নিকৃষ্ট_মানব_বাসনা
পর্ব=2
জয়ন্ত_কুমার_জয়
বাবার কা”মুক চাহনি,শালিক নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।শালিক বুঝলো কেনো বান্ধবী রেশমি তার ভাইকে পড়াতে আসতে বলেছে।
শালিক বাবাকে বাঁধা দেবে তার আগেই বাবা তাকে জ”ড়িয়ে ধরলো।শালিক প্রাণপণে চাচ্ছে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে।সে চায়না বাবাকে হাতেনাতে অপমানের মুখে ফেলতে।এ বিষয়ে পরে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।যতোই হোক,বাবা তো!
কিন্তু পরিস্থিতি নাগালের বাহিরে।শালিক এক পর্যায়ে সজোড়ে এক লা”থি বসালো বাবার পে”টে।তিনি সঙ্গে সঙ্গে পে”ট চেপে অস্ফুটে স্বরে চেঁচিয়ে মেঝেতে পরে গেলেন।শালিকের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।বাবাকে সে লা”থি মে”রেছে!কিভাবে পারলো সে! এর আগে মৃ”ত্যু কেনো হলো না!
শালিক হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো।ছুটে বাইরে চলে গেলো।আর যাইহোক বাবাকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না বোরখার আড়ালে ছেলেকে পড়াতে আসা মেয়েটা নয়,তার নিজের মেয়ে ছিলো।
বাড়ির একটু সামনে পার্লার।সেখানে বোরখা খুলে ঘন্টাখানেক বসে কাঁদলো শালিক।পার্লারের মেয়েরা ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো শালিকের দিকে।
সন্ধায় বাসায় ঢুকে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আঁটকে দিলো শালিক।মা রান্না করছিলো,শালিককে দেখে তিনি ব্যস্ত হয়ে মেয়ের ঘরে গেলেন।দরজা ইতোমধ্যে ভেতর থেকে আটকানো।তিনি আতঙ্কিত হয়ে মেয়েকে ডাকলেন ” শালিক,মা শালিক দরজা খোল।কোথায় ছিলিস সারাদিন?”
শালিক ভেতর থেকে ” মা বিরক্ত করো না তো ”
মেয়ের স্বর শুনে তিনি হকচকিয়ে গেলেন।বিস্মিত হয়ে ” তোর স্বর এমন হয়ে গেলো কিভাবে,কাঁদছিস নাকি?কি হয়েছে? ”
” মা প্লিজ এখন যাও।আমায় একা থাকতে দাও ”
” কি হয়েছে বলবি তো ”
শালিকের ঘর থেকে বিকট একটা শব্দ হলো।শালিক ভারী কিছু একটা মেঝেছে আছাড় দিয়েছে।মেয়ের রাগ বুঝে তিনি গেলেন মাঠে।সেখানে ছোট ছেলে ব্যাটমিন্টন খেলছে।তিনি ছেলেকে কাছে ডেকে
” বাড়িতে চল ”
” মা আমি খেলছি তো ”
” অনেক হয়েছে খেলা।তোর দিদি কেমন যেন করছে।আমার ভয় লাগছে খুব ”
শালিকের ছোট ভাই কিছুক্ষন ডাকাডাকি করলো।কোনো সাড়া নেই।
ঘন্টাখানেক পর শালিক বাইরে বের হলো।বসার ঘরের সোফায় বসে বাবাকে টিভি দেখতে দেখে ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নিয়ে মাকে বললো
” চা করো মা।চা খাবো ”
মেয়েকে দেখে তিনি হকচকিয়ে বললেন ” একি অবস্থা তোর!কেঁদে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলছিস ”
” এটা আমার পাপের শাস্তি মা।তুমি চা করো,মাথা ধরেছে ”
মেয়ের কথা তিনি ফেলেন না।চা করতে গেলেন।শালিক রেশমীর নাম্বারে কল দিলো।রেশমি কল ধরলো।দু’জনেই নীরব।একপর্যায়ে শালিক কান্নার রেশ চেপে রেখে বলল ” আমি কি করবো রে, সু”ইসাইড করার চেষ্টা করেছি।অতো সাহসও হয়ে উঠছে না ”
রেশমি বললো ” আমি বুঝতেছি তোর মনে কি চলছে।এতে তোর কোনো দোষ নেই।ভুলভাল কিছু করিস না প্লিজ! ”
” আমার বাবা যে এরকম!চোখের সামনে সব এলোমেলো হয়ে গেছে রে ”
এমন সময় চা হাতে মা ঘরে ঢুকলো।ঢুকেই বললো ” কি এলোমেলো হয়েছে? কাকে এলোমেলো হওয়ার কথা বলছিস? ”
শালিক কল কে”টে বললো ” কাউকে না।চা এনেছো,দাও ”
তিনি চায়ের কাপ হাতে দিলেন।শালিক নির্বিকার ভঙ্গিতে চায়ে চু!মুক দিলো।পুরো সময়টা মা শালিকের সামনেই বসে রইলেন।চা খাওয়া শেষে মা বললো
” চায়ে মিষ্টি দিইনি।তুই স্বাভাবিক থাকলে এই চা এক চুমুকেই থু দিয়ে ফেলে দিতিস।কি হয়েছে মা বলবি? ”
শালিক মাকে জড়ি!য়ে ধরলো,কেঁদে বললো ” আচ্ছা মা,মানুষ চেনা কি এতোই কঠিন? ”
” হঠাৎ এই প্রশ্ন? ”
” কি করে বলবো তোমায়! বাবা আজ… ”
কথাটা বলতেই শালিক থেমে গেলো।বাবাকে নিয়ে এসব কিভাবে বলবে সে!মা বললো
” তুইও কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলছিস।তোর বাবাও গম্ভীর হয়ে আছে।প্রেসারের ওষুধ খেলো একটু আগে।ওনাকে নিয়ে তো আমার ভয় করে ”
” কিসের ভয়?উনি আমাদের আশ্রয়স্থল,উনি না থাকলে আমরা ভেসে যাবো এই ভয়? ”
শালিকের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মা বললো ” এটা কি কথা বললি রে মা! তোর বাবাকে নিয়ে আমাকে একটা বাজে কথা বলতে দিস না,সেই মেয়ে আজ এসব বলছে! ”
” আমি পৃথিবীর কাউকে আর বিশ্বাস করতে পারবো না মা।তুমি চলে গেলে আমি দরজা বন্ধ করবো।কাল সকালের আগে আমাকে ডাকাডাকি করবে না।যাও ঘর থেকে,একা থাকতে দাও ”
সারারাত শালিকের ঘুম হলো না।বাবার মুখ মনে করতেই ঘৃণা লাগছে।কি বাজে দৃষ্টি,ছিহ!শালিক বাথরুমে গিয়ে বমি করলো।
ঠিক করতে পারছে না এখন কি করা উচিত। বাবার চরিত্র সবার সামনে বলে দেবে?সেটা কিভাবে সম্ভব! বাবাকে যে বড্ড ভালোবাসে! কিভাবে বললে তার বাবা পড়াতে আসা বান্ধবীকে কুপ্রস্তাব দিয়েছে!যাকে দেবতার আসনে বসিয়েছে তাকে নর্দমায় কিভাবে নামাবে! কিন্তু এই অন্যায় মেনে নেওয়াও যায় না।
মায়ের জন্য বড্ড মন খারাপ হয় শালিকের।সাধাসিধা মা যখন জানবে তার স্বামীর চরিত্র এরকম,মেনে নিতে পারবে তো?মায়ের এমনিই হার্ট দূর্বল,আর বাবাকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করে।শুধু মা কেনো,শালিকও পৃথিবীতে ওই একজনকেই ভরসা করতো।এই প্রতিদান?
একবার করে চিন্তায় আসে, বাবাকে আইনের আওতায় আনবে।তখন ভাবে,মধ্যবিত্ত সংসারে ছোট ভাই,মাকে নিয়ে কিভাবে সংসার চালাবে!এ দেশে মেয়েদের চাকরি করে সংসার চালানো আজগুবি ভাবনা ছাড়া কিছুই না।পুরো পরিবারটাই ভেসে যাবে।তচনচ হয়ে যাবে সবার মানসিক অবস্থা।
শালিক একপর্যায়ে নিজের চুল নিজেই টানতে লাগলো।মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে মুখ চেপে কান্না করতে লাগলো৷
পরেরদিন সকালে শালিকের ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের আতঙ্কিত স্বরে।তিনি শালিকের ঘরের দরজায় শব্দ করে ডাকছেন।শালিক দরজা খুলতেই মা তার হাত ধরে বললো
” বাড়িতে পুলিশ এসছে।ওরা বলছে তোর বাবার নামে অভিযোগ আছে।আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে ”
চলবে?