#প্রণয়ডোর
#লেখিকা_রামিশা_তাসলিম
#পর্ব-সাত
মার্কেটের ভিড় যেন বাড়ছেই ক্রমশ। আর তাতেই যেন আনন্দকে লুফে নিচ্ছে ফারিয়া। মেয়েটা অদ্ভুত প্রকৃতির। ভীড় জনসমাগম তার ভীষণ প্রিয়। অপরদিকে শুভ্রা তার উল্টো। এইসব একদম তার কল্পনার বাহিরে। মার্কেটে এসেছে ঘন্টা দু এক হলো। আর এর মধ্যে পুরো মার্কেট ঘুরে ঘুরে মাত্র একটা পোশাক কেনা হয়েছে। আরো বাকি চারটে পোশাক। ফারিয়া পোশাকগুলো কার জন্য কিনছে, তা শুভ্রা জানেনা। শুধু বান্ধবীকে সময় দিবে সেজন্যই সে আছে সাথে। শুভ্রা ফারিয়ার দিকে তাকায় । মেয়েটা তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে দোকানদারের সাথে কথা বলছে। কথা বলা শেষে বিরক্তি মাখা চাহনি নিয়ে পিছনে হেঁটে শুভ্রার কাছে আসে ।
— শুভু ? চল না ফুচকা খাই ! ”
মেয়েটার কপালে ইতোমধ্যে ঘাম জমে গিয়েছে। চোখে মুখে তা চিকচিক করছে। শুভ্রা জানে মেয়েটার ফুচকা ঠিক কতটা প্রিয়। সেই সাথে তারও। তাই আর না ভেবে বান্ধবীর হাত ধরে মার্কেট থেকে বাইরে বের হওয়ার গেইটের দিকে যায়।
~~
মিনিট পাঁচেক পর মল থেকে বের হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা ফুটপাতের দোকান থেকে ফুচকা খাবে। পরিবেশটাও নিস্তব্ধ হয়ে যায় মুহূর্তে। মৃদ্যু বাতাস হইতে শুরু করে। এ যেনো এক মনোরম হাওয়া। ইতিমধ্যেই তাদের শরীর শীতল হতে শুরু করে। এরমাঝেই শুভ্রা ফুচকাওয়ালার সাথে কথোপকথন শুরু করে ,
— মামা , ফুচকা হবে না ? ”
— হ মামা। কয় পেলেট ? ”
— দুই প্লেট মামা। একটা তে ঝাল অতিরিক্ত বেশি দিবেন। ”
— আইচ্ছা। ”
এটুকু শুনেই ফারিয়া নাক সিটকিয়ে শুভ্রা কে বলে,
— কিরে ! এতো ঝাল তোর জন্য নিচ্ছিস ? ”
শুভ্রা উত্তর দিতে নেয় তার আগেই কন্ঠস্বর আসে পুরুষালী কন্ঠের।
— তা খাবে না ? পরে পেট খারাপ করলে , দৌড়ে দৌড়ে চলে আসবে আমার কাছে ফ্রী ট্রিটমেন্ট নিতে। জানি না বুঝি ? সব জানি ! ”
হুট করে এমন কথা শুনে আহাম্মক হয়ে যায় শুভ্রা। বিস্মিত আখিযুগল নিক্ষেপ করে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির দিকে। পিলে চমকে উঠে তার। মুখে বলে, আপনি …?
— ড: ইয়ানাত তাসবি । এনি ডাউট ? ”
— ন,,নো ! ”
ইয়ানাত তাসবি নামটা শুনে ফারিয়া ভাইয়া বলে চিৎকার করে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে। এতে আরো বিস্মিত হয় শুভ্রা। মুখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে শুভ্রা কে উদ্দেশ্য করে বলে,
— আ,,রে,,, তোকে বলতাম না আমার একটা ভাই আছে ? পেশায় ডাক্তার। তো এই হচ্ছে আমার ভাই ডঃ ইয়ানাত তাসবি । ”
— আরে ইনিই তো আমার ট্রিট,,,,! ”
— থামুন তো , আপনার ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে মামা দাঁড়িয়ে আছে । ফুচকা টা খেয়ে নিন । ”
তাসবির কথা শুনে দমে যায় শুভ্রা। তার মনে হলো তাসবি যেনো তাকে থামিয়ে দিলো। সেও আর কথা না বাড়িয়ে ফুচকা খেতে শুরু করল। একটা দুটো তিনটে করে খেতে খেতে যখন সে একেবারে সাতখানা ফুচকা খেয়ে নিল তখন তার মুখ একেবারে লাল বর্ন ধারণ করেছে। ঝালে মুখ থেকে টু শব্দ বের হচ্ছে না। শুধু অনবরত চোখ থেকে জল পড়ছে। তাও বলছে না যে ফারিয়া আমার একটু জল লাগবে। ফারিয়াও চুপচাপ শুভ্রার ধৈর্য শক্তি পরীক্ষা করছে। এবার ফারিয়া না পেরে মামাকে পানির কথা বললে মামা পানি নেই বলে দেয়। নিজের ভাইকেও দেখে অদূরে দাঁড়িয়ে ফোনালাপ করছে। ভাইকে আর বিরক্ত করতে চাইলো না সে। শুভ্রা কে আসছি বলে ফুচকার প্লেইট রেখে পার্স নিয়ে রাস্তা পার হতে নেয়। তখনই সেই রাস্তা দিয়ে শো করে চলে গেলো মালভর্তি ট্রাক। মুহূর্তেই রক্তাক্ত হলো পুরো রাস্তা। চিৎকার করে উঠে শুভ্রা। সেই চিৎকারে পেছন ফিরে তাকায় তাসবি। হতবিহ্বল সে। অবিশ্বাস্য চাহনী তার। ডান হাতটা সাথে সাথে বাম বুকে চলে গেলো। বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো যেনো তাসবির।
— চলবে ?
#প্রণয়ডোর
#লেখিকা_রামিশা_তাসলিম
#পর্ব- আট
চোখের পলকেই ট্রাকটা চলে গেলো। তাসবি পিচঢালা রাস্তার দিকে তাকালো। লাল পদার্থ মিশে। আছে সেখানটায়। আর পাশেই ফারিয়া কে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে একজন মহিলা। তাসবির চোখ সেখানটায় আটকাতেই ধীর পায়ে শুভ্রার কাছে গিয়ে তার হাত ধরে রাস্তা পার হলো । তাসবির চোখের পানিগুলো চিকচিক করছে। কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে ,
— মা ! আজ যদি তুমি না থাকতে তবে,,,। ”
— রিলাক্স তাসবি । এতো ইমোশনাল হওয়ার টাইম নেই । আগে গাড়িতে আসো , সবটা বলছি । ”
— আন্টি,,,! ”
শুভ্রার চোখে মুখে অবিশ্বাস্য চাহনী। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। একে একে মা মেয়ে ভাই সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। তার কথা শুনে ভদ্র মহিলা বললেন ,
— তুমিও আসো , সবটা খুলে বলছি। আর রাস্তার লাল পদার্থ টা একটা ক্যামিকেল। কোনো রক্ত না। ফাইয়াজ মির্জা যেনো এটাই বিশ্বাস করে সে জন্যই এইটা করানো। ”
ভদ্র মহিলার মুখে নিজের বাবার কথা শুনে চমকে উঠে শুভ্রা। চমকিত কন্ঠেই ‘বা,,বা’ কাঁপাকাঁপা স্বরে উচ্চারণ করে। ততক্ষণে ভদ্র মহিলা গাড়িতে উঠে বসেছেন। তাসবিও এগিয়ে যায় তার সাথে।
গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসেছে ড্রাইভার আর তাসবি। বেক সিটে বাকী তিনজন। ভদ্র মহিলা এসির পাওয়ার কমিয়ে বলতে শুরু করলেন ,
— আসলাম মির্জা আর ফাইয়াজ মির্জা। দুজনেই বন্ধু ছিলো। খুব কাকতালীয় ভাবে তাদের মির্জা পদবী মিলে যাওয়াতে সবাই ভাবতো তারা দুই ভাই। দুজনেই বিজনেস পার্টনার ছিল। বিজনেস সুবিধার জন্য তারা কাউকে বলতো না যে তারা দুজন ভাই না বরং বন্ধু। কেননা তারা যে ভাই এটা জানলে কেউ তাদের সাথে শত্রুতা করতে আসবে না। সেইজন্যই তারা ভাই হিসেবে থেকে যায়। একসাথে বিয়েও করে। তবে আলাদা কাউকে নয়। দু যমজ বোনকে। আমরা ছিলাম দু বোন এক ভাই। বোন সামাইরা আহমেদ শিলু আর আমি সাইয়্যারা আহমেদ বিনু । বিয়ের পর আহমেদ মির্জা হই দুজনেই। দুজন একই ফ্ল্যাটে থাকতাম। আসা যাওয়াও খুব হতো। তুমি ছিলে যখন ৪ বছরের। তখনই আলাদা হয়ে যাই দুজনে। কারন টা ছিলো ব্যবসা জনিত কারনে। আমার হাসবেন্ড বাইরের টা চালাতো আর তোমার বাবা দেশের টা। তাই আমরা দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিলাম। তারপর তাসবি একদিন অফিসের কি জানি একটা কাগজ ছিড়ে ফেলে দিয়েছিলো। তখন ওর বয়স ছিলো ১০ বছর। বেশ ভালোই বুঝে। তবে খেলতে গিয়ে ওটা ছিড়ে ফেলে। সেদিন তোমার বাবা ওকে বেধরম মেরেছিলো। তাসবির এক দাঁত তো এক চড়েই ফেলে দিয়েছিলো। আমার স্বামী শুধু দেখেছিলো , তার বোধগম্য হয়নি তার ছেলেকে এভাবে কেউ মারবে । তারপর অনেক করে তাসবি কে আলাদা করে সে কিছু না বলে প্রোপার্টি আলাদা করে দিয়ে চলে আসে এখানে। বিদেশেই সেটেল্ড হওয়ার চিন্তা ভাবনা থাকে আমার। বোনের প্রতিও ক্ষোভ জন্মে আমার। সেই জন্যই যোগাযোগ বন্ধ করে দিই ওর সাথে। তারপর একদিন শুনি , তুমি পাহাড়ের উপর থেকে পড়ে গিয়েছিলে । আর সেই কাজটাই করেছিল স্বয়ং তোমার বাবা ফাইয়াজ মির্জা। তবে ভেবো না যে, তুমি যে বাড়িতে আছো সে বাড়ির লোক ফাইয়াজ মির্জা না। কাকতালিয়ভাবে তার মেয়ের সাথে তোমার মিল রয়েছে। বলা যায় অনেক মিল। কিন্তু ডিএনএ টেস্ট করে তুমি দেখতে পারো , ম্যাচ করবে না ডিএনএ। যাই-হোক , তিনি তার মেয়েকে এইজন্য পাহাড় থেকে ফেলে দিয়েছিলেন কেননা তার অন্য জায়গায় সম্পর্ক ছিল। যাকে বলে পরকিয়া। মহিলাটি ছিলো ফাইয়াজ মির্জার ফুফাতো বোন। দেশের বাইরে থাকতো এতোকাল। তারপর ছলে বলে কৌশলে ফাইয়াজ মির্জার মনে ঠায় করে নেয়। শিলু জানতো এই পরকিয়ার কথা। নিথিয়ার তখন ৭ বছর হবে হয়তো। আর এই নিথিয়া’ই শুভ্রা। কে’ই বা জানতো ? এই মেয়েটা বড় হয়ে গিয়েছে সাত বছর বয়সেই। বাবার কুকর্মের কারনে স্কুলে তাকে অধিকাংশ মেয়েরাই খোঁচা দিতো। নিথিয়া সব হজম করে নিতো। অবশেষে ফাইয়াজ মির্জা শিলুকে সংসার ছাড়তে বলে। কিন্তু শিলুর একটা কথাই ছিল যে, তাদের যেহেতু মেয়ে আছে, তাই সে তার সংসার ছাড়বে না। মেয়ে না থাকলে একটা কথা ছিল। সেই সুবাধেই সেদিন লোক লাগিয়ে নিথিয়া কে পাহাড় থেকে ফেলে দেয়। আর তারপর,,,,। ”
এটুকু বলেই থেমে যায় ভদ্র মহিলা। এতক্ষণের কথাগুলো শুনে শুভ্রা নামক মেয়েটার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট হলো। পুরনো ক্ষত বোধহয় জাগ্রত হলো আবার। মুহুর্তেই শান্ত চেহারাটায় অগ্নিকন্যা রুপ নিল। শুভ্রাকে দেখলে এখন যে কেউ নিঃসন্দেহে বলবে যে মেয়েটা অত্যন্ত রাগী। যেটা ছিলো ছোট বেলাতেই। তবে পরিস্থিতি তাকে অনেক সংগ্রাম করে রাগ আয়ত্তে রাখতে শিখিয়েছে। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই তো সে নিজেকে শুভ্রার রুপ দিয়েছে। অনন্য একটা ব্যক্তিত্ব তৈরি করেছে। এবার নিজের চিন্তা বাদ দেয় তাসবির করা প্রশ্নে,
— তারপর ? ”
— তারপর আর কি ? শিলু কোথায় থাকে কি করে কি না করে কিচ্ছুটি আমি জানি না। জানার অনেক চেষ্টা করেছি , কিন্তু আমি সফল হয়নি। সেদিন হাসপাতালে যখন আমি শুভ্রার হাতের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সেদিন আমি ওর হাতের জন্ম দাগটা দেখে নিয়েছিলাম। সুর হওয়ার জন্য তার ডিএনএ আমার ডিএনএর সাথে ম্যাচ করিয়েছিলাম। ডিএনে ম্যাচ না করলেও রিপোর্ট থেকে বোঝা গিয়েছে যে আমাদের বংশের ই কেউ। আরো নিশ্চয়তার জন্য আমি ওর সব চেক করলাম। শুধু ভোটার কার্ডে শিলু নামটাই পেলাম। বাকি সব ছিল ফেক। এরপর তো আমি জানিনা বাকিটা নিথিয়া মির্জা আই মিন শুভ্রা বলবে।
শুভ্রা আর না ভেবে শান্তা গলায় বলতে শুরু করে।
-চলবে?
#প্রণয়ডোর
#লেখিকা_রামিশা_তাসলিম
#পর্ব-নয়
সব চিন্তা রেখে শুভ্রা বলতে শুরু করে ,
— প্রথম কয়েক বছর আমার স্মৃতি মনে ছিলো না। তিন বছর আগেই স্মৃতি পেয়েছি। আমি জানি আমার মা-বাবার কালো অতীত। আর সেই নেওয়াজ কেই শাস্তি দিতে এতোদূর এসেছি। আমি মেডিকেলে পড়লেও আমার অন্য আরেকটা আইডেন্টিটি আছে। স্পেশাল গোয়েন্দা ব্রাঞ্চের মেইন লিডার আমি। আমার কাজের সূত্রে ওই নেওয়াজের কাজ টা আমার উপরেই পড়েছে। নেওয়াজ অনেক বড় দাগী ক্রিমিনাল। ওকে ধরতে পুরো টিম প্ল্যান করছে। কিন্তু সব ফেইল হচ্ছে। এবার আমি মুখোমুখি হবো। এতিমখানা থেকে আমার ওই চাচা-চাচিরা এনে আমার ভালোই করেছে। চিনতেই পারেনি নেওয়াজ প্রথমে। এখনো আমাকে চেনে কি না জানিনা। কারন , চিনবেই বা কীভাবে ! আমার আসল চেহারা কেউ দেখেইনি এখনো । ”
এটুকু বলে থেমে যায় শুভ্রা । আর চমকে যায় তাসবি সহ বাকী দুজন। তাসবি সন্দিহান কন্ঠে বলে ,
— মানে ? ”
তাসবির কথা শুনে মুচকি হাঁসে শুভ্রা। তার দিকে উদ্দেশ্য করে বলে ,
— আর এক্টিং নয় মিস্টার ইয়ানাত তাসবি । সবটা বলে ফেলার সময় এবার এসেছে। ”
এবার শকড হয় বাকী দুজন । শুভ্রার এমন কথা শুনে তাসবি আমতা আমতা শুরু করে। তারপর শুভ্রা তাকে থামিয়ে নিজে বলতে শুরু করে ,
— ইয়ানাত তাসবি আমার খুব কাছের একজন। শুধু এইটুকুই বললাম মা আর আপু ! সবটা বলার সময় তো আর এখন পাবো না। যেতে যেতে যতদূর বলা যায়। ”
— আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি শুভ্রা ? ”
ফারিয়ার প্রশ্নে সে উত্তর দেয় ,
— নেওয়াজের মেয়ের বাড়ি। ”
— আচ্ছা এই নেওয়াজ টা কে ? ”
— ফাইয়াজ মির্জা । ওরফে আমার বাবা । দ্যা গ্রেট নারী পাচারকারী যাকে বলা যায়। ”
পিলে চমকে উঠে তাসবি বাদে বাকীদের। এবার তাসবির মা বলতে শুরু করে ,
— তুমি কীভাবে এত্যোসব জানলে ? সবটা আমি আজই শুনতে চাই ! ”
— গল্প শুরু হয় আমার স্মৃতি ফিরে এসেছে যবে থেকে , ঠিক তবে থেকেই । আমার হাতে একটা ভি এর জন্মদাগ ছিলো। সেই জন্মদাগের কারনেই স্কুল থেকে আমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো। মাঝ রাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়াতে তারা আমাকে বাইরে আনতেই আমি কান্না করে দিয়ে দিই। তখন স্থানীয় রা আমাকে বাঁচিয়ে নেয় । দিয়ে আসে চাচার কাছে । তারপর আড়াল থেকে কেউ একজন টাকার লোভ দেখিয়ে আমার চাচিকে বলেছিলো আমাকে ভীষণ কষ্ট দিতে। যা একদিন আমি শুনে নিয়েছিলাম। তাই কিছু করিওনি। তারপর এইচএসসি দিয়েই আমার আংকেলের রেফারেন্সে জয়েন হই গোয়েন্দা তে। আর সেই আংকেল আর কেউ না , যেই বাড়িতে আছি তিনিই। আমি যখন বেরিয়ে আসি এক কাপড়ে তখন তার সাথে আমার পরিচয়। ভরসা যোগ্য মানুষ পেয়ে সবটা বলি দেই। তিনি সিক্রেট গোয়েন্দা ছিলেন। অতি তীক্ষনতার সাথে তিনি আমাকে গোয়েন্দা জয়েন করিয়ে দেন। তারপর উঠি আপনার মেয়ের বাসায়, মানে ফারিয়া আপুর বাসায়। আপু তার বড় ফুপা কে বাবা ডাকতো। তাসবি ফারিয়া আপু কে কৌশলে আমার কথা বলে তার ফুপা কে বলে আমার সম্পর্কে। তিনি সবটা জেনে আমাকে ফারিয়া আপুর সাথে থাকতে দিলেন। ফুপা কে বুঝতে দেয়নি আমি যে তার আত্মীয় হই। তখন আপুকে নিজের ফ্রেন্ড হিসেবেই প্রেজেন্ট করতাম তাই আপু ও ডাকতাম না আর তুই করে বলতাম। কারন আমার উপর গার্ড দিয়েছিলো নেওয়াজের লোকেরা। কেনো তিনি আমার পেছনেই পড়ে আছেন সেটা জানিনা কিন্তু আমাকে তার মুখোমুখি করতে চাইছেন তিনি। আর তারপর মেরে ফেলবেন। আর এখন আমি পুরোপুরি সেইফে আছি কারন যেই নিথিয়ার ফেইস সম্পর্কে তারা অবগত তা এখন আমার নেই। অন্য একটা ফেইসে আছি আমি।
সেদিনই মানে যেদিন বাড়ি ছেড়ে আসছিলাম৷, আসার আগে বাস টার্মিনালে আমার মায়ের মতো হুবহু কাউকে দেখে আমার টনক নড়ে। মা কে তো পাবো না , কারন সে আমার বাবার জিম্মিতে আছে। সুতারাং এনি আমার খালা। এগিয়ে যেতে যেতে তারা নেমে যায়। আমিও আর পাইনি। তারপর খালামনির পাশের সিটের ছেলেটার বোর্ড প্যানেলে ইয়ানাত তাসবি নামটা মনে রেখেছিলাম। লোকটা যেভাবে আমার খালামনির সাথে কথা বলেছিলো ভেবেছিলাম কাছের কেউ কিন্তু ওতোটা কাছে ভাবিইনি। খোঁজ নিতে গিয়ে চলে যাই নড়াইলে। সেখানে দূর্ঘটনা বশত তার সাথে আমার হালাল একটা বন্ধন তৈরি হয়। মানে স্থানীয় রা আমাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। দুজইনের কেউ ই প্রথমে না মানলেও , যেদিন দ্বিতীয় বার আমাকে কিডন্যাপ করা হয় সেদিন তাসবি’ই আমাকে বাঁচিয়েছিলেন। তিনি আমাকে নিয়ে অন্য কিছু অনুভব করলেন। সেদিনই আমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি।
তারপর তৃতীয় বারের মতো কিডন্যাপ হই যেদিন হসপিটালে ছিলাম। খালামনি কে জানাতে আমিই বারন করেছিলাম তাসবি কে। সেদিন ভাগ্যক্রমে আংকেলের গাড়ির সামনে পড়ে গিয়েছিলাম। গাঁয়ের জোড় তেমন ছিলো না। তবুও আংকেল আমার থার্ড ফেইস দেখে বুঝলেন যে এটাই আমি। আমার কাছে এসেই অস্থিরতা করতে শুরু করলে কৌশলে ইংগিত দেই। তিনিও বুঝে যান। আর হাসপাতালে গিয়ে বেশ গুছিয়ে মিথ্যে বলেছেন। গাড়িতে আমার সেকেন্ড ফেইস ও দিয়ে দেন। তারপর তাসবি কে খবর দেন তিনিই। রিস্ক না নিতেই তাসবি নিজেই আমার ট্রিটমেন্ট করে। মূলত সবটা শুরু থেকেই জানতেন আংকেল আর তাসবি। আধো আধো জানতো শুধু ফারিয়া আপু আর খালামনি। আপনারা যেটা দেখছেন সেটা আমার সেকেন্ড ফেইস। আর থার্ড ফেইস শুধু নেওয়াজের জন্য। বাট ফার্স্ট ফেইস কেউ দেখেনি। এবার সামনের প্ল্যানে এগিয়ে যাওয়া উচিত । ”
লম্বা একখানা কাহিনী বলে থামে সে। গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে আবার উঠে গলায় টান দিয়ে একটা অংশ তুলে ফেলে। দেখিয়ে আবারো ফেইসে দিয়ে বলে ,
— দেখেছেন ? এটা আমার সেকেন্ড ফেইস। নিচের টা থার্ড ফেইস। আর আমি আমার প্ল্যান মতোই নেওয়াজের চক্ষুগোচরে থাকি আবার চোখের সামনেই থাকি । ”
সব শুনে মাথায় হাত দেয় ফারিয়া। সব তার মাথার উপর দিয়ে গেলো। এতো রহস্য সে গুলিয়ে ফেললো। খালামনি ও এবার এগিয়ে এসে শুভ্রা কে জড়িয়ে ধরে। তখনইই শুভ্রা বলে ,
— পাপীদের শাস্তি দিয়ে তবেই আমি আমার রিয়েল ফেইস আনলকড করবো। বুঝলে খালামনি ? ”
খালামনি ছোট্ট করে উত্তর দেয় ,
— আচ্ছা ! ”
তখনই গাড়ি থামাতে সবার মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানের জড়তা কাজ করলো। খানিক ঝুঁকে গেলো সামনের দিকে। হাতের ডানপাশের বাড়িটায় লেখা ‘নীল নীলাঞ্জনা’ । লেখাটুকু না পড়ে শুধু চোখ বুলিয়েই রহস্যের হাঁসি হাসলো শুভ্রা ।
— চলবে ?