প্রিয়জন পর্ব-০৩

0
3845

#প্রিয়জন (৩)

একটি মিষ্টি সকালের সূচনা হলো। জাহিনের সর্বাঙ্গে নববধূর ঘ্রাণ। হুরের ঘুম বেশ আগেই ভেঙেছিল। তবে হাতের বাঁধন থাকায় ওঠে যেতে পারে নি। জাহিন চোখ মেলে চাইল।পাশ ঘুরতেই বুকের ভেতর এক রহস্যময় অনুভূতি পেল। যা আগে কখনোই হয় নি।

“আপনার ঘুম ভেঙেছে।”

এ কথা বলেই নিজের শরীর থেকে পুরুষটির আলগা হয়ে যাওয়া হাতটি সরিয়ে নিল হুর। ওঠে বসে দ্রুত আরশির সামনে এল। শরীরের পোশাকটি ঠিক করে নিয়ে বলল,”আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”

অনেকটা দ্রুতই চলে গেল হুর। যেন পালিয়ে বাঁচার প্রয়াস। জাহিন কয়েক সেকেন্ড মৌন থেকে, অধর প্রসারিত করল। গতকাল থেকে, তার জীবন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আর এই পরিবর্তন ওর কাছে ভীষণ উপভোগের।

হুর যখন ফ্রেশ হয়ে এল, জাহিন তখন পুরো জেগে গিয়েছে। জানালার পর্দা খুলে দেয়াতে সকালের মিষ্টি রোদ এসে ঘরময় ছুটোছুটি খেলছে। ভেজা চুল গুলো, তোয়ালে দিয়ে প্যাঁচিয়ে নিয়েছে মেয়েটি। জাহিন যখন তার দিকে দৃষ্টি ফেরাল, ও তখন কিছুটা আমতা আমতা করে বলল,”ওয়াশরুমে এই তোয়ালেটাই ছিল। আপনার বোধহয়। আমি ব্যবহার করে ফেলেছি।”

শেষ বাক্যটা বলতে গিয়ে মেয়েটা কেমন সংকোচে ডুবে গেল। ওর আচরণে হেসে ফেলল জাহিন।

“সমস্যা নেই। আমাকে দাও, আমিও গোসল করে আসি।”

চুল থেকে তোয়ালে খানা খুলে দিল হুর। সেটা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল জাহিন। তোয়ালে থেকে অদ্ভুত সুন্দর এক ঘ্রাণ পাওয়া যাওয়া যাচ্ছে। এই সুন্দর ঘ্রাণ এখন থেকে রোজ পাওয়া যাবে। বিষয়টা স্মরণ হতেই বুকের ভেতর কেমন একটা অনুভূতি হয়। জাহিনের অধর আপনাআপনি ই প্রসারিত হলো। একেই হয়তো ভাগ্য বলে।

মেজাজ উষ্ণ হয়ে আছে জমিদার গিন্নি রুমার। ছোট ছেলেটার খোঁজ এখনো পাওয়া যায় নি। তিনি এবার অধৈর্য ই হয়ে যাচ্ছেন।

“একটা কাজ যদি ঠিক মতন হয়। ও কোথায় পালিয়েছে? দেশ ছেড়েছে কী?”

সামনে থাকা ছেলেটা মাথা নত করে রাখে। মিনমিনে সুরে বলে,”ছোট সাহেব’কে আশেপাশের সব জায়গায় খুঁজেছি। কিন্তু পাই নি।”

“একটা মানুষ উধাও হয়ে গেল!”

“খোঁজ চলছে। আশা করি পেয়ে যাব।”

“সেই দিনটা কবে আশরাফ?”

আশরাফ নামের ছেলেটা মাথা নামিয়ে রাখে। রুমা ক্ষণে ক্ষণে মেজাজ হারাচ্ছেন। জাহিন সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিল। তাকে দেখেই আশরাফ বাইরের দিকে অগ্রসর হলো।

“কী খবর বাবা?”

মুহূর্তেই মেজাজ বদলে কথাটা বললেন রুমা। তবে জাহিন সেটা ধরে ফেলল। আশরাফকে যেতে দেখেছে সে।

“তাহিরকে পাওয়া যায় নি?”

রুমা যেন কথাটা এড়িয়ে যেতে চাইলেন। দৃষ্টি ঘুরিয়ে বললেন,”হুর কোথায়? সাথে এলো না?”

“একটু পর ই আসবে। তার আগে বলুন, তাহিরকে পাওয়া যায় নি?”

“যায় নি তো কি হয়েছে। পাওয়া যাবে। দেশ ছেড়ে তো পালায় নি।”

“সেটা ঠিক।”

বলেই সামনের দিকে তাকাল ও। হুরকে নামতে দেখা যাচ্ছে। তাই বিষয়টি আর লম্বা হলো না। জাহিন আর রুমা দুজনেই মেয়েটির দিকে দৃষ্টি দিয়ে আছে। সদ্য গোসল করে নামা, হুরকে হুরের অনুরূপ ই দেখাচ্ছে।

“মাশাল্লাহ।”

কাছে এগিয়ে এসে কথাটা বললেন রুমা। হুর অনেকটাই লজ্জা পেল। একবার জাহিনের সাথে দৃষ্টিও মিলে গেল। ও চট করেই দৃষ্টি ফিরিয়ে অন্যপাশে চাইল।

সব কিছু মেনে নিয়েই বিয়েটা করেছে হুর। তবে কোথাও একটা সংকোচ রয়েই গিয়েছে। বুকের ভেতর হু হু এখনো করে। তাই কী না, দুদিন ধরেই খাওয়া দাওয়া নেই। ডাইনিংয়ে নানা রকম খাবার সাজানো। হুর চেয়ে দেখছে শুধু। তবে রুচি আসছে না। জাহিন নরম সুরে বলল,”খাবার গুলো পছন্দ হয় নি?”

চমকাল মেয়েটি। অন্যমনস্ক ছিল বিধায় জাহিনের হঠা‍ৎ বলা কথা গুলো সমস্ত শরীরে কেমন একটা শিরশিরে হাওয়ার মতন মনে হলো।

“জি, হয়েছে।”

“তবে খাচ্ছ না কেন?”

“আমার আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না।”

“অল্প একটু খাও। আজ সারাদিনেও খাবার খাওয়ার সময় পাবে না।”

নিজ থেকেই পরোটা আর চিজঅমলেট প্লেটে তুলে দিল জাহিন। ওর এমন বিনয় দেখে মেয়েটির বুকের ভেতর উষ্ণ একটি অনুভূতি এল। সেই সাথে নিজেকে শাসন করে বোঝাল, অতীতের সব কিছু ভুলে গিয়ে, এই মানুষটাকে যেন সবটুকু দিয়ে ভালোবাসতে পারে।

হুর’কে আরো একবার সাজিয়ে গুছিয়ে পুতুলের ন্যায় বসিয়ে রাখা হলো। ও একটু মনমড়া হয়েছিল। ঠিক তখনই পাখির মতন উড়ে এল দুই কিশোরী। তিথি এসেই হুরের গলার আশেপাশে দেখতে লাগল। ওর এহেন কাণ্ডে বিহ্বলের মতন চেয়ে রইল হুর।

“মেকাপে সব ঢেকে গেল নাকি?”

তিথির কথার জবাবে জুহি বলে,”হতেও পারে। ইস সকালে আসা উচিত ছিল।”

ওদের দুজনের কথার মাঝে, বোকার মতন হুর বলল,”তোমার কীসের কথা বলছো?”

“লাভ বাইট।”

বলল জুহি। ওর কথায় চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলল হুর। কেমন একটা লজ্জা লাগছে। তিথি ওর লজ্জা বাড়াতে কানের কাছ ঘেঁষে বলল,”বলো, তোমার প্রথম রাতের রোমান্স কেমন হলো।”

“আমাদের কাছে সব শেয়ার করতে হবে। ভাইয়া খুব রোমান্টিক রাইট?”

হুরের যে কি অস্বস্তি হচ্ছে। এ রকম কথা বার্তায় একদম ই অভ্যস্ত নয় সে। ও চোখের দৃষ্টি নত রাখে। তবে এই দুই কিশোরীও থেমে থাকার পাত্রী নয়। নাছোড়বান্দা হয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে। অথচ হুর শুধু লজ্জায় মিইয়ে যায়। চারপাশে চোখ বুলায়। যদি কাউকে পায়, যে তাকে এই দুই কিশোরীর হাত থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু হায়, পরিচিত কারোই দেখা মিলে না।

গল্প কখন দেয়া হবে তার সমস্ত আপডেট পাবেন আমাদের পাঠকমহল Fatema’s story discussion এ। তাই দ্রুত গ্রুপে জয়েন হয়ে থাকুন।

চলবে….