ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-৫০

0
326

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-৫০]
~আফিয়া আফরিন

রোদ্দুরের ফিরতে ফিরতে সে রাত হলো। সবাই ক্লান্ত হয়ে দ্রুত খেয়ে-দেয়ে নিজেদের ঘরে গিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছিল। আর ঝিলমিল? সে চাতক পাখির ন্যায় চেয়ে ছিল রাস্তায়।
রোদ্দুরকে তার বন্ধুদের সাথে হেসে হেসে বাড়ি ফিরতে দেখে যতটা না স্বস্তি পেল তারচেয়েও বেশি রাগ হলো। বুকের পাটা কত্ত বড় ব্যাটার? বউকে ফেলে রেখে সে বন্ধুদের সাথে গিয়ে আড্ডা মারে। আবার হাসতে হাসতে বাড়ি ফিরছে… নির্লজ্জ কোথাকার!
ঝিলমিল ঘরে গিয়ে আলতো করে দরজা ভিজিয়ে দরজার পাশে এমনভাবে দাঁড়াল যেনো সহসা এই ঘরে ঢোকা মাত্র তাকে চোখে না পড়ে। মিনিট দশেকের মাথায় রোদ্দুর ঘরে প্রবেশ করল। ভেবেছিল বাতি জ্বালিয়ে ঝিলমিলকে দেখতে পাবে, কিন্তু সে নেই। রোদ্দুর নির্বিকার ভঙ্গিতে এগিয়ে এলো ড্রেসিং টেবিলের দিকে। শার্টের বোতামগুলো খুলতে নিলেই পেছন থেকে কেউ হঠাৎ গলায় ছু’রি তাক করল। রোদ্দুর আয়নায় দেখতে পেল ঝিলমিলকে। সে কিছু বলতে নিলেই ঝিলমিল ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিল, ‘চুউউপ…. কথা বললেই গ’র্দান নি নিয়ে নিব।’

রোদ্দুর ঠোঁটের কোণায় বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘গর্দান? আচ্ছা নে। দেখি কত ক্ষমতা তোর, প্রমাণ দে।’

ঝিলমিল চটান চটান ভঙ্গিতে বলল, ‘আমার ক্ষমতা, সাহস পরীক্ষা করতে আসিস না। নিজেকে নিয়ে ভাব, তোর জীবন মরণ এখন আমার হাতে। বল, কেনো সে সময় আমাকে কিছু না বলে গটগট করে বেরিয়ে চলে গিয়েছিলি? তারপর আমি তোকে হাজারবার ফোন করেছি, ফোন তোলার প্রয়োজন মনে করিস নাই কেন? গুরুত্ব দিলে মানুষ বিরক্ত হয়, এটা কি তার প্রমাণ?’
ঝিলমিল তেজি গলার কথাগুলো শুনে রোদ্দুরের হাসি পেল বটে। তবে শেষের কথাটুকু যেহেতু সে সিরিয়াস বলেছে, তাই আর হেসে ফেলল না। সারল্য ভঙ্গিতে বলল, ‘আচ্ছা…. সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি তার আগে তোর প্লাষ্টিকের ছু’রি আমার গলা থেকে নামিয়ে নে। ওটা দিয়ে কি ভয় দেখাচ্ছিস? আমার গলায় ছু’রি বসানোর সাহস থাকলে সত্যিকারের একটা ছু’রি নিয়ে আয়।’
ঝিলমিল দপ করে নিভে গেল। তবে এত সহজে দমে গেলে তো চলবে না। নিজের মনটাকে দাঁত চিবিয়ে বুঝ পড়িয়ে অনেক কষ্টে স্বাভাবিক স্বরটা বজায় রেখে বলল, ‘এসব তো শুধু শো.. আই মিন দেখানোর জন্য। আমি যদি কাউকে কাবু করতে চাই তবে এসব সত্যি/মিথ্যা ছু’রির প্রয়োজন হবে না। এমনিতেই সবাইকে কাবু করে ফেলতে পারি।’

রোদ্দুর এক কাজ করল। নিজের হাত দু’টোকে পেছন দিকে নিয়ে হাতের বন্ধনে ঝিলমিলকে বেঁধে এক ঝটকায় ঘুরিয়ে সামনের দিকে নিয়ে এলো। আচমকা এমন আক্রমণের জন্য ঝিলমিল প্রস্তুত ছিল না, প্লাস্টিকের ছু’রিটা হাত থেকে নিচে পড়ে গেল। রোদ্দুরের সেসব দেখার বিষয় না। সে তার তীক্ষ্ণ বিচক্ষণতার মাধ্যমে বেশ চতুর ভাবেই ধরতে পেরেছে ওকে। ঝিলমিল সামান্য হাতে ব্যথা পেল, ‘আহ’ করে উঠল।
রোদ্দুর কোনোকিছু মান্য করার মতো অবস্থা দেখাল না। জেদি মনোভাব ফুটিয়ে ভীষণ নাছোড় কণ্ঠে বলল, ‘আমাকে যেভাবে কাবু করেছেন, সেভাবে কাবু করার সাহস কিন্তু অন্য কাউকে দেখাতে যাবেন না। আমি সব সহ্য করতে পারি… পারব; কিন্তু আমার মানুষটাকে অন্যকারো হাসিতে কিংবা আপনার মাদকময় দৃষ্টিতে অন্যকারো জন্য মায়া আমি সহ্য করতে পারব না।’
তারপর একহাতে আলতো করে ঝিলমিলের চোখে হাত বুলিয়ে বলল, ‘আপনার এই সরল চোখের চাহনি… বিস্ময়বিমূঢ় চোখদুটো, ঠোঁট…. ঠোঁটের ভাষা, নরম হাতের ছোঁয়া; সবকিছু আমার জন্য বরাদ্দ থাকবে।’
হতবুদ্ধির মত কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে ঝিলমিল। এসেছিল রোদ্দুরকে একটা চরম শিক্ষা দিতে অথচ নিজেই তার কট্টর বন্ধনীর বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছে। প্রতিবার এমনটাই হয়… ঝিলমিল একপলক তাকাল রোদ্দুরের চোখের দিকে। অজস্র না বলা কথা সেখানে খেলা করছে।
রোদ্দুর নিজের হাতের বন্ধন একটু ঢিলা করতেই বুক ভেদ করা হতোদ্যম শ্বাসটা সশব্দে ছেড়ে দিল ঝিলমিল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে পাঁজরের তলায় তীব্র ধকধকানিটা টের পাচ্ছে সুস্পষ্টভাবে।
রোদ্দুর পুনরায় তাঁর ভারী গম্ভীর গলায় ঝিলমিলের চিবুক ছুঁইয়ে বলল, ‘জানিস কাল কত কথা বলার ছিল? প্রতিটি মানুষের জীবনে বিশেষ মানুষটাকে নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট কিছু স্বপ্ন থাকে, ইচ্ছে থাকে…. আমারও ছিল, নিজের ভেতর পুষে রেখেছিলাম। কাল যখন তোকে প্রথম দেখলাম, আমার মনে হচ্ছিল দুনিয়া বোধহয় থমকে গেছে। অবচেতন মন তীব্রভাবে চাইছে, তোকে একবার ছুঁয়ে দিতে। তৎক্ষণাৎ মনের ইচ্ছের লাগাম টেনে ধরেছি। ঘরে যখন প্রবেশ করলাম তখন দেখলাম এক রাত্রি জাগরণের মধ্যে দিয়ে মধ্যে আকাশে উঁকি দিয়েছে ভোরের মায়াবী সূর্য। কিছু অসংজ্ঞায়িত কথা, ভাবনা, চেতনা কিছুই প্রকাশ করতে পারলাম না। তার আগেই কর্পূরের মত উবে গেল সময়ের কাঁটা। বড্ড দুঃসহ অসহ্যকর রাত মনে হচ্ছিল…. স্রেফ বিরক্তিকর।’
ঝিলমিলের মনে হচ্ছে, সে মহাকাশে ভাসছে। এই সময়টা যেনো এখানেই স্থির হয়ে যায়, খুব করে চাইছে। নিজেকে সামলে রাখার এক প্রবল যুদ্ধ চালাচ্ছে সে। চোখ খুলে রোদ্দুরের দিকেও তাকাতে পারছে না আবার চোখ বন্ধ করেও রাখতে পারছে না। একটা অদ্ভুত রকমের ঘোর; আনন্দ, অনুরণন, বোধে হৃদপিন্ডটা বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। কখন যে রোদ্দুরের টি-শার্টের একাংশ খামচে ধরেছে, বুঝতেই পারল না। সে হঠাৎ রোদ্দুরের বুকের উত্তাপে নিজের মুখ লুকিয়ে ফেলল।
ঝিলমিলকে ওর গুমোটপূর্ণ অবস্থা থেকে বের করার জন্য রোদ্দুর বলল, ‘আমিই বলে গেলাম। তুই কিছু বলবি না? দেখি, এক পলক থাকা আমার দিকে। আমি চাই আমাদের দুজনের দিকটা পরিষ্কার থাকুক। কথা বল, মুখের কথা না শুনে কীভাবে মনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাব বল তো!’
ভরাট কন্ঠের কথা গুলো কর্ণপাত হলেও সাড়া দিতে ইচ্ছে করল না তার। দু’ঠোঁটে সেলাই দিয়ে আরামসে ওর বুকটা দখল করে নিয়েছে। এখানেই সমস্ত শান্তি…. মুখে না বলা কথার উত্তর।
এক পর্যায়ে নিচু স্বরে বলল, ‘কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।’

‘তাহলে তাকা আমার দিকে।’
ঝিলমিল অস্বস্তি এবং দ্বিধা জড়িত দৃষ্টিতে তাকাল। রোদ্দুর দু’হাতের আজলায় তার মুখটা আবেষ্টন করে ফেলল। ঝিলমিল চোখ বুঁজে ফেলল, তার চোখের পাতা তিরতির করে কাঁপছিল। রোদ্দুর যখন ওকে আরেকটু নিজের কাছে এগিয়ে নেয় তখন সে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। রোদ্দুরকে নিজের ভীষণ কাছে আবিষ্কার করল, এতটাই কাছে যে তাদের ওষ্ঠ্যদ্বয়ের মাঝখানে এক ইঞ্চি দূরত্ব। এমতাবস্থায় দু’জনের কেউ আর দূরে থাকতে চাইল না। রোদ্দুর তার পুরুষ্টু ওষ্ঠ্যদ্বয় ঝিলমিলছর গোলাপের পাপড়ির মত ওষ্ঠ্যদ্বয়ে আপ্রাণ চেষ্টায় ছুঁয়ে দিয়েছে। সে রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে যাচ্ছিল তার একান্ত মানুষের একান্ত পরশের মাঝে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরার এই মুহূর্তটুকু কল্পনা করে বড্ড দুষ্কর। ঝিলমিল শুধু মনেপ্রাণে অনুভব করে যাচ্ছে…. এই মুহূর্তে কিছু ভাবতে গেলে মস্তিষ্কে গন্ডগোল লেগে যাবে।
কতটুকু মন ছুঁতে পেরেছে, কতটুকু মন পাগল করেছে, নিজেকে কতটুকু স্পষ্ট রূপে একে অপরের সামনে তুলে ধরেছে তা দু’জনের স্থিরবদ্ধ চাহনিতে বেশ ভালো করে বোঝা গেল। আজ বোধহয় একে অপরকে পরিপূর্ণভাবে বোঝার দিনটি ধার্য করা ছিল! অভদ্র ছেলেটাকে ঘায়েল করতে গিয়ে কীভাবে নিজেই ঘায়েল হয়ে গেল! এই যদি হয় ভালোবাসার অযুহাত, তবে এই ভালোবাসায় তো নিজেকে সঁপে দেওয়া যায় যখন-তখন। সময়ে অসময়ে তার কাঁধে অতি নির্ভরতায় নিজের মাথা গুঁজে দিতে পারে। পেশল বাহুজোড়ায় শক্ত করে নিজেকে, নিজ দায়িত্বে আবদ্ধ করে নিতে পারে। তার উত্তাল শ্বাসের সাথে সাথে নিজেকে বিসর্জন দিতে পারে। মাথাভর্তি রেশম কোমল চুলগুলোতে খুব সহজেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে পারে!
.
একটা সুন্দর আর অন্যরকম সকালের উদ্ভাবন ঘটল। সাতসকালেই আকাশে রোদে’রা ঝিলমিল করছে। তাদের মনেও বোধহয় রং লেগেছে। অলসতা ঝেড়ে চোখ মেলতে আজ বড্ড বেশি সময় নিয়ে ফেলল ঝিলমিল। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে রোদ্দুরকে চোখের সামনে দেখে, কখনো উত্তাল মনে তাকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয় নাই। কিংবা আজ যতটা কাছাকাছি অবস্থান করছে, ততটা কাছেও কখনো যেতে ইচ্ছে করে নাই। সম্পর্কের দাবি নিয়ে মুখ ফুটে কিছু উচ্চারণ করা হলো না কিন্তু মনের যে দাবি তা মন ঠিকই আদায় করে নিল। গতকাল রাতে যখন মনটা হিমস্পর্শী হাওয়ায় ঠান্ডা হয়ে আসছিল, ঠিক তখনই সে তার সমস্ত উষ্ণতা দিয়ে জড়িয়ে ধরেছিল। এতদিন ভালোবাসার পরিমাপ কেমন ছিল বা কতটুকু ছিল জানা নেই, কিন্তু ওই মুহূর্তেই এই মানুষটাকে বুকের অন্তঃকোণ থেকে ভালোবেসে ফেলেছে। আকাশের মত অসীম সে ভালোবাসা। ভাবনায় লাগাম টানল। নিজের লালচে লাজুক অবস্থা দেখে হাসি পেল। ভাগ্যিস রোদ্দুর জেগে নেই। ওর সামনাসামনি পড়লেই তো কেমন একটা অস্বস্তিবোধ হবে। কিয়ৎক্ষণের জন্য ঝিলমিল সমস্ত ভাবনাচিন্তা একপাশে ঘুম পারিয়ে রেখে রোদ্দুরের চুলগুলো অবিন্যস্ত করে দিয়ে নিজেকে দ্রুত ওর থেকে ছাড়িয়ে নিল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল প্রায় নয়টা বাজে। ইশশশ, অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই ঘর থেকে বের হলে গতকালের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হলেই শেষ! আর আলসেমি করে কাজ নাই, ঝিলমিল উঠে বসল। বিছানা থেকে নিচে নামতেই রোদ্দুর একহাত টেনে ধরল। ঝিলমিল ঘুরে তাকিয়ে একটা চাপা ধমক দিয়ে বলল, ‘ঘুম থেকে এক্ষুনি উঠবি। উঠে ফ্রেশ হবি, তারপর খেতে আসবি। আজকে না ঢাকা যেতে চেয়েছিলি? তাহলে দ্রুত কর।’ ঝিলমিল নিজেই ওর হাত ছাড়িয়ে নিল। এটা। একটা ট্রিকস, লজ্জা থেকে বাঁচার জন্য। তারপর জানালার পর্দাগুলো মেলে দিয়ে, নিজে ফ্রেশ হয়ে দরজা খুলে ঘরে ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
ড্রইংরুমে গিয়ে দেখল, বড় দুলাভাই আর আপুরা বসে গল্প করছে। ঝিলমিলকে দেখে তারা ‘স্বাগতম’ জানাল। ঝিলমিল হেসে ওদের সাথে যোগদান করল। এরইমধ্যে রোদ্দুর এলো ঘুমে ঢলতে ঢলতে। এসেই ধপাস করে সোফায় হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়ল।
বড় দুলাভাই হেসে বললেন, ‘কীহে ভাই, ঘুম ভালো হয়েছে তো?’
রোদ্দুর হেসে মাথা নেড়ে জানাল, সেই হয়েছে। ও যতটা না মনোযোগ দিচ্ছে তাদের কথাবার্তার দিকে, তারচেয়েও বেশি মনোযোগ ঝিলমিলের দিকে। তাকাচ্ছে আড়চোখে, হাসছে মৃদু কখনোবা সেই হাসির আড়ালে দুষ্টুমি খেলা করছে।
ছোট-বড় প্রায় সকলেই এখানে উপস্থিত। ঝিলমিল চোখ গরম করে তাকাল। ইশারায় চুপ করে থাকতে বলল। রোদ্দুর এতকিছু পাত্তা দিচ্ছে নাকি? সে নিজে যা করছিল তাই করে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর তিথি হঠাৎ দু’জনকে খেয়াল করে তাদের উদ্দেশ্য বলে উঠল, ‘অনেকক্ষণ যাবত দেখছি ঝিলমিল আর রোদ্দুর ফুসুরফুসুর করছে। ও এখান থেকে কিছু বলছে আর ঝিলমিল দশ হাত দূর থেকে ইশারা করছে। চোখে চোখে কথা তাহলে ভালোই হচ্ছে! আমাদেরও বল, আমরাও শুনি। কী বলো সবাই?’
তিথির কথার সাথে সাথে সবাই হৈহৈ করে উঠল। ঝিলমিল জানত, এইরকম কিছু একটা হতে পারে। তাই সে দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য একটা কথা ভেবে রেখেছিল; সেটাই বলল, ‘তেমন কোনো কথা না… আসলে আমরা ঢাকা ফিরে যাব তো সেটাই বলছিল।’

ঝিলমিলের কথা শুনে বড় দুলাভাই বললেন, ‘ওমা! আমরা এলাম আর তোমরা চলে যাবে? তা কী করে হয়? আমি আরও একটা পরিকল্পনা করলাম।’

রোদ্দুর উঠে দাঁড়িয়ে চোখমুখে বেশ একটা গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলল, ‘আর থাকা সম্ভব না ভাই। আমি এসেছি বেশ কয়েকদিন হয়ে গেছে তো। রোদশী আপুর বিয়ে থেকে শুরু হয়েছে আমার ছুটি নেওয়া। নিজের কাজে আগে এত অনিয়মিত ছিলাম না। তারপর প্রায় প্রতি সপ্তাহে তো বাড়ি আসা পড়েই… সবমিলিয়ে আসা হয় আমাদের।’

‘আচ্ছা, কখন যাবে তোমরা?’

‘এইতো দুপুরের পর বের হতে চাচ্ছিলাম।’

উনি মাথা নাড়িয়ে বললেন, ‘আচ্ছা আচ্ছা।’ তারপর তিথিকে ইশারায় কিছু বলতেই সে ঘরে গেল। দুই মিনিটের মাথায় ফিরে এলো হাতে একটা খাম নিয়ে। তিনি তিথির হাতে থেকে খামটা নিয়ে রোদ্দুরের সামনে এগিয়ে এসে বললেন, ‘আই থিঙ্ক বিয়ে-শাদির পর মানুষের জীবনে সামান্য পরিবর্তন আসে। জীবনটা কিছুটা উদাস টাইপের হয়ে যায়। না না…. আমি মোটেও এটাকে নেগেটিভ বলছি না। জীবনে যদি উদাস ভাব না আসে তবে এই ভাব থেকে বের হওয়ার জন্য যেসব উপায় তা থেকে তো বঞ্চিত হতে হবে। তাই তোমাদের বিয়ের গিফট হিসেবে আমি দারুণ একটা জিনিস রেখেছি‌। যদিও আগে দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু আমার মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।’
তারপর উনি রোদ্দুরের হাতে সেই খামটা ধরিয়ে দিল। তারপর পুনরায় বললেন, ‘যাও গিয়ে ঘুরে আসো। আমি সব ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আর তোমার সময়ের ব্যাপারটাও কিন্তু আমার মাথায় আছে। তাই এই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফ্লাইট রেখেছি। শুক্রবার, শনিবার তো এমনিতেই অফ আর রবিবার সরকারি ছুটি। তো আর কোনো কথা হবে না। গিয়ে ঘুরে আসো।’
রোদ্দুর খামটা খুলে সেখানে মালদ্বীপ ভ্রমণের দু’টো টিকেট আবিষ্কার করল। উনার ভালোবেসে দেওয়া উপহারটা দু’জনেই হাসিমুখে গ্রহণ করল। এখন বাকিরাও বায়না শুরু করে দিল, ওদের বায়না খুউব একটা জোরালো নয়। ওরা সবাই আজ হলে গিয়ে সন্ধ্যার শো দেখতে চায়। তিনি রাজি হয়ে গেলেন। ঝিলমিল আর রোদ্দুর অবশ্য বঞ্চিত হলো, কারণ ওরা দুপুরে খাওয়ার পরপরই বেরিয়ে পড়ল।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় নয়টা বাজল। রাস্তায় যানজটের কারণে দু’জনেই বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। এইজন্য হাসান ওরা আজ সকাল সকাল রওনা দিয়েছিল, যেনো ঢাকার এই ভয়ংকর জ্যামে আটকা না পরতে হয়। বাড়ি ফেরার আগে ঝিলমিল নতুন বাড়িটা যেভাবে রেখে গিয়েছিল, রোদ্দুর তার পুরো রূপটাই পরিবর্তন করে নতুনভাবে সাজিয়েছে। বাইরে থেকে ক্লান্ত শরীরে এসে সবকিছু গোছানো দেখে ভালো লাগল। রোদ্দুর সেটা জানাতেই সে হেসে করার নাচিয়ে একটু ভাব নিয়ে বলল, ‘আপনার হাজব্যান্ড কোনো কাজ অর্ধেক রেখে দেয় না কিন্ত…..’ আরও কিছু মুখে বলতে চাইল তবে তা না বলে ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত রকমের একটা হাসি ফুটিয়ে ঝিলমিলের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে চলে গেল। ঝিলমিল কথার সারাংশ বোঝার চেষ্টা করল। কথাটা সাধারণ হলেও, রোদ্দুরের ভাবভঙ্গি দেখে তার মনে হলো সে অন্য কিছু বোঝাতে চেয়েছে। মানে খুঁজতে খুঁজতে আচমকা মানেটা ধরা দিতেই ঝিলমিল হতভম্ব হয়ে চেঁচিয়ে উঠল, ‘রোদ্দুর…..!’
.
.
.
চলবে…….
হাফ সেঞ্চুরি হওয়া উপলক্ষ্যে আজ একটু স্পেশাল পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কেমন হয়েছে, জানাবেন কিন্তু।❤️

কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৮৯৫