রাজপুরুষ পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0
384

#রাজপুরুষ – ৬
স্বামীর সঙ্গে তুলার বিশেষ রাত কাটানো হলো না। লন্ডভন্ড ঘর, বিছানায় অসংখ্য কাঁটার ডাল দেখে আচমকা তার মাথায় চক্কর দিলো। কিছু বুঝে উঠবার আগেই জ্ঞানও হারালো সে। লেয়ন তার সময় অনুযায়ী যখন এ ঘরে এলো। দেখতে পেলো প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনীর জ্ঞানশূন্য অঙ্গখানি পড়ে আছে। নিমেষেই স্তব্ধ হয়ে গেল মানুষটা। তুলার এ রূপ যে অবিশ্বাস্য। সে তো সেই নারী নয় যে আকস্মিক কোনো আঘাতে জ্ঞান হারাবে। বরং সে সেই মহীয়সী নারী। যে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে আসা আঘাত এক নিমেষে ধূলিসাৎ করে দেবে। তীব্র দুঃশ্চিন্তা নিয়ে তুলাকে পাঁজাকোলা করে গৌরব গৃহে ফিরে গেল লেয়ন। ভোরবেলা কবিরাজ এসে দেখল তুলাকে। তেমন কোনো অসুবিধা পেলো না। তবে মনের ওপর আকস্মিক একটা চাপ এসেছে। তাই বলল, আবহাওয়া পরিবর্তন করতে। কবিরাজের কথা মতো লেয়ন তুলাকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। তুলা যেতে চাইল না। কারণ তাকে জানতেই হবে এই দুঃসাহস কে দেখিয়েছে? লেয়নের এই বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তুলাকে শারীরিক এবং মানসিক দু’দিকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় দেখতে মরিয়া হয়ে উঠল।

লেয়নের আদেশ অমান্য করতে পারলো না তুলা। কিন্তু সঙ্গে করে হানিকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলো। এতে অবশ্য লেয়ন অসন্তুষ্ট হলো খুব৷ তবুও তুলার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিলো। গৌরব পুর ছেড়ে পনেরো গ্রাম পরে নীল দিঘির পাড়। তুলাকে নিয়ে লেয়ন সেখানেই অবস্থান করল৷ নীল দিঘির পাড়ে বাঁশে তৈরি পুরোনো একটি রাজপ্রাসাদে উঠল লেয়ন। এই প্রাসাদটি তুলার নানার ছিল। তুলার মা ছিল তার একমাত্র কন্যা। তাই বংশপরম্পরায় এই প্রাসাদের মালকিন এখন তুলাই। যার দেখভাল করে এক বৃদ্ধ লোক। পুরোনো বাঁশের এই প্রাসাদে ঘষামাজার ফলে বোঝার উপায় নেই এটি খুব পুরোনো। এখানে এলেই তুলার মন ফুরফুরে হয়ে যায়। পৃথিবীর কোনো বিষাদই তাকে আর ছুঁতে পারে না। পুরো প্রাসাদ ঘুরে ঘুরে হানিকে দেখাল তুলা। হানি যেন আজ অনেক বেশিই অন্যমনস্ক। তুলার অন্তর ক্ষণে ক্ষণে হানিকে নিয়ে ভাবে। আবার ভাবনায় ব্যঘাত ঘটায় ওর সরল মুখ, চাউনি, কথা।

রাতে কয়েক প্রকার নিরামিষ খাবার খেলো লেয়ন আর তুলা। আজ বৃহস্পতিবার। সপ্তাহের এই একটি দিনে কোনো প্রকার আমিষ খাবার খায় না লেয়ন। তুলা আগে বুঝতো না এইদিনে নিরামিষ খাওয়ার কারণ। ধীরে ধীরে বুঝে গেছে বৃহস্পতিবার তার শশুর মশাই। মানে লেয়নের বাবা মারা গেছে। তাই এদিনে সে আমিষ খেতে পারে না। এটাও এক ধরনের সংযম৷ যা লেয়ন পালন করে৷ লেয়ন, তুলা পেটপুরে খেলেও হানি খাবার খেতে পারলো না একদম। তুলা জিজ্ঞেস করল,

-‘ হানি কোনো সমস্যা? তুমি তো কিছুই খাচ্ছো না! ‘

হানি জবাব দিলো না। চুপচাপ উঠে বাইরে চলে গেল। ভেতর থেকে তুলা আর লেয়ন শব্দ পেলো পানি পড়ার। অর্থাৎ হানি হাত ধুচ্ছে। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে হানিকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল তুলা। প্রস্তুতি নিলো ঘুমানোর। কাল সকাল সকাল উঠবে৷ লেয়ন পাখি শিকার করবে৷ সে হবে দর্শক।

পাশাপাশি দুটো ঘরের একটিতে থাকবে লেয়ন তুলা। আরেকটিতে হানি৷ নিজেদের শোবার ব্যবস্থা করে হানির খোঁজ করল তুলা। হানি ভেতরে নেই! হঠাৎ একটু চমকালো তুলা। তবে কি হাত ধুতে সেই যে বেরিয়েছিল মেয়েটা। আর ঘরে আসেনি? কী আশ্চর্য! ভেবেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল তুলা। হানি আশপাশে কোত্থাও নেই৷ তুলা ডাকল,

-‘ হানি, হানি, হানি! ‘

ওপাশে দীঘির পরে ঘন জঙ্গল। সেই জঙ্গল থেকে ছুটে এলো হানি। ওর গায়ে চাদর জড়ানো। রাত বাড়ায় ঠান্ডা পড়ছে৷ কিন্তু হানির গায়ে চাদর এলো কীভাবে? যখন বেরিয়ে ছিল তখন তো চাদর ছিল না। তুলার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো। প্রশ্ন ছুড়ল,

-‘ ওদিকে কোথায় গিয়েছিলি হানি? ‘

-‘ পেটে চাপ দিছিল তাই গেছিলাম পেট খালি করতে। ‘

এত স্পষ্ট ভাবে কথাটা বলল হানি। তুলা সন্দেহ গাঢ় করতে পারলো না। সহজ গলায় বলল,

-‘ এরপর পেটে চাপ এলে আর ওদিকে যাবি না। ভেতরেই ব্যবস্থা আছে। ‘

এ কথা বলেই তুলা ফের কণ্ঠে দৃঢ়তা বজায় রেখে জিজ্ঞেস করল,

-‘ চাদর পেলি কোথায়? ‘

এবারে চমকালো হানি। আমতা আমতা করে বলল,

-‘ দাদায় যাওয়ার আগে দিয়া গেছে। ‘

তুলার ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল। দাদায় মানে এ প্রাসাদের দেখভাল করে যে তিনি। হানির কথা বিশ্বাস হলো না তুলার। আবার অবিশ্বাস করবে কিনা বুঝতে পারলো না। ভাবলো কাল সকালে আকবর দাদা এলে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে নেবে হানি মিথ্যা বলেছে কিনা। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল তুলা। তারপর হানিকে নিয়ে ঘরে এলো। নরম বিছানায় গা এলিয়েই যেন ঘুমিয়ে গেল হানি। তুলা হানির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অল্পবয়সী মেয়েটার জন্য তার খুব মায়া হয়।

অপেক্ষারত লেয়ন৷ তুলা যেতেই সিংহের মতো খাবলে ধরল যেন। টাল সামলাতে না পেরে তুলা গিয়ে একদম লেয়নের বুকে মুখ থুবড়ে পড়ল৷ লেয়ন খুব গভীর ভাবে তুলাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলো। ফিসফিস কণ্ঠে শুধালো,

-‘ এখন তোর কেমন লাগছে তুলা? ‘

আবেশে চোখ বুজল তুলা। লেয়নের বুকে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,

-‘ আমি ভালো আছি। সব ঠিক আছে। আপনি চিন্তা করবেন না। ‘

লেয়ন ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে উদগ্রীব হলো। তুলা সমর্থন দিয়ে আরো কাছে টেনে নিলো তার রাজপুরুষকে। এরপর ঝড় উঠল৷ তুলার শরীরে তোলা লেয়নের সে ঝড় বাঁশের বেড়া ভেদ করে হানির কানেও পৌঁছে গেল। যতক্ষণ লেয়ন তুলা একে-অপরে মগ্ন ছিল ঠিক ততক্ষণ একধ্যানে অন্ধকারে তাকিয়ে ছিল হানি। কারণ সে ঘুমায়নি। ঘুমানোর অভিনয় করছিল মাত্র।

শেষ রাতে গভীর ঘুমে মগ্ন লেয়নকে রেখে তুলা চলে গেল নীল দিঘির পাড়ে। এ দিঘিতে গোসল করতে ভালোবাসে তুলা। হয় যদি সারারাত শরীরে প্রিয় পুরুষের ভালোবাসা মাখার পরের গোসল। তাহলে তো কথাই নেই। দীর্ঘ সময় গোসল করে শুকনো কাপড় পরে তুলা ঘরে এলো। আসার সময় হানির ঘর পেরিয়েই আসতে হয়৷ সে যদি একটু খেয়াল করতো দেখতে পেতো হানির বিছানা ফাঁকা।

নিজেদের ঘরে প্রবেশ করতেই প্রদীপের আলোয় মুখে বালিশ চাপা, রক্তাক্ত লেয়নের দেহ দেখে প্রথমে শিউরে উঠল তুলা এরপর দিলো গগনবিদারী চিৎকার! এ কোন সর্বনাশা দৃশ্য! ছুটে এসে লেয়নের মুখ থেকে বালিশ সরালো। বুকের ঠিক মধ্যেখানে ভয়ংকর আঘাতের চিহ্ন। এ আঘাত একবারের নয় বারেবারের। কাঁপা কাঁপা হাতে লেয়নের বুকে হাত দিলো তুলা। সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে সরিয়ে ফেলল হাতটা। তালু সামনে ধরতেই রক্তের দাগ। সহ্য করতে পারলো না। এ দৃশ্য সহ্য হলো না তুলার। বীভৎস কান্নায় ভেঙে পড়ল। লেয়নের নিঃশ্বাস চলছে না। নিথর দেহটা পড়ে আছে। তবে কি লেয়ন মারা গেছে?

দিশেহারা তুলা ছুটে গেল হানির কাছে। এ কী হানি তো বিছানায় নেই! কোথায় গেল হানি? হানি, হানি, হানি!
দিকবিদিকশুন্য হয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল তুলা। তার লেয়নের শ্বাস চলছে না। তার লেয়নের বুক রক্তাক্ত। তার লেয়ন নিথর দেহে পড়ে আছে।
.
.
ভোররাত থেকে ছুটে চলেছে হানি। তার দুই হাত রক্তে মাখামাখি। কিছুটা রক্ত চোখেমুখেও লেগে আছে৷ সে দৌড়াচ্ছে। দৌড়ে চলেছে হানি৷ এবার তাকে গন্তব্যে ফিরতে হবে। এখন তার গন্তব্য চৌধুরী বাড়ি। সেই চৌধুরী বাড়ি যে বাড়ির মৌখিক নোটিশ পেয়ে হানির পরিবার সর্বহারা হয়ে গ্রাম ত্যাগ করে। সেই বাড়িতে যাবে সে৷ কারণ, ওই বাড়ির ছেলেকে সে কথা দিয়েছে। আপার খু নীকে সেও খু ন করে দেখিয়ে দেবে। বড়ো বাড়ির মানুষরাও অন্যায়ের শাস্তি পায়।

হানি ভেবেছিল চৌধুরী বাড়ির ছেলের সঙ্গে তার আপা হুমায়রার ভালোবাসার সম্পর্ক হয়৷ এরপর তার থেকে ঠকে যাওয়ার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আপা আত্মহত্যা করে। কিন্তু সেদিন রাতে হানি যখন ওর বাবা, মায়ের সঙ্গে পালাতে গিয়েও নিজের বাড়ি ফিরে আসে। তখন মুখোমুখি হয় এক সত্যির। চৌধুরী বাড়ির ছেলে কয়েকজন লোক নিয়ে মশাল হাতে তাদের বাড়িতে গিয়েছিল। সে বাড়িতে গিয়ে ওদের মুখোমুখি হতেই আকস্মিক মাথায় আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারায়। যখন জ্ঞান ফেরে নিজেকে আবিষ্কার করে অন্ধকার এক ঘরে। কিছু দেখতে পায় না। শুধু শুনতে পায় চৌধুরী বাড়ির ছেলের মুখে এক নির্মম সত্য।

-‘ তুই কি জানিস তোর আপা কার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিল? ‘

হানি উত্তর দেয়,

-‘ আপনে না? ওই বাড়ির পোলাই তো আপনি। ‘

লোকটা তখন অসহায়র্ত গলায় বলে,

-‘ আরে বোকা মেয়ে চৌধুরী বাড়ির ছেলে কি আমি একাই। ও বাড়িতে কয়টা ছেলে আছে জানিস?আমার নিজেরই তিন ভাই। খালাতো, মামাতো দিয়ে সেই সংখ্যা আরো অনেক বেশি। তোর আপা যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়েছিল সে আমার খালাতো ভাই লেয়ন। ‘

কথা শুনে চমকে উঠে হানি। লেয়ন? ওর মনের প্রশ্ন কেড়ে নেয় চৌধুরী বাড়ির ছেলে সুশান্ত। বলে,

-‘ হ্যাঁ লেয়ন। লেয়নের সন্তানই হুমায়রার গর্ভে এসেছে। যে সন্তান, সম্পর্ককে এখন অস্বীকার করছে লেয়ন। আমরা অনেক বুঝিয়েছি লেয়নকে। এটা পাপ, অন্যায়, অধর্ম। ও বুঝেনি ফলাফল আজ হুমায়রা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। ‘

হানির সরল মন তখন ডুকরে উঠে। সুশান্ত আরোও বলে,

-‘ লেয়ন যাই করুক। ও আমার ভাই। আমি চাইলেও ওকে কিছু বলতে পারব না। কিন্তু তুই যদি চাস তুই লেয়নকে শাস্তি দিবি আমি তোকে সেই সুযোগ করে দিব। ‘

এরপরই শুরু হয় ষড়যন্ত্র। হানিকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজায় সুশান্ত। সুশান্তের ঠিক করা কয়েকজন ছেলে হানিকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সেই সময় হানির আর্তচিৎকার শুনতে পায় লেয়ন। কারণ সেই রাতেই লেয়ন তার নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছিল জঙ্গলের সেই পথ ধরে। তক্ষুনি হানিকে বাঁচায় লেয়ন। আর সঙ্গে করে নিয়ে যায় নিজের বাড়িতে।

সেই রাতের ঘটনা ভাবতে ভাবতেই চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছে যায় হানি। সুশান্ত তখন জমিজমার দলিল দেখছিল। সুশান্তের ঘনিষ্ঠ কর্মচারী হানিকে দেখতে পেয়েই খবর দেয়। সুশান্ত হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে আসে। হানি তাকে দেখেই উত্তেজিত গলায় বলে উঠে,

-‘ আমি প্রতিশোধ নিছি সাহেব। আমি আমার আপার খু’নীরে খু’ন কইরা আইছি। ‘

হানির উচ্চবাচ্য, আর রক্তাক্ত হাত দেখে সুশান্তের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে। সে আশপাশে তাকিয়ে সচেতন হয়। কর্মচারী ছেলেটাকে চুপিচুপি বলে,

-‘ আটক করো এই মেয়েকে। ‘

সঙ্গে সঙ্গে একদল ছুটে এসে পর মুখ বেঁধে ফেলে। তারপর চৌধুরী বাড়ির কয়েদখানায় বন্দী করে রাখে। হানি ছটফট করে কথা বলার জন্য। কিন্তু বলতে পারে না। হাত-পা ছোড়াছুড়িও করতে পারছে না বেঁধে রাখার জন্য। তার ছোট্ট মস্তিষ্ক বুঝে উঠতেও পারছে না সুশান্ত তাকে কেন আটক করল?!

গভীর রাত। নেশাদ্রব্য পান করে কয়েদখানায় প্রবেশ করল সুশান্ত। হানির নিঃশ্বাস চলছে। দৃষ্টি অনড়। সুশান্ত গুনগুনিয়ে গান করতে করতে হানির চারপাশে ঘুরপাক খেলো৷ হাতে থাকা মদের বোতল থেকে ঢকঢক করে মদ পান করে বলতে লাগলো,

-‘ ওরে কচি বুলবুলি আমার কষ্ট হচ্ছে? ‘

হানির নিঃশ্বাস চঞ্চল হয়ে উঠল। সুশান্ত এবার ধপ করে বসে পড়ল। সুড়সুড় করে হানির কাছে এসে কানে কানে বলল,

-‘ লেয়নকে খু ন করার জন্য আজ সারারাত তোকে আমি উপহার দিব। ‘

কথাটা বলেই বিকট এক হাসি দিলো সুশান্ত। এরপর আবারো বলল,

-‘ তার আগে একটা মজার ঘটনা শুনবি? লেয়নের সঙ্গে হুমায়রার কোনো সম্পর্কই ছিল না। তাহলে কার সঙ্গে ছিল বল তো? এই আমার সঙ্গে। ‘

সহসা হানির চোখে বিস্ফোরণ ঘটে। সুশান্ত হেসে উঠে বিকট। বলে,

– ‘ পুরো নাটকটা কে সাজিয়েছে বল তো আমি, আমি আমিই। কেন সাজিয়েছি নাটকটা? ‘

-‘ কারণ লেয়নকে আমি ঘেন্না করি। কেন করি জানোস? কারণ লেয়ন দেখতে কালা হলেও শালায় একটা সুপুরুষ। নাহ না ও হলো রাজপুরুষ। ওর কাছে সব আছে। মানসম্মান, সৎ চরিত্র, সতী নারী, কোটি কোটি টাকার সম্পদ। আর আমার কাছে আমার কাছে কী আছে বলতো? শুধুমাত্র একটা ট্যাগলাইন। ওহ তুই তো ইংরেজি বুঝবি না। ট্যাগ মানে চিহ্ন। চৌধুরী বাড়ির পোলা। এইটা ছাড়া আমার কিছুই নাই। যা আছে সব লেয়নের। ‘

বলতে বলতে তীব্র ক্ষোভ নিয়ে হানিকে স্পর্শ করল সুশান্ত। হানি ছটফট করছে। সুশান্তের কথা গুলো শুনে উথাল-পাতাল শুরু হয়েছে ওর বুকের ভেতর। সব যদি সত্যি হয় তাহলে ওই মানুষটা যে নিষ্পাপ। সে নিরপরাধ, নিষ্পাপ একজনকে অকারণে খু ন করে এলো? এবারে আকস্মিক হানির মনের দৃষ্টিতে তুলার মুখটা ভেসে উঠল। সেই সুন্দরী নারীর জীবনে সে কি সর্বনাশ ঘটিয়ে দিলো? তুলা আপা, তুলা আপা! বুকের ভেতর হুহু করে উঠল হানির৷ ভয়ে থরথর করে কাঁপতে শুরু করল দেহখানি। এদিকে সুশান্ত তৈরি হচ্ছে তার খু নী হৃদয়ের ছোট্ট সুন্দর দেহখানিকে নিজের পৌরুষ দ্বারা খুবলে খেতে!!!

— সমাপ্ত —
®জান্নাতুল নাঈমা