হৃদয়ের দখিন দুয়ার পর্ব-২৩+২৪

0
385

#হৃদয়ের_দখিন_দুয়ার
#পর্ব-২৩
“তোর কী মাথা খারাপ? এখনই বাচ্চা ক্যান নিতে গেলি?”

সুপ্রীতির মন টা খারাপ হয়ে গেল মুহুর্তেই। সারা দুনিয়ার মানুষ ওর প্রেগন্যান্সির খবরে খুশি হয়েছে। শাশুড়ী খবর শুনেই দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছেন আগে। ননদ, ভাসুর সবাই কতো খুশি। বাবা, প্রকৃতিও কতো খুশি হলো অথচ মায়ের গলায় উচ্ছ্বাসের পরিবর্তে বিরক্তি। সুপ্রীতি স্বাভাবিক গলায় প্রশ্ন করলো,

“কেন তুমি খুশি হও নি?”

“এখন কী তোর বাচ্চা নেবার সময়? ”

“মা আমরা কতদিন পর এভাবে ফোন কলে কথা বলছি?”

স্বপ্না থতমত খেলেন এবার। সত্যিই সেই ঘটনার পর সুপ্রীতি মা’কে কল করে নি। শীতে হাসের মাংস, চালের আটার রুটি খেতে পছন্দ করে বলে গত মাসে সেগুলো করে পাঠিয়েছিল। প্রকৃতি সেই বক্স নিয়েই ফিরে এলো। অর্ণব কে ফোন করেছে বেশ কয়েকবার। এক পর্যায়ে খেয়াল করলো যে তাকে ব্লক করে দেয়া হয়েছে। এরকম অপমান স্বপ্নাকে করার দু:সাহস কেউ করে নি কখনো। অথচ নিজের পেটের সন্তানের থেকে পাচ্ছেন। সুপ্রীতির প্রেগন্যান্সির খবরে অর্ণব ফুল, মিষ্টি পাঠালো। সেই সঙ্গে কল করে বলল,

“আপনি এখন থেকে আপনার মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন। আর আমার এতো টা রুড হবার জন্য সরি ফিল করছি। ”

স্বপ্নার মনে অনেক কিছু থাকলেও মুখের মধু ঠিক ছিলো। তিনি একটু কান্নার ভাব করলেন। ওটুকু নাটক করতে হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আগুনের ফুলকি গুলো ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন।

স্বপ্নার গলার স্বর খানিকটা নমনীয় হলো। বললেন,

“অন্তত তিনটা বছর সময় নিতি?”

সুপ্রীতি হেসে বলল,

“অর্ণব শুনলে কী বলতো জানো? বলতো এখন তোমার মা ঠিক করে দিবে যে আমরা কিভাবে ফ্যামিলি প্ল্যানিং করব!”

স্বপ্না শুনলেন নিশ্চুপে। মেয়ের এই একটা কথায় স্পষ্ট বোঝা যায় অর্ণবের কাছে তার অবস্থান। এতো অপছন্দ ঠিক কী কারণে করে অর্ণব।

“আচ্ছা শোন, আসবি কবে?”

“জানিনা।”

“একি কথা? তোর তো এখন এখানে থাকতে হবে? ”

“প্রেগন্যান্ট হলে মেয়েরা বাপের বাড়িতে যায় এই চিরাচরিত নিয়ম আমি ভাঙতে যাচ্ছি মা। না তোমার রাগের কন্ট্রোল আছে আর না এখন আমার আগের মতো ধৈর্য্য আছে। তারচেয়ে এখানেই ঠিক। ”

“আজেবাজে বলিস না। প্রেগন্যান্সি সহজ না। ক’টা বাচ্চা জন্ম দিয়েছিস তুই আগে। এই সময় কতো যত্ন দরকার হয়। তোর শ্বশুর বাড়ির মানুষ যত্ন করবে? আমাকেই লাগবে। ”

সুপ্রীতি মন খারাপ করে ফোন রেখে দিলো। মন খারাপ ভাব স্থায়ী হলো না বেশীক্ষন। অর্ণব টেক্সট করেছে। আগের চেয়ে যত্নের পরিমাণ বাড়ছে। কতো খুশি হয়েছে ছেলেটা। প্রথম কথাই ছিলো,

“সিরিয়াসলি সুপ্রীতি! আমি বাবা হতে যাচ্ছি? আর তুমি মা? সিরিয়াসলি? কয়মাস চলছে তোমার? আর কয়মাস লাগবে বাচ্চাটার আসতে?”

সুপ্রীতি খুব হাসলো অর্ণবের পাগলামি দেখে। পরিচিত সবার বাসায় ফুল মিষ্টি পাঠালো। সুপ্রীতির কেমন অন্যরকম লাগছে। আনন্দ লাগছে ভীষণ, অবর্ননীয় আনন্দ। কল্পনায় দেখতে পাচ্ছে ভীষণ ই মিষ্টি একটা বাচ্চা হাসছে, কাঁদছে। এমন সুখের কল্পনা কখনো আসে নি এর আগে ওর জীবনে। কখনো আসে নি।

***
নাতাশার একা বাসায় ভয় লাগে। রাত, বিরাতে কোনো আওয়াজ হলেই ঘুম ভেঙে যায়। মাঝেমধ্যে ওয়াশরুমে বেশী সময়ের জন্য গেলেও টেনশন হয়। এরমধ্যে পালক একদিন খাট থেকে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেল। ওয়াশরুমের শাওয়ারের শব্দতে মেয়ের কান্না টের পেল না। তাই ভাবছে একটা রুম সাবলেট দিবে কোনো মেয়েকে। সারাক্ষণ সাথে না থাকলেও তবুও তো একজন বাসায় আছে এমন মনে হবে। কেউ নেই এই শুন্যতা কিছু টা হলেও তো ঘুচবে।

***
রুবাব নতুন বাসা নিলো। আগের বাসাটা এতো এক্সপেনসিভ ছিলো যে সেখানের সবকিছুতে মায়া জন্মানো সত্যেও ছাড়তে হলো। ইকরা চলে যাবার পর প্রাথমিক খারাপ লাগা টুকু কাটিয়ে উঠে রুবাব আসলে ভালোই আছে। যখন ইচ্ছে হচ্ছে ঘুমাচ্ছে, ইচ্ছেমতো বই পড়তে পারছে। সিরিজ, মুভি দেখতে দেখতে ঘরের কাজ করতে পারছে। নিজের কাজও বেশ ভালো এগুচ্ছে। সবচেয়ে বড় শান্তি হচ্ছে যখন তখন ম্যুড অফ হচ্ছে না। অসুবিধা একটাই হচ্ছে সেটা হলো ওয়ার্কআউট হচ্ছে না ঠিকমতো। একা থেকে আরাম বেশী উপভোগ করছে।

***
ইকরা ফাহাদের সঙ্গে এসেছে এবং সেই সঙ্গে কঠিন শর্ত জুড়ে দিয়েছে যে ফাহাদের বাসার কেউ এখানে আসতে পারবে না। আর ইকরাও ফাহাদের বাসায় যাবে না। ফাহাদ তার কর্তব্য চাইলে পালন করুক। ফাহাদ মেনে নিয়েছে। এখন ওর কাছে ফ্যামিলি সোসাইটি কোনো কিছুর ই গুরুত্ব নেই। ইকরার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাচ্ছে। ইকরা ওর টাকা পয়সার খবরও নিলো। ব্যাংকে বেশ ভালো টাকা জমেছে। কথায় কথায় ইকরা জানতে পারলো যে ফাহাদ বাড়ি থেকে আসার পর একটা এমাউন্ট মা’কে পাঠায়। আর ঝিলিক, রিয়াদকেও প্রতি মাসে কিছু টাকা দেয়ইকরা তখন কিছু বলে নি। আজ ব্রেকফাস্ট এর সময় ফাহাদ কে বলল,

“ফাহাদ একটা ব্যাপার শোনো। বাড়িতে টাকা পাঠালেও তুমি তাদের কাছে খারাপ থাকবে, আর না পাঠালেও তুমি খারাপ থাকবে। তুমি বড়, তাই লজিক্যালি তোমার কাছে ভাই বোনেদের এক্সপেক্টেশন থাকবে। কিন্তু তোমার ভাই বোনের মিনিমাম রেসপেক্ট টুকু তোমার প্রতি নেই। তাই তাদের পেছনে খরচা করা বন্ধ করো। এতোটা ইজি হতে নেই কোথাও, হলে কুকুরের মতো ট্রিট পেতে হয়। ”

ফাহাদ বুঝলো ঝিলিকের কান্ডটা এখনো ইকরা হজম করতে পারে নি। ও নিজেই তো পারছে না। হাত নিশপিশ করছিল বেশ কিছুদিন ঝিলিক কে মারার জন্য। গিয়েছিল কিন্তু পায় নি। ইশরাক ঠিক সরিয়ে দিয়েছে।

ফাহাদ ইকরার কথায় একমত হলো। বাড়িতে ঝিলিকের ব্যাপার টা নিয়ে কেউই অতো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। ছোট, অবুঝ বলে মাথায় তুলল। কিন্তু ফাহাদ তো এটা ভুলবেনা। ইকরার প্রস্তাব তাই যুক্তিযুক্ত মনে হলো।

****
অফিসে নতুন একটা প্রজেক্ট লঞ্চ হবে। এনার্জি ড্রিংক এর প্রজেক্ট। বিশাল বাজেট। এই প্রজেক্ট থেকে কমিশন কম করে হলেও দুই, তিন লাখ থাকার কথা। ফাহাদের হ্যান্ডেল করার কথা। আজ অফিসে দেখলো অন্য একটা ছেলে শিহাব নাম সে দেখবে। ফাহাদ এতো অবাক হলো যে খানিকক্ষণ মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো। এই প্রজেক্টের সমস্ত প্ল্যান , স্ক্রিপ্ট সব ওর করা। ক্লায়েন্টকে কনভিন্স পর্যন্ত ও করেছে অথচ ও’কে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।

কিবরিয়া সাহেব তার ডেস্কে ডেকে বলল,

“ফাহাদ তুমি সবকিছু শিহাব কে বুঝিয়ে দাও। ও ভালো করবে। ”

“কিন্তু এই প্রজেক্ট তো আমার দেখার কথা।”

“তুমি হেয়ার অয়েলের প্রজেক্টে সাবিনাকে হেল্প কইরো। ”

ফাহাদ আর কিছু বলল না। ডেস্কে আসার পর পাশের ডেস্কের রশিদ ভাই বলল,

“সাবিনা আপাকে হেল্প করার তো কিছু নাই ফাহাদ ভাই। এইটা একটা হিন্টস।”

“কিসের হিন্টস?”

“আপনাকে আস্তে আস্তে এখান থেকে সরিয়ে দেয়া হইতেছে। ব্যাকাপ প্ল্যান রাখেন মিয়া। প্রথমে ইকরা আর তারপর আপনি। আট বছর খেটে এই পজিশন পাইছেন। অন্য জায়গায় গেলে আপনি এই পজিশন জীবনেও পাবেন না। এর থেকে নিচু পজিশন থেকে শুরু করতে হবে। মেন্টালি প্রিপারেশন নিয়ে রাখেন। ”

আশ্চর্যজনক ভাবে ফাহাদ অস্থির বোধ করলো।

চলবে…..

#হৃদয়ের_দখিন_দুয়ার
#পর্ব-২৪
ঝিলিকের আরেকটা সেমিস্টার শেষ হলো। আবার কিছুদিন ছুটি কাটাতে পারবে। একটা শপিংমলের বিজ্ঞাপন চোখে পড়লো। একমাসের কাজ, স্যালারি দারুণ কিছু দিবে এমন না। ঝিলিক সেখানে গিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে এলো। ওরা সেদিন ই টেক্সট করে কনফার্ম করলো যে ঝিলিক কে সিলেক্ট করা হয়েছে। এই খবর শুনে ইশরাক খুব ই অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো,

“তোর টাকার দরকার সেটা আমাকে কেন বললি না?”

“ঠিক দরকার না। সময় টা কাজে লাগাচ্ছি। ”

“সেটার দরকার নেই ঝিলিক। বাসায় থাক, চাইলে ট্যুর দিয়ে আসতে পারিস। আমি টাকা দেব। ”

ঝিলিক তীর্যক হেসে বলল,

“ভবিষ্যতের জন্য জমাচ্ছি বুঝলে, তোমার সঙ্গে যখন ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবে তখন তো আর বাড়িতে আশ্রয় পাব না তাই এখন থেকে সাবধান হচ্ছি। ”

ইশরাক ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“হঠাৎ এসব নিয়ে ভাবছিস?”

“ভাইয়া আর ভাবীর ঘটনা থেকে একটা শিক্ষা নিলাম। ”

“বেশ ভালো। ”

“তোমার তো কিছুই ফেস করতে হয় না। সব আমাদের ই করতে হয়। ”

“হ্যাঁ খুব বুঝেছিস। তোমার আমার ব্যাপার টা থেকে বেরিয়ে আয়। স্ট্রাগল দুই পক্ষের ই হয়। ভাবী যেমন সাফার করছে তেমনি ইকরার হাজবেন্ডও করছে। দুজনের অবস্থান আলাদা হলেও কষ্ট কিন্তু একই। ”

ঝিলিক ঠোঁট উল্টে বলল,

“আচ্ছা। ”

ঝিলিক খাবারের পর প্লেট, বাটিগুলো ধুয়ে গুছিয়ে রাখলো। খালা বেশ কিছুদিন ধরে সকালে আসতে পারছেন না। দুপুরের পর এসে কোনোরকম কয়েকটা কাজ করে চলে যান। ঝিলিক রাতে রুটি বানিয়ে রাখে। আলু, পেয়াজও কেটে রাখে। সকাল উঠে নাশতা বানায়। ইশরাক প্রথম দিন বলেছিল, দরকার নেই তো। আমি বাইরে খেয়ে নেব। তুই ঘুমা।

“তুমি তো বাইরে খাবে? আমি কী খাব। নিজের চিন্তা করে বানাচ্ছি। খেলে খাও৷ ”

ইশরাক আর বারণ করে নি। ঝিলিক বোধহয় একটু শান্ত হচ্ছে। ইশরাক আসলে বুঝতে পারছে না এটা কে শান্ত হওয়া বলে নাকি শক্ত হওয়া বলে।

আজকের বালিশ দুটো পাশাপাশি রাখা। ইশরাক রেখেছে। ঝিলিক একটা বালিশ দূরে নিয়ে শুয়ে পড়লো। দুজনের কম্বলও আলাদা। ইশরাক ওর ঠান্ডা হাত টা ঝিলিকের ঘাড়ে রাখলো। ঝিলিক কেঁপে উঠে বলল,

“কী হলো? ”

“আজ হঠাৎ ওই কথা কেন বললি?”

“কোন কথা?”

“ডিভোর্স, ছাড়াছাড়ি এসব কথাবার্তা তো তুই কখনো বলিস না। সবসময় তো বলিস আমাকে বড় চাকরি করে দেখিয়ে দিবি, বয়ফ্রেন্ড যোগাড় করবি। আমার হার্ট অ্যাটাক করাবি আরও যেন কী কী। ”

“এমনিই। মেন্টালি প্রিপারেশন নিয়ে রাখছি। ”

“হঠাৎ কেন? ”

ঝিলিক জবাব দিলো না। ইশরাক এগিয়ে এলো আরেকটু। ঝিলিকের মাথার সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে বলল,

“চাকরি জুটিয়ে আমার হার্ট অ্যাটাক করিয়ে তারপর যাস। আমি ততদিন তোকে সহ্য করব। তোকে সহ্য করা অনেক কঠিন। তবে অভ্যাস যখন হয়ে গেছিস, তখন সেই পর্যন্ত থেকে যা। ”

ঝিলিক হাসলো। ঠিক সেই সময় অকারণে দুই ফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো। অভ্যাস! অভ্যাসটাও তো এক ধরনের ভালোবাসা। বাংলা গ্রামারে ইশরাকের একটা ছবি রেখে দেয়াও ছিলো ঝিলিকের অভ্যাস। গাছের প্রথম আম যেন আর কাউকে না দেয়া হয় সেটা প্রতি বছর মা’কে মনে করিয়ে দেয়াও একটা অভ্যাস।

ইশরাক গভীর আবেশে ঝিলিকের গালে চুমু খেল। একবার ইচ্ছে হলো ঝিলিক কে কাছে টানতে, কিন্তু বিবেকের কাছে হার মানতে হয়। এই মেয়েটা ও’কে সত্যি সত্যি ভালোবাসে। ও এখনো জানেনা যে কোনোদিন ওর মতো করে ঝিলিক কে ভালোবাসতে পারবে কী না।

ইশরাক সরে গেল। কিছুসময় কেটে গেল, দুজনেই জেগে। অবশেষে হার মানলো ইশরাক। ঝিলিক কে এক ঝটকায় ফেরালো নিজের দিকে। ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো পরম আবেশে। চোখ বন্ধ করতেই একবার চলচ্চিত্রের মতো ভেসে উঠলো আরেকটা মুখ। সুপ্রীতি! ছেড়ে দিলো ঝিলিক কে। ঝিলিক তাকিয়ে আছে, আধো আলোতে ওর চোখের জল দেখলো না ইশরাক। দ্বিধাদ্বন্দের বলয় কাটিয়ে আবারও বেপরোয়া হলো ইশরাক। এবার ঝিলিক জিতুক, সুপ্রীতিকে ভেবে ঝিলিক কে অপমান করবে না।

***
নাতাশা ঠিক করেছে ঘরে থেকে একটা কিছু করবে। প্রকৃতি আইডিয়া দিলো অনলাইন বিজনেসের। শাড়ি, জামাকাপড় এর বিজনেস ভালো চলবে। নাতাশা সেটাও ভাবলো, কতটুকু কী পারবে সেটা নিয়েও সন্দিহান। তবুও বসে থাকা যায় না, পালক কে একা রেখে চাকরিও করা সম্ভব না। একটা লোক রাখবে মেয়ের জন্য সেটাও ভাবতে পারে না। অনলাইনে বিজনেস শুরু করলেও মোটামুটি পরিচিতি লাগে, ওর সেটাও নেই। দুই চারজন আত্মীয় স্বজন হাতে গোনা আছে যারা ও’কে এখনো দেখতে পারে। আর আছে কিছু বন্ধু, তারা ওর দু:খে কতটা কাতর সেটা নিয়েও সন্দিহান।

অনেক ভেবেচিন্তে মেয়ের নাম দিয়েই অনলাইনে পেজ খুলে ফেলল। বেশকিছু শাড়িও আনালো। তিন চারদিনের মধ্যেই অচেনা একজন পাঁচটা শাড়ি কিনে ফেলল। নাতাশার চোখে পানি এসে গেল আনন্দে। ওই পাঁচটা শাড়ি বিক্রি হওয়ায় কনফিডেন্স এতো বেড়ে গেল যে মনে মনে ঠিক করলো একদিন মেয়ের নাম টা’কেই ব্র‍্যান্ড বানিয়ে ফেলবে।

***
অর্ণব এখনই বাচ্চাদের সমস্ত জিনিসপত্র কিনতে শুরু করলো। শীতের পোশাক থেকে শুরু করে গরমের পোশাক। সুপ্রীতিকে জিজ্ঞেস করলো,

“ছেলে হবে নাকি মেয়ে? কোন ধরনের খেলনা কিনব?”

“তুমি কী চাও?”

“আমার এক্সপেকটেশন একটাই, সুস্থ বেবী। ছেলে, মেয়ে যাই হোক। ”

“তাহলে? ”

“আসলে কোন ধরনের খেলনা কিনব সেটা নিয়ে কনফিউজড। ”

সুপ্রীতি হাসে। অর্ণবের মা একতলা ছেড়ে ওদের এখানে এসেছেন। সঙ্গে করে অবশ্য তার টিভিও আনা হয়েছে। সুপ্রীতির যখন ভালো লাগে তখন তার সঙ্গে বসে খানিকক্ষণ টিভি দেখে। স্বপ্না এসেছিলেন সুপ্রীতিকে নিতে, জোর করে হলেও নিয়ে যাবেন। সুপ্রীতি স্বাভাবিক গলায় বলেছিল,

“আমি যাব না মা। এখানে ঠিক আছি। ”

“এখন ঠিক আছিস, পরে অসুস্থ হয়ে যাবি। এখানে কে রেঁধে খাওয়াবে তোকে?”

“এখানে যারা আছে তারা না পারলে অর্ণব ব্যবস্থা করবে। ”

“চাকর, বাকরের রান্না খেতে পারবি?”

“এই ধরনের কথা বোলো না তো মা। শুনতে খারাপ লাগে। আমি যাব না, ব্যস এর বাইরে কথা হবে না আর।”

স্বপ্না মিষ্টি সুরে একই কথা অর্ণব কে বলেছে, অর্ণব সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিয়েছে, সুপ্রীতি যখন না বলেছে সেটা না। আপনি আর ফোর্স করবেন না। কোনো ধরনের মেন্টাল প্রেশার ও’কে দিবেন না।

স্বপ্না চলে গেল মুখ ভোতা করে। সেদিন বিকেলে টিভি দেখার সময় শাশুড়ী সুপ্রীতিকে বললেন,

“মায়ের বাসায় গেলা না ক্যান? আমি তো শুধু পাশে বসে থাকতে পারব। রান্নাবান্না করে খাওয়াতে পারব না ভালো, মন্দ। ”

সুপ্রীতির কী যেন হলো। কাউকে যে কথা বলা সম্ভব না, সংকোচ হয় বলতে সেটা শাশুড়ীকে বলল। বলল,

“মা একটুও খুশি না। বাচ্চা নেয়া ঠিক হয় নি এটা বলল। ”

শাশুড়ী উত্তেজিত গলায় বলল,

“তাইলে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত যাবে না। আমার অর্ণব কতো খুশি। বাপ হবার খবর শুনলে সবাই খুশি হয়। কিন্তু অর্ণবের এমন খুশি আমি কখনো দেখিনাই। কোনোদিন দেখিনাই। ”

সুপ্রীতি শাশুড়ীর কোলে মাথা রাখলো। এতোটা আন্তরিক সম্পর্ক ওদের না, ভালো সম্পর্ক থাকলেও ফর্মালিটির দেয়াল বজায় রাখতো। সেদিন একটু আদরও পেতে ইচ্ছে করছিল বোধহয়। মনে মনে বলল, মা আমিও ভীষণ খুশি। অর্ণবের মতোই খুশি। কিন্তু ওর মতো প্রকাশ করতে পারি না। তবে ওর প্রকাশে আরও বেশী খুশি হই।

চলবে….

সাবিকুন নাহার নিপা