প্রণয়ডোর পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
50

#প্রণয়ডোর
|৩৬|
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা

-“দেরি করলে যে?”

অতিপরিচিত পুরুষালী কন্ঠস্বরে মৃদ্যু কম্পন ধরলো শরীরে। আগের শক্তপোক্ত আওয়াজ নিমিষেই মিইয়ে গেলো। নিম্নস্বরে ব্যক্তিটি কে শোধালো,

-“হঠাৎ তুমি করে..!?”

-“আগে বলিনি?”

লোকটার সহজ প্রশ্ন। তাও উত্তর দিতে হিমশিম খেলো। থেমে থেমে উত্তর দিলো,

-“ন,না মানে… ”

-“আর কোনো জটিলতা নয়। সত্যিটা আমি জানি।”

এবার গলা কেশে শুভ্রা খানিকটা সিরিয়াস হয়ে উঠলো । লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলো,

-“আপনি ঠিক আছেন তো?”

-“হু!”

-“আর রাস্তায় আবির আমাকে জ্বালিয়ে খেয়েছিলো তাই দেরি হয়েছে আপনার কাছে আসতে।”

-“চাপ নেই। পরবর্তী পদক্ষেপ কি?”

-“নেওয়াজ মির্জার সন্দেহের তালিকায় থাকা সেই শুভ্রাকে মেরে দিয়ে খবর ছড়িয়ে দাও চারিদিকে।”

শুভ্রার এমন কথায় লোকটি খানিকক্ষণ চুপ মেরে রইলো। বোধহয় বুঝতে পারলো না শুভ্রার কথা। ব্যাপার টা শুভ্রা বুঝতে পারলো। নিরবতা কাটিয়ে উশখুশ করে রিনরিনিয়ে বলে উঠলো,

-“মানেটা হচ্ছে ওনি কিন্তু একজন কে দুইজন ভাবছেন, যেহেতু আমি একজন হলেও দুই ফেইসের অধিকারী । অন্য একজন কে দিইয়ে কৌশলে সেই ফেইসের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে দিন।”

-“এতে কাজ হবে?”

-“অফ কউরস। অনেক কাজ হবে। যেমন ধরুন এইখানে আমি সন্দেহ মুক্ত থাকলাম আর বিয়ের দিন এ ওরকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আঁচ কেউ করতে পারবে না।”

শুভ্রার কথায় লোকটি শাহাদত আঙুলে শুভ্রার কপালে টোকা দেয়। এতে শুভ্রা ‘আ’ সূচক শব্দ করে দুই কদম পিছিয়ে শোধায়,

-“তাসবিইই!”

ফিক করে হেঁসে দেয় তাসবি। কাধের ব্যাগ টা ঠিক করে বলে,

-“আসছি তাহলে!”

কথাটা বলেই শুভ্রার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করে তাসবি। তখনই শুভ্রা শোধায়,

-“বলছি যে কিছু খেয়েছেন?”

মাস্কের ভেতর থাকা মুখখানায় এক চিলতে হাঁসি এলো কিন্তু দেখা মিললো না শুভ্রার। তাসবি বোধহয় এইটার ই অপেক্ষায় ছিলো।

-“কি হলো, উত্তর দিন।”

-“খাই নি। গিয়ে খাবো। ”

-“আপনি রান্না করবেন?”

-“না বাসায় খালা আর মা তো আছেই। মা রাঁধতে না পারলেও খালা পারবে। সেজন্যই আমার খাবার খালাকে রাঁধতে বলেছি ।”

-“আচ্ছা, তাহলে যান। আর বিয়ের দিন খুব তাড়াতাড়ি উপস্থিত হবেন।”

-“ইন-শা-আল্লাহ।”

কথা ফুরিয়ে এলো তাদের মধ্যে । পিনপতন নীরবতা বিরাজ করলো তাদের মধ্যে। নীরবতা কাটালো তাসবি। নির্লিপ্ত কন্ঠস্বর,

-“একটা ভুল কাজ করবো?”

শুভ্রা চোখ তুলে তাসবির চোখের পানে তাকায়। সাইকোলজি তে বলা একটা কথা মনে পড়লো তার। ‘তুমি যদি কাউকে ভালোবাসো তবে তাকে ভালোবাসি বলার দরকার নেই , তুমি কিছু সময়ের জন্য তার চোখের পানে তাকিয়ে থাকো , ভালোবাসা জিনিসটা আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবে।’

শুভ্রা এই কাজ টাই করে বসলো। কিন্তু কাজ হলো না। তাসবি যে গগলস পড়ে আছে। মানুষ টাকে মনে মনে খানিকটা বকে নিলো সে। এর মধ্যেই তাসবির গলা আবারো শোনা গেলো,

-“মৌনতা নাকি সম্মতির লক্ষণ। সম্মতি ধরে নিয়ে করে ফেলবো ?”

তাসবির কথায় শুভ্রা খানিক লজ্জা পেলো। লজ্জামাখা মুখ নিয়েই থমথমে হওয়ার চেষ্টা করে তাকে শোধালো,

-“মনে হয় প্রতিবার আমার সম্মতি নিয়েই করেন!”

শুভ্রার কথার মানে বুঝতে পারলো তাসবি। মাথা নাড়িয়ে মেয়েটাকে শোধালো,

-“তাহলে কে জানি আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে…?”

তাসবির কথায় লজ্জারা ক্রমশ বাড়তে থাকলো। উশখুশ হয়ে বললো,

-“আরেহ, যান তো।”

তাসবি কেবল হাঁসলো। এগিয়ে আসলো শুভ্রার সন্নিকটে। আশপাশ তাকিয়ে খুব সন্তোর্পণে শুভ্রার কপালে নিজের অধর ছুঁইয়ে দিলো। ‘নিজের খেয়াল রাখবে, আসছি আমি’ বলেই দ্রুত পায়ে তাসবি জায়গা ত্যাগ করলো। পথের পানে কেবল সে চেয়ে রইলো । বড় একটা শ্বাস ফেলে হাতের ফোনটায় মনযোগ দিলো। ডায়াল করলো খালার নাম্বারে।

এলিজা আরাফের অনুষ্ঠান টা কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজন করা হয়েছে। যেহেতু এলিজাদের নিজস্ব বাসায় সেরকম স্পেস নেই। তাই…

বিয়ে বাড়ির আমেজ ইতোমধ্যেই পূর্ণতা পেয়েছে। সন্ধ্যা সাতটা বেজে বিশ। ছেলে-মেয়ে উভয় পক্ষই উপস্থিত এখানে। সকল গেস্ট রাও আসা শুরু করে দিয়েছে। আজও শুভ্রা আর ফারিহা একই ড্রেস পড়েছে । মেরুন কালারের গর্জিয়াস লং গাউন আর লাইট পিংক হিজাব। মুখে ব্যবহার করেছে সামান্য পরিমাণ প্রসাধনী। ফারিহা কে এক জায়গায় বসিয়ে উঠে আসে শুভ্রা। হাতে তার মাইক। স্টেজের সামনে খানিকটা ফাঁকা জায়গা রয়েছে সেখানটায় চলে যায় সে। মাইক অন করে বলতে থাকে…

-“লেডিস এন্ড জেন্টেলম্যান। গুড ইভেনিং অ্যান্ড ওয়েলকাম টু আওয়ার উয়েডিং সেরেমনি। আ’ম নিথিয়া মির্জা। এল্ডার ডটার অফ ফাইয়াজ মির্জা এন্ড সামাইরা আহমেদ শিলু ।”

শুভ্রার এটুক কথাতেই পরিবেশ শান্ত হয়ে গেলো। সকলে জানে। মেয়েটা নেওয়াজ মির্জার মেয়ে তাহলে ফাইয়াজ মির্জা টা কে ? এদিকে সকলের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করতেই এই কথা টা বললো। সব শুনে নেওয়াজ মির্জা হাত শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে বসে আছেন। ভীষণ রকম রাগ লাগছে তার। এই মেয়েটা চায় টা কি ? উঠে দাঁড়ায় লোকটা। তখনই মির্জা সাহেবের ফোনে মেসেজের আওয়াজ আসে ।

“স্যার , সত্যি সত্যিই মেয়ে টাকে মেরে ফেলা হয়েছে। পুলিশ স্টেশনে এই নিয়ে মেয়েটার পালা বাপ ঝামেলা করছে। আমি আপনাকে সব প্রুভড পাঠাচ্ছি।”

মেসেজ টা পড়ে খানিকটা ভাবান্তর হলেন তিনি। মেয়েটা এতো সহজে মরে গেলো? তবে মরতেই পারে। সাধারণ কেউ তো মারেনি। মেরেছে একদম আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মাফিয়া গ্রুপ এএন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ! হয়তো মেয়েটার অন্যায় বা জ্বালিয়াতি ধরা পড়েছে তাই ধূর্ত মেয়েটাকে শেষ করতে পেরেছে।

এবার মুখে হাঁসি ফুটলো লোকটার। মনে মনে ধন্যবাদ জানালো গ্রুপ টাকে। তার অসম্পূর্ণ কাজ তারাই করে দিয়েছে। এবার এই মেয়েটা তো কিছুই না। রিলাক্স হয়ে বসলেন তিনি। ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো শুভ্রা। মুখে রহস্যের হাঁসি নিয়ে আবারো বলতে শুরু করে,

-“আজকের সন্ধ্যা টা আরো স্পেশাল করতে আমরা খেলবো একটি গেইম।”

গেইমের কথা শুনে সকলেই হইহই করে উঠলো উপস্তিতিরা । সকলের উৎসুক দৃষ্টি। শুভ্রা ফের শোধায়,

-“গেইমের রুলস খুবই সিম্পল। যার যেটা ইচ্ছে সে এখানে এসে সেটা করে দেখাতে পারবে । হতে পারে সেটা নাচ,গান,কবিতা,….। প্রত্যেক অংশ গ্রহণ কারী রা পাবে চিরকুট অনুযায়ী গিফট। মানে আমার হাতে বাম পাশের কর্ণারে গিফটের টুল বাক্স আছে। অংশগ্রহণ শেষ করে সেখান থেকে একটা চিরকুট নেবে , চিরকুটের নম্বর অনুযায়ী গিফটের গাঁয়ে থাকা নম্বর খুঁজে নেবে। আর লুফে নেবে আকর্ষণীয় গিফট।”

তখনই হাত উঠলো একজনের। মেয়েটা ফারিহা। ফারিহার এমন অবস্থায় তাকে কড়তালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানালো। তাকে ওয়েলকাম করলো আর বললো,

-“নির্ধিদ্বায় এগিয়ে আসুন মিস।”

মুখে হাঁসির রেখা ফুটিয়ে তুলে এগিয়ে যায় সে। একজন সার্ভেন্ট আরেকটা মাইক এগিয়ে দিলো। নিয়ে নিলো সে। শুভ্রা আস্তে করে একটা সাইডে দাড়ালো। ফারিহা বলতে লাগলো,

-“শুভ সন্ধ্যা। আমি ফারিহা। আজকের অনুষ্ঠান কে স্পেশাল করে তুলতে একটা গান গাইবো। ওতো ভালো না পারলেও আশা করি আপনাদের বিরক্ত লাগবে না।”

ফারিহার এমন ব্যবহারে অবাক আরাফ। মনের কোণে প্রশ্ন জাগলো, চঞ্চলা মেয়েটা এতো ম্যাচিউরিটি কেনো দেখাচ্ছে ? আরাফের প্রশ্নের উত্তর তো আসলো না। কেবল তার পাশে বসে থাকা রমণী টা তার এক হাত নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে নিলো। বোধহয় প্রেয়সীর গানটা মেয়েটা উপভোগ করবে তার সাথে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাস্তবতার সম্মুখীন হলো। অতীত কে দূরে ঠেলে বর্তমান কে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা চালালো। এর মধ্যেক ফারিহার গানের গলা শোনা গেলো…

কতদিন….
ভেবেছি শুধু দেখবো যে তোমায়
ক্লান্তহীন….
তুমি ছিলে আমার কল্পনায়
সেই ছবি উঠলো ভেসে… চোখেরই পাতায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়

টালমাটাল, মনটা কিছু তোমায় বলতে চায়
বেসামাল, ভাবনাগুলো তোমায় ছুঁতে চায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়…

#চলবে?

#প্রণয়ডোর
|৩৭|
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা

– শুভ সন্ধ্যা। আমি ফারিহা। আজকের অনুষ্ঠান টি আরোও স্পেশাল করে তুলতে আমি একটা গান গাইবো। ওতো ভালো না পারলেও আশা করি আপনাদের বিরক্ত লাগবে না।

ফারিহার এমন ব্যবহারে অবাক আরাফ। মনের কোণে প্রশ্ন জাগলো, চঞ্চলা মেয়েটা এতো ম্যাচিউরিটি কেনো দেখাচ্ছে ? আরাফের প্রশ্নের উত্তর তো আসলো না। কেবল তার পাশে বসে থাকা রমণী টা তার এক হাত নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে নিলো। বোধহয় প্রেয়সীর গানটা মেয়েটা উপভোগ করবে তার সাথে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাস্তবতার সম্মুখীন হলো। অতীত কে দূরে ঠেলে বর্তমান কে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা চালালো। এর মধ্যেক ফারিহার গানের গলা শোনা গেলো…

কতদিন ভেবেছি শুধু দেখবো যে তোমায়
ক্লান্তহীন তুমি ছিলে আমার কল্পনায়
সেই ছবি উঠলো ভেসে চোখেরই পাতায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়

টালমাটাল, মনটা কিছু তোমায় বলতে চায়
বেসামাল, ভাবনাগুলো তোমায় ছুঁতে চায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়
আমি শুধু চেয়েছি তোমায়…

ফারিহা এইটুকুতে এসেই থেমে গেল। আর গাইতে পারলো না। গলাটা ধরে এসেছে । আরেকটু গাইলে সে নিশ্চিত কেঁদেই দেবে। পুরোটা গান ছিল অনলি ওয়ান আরাফের জন্য। আরাফের কথা ভাবতেই নিজেকে তাচ্ছিল্য মাখা হাঁসি উপহার দিল। মুখের সামনে থেকে মাইকটা সরিয়ে মাথাটা কেবল নিচু করলো। চোখ দুটো তে তখনোও অশ্রু বিদ্যমান। সেটা লুকোতেই…।

তখনই উপস্থিত সকলের উৎসাহমূলক কড়তালির আওয়াজ শোনা গেল। মাথা তুলে তাকায় মেয়েটা। কেবল সে মুঁচকি হাঁসলো। পাশে থাকা সার্ভেন্টের নিকট মাইক টা দিয়ে নিজের সিটে এসে বসলো। ফিরে আসলো শুভ্রা। মুখে লেপ্টে আছে অমায়িক হাসি। সেই হাসি নিয়েই মাইকে এনাউন্স করলো,

– এক্সকিউজ মি এভ্রিওয়ান। মাঝে একটু ব্রেক নিতে চাচ্ছি। তবে ব্রেকটা হচ্ছে….

বলেই খানিকক্ষণ চুপ থেকে যায় সে। চারিপাশে এই চোখ বুলালো। সকলেই বেশ উৎসাহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর সে বলল,

– এখন একটা সারপ্রাইজিং অ্যানাউন্সমেন্ট করতে যাচ্ছি। সেটা হচ্ছে….আমাদের ফারিয়া আপুর দুর্দান্ত গানের পারফরমেন্সের পর, আমরা এখন উপভোগ করতে যাচ্ছি আজকের সেরার সেরা ব্রাইড এন্ড গ্রম এর কাপল ডান্স।

অনুষ্ঠানের অতিথিদের মধ্যে আনন্দ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য শুভ্রার করা এই অ্যানাউন্সমেন্ট টি’ই যথেষ্ট ছিল। এলিজা ব্যাপারটা স্বাভাবিকভাবে নিলেও অপর পাশে বসে থাকা আরাফ ব্যাপারটা মানিয় নিতে বেশ খানিকক্ষণ সময় নিল। প্রথমে এসে হকচকিয়ে গেলেও সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো । মস্তিষ্কে শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল , যা হচ্ছে সব স্বাভাবিক নাকি…
হয়তো সবই স্বাভাবিক। কিন্তু সে সেটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছে না। কারণ সম্পর্কে তো সে অবগত। তার হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে! প্রেমের দহন হচ্ছে! প্রণয় সমাপ্তির ভয়ে বুকটা বারংবার প্রেমের অনলে পুড়তে শুরু করেছে ইতোমধ্যেই।

এলিজার স্পর্শে খানিকটা নড়েচড়ে বসলো আরাফ। মেয়েটার চোখের পানে তাকিয়ে কেবল মুচকি হাসলো।
তখনই শুভ্রার মিষ্টি কন্ঠস্বর আরাফের কানে আসলো।
– ওয়েলকাম টু দ্যা স্টেজ! প্লিজ। চলুন সকলেই তাদেরকে উৎসাহস্বরুপ কড়তালি দিয়ে আমন্ত্রন জানাই।

চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো আরাফের। এই কয়েকদিনে মেয়েটার প্রতি কিছুটা ভালোবাসা থেকে বোন হিসেবে মেনে নেওয়ার ইচ্ছে এসেছিল! সেটা আজ এই মুহূর্ত থেকে হারিয়ে গেল। মেয়েটাকে শেষমেষ সৎ বোন উপাধি সে দিয়েই দিল।

মেয়েটা তো জানতো তার দুর্বলতার কথা। এটা ভাবতেই খানিকটা থেমে যায় আরাফ । ভাবনায় ছাত ঘটলো মেয়েটা কি আদৌ জানত তার সত্যিটা? নাকি ….। কিন্তু মেয়েটাকে তার সাথে করা কিছু কিছু ব্যবহার আর ফারিহার সাথে বন্ডিং দেখে যতদূর মনে হয়েছে, সে সবটুকু সত্যিই জানে। কিন্তু মেয়েটা সব সত্যিই জানবেই বা কিভাবে। ও তো আর তেমন কেউ না! সাধারণ একটা মেয়ে।

কারোর হাতের টানাটানিতে ভাবনার ছাদ ঘটিয়ে বাস্তবে ফিরলো আরাফ। যে তার হাতটা ধরে টানাটানি করছে সে মেয়েট আর কেউনা, মেয়েটা স্বয়ং এলিজা।

– আ,রাফ! তুমি কি আমার সাথে ডান্স করতে ইচ্ছুক নও ?

এলিজার এমন জিজ্ঞাসু হয়ে করা প্রশ্নে খানিকটা স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। স্টেজে এসে যে কাপল ডান্স করতে হবে সেটা তো সে কখনো ভাবেইনি । তবে যত যাই হোক পেছন ফেলে সামনে তাকিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এমন একটা মনোভাব নিয়েই এলিজাকে শোধায়,
– অবশ্যই ইচ্ছুক। জাস্ট ভাবছিলাম কোন গানটা দিয়ে ডান্স করবো। সিলেক্ট করে ফেলেছি। এবার চলো….

স্টেজে এসে দাঁড়ালো তারা । একে অপরের মুখোমুখি। একে অপরের একটি হাত অবস্থান করছে তাদের কোমড়ে। আর অন্য হাত দুটো একে অপরের মুঠোয় । তবে এই শ’খানেক দর্শকের ভিড়ে কেউ একজন নিজের গাউন খাঁমচে ধরলো। রাগে লাল হয়ে আসলো তাহার মুখশ্রী। মায়াবি বদনখানায় ফুটে উঠলো হিংস্রতা। তবে সেকেন্ড কয়েকের মধ্যেই তা মিলিয়ে গেল। এবার তাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ভেতরে জমা হয়ে থাকা এতোদিনের আক্ষেপ, অভিমান আর অভিযোগ নিয়ে । যা আর কোনোদিন প্রকাশ করা হবে না।

স্টেজ লাইট গুলো বর-কনের উপর ফোকাস করা হলো। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকলো….

– Teri Meri Gallan
Ae Ho Gayi Mashhoor
Kar Na Kabhi Tu Mujhe Nazron Se Door
Kithe Chali Ae
Tu Kithe Chali Ae
Tu Kithe Chali Ae

Jaanda Ae Dil
Yeh Toh Jaandi Ae Tu
Tere Bin Main Na Rahun Mere Bina Tu
Kithe Chali Ae
Tu Kithe Chali Ae
Tu Kithe Chali Ae

Kaatun Kaise Raatan Oh Saawre?

Jiya Nahi Jaata Sunn Baawre?
Ke Raataan Lambiyan Lambiyan Re
Kate Tere Sangeyan Sangeyan Re
Ke Raatan Lambiyan Lambiyan Re
Kate Tere Sangeyan Sangeyan Re….

বর-কনে উভয়েই নাচের পুরোটা সময় একে অপরের দিকে বিমোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে নাচটা কভার করলো। গান শেষ হতেই সকলের হইহল্লুর পড়ে গেলো। তারপর ধীরে ধীরে অধিকাংশ রাই এই গেইমে অংশ নিলো। আর যে যার গিফট বুঝে নিলো।

এবার পুরোটা রুম নিরব। লাইট কেবল শুভ্রার উপর ফোকাস করা।

– আজকের অনুষ্ঠানের এই গেমটিতে অংশগ্রহণ নেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। এবার আমিও এই গেমটা অংশগ্রহণ করতে চাই। আমিও কিছু করতে চাই।

কাঁপাকাঁপা কন্ঠে এটুকু বলেই থেমে যায় শুভ্রা। আশ্চর্য ! হঠাৎ কেন তার গলা কাঁপছে ? হয়তোবা….অনেক বছরের না করা একটা কাজ সে আজ করে বসবে। বড় একটা শ্বাস নিয়ে এগিয়ে যায় সামনে। উদ্দেশ্য বাবা!

নিজের দিকে নিজের মেয়েকে এগিয়ে আসতে দেখে খানিকটা অবাক হয় মিস্টার নেওয়াজ মির্জা । চোখে মুখে ভর করে আকাশসম বিস্ময়তা। তাকে নিয়ে আবার এই মেয়ে কি করবে ? বুঝে আসলো না মিস্টার মির্জার। তাই তিনি কেবল নীরব দর্শকের মত চেয়ে রইলেন মেয়ের পানে। মেয়ে তার নিকটে ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে…

– বাবা ! উইল ইউ বি মাই পার্টনার অফ পয়েম রিসাইটার ?

মিস্টার মির্জা খানিক সময়ের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে শুভ্রার পানে অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলেন। কেবল তার শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হতে শুরু করল । একদিকে আনন্দ তো আরেক দিকে ভয়। মেয়েটাকে কতগুলো বছর পর তাকে বাবা বলে ডেকেছে! আনন্দে তার আট্টিখানা ব্যাপার। কিন্তু…..

আনন্দের উল্টোপিঠে লেখা আছে মৃত্যু ! তাও শখের মেয়ের! নিথিয়া মির্জা শুভ্রা যে! মেয়ের জীবন বিপন্ন হওয়ার কথা স্মরণে আসতেই আচমকা ভয় পেতে শুরু করলেন তিনি। আড়ালে তো সব ঠিক ছিল!

আশেপাশে চোখ বুলালেন। নির্দিষ্ট কাউকে খোঁজার চেষ্টা চালালেন বুঝি!
চোখ আটকে গেলো কোথাও! মুহুর্তের মধ্যেই তার কপাল ঘামতে শুরু করল। তবে কি তিনি মেয়েটাকে পেয়েও হারাতে বসবেন ? নাকি…..

#চলবে?

#প্রণয়ডোর
|৩৮|
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা

– বাবা ! উইল ইউ বি মাই পার্টনার অফ পয়েম রিসাইটার ?

মিস্টার মির্জা খানিক সময়ের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে শুভ্রার পানে অবাক দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলেন। কেবল তার শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হতে শুরু করল । একদিকে আনন্দ তো আরেক দিকে ভয়। মেয়েটাকে কতগুলো বছর পর তাকে বাবা বলে ডেকেছে! আনন্দে তার আট্টিখানা ব্যাপার। কিন্তু…..

আনন্দের উল্টোপিঠে লেখা আছে মৃত্যু ! তাও শখের মেয়ের! নিথিয়া মির্জা শুভ্রা যে! মেয়ের জীবন বিপন্ন হওয়ার কথা স্মরণে আসতেই আচমকা ভয় পেতে শুরু করলেন তিনি। আড়ালে তো সব ঠিক ছিল!

আশেপাশে চোখ বুলালেন। নির্দিষ্ট কাউকে খোঁজার চেষ্টা চালালেন বুঝি!
চোখ আটকে গেলো কোথাও! মুহুর্তের মধ্যেই তার কপাল ঘামতে শুরু করল। তবে কি তিনি মেয়েটাকে পেয়েও হারাতে বসবেন ? নাকি….

মিস্টার মির্জার ভাবনার মধ্যেই শুভ্রা এগিয়ে আসে। হাটু মুড়ে বসে পড়ে বাবার সামনে । তার চোখে মুখে লেপ্টে আছে অন্যরকম এক প্রশান্তির ছাঁয়া। হাতে কারোর স্পর্শ পেয়ে মাথা তুলে তাকালেন তিনি। মেয়েরা আবদার খানা মুখ সামনে প্রকাশ হলো। চারিপাশে তিনি তাকালেন। উৎসুক জনতা কেবল বাবা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন একটা মুহূর্তে মিস্টার মির্জা না করতে পারলেন না। কেবল মৃদ্যু হাঁসলেন আর উঠে দাড়ালেন মেয়ের হাত ধরে। শুভ্রা বাবার হাতটা শক্র করে মুঠ করে সামনে এগিয়ে যায়।

আরাফ কিংকর্তব্যবিমুঢ়! কি রিয়াকশন দেবে সেটাই সে ভেবে কুল পেলো না। বাবা ? রাজি হলো? কিন্তু কেন?!

আরাফের মনের কোণে জন্ম নেওয়া কয়েকগুচ্ছ প্রশ্ন আর চিন্তা নিমিষেই দমে গেলো। কানে আওয়াজ আসলো শুভ্রার সুমিষ্ট কন্ঠস্বরের। মেয়েটা আবৃত্তি করছে…

– বাহিরপানা অন্ধকারটায় একটু পলক ফেলো,
জোনাকিরা কেমন করে ছড়িয়ে দিচ্ছে আলো।

হঠাৎ মনে ইচ্ছে জাগলো,জোনাকিদের মুঠোয় নিবো!
ছুট্টে চললাম খুব! ব্যর্থ হলাম।
হাঁপিয়ে গিয়ে বসে পড়লাম।
ততক্ষণাৎ আমার বাবা এলো!

– মামনি আমার বসে কেনো? ঘাম জমেছে যে!

– ব্যর্থতার কষ্টে ফুঁপিয়ে উঠলাম। দুই হাঁটুতে মুখ গুঁজলাম। বাবা আসলো এগিয়ে। আদরমাখা কন্ঠে শোধোলো,

– কি এমন হলো ? আমার কথায় ফুঁপিয়ে উঠলো মিষ্টিকন্যা যে? কেউ মেরেছে? বকেছে কেউ? তবে এই নিকষ কালো আঁধারে মিষ্টি কন্যাকে ভয় দেখাইনি তো কেউ?

– মাথা উচিঁয়ে তাকালাম। অশ্রুসিক্ত আখিঁযুগলে সামনে এগিয়ে গেলাম। খুব যতনে হাত বুলিয়ে অধর ছুঁইয়ে দিলাম।

– আমি বাবাটা এলোমেলো হাঁসলাম। মিষ্টিকন্যার অশ্রুর কারণ উপলব্ধি করলাম। অতঃপর এক মুঠ জোনাক পোকা হাতে ধরিয়ে দিলাম।

– ওমা! কি চমৎকার। বাবা অসম্ভব কেউ জয় করলো? অবিশ্বাস্য যেনো! শেষে বাবার একটি কথাই মাথায় গেঁথে রইলো,

“অসম্ভব কথাটি বলিবে না আর। অসম্ভব শব্দ মানেই সম্ভবের সমাহার!”

সকলেই মুগ্ধ হয়ে বাবা মেয়ের পানে চেয়ে রইলেন। বাবা সমান তালে তাল মেলালেন। তাদের অতিপরিচিত একটি কবিতা। যে কবিতার রেশ ধরে সূচনা হতো ঝগড়ার। কেন এই দারুণ কবিতাটি কেবল নিজের মেয়ে আর তিনি আবৃত্তি করেন ! কেনো শিলু আহমেদ নয়?

দুষ্টু-মিষ্টি পরিবার টা নিমিষেই হারিয়ে গেলো। চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো শুভ্রার। বাবার আবৃত্তি তে মনযোগ দিলো।
মিস্টার মির্জা বহু বছর পর আবৃত্তি করছেন কবিতা টি। সেজন্যই তো বার কয়েক আটকে গেলেন। কিন্তু দুর্দান্ত মেয়েটা বুদ্ধি নিয়ে বাবার সাথে আবৃত্তি করে , বাবার ভুল থেকে বাচিয়ে নিচ্ছে।

ধীরে ধীরেই হঠাৎই মিস্টার মির্জা আবৃত্তি তে পরিপ্বক্ক হতে লাগলেন। অতঃপর আবৃত্তির সমাপ্ত হলো। সকলেই কড়তালি দিলেন। বাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি উপহার দিলো সে।

– সিটে গিয়ে বসুন , প্লিজ।

নেওয়ার মির্জা নিশ্চুপে চলে এলেন। শুভ্রা মাইক মুখে নিয়ে বলতে শুরু করলো,

– হেই পিপলস! বোরিং হবেন না প্লিজ! আমার পার্টিসিপেইট করা কিন্তু শেষ হয়নি। আমি এখন একটা গল্প বলবো। আমার জীবনের গল্প।

এইটুকু বলেই চুপ মেরে যায় শুভ্রা। ফের বলতে থাকে,

– শুনতে ইচ্ছুক তো নাকি ? না হলে চলে যাচ্ছি…. যাবো?

সকলেই সমস্বরে ‘না না না’ বলে উঠলো। স্বস্তির শ্বাস ফেলে সে। আল্লাহর নাম নিয়ে বড় একটা শ্বাস নিয়ে নিলো। আগুনে পা দিতে চলেছে সে। কেবল আল্লাহ পাক সহায় থাকলে আগুন থেকেও বের হয়ে সে আসতে পারবে। অতঃপর শুরু করলো….

– এক বাবার রাজ্যে ছিলো দুই রাজকন্যা আর এক রাজপুত্র। পরিবারের বড্ড আদরের যেমন এই তিন সন্তান ছিলেন। তেমন ভাইসহ বাকী সকলের চোখের মণি ছিলো দুই রাজকন্যা। তারা যমজ ছিলো। একে অপরের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য ছিলো না। রাজা-রানি ও গুলিয়ে ফেলতেন কোনটা বিণু আর কোনটা শিলু! হ্যাঁ তাদের বড় রাজকন্যা ছিলো সাইয়্যারা আহমেদ বিণু আর ছোট রাজকন্যা সামাইরা আহমেদ শিলু।

তারপর একদিন দুই যুবক এলো। এক মেয়েকেই দুজনের পছন্দ হলো। তারা সম্পর্কে বন্ধু ছিলো। বন্ধুত্ব ভাঙনের ভয়ে কেউই আর এগোলো না। তারপর সত্যিটা জানা গেলো। দুই রাজকন্যা তাদের সামনে এলো। পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলো উভয়েই। তাদের উপাধি কাকতালীয় ভাবে মিলে গিয়েছিলো। তাই ব্যবসায় তাদের ঘোর সুবিধা হলো!

ওহ! বলাই হয়নি। সেই দুজন যুবক ছিলেন আসলাম মির্জা আর ফাইয়াজ মির্জা। বিনু ছিলেন আসলাম মির্জার ওয়াইফ আর শিলু ছিলেন ফাইয়াজ মির্জার ওয়াইফ।

ব্যবসায়িক সুবিধার্থে বাহিরের লোকেরা তাদের বন্ধুত্বের পরিচয় কেউ জানলো না। কেবল জানলো দুই ভাই। ঝামেলা করতে এলো না কেউ ই। সম্পর্ক ভালোই চলছিলো। দুজন একই ফ্ল্যাটে থাকতেন। আসা যাওয়াও খুব হতো। বিণুর কোল আলো করে আসলো একটা ছেলে। নাম রাখা হয় মিশরাদ মির্জা । তার ছয় বছর পর ফুটফুটে কন্যা সন্তান আসে শিলুর কোলে। মেয়েটার নাম রাখা হয় নিথিয়া মির্জা।
তখনই ব্যবসায়িক কারনে আলাদা হয়ে যায় দুজনেই। কারন বিজন্যাস আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলো। বিনু আর ওনার হাসব্যান্ড ফাইয়াজ মির্জার কথায় সেখানটায় যাওয়ার জন্য মনস্থির করলেন। একটা সময় তারা চলেও গেলেন। দেশের বিজন্যাস দেখা-শোনা করতে লাগলেন ফাইয়াজ মির্জা।

এইভাবেই কেটে গেলো চারটি বছর। একদিন অফিসের দরকারী কাজে দেশে আসতে হয়েছিলো আসলাম মির্জাকে। অনেকদিন যেহেতু নিজ দেশের মাটিতে পা রাখেননি। তাই পুরো পরিবার নিয়েই আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। ফাইয়াজ মির্জার সাথে কথাবার্তা বলে সাতদিনের জন্য ছুটি নিয়ে এসেছিলেন পুরো পরিবার।
মিরশাদ মির্জা তখন বেশ ভালোই বুঝে। দশ বছরের ছেলেটা কী না! তবুও ছেলেটা খেলার ছলে বোকামী করে বসলো। ম্যানেজার আংকেলের সাথে একটা গেইমে পার্টিসিপেইট করে একটা কাগজ ছিড়ে ফেলে। কাগজটা অধিক ইম্পর্ট্যান্ট ছিলো। যার কারনে ফাইয়াজ মির্জা এতোটাই রাগান্বিত হয়ে যান যে তিনি ছেলেটার গায়ে হাত উঠাতে একবার ও ভাবলেন না।

শেষের চড়ে একটা দাঁত খুলে গিয়েছিলো ছেকেটার। আসলাম মির্জা কেবল অফিসে এসে এই দৃশ্য নজরে নিলেন। ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ম্যানেজার আর নিজ ছেলেকে অনবরত প্রহার করছেন ভাই ফাইয়াজ মির্জা।

ব্যাপারটা মনে দাগ কাটলো খুব। সত্যিই সে ফাইয়াজের ভাই হয়ে উঠতে পারেনি, নাহলে ভাইয়ের ছেলেকে এইভাবে কেউ…? না, কখনোই না । ফাইয়াজ মির্জার চার বছরের ফুটফুটে মেয়েটা ‘বাবা’ বলে দৌড়ে আসছিলো। বাবা এতোটাই দিকশূণ্য ছিলো যে মেয়েকে অব্ধি ধাক্কা দিলেন! ফলস্বরূপ মেয়েটা একটা কাচের নিকট পড়ে যায়। মেয়েটার হাতটা কেটে যায়। আসলাম মির্জা কেবল ভাইয়ের কর্মকাণ্ড দেখলেন কিছু সময়। তারপর এক পলক ফ্লোরে পড়ে কান্না করা মেয়েটার দিকে তাকালেন। এগিয়ে গিয়েও গেলেন না। শক্ত থেকে ছেলেকে ছুটিয়ে নিয়েছিলেন। শব্দহীন পায়ে বিনাবাক্যে কক্ষ ত্যাগ করেছিলেন।

এরুপ জঘন্য ঘটনায় ফাইয়াজ মির্জা অনুতপ্ত ছিলেন খুব। ক্ষমা চাইতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু আসলাম মির্জার কি যেনো হলো তিনি প্রপার্টির ভাগ চাইলেন। তারপর….

#চলবে?

(রেসপন্স আশা রাখছি !)