প্রিয়জন পর্ব-১৭

0
1060

#প্রিয়জন (১৭)

হুরের তখনো ক্লাস শুরু হয় নি। এত দিন ধরে এখানে এসেছে সে। তবে বের হওয়া হয় নি। আজ হুট করেই নিচ তলার এক চাচি এসে নক করলেন। মেয়েটি বেশ নরম। একটু ভীতু। তাই সহসাই দরজা খুলে নি। এমন করে কয়েক বার কলিং চাপা হলো। হুর তবু সাহস পেল না। ও বরং চট করেই জাহিন কে কল করল। ফ্ল্যাটের বাইরে যে ক্যামেরাটা লাগানো, সেটার ফুটেজ সরাসরি জাহিনের ফোন থেকেই দেখা যায়। এমনটা আগে করে নি সে। হুরকে নিয়ে আসার পর করেছে। মেয়েটাকে একা রেখে এক মুহূর্ত ও শান্তি পায় না ও। কাজের মেয়েও রাখতে ভয় লাগে। আজকাল, কি সব ঘটে যাচ্ছে। পরিচারিকা হয়ে ঘরে ঢুকে, শেষে লুট’পা’ট, এমনকি জানের মধ্যেও হাত চলে যায় তাদের। এসব কারণে বাঁধা করা পরিচারিকা নেই। তবে সপ্তাহে একদিন, একজন এসে ঘরের বাড়তি কাজ গুলো করে যায়। এভাবেই চলছে তাদের জীবন। ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হলো জাহিন। নিচ তলার চাচি। নারীটি ভালো। জাহিনকে স্নেহ করেন। সেদিন অফিসে যাওয়ার সময় দেখা হলো। ভারী অবাক হয়ে বললেন,”বউ নিয়ে এসেছ শুনলাম।”

“জি চাচি। সময় মিলাতে পারি নি। তাই দেখা করা হয় নি।”

ছোট ও সহজ করে উত্তর দিল জাহিন। চাচি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

“ঠিক আছে। কোনো ব্যাপার না। আমি গিয়েই দেখা করে আসব।”

“অবশ্যই, চাচি। আপনি গিয়ে দেখা করিয়েন। আসলে ও একটু নরম স্বভাবের তো। তাই নিজ থেকে যে আসবে, সেই সুযোগ ও নেই।”

সেই দিনের কথা ধরেই আজ এসেছেন ভদ্রমহিলা। সবটা শুনে হুরের হাত পা শীতল হয়ে আসছিল। জাহিন ভরসা দিল।

“কিছু হবে না। ভয় পাচ্ছ কেন?”

“আসলে, শহরের মানুষ।”

“বোকা, তাতে কী? ওনি তো অন্য কোনো দেশের না।”

“আচ্ছা।”

“বেশি ভয় লাগলে, লাইন কেটো না। আমি আছি।”

“হুম।”

বলেই দরজার দিকে আগালো হুর। নারীটি প্রায় চলেই যাচ্ছিলেন। এবার দরজা খুলে যাওয়ায় ঘুরে চাইলেন।

হুর কি বলবে বুঝল না। ভদ্রমহিলার পোশাকে শহুরে ভাব। চোখে অন্য রকম দ্যুতি। কি এক রোদ খেলা করছে চোখে মুখে। সহজেই মন কেড়ে নেওয়ার মতো মুখ খানি। ওর কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। হাতে ফোন। জাহিন কলেই আছে। তবু শরীরটা ইষৎ কাঁপছে। ভদ্রমহিলাও অবাক চোখে চাইলেন। মেয়েটা সুন্দর। এটা মেনে নিতে দ্বিধা করলেন না তিনি।

“আমি তোমাদের নিচ তলার ফ্ল্যাটের। জাহিন আমাকে চিনে। ও বাসায় নেই? অফিসে গিয়েছে?”

হুরের হৃদয়টা ছটফট করে ওঠে। আসলে নতুন পরিবেশে এসে, মানুষের সাথে না মিশলে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। জাহিন ও সময় পায় না। সারাক্ষণ ব্যস্ততায় কাটে। আর হুরের সময় যায় অলসতার সাথে, অপেক্ষা করতে করতে।

“কি গো মেয়ে। কি হলো?”

এ পর্যায়ে ওর ধ্যান ফিরে। ও গলাটা ভিজিয়ে নেয়। সালাম দিয়ে বলে,”ভেতরে আসুন। ওনি অফিসে গিয়েছে।”

ভদ্রমহিলা ভেতরে আসে। চারপাশে নজর বুলিয়ে বলে,”দুজনের সংসার। বেশ ভালো।”

নীরব রয় হুর। হুরের নজর বার বার ফোনের দিকে যাচ্ছে। জাহিন তখনো কলে।

“তোমার বর কিন্তু বেশ ভালো। শুনেছি, জমিদার বংশের ছেলে। ধনদৌলতের অভাব নেই। তবু, জীবন বেশ সাধারণ। নিজ পরিশ্রমে অনেক কিছু করেছে। আমি তো ভারী অবাক হই। ওমন সুখ ছেড়ে, কে এতটা কষ্ট করে বলো তো।”

আপনজনের প্রশংসা শুনতে ভালো লাগে। হুরের ও ভালো লাগছে। তবে ওর সংকোচটা সেই ভালো লাগাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাই,বিশেষ কিছু বলতে পারল না ও। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল। এমনকি চা নাশতার কথা বলতেও ভুলে গিয়েছিল। তারপর হুট করেই চাচি যখন শপিং ব্যাগটা বাড়িয়ে দিলেন,তখনই খেয়াল হলো। সেই সাথে বেশ লজ্জাও লাগল।

“এটা তোমার। দেখো পছন্দ হয় কি না।”

“কোনো দরকার ছিল না চাচি। আপনি শুধু শুধু….”

এত সময় পর মুখ খুলল মেয়েটি। কণ্ঠটি বেশ মধুর। চাচি হেসে বললেন,”কি বলো। নতুন বউ দেখব,খালি হাতে নাকি?”

হুরের লজ্জা লাগল। নতুন বউ শব্দটা ভেতরে এসে তোলপাড় করে যায়।

“আমি চা বানাই।”

“এই না। যেও না। আমি এখনই চলে যাব।”

“মাত্রই তো এলেন।”

“হে, কিন্তু সময় কম। আমাকে আবার বের হতে হবে। পাশের এক এনজিও তে জব করি। হাতে সময় কম। ভালো থেকো। পরে আবার দেখা হবে।”

নত মুখে শ্রদ্ধার সাথে বিদায় জানাল হুর। তিনি যাওয়ার পর দরজা লাগিয়ে বুক ভরে দম নিল। এত সময় ভেতরটা কেমন করছিল। এই সংকোচ কাটিয়ে ওঠতে হবে। না হলে বিপদ। এভাবে, চলতে গেলে, পা হড়কে পড়া শুধু সময়ের ব্যাপার।

পুরো সময়টায় লাইনে ছিল জাহিন। হুর যখন ফোনটি তুলল তখন অতিরিক্ত সময় প্রায় আট মিনিট পাড় হয়ে গিয়েছে। ওপাশ থেকে কোমল কণ্ঠটা শোনা গেল।

“সব ঠিক আছে?”

“হ্যাঁ। চাচি চলে গিয়েছেন। তিনি ভালো মানুষ।”

নিঃশব্দে হাসল জাহিন। অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়াতে বেশি কথা বাড়াল না। কল রেখে দিয়ে হুর বসল প্যাকেট নিয়ে। সুন্দর আকাশি রঙের শাড়ি। এই রংটা ওর পছন্দের। শাড়িটার ওপরে হাত বুলাতেই মনটা ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে রইল। সেই সাথে হৃদয়ের কোণে দোলা দিয়ে গেল দারুণ এক ভাবনা।

চলবে…
কলমে ~ #ফাতেমা_তুজ_নৌশি