ঝিলমিল রোদ্দুরে পর্ব-৫৫

0
225

#ঝিলমিল_রোদ্দুরে🖤 [পর্ব-৫৫]
~আফিয়া আফরিন

নির্মল নীল আকাশ, পুবের স্নিগ্ধ আলোয় আঁধার কেটে গেছে। পেঁজা তুলোর মতো শুভ্র সাদা মেঘ আকাশের বিশাল বুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাশাপাশি সূর্য মামাও ক্ষেপেছে, তীর্যকভাবে আলো ফেলছে।
সূর্যের আলোটা এসে পড়ছে সরাসরি ঝিলমিল চোখেমুখে। বেশ কয়েকবার বিরক্তবোধ করলেও, অলসতার কারণে উঠতে ইচ্ছে করছে না। একটা কুশন কভার দিয়ে মুখের একাংশ ঢেকে রেখেছে। আর ওইভাবে থাকলে পারল না। ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করল রোদ্দুরের বুকের মধ্যিখানে। এরচেয়ে শান্তির আর কিছু হয় না। খুব কাছ থেকে সে তার হৃদয়ের ধুকপুক আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিল। ঠোঁটের কোণে আচমকা মৃদু হাসি খেলে গেল। মাথা তুলে তাকাল সাবধানে… কী আরাম করে ঘুমাচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে না এতটাই মাটির মানুষ। অথচ গতরাতে অসভ্যতার সীমা ছাড়িয়ে কতদূর চলে গিয়েছিল!
সে রাতের কথা মনে পড়লেই কেমন নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে। ভাবতে গেলেই, চোখ বুঁজে আসছে। এতটা নেশায় বুঁদ হয়ে যাওয়া রাত, নেশায় আসক্ত করা একটা মানুষ— তার জীবনে আসবে কখনও ভেবেছিল?
ঝিলমিল আরেকটু এগিয়ে এলো। জাগতে ইচ্ছে করছে না। রোদ বৃষ্টি যাই হোক না কেন, সে এই উষ্ণতার আকণ্ঠ নেশায় ডুবে থাকবে। তবে বেশিক্ষণ ডুবে থাকার সুযোগ হলো না। রোদ্দুর নড়াচড়া করছে, উঠবে বোধহয়! ওর তো আবার ঝিলমিলকে কিছু বলার ক্ষেত্রে বিবেকবুদ্ধি লোপ পায়। কী থেকে কী বলে বসবে কে জানে?
ঝিলমিল উঠে গেল। এতক্ষণের আরামদায়ক অলসতা ভীষণ উপভোগ করেছে… আজকের মত থাক, আবার অন্যকোনো এক সময়।
.
বেলা প্রায় বারোটা বাজতে চলছে। রোদ্দুর এগিয়ে কাছে স্লাইডিং ডোরটা খুলে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। ফুরফুরে বাতাস বইছে। হঠাৎ মনে হচ্ছে, সে অন্যরকম একটা মায়ায় জড়িয়ে গেছে। এই মায়া আর পিছুটানের জন্ম এক রাতের মাঝামাঝিতে হয়েছিল, যখন আকাশের তারাগুলো তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হতে এসেছিল! এখন তো ভালোবাসাময় একটা জীবন কাটানোর জন্য হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছে করবে।
রোদ্দুর পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল, ঝিলমিল দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। রোদ্দুর তাকাতেই ঝিলমিল বলল, ‘আমি নিচে যাচ্ছি।’

‘ওয়েট… আমাকে দশ মিনিট সময় দে একসাথেই বের হব।’ রোদ্দুর ঝিলমিলকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দৌড় দিল। ঝিলমিল ঘড়ির দিকে তাকাল। রোদ্দুর আট মিনিটের মাথায় ভদ্রলোক সেজে বেরিয়ে এলো।
ঝিলমিল যেখানে যাচ্ছে, রোদ্দুর’ও ওর পিছু পিছু যাচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না। সত্যি বলতে, ঝিলমিল কথা বলছে না লজ্জায়। আর রোদ্দুর কথা বলছে না কারণ সে ঝিলমিলের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছে। গতরাতে তো ঠিকই ছিল, আজ সকাল হতে না হতেই পাল্টি খেয়ে মুখের ওমন দশা কেন হলো?
‘কোথায় যাচ্ছিস?’ বলতে গিয়েও রোদ্দুর আটকে গেল। এতটাই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে এগোচ্ছে যে মনে হচ্ছে ওই জলন্ত দৃষ্টিতেই রোদ্দুরকে ভষ্ম করে দিবে।
ঝিলমিল সমুদ্রের পাড়ে এসেছে। এই জায়গাটাই তার ভালো লাগে, একটু শান্ত পরিবেশ, তুলনামূলক নিরিবিলি।
রোদ্দুর না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেলল, ‘আমরা এখানে এলাম কেনো?’

ঝিলমিল বলল, ‘এই জায়গাটা আমার পছন্দ হয়েছে। কী সুন্দর শান্ত… আমি এখান থেকে সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাই। সমুদ্রকে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারি। ওই দিকটায় সবাই চেঁচামেচি করে, হৈ হুল্লোড় করে কিন্তু আমার এই নিরিবিলি পরিবেশ ভালো লাগে।’

রোদ্দুর হঠাৎ নিষ্পাপ ভঙ্গিতে বলে উঠল, ‘নিরিবিলি পরিবেশ চাই তোর? ওহ আচ্ছা, তো আমরা ঘরে থাকলেই পারতাম। ওখানে নিরিবিলি ছিল আর কেউ আমাদের দেখতে পারত না। যত যাইহোক, এখানে তো দু’চারজন মানুষ’ও আছে।’
ঝিলমিল রোদ্দুরের দিকে তাকাল। ওর কথার প্যাঁচ বোঝার চেষ্টা করল। বুঝতে যতটুকু সময় ব্যয় করল, ওর পিঠে ধুম করে কয়েক ঘা কিল বসিয়ে দিতে ততটুকু সময় ব্যয় করল না।
বলল, ‘সকাল সকাল আবার অসভ্য কথা শুরু করে দিয়েছিস?’

‘সকালে বলা যাবে না? ওহ আচ্ছা, তাহলে আবার রাতে বলা শুরু করব।’
ঝিলমিল হতাশ দৃষ্টিতে তাকাল। একে কিছু বলাই বৃথা, ফাজিল কোথাকার! ঝিলমিল কিছুই বলল না। ‘ফাজিল’ সম্বোধন করলে আবার ফাজলামি শুরু করে দিবে।
সেই সকালের ব্রেকফাস্ট করতে করতেই বেলা পেরিয়ে গেল তাদের। খেতে খেতে ঝিলমিল জিজ্ঞেস করল, ‘আজকে ওই আপুটাকে দেখছি না যে?’

‘কে?’

‘কাল যার সাথে আলাপ হলো, ইশা আপু।’

‘ওকে দিয়ে তোর কাজ কি?’

‘এমনিতেই জিজ্ঞেস করছিলাম।’

‘গতকালের শর্ত মনে আছে তো?’

ঝিলমিল চোখ তুলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী শর্ত?’

‘এরইমধ্যে ভুলে গেলি? আজ আমার কথা ভুলে যাবি, কাল আমাকে ভুলে যাবি। হতাশ, আমি ভীষণ হতাশ।’ গালে হাত দিয়ে বলল রোদ্দুর। ঝিলমিল কিছু বলছে না দেখে রোদ্দুর’ঈ পুনরায় বলল, ‘ওই যে আমার চুমুর শর্ত। কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলব না তার বিনিময়ে রোজ নিয়ম করে দশটা চুমু খাবি। আমি একটা কন্ট্রাক্ট পেপার দিব, সেটায় সই করে দিতে হবে।’

‘ইশশশ রে, মশা মারতে কামান দাগা।’

রোদ্দুর করার নাচিয়ে বলল, ‘মশা তো মারব না… বিড়াল মারব।’
অসহ্য, একদম অসহ্য। ঝিলমিল কানে হাত চাপা দিল। রোদ্দুর মিটিমিটি হেসে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল।
রোদ্দুর ফের বলতে লাগল, ‘তোকে নিয়ে কী এক বিপদে পড়েছি বলতো? তুই ঠিকঠাক মতো আমার মনের কথা প্রকাশ করতে দিচ্ছিস না। তোকে বুঝতে হবে আমি একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক, আমার স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার আছে। তুই আমার সাথে এইরকম স্বৈরাচারী করতে পারিস না। এটা টোটালি অন্যায়।’
ঝিলমিল রোদ্দুরের মুখে হাত চাপা দিয়ে বলল, ‘তুই একটু মুখটা বন্ধ রাখ প্লিজ। আর আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকবি না। ভ্যাবলাকান্ত কোথাকার!’

রোদ্দুর গলার স্বর নরম করে বলল, ‘ঠিক আছে। আমি বুঝে গিয়েছি, দেশে ফিরে আমাকে পুলিশে জিডি করতে হবে।’

ঝিলমিল সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘কেনো?’

‘কেনো আবার? নিজে অন্যায় করে আবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছে? এইতো তুই আমার বউয়ের কাছে যেতে দিচ্ছিস না, কথা বলতে দিচ্ছিস না; আমার আর আমার বউয়ের মাঝখানে একদম ঢুকে বসে থাকবি না বলে দিচ্ছি। তোর নামে আমি জিডি করব।’
এইটুকু বলে রোদ্দুর উঠে দাঁড়াল। ঝিলমিল করুণ দৃষ্টিতে তাকাল। সেও উঠে গেল। আগামীকাল তাদের ফিরে যাওয়া, আজকের রাতটুকুই সময়।
মালে আইল্যান্ডের পাশাপাশি মালে শহরের মধ্যেও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ওখানকার আর্টিফিশিয়াল বীচ, চিনা মালদ্বীপ ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ, ন্যাশনাল মিউজিয়াম ঘুরে বিকালে ‘ঢাকা ফুড’ নামক বাঙ্গালী রেস্টুরেন্টে এসে খাওয়া-দাওয়া করে নিল। সন্ধ্যায় এখানকার এক ধরণের স্পেশাল খাবার খেল। ওখান থেকে শপিং করে, ঘোরাঘুরি করে বেশ রাত হয়ে গেল। অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি, হাঁটাহাঁটির করার ফলে পা ব্যথা হয়ে গিয়েছিল।
ঝিলমিল নিজের পায়ের দিকে তাকাল। হাঁটার রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ হাঁটা খুব কষ্টকর। রোদ্দুর থামতে বলে নিজে একটা বেঞ্চে বসে পড়ল।
বলল, ‘অনেকক্ষণ পর্যন্ত হাঁটছি আমরা, একটু ওয়েট কর।’

‘পায়ে ব্যথা করছে?’ রোদ্দুর হাতের ব্যাগপত্র পাশে রেখে নিচু হলো। ঝিলমিলকে বলল, ‘দেখি… কোথায় ব্যথা পেয়েছিস?’

ঝিলমিল বাঁধা দিয়ে বলল, ‘না না সিরিয়াস কিছু না। এমনিতেই… চল এখন। আমাদের আবার ফিরতে হবে তো।’
রোদ্দুর কথা শুনল না। সে দেখল, ওর গোড়ালিতে একটা লালচে দাগ পড়ে গেছে। রোদ্দুর উঠে গেল। ঝিলমিলকে দুমিনিট অপেক্ষা করতে বলে কোথাও যেনো গেল।
ফিরে এলো কিছুক্ষণের মাথায়। হাতে ব্যান্ডেজ… পায়ের ওই অংশটুকু টিস্যু দিয়ে আলতোভাবে মুছে ব্যান্ডেজ করে দিল। তারপর বলল, ‘এখন হাঁটতে পারবি। এইরকম পাহাড় সমান উঁচু জুতা পড়িস কেনো? আমি তখন খেয়াল করলে তোকে এইভাবে বের হতেই দিতাম না। জানিস যে, এগুলা হাঁটার রাস্তা।’

ঝিলমিল মুখ কালো করে বলল, ‘আমি কীভাবে জানব?’

‘তুই সবটাই জানিস। আয় এখন, এখান থেকে একেবারে খেয়েদেয়ে তারপর ফিরব। আরেকটু কষ্ট কর, তারপর রেস্ট করিস। তুই যদি চাস, তবে বাকি পথটুকু আমি কোলে কোলে তুলে নিয়ে যেতে পারি।’
ঝিলমিল কটমট করে তাকাল।
রোদ্দুর বলল, ‘ঠিক এইজন্য ভালোবাসা দেখাতে পারি না। তোর সাথে যখন ধমক দিয়ে দিয়ে কথা বলব, তখন তুই ভালো। আর একটু ভালোবাসা দেখাতে গেলে… থাক কী বলব? সব কপালের দোষ।’
ওখান থেকে ওরা সরাসরি মালে আইল্যান্ডের আন্ডার ওয়াটার রেস্টুরেন্টে চলে এলো।
এখানে এসে ঝিলমিলের ভালো লাগল। সমুদ্র থেকে এই রেস্টুরেন্ট প্রায় ১৫ ফুট নিচে… যাতায়াত করার জন্য কাঠের তৈরি সিঁড়ি রয়েছে। লম্বাকৃতির এই অংশটুকু কাঁচের দেওয়ালে আবদ্ধ, বাইরে মাছের সমাহার। খেতে খেতে ওরা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখতে পেল। শুধু যে প্রজাতি ত নয়, মাছের গায়ের রংটাও দেখার মত। আকাশী রঙের কিছু মাছ… একদম পানির সাথে মিশে গেছে, দেখে বোঝাই যায় না। এছাড়াও লাল, নীল, হলুদ, খয়েরী, চকচকে সাদা রঙের ছোট-বড় অনেক ধরনের মাছ দেখতে পেল।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে ওখানেই আর কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করল। যাইহোক, আজকের দিনটা বেশ ভালোই উপভোগ করতে পেরেছে। আগামীকাল দুপুর নাগাদ ফিরতি ফ্লাইট।
এই তো যে সময়গুলো পেরিয়ে যাচ্ছে, তা নেশার মতই জোরালো আর তীব্র। হয়ত এই সময় ফিরে পাওয়া যাবে না, কিন্তু এইতো ভালোবাসা— এর মাধ্যমে মুহূর্তগুলো তো ফের আস্বাদন করা যাবে। এই মায়া, আদর মাখানো ভালোবাসা, নিজস্ব সত্ত্বার শক্তি, দেখার তৃষ্ণা, আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব, গুটিসুটি হয়ে ঘাপটি মেরে থাকা অলস সময়, বুকের মধ্যেকার ভূমিধ্বস, পিছুটান, এই নীল সমুদ্রের ঢেউ সবই তো থেকে যাবে… ভালোবাসার বন্ধনে থাকতে বাধ্য হবে। একটাই তো জীবন! এই ছোট্ট একটা জীবনে বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন আছে, সেই বাধ্যতা যদি ভালোবাসার ক্ষেত্রে হয় তাহলে তো কথাই নেই।
এই রাতের আঁধারের আড়ালে লুকিয়ে আছে কিছু অনুভূতি। ঝিলমিল ঘুমায়ে পড়েছে… ক্লান্ত লাগছিল খুব। রোদ্দুরের ঘুম আসছিল না। ঝিলমিলের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আকাশপাতাল ভেবে ফেলল। আলতো করে গালে আঙ্গুল ছুঁয়ে দিয়ে বলল, ‘সবসময় এইভাবেই আমার হয়ে থাকবি… মাঝেমাঝে অসভ্য বলে ডাকবি, এরপর আমিও না হয় তোকে অসভ্যতামি শিখিয়ে দিব।’
.
সকাল হলো, সূর্য মামা নিজস্ব নিয়মে তেজ ছড়িয়ে দিল। ঝিলমিল আর রোদ্দুর ঘুম থেকে উঠার পর আর কোনোকিছুর করার সময় পেল না। দ্রুত ব্রেকফাস্ট সেরে নিজেদের যাবতীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিল। একটু বাদেই এয়ার পোর্টের উদ্দেশ্য রওনা দিতে হবে।
একেবারে তৈরি হয়ে দু’জন নিচে নামল। ঝিলমিল মন খারাপ করে বলল, ‘আমি এই সমুদ্রপাড় খুব মিস করব। কী সুন্দর ছিল এখানে কাটানো দিনগুলো। মনে থাকবে… মনে রাখব।’
ঝিলমিল আর রোদ্দুর বিদায় নিল। এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন’সহ যাবতীয় কাজকর্ম শেষে বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো।
সবকিছু নিয়ে ফিরে যাচ্ছে, কিন্তু এখানে যে মায়া রেখে গেছে তা নেওয়া সম্ভব নয়। অসীম এই মায়া শুধুমাত্র এখানকার জন্য’ই বরাদ্দ।
এইবার ওরা নিজেদের দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল… ওখানেও অসম্ভব মায়া আছে, যা তাদের ঘিরে রাখে।
.
ইদানিং বাড়ির অবস্থা বিশেষ ভালো না। রেহানা খাতুন বেশ অসুস্থ। যথেষ্ট বয়স হয়েছে তার, অসুস্থতা তো সেই কবে থেকেই লেগে আছে। কিন্তু কিছুদিন হচ্ছে, শরীরটা কেমন জানি লাগছে। কেউ তাকে কিছু বলছে না, কিন্তু তিনি ঠিকই আঁচ করতে পারছেন তার ছেলেদের মধ্যে কিছু ঝামেলা হচ্ছে। এই বয়সে এসব আর দেখতে ইচ্ছে করে না, কারো কথা শুনতেও ইচ্ছে করে না। জীবনের যা স্বাদ ছিল, সবটাই সৃষ্টিকর্তা পূরণ করে দিয়েছেন। জীবনের সবচেয়ে বড় ইচ্ছে ছিল, ছেলে এবং তাদের বউদের নিয়ে একসাথে থাকবেন… একই ঘর, একই সংসার থাকবে, তাতে মিল-মহব্বত থাকবে!
সব হয়েছে মনের মত। আর কিছুদিন আগে তো রোদ্দুর আর ঝিলমিলের বিয়ে দিয়ে সব শখের বিসর্জন দিলেন।
তার কানে এসেছিল, ছেলেরা বাড়ি ভাগাভাগি করতে চাচ্ছে। আহা… এই বাড়ি! আফসোস হয় ভীষণ, এই বাড়িটা শুধু বাড়িই নয়; তার জীবনের একটা অংশ।
কাকে কি বলবেন? কার কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন? নিজেদের জায়গা নিজেদের আয়ত্ত্বে আসার পর, ওদের মতামত থাকতেই পারে। তবে রেহানা খাতুন মনেপ্রাণে চান, যা অসহ্যকর কিছু ঘটুক না কেনো সবটাই যেনো তার মৃত্যুর পর ঘটে। বেঁচে থাকতে এইসব তিনি দেখতে পারবেন না।
মনে মনে ভাবেন, চলে যাওয়া সময় বুঝি চলেই এসেছে… না হয় মনের মধ্যে এত হাহাকার কেনো লাগে? এত শূণ্যতা!এত রিক্ততা! আহ জীবন, মানুষের কত স্বাধের জীবন। হাজার রকমের আনন্দ দিয়ে পরিপূর্ণ করে রাখে এই ছোট্ট কয়েকদিনের জীবনটাকে!’
.
.
.
চলবে….
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৬৭৭