#প্রণয়ডোর
l৩০l
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা
-“সব রেডি করো। আমি আসছি।”
-“ওকে স্যার।”
কল কেটে ব্যক্তিটি ফোনটা পকেটে রেখে দিলো। টেবিলের উপরে রাখা ক্যাপ টা মাথায় ঠেকিয়ে এগিয়ে দাঁড়ায় আয়নায়। মাস্ক পড়ে নিলো মুখে। নিজেকে দেখে হেঁসে নিলো একবার। এখন আর কেউ বুঝবে না এটা ইয়ানাত তাসবি।
বেডের কর্নারে হাতে বেঁধে রাখা লোকটার দিকে একপলক তাকালো তাসবি। এগিয়ে গেলো লোকটির দিকে। লোকটা তার মতোই দেখতে। একটু আগেই বোনের দক্ষ হাতে করা মাস্ক টা পড়িয়ে দিয়েছে এই লোকটিকে।
তাসবির মা সেজে যিনি বাসায় আছেন তিনি জেনে গিয়েছিলেন তাসবির অবস্থান। কাকতালীয়ভাবে যেদিন তাসবির ব্যান্ডেজ খোলার দিন সেদিনই হামলা করে সেই মহিলার লোকেরা। তাসবি সবদিকেই স্ট্রং ছিলো। চোট টা নেই বললেই ছিলো। শেষে ওকে যে ইঞ্জেকশন টা ইঞ্জেক্ট করা হয়েছিলো সেটা ছিলো একটা শর্ট টাইম ম্যামোরি লসিং ইঞ্জেকশন। যেটা পুশ করলে হয়তো বা সাময়িক ম্যামোরি ভুলে যেত সে আর প্রমাণ করতেও পারতো না নেওয়াজ মির্জার সত্যিকারের রুপ। কিন্তু তখনই কায়দা করে একজন বাদে বাকি সবাইকে ঘর থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে সরিয়ে সেই ইঞ্জেকশন টা জানলা দিয়ে ফেলে দিয়ে…..।
____
-“শুভ্রা! মায়ের লোকেশন ট্রেস করা যাচ্ছে। এইতো দশমিনিট আগেই অন হয়েছে।”
ফারিহার কথা শুনে শুভ্রা ‘ইয়েস’ বলেই ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো। আর বান্ধুবী বোন কে বললো,
-“তাহলে অনেকদিন পর সেই ব্রেসলেট টা কেউ হাতে পড়েছে।”
-“শুভ্রায়ায়া!”
-“হুম।”
-“এই টপিক টা বুঝতে পারলাম না আমি। মানে মায়ের ব্রেসলেটের সাথে হাত এইসবের কি কানেকশন আছে?”
-“আছে আছে।”
-“তো আমায় একটু বলো?”
-“ইটস্ অ্যা সিক্রেট আপা।”
-“নকল করবি না একদম।”
হেঁসে ফেললো শুভ্রা। পাশের সিটেই বসেছে ফারিহা। গাড়িতে বসেই সে মায়ের লোকেশন টা বলেছিলো। আর তারপরেই…।
-“বলবি না তাহলে?”
শুভ্রা নিশ্চুপ। কোনো উত্তর নেই তার। আপনমনে ড্রাইভ করছে। খানিকটা রাগ হলো ফারিহার। কাঠকাঠ গলায় শুভ্রাকে শোধালো,
-“দেখ শুভ্রা…।”
-“এখন ড্রাইভ করছি বান্ধবীপু। তাই তোমাকে দেখতে পারবো না। সরি।”
এবার আর থেমে থাকলো না ফারিহা। তেড়ে এসে দুহাতে শুভ্রার গলায় হালকা চেপে ধরে বললো,‚তোকেএএ আমিইই!
-“চিবিয়ে খাবে, তাইতো?”
নাক খানিক কুঁচকে মুখটা ভ্যাবলাকান্তের ন্যায় করলো। চলে আসলো নিজ অবস্থানে। ‘হুঁহ’ বলে নিশ্বাস ফেললো। চুপ থাকলো সে। কথাই বলবে না এই মেয়ের সাথে সে। এটাই পণ করলো। কিন্তু সেই পণ টিকিয়ে রাখতে অক্ষম হলো। শুভ্রা ক্ষেপিয়ে দিলো তাকে।
-“কী? সত্যি বললাম তো ? আমাকে চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে। তাইনা?”
-“হ্যাঁ তাই। কি করবি এখন?”
ফারিহার দাঁতে দাত চাপা উত্তর। হাঁসি পেলো শুভ্রার। এখন একটু রাগাতে চায় সে এই মেয়েকে। কিন্তু মেয়ের যা রিয়াকশন ! হাঁসি আটকিয়ে রাখা খানিকটা কঠিন হলো তার। তবুও নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে আবারো বললো,
-“বলছিলাম যে। আমায় যে খাবি , বিষ্টা কোথায় রাখবি?”
-“ইয়াক। ইস কি বিচ্ছিরিইইই!”
হোঁ হোঁ করে হেঁসে উঠলো শুভ্রা। গাড়ি একটা পাশে থামিয়ে দেয়। হাসতে হাসতে ডোর খুলে বাইরে বেরিয়ে যায়।
#চলবে
#প্রণয়ডোর
l৩১l
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা
-“বলছিলাম যে। আমায় যে খাবি , বিষ্টা কোথায় রাখবি?”
-“ইয়াক। ইস কি বিচ্ছিরিইইই!”
হোঁ হোঁ করে হেঁসে উঠলো শুভ্রা। গাড়ি একটা পাশে থামিয়ে দেয়। হাসতে হাসতে ডোর খুলে বাইরে বেরিয়ে যায়। সামনের দোকানটায় গিয়ে দুটো আইসক্রিম নেয়। ফিরে আসে গাড়িতে। একটা আইসক্রিম ফারিহার দিকে এগিয়ে দেয়।
-“আমায় রাগিয়ে এখন আইসক্রিম খাওয়া হচ্ছে?”
-“ওম্মা! একা খাবো না বলেই তো তোমার জন্য আনলাম।”
-“রেখে দে তোর আইসক্রিম। খাবো না আমি।”
ফারিহার কথায় অভিমানের ছাঁপ স্পষ্ট। বড় বোন তার কোনোকালেই ছিলোনা। কিন্তু এই মেয়ে টা তার বান্ধবী বোন দুটোর অভাবই পূরণ করেছে। মেয়েটা একদম ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
দুটো আইসক্রিম এক হাতে নিয়ে ফারিহার দিকের ডোর টা খুলে দেয়।
-“নামো। আইসক্রিম খেতে খেতে সবটা বলছি।”
নেমে আসে ফারিহা। ছোঁ মেরে শুভ্রার হাত থেকে আইসক্রিম টা নিয়ে নেয়। দুজনেই হেলান দেয় গাড়িতে। আইসক্রিম একটু খানি মুখে নিয়ে শুভ্রা বলা শুরু করে।
-“খালামনি কে আমি একটা পেন্ডেন্ট গিফট করেছিলাম। তোমার মনে আছে?”
-“ওইযে তোদের বিয়ের ব্যাপারে আম্মু জানার পরদিন?”
-“হুম।”
-“কি হয়েছে?”
-“সেটা থেকেই কাহিনী স্টার্ট।”
-“আমার মায়ের মতো একই ফেইসের কাহিনী আমি বুঝলেও গোপনে আমি একটা প্ল্যান করি। খালামণি কে সেইফ মনে হলেও আমার খুতঁখুঁতে স্বভাব যায়নি। তাই সেই পেন্ডেন্ড টা দিয়েছিলাম। পেন্ডেন্ড টা বিশেষ ভাবে ডিজাইন করে সেটাতে মাইক্রোফোন সহ ক্যামেরা সেট আপ করে এনেছিলাম। ভেবেছিলাম বাবার কাছে কোনোমতে পৌঁছে দেবো। কিন্তু তা আর হলো না। তার আগেই ওনার সাথে বিয়ে হয়ে যায়। আরেকটা অর্ডার করিয়ে আনবো ভেবে এটা খালামণিকে দিয়ে দিই। সাথে একটা ব্রেসলেট ও দিই। ব্রেসলেট টা ছিলো মাইক্রোফোনের কাজে আর পেন্ডেন্ড টা ক্যামেরার। খালামনিকে এতোদিন আমি সেগুলোই পড়তে বলি। তাই খালামণি সবসময় ওই দুটো জিনিস পড়তো। খালামণি সেগুলো পড়লেও ওগুলোএ কন্ট্রোলার আমার কাছে ছিলো। কেবলমাত্র ওই দুটো জিনিস যদি কেউ পড়ে তবেই সেটা এক্টিভেট হবে। তোমাদের সবাইকে সত্যিটা বলার পর আর সেটা চ্যাক করতাম না। তবে যেদিন খালামণির কথা বলেছো সেদিন আমি চ্যাক করি। কোনো সিগন্যাল পাইনি। তবে…!”
-“আমার একটা প্রশ্ন আছে।”
-“হুম বলো।”
-“তুই কি করে জানলি যে সেটা এক্টিভেট হবেই হবে। তাও আজকে।”
-“ওই দুটো জিনিসের আরেকটা বিশেষত্ব হচ্ছে সেগুলো এক্টিভেট না হলে অটো এলার্ম বাজবে। কেবল সেগুলো পড়লেই এলার্ম থেমে যাবে। অন্তত এক ঘন্টা পড়তে হবে। মূলত আমিই এই রকম সিস্টেমে বানিয়ে আনিয়েছি। আর আমি জানি খালামণি সেইফ। কারন আর যাই করুক খালামণির ক্ষতি তিনি করবেন না। একই রক্ত বইছে যে। মায়া একটু-আধটু হলেও আছে তার। ”
কথার উত্তর দিলো না ফারিহা। আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত। শুভ্রা ভ্রু উচিয়ে তার দিকে তাকালো। ‘ফোঁস’ করে শ্বাস ফেলে বললো,
-“এই এই। কি সুন্দর করে খেয়ে যাচ্ছো। এতোক্ষণ না পকপক করছিলে?”
-“২০ মিনিট ওয়েস্ট। তোর হাতে লোকেশন ট্র্যাস করার সময় আছে আর ৪০ মিনিট। চলে আয় গাড়িতে।”
-“বাপরে ! এতো সিনসিয়ারিটি?”
-“ইয়েস বেইবি। লেটস্ গো!”
উঠে পড়লো গাড়িতে। এখন ড্রাইভ করবে ফারিহা। অনেকদিন ড্রাইভ করা হয়না তার। মনের ভীতরে এক প্রকার শান্তি লাগছে তার। আল্লাহ সব ঠিকঠাক করলেই একদম শান্তি।
·
তাসবির মা সেজে যিনি বাসায় আছেন তিনি জেনে গিয়েছিলেন তাসবির অবস্থান। কাকতালীয়ভাবে যেদিন তাসবির ব্যান্ডেজ খোলার দিন সেদিনই হামলা করে সেই মহিলার লোকেরা। তাসবি সবদিকেই স্ট্রং ছিলো। চোট টা নেই বললেই ছিলো। শেষে ওকে যে ইঞ্জেকশন টা ইঞ্জেক্ট করা হয়েছিলো সেটা ছিলো একটা শর্ট টাইম ম্যামোরি লসিং ইঞ্জেকশন। যেটা পুশ করলে হয়তো বা সাময়িক ম্যামোরি ভুলে যেত সে আর প্রমাণ করতেও পারতো না নেওয়াজ মির্জার সত্যিকারের রুপ। কিন্তু তখনই কায়দা করে একজন বাদে বাকি সবাইকে ঘর থেকে কিছু সময়ের জন্য দূরে সরিয়ে সেই ইঞ্জেকশন টা জানলা দিয়ে ফেলে দিয়ে নিজের অবস্থানে ফিরে আসে।
তারপর তাসবির চোখ বেঁধে কোথাও একটা নিয়ে আসা হয়। রুমে একজন সিকিউরিটি বাদে সবাই বাহিরেই ছিলো। এই সুযোগে লোকটাকে কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান করিয়ে ছেলেটাকে নিজের চেহারার মাস্ক টা পড়িয়ে তার জামা নিজে পরিধান আর তার টা গার্ড টা কে পড়িয়ে দেয়। মাথায় আলাদা করে শুধু একটা ক্যাপ পড়ে নেয়।
দরজা খুলে স্বাভাবিকভাবেই বের হতে যায় সদর দরজা দিয়ে। কানে আসে কোনো এক গাম্ভীর্য পূর্ণ কন্ঠস্বর।
-“এই দাঁড়া।”
পা থমকে যায় তাসবির। দাঁড়িয়ে যায় সে। পেছন ঘুরে লোকটির দিকে তাকায়। হাবভাব দেখে বোঝাই যাচ্ছে এখানকার ডন।
-“জি।”
-“কোথায় যাচ্ছিস?”
-“বাহিরে।”
লোকটা ভ্রু উচিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
-“কেনো? আর তুই সারওয়ার না? তরে এমন লাগতাছে কেন?”
-“বাইর থাইক্যা খাবার নিয়া আসতাম।”
-“তর খাবার টেবিলেই আসে। যাইয়া খাইয়া ল। বাইরে যাবার দরকার নাই।”
দ্বিরুত্তর করতে পারলো না। না করলেই ঝামেলা। অনেক বুদ্ধি খাঁটিয়ে ওদের স্টাইলে কথা বলেছে। এখন কিছু বলা মানেই ধরা খাওয়া। তার থেকে কোনো একটা বাহানায় সরে আসাই উচিত। প্রচন্ড ক্ষুদা ও পেয়েছে তার। তাই এদিক ওদিকে তাকিয়ে খাবার খেতে গেলো।
হঠাৎ ই কল এলো তাসবির ফোনে। রুমের সকলেই ওর দিকে তাকালো। কল রিসিভ করলো না। দু তিন বার বাজতেই সাইলেন্ট করার জন্য ফোনটা হাতে নিয়ে আশপাশে তাকিয়ে দেখলো। সকলের অদ্ভুত চাহনী কিছুটা। তাসবির মুখে তখনও মাস্ক। সে আশপাশ পরখ করে খানিকটা স্তব্ধ হতে গিয়েও হলোনা। তখনকার লোকটা বলল।
-“ফোনটা বাজছে। তুলছিস না কেনো?”
-“হ,হুম। তুলছি।”
শুভ্রার কল। মেয়েটাকে এই মূহুর্তেই কল করতে হলো? কাজের সময় কল করেনা আর অকাজের সময় ঝামেলা করবেই। সে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বড় একটা দম নিলো। ভেবে নিলো কীভাবে কি বলবে। তাই আর দেরি না করে কল টা রিসিভ করলো। তার হৃদপিন্ড দ্রিম দ্রিম করে আওয়াজ করছে। না জানি কি বলবে।
#চলবে
#প্রণয়ডোর
l৩২l
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা
হঠাৎ ই কল এলো তাসবির ফোনে। রুমের সকলেই ওর দিকে তাকালো। কল রিসিভ করলো না। দু তিন বার বাজতেই সাইলেন্ট করার জন্য ফোনটা হাতে নিয়ে আশপাশে তাকিয়ে দেখলো। সকলের অদ্ভুত চাহনী কিছুটা। তাসবির মুখে তখনও মাস্ক। সে আশপাশ পরখ করে খানিকটা স্তব্ধ হতে গিয়েও হলোনা। তখনকার লোকটা বলল।
-“ফোনটা বাজছে। তুলছিস না কেনো?”
-“হ,হুম। তুলছি।”
শুভ্রার কল। মেয়েটাকে এই মূহুর্তেই কল করতে হলো? কাজের সময় কল করেনা আর অকাজের সময় ঝামেলা করবেই। সে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বড় একটা দম নিলো। ভেবে নিলো কীভাবে কি বলবে। তাই আর দেরি না করে কল টা রিসিভ করলো। তার হৃদপিন্ড দ্রিম দ্রিম করে আওয়াজ করছে। না জানি কি বলবে।
গলা কেশে পরিষ্কার করে নিলো। রিসিভ করলো ফোন। সেই মোটাসোটা লোকটা বললো,
-“কলটা স্পিকারে দে।”
আল্লাহ ভরসা নিয়ে শুভ্রাকে বললো।
-“হ্যালো।”
তাসবির কন্ঠ টা খানিক ঠান্ডায় বসে যাওয়া কন্ঠের ন্যায় শোনালো।
-“বলছি যে তুমি কোথায়?”
-“কাজে।”
-“দ্রুত এসো। মায়ের শরীরের অবস্থা অনেক খারাপ।”
-“আমি এখন…।”
-“তোমাকে এখন আসতেই হবে। না আসলে মা-আমি দুজনেই সুইসাইড করবো।”
-“আরেহ…!”
-“বস ছুটি দেবে না ? কেন দেবে না৷? তার মা-বোন ভাই নেই ? জানের মায়া নেই। আজ তোমাকে আসতেই হবে ভাইয়া।”
কলটা কেটে দিলো শুভ্রা। এদিকে তাসবি আহাম্মকের মতো কিছুক্ষণ ভাবলো। মেয়েটার কি এমন হলো ? হঠাৎ এইসব কথা কেনো ? আচ্ছা ওরা কি তাসবির অবস্থান আর অবস্থা সম্পর্কে জানে ? কিন্তু জানা তো সম্ভব না। তাহলে…।”
আর কিছু ভাববার আগেই সেই লোকটার কথা কর্নপাত হলো।
-“কি ভাবছিস।”
-“আমি নিজেও ঠান্ডায় আছি। এখন মা ও অসুস্থ। আপনার তো অজানা না বস। আমি এইজন্যই বাইরে যাইতে চাইছিলাম। কল করে ডেকে এনে বোনকে বুঝিয়ে বলতাম। আর ফিরে আসতাম কাজে। কিন্তু…।”
-“ঠিক আছে। চলে যা।”
-“সত্যি বস।”
তাসবির এমন কন্ঠে খানিকটা বিরক্ত বোধ করলেন ব্যক্তিটি। নিজের কাজে মনযোগী হওয়ার আগে শুধু বললেন,
-“এই একে কেউ ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দে।”
বলার সাথে সাথে দুজন এগিয়ে আসলো তাসবির কাছে। তা দেখে তড়িঘড়ি করেই নিজের আসল কন্ঠে কথা বলে ফেললো,
-“আরে আমি নিজেই যাচ্ছি।”
সন্দেহের দৃষ্টি তে তাকালেন পাশের গার্ড টা।
-“কিরে তোর না ঠান্ডায় গলা বসে গিয়েছিলো। তাহলে এইভাবে কথা বললি কীভাবে?”
এমন প্রশ্নে তাসবি খানিকটা দমে গেলো। পরক্ষণেই কেশে আগের কন্ঠে উত্তর দিলো,
-“ভালোভাবে তো কথা বলতেই পারি কিন্তু কষ্ট হয়। এছাড়াও এই সুর বিশ্রি শোনালেও কথা বলায় শান্তি। বস যেভাবে বলেছে তাই একটু ভয় পেয়েছিলাম।”
-“ঠিক আছে। দূর হ।”
মাথা দুদিকে নাড়িয়ে দ্রুত পায়ে হাঁটা ধরলো। পেছনে ফেলে এলো বাড়িটা। রাস্তা টা তার অচেনা। পকেট থেকে ফোনটা বের করে ম্যাপ দেখতে লাগলো। নিজের অবস্থান থেকে কাঙ্খিত অবস্থানে যাওয়ার নির্দেশনায় একবার চোখ বুলিয়েই ফোনটা রেখে দিলো। দ্রুত পা চালালো মেইন রুডের দিকে। এখন এখান থেকে বের হওয়াটা খুবই দরকার।
____
-“মেয়েটাকে যে এতো করে বললাম চলে এসো , চলে এসো। আসলো না। বললো তার বেশি দেরি হবেই না। কিন্তু এখন ?”
-“এখন বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো। তাও তোমার মেয়ে এলোনা। তাইতো?”
ছেলে আরাফের কথায় মাথায় সায় জানালেন। বিরক্ত হলো আরাফ। বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকিয়ে বলে ওঠে,
-“মা ! প্লিজ।”
-“কি?”
-“স্টপ দিজ ড্রামা।”
-“হোয়াট? এইটা তোর নাটক মনে হচ্ছে?”
-“তো?”
-“একজন মায়ের দুঃশ্চিন্তা কি তুই বুঝবি?”
-“আদিক্ষেতা থামাও মা। সে তোমার নিজের মেয়ে না। নিজের মেয়ে হিসেবে মানেও না। তাহলে কীসের জোড়ে এইসব বলছো?”
-“শোন , আরাফ। আমি শুভ্রাকে পেটে তো ধরিনি। কিন্তু ওইযে মায়ের একটা দায়িত্ববোধ থেকেই যায়। তোর বাবার কথার সত্যতা আমি বিচার করতে যাইনি। শুধু এইটুকু বুঝেছি, এই মেয়েটা মায়ের আদর,ভালোবাসা,শাসন এইসব কিছুই পায়নি। এছাড়াও আমার মেয়ের শখ ছিলো অনেক। এখন যখন সার্টিফিকেটলি একটা মেয়ে পেয়েই গিয়েছি তখন তার অবহেলা কেনো করবো বলতে পারিস ?”
-“মা !”
-“মাতৃত্ব জিনিসটা বুঝিস?”
আরাফ চুপ করে গেলো। তবুও থামলেন না মিসেস মির্জা। ছেলেকে সত্যের সম্মুখীন করাবেন তিনি আজ। তাই নিজের মতো করেই বলতে লাগলেন,
-“মা হতে হলে ১০ মাস ১০ দিনের ও অধিক সময় কষ্ট করতে হয়। এই টাইমে না তো ভালো খাওয়া-দাওয়া হয় আর না তো ঘুম। সারাক্ষণ বাচ্চার চিন্তা মাথায় থাকে। বড় পেট নিয়ে ওঠা-বসা ও বড্ড দ্বায়। লেবার পেইনের কথা নিয়ে কি বলবো। তোরা ছেলেরা বুঝবি না। আর এতো কষ্টের পরেও অনেকে তাদের সন্তান কে পায় তো অনেকে হারায়। মৃত সন্তানের প্রতি মায়া, ভালোবাসা বুঝিস? যাকে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পরেও জীবন্ত পাওয়া যায় না , এমনকি ভবিষ্যতে তার অস্তিত্ব বলতে কিছু থাকেনা। এই কষ্ট বুঝিস? বুঝিস না। আর আমি সেসব যন্ত্রণা আর আশঙ্কা ছাড়াই শুভ্রাকে পেয়েছি। যে মেয়েটা একা একা বড় হয়েছে। আমি ওর অতীত নিয়ে নয় বাস্তব দিয়ে বিচার করে ওকে আমার মেয়ে হিসেবে মেনে নিয়েছি। যতো যাই হোক , সে আমার মেয়ে। এই স্বীকৃতি দিতে আমার কোনো দ্বিধা নেই।”
কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে মিসেস মির্জা ও একটা শ্বাস ফেলে রান্না ঘরে চলে গেলেন। রান্না ঘর গুছিয়ে সুতার কাজ নিয়ে বসবেন। এদিকে আরাফ মায়ের বলা প্রতিটা কথা বিবেচনায় আনতে লাগলো। মনের ভিতরে থাকা সুপ্ত ও পবিত্র আরাফ জাগ্রত হতে শুরু করলো। তাই তো মায়ের বলা কথাগুলো নিখুঁত ভাবে বিশ্লেষণ করবার ইচ্ছে হলো। কিন্তু বাবার ডাকে ফিরে আসতে হলো বাস্তবে।
-“আরাফ।”
বাবা তাকে উপরতলা থেকে ডাকছেন। বাবার কন্ঠে উদগ্নিতা মিশ্রিত। ফের ডাকলেন। এবার উত্তরে ‘আসছি’ বলে সে উঠে দাড়ালো। সিঁড়ি বেয়ে চললো বাবার কক্ষে।
#চলবে?