কাননে ফুটিল ফুল পর্ব-১৫

0
245

কাননে ফুটিল ফুল — ১৫ (১৭২০+ শব্দ)

আফরোজা বেগমের মনে হলো, এবার তিনি সেন্সলেস হয়ে পড়ে যাবেন। গত সপ্তাহেও তো দুজনের একপ্রস্থ ঝগড়া হয়ে গেল। অথচ এখন এসব জ্যোতি কী বলছে?

সারজিম প্রশ্ন করতে করতে ক্ষান্ত দিল। এবার পালা আফরোজা বেগমের। তিনি প্রশ্ন করলেন, “আজ যে তোকে দেখতে এসেছে সেটা জানে সাব্বির?”

“ফোন করে বলেছিলাম।”
“কী বলেছে সে শুনে?”
“বলছে, আসুক দেখতে। দেখতে আসলেই বিয়ে হয়ে যায় না।”

সাব্বির বাসায় নেই। দুপুরেই বলেছিল, রাতে ফিরতে কিছুটা দেরি হতে পারে। আফরোজা বেগম বললেন,
“এক্ষুনি ফোন কর বদমাশটাকে। এখানে এসেছিস যে সেটা আগেই বলবি না। দেখি কী বলে ও।”

জ্যোতি ফোন করে স্পিকার অন করে দিল। দুবার বাজতেই রিসিভ হলো কল,
“কীরে? পাত্রপক্ষ এসে দেখে গিয়েছিল?”

জ্যোতি স্বাভাবিক স্বরেই কথা বলে গেল, “হ্যাঁ দেখে গিয়েছে। এবার বিয়েটাও হয়ে যাবে।”

“ধূর, বাজে বকিস না। আমি থাকতে বিয়েটা হতেই দেব না। ও ভালো কথা, ওরা দেখে টাকাপয়সা কিছু দিয়ে গেছে? ওটা কিন্তু খরচ করবি না, আমার লাগবে।”

“দুই বছর আগে তোমার প্রস্তাবে রাজি হওয়াই ভুল হয়েছে আমার।”

“আবারও বাজে কথা। আচ্ছা, আমি এখন বাসায় যাচ্ছি। কাল কথা হবে তোর সাথে।”

“হ্যাঁ, আপনি বাসায় আসুন। আমরা সবাই অপেক্ষা করছি আপনাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য।” রাগে ফুসতে ফুসতে এবারের জবাবটা আর না দিয়ে পারলেন না আফরোজা বেগম।

ওপাশ থেকে সাব্বিরের আতঙ্কিত স্বর শোনা গেল, “এই জ্যোতি, তুই কই রে? মায়ের গলা পেলাম মনেহয়, নাকি আমি ভুল শুনছি।”

এবারের উত্তর দিল জ্যোতি,
“তুমি ঠিকই শুনেছ। আমি তোমাদের বাসায় আছি। ফোনের স্পিকার অন রেখে কথা বলছি তোমার সাথে। চাচি আমার পাশেই বসে আছে। শুধু তাই নয়, এখানে সারজিম ভাই আর নৈশী আপুও আছে। তারা এতক্ষন তোমার সব কথাই শুনছিল। তোমার এই ইঁদুর টাইপ সাহস নিয়ে তুমি জীবনেও আমাদের ব্যাপারে বলতে পারতে না বাসায়। তাই বাধ্য হয়ে কাজটা আমাকেই করতে হলো।”

ওপাশে নীরবতা। বোধহয় কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সাব্বির। কয়েক সেকেন্ড পরেই লাইনটা কেটে গেল। তার মিনিট দশেক পরে টেক্সট এলো নৈশীর ফোনে। নৈশী সবাইকে জোরে পড়ে শোনালো সেটা,
“ভাবি, আমি বাসার আশেপাশেই আছি। মা আর ভাইয়া ঘুমিয়ে গেল আমাকে একটা মেসেজ দিয়ে দরজা খুলে রেখ। তখন ঢুকব বাসায়।”

গুনে গুনে ত্রিশ মিনিট পর নৈশী ফিরতি মেসেজ পাঠাল, “জ্যোতি বাসায় চলে গেছে। খালামনি আর তোমার ভাইও রুমে গেছে। বাসার দরজা খুলছি। তুমি এখন আসতে পারো।”

সাব্বিরের জন্য দরজার সামনেই অপেক্ষা করছিল নৈশী। সাব্বিরকে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে দেখে মিটিমিটি হাসল ও। সাব্বির বলল, “এখন তো হাসবেই। সময়টা খারাপ যাচ্ছে, যে যেভাবে পারো হেসে নাও। এরপর যখন আমার সময় আসবে তখন দেখিয়ে দেব…।”

সাব্বিরের মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল সামনের পরিস্থিতি দেখে৷ কলিজাটা ধ্বক করে উঠল। জ্যোতি, সারজিম আর আফরোজা বেগম তিনজনই বসে আছে সোফায়৷ সবার দৃষ্টি এখন সাব্বিরের দিকে। সাব্বির বুঝল, এড়িয়ে যাওয়ার পথ খোলা নেই। যুদ্ধে পরাজিত, বিধ্বস্ত সৈনিকের মতো কাচুমাচু হয়ে একটা চেয়ার টেনে সবার মুখোমুখি বসল ও।

আফরোজা বেগম বললেন, “এত দূরে কেন বসেছিস? আমার পাশে আয়। এত ভালো কাজ করেছিস। একটু আদর করে দেই৷”

আদরের নাম করে যে উত্তম-মধ্যম দেবে মা, সেটা বুঝতে পেরে চেয়ার নিয়ে আরেকটু দূরে সরে বসল সাব্বির। সারজিম গলা খাকারি দিয়ে প্রশ্ন করল, “আত্মপক্ষ সমর্থনে তোর কিছু বলার আছে সাব্বির?”
সাব্বির মাথা নিচু করে উত্তর দিল, “না।”
“তারমানে জ্যোতি যা বলেছে সব সত্যি?”
“হ্যাঁ।” এবারও এক শব্দে জবাব দিল সাব্বির।

সারজিম এবার কথা বলল মায়ের উদ্দেশ্যে, “আম্মা, যেহেতু এরা সম্পর্কে জড়িয়েই গেছে৷ যত দ্রুত সম্ভব এটাকে হালাল করে নেওয়াই ভালো। আমি বরং কাল চাচার সাথে গিয়ে কথা বলি ওদের বিয়ের ব্যাপারে।”

“তোর যেতে হবে না। আমিই যাব কাল সাব্বিরকে নিয়ে। তোর চাচির অবস্থা তো জানিস। মুখের উপরে একেকটা কথা বলে দেয়। তোর শুনতে ভালো লাগবে না সেসব। তারচেয়ে কাল আমি গিয়ে বরং তোর চাচ্চার সাথে কথা বলব। ঝামেলা এরা তৈরি করলেও সমাধানের পথ বের করতে হবে আমাদেরই।”

জ্যোতি এবার উঠে দাঁড়াল, “অনেক রাত হয়ে গেছে চাচি, এবার বাসায় যাব। মা বলেছিল জলদি ফিরতে।”

সারজিম বলল, “চল,আমি এগিয়ে দিচ্ছি তোকে।”

আফরোজা বেগম পরেরদিন সাব্বিরকে নিয়ে গেলেন জ্যোতিদের বাসায়। জ্যোতির বাবা জামিল সাহেব এই প্রস্তাবে সানন্দে রাজি হলেও বাধ সাধলেন জ্যোতির মা সায়রা বানু। স্পষ্ট করেই কথাগুলো বললেন তিনি আফরোজা বেগমকে,
“ভাবি, আমি জানি আপনারা ভালো মানুষ। জ্যোতি ভালো থাকবে আপনাদের কাছে। কিন্তু জেনেশুনে এরকম অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে কে ঠেলে দিতে চায় নিজের মেয়েকে? সাব্বিরের স্বভাব তো আমরা সবাই জানি। কোনো ব্যাপার নিয়ে সিরিয়াস নয়। এখনও বেকার ও। চাকরি বাকরি কবে হবে ঠিক নেই। জ্যোতি আপনার মেয়ে হলে কী আপনি একটা বেকার ছেলের হাতে ওকে তুলে দিতে রাজি হতেন?”

কথাগুলো বলার সময় সায়রা বানু মনের সবটুকু ক্রোধ উগড়ে দিচ্ছিলেন যেন। জামিল সাহেব স্ত্রীকে থামতে বললে সেকথা কানে তুললেন না সায়রা বানু। মনে মনে এই ভয়টাই পাচ্ছিলেন আফরোজা বেগম। বিয়ের কথা উঠলে সবার প্রথমেই প্রশ্ন আসে, ছেলে কী করে। আর এটাই স্বাভাবিক। আফরোজা বেগম জানেন, সায়রা বানু চান খুব উচ্চবিত্ত পরিবারে মেয়েকে বিয়ে দিতে। সাব্বিরকে তিনি পছন্দ করেন না একেবারেই। সাব্বিরের বেকার থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা একটা বাহানা মাত্র। কিন্তু তবুও আফরোজা বেগমের কাছে দেওয়ার মতো কোনো উত্তর রইল না।

সাব্বির শক্ত মুখে মায়ের পাশে বসে কথাগুলো শুনছিল। চাচির মুখে নিজের বেকার থাকা নিয়ে শক্ত কথাগুলো নাড়া দিচ্ছিল ওর ভেতর পর্যন্ত। রাগ বাড়ছিল ক্রমশ। পাশে তাকিয়ে মায়ের চুপসে যাওয়া কুন্ঠিত মুখটা দেখে হঠাৎ করেই খুব খারাপও লাগল সাব্বিরের। মায়ের মুখটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অপমানিত বোধ করছে খুব।

সাব্বির মায়ের হাত ধরে বলল,
“ওঠো মা, এই বিষয়ে পরেও কথা বলা যাবে।”

মাকে নিয়ে বাসার বাইরে বের হতেই জ্যোতির কল এলো। এতক্ষন পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কথাই শুনছিল ও। সাব্বির জ্যোতির নাক টানার আওয়াজ পেল। কাঁদছে মেয়েটা। সাব্বির বলল,
“চিন্তা করিস না জ্যোতি। পরেরবার যখন তোকে চাইতে আসব তখন আর সাব্বির বেকার থাকবে না। চাকরি করা ছেলে কীভাবে তোর মা ফেরায়, সেটাও দেখে নেব আমি।”

১৮.
এক হাতে হ্যাঙারে ঝোলানো স্কাই ব্লু কালারের একটা একটা হ্যান্ডপেইন্টেড শাড়ি আর অন্য হাতে ল্যাভেন্ডার কাঞ্জিভরম। দুটোই সারজিমের সামনে ধরে নৈশী জিজ্ঞাসা করল, “কোনটা পরব?”

“আমার বউ এত সুন্দর যে সে যেটা পড়বে সেটাতেই তাকে ভালো লাগবে৷ তবুও যেহেতু জিজ্ঞাসা করছ, তাহলে স্কাই ব্লুটাই পরে নাও।”

নৈশী হেসে রেডি হতে চলে গেল। আজ সাব্বির আর জ্যোতির বিয়ে। সারজিমের পথেই হেটেছে সাব্বির। কোনো জাঁকজমক ছাড়া ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হচ্ছে আজ।

চাকরি পাওয়ার পরে আর দেরি করতে চায়নি সাব্বির। ভাগ্যিস বন্ধুদের জোড়াজুড়িতে নিজের সিভিটা জমা দিয়েছিল একটা কোম্পানিতে। জ্যোতিদের বাসায় যেদিন বিয়ের কথা বলতে গিয়েছিল তার দুদিন আগেই সেই কোম্পানি থেকে জয়েনিং লেটার এসেছিল। যেহেতু চাকরি করার ইচ্ছে সাব্বিরের কখনোই ছিল না তাই সেই লেটারটা টেবিলের এককোনে অযত্নে পড়ে ছিল দুটো দিন। তারপর জ্যোতির মায়ের ওভাবে প্রস্তাব নাকচ করার পরে বাসায় ফিরেই সাব্বির জয়েন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও জয়েনিং ডেটের একদিন পরে গিয়েছিল ও। তবু চাকরিটা পেয়ে গেল শেষপর্যন্ত। খুব বেশি বেতন পাওয়া যাবে না শুরুতেই। তবুও সাব্বিরের নিশ্চিন্ত লাগছিল। জ্যোতির মা এরপর আর বেকার অন্তত বলতে পারবে না। তারপর আবার প্রস্তাব নিয়ে যাওয়া হলো জ্যোতিদের বাসায়। সায়রা বানু এবারও গাইগুই করছিলেন। কিন্তু জামিল সাহেবের জোরাজুরিতে রাজি হতেই হলো শেষপর্যন্ত। চাচার প্রতি সেজন্য কৃতজ্ঞতার শেষ নেই সাব্বিরের।

একটা শর্ত অবশ্য দিয়েছেন জামিল সাহেব। সামনেই জ্যোতির এইচএসসি। অন্তত সেই পর্যন্ত জ্যোতি বাবার বাসাতেই থাকবে। মেয়ের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটুক এমন কিছু তিনি হতে দেবেন না। তাতে কারও অবশ্য বিশেষ আপত্তি করার কিছু ছিল না। বরং এটাই ভালো হবে বলে মনে হলো সবার।

বিয়েটা হয়ে গেল সুষ্ঠুভাবে। আপাতত আনুষ্ঠানিকতার খাতিরে দুইদিনের জন্য জ্যোতিকে আনা হলো শ্বশুড়বাড়িতে।

বাড়ির বড় বউ নৈশী। খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে তাই ওর। কাছের কিছু আত্মীয়স্বজন আগেরদিনই এসেছে বিয়েতে এটেন্ড করতে। সবারই ভালোমন্দের খোঁজ নিচ্ছে নৈশী। শুধু কয়েকজনকে এড়িয়ে চলছে ইচ্ছে করেই। তবে বেশিক্ষন আর এড়িয়ে থাকতে পারল না নৈশী। বিয়ে বাড়ির হৈচৈ কমে যাওয়ার পরে মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক হাত টেনে ধরে একপাশে বসালো নৈশীকে।

“গতকাল আসলাম আমরা, অথচ তুমি ঠিকভাবে কথাও বললে না আমাদের সাথে। খুব অভিমান করে আছো বুঝি?”

“না, তো। আমার মা ছিলেন যে অভিমান করত, কষ্ট পেতো আপনাদের জন্য। সে মরে গেছে। তার মৃত্যুর সাথে সাথে সম্পর্কও চুকেবুকে গেছে। এখন আর আপনাদের উপরে আমার কোনো অভিমান নেই।”

“সে তুমি যতই বলো নৈশী। তোমার চোখে, তোমার কথা অভিমানের ছাপ স্পষ্ট। একটা রিকোয়েস্ট করি? একবার মামা বলে ডাকবে?”

“সে তো ডাকতেই পারি। যেহেতু আপনি আমার হাজবেন্ডের মামা, তাই আমারও মামা।”
“সেই পরিচয়ে তো আমি মামা হতে চাইনি। আমি তোমার মায়ের ভাই। সেই অধিকারে তোমার মুখটা ডাকটা শুনতে চেয়েছি।”

“এই অধিকারটা সময় থাকতে দেখানো উচিৎ ছিল আপনার। যখন আমার মা আড়ালে নিভৃতে চোখের পানি ফেলেছে প্রত্যেকটা দিন, যখন আপনাদের কথা মনে করে মর্মবেদনায় ভুগেছে, তখন তো আপনারা কেউ অধিকার নিয়ে এলেন না। তাহলে এখন কেন? এখন সব মূল্যহীন আমার কাছে।”

“নৈশী, তোমার মা তোমাকে কখনও বলেছে কিনা জানি না, চিঠিতে আর ফোনকলে তোমার মায়ের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছিলাম আমি। প্রত্যেকবারই তোমার মা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আয়েশার রাগটা ঠিক কোথায় ছিল, সেটাও আমি বুঝি, যেদিন বাবা ওর বিয়ে দিয়ে ওকে মৃত ঘোষণা করলেন, সেদিন আমরা বাবার মুখের উপর কিছু বলতে পারিনি। ওর প্রিয় ভাই ওর হয়ে একটা কথাও বলেনি, এমনকি ভালো করে আটকানোর চেষ্টাও করেনি, এই ব্যাপারটাই ওর মনে গেঁথে গিয়েছিল। কিন্তু তখন আমরাও নিরুপায় ছিলাম। মূলত বাবার মুখের উপরে কথা বলার সাহস আমাদের কারোরই ছিল না। আয়েশাই মনেহয় আমাদের পরিবারের একমাত্র সদস্য ছিল যে বাবাকে ভয় পেত কম।

বাবাও কিন্তু কম কষ্ট পাননি। আসলে বাবা মেনেই নিতে পারেননি যে কয়েকমাসের পরিচিত একটা ছেলের জন্য মেয়ে তার মতের বিরুদ্ধে যাবে। অপরিচিত একটা বিদেশি ছেলে হুট করে যদি প্রস্তাব দিয়ে বসে, কোনো আদর্শবান বাবা কি চাইবেন নিজের মেয়েকে এমন অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে। আয়েশা যেদিন বাড়ি ছাড়ল আজীবনের জন্য সেদিন আমাদের জীবনটা থেমে গিয়েছিল যেন। সারাটাদিন একটা দানা অব্দি মুখে তুলতে পারেনি কেউ। অনেক উচাটনের পর ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম রাতে। তারপর আবার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। বাইরে থেকে শব্দ পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখলাম, বাবা কাঁদছেন মাকে আঁকড়ে ধরে। জীবনে ওই প্রথমবার আমি বাবাকে কাঁদতে দেখেছিলাম।

বলতে গেলে অনেক কথাই বলতে হবে। কিন্তু শুধু শুধু তিক্ত অতীত টেনে কী লাভ বলো। আয়েশা বেঁচে নেই, বাবাও আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা বরং তাদের জন্য দোয়া করি।

আমার উপরে আর অভিমান পুষে রেখ না নৈশী। একবার মন থেকে মামা বলে ডাকো, শুনি একটু।”

কথাগুলো শুনতে শুনতে নৈশীর চোখের কোলে জল জমতে শুরু করেছিল। মামার শেষ কথাটুকু শুনে চোখভর্তি জল নিয়ে হাসল নৈশী। সত্যিই তো সময় চলে গেছে অনেকটা। এখন আর অভিমান ধরে রেখে কী হবে? নৈশী বলল,
“ডাকব মামা বলে৷ কিন্তু তার আগে আমারও একটা আবদার আছে। সারজিমের মতো করে আমাকেও তুই করে বলতে হবে। তুমি সম্মোধনটা বড্ড দূরের বলে মনে হয়।”

এবার নৈশীর মামা আলফাজও হাসলেন।
“কত বড় চিন্তার পাহাড় যে নেমে গেল আমার মাথার উপর থেকে, সেটা তোকে বলে বোঝাতে পারব না। একটা অপরাধবোধ ছিল বহুদিনের। সারজিম আর তোর বিয়ের দাওয়াত পেয়েও আসিনি শুধু তোর মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস ছিল না বলে। আজ আমি চিন্তামুক্ত হলাম।”

মামার সাথে কথা বলে দরজার দিকে ফিরতেই চমকে উঠল নৈশী। সারজিম দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।

গতকাল মামার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই কেমন একটা অস্থির অস্থির লাগলছিল নৈশীর। মামার সাথে কথা বলার পর সেই অস্থিরতা প্রশমিত হলো অবশেষে।

বাসার কাজের এক ফাকে জ্যোতির রুমে ওর খবর নিতে গেল নৈশী। গিয়ে দেখল ফাহিমা এসেছে জ্যোতির সাথে দেখা করতে।

ফাহিমার স্বভাবের সেই চপলতা কিছুটা হলেও ফিকে হয়েছে। আন্দালিবের ব্যাপারে সবটাই ওকে জানিয়েছিল নৈশী। সম্ভবত সেই ট্রমা থেকে এখনও বের হতে পারেনি পুরোপুরি।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)