জামাই শ্বশুর পর্ব -০৮

0
105

#জামাই_শ্বশুর
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – ৮

“শ্বশুর আব্বা”

সদর দরজায় পা দিয়েই ওমায়ের আলীকে চমকে দিল মেহমাদ। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি রাস্তাঘাটে যতবার তাকে গুণ্ডাপাণ্ডা দিয়ে মার খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন, ততবারই তার লোকজনকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে সে। আজও একদলকে পাঠিয়েছিলেন, যেন তাকে একেবারে পিষে ফেলে কিন্তু বিশেষ লাভ হলো না। সবাইকে পাশ কাটিয়ে মেহমাদ তার মুখোমুখি, তা-ও সুস্থ শরীরে। একে তো সুস্থ শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে শ্বশুরকে চমকে দিয়েছে, আবার আহ্লাদ দিয়ে ডেকে শ্বশুরের মাথায় উঠতে চাইছে।

ডানে-বামে বসে থাকা নিজের লোকেদের দূরে সরে যাওয়ার ইশারা দিয়ে ওমায়ের আলী জামাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তুমি কি সময়-অসময় বুঝো না?”

মেহমাদ ভেতরে এগোতে এগোতে বলল, “একদমই না। আমার যখন যেখানে মন চায়, তখনই সেখানে হাওয়ার মতো উড়ে চলে আসি। এখন বলুন, আর কীভাবে বুঝালে আপনি শান্ত হবেন আর আমার পিছনে লোক লাগানো বন্ধ করবেন?”

ওমায়ের আলী কোনোকিছু জানেন না, এমন একটা ভান করে বললেন, “কীসের লোক? কোথায় লোক?”

নিজের ফোনের গ্যালারিতে থাকা ভিডিয়োটা শ্বশুরের সামনে বের করে দিয়ে মেহমাদ বলল, “ঘণ্টাখানেক আগে যারা আমার গাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়ার বাহাদুরি দেখিয়েছিল, তারা এখন হাজতে বসে পান চিবোচ্ছে। আপনিও খাবেন? চাপার জোর বাড়বে!”

“মুখ সামলে কথা বোলো। আমি তোমার শ্বশুর।”

“আপনিও লিমিট মেপে কাজ করেন। আমি আপনার জামাই হই। আমাকে মেরে ফেলা মানে নিজের মেয়েকে বিধবা করা। কেমন বাবা আপনি? নিজের মেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিতে চান!”

“আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে। ওর জন্য আমি-ই যথেষ্ট।”

“ভুল বললেন, আমার স্ত্রীর জন্য আপনি নন, আমি-ই যথেষ্ট।”

ওমায়ের আলী বুঝতে পারলেন, এই ছেলেকে এত সহজে বশে আনা তো দূর, এরচুলও ছিঁড়তে পারবেন না। আরও কঠিন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে বললেন, “এখানে কেন এসেছ?”

পায়ের ওপর পা তুলে মেহমাদ বলল, “জামাই আদর খেতে। বিয়ের তো দেড় মাস হয়ে যাচ্ছে। এখনও আপনি জামাইকে ভালোমন্দ আপ্যায়ন করালেন না যে! না কি জামাইকে আপ্যায়ন করানোর ক্ষমতা আপনার নেই? বেশি কিছু না হোক, এক কাপ চা-ও তো ডেকে এনে খাওয়াতে পারেন।”

মেহমাদ যে এখানে জামাই আদর খেতে আসেনি, সেটা খুব ভালোভাবে আয়ত্তে আনতে পারলেন ওমায়ের আলী। এতদিনে এই ছেলেকে যতটুকু চিনেছেন, তাতে এইটুকু স্পষ্ট যে, একে আর কোনোভাবে দলে টেনে নেয়া সম্ভব নয়। কারণ সে গভীর জলের মাছ। তা-ই তিনি তাকে একেবারে উপড়ে ফেলার ব্যবস্থা করেছেন। যেন মেহমাদের সাথে সাথে তার ওপর আনা সব অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণ হয় আর গ্রামের পথের কাজটাও থেমে যায়। অথচ তার চ্যালাপেলা একটাও কাজের না। এতগুলো মানুষকে গোল খাইয়ে আপদ তার মুখোমুখি বসে আছে। মানা যায়? আর কীভাবে থামাবেন? রেগে না গিয়ে তিনি শক্তকণ্ঠে জানতে চাইলেন, “তুমি ঠিক কীজন্য এসেছ?”

মেহমাদ ঝটপট বলল, “আপনাকে দু’সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছিল। আপনি নিজে থেকে পথ ক্লিয়ার করেননি। যেহেতু আইনের আদেশ অমান্য করেছেন, তাই আইনই যথাযথ ব্যবস্থা নিবে। আমি শুধু এতটুকু বলতে এলাম যে, শুধু শুধু আমার পিছনে পড়ে না থেকে এলাকার উন্নয়নের জন্য দু’একটা সেক্রিফাইস করুন। দেখবেন, গ্রামের মানুষ আপনাকে মাথায় তুলে নাচতে শুরু করেছে।”

ওমায়ের আলী একইভাবে বললেন, “আমি দখল ছাড়ব না। গ্রামের এইসব ফালতু লোকদের কথা ভেবে মাথাব্যথা বাড়ানোর প্রশ্নই আসে না।”

“অকে, তাহলে তা-ই হোক, যা এই গ্রামের মানুষের জন্য কল্যাণকর। আসছি।”

স্পষ্ট সিদ্ধান্ত জানিয়ে মেহমাদ চলে যেতে পা বাড়ালে ওমায়ের আলী রাগত্বকণ্ঠে বললেন, “তুমি কেন এই ব্যাপার নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছ? এখনও সময় আছে, এসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমার দলে নাম লেখাও। আমি তোমাকে এক মাসের মধ্যে কোটিপতি বানিয়ে দেব।”

মেহমাদ দাঁড়িয়ে থেকে বলল, “আমি কী করব, কী করব না, সেটা একান্তই আমার সিদ্ধান্ত। এসবে আপনি নাক গলানোর কে? আপনাকে কেন আমি গুরুত্ব দিব? তাছাড়া, টাকা! যে টাকার বড়াই দেখান, ওগুলো তো অসৎপথে রোজগার করা। ওগুলো দিয়ে আর যাইহোক মানসিক শান্তি আসে না।”

“আমি কী করতে পারি, তুমি ভাবতেও পারছ না জামাই!”

“আর আমি কীভাবে আপনার এই সাম্রাজ্য ধ্বংস করতে পারি, সেটাও আপনার ভাবনার বাইরে। সো প্লিজ, আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসবেন না। আমাকে আপনি চিনেন না।”

মেহমাদ চলে গেলে ওমায়ের আলী বাঁকা হেসে মেয়ের নম্বরে সিসিটিভিতে ধারণকৃত সেদিনের সেইসব ভিডিয়ো পাঠিয়ে দিয়ে লিখলেন, “মেহমাদ একজন খুনি। না জেনে, না বুঝে, একজন খুনির সাথে তোর বিয়ে দিয়ে আমি মারাত্মক ভুল করেছি, জেনি। এই ভুল শোধরাব ওর সাথে তোর বিচ্ছেদ টেনে। আর যাইহোক, কোনো খুনির সাথে জীবন কাটানো যায় না।”

ম্যাসেজ পাঠানোর পরমুহূর্তেই জেনিফার বাবাকে কল দিয়ে বসল। ওমায়ের আলী মশলা মাখিয়ে ইচ্ছে মতো নালিশ শুনালেন মেহমাদের নামে। বারবার বুঝালেন, মেহমাদ ভালো না, সে ভালো মানুষ না। কোনো খুনি কোনোদিন ভালো মানুষ হতে পারে। এমনতর আরও অনেক কথাবার্তা। সব বলে মেয়েকে দুর্বল করার জন্য শেষ টোপ ছেড়ে বললেন, “আমি তোর বাবা, তোকে জন্ম দিয়েছি। তোদের দুই ভাইবোনের জীবন যেন নষ্ট নাহয়, সেজন্য দ্বিতীয় বিয়ে করিনি। তোদের মানুষ করার জন্য জীবনে অনেককিছু ত্যাগ করেছি। এই বয়সে এসে নিজের করা কাজের জন্য মেয়ের জীবন নষ্ট হতে দেখতে পারব না। তুই যত তাড়াতাড়ি পারিস সিদ্ধান্ত নে মা। ডিভোর্স হয়ে গেলে একটা খুনির সাথে ঘর-সংসার করার মতো জঘন্য অপরাধ থেকে বেঁচে যাবি। এরপর আমি তোকে অ্যামেরিকা পাঠিয়ে দেব। ওখানে গেলে সুন্দর একটা জীবন গড়তে পারবি। এখানে তুই ভালো থাকবি না। বুঝতে পারছিস তো আমার কথা?”

ওপাশ থেকে ভেসে এলো, “আমি তোমার সাথে পরে কথা বলব, বাবা। এখন রাখছি।”

***

বেশকিছু প্রয়োজনীয় কাজ সেরে মেহমাদ বাসায় ফিরল রাতে। প্রতিদিনই এমন হয়। সকালে বের হয়, ফিরে রাতে। সারাদিন কোথায় থাকে, কী কাজ করে, এই নিয়ে কখনও কোনো প্রশ্ন তুলেনি জেনিফার। যেহেতু তাদের সম্পর্কটা এখনও একটা নির্দিষ্ট সীমারেখায় আটকে আছে আর দু’জনের কেউ এই সীমারেখা অতিক্রম করতে চায় না, তাই মেহমাদের এসব কাজ ও ব্যস্ততা নিয়ে কখনওই মাথাব্যথা ছিল না জেনিফারের। এখনও নেই। কিন্তু ভিডিয়োর মধ্যে থাকা একেকটা দৃশ্য তাকে শুধু হতবাক করেনি, বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে যে, এ যাবৎ যে মেহমাদকে সে দেখেছে কিংবা যেমন দেখে আসছে, আদতে মেহমাদ তেমন নয়। আর যে মানুষ দিন-রাত এই মারামারি নিয়ে থাকে, তাকে নিয়ে গ্রামের মানুষের এত ভাব-ভালোবাসা কেন? এখনও স্পষ্ট হয়ে চোখে ভাসছে, দু’হাতের অস্ত্র দিয়ে মেহমাদ কীভাবে শত্রুকে ঘায়েল করছে। শুধু আঘাতই না, একেকজনকে জানে মেরে ফেলেছে পর্যন্ত। এতেই জেনিফার বুঝে নিয়েছে, মেহমাদ সাধারণ কেউ নয়, প্রফেশনাল কিলার যাকে বলে সে আসলে তাই। যে মানুষ চোখ বন্ধ করে মানুষ মেরে ফেলে তাকে ঠিক কীসের সাথে তুলনা করা যায়?

বাবার সাথে কথা বলা শেষে, অনেকক্ষণ নীরবে ভেবে ভেবে যুক্তি মিলানোর চেষ্টা করছিল জেনিফার। কোনোকিছুই তার কাছে যুতসই মনে হলো না। যত ভাবে, ততই নিঃশ্বাসগুলো ভারী হয়ে আসছে। প্রশ্ন করা উচিত নয়, তবুও মেহমাদকে রুমে দেখে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না সে। বিছানার কোণে বসে দৃষ্টি ফ্লোরে আটকে রেখে বলল, “আপনি ওইদিন যাদের মেরেছিলেন, তারা কারা?”

দিনটা যেহেতু অন্যদিনের তুলনায় ভিন্ন, তা-ই প্রশ্ন শুনেই সর্তক মেহমাদ স্ত্রীর দিকে চোখ রেখে বলল, “কেন?”

“মানুষের জীবনের মূল্য নেই কেন আপনার কাছে?”

“মূল্য আছে কি নেই, সেটা কীভাবে বুঝলেন?”

ফোনে থাকা ভিডিয়োটা মেহমাদকে দেখিয়ে জেনিফার বলল, “মানুষের মূল্য যদি আপনার কাছে থাকত, এতগুলো মানুষকে মেরে ফেলার মতো জঘন্য কাজ করতে পারতেন না। আপনি তো একজন খুনি। খুন করে মাথা উঁচিয়ে গ্রামের মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে নিজেকে আপনি বাহাদুর প্রমাণ করতে চাইছেন! সবাই কি জানে, তারা একজন খুনিকে সাপোর্ট করছে? আর খুন, খুব সাধারণ একটা অন্যায়? এই অন্যায়ের সর্বোচ্চ শাস্তি কি আপনি জানেন না?”

মেহমাদ হালকা হেসে জেনিফারের পাশে বসে, হাতের ফোনটা খানিকটা দূরে সরিয়ে বলল, “এসব ছাড়ুন। কে খুনি, কে অপরাধী, সেই বিচার আইন করবে। এখন আমাকে এক কাপ কফি এনে দিতে পারবেন?

জেনিফার ভোতা মুখে বলল, “পারব না।”

“আচ্ছা।”

কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো মেহমাদ। এরমধ্যেই জেনিফারকে কফি হাতে বসে থাকতে দেখে বলল, “ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য দিব্যি দিইনি, জেনিফার।”

“আমার মন চেয়েছে, তাই বানিয়েছি। ইচ্ছে হলে খান, নয়তো ফেলে দেন।”

“ফেলে দেব না। এতটা অকৃতজ্ঞ নই।”

হাত বাড়িয়ে কফির কাপ টেনে এনে চুমুক দিয়ে, ল্যাপটপ হাতে নিয়ে ডিভানে বসল মেহমাদ। জেনিফার বলল, “খাবেন না?”

“ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। সেরে নিই।”

জেনিফার ঘড়ির দিকে দৃষ্টি দিল, রাত বারোটা ছুঁইছুঁই। রাতের খাবার আর কখন খায় মানুষ? যদিও এই দেড় মাসে ওপর পাশের মানুষের দৈনন্দিন রুটিন মুখস্থ হয়ে গেছে, নিজেও সে-ই রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, তাই যখন-তখন ক্ষিধে পায় না। একটু-আধটু পেটে ক্ষিধে অনুভব হলে, চিপস্‌, জুস কিংবা কেক দিয়ে চালিয়ে নেয়। তবুও মেহমাদকে ফেলে রেখে সকালের নাশতা ও রাতের খাবার খেতে পারে না। প্রথমদিন থেকে নামহীন এই সম্পর্ককে মেহমাদ যেভাবে যত্ন ও দায়িত্বশীলতার সাথে আগলে রাখছে, সে-ও এখন সেটাই করছে, এবং বিচ্ছেদের আগ পর্যন্ত এভাবেই সম্পর্ককে সম্মান দিয়ে আগলে রাখবে। যে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দু’জন, তাতে বিচ্ছেদ নিশ্চিত। কিন্তু তবুও সম্পর্ক ও মেহমাদকে নিয়ে যতসব ওলট-পালট ভাবনায় অথৈসমুদ্রে খাবি খাচ্ছিল জেনিফার, তা থেকে বেরিয়ে এসে সিদ্ধান্ত নেয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়াল। ‘বিয়ে’ ও ‘বন্ধন’ খুবই পবিত্র আর এই পবিত্র বন্ধন নিয়ে জেনিফারের একান্তই গোপন কিছু চাওয়া ছিল, যেটুকু ‘কবুল’ বলার সাথে সাথে হারিয়ে গেছে। অথচ তার কাছে আত্মিক ও মানসিক বন্ধনের আরেক নাম ছিল, দাম্পত্য জীবন।

হাবিজাবি ভাবনাকে মনে ঠাঁই দিতে গিয়ে কখন যে চোখদুটো ঘোলা হয়ে গেল, টেরই পেল না জেনিফার। দাঁত কামড়ে চোখের পানি আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। একটা সময় জোর করেও আটকে রাখা গেল না। ভীষণ দুঃখ-কষ্ট, হতাশা ও আহাজারি হয়ে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েকফোঁটা পানি।

বিয়ের অনেকগুলো দিন পর জেনিফারকে এত আবেগাক্রান্ত হতে দেখে অবাক হয়ে গেল মেহমাদ। তবে এইটুকু বুঝল, তার সম্পর্কে জেনেই মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে আর এটা স্বাভাবিক। সম্পূর্ণ না জানলে, যে কেউ তাকে প্রথমদেখাতে মারকুটে ভাববে। ল্যাপটপ বন্ধ রেখে তড়িঘড়ি উঠে এসে, সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “চলুন খাব। ক্ষিধে পেয়েছে। কাজ পরে করলেও অসুবিধা নেই।”

জেনিফার নতমুখে বলল, “আমার ক্ষিধে নেই।”

“কিন্তু আমার ক্ষিধে আছে, চলুন তো।”

মেহমাদ একপ্রকার টেনে তুলল জেনিফারকে। কাঁধে হাত রেখে বুঝানোর চেষ্টায় বলল, “আমি দিনে কয়টা খুন করছি, কেন করছি, এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়ে আপনি কেন কষ্ট পাবেন? আপনি তো আর এখানে থাকছেন না। যেহেতু আপনি চলে যাবেন, সেহেতু আমার মতো ফালতু মানুষকে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনই নেই। পেন্সিলের লেখা যেভাবে ইরেজার দিয়ে মুছে ফেলে, আপনিও আমাকে এবং আমার পরিবারের সবাইকে মুছে ফেলা শুরু করুন।”

জেনিফার জেদি কণ্ঠে বলল, “যদি না মুছি?”

“মনে রাখলে আপনারই কষ্ট হবে।”

“একদমই হবে না। কারণ এই ঘর, এই সংসারের প্রতি আমার একটুও মায়া নেই। যে জিনিসের প্রতি মায়া নেই, টান নেই, তাকে মুছতে গেলে কেন কষ্ট হবে? বেহুদা কথা। সরেন তো।”

মেহমাদকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল জেনিফার। ঘটনা কীভাবে উলটে গেল, সেটা বুঝতে যথেষ্ট সময় লাগল মেহমাদের। যখন বুঝল, আপনা হতেই ঠোঁটে হাসি খেলে গেল। মায়া নেই, টান নেই, আবার চোখে পানি! ব্যাপারটা ভীষণ দুঃশ্চিতার না? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করল মেহমাদ। ডাইনিংয়ে এসে বেসিনে হাত ধুয়ে বেহুদা কথা বাড়াতেই বলল, “মায়া ও টান যদি না-ই থাকে, প্রতিদিন আমার জন্য অপেক্ষা করেন কেন? মধ্যরাত পর্যন্ত না খেয়ে জেগে থাকেন কেন?”

জেনিফার চটপটে হাতে খাবার সাজিয়ে বলল, “ওসব তো ভদ্রতার খাতিরে করি। নয়তো গ্রামের লোকজন বলবে, এই মেয়ে তো আমড়া কাঠের ঢেঁকি।”

মেহমাদ চেয়ারে বসে বলল, “ঢেঁকি আমড়া কাঠের হোক বা সেগুন কাঠের, তাতে অসুবিধার কী? ঘরে একটা থাকলেই হলো।”

আচমকা হাস্যরসের এই কথা শোনে শব্দ করে হেসে ফেলল জেনিফার। তাতেই তার চেহারার সমস্ত অমাবস্যা কেটে গেল। ঝলমলে চাঁদের মতোই উজ্জ্বল হয়ে উঠল মুখ। মেহমাদ সেই হাসির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়াল, “আপনি চলে গেলে এই হাসিটা ভীষণ মিস করব, জেনিফার।”

***

চলবে…

ইমি অপরাধবোধ মনে নিয়েই বলল, “ছিঃ তুই একটা…।”

“কী আমি?”

“তৃণাপুর কাছে মুখ দেখাবি কী করে? ঘরে বউ রেখে অন্য একটা মেয়েকে… ছিঃ ছিঃ ছিঃ। নষ্ট পুরুষ, কাছে আসবি না আর। মেরে একদম হাড়গোড় ভেঙে দেব। ভণ্ড, প্রতারক।”

ঠোঁট মুছতে মুছতে চোখভরা পানি নিয়ে ইমি দৌড় দিতে চাইলে ইয়াশ বলল, “এ্যাই স্টুপিড…। আই লাভ ইউ।”

***

সম্পূর্ণ গল্পটি পাচ্ছেন বইটই অ্যাপে।

* পড়ুন ই-বই ‘সখী, ভালোবাসা কারে কয়’
https://link.boitoi.com.bd/CWHp

***