ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-৪০+৪১

0
347

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-৪০]
~আফিয়া আফরিন

ঝিলমিল আর রোদ্দুর বাড়ি ফিরল সন্ধ্যার আগে আগে। এখন শীতের প্রকোপ কমে আসছে। আগের চেয়ে দিনের দৈর্ঘ্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাড়ি এসে ঝিলমিল খেয়াল করল, রোদ্দুর কেমন চুপ করে আছে‌। অথচ এই কয়েকদিনে ওকে যেইরকম বুঝেছে, যেইরকম দেখেছে তাতে রোদ্দুরকে এইরকম হুট করে চুপ করে যাওয়ার মত মানুষ মনে হয় নাই। হ্যাঁ এমনিতেই সে সকলের কাছে নিজেকে একটা শক্ত খোলসে মোড়ানো মানুষ হিসেবেই উপস্থাপন করে, বাড়িতে সবাই ওকে কাঠখোট্টা আর গম্ভীর ধরণের মানুষ হিসেবেই চেনে; কিন্তু ঝিলমিলের সাথে তো এই সম্পর্ক নয়।
ঝিলমিল এসে জিজ্ঞেস করল, ‘তোর কি মন খারাপ?’

রোদ্দুর উত্তর দিল, ‘না তো।’

‘ওহ আচ্ছা, আমরা যে ওখান থেকে এলাম, ওনার কাহিনী শুনলাম এটা কি ছোট চাচ্চুকে বলা উচিত? যেহেতু তার জীবনের সাথেই জড়িত ঘটনা। আর ওই লোকটা তো প্রথমে ছোট চাচ্চুকে খুঁজতেই এসেছিল।’

রোদ্দুর ভেবে উত্তর দিল, ‘বলা উচিত নয়। আমাদের মুখ থেকে এসব শুনলে সে ভালোভাবে নাও নিতে পারে। তিনি এতকাল ছিলেন একভাবে, সেইভাবেই তাকে থাকতে দেওয়া উচিত। এখন এই সময়ে তাকে এসব বলে অন্য জগতে ভাসিয়ে দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। সময় ধীরে ধীরে সব ক্ষত মুছিয়ে দেয়। আবার সময়’ই প্রয়োজন মত সেই ক্ষত জাগিয়ে তোলে। আমাদের এখানে কোনো কথা বলার প্রয়োজন নেই। এমনভাবে থাকবি, যেনো কিছুই জানিস না।’ রোদ্দুর এক নিমিষে কথাগুলো বলে গেল।
ঝিলমিলের কাছে এই রোদ্দুরকে কেমন অচেনা মানুষ মেনে হচ্ছে। ওর কথা বলার ধরণ, তাকানোর ভঙ্গিমা— সবকিছুই অচেনা মানুষের মত। ঝিলমিল ভাবল, ওখান থেকে আসার পর হয়ত মনটা খারাপ হয়ে গেছে তাই এরকম করছে, পরে আবার ঠিক হয়ে যাবে। সে নিজের কাজে মনোযোগ দিল। রোদ্দুরকে আর ঘাঁটাতে চাইল না। থাকুক কিছু সময় নিজের মত। কতক্ষণ আর কথা না বলে থাকবে? সারাক্ষণ’ই তো ছটফট করতে থাকে। এই বলে, সেই বলে, কত কথা তার!
সেদিনটা এইভাবেই কেটে গেল। নতুন আরেকটা দিনের শুরু হলো। প্রতিদিনের মতোই রোদ্দুর অফিসে চলে গেল এবং ঝিলমিল তার ক্লাসে। এমনিতে রোদ্দুর ফোন করে, খোঁজখবর নেয় বেশ কয়েকবার। আজ আর ফোন করল না, ঝিলমিল ফোন হাতে নিয়ে চাতক পাখির অপেক্ষা করতে লাগল। সময় পেরিয়ে গেলেও যখন রোদ্দুরের একটা ফোন এলো না তখন সে নিজেই তাকে ফোন করল। সে রিসিভ করল না, ফোন কেটে দিয়ে মেসেজ পাঠাল।
‘আমি একটু ব্যস্ত আছি। ক্লাস শেষ হয়ে গেলে ভালোভাবে বাড়ি ফিরে যা। আমার ফিরতে দেরি হতে পারে।’
ঝিলমিলের কেমন মুড অফ হয়ে গেল। সে মন খারাপ করে বের হলো। ফুটপাত দিয়ে ধুলো মাড়িয়ে হেঁটে হেঁটেই ফিরল।
বাড়ি এসে মায়ের সাথে কথা বলল, বাবার সাথে কথা বলল। তাও মনের মধ্যেকার বিষন্নতা দূর হলো না।
রোদ্দুর আজ বাড়ি ফিরল সন্ধ্যার একটু পরে। ঝিলমিল তখন চা বানাচ্ছিল, রোদ্দুরকেও এক কাপ দিল কথা বলার উসিলায়। কিন্তু সে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে শুকনো মুখে শুধু ‘ধন্যবাদ’ জানাল। ঝিলমিল কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। রোদ্দুর সেটা খেয়াল করে বলল, ‘ওইভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস?’

‘দেখছি, অনেককিছুই দেখছি।’ দরাজ গলায় বলল সে।

‘ওহ আচ্ছা, দেখ।’
এতক্ষণ ঝিলমিলের মন খারাপ থাকলেও এখন রাগ লাগল। সেই রাগ সপ্তম থেকে অষ্টমে গিয়ে পৌঁছাল। রাগ, দুঃখের মিশ্র অনুভূতিতে বিষিয়ে উঠল মন। বারান্দায় গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল। ওর যা মন চায় ও তাই করুক, ঝিলমিল কিচ্ছুই বলতে যাবে না। অভদ্র, শিষ্টাচার হীন ছেলে একটা! ঝিলমিল দরজা সামান্য খুলে উঁকি দিয়ে দেখল, ওর ভেতর কেনো প্রতিক্রিয়া নেই। সে কম্বলের ভেতর ঢুকে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়েছে।
বাহ! খুব সুন্দর মনমাতানো দৃশ্য। কার সাথে রাগ দেখাচ্ছে ঝিলমিল? কার উপর অভিমান করেছে? ভেবেছিল, সম্পর্কটাকে সময় দিয়ে কাছে টেনে আনবে। এখন তো দেখ যাচ্ছে, সে নিজে এক পা আগালে রোদ্দুর দশ পা পিছিয়ে যাচ্ছে। সমস্যা কোথায় ওর? এইরকম ব্যবহার করছে কেনো? সমস্যার কথা আগে বাড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেও বলবে না। ঝিলমিল নিজের মনেই কিছুক্ষণ গজগজ করল। তারপর ঘরে গিয়ে রোদ্দুরের পাশে বসল। কম্বলটা টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। গায়ে জড়াতে জড়াতে বলল, ‘আমি আবার কোনোকিছুর ভাগ দিতে পারি না কাউকে।’
রোদ্দুর কিছু বলল না। একবার তাকাল’ও না। ঝিলমিল নিজেই ল্যাপটপৈর স্ক্রিনে উঁকি দিল। নাহ, ইন্টারেস্টিং কিছুই নেই। যা আছে সবটাই তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
ঝিলমিল’ও নিজের মত ফোন হাতে নিয়ে বালিশে হেলান দিল। কাউকে ফোন করে তার সাথে কথা বলতে লাগল খুব হাসি মুখে, কিছুক্ষণ পর তো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল। কথা বলার ধরণে বোঝা যাচ্ছে ওপাশে একজন ছেলে। রোদ্দুর শুধুমাত্র একবারে জন্য আড়চোখে তাকাল। তারপর ফের নিজের কাজে মনোযোগ দিল।
ওপাশে থেকে ওই ছেলেটা কী মজার কথা বলছে কে জানে? হাসতে হাসতে ঝিলমিলের হেঁচকি উঠে গেছে। সে বলল, ‘ওয়েট ওয়েট, এক মিনিট ফোনে থাকো প্লিজ। আমি একটু পানি খেয়ে নিই। হাসির তালে আর কথাই বলতে পারছি। তুমি এত্ত ফানি!’
এরপর ঝিলমিল পাশ থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে আবারও ফোনে মনোযোগ দিল। সে পাশে বসে থাকা রোদ্দুরে শান্ত সুলভ চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে সুন্দরভাবে বলল, ‘কী যে বলো না? আমার আবার কি সমস্যা হবে? বাড়ি যাব খুব শীঘ্রই, তারপর তো তোমার সাথে দেখা হবেই। তোমাকে কষ্ট করে আমার সাথে দেখা করার জন্য এতদূর আসতে হবে না।’

এরপর ওপাশ থেকে আরও কিছু একটা বলল। ঝিলমিল তার উত্তরে বলল, ‘তুমি দেখেই আমাকে জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছো। অন্যকেউ তো ফিরেও তাকায় না। মানে আমি যে একটা মানুষ, মূল্যই নেই কোনো।’
ঝিলমিল খেয়াল করল, রোদ্দুর পাশ থেকে উঠে গেছে। ল্যাপটপ বন্ধ করে জায়গায় রেখে পুনরায় ফিরে এলো।
কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘আমার ঘরে বসে এইভাবে রাক্ষসীর মতো হেসে হেসে কথা বলার অনুমতি আমি কাউকে দিই নাই। এখান থেকে উঠে যেখানে ইচ্ছে সেখানে গিয়ে কথা বল, খেয়াল রাখবি সে কথা যেনো আমার কান পর্যন্ত এসে না পৌঁছায়।’

ঝিলমিল বলল, ‘আচ্ছা আচ্ছা, আর এক মিনিট।’
এক মিনিটের কথা বলে সে অবশ্য আরো পাঁচ মিনিট টানা কথা বলল। কথা শেষ করে ফোন রেখে ঝিলমিল বলল, ‘সরি অনেকদিন পর কথা হলো তো তাই। ছোটবেলার ফ্রেন্ড বলে কথা! যাইহোক, তুই গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে নে। আমি সবকিছু রেডি করে রেখেছি।’
রোদ্দুর ঝিলমিলের দিকে এমনভাবে তাকাল, যেনো ও একটা পঁচা ইঁদুর। রোদ্দুর এ ঘর থেকে যাওয়ার পর অযথাই ঝিলমিল কিছুক্ষণ হাসল। তারপর নিজেও খেতে গেল। খিদে পেয়েছে প্রচুর।
প্রথম বিয়ে হয়ে এখানে আসার পর ঝিলমিলের যেই অবস্থা হয়েছিল, এখন রোদ্দুরের অবস্থা হয়েছে ঠিক সেইরকম।
.
ভোরের আলো ফুটতেই ঠাস ঠাস শব্দে ঝিলমিলের ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল, রোদ্দুর রেডি হচ্ছে। যেসব জিনিসপত্র হাতে নিচ্ছে, সেসব রাখছে ঠাস ঠাস করে। কপাল কুঁচকানো ঘুম ঘুম চোখ দু’টো নিয়ে সে প্রচন্ড বিরক্ত বোধ করল।
উঠে বসে রোদ্দুরের উদ্দেশ্যে বলল, ‘তুই কি পাগল? এরকম অভদ্রের মতো আচরণ করছিস কেন? দেখতেই পাচ্ছিস ঘুমিয়ে আছি। তারপরও এইরকম শব্দ করার কোনো মানে হয়?’

রোদ্দুর রা করল না। শেষে পারফিউমটাকে ঠাস করে টেবিলের উপর রেখে দিয়ে চলে গেল। ঝিলমিল’ও উঠে পেছন পেছন দৌড়াল। কিছু জিনিসপত্র তো সে মেঝেতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে। পাগলের এহেন কান্ডে সে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। তারপর উঠে সব জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে রাখল। হাতমুখ ধুয়ে এসে নিজেও রেডি হলো ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য। ক্লাস করল না একটাও, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে করে ক্যান্টিন, মাঠ কয়েকবার চক্কর দিল। তারপর সময়ের আগেই বেরিয়ে এলো। বাড়ি ফিরে এসে শিউলিকে ফোন করল।
কোনোরূপ সৌজন্যতা বিহীন হড়হড় করে জিজ্ঞেস করল, ‘এই তুই না সেদিন আমায় কতকগুলো ভালোবাসার ডেফিনেশন দিলি। একটাও তো কাজ করছে না। আমি নিজেই ওর সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাচ্ছি, ও পাত্তাই দিচ্ছে না। ব্যাটার এত বেশি ভাব!’

‘ভাব সবার’ই থাকবে। কিন্তু তোর মূল সমস্যা হচ্ছে, তুই ধৈর্য্য ধরতে পারিস না। তুই তো সেদিন আমাকে বললি, রোদ্দুর ভাইয়া তোকে ভালোবাসার কথা বলেছিল কিন্তু তুই একটা ধোঁয়াশার মধ্যে ছিলি। ব্যাপার না, এক সাথে থাকতে থাকতে যে মায়া জন্মায় তার থেকে ভালোবাসা আপনাআপনি হয়ে যায়। এতদিন তুই ওকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছিস, এখন সে তোকে ঘোরাচ্ছে। টিট ফর ট্যাট।’ শিউলি বলল।

ঝিলমিল মুখ কালো করে উত্তর দিল, ‘ওসব কিছুই না। ও আমাকে স্রেফ ইগনোর করে যাচ্ছে। আচ্ছা ওর জীবনে ওর এক্স গার্লফ্রেন্ড আবার ফিরে এলো না তো? ওটা না একটা ডাইনী বুড়ি, শাকচুন্নী।’

‘হিংসে হয় দোস্ত?’
হিংসের ঠেলায় ঝিলমিলের হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু শিউলিকে কী আর ওতো কথা বলা যায়!
সে অল্প কথায় বলল, ‘না ভাই, ওসব কিছু না। ওর ফোন তো আমি সচরাচর ধরি না। এরপর থেকে ওর ফোন চেক করতে হবে। ও কোথায় যাচ্ছে না যাচ্ছে, সেটাও আমাকে দেখতে হবে।’

‘দেখিস যেনো টের না পায়।’ শিউলির সাথে হাবিজাবি অনেক কথা বলে দুপুরটা কাটিয়ে দিল। রোদ্দুর সেদিন সময় মতই বাড়ি ফিরল। আগের মতই ঝিলমিলের সাথে কথা বলল না। ঝিলমিল’ও তা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে, চুপ করে রইল। ফোনে কথা বলে, ম্যাসেজ করে সময় কাটিয়ে দিল। তারপর রাতে যখন রোদ্দুর ঘুমিয়ে পড়ল তখন ওর ফোনটা বালিশের পাশ থেকে তুলে নিল। লকটা জানাই ছিল, এর আগে ওর ফোন হারিয়ে গিয়েছিল তখন রোদ্দুর লক বলেছিল। এইবার সেটা ট্রাই করে দেখল পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেলেছে। ঝিলমিলের মনের মধ্যে সন্দেহ উঁকি দিল, নিশ্চয়ই ফোনে এমন কিছু আছে যা গোপনীয়। ফোনটা রেখে দিল জায়গামতো, ওর ইচ্ছে করল রোদ্দুরের চুলগুলো ইচ্ছেমত টেনে দিতে। পিঠের উপর ধুরুমধারুম কয়েকটা কিল বসিয়ে দিতে‌। নাহ, এসব সহ্য হচ্ছে না। সে ঠেলেঠুলে রোদ্দুরকে জাগিয়ে তুলল। কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় রোদ্দুর কিছুটা বিরক্ত হলো। ওর দিক থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে ঝিলমিল আবারও রোদ্দুরের চুল টেনে ধরে বলতে শুরু করল, ‘তুই ঘুমাচ্ছিস কেনো?’

ডাকিনীর হাত থেকে রোদ্দুর নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘কী সমস্যা? রাতের বেলা ঘুমাব না তো কি নাচব?’

ঝিলমিল উঠে বসল। রোদ্দুরকেও উঠে বসতে বলল। এই রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠিয়ে এসব অত্যাচার তার সহ্য হচ্ছে না। তবুও উঠে বসল। বলল, ‘কি হয়েছে?’

‘বল, বিয়ে মানে কি?’

রোদ্দুর ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, ‘চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়। রাত দেড়টা বাজে। এসব ফালতু প্রশ্নের মানে কি?’

‘ফালতু প্রশ্ন? আমি ফালতু প্রশ্ন করছি? আর তুই যা করছিস তা কি খুব ভালো মানুষের কাজ? তুই এখন ঘুমাতে পারবি না। বিয়ে মানে হচ্ছে শেয়ারিং। আমার ঘুম আসছে না মানে তুই’ও ঘুমাতে পারবি না।’

‘রাতবিরাতে এ আবার কি নাটক?’

‘দু’দিন পর টিভিতে এক্টিং করতে যাব তো তাই একটু প্র্যাকটিস করছি।’ ঝিলমিল মুখ ঝামটে বলল।
রোদ্দুর কোনো কথা না বলে চুপচাপ ভদ্র মানুষের মত বসে রইল। একবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার ঝিলমিলের দিকে। ওর দিকে তাকাতেই ও মুখ ভেংচি কাটল। আচমকা নীরবতা ভেঙ্গে বাজখাঁই আওয়াজে ঝিলমিলের ফোনটা বেজে উঠল। রোদ্দুর তাকিয়ে দেখল যে ফোন করেছে তার নাম ‘সৈকত’ দিয়ে সেভ করা। ঝিলমিল তড়িঘড়ি ফোন হাতে নিয়ে আড়াল করার চেষ্টা করল। রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল, ‘এখন ঘুমিয়ে পড়। সরি, মাঝরাতে ডিস্টার্ব করার জন্য।’
এই বলে সে উঠে বারান্দায় চলে গেল। এত রাতে ঝিলমিলের কাছে কেউ ফোন করায় রোদ্দুর অবাক তো হয়েছে বটেই, তার থেকেও বেশি রাগান্বিত হয়েছে। সে নিজেও উঠে দাঁড়াল। তার পরিকল্পনায় জল ঢালে এমন সাহস কার, সে দেখতে চায়।
.
.
.
চলবে…..

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে 🖤 [পর্ব-৪১]
~আফিয়া আফরিন

রোদ্দুর বিড়ালের মত নিঃশব্দে এগিয়ে দরজায় এসে দাঁড়াল। ওপাশ থেকে ঝিলমিল দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। জানালায় হাত দিয়ে দেখল, সেটাও বন্ধ। কথা বলছে এত চুপিচুপি যে কোনো কথাই এপাশে পৌঁছাচ্ছে না। রোদ্দুরের চোখ থেকে ঘুম উড়ে গেল। নিজেকে ভয়াবহ রকমের স্থির রেখে শান্ত ভঙ্গিতে বুকে আড়াআড়িভাবে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে রইল। ঝিলমিল বের হলেই ওকে খপ করে করে ধরে ফেলবে।
ওপাশ র না ঝিলমিল কথা বলছিল ফিসফিস করে। ওর গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল কিন্তু ও কী বলছে তা শোনা যাচ্ছে না। অবশেষে পাক্কা আঠারো মিনিট পর সে বের হলো। রোদ্দুরকে দরজায় ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয়ে হৃদপিন্ডটা আছড়ে পড়ল। সে আশেপাশে তাকিয়ে তোতলাতে তোতলাতে বলল, ‘তুই-তুই? ঘুমাসনি এখনো? আমি তো তোকে শুয়ে পড়তে বললাম। আচ্ছা দেখি সামনে থেকে সর, আমি ঘুমাতে যাই।’
ঝিলমিল রোদ্দুরকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। রোদ্দুর পেছন থেকে ওর হাতটা চেপে ধরল। এতটাই জোরে ওর হাত চেপে ধরেছে যে সে ব্যাথায় চোখমুখে কুঁচকে ফেলল। রোদ্দুর ওর ধরে সামনের দিকে টেনে নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘এতক্ষণ কার সাথে কথা বললি?’

ঝিলমিল ফাঁকা ঢোক গিলে বলল, ‘সব কথা তো শুনতে হবে কেন? আমি যার সাথে ইচ্ছে তার সাথে কথা বলতেই পারি। তোকে বলতে হবে নাকি? তুই তোর সব কথা আমাকে বলিস?’

‘সোজাসুজি আমার প্রশ্নের উত্তর দে।’

‘প্রয়োজনবোধ করছি না।’ ঝিলমিল নির্বিকার কণ্ঠে বলল।

‘আমাকে রাগাস না। এত রাতে তুই কারো সাথে ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলবি, হাসাহাসি করবি এসব আমি একদম সহ্য করব না। কথা না বাড়িয়ে এক কথায় বলে দে ছেলেটা কে?’

ঝিলমিল মুখ ঘুরিয়ে উত্তর দিল, ‘বলব না।’
রোদ্দুর আরও শক্ত করে ওর হাত চেপে ধরল। ঝিলমিল হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল না। চুপচাপ দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিল। সে শুষ্ক ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে বলল, ‘তুই সবসময় আমার সাথে এমন করতে পারিস না।’
কথাটা বলতে দেরি ঝিলমিলের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিতে রোদ্দুরের দেরি হলো না। ফোনটা নিয়ে সে হাত ছেড়ে দিল। ঝিলমিল হাত চোখের সামনে নিয়ে দেখল, ওই দিকটা লাল হয়ে গেছে। র’ক্ত আটকে থাকার কারণে চিনচিন করছে। ওইদিকে রোদ্দুর অলরেডি ওই নম্বরে কল দিয়েছে। ঝিলমিল তাকে আটকানোর চেষ্টা করে বলল, ‘দেখ তুই সব বিষয়ে নাক গলাবি না। আমি তোর কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। আমাকে আমার মত থাকতে দে। আমার ফোন দে। তুই ওকে কেনো ফোন করছিস আজব! আমি কখনো তোর ফোন থেকে কাউকে ফোন করেছি? দিয়ে দে, বলছি।’
রোদ্দুর তার ভেতরকার সূক্ষ্ম ক্রোধটা আড়াল করে শান্তভাবে বলল, ‘একদম চুপ।’
ওর কন্ঠে এমন কিছু একটা ছিল যে ঝিলমিল চুপ করে যেতে বাধ্য হলো। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলো। রোদ্দুরের কিছু বলা লাগল না। ওই পাশ থেকে কণ্ঠস্বরটা বলছ উঠল, ‘আরে ভাই এত রাতে ঘুম বাদ দিয়ে আবার ফোন দিছিস কেন? আমাকেও ঘুমাতে দিবি না, নিজেও ঘুমাবি না। এত বাড়াবাড়ি কিন্তু ভালো না ঝিলমিল। এত জেলাস ফিল করাতে চাইলে তো, ওই ব্যাটা ধসে যাবে। তোদের কাহিনী শুনে মনে হচ্ছে তোরা দু’জনেই জলন্ত সূর্যের মত। মনে রাখিস, এক আকাশে কিন্তু দু’টো সূর্য একসাথে থাকতে পারে না।’
কন্ঠটা মেয়ের। রোদ্দুর আরেকবার দেখল, ফোনে নামটা ‘সৈকত’ লিখেই সেভ করা আছে। সে ঝিলমিলের দিকে তাকাল। ঝিলমিল শুধু পারল না মাটির নিচে ঢুকে যেতে। ধরা পড়ে কই লুকাবে সেটাই ভাবছিল।
রোদ্দুর ফোন কেটে দিল। ঝিলমিলের দিকে তাকাল। ঝিলমিল অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে হাসল। গলার কাছে বিশ্রী ভাবে দম আটকানোর মতো ভয়ংকর অবস্থা হলো। ওইদিকে বাজ পাখির মত শাণানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রোদ্দুর। কোনমতে হাসতে হাসতে একটা তুচ্ছ কারণ তুলে ধরল, ‘কোনোভাবে মনে হয় ওর ভয়েজ চেঞ্জ হয়ে গেছে। না মানে একটা এপস আছে, অন্য কারো সাথে কথা বললে নিজে নিজেই ভয়েস চেঞ্জ হয়ে যায়। আর যখন আমার সাথে কথা বলে তখন ঠিকঠাক থাকে।’
রোদ্দুর হাসল। সে হাসি দেখে ঝিলমিলের গা পিত্তি জ্বলে গেল। সে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘আমার অনেক মাথাব্যথা করছে। আমি ঘুমাতে গেলাম।’
ঝিলমিল যাওয়ার সময় রোদ্দুর ওর ফোনটা দিয়ে দিল। ঝিলমিল কিড়মিড় করতে করতে ফোনে দিকে তাকাল। কাল ক্লাসে গিয়ে মাহিটাকে আচ্ছামত দিতে হবে। কিন্তু রোদ্দুরের সামনে সে বেইজ্জতি হলো, তার থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই। সে আর কোন কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়ল। অযথাই নেতাগিরি করার জন্য এত রাতে ওকে ফোন দিতে বলেছিল। ঝিলমিল যতই কারণ দেখাক না কেনো, রোদ্দুর তো আসল বিষয়টা জেনেই গেছে। ইশশশ, আরেকটু সতর্ক থাকলে ওকে আরেকটু বেশি করে জেলাস করা যেত!

এইদিকে রোদ্দুর হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছিল না। বেচারা তাকে জেলাস ফিল করাতে গিয়ে কী একটা পন্থা অবলম্বন করল যে একেবারে হাতেনাতে ধরা পড়ে গেল। ও কোথায় যেনো শুনেছিল, কারো কাছ থেকে উপযুক্ত পাত্তা না পেলে তাকে একদম ইগনোর করা শুরু করে দাও তারপর দেখবে ম্যাজিক। রোদ্দুর আসলেই সেই ম্যাজিকটা দেখতে পেয়েছিল। কিন্তু গতকাল ঝিলমিল যখন ফোনে কথা বলছিল ওমন হেসে হেসে তখন প্রচুর রাগ উঠেছিল। কিছু বলার বা করার অবকাশ ছিল না। তারপর তো বুঝতেই পারল কালপ্রিট’টা আসলে একটা মেয়ে! ঠোঁট জুড়ে হাসি খেলে গেল। ঝিলমিলের দিকে এগিয়ে এলো। এরইমধ্যে মেয়েটা ঘুমিয়েও পড়েছে। রোদ্দুর হেসে বিড়বিড় করে বলল, ‘আমার ঘুম নষ্ট করে নিজে তো খুব আরাম করে ঘুমানো হচ্ছে। পাগল কোথাকার! নিজের মনের মধ্যে যে লাড্ডু ফুটেছে, তা সরাসরি বলে দিলেই হয়। এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে আমাকে জেলাস করানোর কি দরকার? আমি বাচ্চা ছেলে নাকি? আমাকে একঝলক বললেই তো বুঝে যাই।’
তারপর সে গিয়ে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়ল। রোদ্দুর শুয়ে পড়েছে নিশ্চিত হয়ে কিছুক্ষণ পর ঝিলমিল চোখ মেলে তাকাল। প্রথমেই বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিল, এতক্ষণ তো দম খিচড়ে শুয়ে ছিল। তারপর তাকাল রোদ্দুরের দিকে। ওর বলা কথাগুলো ঠিক’ই তার কানে এসেছে। সে আপনমনে বলল, ‘এহহ, শখ কত! মনে লাড্ডু ফুটেছে সেটা আবার গিয়ে সেধে সেধে বলতে হবে? কেনো রে? বুঝে নিতে পারিস না। এমনি এমনি কি তোকে অভদ্র বলি আমি? আমার মনের লাড্ডু মনেই থাকুক, তোকে সেই লাড্ডু দিতে যাব না। বজ্জাত কোথাকার! আবার আমার সাথে এমন করবি তো, আবারও ইগনোর করবি তো; ঠিক আছে যা খুশি কর, আমিও দেখে নিব তোকে।’
.
বাড়িতে আজ অনেকদিন পর তিন্নি এসেছে। এর আগে যতবারই আসতে চেয়েছে কখনো অসুখ তো কখনো ভিসায় জটিলতা। এইবার ভিসা পেয়ে সরাসরি না জানিয়েই বাড়িতে এসে উঠেছে। সাবরিনা তো মহাখুশি! কিছুদিন থেকে তানিশাকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। আজ আরেক মেয়েকে দেখে মনটা নিমিষেই হালকা হয়ে গেল।
তিন্নি আসা উপলক্ষ্যে এই বেলাতেও সকলে বাড়িতে উপস্থিত। তার এখন একটাই ইচ্ছে, সে অনেকদিন পর বাড়ি এসেছে যার যত কাজ’ই থাকুক না কেনো এইবার সবাইকে বাড়ি আসতে হবে। তিন্নি এখনও কাউকে বলে নাই, সে এসেছে। ঝিলমিল আর রোদ্দুরের বিয়েতেও অনুপস্থিত ছিল। এইবার ইচ্ছে আছে, ওদের বিয়ের অনুষ্ঠানেও যদি এটেন্ড করতে পারে! প্রথমে নিজের বোনেদের সাথে কথা বলল।
ওদের সাথে কথা শেষ করে সে ফোন করল রোদ্দুরকে। রোদ্দুর তো পুরাই অবাক! তিন্নি যখন বাড়ি আসার কথা বলল, তখন রোদ্দুর একটু দোনোমনো করল। দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠে বলল, ‘দেখি আপু, এখন হয়ত আসা সম্ভব নয়।’

‘কেনো রে? তোর কি খুব কাজের চাপ? কি এমন কাজ করিস ভাই? দেখ, শত কাজের মধ্যেও আমি সেই। কতদূর থেকে মানে সাতসমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে এসেছি। আমার দাম দিলি না? ঠিক আছে। তোর বউ কই? ম্যাডামকে ফোন দিয়ে পাচ্ছি না কেনো? তোকে বিয়ে করে সেও কি কাজেকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ল নাকি। আমি বেশি কথা শুনতে চাই না, কাল-পরশু দু’দিন তল্পিতল্পা গুটিয়ে এদিকে চলে আয়।’

‘অসম্ভব! এই মাসের চার পাঁচদিন বাকি আছে। আমাদের আবার বাসা চেঞ্জ করার কথা সামনের মাসে। আচ্ছা, এইদিকের ঝামেলা শেষ হোক তারপর আসব।’

‘বাসা চেঞ্জ করবি? ওয়াও, ফ্যামিলি প্ল্যানিং করছিস নাকি তোরা? এত তাড়াতাড়ি, তাও ভালো। গুড গুড।’

রোদ্দুর মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘না না আপু। এসব কিছু না। এমনিতেই এখানে জায়গা কম‌ তো তাই। আমাদের বাড়ির ম্যাডামের আবার এখানে থাকতে খুব অসুবিধে হয়। মনে হয় দিনকে দিন মোটা হচ্ছে, ঘরে তার জায়গা হয় না।’
তিন্নি তবুও বারবার করে বলে দিল, ওখানকার কাজ শেষ হলেই তারা যেনো দ্রুত চলে আসে।

ঝিলমিল ক্লাসে ছিল। মাহির সাথে মাত্রই একচোট ঝগড়া হয়ে গেল। ওকে বারবার বলে দিয়েছিল, সে যখন কথা বলবে তারপর যেনো ও কথা বলে। ও ভুল না করলেই কাল ধরা পড়তো না। এখন রোদ্দুরের সামনে মুখ দেখানো দায় হয়ে গেছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে বলছে, ‘কিরে তোর প্রেমিকা তোকে সকাল সকাল ফোন করল না?’
উফফফ কী যন্ত্রনা! এখন কথায় কথায় এই প্রেমিকার নাম করে খোঁটা দেবে। বাড়ি যেতেই ইচ্ছে করছে না। সন্ধ্যার পরের সময়টুকু বেশ লম্বা, রোদ্দুরের মুখোমুখি থাকবে কীভাবে কে জানে? মাহির সাথে আলাপ হয়েছে এখানে ভর্তি হওয়ার পরপর’ই। মাহি বলল, ‘এইবার ছেড়ে দে। আমি বলছি তুই তাকে ভালোবেসে ফেলেছিস। এটা তুই মুখে স্বীকার করতে না চাইলেও তোর মন কিন্তু ঠিকই স্বীকার করে নিয়েছে। এখন ভাই তুই নিজে ভাইয়ার কাছে যা। একটা গোলাপ নিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে অথবা বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বল, জান আমি তোমাকে ভালোবাসি!’

ঝিলমিল বিরক্তিতে বলল, ‘নাটকীয় কথাবার্তা বলিস না। ওর সারা শরীরের আগায় গোড়ায় ভাব। একদম মাথা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত। ওরে আমি যদি বলি ভালোবাসার কথা, পাত্তাই দিবে না। উল্টো এমন একটা ভাব দেখিয়ে কথা বলবে যেনো ভালোবাসা শব্দটা ও প্রথম আমার মুখ থেকে শুনবে। আমার না ভালো লাগছে না কিছু।’

‘প্রেম রোগে পেয়েছে তোকে।’

‘পরিত্রাণের উপায় বল!’

মাহি বলল, ‘বলছিই তো‌। ভাইয়াকে গিয়ে বলে দে।’
ঝিলমিল মোটেও রাজি হলো না। রোদ্দুরের সামনে যেতেই কেমন লাগছে। আর যদি ভালোবাসার কথা বলতে যায়, তাহলে তো তৎক্ষণাৎ ফিট খেয়ে পড়ে যাবে। ঝিলমিল বাড়ি ফিরে গেল। ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে বারবার। চাচ্ছে, সময়টাকে ধরে রাখতে। এই মুহূর্তে রোদ্দুরের তোমার কি হওয়া মানে, স্বেচ্ছায় মাঝ সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়া।
কলিংবেল বাজতেই ঝিলমিলের বুকের মধ্যে ধক করে উঠল। গিয়ে দরজা খুলে দিতেই রোদ্দুর প্রশ্ন করল, ‘ওমা তুই বাসায়? আমি তো ভেবেছিলাম প্রেমিকার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলি। আমার সাথে এতদিন বেকার ঘুরে বেড়ালি, ওর সাথে ঘোরাঘুরি করলেই হতো।’
ঝিলমিল কথার উত্তর দিল না। রোদ্দুর ঘরে ঢুকল। ঝিলমিল কোনো কথা না বলে, কোনোদিকে না তাকিয়ে চুপচাপ বই নিয়ে বসল। পড়াটা তার মুখ্য বিষয় নয়, রোদ্দুরকে এড়ানোটাই মুখ্য। যদিও রোদ্দুর ওর মুখোমুখি বসে আছে, ওর কাজকর্ম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখছে।
ঝিলমিল অপ্রস্তত ভঙ্গিতে বইগুলো এলোমেলো করছিল। হঠাৎ একটা বইয়ের ভাঁজ থেকে ছোট্ট একটা চিরকুট মতন চারকোনা কাগজ বেরিয়ে এলো। ঝিলমিল সেটা তোলার আগেই রোদ্দুর তুলে নিল। গতকাল রাতের মত তার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি টাইপের অবস্থা হলো। কারণ, এই কাগজে সে ক্লাসের মধ্যে আজাইরা বসে থেকে রোদ্দুরের উদ্দেশ্য কিছু লিখেছিল। ছিঁড়ে ফেলতে চেয়েও যত্ন করে বইয়ের ভাঁজে রেখে দিয়েছিল। এজন্যই বলে বোধ হয়, যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যে হয়।
.
.
.
চলবে…..