#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-০৫]
~আফিয়া আফরিন
রোদ্দুরের সাথে সেই রাতে সানিয়ার আর কোন কথা হলো না। সানিয়া অবশ্য বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল, কিন্তু সে রিসিভ করে নাই। কাল সকালে অফিস আছে, তাই একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিল।
সকাল সকাল তৈরি হয়ে নিজের কাজে রওনা দিল। সেই যে রাতে ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছিল, তারপর আর একবারের জন্যও চেক করে নাই। বাড়ি থেকে হয়তো ফোন করেছে, সমস্যা নেই পরে কথা বলে নিবে।
প্রতিদিন অফিসের কাজ শেষে রোদ্দুরের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আজ’ও তাই হলো। নিচে নেমে সোজা বাইকে চেপে বাইক স্টার্ট দিতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে দমকা হাওয়ার মত উড়ে এলো সানিয়া। রোদ্দুর কিছুটা অবাক হলেও কথা বলল না।
সানিয়া নিজে থেকেই বলল, ‘কতদিন পর দেখলাম তোমাকে! কাল থেকে ফোন করে যাচ্ছি রিসিভ করছ না কেনো? তুমি জানো কত চিন্তায় আছি! কি হয়েছে তোমার? কাল দেখা করতে পারি নাই বলে রেগে আছো তাইনা? সো সরি, জান। একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম। আসলে আমার এক কাজিনের বার্থডে পার্টি ছিল। আমি এটেন্ড করেছিলাম ঠিকই, বাট পরে যখন আসতে চেয়েছি ওরা আমাকে আসতেই দিল না। আর আমি তো…..’
রোদ্দুর হাত উঁচিয়ে ওকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে নিজে বলল, ‘এত কৈফিয়ত তোমার কাছ থেকে আমি চেয়েছি?’
সানিয়া মন খারাপ করা কণ্ঠে উত্তর দিল, ‘না কিন্তু তুমি আমাকে এই কারণেই এভয়েড করছ, আই নো! সরি সরি, আর কখনো হবে না। কান ধরব বলো? কান ধরি, তবুও প্লিজ রাগ করে থেকো না। তুমি রাগ করে থাকলে আমার ভালো লাগে না।’
রোদ্দুর মিনিট দুয়েক চুপচাপ থেকে অনেককিছু চিন্তাভাবনা করে ফেলল। সবচেয়ে বড় কথা, তানভীর একটা বাজে ছেলে আর সানিয়াকে সে ট্র্যাপে ফেলতে চাইছে। এটা কিছুতেই হতে দেওয়া যায় না। যাইহোক, সানিয়াকে আগে সে নিজের করে নিয়েছে তারমানে সানিয়া শুধুমাত্র তার। মাঝখানে এই ফাউল ছেলেটা এসে গন্ডগোল বাঁধানোর চেষ্টা করলে তাকে তো কিছুতেই সফল হতে দেওয়া যাবে না।
রোদ্দুর সানিয়াকে বলল, ‘আচ্ছা, বাইকে উঠো।’
সানিয়াও খুশি হয়ে ওর পেছনে বসে আলতো হাতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। বলল, ‘আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
‘দেখি, কোথায় যাওয়া যায়!’
রোদ্দুর একটা আলো ঝলমলে রেস্টুরেন্টে এসে বাইক থামাল। সানিয়াকে নিয়ে বসার জন্য একটা নির্দিষ্ট জায়গা দখল করে নিল। খাবার অর্ডার করতে বলল তাকেই। রোদ্দুর চুপচাপ থেকে মাথার ভেতর ঝট পাকানো কথাগুলো সাজিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল।
সানিয়া জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কবে এসেছ?’
রোদ্দুর ওর দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল, ‘গতকাল না এলে তোমার সাথে বিকালে নিশ্চয়ই দেখা করতে চাইতাম না।’
সানিয়া মাথা নিচু করে বলল, ‘ওহ হ্যাঁ তাই তো।’
‘অনেক বেশি পুরাতন হয়ে গেলাম নাকি যে কোনোকিছুই আর মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করছ না? গতকাল যে এসেছি, এটা আমি মুখে না বললেও তো আমার কথাবার্তায় তোমার বোঝার কথা ছিল।’
‘সরি, আমার খেয়াল ছিল না।’
‘ইট’স ওকে। বাট আমি তোমাকে এখন কিছু সিরিয়াস কথা বলব, যেসব তোমাকে মন দিয়ে শুনতে হবে এবং বুঝতে হবে। তারপর ভেবেচিন্তে আমাকে নিজের মতামত জানাবে।’
সানিয়া বলল, ‘আচ্ছা বলো।’
‘আমি চাই, এরইমধ্যে খুব দ্রুত আমরা বিয়েটা করে ফেলি। আমার ফ্যামিলির দিক থেকে কোনো আপত্তি থাকবে না আমি আশা করছি। এখন তুমি বলো, রাজি? কিংবা তোমার ফ্যামিলি রাজি?’
সানিয়া বিস্ময়ে হতবাক হয়ে বলল, ‘বিয়ে?’
‘হুঁ বিয়ে! অবাক হচ্ছো কেনো? আমরা প্রেমটা তো বিয়ের উদ্দেশ্যেই করছি, তাইনা?’
‘না… মানে, এখন’ই বিয়ে? আমার তো পড়াশোনা শেষ হলো না। বিয়েশাদীর পর পড়াশোনা হবে না তো। আর… আর…’
‘আর কি?’ রোদ্দুর পাল্টা প্রশ্ন করল।
‘বুঝতে পারছি না। আমার ক্যারিয়ারের কি হবে রোদ্দুর?’
‘কেনো? বিয়ের পর তোমাকে তোমার পড়াশোনায় বাঁধা দেওয়ার জন্য কে থাকবে? আমার ফ্যামিলি থেকে কোনো বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তুমি তো থাকবে আমার সাথে, এখানেই। তাহলে সমস্যা কোথায়?’
সানিয়া চুপ। রোদ্দুর হঠাৎ বিয়ের কথা তুলবে কল্পানাও করে নাই। এই মুহূর্তে সমস্যা তৈরির কোনো উপায়’ও দেখছে না। রোদ্দুরকে বিয়ে করতে তার অসুবিধে নেই কারণ দু’জনেই দু’জনের কাছে কমিটেড। আর রোদ্দুর ছেলে হিসেবে ভালো, অন্তত তার জীবনে দেখা প্রত্যেকটা ছেলের থেকে বেস্ট। শুধু মাঝেসাঝে তানভীরকে নিয়ে একটু অনিশ্চয়তায় ভোগে, এই যা! কিন্তু সানিয়ার মনে সেসব মোটেও নেই। একদিকে তানভীর তার দুই ইয়ার সিনিয়র অন্যদিকে দুঃসম্পর্কের কাজিন— এর বেশি তানভীরকে সে ভাবে না।
রোদ্দুর ওর উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। সানিয়া রোদ্দুরের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল, ‘আমি রাজি। তবে মা-বাবাকে রাজি করাতে হবে। আমি আজ’ই তাদের সাথে কথা বলব।’
রোদ্দুর সরু চাহনি নিক্ষেপ করে বলল, ‘আর ইউ শিওর? ভেবে বলছ? যদি মনে করো, কোনো দ্বিধা রয়েছে তবে সময় নাও। আমার দু’দিনের মধ্যে কোনো তাড়াহুড়ো নেই। তুমি এই দু’টো দিন সময় নাও।’
‘আমি যথেষ্ট ম্যাচিউর রোদ্দুর। যা বলেছি ভেবেচিন্তে বলেছি, মন থেকে বলেছি।’
এতক্ষণে রোদ্দুরের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। মনের মধ্যে ঝাপটে বসে থাকা মেঘলা আকাশে তৎক্ষণাৎ কয়েক’শ রঙের প্রজাপতি ডানা মেলল, উড়ে গেল। বাড়ি ফিরে এলো মনে আনন্দ নিয়ে। বাড়ি এসে মায়ের সাথে অনেকক্ষণ কথা বলল। আসলে মা-বাবাকে নিজের মুখে বিয়ের কথা বলতে কীরকম লাগে! রোদ্দুর অনেকবার চেষ্টা করেও বলতে পারল না। তারচেয়ে ভালো হতো, সেদিন ঝিলমিল যদি সানিয়ার কথাটা সবাইকে জানিয়ে দিত। কেন যে সে অযথা বারণ করতে গেল, কে জানে? কোনো উপায় না পেলে ছোট চাচ্চুকে দিয়ে ম্যানেজ করা যাবে, কোনো সমস্যা হবে না। রোদ্দুরের বিষয়টা ভাবতেই ভালো লাগছে। অবশেষে তানভীর নামক থার্ড পারসন তাদের জীবন থেকে চিরতরে বিদায় তো হবে, এটাই অনেক! বিয়ের পর তো নিশ্চয়ই সানিয়া যখন-তখন ওর সাথে, যেখানে খুশি সেখানে বেড়িয়ে যেতে পারবে না!
.
ঝিলমিলের চন্দ্র বিলাসের নেশা রয়েছে। প্রতি রাতেই খাওয়া দাওয়ার পর ছাদে উঠবে, একা একা কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে। এই সময়টা একান্তই তার নিজের জন্য! কেউ সাথে থাকবে না… কাউকে সে সাথে নিবে না। সারাদিনে যতই মাথা গরম করুক, চেঁচামেচি করুক; রাতেই এই সময়টায় সে একদম নিঃস্তব্ধ! এই সময়টা একান্ত তার এবং তার কল্পমানবের। ওই মানুষটাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করে, জানতে ইচ্ছে করে কিন্তু নিরুপায় সে। ওই মানুষটা তো ধরাছোঁয়ার বাইরে তার কল্পনায় অবস্থান করছে। ঝিলমিল ঠিক করেছে, বিয়ের পর সে তার স্বামীর সাথে মোটেও চিৎকার চেঁচামেচি করে কথা বলবে না। সে হবে তার ভালোবাসা, তাকে তো মাথায় তুলে রাখতে হবে। বাবা নিজের কাজের ব্যস্ততার জন্য পাশাপাশি যৌথ পরিবার হওয়ার কারণে অনেক দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারে নাই। সে কখনো সমুদ্রের বুকে নিজেকে উজাড় করে যেতে পারে নাই, পাহাড়ের কোলে হারিয়ে যেতে পারে নাই। ইচ্ছে আছে অনেক…. সব পূরণ করবে সেই কল্পমানবের হাত ধরে, তার কাঁধে মাথা রেখে!
ভাবনা চিন্তা শেষে শীতে কাঁপতে কাঁপতে নিচে নেমে এলো। দরজায় পা রাখতেই শুনতে পেল ফোন বাজতে। এগিয়ে যেতে যেতে ফোন কেটে গেল। ঝিলমিল দেখল রোদ্দুর তাকে ফোন করেছে। অবাক হলো! এই অভদ্রটা তাকে ফোন করছে কেনো? কী আজব! এটা তো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য। ঝিলমিল ফোন ব্যাক করল না। অযথা বকবক করে ফোনের টাকা নষ্ট করার শখ নাই তার। যার প্রয়োজন সেই আবার ফোন দিক। তার আবার কীসের ঠ্যাকা?
দশ মিনিট বাদেই পুনরায় ফোন বেজে উঠল। এইবার ঝিলমিল রিসিভ করে কানে ঠেকাল। ওপাশ থেকে রোদ্দুর বলল, ‘ভালো আছিস?’
ঝিলমিল বিস্ময় চাপিয়ে বলল, ‘ভালো আছি। সবসময় ভালোই থাকি। তুই আমাকে কেনো ফোন করেছিস? কী সমস্যা?’
‘একটু দরকার ছিল তোর সাথে। সময় আছে?’
‘ভাই তুই এত ফর্মালিটিজ না দেখিয়ে কি বলবি তাই বলে ফেল। তোর এই ভালো ভালো কথা শুনে আমার মনে ব্যাপক সন্দেহ জাগে।’ ঝিলমিল ঠেস মেরে কথাটা বলল।
রোদ্দুর এতকিছু গায়ে না লাগিয়ে সরাসরি বলল, ‘তুই কি সানিয়ার ছবিটা সবাইকে দেখিয়েছিস?’
‘সানিয়া? এটা আবার কে? কোন ক্ষেতের মূলা?’
‘আরে ওই যে আমার গার্লফ্রেন্ড! যার ছবি ছিল তোর কাছে, তুই যে সবাইকে দেখিয়ে দিতে চাইলি না…’
ঝিলমিল মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘হইছে হইছে, এত বলতে হবে না। আমি বুঝতে পারছি। তো তোর গার্লফ্রেন্ডে আবার কী কেস? আমাকে কেনো ফোন করেছিস? দেখ ভাই, তোর গার্লফ্রেন্ডের কিচ্ছা-কাহিনী শোনার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার।’
রোদ্দুর বিরক্ত হয়ে বলল, ‘উফফফ, বেশি কথা বলিস তুই। আমি কি বলছি, তা তো আগে শুনবি তাইনা? তা না করে আগেই নিজের মত প্যাঁচপ্যাঁচ করা শুরু করে দিয়েছে।’
ঝিলমিল ফোঁস ফোঁস করে উঠল। এত বড় কথা! নিজের প্রয়োজনে ফোন দিয়ে কাজের কথা না বলে তাকে আজেবাজে কথা শোনানো হচ্ছে! ঝিলমিল ফোন কেটে দিল। যাহ, আর বলবেই না কথা। অসভ্য ছেলে একটা! নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড কেসে ফেঁসে গিয়েছে। যত্তসব! যত্তসব!
রোদ্দুর আরও কয়েকবার ফোন করল, ঝিলমিল পাত্তা দিল না। ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিল।
.
সানিয়া সকাল সকাল রোদ্দুরের সাথে কথা বলে ক্লাসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। বাড়িতে মা-বাবার সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলা হয় নাই এখনও, খুব শীঘ্রই কথা বলতে হবে। ক্যাম্পাসের গেটে পা রাখতেই তানভীরকে দেখতে পেল। তানভীর এগিয়ে এসে বলল, ‘তোমার জন্য’ই ওয়েট করছিলাম। এত দেরি হলো যে? আজকে কোথাও যাবে ঘুরতে?’
‘না। জানো আমি বিয়ে করছি।’
তানভীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘মিথ্যা কথা। ফাজলামি করছ?’
‘উহুঁ। রোদ্দুর বলল দ্রুত বিয়ে করতে চায় সে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে করব।’
‘পাগল নাকি? এটা তোমার বিয়ের বয়স? এখন তুমি বিয়ে করবে? আংকেল আন্টি রাজি? শোনো সানিয়া, তোমরা সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। দয়া করে উল্টাপাল্টা কাজকর্ম করে নিজের জীবন নষ্ট করো না। বিয়ে করলে তুমি এখনকার এই স্বাধীনতা পাবে না। তখন তোমার জীবনটা রোদ্দুরের আয়ত্তে চলে যাবে। বুঝতে পারছ তুমি? বোঝার চেষ্টা করো….।’
সানিয়াকে দ্বিধাগ্রস্ত দেখাল। রোদ্দুরকে তো বলেই দিয়েছে, সে রাজি। এখন মা-বাবাকে বললে কীভাবে রিয়্যাক্ট করবে বুঝতে পারছে না। আবার তানভীরের কথাগুলো’ও ফেলে দেওয়ার মত না। প্রেমে থাকাবস্থায়’ই রোদ্দুর অতিরিক্ত অধিকার ফলায় আর একবার বিয়ে হয়ে গেলে তো কথাই নেই। তাহলে এখন কি করবে?
তানভীরের সাথে আর কথা হলো না সানিয়ার। তবুও তানভীর নিজের মত করে তাকে বোঝাতে লাগলো, সে যেনো কিছুতেই এই বিয়েটা না করে।
অবশেষে সানিয়া বলল, ‘দেখো, আমি রোদ্দুরকে কথা দিয়েছি আর ওকে ভালোওবাসি। আমার বিশ্বাস রোদ্দুর এমন নয়, তাকে অনেকদিন থেকে আমি চিনি। আমি শীঘ্রই মা-বাবার সাথে কথা বলব। আর হ্যাঁ, বিয়ের প্রথম দাওয়াতটা আমি তোমাকেই দিচ্ছি। চলে এসো কিন্তু।’
সানিয়া চলে গেল আর তানভীর হা করে তাকিয়ে রইল।
.
রোদ্দুর সন্ধ্যার পর তার আসন্ন বিয়ে নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলাপ আলোচনা করছিল। বাড়িতে কীভাবে বিয়ের কথাটা বলা যায় সেটাই ভাবছিল। গতকাল মনে হয়েছিল, ঝিলমিলকে দিয়ে কথাটা বলাবে। কিন্তু মেয়ের যা চটাং চটাং জবাব তাতে তাকে দিয়ে কাজ হবে বলে মনে হয় না! তাই বাধ্য হয়ে বন্ধুদের শরণাপন্ন হতে হলো।
হাসান হঠাৎ বলল, ‘তোর বাড়ি থেকে যেহেতু সমস্যা নেই তাহলে তুই একটা কাজ করতে পারিস। তুই সানিয়াকে এখান থেকে মানে কাজী অফিসে বিয়ে করে সরাসরি বাড়ি নিয়ে যা। গিয়ে বলবি, বিয়ে করে তোমাদের জন্য বউ নিয়ে এলাম। তখন আর কোনো সমস্যাই হবে না।’
রোদ্দুর চিন্তিত হয়ে বলল, ‘বলছিস? তাই করব? সানিয়া কি রাজি হবে কিংবা ওর পরিবার?’
‘সানিয়া তোকে বিয়ে করতে যেহেতু রাজি হয়েছে, তাহলে যেভাবেই বিয়ে করবি ও সেভাবেই রাজি হবে। তুই ওর সাথে কথা বল। ওকেও বল, একেবারে বিয়ের পর ওর বাবা-মাকে জানাতে। যেহেতু ও ওর বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে, তাই ওখান থেকেও কোনো সমস্যা হবে বলে আমার মনে হয় না।’
রোদ্দুরের পছন্দ হলো এই প্রস্তাবটা। এটাই করতে হবে। আজ রাতেই সানিয়ার সাথে কথা বলে সামনের শুক্রবার বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে।
.
.
.
চলবে……
#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-০৬]
~আফিয়া আফরিন
বাড়ি এসে মায়ের কথা শুনে ঝিলমিলের মাথায় হাত। সকাল সকাল বাড়ির ছেলে মানুষেরা যে যার কাজে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল। আর বাকিরা কেউ রান্নাঘরে রান্নার কাজে ব্যস্ত, কেউ বাগানে পানি দিচ্ছে আবার কেউ অন্যান্য কাজকর্ম করছে। ঠিক সেই মুহূর্তে বাজখাঁই শব্দে কলিংবেল বেজে উঠল। মাহমুদ সরকার গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। আগত ব্যক্তিটিকে তিনি চিনেন। এই পাড়ার মাষ্টার মশাইয়ের শালা তিনি। সালাম দিয়ে ভেতরে আসার অনুরোধ করলেন। উনার নাম শাহ্ আলম।
উনি বললেন, ‘ভাই সাহেব এসেছিলাম তো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে। কীভাবে কি বলব বুঝতে পারছি না।’
‘জি জি অবশ্যই বলবেন। একটু বসুন, আমি চা দিতে বলছি।’
ততক্ষণে বসার ঘরে ফজলুল সরকার, মনোয়ার সরকারের ‘ও উপস্থিতি ঘটল। সবাইকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, ‘সবাই যেহেতু আছেন তবে কথাটা বলেই ফেলি। বলছিলাম আমার ভাগ্নে সাইফুলের কথা। ছেলে তো মাশআল্লাহ বড় হয়েছে। বিয়েশাদীর কথাবার্তা চলছে অনেকদিন ধরেই। আজ ওর মাকে বলল, তার পছন্দ রয়েছে। জানাল, আপনাদের বাড়ির মেয়ের কথা।’
ফজলুল সরকার হেসে বললেন, ‘কোন মেয়ে বলুন তো? আমাদের বাড়িতে এখনও অবিবাহিত তিনটি মেয়ে রয়েছে।’
‘আজ্ঞে সাইফুল বলল মাহমুদ ভাইয়ের ছোটো মেয়ে ঝিলমিল মামণির কথা। ওদের মধ্যে নাকি চেনা পরিচয় রয়েছে অনেকদিনের। দুলাভাই নিজেই আপনাদের সাথে কথা বলতে আসতো, কিন্তু একটু ব্যস্ত থাকায় আজ আমাকে পাঠালেন। আপনারা কী বলেন? আপনাদের মতামতটা শুনতে চাই।’
সবাই চুপ। একজন আরেকজনের দিকে তাকাচ্ছে।
মাহমুদ সরকার বললেন, ‘ভাই সাহেব আমাদের তো বাড়িতে আলাপ আলোচনা করতে হবে। আগেভাগেই তো কোনো কথা বলতে পারছি না। সাইফুলকে তো অনেক আগে থেকেই চিনি, ভালো ছেলে। তবুও মেয়ের মতামত ছাড়া কিছু বলতে পারছি না।’
‘না না ঠিকই আছে। অবশ্যই আপনারা মেয়ের মতামত নিবেন। আমি তো শুধু বিষয়টা আপনাদের জানিয়ে রাখলাম। বিয়ে-শাদী তো আর তাড়াহুড়ার ব্যাপার নয়। আমরা আপনাদের উত্তরের অপেক্ষায় থাকব। তাহলে আজ উঠি।’
উনি চলে গেলেন । ফজলুল সরকার সেজো ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললেন, সম্বন্ধ কিন্তু খারাপ না। ছেলে ভালো, পরিবার ভালো, তুই ভেবেচিন্তে দেখতে পারিস।’
তিনি মাথা নাড়িয়ে বললেন, ‘আমি শিমুর সাথে কথা বলে দেখি।’
সবাই যে যার মতো কাজে চলে গেলেন। মাহমুদ সরকার তার স্ত্রীর সাথে ঘটনাটা নিয়ে আলোচনা করলেন। তিনি তো প্রস্তাবটা শোনার সাথে সাথেই রাজি। তবে মেয়ের বাবা হিসেবে তিনি একটু দোনোমনো করছিলেন। বললেন, ‘বড় মেয়েটার বিয়ে দিলাম, ছোটটাকেও এত তাড়াতাড়ি বিদায় করে দিব?’
‘ভালো সমন্ধ এলে পায়ে ঠেলে দিতে হয় না। আরেকটা কথা ভেবে দেখো। বড় মেয়েকে তো অনেক দূরেই পাঠিয়ে দিয়েছি। ও চাইলেই আমাদের কাছে আসতে পারবে না। কিন্তু ঝিলমিলের বিয়ে যদি সাইফুলের সাথে হয়, তাহলে ও এখানেই থাকবে। যখন তখন আমাদের কাছে আসতেও পারবে।’
‘তবুও…. মেয়ের বিয়ে আমি এখন’ই দিতে চাচ্ছি না। যাক, আরও দুয়েক বছর তখন ভেবেচিন্তে দেখব।’
শিমু কোনো কথা বললেন না। তবে সে মনে মনে চাচ্ছে, মেয়ের এই সমন্ধে সকলে রাজি হয়ে যাক। এর আগেও টুকটাক সমন্ধ এসেছিল, কিন্তু তারা সেভাবে গায়ে লাগায় নাই। কিন্তু এইবারেরটা ফেলে দেওয়ার মত নয়। যাইহোক, যাদের বাড়ির মেয়ে তারা রাজি না হলে তার একার পক্ষে তো আর কিছু করা সম্ভব নয়।
ঝিলমিল বাড়ি আসার পর তাকে জানানো হলো। এমনিতেই সেদিনকার ঘটনার পর থেকে তার মন-মেজাজ সাইফুলের উপর খারাপ ছিল, আজ সেটা সপ্তমে গিয়ে পৌঁছাল। এরপর রাস্তাঘাটে দেখা হলে আচ্ছা করে কিছু কথা শুনিয়ে দিতে হবে। ব্যাটার সাহস কত বড়! বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাচ্ছে। সাইফুলের সাথে মোটেও তার কল্পমানবের মিল নেই। সে তো আকাশপূরী থেকে পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চেপে আসা রাজকুমার’কে বিয়ে করবে। ওইতো দাদী আগে রূপকথার গল্প শোনাত না! রাজকন্যাকে দুষ্কৃতিকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে সাত-সমুদ্র পাড়ি দিয়ে রাজকুমার আসে; তার জন্য ঠিক সেই রকম ভালো রাজকুমার আসবে। তখন থাকবে পূর্ণিমা রাত, রাতের আলোয় ছেয়ে যাবে চারিপাশ। আলোকিত হবে তার জীবনটাও।
রেহানা খাতুন’ও এই সমন্ধে সন্তুষ্ট হলেন না। তার অন্যরকম ইচ্ছে আছে। সব কয়টা নাতনীকেই ভালো ঘরে বিয়েশাদী দিয়েছেন। বাকিগুলো’কেও দিবেন। তবে ঝিলমিলের বেলায় অন্যরকম ইচ্ছে পোষণ করেন তিনি। যদিও কাউকে জানানো হয় নাই, সময় সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। আজ বিয়ের সমন্ধে আসায় সত্যিই মনে হলো, ঝিলমিল অনেক বড় হয়ে গেছে অন্তত বিয়ে দেওয়ার যোগ্য। তিনি শীঘ্রই তার ইচ্ছে সকলের সামনে ঘোষণা করবেন।
.
সন্ধ্যা নাগাদ রোদ্দুর অফিস থেকে সরাসরি বাড়ি ফিরল। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই কলিংবেল বেজে উঠল। বিরক্তিতে নাক-মুখ কুঁচকে উঠে বসল। দরজা খুলে দেখতে পেল রায়হান আর সৌভিক এসেছে। রোদ্দুর বলল, ‘ধুর শালা, অসময়ে এন্ট্রি নিস কেন? মাত্রই শুয়েছিলাম।’
সৌভিক রোদ্দুরের কাঁধে হাত রেখে বলল, ‘আরে বন্ধু রাগ করিস কেন? উপরে আসার পথে তোর পাশে অ্যাপার্টমেন্টে একটা মেয়েকে দেখলাম। মেয়েটা কে রে? হেব্বি দেখতে। সেটিং করায়ে দে না!’
‘তোর মত আমি সারাদিন মেয়ে দেখে বেড়াই নাকি? পাশের বাড়ির কোন না কোন মেয়ে, আমার দেখিই তো নাই কখনো। ভাই আমারে এসব ঘটকালি করতে বলিস না তো। এসব সম্ভব না আমার দ্বারা। নিজের সেটিং নিয়েই টেনশনে বাঁচি না।’
‘ধুর ব্যাটা তুই আস্ত একটা নিরামিষ। এত সুন্দরী নারীও তোর চোখে পড়ে না, ওই চোখ রেখেছিস কেন?’
রায়হান দু’জনের মধ্যে এসে দাঁড়াল। দু’জনকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘রোদ্দুরের গার্লফ্রেন্ড আছে তাই সে কারো দিকে নজর দেয় না। আর এইদিকে সৌভিকের কেউ নেই তাই রাস্তায় যারে দেখে তারেই ওর ভাল্লাগে। তারেই বিয়ে করতে মন চায়, তার সাথেই পিরিত করতে মন চায়। আমাদের রোদ্দুর হচ্ছে সর্বদা এক নারীতে আসক্ত। ওকে দিয়ে এসব হবে না।’
রোদ্দুর বলল, ‘আমার আর সৌভিকের ব্যাখা দিলি। এইবার নিজেরটাও দে। তুই কোন পর্যায়ে আছিস?’
‘আমি মাঝামাঝি পর্যায়ে আছি। মা প্রতিদিন একটা করে পাত্রী দেখায়। একজায়গায় কথাবার্তা কিছু এগিয়েছে। সামনে মাসে বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ রায়হান কথাটা বলে দু’জনের দিকে তাকাল।
রোদ্দুর তৎক্ষণাৎ লাফিয়ে উঠে বলল, ‘আরে কংগ্রাচুলেশন দোস্ত। কেমনে কী? আমি কিন্তু বিয়েতে আগাম দাওয়াত চাই। এখন বল, ভাবীর নাম কি? কোথায় থাকে? আমাদের দেখাবি না?’
দু’জনেই হন্তদন্ত হয়ে রায়হানকে ধরল। রায়হান ওদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বলল, ‘যাহ শালা বিয়েই করব না। এমন অদেখা মানুষের মত হাউকাউ করিস কেন?’
রোদ্দুর সুর টেনে বলল, ‘বন্ধু করছে বিয়ে, টোপর মাথায় দিয়ে। বন্ধুর বিয়েতে যাব, কব্জি ডুবিয়ে খাব।’
তৎক্ষণাৎ সৌভিক’ও তাল মেলাতে লাগল। শুধু গান নয় এইবার নাচানাচি’ও শুরু করে দিল। রায়হান বিতৃষ্ণা নিয়ে দুই বন্ধু নামক পাগলের দিকে তাকিয়ে রইল। বিয়ের কথাটা যে কোন কুক্ষনে তুলতে গেছিল কে জানে? তারপর রোদ্দুরের ওখানে ওরা আরও অনেকক্ষণ ছিল। রাতে নাই খাইয়ে রোদ্দুর ছাড়ল না।
ওরা বেড়িয়ে যাওয়ার পর রোদ্দুর সানিয়াকে ফোন করল। সে নিজের সিদ্ধান্তটা সানিয়াকে সকালেই জানিয়ে রেখেছিল। সানিয়া বলেছে, ভেবেচিন্তে রাতে জানাবে। এখন রোদ্দুরের কথায় রাজি হয়ে গেল। তার কাছেও এই বিষয়টা যুক্তিসঙ্গত মনে হয়েছে। এখন মা-বাবাকে বললে তারা হয়ত রাজি হবে না, কিন্তু একবার বিয়ে করে সামনে উপস্থিত হলে তখন আর মানা করতে পারবে না। রোদ্দুর বলল, ‘তাহলে সামনে শুক্রবার সবকিছুর বন্দোবস্ত করব?’
‘করতে পারো। আমার আগামীকাল হলেও কোন অসুবিধা নেই। আচ্ছা আমার দিক থেকে আমার বন্ধু-বান্ধব থাকবে না?’
‘থাকতেই পারে, যদি তুমি তাদের ইনভাইট করো।’
‘ঠিক আছে।’
রোদ্দুর ফোন রাখার পর ভাবতে লাগল, সে কি আসলে কাজটা ঠিক করছে। এভাবে পরিবারকে না জানিয়ে, তাদের কাউকে সাথে না নিয়ে; নিজেই নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সানিয়াকে নিজের কাছে আটকে রাখতে হলে, এটাই তো দরকার। তার ব্যক্তিগত জিনিসে অন্যকারো হস্তক্ষেপ কখনোই তার পছন্দ ছিল না, এখনও পছন্দ করে না বলেই তো তাড়াহুড়ো করে এই বিয়ের আয়োজন। আপাতত ভালোমন্দ কিছু ভাবতে চাইছে না। এসব ভাবলেই, বর্তমানের ভাবনা গুলিয়ে যাচ্ছে। যা হয় হবে! নিজের মানুষকে পাওয়ার জন্য যদি দুনিয়ার সাথে যুদ্ধ করতে হয় কিংবা দশজনের কথা শুনতে হয়; তাতেও তার আপত্তি নেই। শুধুমাত্র, সানিয়া তার থাকুক।
পরদিন রোদ্দুরের অফ ডে থাকার কারণে সে সানিয়ার ক্যাম্পাসে চলে এলো। ক্যান্টিনে পা রাখতেই তানভীর নামক আপদটার সাথে দেখা হয়ে গেল। রোদ্দুর ওকে এড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতে নিলে সে এসে পথরোধ করে দাঁড়াল। হাসি হাসি মুখ করে হিংস্র গলায় বলল, ‘বিয়েটা তাহলে করেই ফেলছ?’
‘হ্যাঁ, তোমাদের দোয়া নিয়ে করছি। দাওয়াত রইল, চলে এসো। বাই দা ওয়ে, বিয়ের কথা কোথা থেকে জানতে পারলে? সানিয়া বলেছে?’
‘ওর বলতে হবে কেন? এসব কথা কি চাপা থাকে? ক্যাম্পাসের হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে তো।’
রোদ্দুর হেসে বলল, ‘আরেহ বাহ! তাহলে তো ক্যাম্পাসের আকাশ বাতাসকেও ইনভাইট করতে হয়। তবে আপাতত এত পারছি না। তুমি চলে এসো কেমন! তুমি ছাড়া বিয়েটাই তো অসম্পূর্ণ।’
তানভীর প্রশ্ন করল, ‘দুনিয়াতে এত মেয়ে থাকতে সানিয়াকে’ই কেনো নিজের ট্র্যাপে ফেলতে হবে? ওকেই কেনো….?’
রোদ্দুর তাকে বাকি কথাটুকু শেষ করতে দিল না। নিজেও মুখে হাসি ঝুলিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘দুনিয়াতে এত মেয়ে থাকতে সানিয়াকে’ই কেনো তোমার টার্গেট করতে হবে? আমার জিনিস আমার’ই থাক না। তুমি এত লাফালাফি করছ কেনো? হঠাৎ যদি পা ফসকে পড়ে গিয়ে পা ভেঙ্গে যায় তখন কি হবে বলো তো? হাঁটাচলা করতে পারবে? ভাঙা পা নিয়ে হাঁটাচলা করার অভ্যাস বোধহয় তোমার আছে!’
তানভীর আঙ্গুল তুলে বলল, ‘সাট আপ রোদ্দুর…..’
রোদ্দুর পুনরায় হেসে তানভীরের হাত নামিয়ে দিয়ে বলল, ‘আঙ্গুল নামিয়ে ভদ্রভাবে কথা বলো। আমার ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করার একদম ইচ্ছে নেই। নেক্সট টাইম কখনো তোমাকে যেনো আমি সানিয়ার আশেপাশে না দেখি। ইটস্ মাই ফাস্ট এন্ড লাস্ট আল্টিমেটাম!’
রোদ্দুর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাতে থাকা বাইকের চাবিটা ঘোরাতে ঘোরাতে ক্যান্টিন থেকে বেড়িয়ে এলো। সানিয়ার সাথেও সহসা দেখা হয়ে গেল। রোদ্দুর মেজাজ ঠিক করল, নিজের চোখ-মুখে সতেজ ভাবটা ফিরিয়ে আনল।
.
ঝিলমিল তার দাদীর মাথায় তেল দিয়ে মাথা টিপে দিচ্ছিল। দাদী আয়েশে চোখ বন্ধ করে বললেন, ‘রোদ্দুর দাদুভাইকে এইবার বিয়েশাদী দিতে হয়, কি বলিস?’
ঝিলমিল বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘তা আমি কীভাবে বলি? তোমার আদরের নাতিকে বলো। আচ্ছা ভালো কথা, ওকে বিয়ে কে করবে? তোমার কি মনে হয়, ওর সাথে দুইদিনও কেউ টিকে থাকতে পারবে? বদমেজাজি ফাজিল ছেলে একটা।’
‘আমার দাদু ভাইয়ের জন্য মেয়ের অভাব হবে নাকি?’
‘অভাব না হলেই ভালো। বিরক্তিকর ছেলে একটা। জীবনেও আমি ওর মুখ থেকে ভালো কথা শুনি নাই জানো! কথা বলবে খটখট করে, কথার আগাগোড়ায় ধমক দিবে। নিজেকে যে কোন মহারাজা ভাবে আল্লাহ ভালো জানে! বাঁদর একটা, একদম দেখতে ইচ্ছে করে না।’
‘তুই এই বাঁদরটাকে সারাজীবন সহ্য করতে পারবি না দাদু?’
ঝিলমিল মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, ‘সহ্য করিই তো। তোমাদের বাড়ির ছেলেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলে তোমরা আমাকে আস্ত রাখবে? বাধ্য হয়েই সহ্য করতে হয়। আচ্ছা এই সময়টায় তুমি এখন ঘুমাও একটু। আমি শিউলির সাথে দেখা করব। বিলের ওপাশ থেকে ঘুরে আসি একটু। সারাদিন বাসায় বসে থাকতে ভালো লাগে না।’
‘আচ্ছা যা।’
ঝিলমিল শিউলির সাথে দেখা করে সাইফুলের ঘটনাটা তাকে বলল। শিউলি’ও রেগে গেল। দু’দিন একটু ফাজলামি করেছে বলেই কি বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দিতে হবে নাকি? আজব ছেলেপেলে! দুনিয়ার আজব মানুষজন! সর্বক্ষণ চুপচাপ থাকা শিউলি বসে বসে সাইফুলের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ছাড়ল। ঝিলমিল ঠোঁট চেপে হেসে হেসে তা সব শুনল।
.
.
.
চলবে…..
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৬০৩