গ্যারাকলে জোৎস্নারাত পর্ব-০৭

0
495

#গ্যারাকলে_জোৎস্নারাত
#লেখিকা_সিনথিয়া_জাহান
#পর্বঃ৭

সকলের হাসি ঠাট্টায় ড্রয়িংরুম গমগম করছে ৷ কিন্তু রাত থতমত মুখে মাথা নিচু করে রেখেছে ৷ নিলয় যে কোনোভাবেই থামছে না ৷ এমন সময় গুরবাজ হন্তদন্ত হয়ে নিচে নেমে আসল ৷ ওর মুখটাও থতমত হয়ে আছে ৷ তবে নিলয়কে দেখতেই ওর চোখমুখ কুঁচকে গেল ৷ ও ধীর কদমে নিলয়ের পাশে গিয়ে বসল ৷ অতঃপর ওর দিকে একটু ঝুঁকে গলা খাকারি দিয়ে বলল,,,

জানি আমি তোমারটার সাথে ভুল করে ফ্লাটিং করে ফেলেছি তাই বলে তুমি আমার টাকে এভাবে কু নজর দিবে ছ্যাহ! সত্যি বলছি আমি জোৎস্নাকে রাত ভেবে ওসব না বললে তোমার এই কর্মকান্ডের জন্য আমি তোমাকে কাওরান বাজারে বসিয়ে ভিক্ষা করাতাম!

নিলয় চমকে উঠল গুরবাজের ঠান্ডা গলায় বলা কথা শুনে ৷ ও তৎক্ষণাৎ বলে উঠল,,,

এ-এ-এটা রাত?

তোমার জোৎস্নাকে কখনো এতো ভদ্রভাবে বসে থাকতে দেখেছো?

না ৷ আসলে কোনো অবস্থাতেই ওকে দেখিনি ৷

গুরবাজ কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকাল ৷ তা দেখে নিলয় হতাশ কন্ঠে বলল,,,

তোমার শালিকা আমাকে আগে পাত্তা দিত না ৷ অবশ্য এখনও দেয় না ৷ রাস্তা ঘাটে চুপচুপ করে আমি ওকে একটু দেখতাম ৷

গুরবাজ গা ছেড়ে দিয়ে বসে নিজেও হতাশ শ্বাস ফেলে বলল,,,

পাত্তা তো আমিও পাই না ৷ এই দু বোন পাত্তা না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমাদের পাত্তাহীনতায় ভোগাতে চাচ্ছে!

দুজনে সমান তালে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ৷ তবে একটু পর গুরবাজ সটানে সোজা হয়ে বসে কাটকাট গলায় বলল,,,

তুমি যদি জোৎস্নাকে ভালোমতো অবজার্ভ না করে থাকো তাহলে তুমি কাকে পছন্দ করো বলো তো?

নিলয় গুরবাজের চাহনি দেখে খানিকটা ঘাবড়ে গেল ৷ তবে নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে ও বলে উঠল,,,

প্লিজ ডোন্ট গিভ এমন নজর! আমি জোৎস্নাকেই চাই ৷ সামনাসামনি না দেখতে পেলেও ফোনে দু একটা কথা বলে বুঝেছি ও ভীষণ চঞ্চল ৷ আর ওর বৈশিষ্ট্য রাতের একদম বিপরীত ৷ বলে রাখা ভালো আমার চঞ্চল মানুষ বেশি পছন্দ ৷

গুরবাজ নিজের সন্দেহকে লাত্থি মে*রে বিদায় করল এবং মাথা নিচু করে রাখা রাতের দিকে নজর দিয়ে বলল,,,

আর আমার শান্ত সাগরের মতো নিরব মানুষ বেশি পছন্দ ৷

নিলয় ওর দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট হাসল ৷ অতঃপর বসা থেকে উঠে ও ধীর কন্ঠে বলল,,,

ভাই আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যান আর আমি আমার টার মন পাওয়া যায় কিনা অনুসন্ধান করতে গেলাম ৷

বলে নিলয় সিঁড়ির দিকে চলে গেল ৷ বড়রা না শুনতে পেলেও রাত নিলয়ের কথা শুনতে পেল তাই ও চকিতে মাথা তুলে তাকাল ৷ তবে তাকানোর সাথে সাথেই গুরবাজের মুখটা নজরে আসল যে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে ৷ সেই চাহনির দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না রাত ৷ অবশ্য নজর সরিয়ে নেওয়ার আরও একটা কারন আছে ৷ রাতের ভীষণ রাগ লাগছে এই ভেবে যে গুরবাজ ওকে শালিকা বলেছে ৷

রাতের নজর সরিয়ে নেওয়ার মধ্যে একটা অভিমান খুঁজে পেল গুরবাজ এবং অভিমানের সম্ভাব্য কারন কি হতে পারে সেটাও তৎক্ষণাৎ মাথায় চলে আসল ৷ চোখের সামনে সেই দৃশ্যটা ভেসে উঠল ৷ গুরবাজ পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় একজনকে শালিকা সম্বোধন করেছিল যে হতভম্ভ চাহনিতে ওর দিকে তাকিয়েছিল কিন্তু গুরবাজ সেই চাহনি তখন বুঝতে না পারলেও এখন ঠিকই পাচ্ছে ৷ তাই ভীষণ লজ্জা লাগতে লাগল ওর ৷

গুরবাজ গলা খাকারি দিয়ে রাতের মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করল ৷ এতে কাজও হলো ৷ রাত চোখ তুলে তাকিয়েছে ৷ ও তাকাতেই গুরবাজ ওকে ইশারায় বাগানের দিকে যেতে বলল ৷ অবিশ্বাস্যভাবে রাত গুরবাজকে মুখ ভেঙিয়ে আবারও মাথা নিচু করল ৷ ও বিরবির করে বলতে লাগল,,,

যে নিজের বউকে চেনে না, তাকে শালিকা বলে ডাকে সেই মানুষের কথা কেন শুনব? আপনাকে বিয়ে না করার ২ টা কারনের সাথে আর একটা কারন যুক্ত হলো ৷ আপনি পুলিশ, আপনি হাসেন না আর আপনি নিজের বউকে না চিনে তাকে শালিকা বলে ডাকেন ৷

রাত গম্ভীর মুখে বসে থাকল ৷ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ওর রাগ বেড়ে চলেছে ৷ কিন্তু নিজের অবস্থার দিকে মনোযোগ যেতেই ও খানিকটা থতমত খেয়ে গেল ৷ গুরবাজ ওকে কি বলল না বলল এতে তো ওর কোনো যায় আসার কথা না তাহলে এতো অভিমান জন্মেছে কেন?

রাতের থেকে অপ্রত্যাশিত আচরণ পেয়ে গুরবাজ হতভম্ভ হয়ে গিয়েছে ৷ তবে নিজেকে সামলে ও গলা খাকারি দিয়ে বড়দের মনোযোগ আকর্ষণ করল ৷ সবাই তাকাতেই ও শান্ত গলায় বলল,,,

আমি আপনার মেয়েকে নিয়ে একটু বাগানে গেলাম ৷

কথাটা বলা শেষ করেই গুরবাজ বাগানের দিকে হাঁটা ধরল ৷ এবার রাত ইচ্ছা না থাকলেও যেতে বাধ্য হলো যেহেতু সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে ৷ এই লোক যে কতটা ধুরন্ধর সেটা রাত হারে হারে টের পেল ৷ ওদিকে জোবায়ের সিদ্দিকী হাসিমুখে বলে উঠলেন,,

আচ্ছা নিয়ে যাও জি…

উনি বাক্য সম্পূর্ণ করতে পারলেন না জিমের হু*ঙ্কার করে ডাকা সম্বোধনে ৷ জোবায়ের সিদ্দিকী গলা খাকারি দিয়ে অযথা এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন ৷

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

গুরবাজ অপর মুখ হয়ে বাগানের এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে ৷ রাত গুটিগুটি পায়ে ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়াল ৷ ওর অস্তিত্ব টের পেয়ে গুরবাজ পিছু ঘুরে তাকাল এবং লজ্জিত ভঙ্গিতে বলতে লাগল,,,

আমি আসলে তখন মনোযোগ দিইনি তোমার প্রতি তাই চিনতে পারিনি ৷ বাবার মেসেজ আমাকে কনফিউজ করে ফেলেছিল আফওয়ান ৷

রাতের ভিতরকার সেই চিনচিনে রাগটা এখনও সজাগ আছে ৷সেই রাগের প্রভাবে রাত কাটকাট গলায় বলল,

আমি তো কৈফিয়ত চাইনি ৷

কিন্তু আমি কৈফিয়ত দিতে চাচ্ছি ৷ আমি কোনো সন্দেহ রাখতে চাই না আমাদের মাঝে ৷

আমার যায় আসে না ৷আপনি যা ইচ্ছা করুন , আমার তাতে কি? আমি তো আপনাকে বিয়েই করতে চাই না ৷

গুরবাজ হঠাৎ স্থির হয়ে গেল ৷ শান্ত দৃষ্টিতে রাতের দিকে তাকিয়ে থাকল ৷ রাত স্বাভাবিক মুখভঙ্গিতে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে ৷ আরও এক মিনিট নিরবতার পর গুরবাজ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলতে লাগল,,,

আমি কি বোকা তাই না? যেখানে আমার নিজের মা আমাকে ভালোবাসা দেওয়ার ভয়ে সেই ছোটবেলায় আমাকে আর বাবাকে ফাঁকি দিয়ে পরকালে পাড়ি জমিয়েছে সেখানে তুমি ভালোবাসা দিবে এটা ভাবলাম কিভাবে?

রাত সচকিতে গুরবাজের দিকে তাকাল ৷ ওর মুখটা কেমন অসহায় ভাব গ্রহণ করেছে ৷ তা দেখে রাতের প্রচন্ড খারাপ লাগল ৷ ও তো ওটা অভিমান থেকে বলেছিল ৷ এখন ওর বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই তবে এটা সত্যি যে গুরবাজের প্রতি এখনও ওর কোনো অনুভূতি জন্মায়নি ৷ তাই বলে বিয়ে করবে না এটা ওর ভাবনায় আসেনি ৷

গুরবাজ হাতঘড়ির দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,,, আমাকে ডিউটিতে যেতে হবে ৷ সবাইকে জানিয়ে দিও ৷ আমি গেলাম ৷

গুরবাজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ৷ ওর গমনপথের দিকে তাকিয়ে রাতের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল ৷ লোক টা যে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে সেটা ও ভালোমতোই বুঝে গেল ৷

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

গুরবাজ চলে যাওয়ার আরো কিছুক্ষণ পর নিলয় আর জোৎস্না নিচে নেমে আসল ৷ এই এতোটা সময় নিলয় অনেক পরিশ্রম করেছে জোৎস্নাকে একটু বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নিতে ৷ অবশ্য জোৎস্না রাজি হচ্ছিল না ৷ শেষে নিলয় ওকে আপেলের লোভ দেখিয়ে বাইরে যেতে সম্মত করেছে ৷

ড্রয়িংরুমে এসে বড়দের থেকে অনুমতি নিয়ে ওরা দুজন বেরিয়ে পড়ল ৷ রাস্তায় নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে ওরা হাঁটতে লাগল ৷ নিলয় আড়চোখে বোরকা পড়া জোৎস্নার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,,,

শালাহ আপেল তুই দেখি অনেক কাজের! তুই সতিন না হয়ে বন্ধু হয়ে যাবি সেটা ভাবতেই পারিনি ৷

কিছু দূর যাওয়ার পর হঠাৎ জোৎস্না বলে উঠল,,, এই শুনুন দুলা ব্রো তো আমাকে রাত ভেবেছিল ৷ আপনি রাতকে আমি ভাবেন নি তো?

ওর প্রশ্নে নিলয় থতমত খেয়ে গেল ৷ ও ভেবেছে তো ভেবেছে সাথে টপাটপ ফ্লায়িং কিসও ছুঁড়েছে ছ্যাহ! এটা জোৎস্নাকে বললে ওর আর রক্ষে থাকবে না ৷ তাই ও গলা খাকারি দিয়ে প্রচন্ড ভাব নিয়ে বলল,,,

পাগল হয়েছো? আমি কি তোমার দুলা ব্রো যে নিজের বউকে চিনব না?

জোৎস্না চোখ সরু করে নিলয়ের দিকে তাকাল ৷ নিলয় সেই চাহনির দিকে তাকাতে পারল না ৷ ও নজর লুকিয়ে ইচ্ছাপূর্বক অন্যদিকে তাকাতে লাগল ৷ আরও কিছুক্ষণ চোখ সরু করে তাকানোর পর জোৎস্না চোখ সরিয়ে নিয়ে কাটকাট গলায় বলল,,

আচ্ছা রাতের থেকেই না হয় শুনব ৷

নিলয় এবার ফ্যাসাদে পড়ে গেল ৷ তাই ও পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য বলে উঠল,,,

চলো পার্কে যাই ৷ ওখানে প্রকৃতির মাঝে একটু সময় কাটাতে পারব ৷

জোৎস্না গভীর মনোযোগে নিলয়ের দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,,, ওকে ৷

দুজনে পার্কে চলে আসল ৷ একটা বেঞ্চে গিয়ে বসল ওরা ৷ আসলেই প্রকৃতির রুপ দেখে জোৎস্নার মন ভালো হয়ে গেল ৷ তবে ক্ষুধা টাও পেল ভীষণ ৷ তাই ও নিলয়কে বলল,,,

এই যে আমার আপেল কোথায়?

নিলয় প্লাবনকে আপেল আনার জন্য মেসেজ দিচ্ছিল ৷ জোৎস্নার প্রশ্ন শুনে ও চকিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,,

অর্ডার দিয়েছি ৷ এসে পড়লই বলে ৷

আমি টাটকা আপেল চাই বলে দিলাম ৷

হ্যাঁ হ্যাঁ টাটকা আপেল ই পাবে ৷

জোৎস্না কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ নিলয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে পুনরায় প্রকৃতিতে ডুব দিল ৷ কিন্তু পেট যে সায় দিচ্ছে না ৷ ও তো এখনি খেতে চাচ্ছে ৷ ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে জোৎস্না বলতে লাগল,,,

এই এখনও আসছে না কেন?

রিল্যাক্স ৷ যাকে অর্ডার দিয়েছি সে তো আর উড়ে উড়ে আসছে না তাই না? একটা হেলিকপ্টারও নেই যে সেখানে চড়ে আসবে ৷ তার উপর থাকলেও ল্যান্ড করার মতো জায়গা নেই ৷ যদিও উপর থেকে ছুঁড়ে দিলে আমি ক্যাচ করে নিতে পারতাম ৷

বড়লোক দোকানে অর্ডার দিতে পারেননি? যারা হেলিকপ্টার দিয়ে অর্ডার পার্সেল করে ৷

নিলয় আহাম্মক হয়ে বলল,,, এটা বাংলাদেশ ৷ এখানে এতো বড়লোক দোকান আছে বলে মনে হয়? অবশ্য তুমি চাইলে আমি একটা দোকান খুলতে পারি ৷

জোৎস্না মুখ ভেংচি কেটে বলল,,, যে টিউবলাইট ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদে সে এতো আত্মবিশ্বাস কোথায় পায়?

নিলয় থতমত খেলেও গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠল,,, আমি ইচ্ছা করে কাঁদি ৷ কাঁদলে চোখের সমস্ত রোগ জীবাণু বেরিয়ে যায় ওখে?

জোৎস্না হেসে ফেলে বলল,,, টিউবলাইটের লজিক টিউবলাইটের মতোই ৷

ওর হাসির মাঝেই চার পাঁচ জনের এক দল ছেলের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল,,,

মামনি আমাদের সাথে চলো ৷ তোমাকে হেলিকপ্টারে করে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াব আর ভালোবাসাও দিব ৷

জোৎস্নার হাসি থেমে গেল ৷ ছেলেটা আবারও বলে উঠল,,,

তোমার পছন্দ এতো খারাপ কেন? এমন হ্যাংলা ছেলের সাথে তোমার কি? তুমি আমার মতো ছেলের বিছানায় থাকার যোগ্য ৷ চলো একটা ট্রায়াল দেখাই ৷

বলে ছেলেটা কুৎসিতভাবে হাসল ৷ ওর সাথে ওর সাঙ্গ পাঙ্গগুলোও হাসল ৷ জোৎস্নার মুখটা থতমত হয়ে গেছে সাথে ভীষণ কান্নাও পাচ্ছে এতো বি*শ্রী কথা শুনে ৷ ও অস্ফুট স্বরে নিলয়কে বলল,,,

চলুন এখান থেকে যাই ৷

নিলয় অত্যন্ত গম্ভীর গলায় বলল,,, কেন?

এরা ভালো না ৷ প্লিজ এখান থেকে চলুন ৷

কথাটা বলার সময় ওর গলা কেঁপে উঠল আর চোখ ছলছল করে উঠল ৷ তা দেখে নিলয়ের মুখটা কাঠিন্যতায় ছেঁয়ে গেল ৷ ও জোৎস্নাকে বলতে লাগল,

তুমি এখানে বসে থাকো ৷ আমি আসছি ৷

কথাটা বলে ও ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে গেল ৷ তা দেখে জোৎস্নার ভয়ে বুক ধুকপুক করতে লাগল ৷ নিলয়কে নিজেদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে লিডার ছেলেটা হাসতে হাসতে বলল,,,

ও বাবা রেগে গেছো? এই এই ছেলেটা রেগে গেছে ৷ তোরা ভয় পাওয়ার অভিনয় কর ৷

বলে ওরা ভয় পাওয়ার অভিনয় করে পর মুহূর্তে জোরে জোরে হাসতে লাগল ৷ নিলয় ছেলেটার মুখোমুখি এসে দাঁড়াল ৷ অতঃপর নিজেও একপলক হেসে ওর গাল বরাবর একটা ঘুষি দিল ৷ সেই ঘুষির ভার এতোটাই ছিল যে ছেলেটা মাটিতে পড়ে গেল , ওর দুনিয়া দুলতে লাগল ৷ তা দেখে জোৎস্নার পাশাপাশি বাকি ছেলেগুলোর চোখ বড় বড় হয়ে গেল ৷

নিলয় থামল না ৷ ও মাটিতে পড়ে থাকা ছেলেটার উপর ঝুঁকে ওর মুখে এলোপাতাড়ি ঘু**ষি মা**রতে লাগল ৷ বাকি ছেলেগুলো এবার ভয় পেয়ে গেল ৷ ওরা নিলয়কে আটকানোর চেষ্টা করতে লাগল কিন্তু পারল না ৷ নিলয় একের পর এক ঘু*ষি মে*রেই চলেছে আর বলতেছে,,,

যে মুখ দিয়ে খারাপ কথা বলে আমার জোৎস্নার চোখে পানি এনেছিস সেই মুখ আমি ভেঙে দিব!

অবস্থা বেগতিক দেখে জোৎস্না হন্তদন্ত হয়ে ওর দিকে এগিয়ে এসে ওর কাঁধ ঝাকিয়ে বলল,,,

প্লিজ থামুন ৷ ম**রে যাবে!

ম*রলে ম*রুক ৷ ওর জন্য মৃ*ত্যুই উপযুক্ত ৷

ওই থামুন প্লিজ ৷

ও থামছে না ৷ জোৎস্না দিশেহারা হয়ে পড়ল ৷ পার্কে খুব একটা ভীড় নেই তাই সাহায্যও নিতে পারবে না ও ৷ জোৎস্না নিলয়ের কলার টেনে বলল,,,

এই নিলয় হয়েছো তো ৷ থামুন এবার ৷

নিলয় এবার থেমে গেল ৷ ও জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ৷ এই প্রথমবার জোৎস্নার মুখে নিজের নাম শুনে ও থামতে বাধ্য হলো ৷ ছেলেটাকে আধম**রা অবস্থায় ফেলে রেখে ও হাত উচিয়ে বলল,,,

দ্বিতীয়বার আমার জোৎস্নার সাথে বে*য়াদবী করার আগে হাজারবার ভাববি!

জোৎস্না ওকে টানতে টানতে নিয়ে গেল ৷ বাকি ছেলে গুলো নিজের বসকে গিয়ে আগলে নিল ৷ নিলয়ের হাত থেকে র*ক্ত ঝরছে ৷ তা দেখে জোৎস্না উ’ত্তেজিত হয়ে বলল,,,

হায় আল্লাহ আপনার হাত থেকে র**ক্ত পড়ছে!

নিলয়ের মুখটা এখনও কঠিন হয়ে আছে ৷ ও কাটকাট গলায় বলল,,,

যার ঝরার সে ঝরবে ৷ তুমি চুপচাপ হাঁটো ৷

জোৎস্না হাঁটল না ৷ ও দোকান থেকে একটা ব্যান্ডেজ কিনে এনে নিলয়কে এক জায়গায় বসিয়ে দিয়ে ওর হাত ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগল ৷ হঠাৎ নিলয়ের দিকে চোখ যেতেই দেখল ওর মুখটা লাল বর্ণ ধারন করেছে ৷ তবে এটা রাগের জন্য না বরং ও লজ্জায় লাল হয়েছে ৷ তা দেখে জোৎস্নার হাসি পেল ৷ ও গলা খাকারি দিয়ে বলল,,,

আমার টিউবলাইটের দুটো অজানা রুপ দেখলাম আজ ৷ এক. এতোটা ভ*য়ঙ্কর যে হতে পারেন সেটা ভাবিনি দুই. আপনি লজ্জা পেলে আপনার মুখ আর কান লাল হয়ে যায় ছ্যাহ!

নিলয় নিজের স্বভাবে ফিরে এসে বলল,,, যাহ দু*ষ্টু! রাস্তাঘাটে কেউ এভাবে হাত ধরে? আমার বুঝি লজ্জা করে না? তুমি নির্লজ্জ হয়ে গেছো জোৎস্না!

চলবে,,,,