সরি আম্মাজান পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0
324

#সরি_আম্মাজান।
#পর্ব- ০৬ (শেষ পর্ব)

সাজু তাকিয়ে আছে। কল্পনা নিজেকে প্রস্তুত করে আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করে। বিভিন্ন প্রশ্ন আর নিজ থেকে আগ্রহে সবটা সাজিয়ে লিখলে যা হয় সেটা একসঙ্গে তুলে দিলাম।

কল্পনা বললো ,
আড়াই মাস আগে মোহসীন ভাইয়ের সঙ্গে আমি ও আমার শশুর শাশুড়ীর প্রথম পরিচয় হয়। তিনি নিজেই এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে। যদিও পরিচয় হবার পরে জানতে পারি যে তিনি তার মায়ের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়েই নিজের নানাবাড়িতে এসেছেন। এখানে আসার কারণ হচ্ছে তার মায়ের নামে কোনো সম্পত্তি আছে কিনা সেই বিষয় খোঁজখবর করা। কারণ ওনার স্বপ্ন ছিল উনি আমেরিকায় যাবেন। কিন্তু সেখানে যেতে হলে প্রচুর টাকাপয়সার দরকার। নিজের ভাইয়েরা যে যর মতো প্রতিষ্ঠিত হলেও এতো টাকা তাকে কেউ দিবে না। কিন্তু মোহসীন ভাই তো যেভাবেই হোক আমেরিকায় যাবেন কারণ ওনার ভালোবাসার মানুষ সেখানে।

মোহসীন ভাইয়ের কোনো এক বন্ধু তাকে হঠাৎ বুদ্ধি দেয় নিজের নানাবাড়িতে মায়ের নামে কোনো সম্পত্তি আছে কি-না। মোহসীন ভাই তো জানেন না। তাই তিনি কৌশলে তার মায়ের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন। আড়াই মাস আগে মোহসীন ভাই যখন আসেন সেদিন বড় কাকারা কেউ বাড়িতে ছিলেন না। সুতরাং তারা এসবের কিছুই জানেন না৷
নিজের মায়ের নামে এতো জমিজমার কথা শুনে মোহসীন ভাই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তারপর তার নিজের পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন।

শুনতে খারাপ লাগলেও আমার শশুর জমিজমা এসবের প্রতি বেশ লোভী মানুষ। তাছাড়া ওনার জুয়ার নেশার কারণে নিজের জমিজমা সবকিছু তিনি বিক্রি করেছেন। সুতরাং মোহসীন যখন নিজের টাকার কথা প্রকাশ করে তখন আমার শশুর তাকে শর্ত দিয়ে বলে তাকেও কিছু জমির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মোহসীন ভাই রাজি হন৷

মোহসীন ভাইর সঙ্গে তখনই আমার ফেসবুকে এড হওয়া এবং মোবাইল নাম্বার আদান-প্রদান করা হয়। এরপর তিনি চলে গেলেন। যেহেতু সব সম্পত্তি তার মায়ের নামে সুতরাং তাকেই তো দরকার আগে। জমি বিক্রি করে টাকা নিতে হলে জমি রেজিস্ট্রির সময় তো তার মা’কে দরকার হবে। তাই নিজের মা’কে রাজি করানোর জন্য তিনি সময় নিলেন।

কিন্তু এখান থেকে যাবার পরপরই তার মা অসুস্থ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন হাসপাতালেও চিকিৎসা নেন। তাই সহজেই নিজের মনের কথা মায়ের কাছে প্রকাশ করতে পারছিলেন না।
যেহেতু মায়ের নামে জমি তাই সেই জমিতে তাদের সব ভাইবোনের অংশ আছে স্বাভাবিক।
কিন্তু জমিজমা বিক্রি করে আনুমানিক যে টাকা পাওয়া যাবে তার পুরোটাই মোহসীন ভাইয়ের দরকার হবে। সুতরাং নিজের ভাইবোনদের কাছে তিনি সবকিছু গোপন করার প্ল্যান করেন।

সপ্তাহ খানিক আগে আমি আর আমার শাশুড়ী মা ঢাকায় বেড়াতে গেলাম। আমার শাশুড়ীর ভাইয়ের বাসায় ছিলাম। মোহসীন ভাইকে যখন জানালাম তখন তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেন। পরপর দুদিন আমাদের দেখা হয়।
আর তার একদিন পরই মোহসীন ভাই বলেন তার মা নিজেই নাকি গ্রামে যেতে চাচ্ছেন। এমন খবর শুনে তিনি আনন্দে বিমোহিত হয়ে যান। তিনি আমাকে বলেন, আপাতত মা’কে কিছু জানাবেন না৷ যেহেতু মা নিজেই যেতে চাচ্ছেন তাই সেখানে গিয়েই সবকিছু বলার নতুন করে পরিকল্পনা সাজায় মোহসীন ভাই।
এরপর চারটা ট্রেনের টিকিট কাছাকাছি করা হয়। আমি আমার শাশুড়ি আর মোহসীন ভাই সবকিছু জানলেও তার মা কিছু জানতেন না। সেজন্যই পরিকল্পনা করে অচেনা সেজে স্টেশনে আমরা ছবি তুলে প্রথমে পরিচিত হবার নাটক করি। তারপর সিটের সামনে গিয়ে সবকিছু কাকতালীয় সেরকম অভিনয় করে বসি। কিন্তু পাছে আবার তার মা সন্দেহ করে সেজন্য তেমন কথাবার্তা বলি না। আমাদের সবকিছুই প্ল্যান করে করা হচ্ছিল। ট্রেনে মুখোমুখি বসার পরও আমরা দুজন মেসেঞ্জারে কথা বলছিলাম।
স্টেশনে নেমে সেখানে দাঁড়িয়ে ঠাকুরবাড়িতে যাবার উপায় জিজ্ঞেস করার মাধ্যমে প্রথম নিজেদের আসল পরিচয় প্রকাশ হবে এটাও তখন মোহসীন ভাইই বলেছিল মেসেঞ্জারে।

তারপর সেটাই করা হয়। আমরা স্টেশনে নেমে তারপর নিজেরা পরিচিত হচ্ছি সেরকম ভাব করে পুরনো আত্মীয়তার সূত্রটা বের করি। আর তখন একসঙ্গে বাড়িতে আসি।

মোহসীন ভাই বলেছিলেন যেহেতু তার মা নিজ হতে এসেছেন তাই সবকিছু নতুন করে প্ল্যান করা হবে। সুতরাং আমরা চুপচাপ ছিলাম। বাড়ি এসে আমার শশুরের বড়ভাই মানে বড়কাকা রাগারাগি করেন। ফুফু তখন চলে যেতে চান কিন্তু আমি আমার শশুর শাশুড়ী সবাই তাদের রাখার জন্য জোরাজুরি করি। কারণ আমরা তো জানি আসল কাজ তখনও বাকি।
মোহসীন ভাই ঢাকা থেকে আসার সময়ই তার ভাইদের কাছে মিথ্যা বলে আসেন৷ কারণ তারা যদি জানেন তাহলে কোনো সমস্যা হতে পারে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা পারিবারিক কবরস্থানে গেলাম। সেখানে গিয়ে কথাবার্তা বলতে বলতে প্রথম মোহসীন ভাই তার মনের কথা জানান। প্রথমে জমিজমার কথা শুনে তারপর সেগুলো বিক্রি করে নিজের প্রয়োজনের কথা তুলে ধরেন৷
কিন্তু তার প্রস্তাবে রাজি হয়নি তার মা। তিনি খুব রাগারাগি করেন৷ কারণ জমিজমার প্রতি তার আকর্ষণ নাই। তাছাড়া নিজের সব সন্তানের প্রতি তিনি সমানভাবে সবকিছু করবেন।
মোহসীন ভাই বলেছিলেন যে তার ভাই দুজনেই তো ভালো আছে। তিনি আমেরিকায় গিয়ে টাকা ইনকাম করে আস্তে আস্তে ভাইদের ও বোনের সব ভাগের টাকা ফিরিয়ে দিবে। কিন্তু যেভাবেই হোক এখন অন্তত তাকে সবগুলো টাকা যেন দেয়া হয়।
মরিয়ম ফুফু রাজি হচ্ছিল না। তারপর মোহসীন ভাই ও আমার শশুর বাজারে চলে গেলেন। সন্ধ্যা হবার কিছুক্ষণ আগে আমার শাশুড়ির সঙ্গে মরিয়ম ফুফু রাগারাগি করেন। তিনি সবকিছু জানতে পেরে খুব বিরক্ত হয়ে যান৷ তার ধারণা আমার স্বামী যখন তার কাছে বাজারের পাশের জমিটার জন্য গিয়ে পায়নি তখন থেকেই মনে হয় আমরা এসব প্ল্যান করেছি।
এসব নিয়ে তিনি আমার শাশুড়ির সঙ্গে একটু রাগারাগি করেন। সেখানেই আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য দায়ী বা দায়ী নয় এসব প্রসঙ্গ আসে। এবং সেটাই বড়কাকার বাসার কাজের মহিলা হনুফা কাকি শুনতে পায়।
আমি হনুফা কাকিকে দেখে ফুফুকে নিয়ে ছাদে চলে যাই। সেখানে গিয়ে তাকে শান্ত হতে বলি। তিনি আমার কথায় একটু নরম হন। ঢাকায় নিজের বড় ছেলেদের সাথে কথা বলতে চান। আমি মাগরিবের পরে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবার আশ্বাস দিলাম। তারপর রান্নার জন্য আমি নিচে নেমে আসি। ফুফু বলেন তিনি নাকি আরো কিছুক্ষণ থাকবেন। কারণ ছাদে থাকতে তার ভালো লাগছিলো।
আমিও আর জোরাজোরি না করে তাকে রেখেই নিচে নেমে আসি। নিচে এসে রান্না করতে করতে মোহসীন ভাইকে কল দিয়ে বলি যে তার মা তার ভাইদের সঙ্গে কথা বলতে চায়। তিনি আমাকে বলেন যে তিনি আসার আগ পর্যন্ত আমি যেন কথা না বলাই।

মাগরিবের আজান হলে আমি অজু করে নামাজ পড়ি। ভেবেছিলাম ফুফু নিশ্চয়ই এসেছে। কিন্তু নামাজের পড়ে আমার শাশুড়ী এসে জানান যে ফুফু ঘরে নাই। আমরা চারিদিকে খুঁজে তারপর আমি ছাদে গিয়ে কোথাও তাকে দেখতে পেলাম না। নিচে এসে শাশুড়ির কাছে বলি। আবারও দুজন মিলে ছাদে গিয়ে ভালো করে খুঁজি। তারপর কি মনে করে যেন চিলেকোঠার ঘরে হঠাৎ উঁকি দিয়ে আমরা ফুফুর মরদেহ দেখতে পেলাম। তারপর কল দিয়ে আমার শশুরকে জানাই। তারা দুজন ছুটে আসেন। সবকিছুই দেখেন।
এতকিছুর মধ্যেও মোহসীন ভাইর ব্রেইন ভালো কাজ করে। তিনি আমাকে বলেন আমাদের পূর্ব পরিচয় এবং জমিজমার পরিকল্পনা কেউ যেন জানতে না পারে। কারণ সেরকম কিছু জানলে সবাই আমাদের সন্দের করবে। সুতরাং আমি ও আমার শশুর শাশুড়ী সাবধান হয়ে গেলাম।

তারপর থেকে তো আপনারা সবকিছু জানেন। আপনারা আসেন, জিজ্ঞেসাবাদ করেন। যা যা জিজ্ঞেস করেন সবকিছুই বলেছি। হ্যাঁ এটা সত্যি যে আমরা কথা লুকিয়েছি কিন্তু বিশ্বাস করেন আমরা কেউ খুনের সঙ্গে জড়িত নয়। নিজেরা ভয় পেয়ে এসব গোপন করেছি৷

কল্পনার এসব বক্তব্য শেষ হতেই সাজু চুপচাপ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। তার দৃষ্টি তখন বাড়ির উঠোনে মোহসীনের লাশের দিকে।
কল্পনা বললো ,
মোহসীন ভাই এগুলো সবকিছুই আজকে আপনার সঙ্গে স্বীকার করতে চেয়েছিলেন। কাল গভীর রাতে তার সাথে আমার কথা হয়। তিনি নিজেকে অপরাধী ভাবেন। মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী ভাবেন নিজেকে। অবশ্য মাঝখানে তিনি আমাকেও সন্দেহ করেন রাতে। তার হয়তো ধারণা হয় যে আমি সন্ধ্যা বেলা ছাদে গিয়ে নিজের স্বামীর সেই মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে পারি। কিন্তু বিশ্বাস করেন সেরকম কিছু ঘটেনি। আমি ততটা সাহসী নয়। তাছাড়া আমার স্বামীকে আল্লাহ নিয়ে গেছেন। যতই যা করি তাকে তো আর ফেরত পাবো না।

এরপর মোহসীন ভাই রাতে বাসা থেকে বের হয়ে যান। তার দমবন্ধ লাগছিল৷ তিনি বারবার বলেন সকালে তিনি আপনার কাছে সবকিছু বলবে। এটা বলে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে যান। আমি পিছনে পিছনে নেমেছিলাম কিন্তু পাইনি তাকে৷

কাছাকাছি অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। এসআই শাহরিয়ার বললো ,
“ তাহলে মোহসীনকে সকালের আগে আপনারা আর দেখেন নাই? ”
“ নাহ। ” জবাব দেয় কল্পনা।

শাহরিয়ার বললো, “ মোহসীন কেন সুইসাইড করলো বুঝতে পারছি না। সে যদি তার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী না হয় তাহলে তো নিজেকে নিজে শেষ করবে না। মায়ের হত্যাকারী হলে নাহয় অপরাধবোধ অনুভব করে বা ডিপ্রেশনে কাজটা করতে পারতো। ”

তার প্রশ্নের জবাবে সবাই তাকিয়ে রইল। মালেক মুন্সি ও সালেক মুন্সি তারাও দাঁড়িয়ে আছে। সাজু বললো ,
“ মোহসীন আত্মহত্যা করেনি ভাইয়া। ”

মোহসীনের বিষয় এরকম কথা শুনে সবাই সাজুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

“ কি বলছো সাজু? এটা কি তাহলে মার্ডার? ”

“ হ্যাঁ ভাই। ”

“ কিন্তু কীভাবে? ”

সাজু তার পকেট থেকে একটা ব্রেসলেট বের করে সেটা চোখের সামনে তুলে ধরেন। কিছুক্ষণ আগে কাঁঠাল গাছের একটু সামনের স্থানেই এটা সাজু ভাই পেয়েছে। যেখানের পরিবেশ দেখে আরো বোঝা যাচ্ছিল যে নিশ্চয়ই সেখানে কোনো ধস্তাধস্তি হয়েছে। আর তার সাইডেই পড়েছিল এই ব্রেসলেট৷
সাজু চোখের ইশারায় মালেক মুন্সির কাজের ছেলে আকবরকে ডেকে আনেন৷ আকবর কাছে এসে দাঁড়ায়। সাজু তাকে বলে ,

“ গতকাল রাতে কফির দেওয়ার সময় এই সুন্দর ব্রেসলেটটা আপনার হাতে ছিল। দেখুন তো এটা চিনতে পারেন কি-না। ”

আকবর কাচুমাচু ভঙ্গিতে এদিক সেদিক তাকায়। কিন্তু তার দৃষ্টি বারবার মালেক মুন্সির দিকে। যেন সে নিজেকে রক্ষা করার জন্য মনিবের সাহায্য চাইছে। হলোও তাই।
মালেক মুন্সি বলেন ,

“ সকালে পড়েছে মনে হয়। কি যেন কাজে আসছিল তখন পড়েছে। ”

সাজু সামান্য হাসে৷ আকবর নিজেই কথার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে ঠিকই কিন্তু কথার ধরনে সবাই বুঝতে পারে কথা মিথ্যা। শাহরিয়ার বললো,
“ তাহলে তো সকালে মোহসীনের লাশ ওনার দেখার কথা। ”

মালেক মুন্সি চুপ করে রইলেন।
সাজু বললো ,

“ আকবর ভাই, পানি যত ঘোলা করতে চাইবেন ততই ঘোলা হবে। কিন্তু একসময় আপনাকে ক্লান্ত হতেই হবে। আর তখন আবার পানি সেই আগের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। একটা খুনের দায় থেকে নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে আপনি আবার আরেকটা খুন করেছেন। ”

মালেক মুন্সি বলেন , “ কি যা বলেন। ও কেন খুন করবে? ”

সাজু বলে, সেটা তাকেই জিজ্ঞেস করেন।
আকবর ভাই, আপনি কিন্তু পুরোপুরি ধরা পড়েছেন তাতে সন্দেহ নেই। কারণ মোহসীনের শরীরে অবশ্যই আপনার হাতের ছাপ পাওয়া যাবে। কারণ লাশ পোস্টমর্টেম করা হবে। এখনই যদি সবকিছু সবার সামনে স্বীকার করেন তবে শাস্তি কিছু কম হতে পারে।

আকবর সহজসরল মানুষ। সে দৌড়ে এসআই শাহরিয়ারের পা চেপে ধরে বলে ,
“ স্যার আমারে মাফ করে দেন। আমি আমার ইচ্ছায় কিছু করিনি। আমার দোষ নাই। ”

উপস্থিত সবাই আতঙ্কিত হয়ে যায়। আকবর এতো সহজে স্বীকার করবে সাজুও কল্পনা করতে পারে নাই। গ্রামের সহজসরল মানুষ হলে করতে পারে স্বাভাবিক। কিন্তু সে বলছে নিজে কিছু করে নাই। তাহলে কার কারণে করেছে? সাজু তাকে দাঁড়াতে বলে।

“ তাহলে কেন করেছেন? কার হুকুমে? ”

“ কাকার হুকুমে। ” হাতের ইশারায় মালেক মুন্সিকে দেখায় আকবর। আবারো সবাই নড়েচড়ে দাঁড়ায়।

মালেক রাগে গজগজ করে।
“ কি ফালতু বকবক করিস? ”

আকবর বলে “ স্যার ওনার বোনকেও উনিই খুন করছে। হনুফা সাক্ষী, আপনারা হনুফার কাছে জিজ্ঞেস করেন। ’’

“ হনুফাকে কেন জিজ্ঞেস করবে? ” চিৎকার করতে শুরু করে মালেক মুন্সি। তাকে হাত দিয়ে চেপে থামিয়ে দেয় এসআই শাহরিয়ার।

হনুফাকে সামনে আনা হয়। সে থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। সাজু তাকে নির্ভয়ে সবকিছু বলতে বলে।
হনুফা যা জানায় তা সাজিয়ে লিখে দিলে যেমন দাড়ায় সেটা নিম্নরূপ:

বছর খানিক ধরে মালেক মুন্সির স্ত্রী অসুস্থ। তাই নিজের যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য তিনি বারবার হনুফাকে ব্যবহার করেন। হনুফা কাজ করে, গরীব মানুষ। টাকাপয়সার লোভে এবং ঝামেলা এড়াতে সবসময় নিজের সতীত্ব বিলিয়ে দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা বেলা কাপড় তোলার সময় সে যখন মরিয়ম, কল্পনা ও তার শাশুড়ীর কথাবার্তা শুনছিল তখন মালেক মুন্সি তাকে ডাকে। হনুফা কাছে যেতেই তিনি শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেয়। বেশিরভাগ সময় তারা চিলেকোঠার ঘরে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হতো৷
তাই সেই কারণেই সন্ধ্যায় ছাদে গিয়ে নিজেরা যৌন চাহিদা মেটানোর জন্য চিলেকোঠার ঘরে যায়। ছাদ তারা নিজেরা বন্ধ করে দেয়। যেন কেউ তখন ছাদে যেতে না পারে। কিন্তু আগে থেকেই যে চিলেকোঠার পিছনের দিকে মালেক মুন্সির বোন মরিয়ম আছে সেটা দুজনের কেউ জানতেন না।
তাদের কাজের মধ্যে হনুফা হালকা শব্দ করে। দুজনেই তো জানতো কেউ ছাদে নেই তাই তেমন কথা বলতে সমস্যা হবে না। শারীরিক সম্পর্কের সময় যেসব কথাবার্তা হয় সেরকমই কথা হচ্ছিল। মাঝখানে নিজের কিছু চাহিদার কথাও প্রকাশ করে হনুফা।
বাহিরে মাগরিবের আজান হয়। তাদের কাজ শেষ হতেই মালেক মুন্সি তাড়াতাড়ি দরজা খুলে। হনুফা তখনও শাড়ি ব্লাউজ ভালো করে পরতে পারে নাই। দরজা খুলেই সামনে দেখা যায় মালেক মুন্সি মর বোন মরিয়ম দাঁড়িয়ে আছে। তিনি ভিতরে হনুফাকে দেখতে পান। বুঝতে পারেন ভিতরে কি চলছিল।
নিজের ভাইকে তখন চরিত্রহীন বলে বারবার বকাবকি করে মরিয়ম। মালেক মুন্সি নিজের সম্মানের কথা চিন্তা করে আর তৎক্ষনাৎ বিবেচনাবোধ হারিয়ে নিজের বোনকে নিজেই সেখানে খুন করেন।
তারপর দু’জনেই নিচে নেমে আসে এবং এমন ভাবে থাকে যেন কিছু জানেন না তারা।

হনুফার মুখে সবকিছু শুনে সাজু আর কিছু বলে না। এসআই শাহরিয়ার মালেক মুন্সির দিকে তাকিয়ে বলে ,
“ ছি ছি ছি, এরকম জঘন্য কাজ করে আবার সেই কারণে দু দুটো খুন করে দিলেন? ”

মালেক মুন্সি রাজনৈতিক মানুষ। কিন্তু অপরাধ তো সবার জন্য সমান। হনুফা সবকিছু স্বীকার করার পরে আর নিজেকে নির্দোষ দাবি করার হাস্যকর কথা বললেন না।
সবকিছু স্বীকার করেন। এমনকি রাতে তিনি মোহসীনকে নিচে নামতে দেখে আকবরকে সঙ্গে নিয়ে তাকেও খুন করার প্ল্যান করেন। কারণ মালেক মুন্সি দেখেছেন যে পুলিশ বারবার তার ভাগ্নে মোহসীনকে সন্দেহ করছে। সুতরাং যদি মোহসীনকে সুইসাইড করার মতো সাজানো যায় তাহলে সবাই ভাববে যে নিজের মাকে খুনের প্ল্যান পরিকল্পনার জন্য মোহসীন মরেছে। আর আকবর ও হনুফা তার বাসার দীর্ঘদিনের কাজের মানুষ। তারা কাউকে বলবে না এটাই ছিল তার বিশ্বাস।

এসআই শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে সাজু বললো , “ বাকিটা আপনার হাতে ভাই। আমি এখনো নাস্তা করিনি। আপনি কাজ করেন। আমরা চলে যাচ্ছি। ”

বিদায় নিয়ে সাজু ভাই ও তার বন্ধুরা বাসা থেকে বের হয়ে যায়। একদম রাস্তায় ওঠার আগে আগে পিছন থেকে কল্পনার ডাক আসে। কল্পনার দিকে তাকিয়ে সাজু বলে ,

“ কিছু বলবেন? ”
“ নাহ, ধন্যবাদ দিতে আসছি। এভাবে যদি সব না বে হতো তাহলে আমাদের আরো ঝামেলা পোহাতে হতো। ”

সাজু মুচকি হেসে বলে “ আপনাদের লুকানো কথাগুলো বলার জন্য আপনাকেও মেলা মেলা ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সবসময়। ”

সমাপ্ত।