্যা কি?’
সে কিছু বলে না।শুধু অপলক দৃষ্টিতে আমাকে দেখে।তার এই পাগলামি আমায় মাথায় ধরে না।সে মাঝে মাঝে ছোট বাচ্চাদের মতো আচরণ করে।তরু বাদে যে তার জীবনে আর কিছু আছে,সেটা তখন বোঝা যায় না।আমি কেবল ফ্যালফ্যাল চোখে তার উদ্ভট কর্মকাণ্ড দেখি।সে যে এমন পাগলাটে স্বভাবের সেটা ভার্সিটির মেয়েরা জানে না।আমি মাঝে মাঝেই কল্পনা করি,তারা যখন জানবে তাদের সামির ভাই তার চেয়ে চার বছরের ছোট মেয়ের প্রেমে পড়ে দিন রাত শুধু তার পেছনে ঘুরে,তখন তাদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে?নিশ্চয়ই খুব অবাক হবে তারা।
আমাকে সামির প্রায়ই গলির মোড়ে এনে নামিয়ে দিতো।রোজ রোজ একই কাজ করলে সেটা কারো না কারো চোখে পড়বেই।স্বাভাবিক বিষয়।আমাদের বিষয়টা বাড়ির সদস্যদের মধ্যে সবার আগে আমার বড় চাচার চোখে পড়লো।তিনি আমাদের দু’জনকে একসাথে দেখেই বাবার কাছে নালিশ দিলেন।বাবা সেদিন রাতেই আমাকে তার ঘরে ডেকে নিলেন।
বাবা ছিলো ইজি চেয়ারে।চোখ বন্ধ করে পেছনের দিকে গা এলিয়ে রেখেছিলো।আমি ভয়ে ভয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।আমার তখন অন্তরাত্মা শুকিয়ে কাঠ।বিকেলেই উড়ো খবর কানে এসেছে বড়ো চাচা নাকি বাবার কাছে আমার নামে কিসব বলেছে।আমি আমার বাবাকে চিনি।প্রেম বিষয়টা যে তার কাছে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ,সেটা আমি ভালো মতোই জানতাম।আমি শুধু তার প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষা ছিলাম।
বাবা চোখ না খুলেই গম্ভীর গলায় বললেন,’তরু! মোরশেদ যা যা বলছে তা কি ঠিক?’
আমি একটা ঢোক গিলে নিজেকে ধাতস্থ করি।কচি কিশোরীদের মতোন কেঁপে উঠা স্বরে বলি,’জ্বী বাবা।আসলে আ…আমি,,’
বাবা আমার উত্তর শুনতে চাইলেন না।আগের মতো করেই শুধালেন,’কি করে ছেলে?’
আমি দু’হাত কচলে ইতস্তত করে জবাব দেই,’আপাতত ক..কিছু না।’
‘বয়স কতো?’
‘আমার চেয়ে চার বছর বড়ো।’
বাবা এবার চোখ খুললেন।তার দৃষ্টি দেখেই আমার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা তরল নেমে এলো।বাবা রাশভারি গলায় বললেন,’বাপ মা কি করে ছেলের?বাড়ি কোথায়?’
আমি একেবারে ক্ষীণ স্বরে উত্তর দেই,’বাবা মা নেই।বোনের বাড়িতে থাকে।’
বাবা যেন কিছুটা আশ্চর্য হলেন।অবাক দৃষ্টি মেলে আমাকে দেখে বললেন,’তরু! তোমার মাথা ঠিক আছে?একটা বেকার,ছিন্নমূল,ভবঘুরে ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়েছো তুমি?এই সম্পর্কের পরিণতি কি তরু?’
সেদিন এক অদ্ভুত রকমের সাহস আমার শরীরে এসে ভর করলো।আমি দৃঢ় স্বরে বললাম,’আমরা দু’জন দু’জনকে বিয়ে করতে চাই বাবা।’
বাবার চোখ দু’টো আমার মুখের উপর স্থির হলো।তিনি কেবল চেয়ে চেয়ে আমার পরিবর্তন দেখলেন।যেই তরুলতা তার মুখের উপর কিছু বলার সাহস পর্যন্ত পেত না,সেই তরু আজ বিয়ের মতো নাজুক বিষয়ে তার উপর কথা তুলছে।বিষয়টা বাবার হজম হলো না ঠিক।ক্ষণকাল মৌন থেকে বাবা বললেন,’আমি সামনের মাসেই তোমার বিয়ে দিবো তরুলতা।তুমি মানসিকভাবে প্রস্তুত থেকো।’
আমার শ্বাসরোধ হয়ে আসে।আমি বিস্ফারিত চোখে বাবার কঠিন মুখটা দেখি।বাবা এতো কঠোর হচ্ছেন কেন?আমার শরীরে তখন উৎকন্ঠা আর সাহসের অদ্ভুত সংমিশ্রণ ঘটেছিলো।আমি দম আটকে বললাম,’বাবা আমি সামিরকে ভালোবাসি।আমি তাকেই বিয়ে করবো।’
তরু!!
কঠিন স্বরের ধমকে আমি খানিকটা কেঁপে উঠলাম।ভ্যাবাচেকা খেয়ে বাবার দিকে তাকালাম।বাবা হুঙ্কার তুলে বললেন,’আর কোনো কথা বলবে না তুমি।তোমার বেশি সাহস বেড়েছে।যাও নিজের ঘরে যাও।’
মা তার আওয়াজ শুনেই দৌড়ে এলেন।একহাতে আমাকে ধরে বললেন,’কি হলো?তুমি মেয়ের উপর এভাবে চিৎকার করছো কেন?’
বাবা আরো বেশি গর্জে উঠলেন।
‘তুমি জানো তোমার মেয়ে আজকাল কি করছে?’
মা ভয়ে ভয়ে বললেন,’কি?’
‘তোমার মেয়ে একটা রুটলেস,বাউন্ডুলে,বেকার ছেলের প্রেমে পড়েছে।সে নাকি তাকে বিয়ে করবে।তোমার মেয়ে কে বলে দাও,তার জন্য পাত্র আমি পছন্দ করে রেখেছি।তাকে আর পাত্র নির্বাচন করতে হবে না।সামনের মাসেই তার বিয়ে।’
মা বোকা বোকা চোখে তার কথা শুনে।তারপর আমার দিকে অসহায় দৃষ্টি মেলে তাকায়।আমার তখন হুশ নেই।অসংখ্য উল্টাপাল্টা চিন্তায় মাথা ভার হয়ে আসছিলো আমার।আমি রোবটের মতো হেঁটে নিজের ঘরে চলে গেলাম।খাটে বসেই আমি হাঁটুতে মুখ গুজে কতোক্ষণ ফুপিয়ে কাঁদলাম।সামিরকে আমি কি বলবো?কিভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করবো আমি?
___
সামিরকে ব্যাপারটা জানানোর পর সে নিজেও কেমন হতভম্ব হয়ে গেল।প্রচন্ড বিচলিত হয়ে বলল,’এখন?এখন আমি কি করবো তরু?’
‘আমি জানি না।’
‘তুমি তোমার বাবাকে বোঝাও না প্লিজ।’
‘চেষ্টা করেছি।কাজ হয়নি।’
সামির আচমকা আমার দুইহাত জোড় করে ধরল।তীব্র অনুযোগের সুরে বলল,’প্লিজ তরু।আমি বাঁচবো না তোমায় ছাড়া।তুমি একটু আমার কথা ভাবো।তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলে আমার কি হবে তরু?তুমি কি চাও এতো অল্প বয়সে আমি এসাইলামে যাই?’
আমি বিরক্ত হই তার কথায়।
‘বড্ড বাজে বকো তুমি সামির!’
‘তুমি আমার কষ্ট বুঝতে পারছো তরু?’
‘পারছি।’
‘না তুমি পারছো না।আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে চিন্তায়।’
‘ফেটে যাক।আমি কি করবো?’
সামির একদম গম্ভীর হয়ে বলল,’তরু।তোমার অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে গেলে আমি ছাদ থেকে ঝাপ দিবো।’
‘বেশ হবে।তবে দয়া করে সুইসাইড নোটে আমার নাম লিখো না।আমি এসব ঝামেলা নিতে পারবো না।’
‘বাহ,আমি এখন ঝামেলা হয়ে গেলাম?’
‘হ্যাঁ।হয়ে গেলে।’
সামির বাইক স্টার্ট দিয়ে আমাকে ফেলে রেখেই চলে গেল।আমারও তখন মাথায় রাগ চেপেছে।আমি তাকে তৎক্ষনাৎ ফোন দিয়ে বললাম,’আর কখনো আমাকে কল দিবে না।আমি বাবার পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করছি।’
আমাদের সাময়িক বিচ্ছেদ সেদিনই হয়েছিল।একেবারে কিশোর কিশোরীদের মতো,অকারণেই বিচ্ছেদ।না কোনো শক্ত পোক্ত কারণ ছিলো,আর না কোনো কিছু ছিলো।দু’জনের রাগ হলো,ওমনি দু’জন কথা বলা বন্ধ করে দিলাম।
ওদিকে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসা শুরু করলো।সামির ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে বিয়ের তিনদিন আগে ফোন দিলো।রিসিভ করতেই হড়বড় করে বলল,’তরু,আমার ভুল হয়েছে।ক্ষমা করো আমায়।আর দয়া করে ফিরে আসো।’
আমি আশ্চর্য হই।
‘অদ্ভুত তো।এই মুহূর্তে ফিরে আসবো কিভাবে?পাগল তুমি?’
‘আমি কিছু জানি না।তুমি ফিরে আসো।নয়তো আমি সত্যি সত্যি ম/রে যাবো।’
‘সামির! তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো।’
সামির আমার কথা শুনেই খ্যাক করে উঠল।
‘শালা আমি মরে যাচ্ছি এদিকে।আর তুমি আছো বাড়াবাড়ি নিয়ে।শোনো তরু! আমি এখন ডিপার্টমেন্টের ছাদে আছি।তুমি যদি বিশ মিনিটে এখানে না আসো,তাহলে আমি ছাদ থেকে ঝাপ দিবো।দেওয়ার আগে বলে যাবো,তোমরা মেয়ে মানুষ পৃথিবীর সবচেয়ে পাষাণ জাতি।তোমরা প্রথমে মায়ায় ফেলো, তারপর নিজেরাই ফেলে দাও।’
আমি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বললাম,’ফোন কাটো সামির।কেটে তোমার যা খুশি করো।যাও।’
দশ মিনিট পরেই রাফি ভাই আমায় কল দিলেন।অত্যন্ত ব্যস্ত স্বরে বললেন,’তরুলতা! সম্ভব হলে তুমি একটু ডিপার্টমেন্টের সামনে এসো।সামির কয়েকদিন ধরেই পাগলামি করছে ভীষণ।তুমি একবার একটু এসে তার সাথে দেখা করে যাও।’
আমার ভেতরটা অস্থির হয়ে উঠল।আমি চঞ্চল হয়ে শুধাই,’সব ঠিক আছে তো ভাইয়া?’
‘আরেহ তরুলতা! তুমি ভয় পাচ্ছো?তেমন কিছু হয় নি।তুমি একবার শুধু এসো।’
আমি ফোন কেটেই কোনোরকমে সবার চোখ এগিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।ডিপার্টমেন্টে পৌঁছুতে আমার সময় লাগলো পনেরো মিনিটের মতো।সামির তখন ছাদের রেলিংয়ে দুই পা ঝুলিয়ে বসেছিল।
আমি ছাদে উঠে গলার স্বর চওড়া করে তাকে ডাকলাম,’সামির!’
সে আমার দিকে তাকালো।আমাকে দেখতেই তার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটলো।সে হাত নেড়ে বলল,’তরু! আই নো তুমি আসবে।এখানে এসো।’
আমার মাথায় তখন খুন চেপেছে।আমি ধপ ধপ পায়ে তার দিকে এগিয়ে গেলাম।হাত বাড়িয়ে তার কলার টেনে ধরে ইষৎ ধমকে উঠলাম,’এসব কি সামির?কি পেয়েছো টা কি তুমি?’
সামির দাঁত কেলিয়ে হাসলো।সেই হাসিতে আমার সমস্ত শরীর রি রি করে উঠল।সে বলল,’এসব কিছু না তরু।তোমাকে না পেয়ে দেবদাস হবো।এখন থেকেই তার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আমি তার মুখের দিকে তাকালাম না।আমার চোখ গিয়ে আটকালো তার হাতে থাকা বোতলের দিকে।আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে সে স্মিত হেসে বলল,’কেরু।একেবারে সস্তা।দেবদাস হওয়ার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।’
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,’তুমি আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করছো সামির।’
‘হ্যাঁ করছি।তবুও তুমি আমার হয়ে যাও।আমি তোমাকে রাণী করে রাখবো তরু।’
সে আস্তে করে আমার হাত টা ধরলো।সেই আলতো স্পর্শে আমার ভেতরটা ধ্বক করে উঠল।সামির একদম ঘোর লাগা স্বরে বলল,’তুমি ঐ বিয়েটা করো না তরু।কারো আত্মার হ/ত্যা করার মতো জঘন্য পাপ তুমি করো না।’
আমি দুই কদম পিছিয়ে গেলাম।যেতে যেতে শুধু বললাম,’তুমি ভালো থাকো।আমার অপেক্ষা করো না।আর দয়া করে ওসব ছাই পাশ খেয়ো না।’
সেদিন বাড়ি এসে আমি কিছুতেই শান্ত হতে পারলাম না।সামিরের ফ্যাকাশে অসহায় মুখটা বারবার মনে পড়ছিলো।আমি তো বেইমান না,স্বার্থপরও না।সামিরের দিকে দেখে কি আমি আরো একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারি না?সেই রাত আমি শুধু ভেবেই গেলাম।
আনুমানিক রাত দুইটার দিকে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম,সন্তান হিসেবে সবচেয়ে বাজে কাজটা আজ রাতেই আমি করবো।কারণ আমার সামনে আর কোনো উপায় অবশিষ্ট নেই।
আমি সেদিন রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলাম।তাও আবার একেবারে ছাপোষা,ছিন্নমূল একটা ছেলের সাথে।সামির আমাকে দেখেই স্মিত হাসলো।ভ্রু তুলে বলল,’এবার?’
আমি ক্লান্ত শ্বাস ছাড়ি।এলোমেলো হয়ে উত্তর দেই,’আর কি?কাজি অফিস খুঁজো।কালকেই বিয়ে করবো।’
চলবে-