ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-৫৪

0
233

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-৫৪]
~আফিয়া আফরিন

মেয়েটার নাম ইশা। রোদ্দুর ঝিলমিলের সাথে তার আলাপ করিয়ে দিল। ঝিলমিল জানতে পারল, সে একসময় রোদ্দুরের খুব ভালো একজন বন্ধু ছিল। ওরা একসাথে অফিসেও ছিল। তারপর ইশা ওর হাজব্যান্ডের চাকরির সুবাদে সিলেট বদলি হয়ে চলে এসেছিল। তারপর আর দেখা হয় নাই, যোগাযোগও নাই; আজ অনেকদিন পর এই সুদূর মালদ্বীপে এসে দেখা হলো, তারাও এখানে ছুটি কাটাতে এসেছে।
রোদ্দুর খুব হেসে হেসে গল্প করছে। ঝিলমিলও ঠোঁটের দু’পাশে প্লাষ্টিক হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। মনে মনে ওর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে আর মুখে হাসি বিলাচ্ছে। ডিনারেও ইশা তাদের সাথেই ছিল।
ঝিলমিল রোদ্দুরকে বলল, ‘আমি রুমে যাচ্ছি। তোরা খাওয়া-দাওয়া করে, গল্পগুজব করে আয়। বাই দা ওয়ে, যার সাথে এত পিরিত লাগাইছিস ওরে আবার রুমে নিয়ে আসিস না।’
রোদ্দুরের হাসি মুখটা দপ করে নিভে গেল। ঝিলমিলের হাত ধরে বলল, ‘না খেয়ে কোথাও যেতে দিব না।’

‘আমি খাব না।’
রোদ্দুরকে কিছু বলতে হলো না… ইশা বারবার ঝিলমিলকে রিকোয়েস্ট করতে লাগল। শেষে ঝিলমিল আর তাকে না করতে পারল না। শুকনো মুখে খেতে বসল। ইদানিং কারো আদিখ্যেতা বিরক্ত লাগে। খেতে বসেও মনছর খচখচানি দূর হলো না। রোদ্দুর ওর পাশেই বসে আছে, কিন্তু ইশার সাথে টুকটাক কথাবার্তা বলছিল। ঝিলমিলের এসব একেবারেই সহ্য হচ্ছে না… সে উঠে গেল। দুজনের উদ্দেশ্য বলল, ‘আমার ভালো লাগছে না। আমি রুমে যাচ্ছি।’
ঝিলমিল আর কোনোদিকে না তাকিয়ে চলে গেল। রোদ্দুরেরও আর ইচ্ছে হলো না, ওখানে বসে থাকতে। কিন্তু ভদ্রঙ্তা বলে তো একটা কথা আছে! সেই ভদ্রতা রক্ষার্থে ওকে আরও মিনিট দশেক ওখানে বসে থাকতে হলো। রুমে এসে দেখল ঝিলমিল বিছানার এককোণে বসে আছে। রোদ্দুর এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কি হলো তোর?’

‘কিছু হয় নাই, এমনিতেই চলে এলাম। ভাবলাম, তোদের দুই বন্ধুর অনেকদিন পর দেখা হয়েছে, আমি মাঝে থাকলে বিষয়টা কাবাব মে হাড্ডির মত হয়ে যাবে হয়ত! তোদের তো কত গল্পসল্প থাকতেই পারে, আমি কী করব সেখানে?’

‘তোকে আমি একবার’ও বলেছি কিছু? আশ্চর্য হয়ে যাই মাঝেমধ্যে। কীসব আজেবাজে চিন্তাভাবনা করিস যে। মাথায় কি সবসময় এসব ঘোরে তোর?’

‘তুই কি এখানে আমার সাথে ঝগড়া করতে এসেছিস?’
রোদ্দুরের প্রশ্ন শুনে ঝিলমিল মুখ ঘুরিয়ে নিল। কথাই বলবে না। একটু রাগ করে থাকা উচিত কিছু সময়। যদিও এটা রাগ করার মত যথার্থ কারণ নয় তবুও ভালোই লাগে। এখন রোদ্দুর কিছুক্ষণ চেষ্টা করবে রাগ ভাঙানোর, তারপর ঝিলমিলের রাগ না ভাঙ্গলে রেগে যাবে। ঝিলমিলকে আর কিছুই করতে হবে না, রোদ্দুরের রাগ আপনাআপনি পড়ে যাবে তারপর সে ফের ব্যস্ত হয়ে পড়বে ঝিলমিলের রাগ ভাঙানোর জন্য। এই সেই নানান কিছু দিয়ে রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করবে— ঝিলমিলের ভাষায় এটা উপড়ি লাভ। নিজে রাগ করল, আদর ভালোবাসাও পেল। আবার কখনো কখনো তো ঘুরতে যাওয়াও হয়।
তবে আজ ঝিলমিল রোদ্দুরের মধ্যে সেসব প্রতিক্রিয়া দেখতে পেল না। লাস্ট প্রশ্নটা করে যখন উত্তর পেল না, তখন বিছানা থেকে নেমে গেল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ অনেকটা সময় নিয়ে চুলগুলো ঠিকঠাক করল, হাতে ঘড়ি এবং পরনের টি-শার্ট’ও চেঞ্জ করল। তারপর বেরিয়ে গেল, ঝিলমিলকে বলার প্রয়োজন মনে করল না।
সে রোদ্দুরের উপর যতই রাগ দেখাস না কেন, ওর এই পাত্তা না দেওয়াটা পছন্দ হলো না। এইরকম সেজেগুজে কোথায় গেল? কত্ত বড় সাহস ওর, একেবারে চোখের সামনে দিয়ে কিছু না বলে চলে যায়! ঝিলমিল রাগ, দুঃখ আর বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে মাথায় হাত দিয়ে রোদ্দুরে চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। তার এটা বুঝে আসছে না, সে এখন কোথায় যেতে পারে? অনুমান যদি ভুলক্রমে সত্যি হয়, তবে খবর আছে।
ঝিলমিল নিচে নেমে এলো। একটু এগিয়ে বীচে ইশাকে দেখল, কিন্তু রোদ্দুর কোথাও নেই। সে পর্যবেক্ষণমূলক দৃষ্টিতে আশেপাশে যতদূর চোখ যায়, রোদ্দুরখে খুঁজে বেড়াল। কোথাও দেখতে পেল না।
হতাশ হয়ে রুমে ফিরে এসে দেখল, বাহির থেকে দরজা লক করা। ঝিলমিল তখন দ্রুত গতিতে নিচে নেমে গিয়েছিল, দরজার দিকে খেয়াল করে নাই। নিশ্চয়ই কোনো একভাবে লেগে গেছে, চাবিও নাই তার কাছে। রোদ্দুর থাকলে একটা কাজ হতো, ফোনটাও ভেতরে রেখে এসেছে। নিচে গিয়ে ওকে ফোন করা যায় তবে সে ইচ্ছে করল না।
বীচের পরিবেশটা ভীষণ সুন্দর বিশেষ করে এই রাতের বেলা। ঝিলমিল সেখানে গিয়ে বসে পড়ল। অবারিত নীল সমুদ্র বুকে খুশির উত্তাল হাওয়া নিয়ে খেলা করছে। সমুদ্র তার সামান্য অস্পৃশ্য সৌন্দর্য দিয়ে পুরো প্রকৃতিকে তুলে ধরে।এখানে সমুদ্রের মাঝে ছোট বড় পাহাড়ের টিলা দাঁড়িয়ে আছে, একপাশে খাঁড়া পাহাড় তো আছেই। রাতের আঁধারে চাঁদের আলোয় পাহাড়গুলো অন্যরকম রূপ ধারণ করেছে। দেখে মনে হচ্ছে, ওখানে রহস্যময় কোনো খেলা চলছে; পাহাড়ের শক্তিশালী রূপ, চাঁদের আলো আর সমুদ্রের মায়ার।
ঝিলমিল উঠে দাঁড়াল। সবাই নিজেদের মত হেঁটে বেড়াচ্ছে, আনন্দ করছে। সে নিজেও সমুদ্রের জলে পা ফেলে কিছুদূর এগিয়ে গেল। এখানকার প্রকৃতি যথেষ্ট ঠান্ডা, হাওয়া বইছে; পানিতে পা রাখার সাথে সাথে সারা শরীর কেঁপে উঠল। তবুও সে কিছুদূর এগিয়ে আবার ফিরে এলো। একটা টিলার দিকে এগিয়ে সেখানে গুহা দেখতে পেল। বেশি গভীর নয় তবুও ওখানে যাওয়ার সাহস পেল না।
ঝিলমিল সাগর জলে পা ভেজাতে ভেজাতে অন্যপ্রান্তে চলে এসেছিল। এতটাই মশগুল ছিল যে, খেয়াল’ই করে নাই। এপাশ থেকে ওপাশে যাওয়ার জন্য বালির রাস্তা আছে, ঝিলমিল ওই পথ ধরল। কারণ, আশেপাশে কয়েকজন বলাবলি করছিল সমুদ্রের জোয়ার উঠেছে; পানি বেড়ে যাচ্ছে। ঝিলমিল তীরের বালির উপর দিয়ে বড় বড় পা ফেলে তাদের রিসোর্টের এইদিকে চলে এলো।
ওদের ওখানে নদী থাকার কারণে জোয়ার ভাটার বিষয়টা জানা রয়েছে। ঝিমিয়ে থাকা সমুদ্র কেমন উত্তাল হয়ে উঠেছে। এখানে আর থাকতে ইচ্ছে করল না, জোয়ার উঠার ফলে অনেকেই চলে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ ওই মুহূর্তগুলো উপভোগ করছে।
ঝিলমিল রুমের দিকে পা বাড়াল। রোদ্দুর ফিরে এলেই হয়। লিফটে ইশার সাথে দেখা হলো।
ইশা জিজ্ঞেস করল, ‘ওমা তুমি একলা যে? রোদ্দুর কোথায়?’
ঝিলমিল আপন মনে বিড়বিড় করে বলল, ‘ওর খবর নিয়ে কি নিবে? ওরে দিয়ে এত কি কাজ আপনাদের? তাও আবার আমাকেই এসব গা জ্বালানো কথা শুনতে হয়।’
মনের কথা মনে রেখেই হাসিমুখে উত্তর দিল, ‘আমি একটু বীচে ঘুরতে এসেছিলাম আপু। রোদ্দুর রুমে আছে। আপনি যাবেন? দেখা করবেন?’

‘না, না।’

‘ও আচ্ছা। কোনো দরকারি কথা ছিল কি? আমি কি ওকে আপনার সাথে দেখা করতে বলব?’ ঝিলমিল চিবিয়ে চিবিয়ে বলল।

ইশা হাসি মুখে বলল, ‘কোনো দরকার নাই। তোমাকে একলা দেখে জিজ্ঞেস করছিলাম আর কী। আচ্ছা আসছি।’
সে তার ফ্লোরে নেমে গেল। ঝিলমিল’ও রুমে এসে দেখল, রোদ্দুর ফিরেছে। রোদ্দুর জিজ্ঞেস করল, ‘রাগ পড়েছে?’

‘রাগ তো করি নাই।’

‘আচ্ছা, সিওর?’

ঝিলমিল মাথা নাড়িয়ে ভাবুক গলায় বলল, ‘হুমমম।’
রোদ্দুর এগিয়ে এলো। হাতে একটা ব্যাগ। সেটা ঝিলমিলের দিকে তাক করে বলল, ‘এটা তোর জন্য।’

‘কী আছে এতে?’

‘দেখ।’
ঝিলমিল ব্যাগটা হাতে নিল। খুলে দেখল একটা ক্রেপের একটা হালকা রংয়ের শাড়ি, সাথে ম্যাচিং ব্লাউজ। ঝিলমিল রোদ্দুরের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল। রোদ্দুর বলল, ‘তোর জন্য… ইচ্ছে ছিল শাড়িতে দেখার।’

ঝিলমিল চোখ বড় বড় করে বলল, ‘এখন?’

‘হুমম।’ রোদ্দুর ছোট্ট করে বলল। ঝিলমিল হাসল। এতক্ষণ ওর সাথে যে অকারণ রাগ দেখিয়েছে তার প্রতিকার হিসেবে শাড়িটা সে পড়তেই পারে। রোদ্দুরকে চোখ বন্ধ করে অন্যপাশ ফিরতে বলল। রোদ্দুর বলল, ‘অন্যপাশ ফিরছি ঠিক আছে, চোখ কেন বন্ধ করতে হবে?’

‘আমি বলেছি তাই।’
রোদ্দুর মাথা নাড়িয়ে সায় জানাল। মিনিট দশেকের মধ্যে দক্ষ হাতে ঝিলমিল শাড়িটা পড়ে ফেলল। রোদ্দুর বারবার জিজ্ঞেস করছিল, ‘হয়েছে কি? আমি চোখ খুলব? এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখা যায়? আর কত সময় লাগবে?’
ঝিলমিল এইবার তাকে এদিক ফিরতে বলল।
হাওয়ায় নাম না জানা একটা ফুলে সুবাস ভেসে বেড়াচ্ছে। সমুদ্রের ঘ্রাণ ভেসে আসছে… মনমাতানো প্রাণবন্ত সৌরভ!
ভীষণ উদ্দীপনায় মুগ্ধতা নিয়ে কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর ঝিলমিল জিজ্ঞেস করল, ‘আমাকে কেমন লাগছে?’

রোদ্দুর মুগ্ধ কণ্ঠে জবাব দিল, ‘রাত শেষ হওয়ার পর, সূর্য যখন উঠতে শুরু করে সেই আকাশটা দেখেছিস কখনো? রাতের জোসনা তখনো কাটে নাই অথচ ভোরের নীলিমা রেখা উঁকি দিচ্ছে, তোকে সেই আকাশের মত নির্মল দেখাচ্ছে। সীমিতের মাঝে অসীমতা। দৃষ্টি পরিপূর্ণ হলে ভাবি, এইতো শেষ… সৌন্দর্যের শেষ দেখার মত আর কী আছে? কিন্তু তখনও আমি বুঝি না যে, আমার দৃষ্টিই শুধুমাত্র পরিপূর্ণ হয়েছে। ভালোবাসা এখনও হয় নাই। ভালোবাসা দিনকে দিন বাড়তে থাকে… তখন আমি ওই সৌন্দর্যে আকাশ খুঁজে পাই। শরতের আকাশ সাদা তুলার ন্যায় মেঘের ভেলা, শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন অস্পষ্ট আকাশ, বর্ষার কালো মেঘে ছেয়ে যাওয়া আকাশ এছাড়াও কখনও কখনও সকালের চকচকে আকাশ, দুপুরের উজ্জ্বল আকাশ, বিকেলে লালিমায় ছেয়ে যাওয়া আকাশ আর হাজার তারার এক আলোকসজ্জায় সেজে ওঠা রাতের আকাশ।’
ঝিলমিল লজ্জা পেল এই কথায়। চুপ করে রইল। দুটি হৃদয় যখন একে অপরকে ছুঁতে চায়, তবে সেখানে মুখে কথা বলে কাজ কি?
রোদ্দুর ওর পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করল। সেটা থেকে বের করল টাইটানিক হার্ট আকৃতির একটা পেনডেন্ট। ঝিলমিলকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে যত্ন করে গলায় পড়িয়ে দিল।
জিজ্ঞেস করল, ‘রাগ করেছিস কেনো?’

ঝিলমিল কিছুটা মুখ কালো করে উত্তর দিল, ‘তুই যখন অন্যকারো সাথে হেসে হেসে কথা বলিস তখন আমার ভীষণ রাগ হয়। আমি জানি, এটা কেবলই সৌজন্য সাক্ষাৎ। কিন্তু নিজেকে কিছুতেই দমাতে পারি না।’

‘তাহলে আমাকে এখন কি করতে হবে?’

‘তুই কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলবি না, তাহলেই হবে।’ ঝিলমিল রোদ্দুরের বুকের কাছটায় আঙ্গুলের সাহায্য অদৃশ্য নকশা কাটতে কাটতে বলল।

‘তবে একটা শর্ত আছে।’

‘শর্ত? কী সেটা?’ ঝিলমিল আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করল।

‘বলব, আগে বল আমার শর্ত পালন করবি।’

‘না শুনে কীভাবে হ্যাঁ বলি?’

‘তেমন কঠিন কোনো কাজ নয়।’

ঝিলমিল বলল, ‘ঠিক আছে বল তুই।’

রোদ্দুর একটু ভেবে বলল, ‘একদিনে ২৪ ঘন্টা। প্রতি ঘন্টায় তো আর সম্ভব নয়… সন্ধ্যে ছয়টা থেকে রাত বারোটা প্রতিটা ঘন্টায় একটা করে চুমু খাবি। সকাল সাতটা থেকে আটটা অর্থাৎ এক ঘন্টায় দশটা চুমু খাবি। রাজি?’

ঝিলমিল কপট রাগ দেখিয়ে ফট করে রোদ্দুরের বুকে ধুম করে একটা ঘুষি দিল। চোখ পাকিয়ে বলল, ‘তুই এত অসভ্য কথা বলিস কেনো? যা-তা কথা বলে সবসময়। বলি যে, মুখ দিয়ে ভালো কথা বের হয় না? অসভ্য অসভ্য কথা ছাড়া কিচ্ছু জানে না।’
ঝিলমিল সরে যেতে নিতেই রোদ্দুর তাকে জাপটে ধরল। নাকে নাক ঘষে বলল, ‘বউয়ের সাথে অসভ্য অসভ্য কথা যত বলব ততই লাভ। ভালো কথা বললে গুরুত্ব দিস? আর আমি এত সভ্য হয়ে থাকতে পারব না। এত সভ্য হলে বউয়ের আদর থেকে বঞ্চিত হতে হবে। আমি এটাতে রাজি না।’

ঝিলমিল চোখ পাকিয়ে বলল, ‘খবরদার! মুখ বন্ধ রাখবি। তুই সত্যি সত্যি একদিন আমার হাতে মাইর খাবি। এখন আমাকে ছেড়ে দে। তোর কাজকর্মে লজ্জায় পড়ে মাঝেমধ্যে আমার মনে হয়, স্রেফ মাটির নিচে ঢুকে পড়ি।’
রোদ্দুর ঝিলমিলের কোমড় জড়িয়ে ওকে নিজের উচ্চতার চেয়ে কয়েক ইঞ্চি উপরে তুলে দিল। তারপর ঝিলমিলের চোখে চোখ রেখে বলল, ‘লজ্জায় মাটির নিচে কেনো ঢুকে পড়তে হবে? আমার বুক আছে না, বুকের মধ্যে ঢুকে যা।’

ঝিলমিল দু’হাতে রোদ্দুরের গালদ্বয় আবদ্ধ করে মিষ্টি হাসিটা ছুঁড়ে দিয়ে বলল, ‘তাই?’ তারপর ওর গোছানো চুলগুলো অবিন্যস্ত করে দিল।

‘হুমমমম। আর শোন একটা কথা ক্লিয়ার করে জানিয়ে দিই, আমাকে নিয়ে হাজার সংশয় রাখলেও আমার ভালোবাসা নিয়ে সংশয় রাখিস না। আমি আমার ভালোবাসার খাতিরে তোকে ভালোবাসি!’
দুরুদুরু বুকে আকম্প অস্থির ঝিলমিল নিরুত্তর রইল। ওর একরাশ উচাটন রূপে লালচে লাজুক হাসিটা এসে ভর করল।
রোদ্দুর বলল, ‘বৃষ্টিবাদলার দিন কবে আসবে বলল তো?’
ঝিলমিল এইবারও উত্তর দিল না। একটা পাখি যেমন খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার প্রয়াস চালিয়ে যায়, ঝিলমিল’ও ঠিক সেইভাবে রোদ্দুরের শার্ট মুঠোবন্দী করে ওর বুকের উষ্ণতায় ডুবে রইল। চোখ মুদিয়ে নীরবে তাকে সমর্থন করে যাচ্ছে!
রোদ্দুর ঝিলমিলকে নামিয়ে দিল। জড়ানো কণ্ঠে বলল, ‘তাকা আমার দিকে।’

ঝিলমিল মনের ভেতর উত্থাল করা অভিব্যক্তিটুকু রেখে অস্থির স্বরে ব্যাকুল ভাবে বলে উঠল, ‘না না।’
সে ডান হাতে উঁচু করে রাখা তার থুতনি ওষ্ঠ্য বরাবর তুলল। মুহূর্তেই ওই সামান্য দূরত্ব ঘুচিয়ে ছড়িয়ে দিল বুকের পাঁজরে জমে থাকা অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি। পুরুষ্টু ওষ্ঠ্যদ্বয় ছুঁয়ে দিল একজোড়া হিমস্পর্শী মাদকতায় আচ্ছন্ন ওষ্ঠ্যদ্বয়। ছোটো ছোটো আদর স্পর্শ যখন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছিল, ওই উত্তাপে ঝিলমিল মোমের মতই গলে গলে পড়ছিল। এই নেশার আকণ্ঠ অস্থির অনুভূতির কাছে না পেরে ঝিলমিল দৌড়ে পালাতে নিল। কিন্তু আজ নিস্তার নেই। রোদ্দুর সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে, সে অসভ্যতার সর্বশেষ পর্যায়ে পৌঁছাবে আজকে।
ঝিলমিলকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে সোজা শয্যায় এগিয়ে গেল। প্রিয় সেই উষ্ণতায় জড়িয়ে ঝিলমিল আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলো। এই আত্মসমর্পণ ভালোবাসার, ইচ্ছের, শখের, সুখের! ওরা মনের ক্যানভাসে ভালোবাসার গল্প এঁকে দিয়েছে খুব সযত্নে। এই ভালোবাসার গল্পের প্রতিটা পরতে পরতে জড়িয়ে আছে রঙ্গিন স্বপ্ন, একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, ভালোবাসার ঘর, মায়াবী চাহনি, আদরের সমাদর!
.
.
.
চলবে….
কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৮৪৪