প্রিয়জন পর্ব-০১

0
2112

#প্রিয়জন (১)
#ফাতেমা_তুজ_নৌশি

” কিছু সময় আগে আমার বয়ফ্রেন্ড আমাকে তার ব্লক লিস্টের সদস্য করে দিল। তার ভাষ্যমতে আমার অপরাধ আছে একটা। আর তা হলো আমি গরিব ঘরের মেয়ে। অথচ প্রেমের শুরুতে হাত টা ধরে বলেছিল উঁচু নিচু আমি মানি না। আমি শুধু জানি তোমাকেই ভালোবাসি। আর তোমাকেই ভালোবাসতে চাই। তুমি যদি আমায় ফিরিয়ে দাও,তাহলে ভাবব যে বড়ো ঘরের ছেলে হওয়াটাই আমার দোষ। ছেড়ে দিব এ সংসার, তবু ও আমায় গ্রহণ করো তুমি। সদ্য পিতা হারানো আমি টা যেন গলে গেলাম। একটা শক্ত হাতের প্রয়োজন ছিল। আমার দিকে বাড়ানো হাতটা চেয়ে ও ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। নিষ্ঠুর এ মন বলল, যে তোর জন্য নিজ সংসার ছাড়তে চায়, সে আর যাই হোক তোকে কখনোই ছাড়বে না। আমি হতভাগি ভুলেই গিয়েছিলাম পৃথিবী কঠিন আদলে তৈরি। এ রজনী তে টাকাই সব। প্রয়োজন ছাড়া কেউ কারো নয়। প্রয়োজনেই মানুষ হয় আপন। যেমনটা আমি তাকে প্রয়োজনে গ্রহণ করেছিলাম। তবে কখনোই ছাড়তে চাই নি। কিন্তু সে এক মুহূর্তে বুঝিয়ে দিল আমি তার প্রয়োজনে প্রিয়জন ছিলাম।”

লাইন গুলো লিখেই ডায়ারিটা বন্ধ করে দিল হুর। সব টাই তিক্ত হয়ে গেছে তার নিকট। ছয় মাস আগের ঘটনা গুলোই লিখেছে সে। ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই। হারিয়ে যায় সকলে। কেউ কথা দিয়ে কথা রাখে নি। যেমন টা রাখে নি বাবা। দু চোখ মুছে হুর। ডুবে যায় স্মৃতি তে। কত শত রঙিন স্বপ্ন বুনেছিল সে। বাবা হাত ধরে বলেছিল,”মা তোকে কখনো ছেড়ে যাব না।”

অথচ সেই বাবাই চলে গেলেন। হুমায়ুনের ক্যান্সার ছিল। চিকিৎসা করার সুযোগ মিলে নি। তার আগেই মারা যান ওনি। ডায়ারিটা যত্ন করে তুলে রাখে আলমারিতে। রুগ্ন মায়ের রুমে গিয়ে বসে পড়ে। দিন দিন লতিফার অবস্থা ও খারাপ হচ্ছে। কে জানে কোন রোগ হয়েছে। হুরের মস্তিষ্ক তেমন কিছু ভাবতে পারে না। লতিফা বললেন,”তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।”

“না করে দিও মা।”

“এটা কেমন কথা হুর? আমি অসুস্থ , তোর বাবা নেই। আর তুই কি না বিয়ে করবি না।”

“মা,তুমি অসুস্থ। এই অবস্থায় বিয়ে কেমন করে করি বলো তো?”

“এর জন্য ই বলছি বিয়ে করতে। আমি মরলে পাড়ার কুত্তা রা হুমড়ি খেয়ে পড়বে। ছিঁড়ে খাবে।”

“তবু আমি বিয়ে করতে চাচ্ছি না মা।”

“দেখ মা, তোর হাতটা শক্ত কারো হাতে তুলে দিতে পারলে আমি নিশ্চিন্তে মরতে পারব। এই টুকু প্রতিদান দে মা। নাকোচ করিস না আর।”

কেঁদে ওঠে হুর। লতিফার হাত ধরে বলে,”তোমাকে রেখে কেমন করে থাকব আমি?”

“এর জন্য ই তো কাছাকাছি বিয়ে দিব। যাতে যখন ইচ্ছে আসতে পারিস।”

“মানে?”

“জমিদার বাড়ি থেকে প্রস্তাব এসেছে। পরশু জমিদার বাড়ির বড়ো ছেলের বিয়ে হওয়ার কথা। তবে জমিদার বাড়ির ছোট ছেলে সেই মেয়ে কে নিয়ে চলে গেছে।”

কথাটা শোনা মাত্র ই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল হুরের। তাহির, ওর প্রাক্তন হয়। আর সে তো জমিদার বাড়ির ছোট ছেলে! চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে ওর। এ কেমন পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হলো তাকে?

যার সাথে বিয়ে হবে তাকে এখনো দেখে নি হুর। দেখার কোনো আগ্রহ ও নেই। মায়ের ইচ্ছের মর্যদা দিতে গিয়ে নিজেকে বলি দিচ্ছে সে। কিছুই করার নেই এখন। এ পৃথিবীতে একজন ই আছে তার। সে ও শয্যাশায়ী। লতিফার কিছু হলে চারপাশের হায়না রা ওকে কলঙ্কিত করে দিবে। সব কিছু বিবেচনা করে বলি হতে রাজি হয়েছে হুর। প্রাক্তন প্রেমিকের বাড়িতেই বউ হয়ে যাচ্ছে সে। জমিদার বাড়ি থেকে হলুদের জিনিস পত্র এসেছে। এক কড়ি ও খরচ করতে হবে না মেয়ে বাড়ির। শুধু তারা মেয়েটাকেই নিবে। হুর কে বেশ পছন্দ করেছেন জমিদার গিন্নি। তাই তো এত শতো আয়োজন। হলুদ শাড়ি পরিয়ে উঠানে নেওয়া হয় হুর কে। লতিফা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। দৃষ্টিতে খুশি ঝলমল করছে। মায়ের হাসি দেখে, মৃদু হাসে হুর। মায়ের কোনো বড়ো অসুখ হয়েছে বলে তার ধারণা। সবাই হুরকে হলুদ লাগাতে থাকে। হঠাৎ করেই কয়েক জন এসে বলে,”এই, এই জমিদার গিন্নি এসেছে। সবাই সরে যাও।”

সবাই দু ভাগে ভাগ হয়ে দাঁড়ায়। হুর লক্ষ্য করে মাঝ বয়সী সুন্দর স্বাস্থ্যের এক মহিলা এগিয়ে আসছেন। গায়ে অলঙ্কারে ভরা। চাল চলনে বেশ ভাব। এগিয়ে আসে সে হুরের দিকে। হুরের মাথায় হাত রেখে বলেন,”মাশআল্লাহ। আমার বাড়ির যোগ্য বউ হতে হবে কিন্তু।”

মাথা ঝাঁকায় হুর। জমিদার গিন্নির নাম রুমা। তিনি একটি বাক্স থেকে গহনা বের করে হুরের গলায় পরিয়ে দিলেন। প্রচণ্ড অবাক হয় হুর। এত ভারী গহনায় কেমন অস্বস্তি হচ্ছে তার। রুমা সেটা বুঝে নিয়ে বললেন,”এটা তোমাকে প্রথম দেখার জন্য দিলাম। তোমার রূপের কথা অনেক শুনেছি। তবে ভাবতেও পারি নি এত সুন্দর হবে। তোমার নামের মতোই তুমি সুন্দর। আসমান থেকে যেন কোনো হুর নেমে এসেছে।”

রুমার মুখে প্রশংসা শুনে লজ্জা পেল হুর। পরক্ষণেই ভাবনায় আসে তাহির এর কথা। তাহির ফিরে এলে ও বাড়িতে কেমন করে থাকবে হুর?

চলবে….