#প্রণয়ডোর
|৪২| (সমাপ্ত)
-রামিশা আঞ্জুম বুশরা
– তাহলে একটা প্রশ্নই রইলো যে , সবকিছুই যখন অর্ক মির্জার তাহলে ফাইয়াজ মির্জা কি করছিলেন? তাহলে বলছি শুনুন! দিনের বেলায় ফাইয়াজ মির্জা আর রাতে অর্ক মির্জা থাকতেন। রাতের বেলায় ফাইয়াজ মির্জা নিজের স্ত্রী কে খোঁজার অভিযান চালাতেন আর দিনে তো এমনিতেও তিনি বাসায় থাকতেন না। তাই সুবিধা ই হতো। অপরদিকে অর্ক মির্জা ভাইকে সাহায্য করতে ম্যানেজারের সাথে জড়িত মেয়েলি মানুষ টিকে ধরবার চেষ্টা করতেন।
বলা যায় আড়ালে থেকে যেমন মা-মেয়ে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন সফলতার জন্য ঠিক তেমন এককালীন শত্রুর মতো হয়ে যাওয়া ভাই ও ভাইয়ের করুণ পরিস্থিতিতে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়!
আর আজ এ অব্দি!”
মহিলার কথা শেষ হতেই দাঁড়িয়ে যান নেওয়াজ মির্জা। তাহলে কি তিনি মুক্তি পেলেন অবশেষে? মস্তিষ্ক উত্তর দিলো, হয়তো!
অপরদিকে ম্যানেজার লোকটি এদিক-ওদিক তাকিয়ে পালাবার পথ খুঁজলেন। কিন্তু চলে আসে পুলিশ। হ্যান্ডকাফ পড়ানো হয় তাকে। সেই মহিলাটি এগিয়ে আসলেন নেওয়াজ মির্জার দিকে। ওনার দিকে তাকিয়ে ইশারায় কাউকে বলে দুজন ব্যক্তিকে নিয়ে আসেন। যিনি একদম ফাইয়াজ মির্জার মতোই দেখতে। ম্যানেজার কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– পাপ বাপকেও ছাড়ে না। এতোদিন আমার স্বামী সন্তানের থেকে আলাদা রেখেছো তুমি। তোমার তো কঠিন শাস্তি হওয়া চাই!
নেওয়াজের আতংকিত উত্তর,
– কে,কে তুমি?
মুখের মাস্ক টা খুলে ফেলেন মহিলা। সু-উচ্চ কন্ঠস্বরে বলেন,
– আমি! সামাইরা আহমেদ শিলু।
ম্যানেজার চুপসে গেলেন। শিলু পাত্তা দিলেন না। এগিয়ে গেলেন এলিজার বাবার নিকট। পুলিশ অফিসার কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
– অফিসার! এনাকেও হ্যান্ডকাফ পড়ান। এনিও আন্ডারওয়ার্ল্ডের অন্যতম ক্রিমিনাল।
অফিসার উত্তর দিলেন,
– ম্যাম, প্রুভ?
– সব নেওয়াজের সাথেই দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ এগিয়ে এসে হ্যান্ডকাফ পড়াতে নিলেই এলিজা এগিয়ে আসে। মেজাজী কন্ঠে শোধায়,
– আমার বাবাকে এইভাবে গ্রেফতার করতে পারেন না। কোনো প্রুভড নেই। থাকলেও আমি মানি না।
কথা শেষ করেই দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে শুভ্রার সামনে। বাজখাই গলায় বলে উঠে,
– হাউ ডেয়ার ইউ শুভ্রা। থার্ড ক্লাস একটা মেয়ে। তোমার এতো বাজে ইনটেনশন কেনো? নিজের বান্ধবীর বয়ফ্রেন্ড কে বান্ধবীর হাতে তুলে দেওয়ার জন্যই কি এইসব মিথ্যে নাটক সাজাচ্ছো..?
শুভ্রা ভ্রু কুচকে তাকালো। কাঠকাঠ গলায় উত্তর দিলো,
– মেজাজ দেখানো আমার পছন্দ নয়। চোরের মেয়ের বড় গলা তা বোঝাই যাচ্ছে।
– শুভ্রা!
বলেই গাতে হাত তোলার সাহস দেখায় সে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। ধরে ফেলে শুভ্রা। হাত টা ঘুরিয়ে এলিজার পেছন দিকে নিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
– নিজের পিঠ বাঁচাতে চাইলে কেটে পর ন’ষ্টা নারী! আমার সাথে লাগতে আসিস না। তোর প্রথম স্বামী কেও কিন্তু এইখানে আনতে পারি।
দমে যায় এলিজা। বাঁধন ছেড়ে দেয় শুভ্রা। সুরেলির সামনে গিয়ে তাকে শোধায়,
– এরম টা না করলে আমার জীবন টা আরোও রঙিন হতো খালা! আর আপনাকে কিন্তু আমার নানাভাই আলাদা করেননি। করেছিলো নানার শত্রু। যিনি অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। যাইহোক! এ অবধি করা সকল পাপের শাস্তি আপনিসহ, ম্যানেজার সাহেব ও পাবেন। বিদায়!
শুভ্রা কথা শেষ করে। আর পুলিশ ও নিজের কাজ করে। অপরাধীদের খুব সতর্কতার সহিত নিয়ে চলে যায়। গেস্ট রা কেবল দর্শকের মতো কাজ করলো, কেউ কিছু বললো না । শুভ্রা এগিয়ে গিয়ে মায়ের হাতের মাইক টা নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলে,
– আম এক্সট্রিমলি সরি। আজকের দিনিটাই বেছে নিয়েছি কারন এই বিয়েটা হওয়ার নয়, এছাড়াও আজ সকলেই উপস্থিত ছিলো। এবার আমরা একটু বিয়েতে নজর দেই।
কথা শেষ করেই ফারিহা কে টেনে নিয়ে আরাফের পাশে বসায়। কাজী সাহেব কে উদ্দেশ্য করে বলে,
– আংকেল বিয়েটা পড়ান!
বাঁধা দিতে আসে এলিজা। তখনই এলিজার প্রথম স্বামী ডেভিড আসে। যাকে বিদেশে সে বিয়ে করেছিলো। অতঃপর সত্যি প্রকাশ্যে আসে। লজ্জায় অপমানে চলে যায় এলিজা আর তার পরিবারের লোকেরা। এদিকে প্রথম প্রথম ফারিহা আরাফকে বিয়ে করতে অনীহা করলেও যখন তাকে পুরো সত্যি বলা হয় তখন আর দ্বিরুক্তি করেনি। বিয়েতে মত দেয়। অতঃপর পূর্ণতা পায় তাদের ভালোবাসা।
•
সকলকে আপ্যায়ন করেছে শুভ্রার পরিবার। গেস্ট’রা সন্তুষ্ট! এবার ড্রয়িংরুমে বসে আছে সকলেই। আবির,শুভ্রা, আর তার মা-বাবা। সেইসাথে ফারিহা,তাসবি আর তার মা, আরাফ এবং তার মা বাবা।
আবিরের কথা সবাইকে জানানো হয়েছে। সকলেই বেশ খুশি। এদিকে শুভ্রা তার বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। এটা-সেটা বলে খিলখিল করে হাঁসছে। অনেকদিন পর তার শান্তির কোলটা নিজের আয়ত্ত্বে এসেছে যে। এখন আর কোনো ভয় নেই। সব বিপদমুক্ত হলো।
উপরে সার্ভেন্ট রা আরাফ-ফারিহার ঘর সাজাচ্ছে। আর নিচে সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। সবাই দ্বিধামুক্ত। এই খুশিতে একটা খেলা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিলো আরাফ-ফারিহা । সব স্বাভাবিক করার ছোট্ট প্রয়াস। ছোট বড় সকলেই রাজি হলো। অতঃপর বাহিরে বেরিয়ে আসে তারা।
বড় মাঠটায় ছেলেদের চোখ বেঁধে বউ বের করার গেইম স্টার্ট হলো। একে একে সকলেই নিজেদের বউ খুঁজে নিলো। তবে যখন তাসবির টার্ন আসে তখন ঘটে ভিন্ন গল্প। শুভ্রার পাশে ছিলো ফারিহা। প্রথমে ফারিহার হাত ধরে টান দিবে দিবে এ অবসস্থায় শুভ্রা কে এক টানে নিয়ে দৌড় শুরু করে। যা দেখে প্রায় সকলেই ফিক করে হেঁসে ফেলে! পুনরায় নীল নীলাঞ্জনা বাড়িটায় খুশির প্রদীপ জ্বলন্ত হলো!
~সমাপ্ত