#যাতনা_আমার
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব: ২৯
নিধিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে পাঁচ দিন হলো। মেয়েটা একেবারে ঘরকোনো হয়ে আছে। কারো সাথে তেমন কোনো কথাই তার বলা হয় না। একেবারে চুপচাপ থাকে। খাবার বেলায় সোহানা বা নিপা কে জোর করে খাওয়াতে হয়। মির্জা বাড়ির লোকেরা অনেকটাই চুপসে রয়েছে। অন্যদিকে নাভানেরও একই হাল। দিনরাত আল্লাহর কাছে দোয়া চায় নিজের কৃতকর্মের জন্য। তবু সোহানা নাভানকে নিয়ে অতোটাও চিন্তিত নয়। সে এডাল্ট, নিজেকে সামলাতে শিখে নেবে নিশ্চয়ই। নিধি ঘরের সাথে লাগোয়া বেলকনিতে বসেছিলো। শিউলি ফুলের গাছের দিকে নজর তার। ফুল নেই তবুও এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলো। আজকাল নিজের শরীর টাকেও তার প্রচুর ঘিন্না লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় শরীরটা কে কেটেকুটে ছিড়ে ফেলতে। এক বড়ো দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিধি। রুম থেকে অনবরত ফোনের আওয়াজ ভেসে আসছে। কিন্তু ফোনটা রিসিভ করতে মনে চায়না নিধির। আনুমানিক পনেরো টা কল তো হবেই। বিরক্ত হয়ে নিধি গিয়ে এবার ফোনটা রিসিভ করে।
-” বলুন, এতোবার কল কেনো দিচ্ছেন? ”
কিছুটা ঝাঁঝালো কণ্ঠেই প্রশ্ন করে নিধি। ফোনের ওপাশ থেকে ফাহাদ তেমন কোনো রিয়াকশন দেখায় না। শুধু শান্ত গলায় বলে ওঠে,
-” কখন থেকে ফোন করছি নিধি। দরকারী ফোনও তো হতে পারে? ”
নিধি কোনো উত্তর দেয় না চুপ করে রইল। ফাহাদ ফোনের ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব’লে,
-” দরজা টা খুলো। ”
-” মানে? ”
-” আমি সেই কখন তোমাদের বাড়িতে এসেছি। নিপা আন্টি তোমাকে দরজা খোলার জন্য এতোবার করে ডাকছে। কিন্তু তুমি? ট্রাস্ট মি, এখন দরজা না খুললে ভেঙে ফেলবো আমি। ”
নিধি ফোন রেখে দরজা টা খুলে ককন থেকেই নিপা ডাকছিলো। দরজা খুলতেই ফাহাদ কে দেখে নিধি। শান্ত অবিচল মুখ। নিধি সড়ে গিয়ে কাউচে পা উঠিয়ে বসে থাকে। ফাহাদ ধীর পায়ে হেটে নিধির পাশে বসে।
-” নিধি সেদিনের বিষয়ে কথা ব… ”
-” ওইদিনের বিষয়ে কিছু বলবেন না। আমার ভালো লাগে না জবাব দিতে। ”
ফাহাদের মুখের কথা থাকতেই নিধি কাঠকাঠ গলায় জবাব দেয়। ফাহাদ হতাশ হয়ে নিধির দিকে তাকায়। বড়ো মুশকিলে পড়া গেছে যেনো। নিধি কিছু না বললে বুঝবে কিভাবে? এদিকে নাভানেরও কোনো হদিস নেই। ফাহাদ যথাযথ নিজেকে শান্ত রেখে ঠান্ডা গলায় ব’লে,
-” আই নো নিধি, ঘটনাটা তুমি ভুলে যেতে চাও। বাট নিধি তুমি কি জানো? তোমার ঘটনাটা কোনো স্বাভাবিক নয়। এরা আগে থেকেই প্লেন করে সবটা করেছে। ”
নিধি এবার চোখ তুলে ফাহাদের দিকে তাকালো। কালো মনির চোখগুলো যে কতোটা রাত নির্ঘুমে কাটিয়েছে তা জানান দিচ্ছে যেন। ফাহাদ এবার নরম হয়ে বলে ওঠে,
-” প্লিজ নিধি বলো সবটা। তুমি কি চাওনা তাদের শাস্তি হোক? ”
নিধি চুপসে থাকে অনেক্ক্ষণ। কোনো কথা বলতে পারেনা সে। ফাহাদ নিধির হাতে ধরে রিকোয়েস্ট করে। নিধি চোরা চোখে একবার ফাহাদের দিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বলে ওঠে,
-” বিকালের পরপরই সেদিন আশাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে সিএনজি করে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিলাম। আর মাঝ রাস্তায় আসতেই লোকটার গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আমি বাইরে দাড়িয়ে ড্রাইভার আংকেল কে অনেক্ক্ষণ কল করি। উনি ফোন তুলেন না। হঠাৎ কেউ পিছন থেকে আমার নাকে রুমাল চেপে ধরে। তারপর আর আমার কিছুই মনে নেই। জ্ঞান ফিরতেই আমি ওই বাড়িতে নিজেকে আবিষ্কার করি। আর……
নিধির গলা কেঁপে যায় আর কোনো বলার মতো সাহস পায় না সে। ফাহাদ আর জোর করে না। নিধি দু’হাতে মুখ চেপে ধরে কাঁদতে থাকে। ফাহাদ নিধির পিঠে হাত বুলিয়ে কাঁদতে নিষেধ করে।
-” ওদের কাছে আমি কতো আকুতি মিনতি করেছি আমাকে ছেড়ে দিতে। জানেন? শেষ মুহূর্তে জ্ঞান হারাবার আগে আমি আমার মৃত্যু কামনা করেছি পর্যন্ত। ”
ফাহাদ চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিধির কান্না কিছুটা থেমেছে। খানিকক্ষণ দুজনেই চুপ করে কাটিয়ে দিলো। নিধি এবার গা এলিয়ে দিলো। ফাহাদ শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো নিধির দিকে। কিছুক্ষণ পরে কিছুটা মনে করার মতো ভয়ার্ত মুখে নিধি বলে ওঠে,
-” ওরা আমার ভিডিও করেছিলো ফাহাদ। আমার মনে আছে কিছুটা। ”
কিঞ্চিৎ ভ্রুকুটি কুচকে গেলো ফাহাদের। নিধির তাকিয়ে তাকে ধাতস্থ করলো। সে সবটা সামলে নিবে।
,
,
,
,
,
,
দুপুর তিনটে, ইনায়া ভার্সিটির রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। হোস্টেলে এখন যাবে না সে। ভেবেছে বাইরে থেকেই কিছু খেয়ে নিবে। তারপর যাওয়া যাবে। আজকে টিউশনিও নেই৷ ইনায়ার ভাবনার মাঝেই সামনে গাড়ি রাখে জায়ান। ইনায়া চোখ ঘুরিয়ে দেখে সেটা। ইনায়া একটু অবাক হয় জায়ানের চোখে আজ পাওয়ারের চশমা। ইনায়া কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই জায়ান মৃদু গলায় বলতে শুরু করে,
-” আর বলো না। গতকয়েক দিনের মাথা ব্যাথায়, ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। তিনি আমাকে চশমা ধরিয়ে এই হাল করে দিয়েছেন। ”
-” গুন্ডামী পনা অব্যাহত থাকলে কয়দিন পরে জানটাই হারাবেন। ”
জায়ান হাসলো সেটা শুনে। সে ইনায়ার কাছে এসে শান্ত গলায় বলে ওঠে,
-” গাড়িতে উঠো, আজকে একটা স্পেশাল জায়গায় যাওয়া হোক। ”
-” আমি লাঞ্চ করিনি এখনো, অতএব যাওয়া যাবে না। ”
জায়ান ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে। করুন গলায় ব’লে,
-” আমারো না লাঞ্চ করা হয়নি। চলো আমার সাথে এখুনি। ”
লাস্টের কথাটা শক্ত গলায় বলে জায়ান। ইনায়ার কিছু না বলে জায়ানের সাথে গাড়িতে উঠে বসে। চলতে চলতে প্রায় সময়ের ঘর এক ঘন্টা পেরিয়েছে। কিন্তু এখনো জায়ানের নিদিষ্ট জায়গা আসে নি। ইনায়া প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে জায়ানের দিকে তাকালো। কিন্তু তার কোনো হুঁশ জ্ঞান নেই। সে এক ধ্যানে গাড়ি চালাতে মগ্ন। শহর থেকে কিছুটা দূরে একটা রেস্টুরেন্টের দিকে গাড়ি থামায় জায়ান। ইনায়া কে হাতে ইশারা করে নামতে। ইনায়া গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে রেস্টুরেন্টে দিকে তাকায়। নেম প্লেটে জলজল করছে ‘গ্রাম পাহাড়ি’ নামটি। সম্পূর্ণ টাই বাঁশের বেত দিয়ে তৈরির। শুধু উপরে রঙিন টিনের ছাউনি। ইনায়া জায়ানের পিছন কাঠের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে। রেস্টুরেন্টের ভিতরের দিকটা খুব আধুনিক। আলাদা আলাদা কেবিন করা এখানে। ইনায়া কিছুটা অবাক হলো ভেতরের পরিবেশ দেখে। বাইরের দিকে বাঁশের বেত হলেও ভিতর দিয়ে তার উপর মাটির প্রলেপ দেওয়া। তার উপর বিভিন্ন রঙের নকশা আঁকা।একদম মাটির ঘরের মতো। জায়ান ইনায়া কে একটা কেবিনে বসিয়ে দিয়ে খাবার অর্ডার করতে যায়। ইনায়া কেবিনটা দেখে পুলকিত হলো অনেক। মেঝেতে মাদুর পাতা। মাঝখানে গোল আকৃতির কাঠের খোদাই করা নিচু সাইজের টেবিল সেট করা। এখানে আসন পেতে বসে সাচ্ছন্দ্যে খেতে পারবে। ইনায়া হাসিমুখে সেখানে বসে পরে। কেবিনে লাগোয়া ছোট্ট বেতের জানলা দিয়ে বাইরে তাকায়। এদিকটা অনেক নিরিবিলি। ইনায়া বাইরে এক ধ্যানে
দিকে তাকিয়ে থাকে। তন্মধ্যে জায়ান কেবিনে ঢোকে ইনায়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে, তড়িঘড়ি করে বসতে বসতে বলে ওঠে,
-” আর দশ মিনিট ওয়েট করতে হবে হরিণী। ওফ্ফ বড্ড দেরি হয়ে গেছে। ”
জায়ানের হঠাৎ কথায় ইনায়ার ধ্যান ভাঙ্গে। শান্ত দৃষ্টি স্থির করে জায়ানের পানে। অতঃপর মৃদু হেঁসে প্রশ্নের স্বরে বলে,
-” মন শান্ত হয়ে গেলো, জানেন? শহরের কোলাহল যানবাহনের হন সব থেকে মুক্ত এই জায়গাটা। আসলেই গ্রামের ফিলিংস আসছে। কোথায় পেলেন এর খোঁজ? ”
জায়ান ইনায়ার হাস্যজ্বল মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এমন কম সময় হয়েছে, ইনায়া তার সাথে হাসিমুখে কোনো কথা বলেছে। জায়ান আলতো হেঁসে জবাব দেয়,
-” দাদু থাকতে এই রেস্টুরেন্টে করেছিলাম। আইডিয়া টা তাঁরই ছিলো। উনার সাথেই এখানে আসতাম গ্রামীণ খাবারের স্বাদ নিতে। তিরি মারা যাওয়ার পর আজ তোমার সাথে আবার। ”
ইনায়া অবাকের স্বরে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
-” এখানে সত্যিই গ্রামের ও পাহাড়ি আইটেম পাওয়া যাবে? ”
-” হুম, কিন্তু এখন আমি বনমোরগ ছাড়া পাহাড়ি আইটেম আর কোনো অর্ডার করিনি। কারণ আমি তাদের খাবার দাবার বেশি একটা পছন্দ করিনা। কয়েক পদের ভর্তা আরো কিছু পদের খাবার। এতেই চলবে। দাদুর কারনে এটা ধরে রাখা। ”
ইনায়া ভ্রু কুচকালো,
-” কিন্তু আমার তাদের খাবার খুব পছন্দ। ”
-” তাই? বলো কি খাবে?”
জায়ান ঝটপট জিজ্ঞেস করলো। ইনায়া কিছুক্ষণ ভেবে ঝটপট উত্তর দিলো,
-” ব্যাঙের স্যুপ। ”
জায়ান বড়সড় চোখে ইনায়ার পানে তাকায়। ইনায়ার মুখে দুষ্টু হাসি। জায়ান হালকা হেসে বলে ওঠে,
-” স্যরি মেম, আমাদের রেস্টুরেন্টে এমন ডিস বানানো হয়না। ”
-” তাহলে, শামুক সেদ্ধ? হবে তো স্যার? আমার ইচ্ছে জীবনে একবার হলেও এইসব ট্রাই করবো। ”
বলেই উচ্চ স্বরে হেসে উঠে ইনায়া। জায়ান মৃদু হেঁসে তাকিয়ে থাকে ইনায়া দিকে। এই প্রানবন্ত ইনায়া কে তার প্রচন্ড ভালো লাগছে। আচমকা জয়ান ইনায়ার দিকে তাকিয়ে আলতোভাবে ঠোঁট নাড়িয়ে স্ফুট কন্ঠে বলে ওঠে,
-” চলো না হরিণী, দুজনে বিয়ে করে ফেলি। ”
জায়ানের আচমকা এমন কথায় হাসি থেমে গেলো ইনায়ার। দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে জায়ান তার দিকে তাকিয়ে। ইনায়া হকচকালো না। সেও শান্ত চোখে তাকিয়ে রইল জায়ানের পানে।
,
,
,
,
,
সোহানা মির্জা আজকে না পারতেই অফিসে এসেছেন। নিধি কে ফেলে আসতে তার মন সায় দিচ্ছিলো না। নিপার ভরসায় এসেছেন অনেকটা। দ্রুত কাজ সেড়ে জলদিই বাড়ি ফেরার তাড়া তার। তার আগেও এক জায়গায় যেতে হবে সোহানার।
এদিকে নাভানের স্তব্ধতা তাকে আরও পোড়াচ্ছে। টেবিলের এক কোনো কতো গুলো ফাইল পড়ে রয়েছে। সোহানা হাতে কলম ধরে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। তার ধ্যান ভাঙ্গে নাহিদ মির্জার হঠাৎ আগমনে। তিনি সোহানার সামনের চেয়ারে বসে হালকা স্বরে জিজ্ঞেস করে উঠে,
-” ফাইল গুলো এখনো সিগনেচার করোনি? বাড়ি ফিরতে হবে তো। ”
সোহানা তার এই কথায় কোনো জবাব দেয় না। শুধু মলিন মুখে বলে ওঠে,
-” মিজানুল করিম ফোন করে বলেছেন, একবার তাদের বাড়িতে যেতে। হয়তো কোনো জরুরি কথা আছে। ”
-” আমাদের সাথে কি কথা থাকতে পারে?
চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে নাহিদ মির্জা। সোহানা চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে শান্ত গলায় বলে,
-” হয়তো ইশান আর তিথির বিষয়ে। ”
চলবে..…………..……
#যাতনা_আমার
#সানজিদা_ইসলাম_সূচনা
#পর্ব : ৩০
নাভান ফাহাদের অফিসে এসেছে প্রায় ঘন্টা সময় ধরে। সে ফাহাদ আর জায়ান থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছে। নাভান বেস কিছুটা রেগেই রয়েছে। ফাহাদ বড়ো একটা নিঃশ্বাস ফেলে সামনে রাখা লেপটপে চোখ স্থির করে নাভানের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
-” কি করতে চাস এখন? ”
-” আর কি? অদিতি কে সাত টুকরো করতে না পারলে আমার মাথা ঠান্ডা হবে না। ”
রাগে ক্ষোভে হুংকার ছেড়ে বলে ওঠে নাভান। জায়ান আর আর ফাহাদ তার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। সুন্দর মায়াময় পুরুষালি মুখটা কতোরাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে, তার নিরব সম্মতি প্রকাশ করছে৷ সবসময়কার মতো পারফেক্ট হ্যান্ডসাম নাভান শাহরিয়ারের আজকাল দেখা পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেছে। জায়ান এবার শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,
-” ওকে কই পাবে তুমি? সে গভীর জলের মাছ। ধরতে পেলেও হাড়িয়ে ফেলবে। এখন বলো ওর ডিমান্ড কি? ”
নাভান জায়ানের পানে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে সকালের ঘটে যাওয়া ঘটনায় ফিরে যায়। নাভান সারা রাত জেগে প্রায় ভোরের দিকে চোখ লাগিয়ে ছিলো মাত্র। তখনই ফোন কলে তার ঘুমের ভাটা পড়ে। আনোন নাম্বার দেখে নাভান। ফোন রিসিভ করতেই এক পরিচিত মেয়ের কন্ঠে তার ঘুম পুরোপুরি উবে যায়। অনেকটা তিরিক্ষি মেজাজ নিয়েই ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা অদিতিকে প্রশ্ন করে নাভান।
-” কি চাই তোমার? আমাকে ফোন দেওয়ার সাহস কই পেলে? ”
ফোনের অপরপ্রান্তে অদিতি হাসলো কিঞ্চিৎ পরিমাণ। ঠোঁট বাকিয়ে আলতো স্বরে বলে উঠে,
-” তোমাকে ফোন দিতে হলে সাহসের দরকার আছে কি? মনে নেই, কতো রাত দুজনে ফোনকলে কাটিয়েছি? আচ্ছা বাদ দাও সেই কথা। আগে তোমার হোয়াটসঅ্যাপ টা চেক করো তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। ”
নাভান অদিতির কথায় বিরক্ত হয় অনেকটা। তারপরও হোয়াটসঅ্যাপ চেক করতেই চোখ কপালে উঠে যায় নাভানের। মেজাজ ঠিক আগের মতো করেই, দাতে দাত পিষে বলে ওঠে,
-” তাহলে নিধির সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথে তোর হাত ছিলো? আর এখন এই ভিডিও লিংক দিয়ে কি করতে চাইছিস বল? সত্যি বলছি অদিতি তোকে যদি এখন সামনে পেতাম, হাজার টুকরো হয়ে যেতি। ”
অদিতি কথাটা শুনে মৃদু হেসে বলে উঠে,
-” আমি তো মোটেও এমন করতে চাইনি নাভান। তুমিই বাধ্য করেছো। এক সপ্তাহের সময় দিলাম তোমাকে। কানাডায় ফিরে আমাকে বিয়ে করো। না হলে তোমার বোনের এই রেপের ভিডিও, আমি পুরো দেশ কে দেখিয়ে দেবো। ”
-” ব্লাডি বিচ! তোকে আমি এর আগেই নিজ হাতে খুন করবো। আমার বাচ্চা বোনটাকে এর মধ্যে এনে ভালো করিসনি তুই। ”
নাভান প্রায় চিৎকার দিয়ে বলে। অদিতির কোনো হেলদোল তাতে দেখা যায় না। সে আবারো শান্ত গলায় বলে ওঠে,
-” আমারো না তোমার ওই নিব্বি বোন কে আমাদের মধ্যে টানতে ভালো লাগেনি। প্রথমে টার্গেট ইনায়ার দিকে ছিলো। শালি নেতা জোগাড় করে আমার বাবা-মাকে অপদস্ত করছে। পরে ভাবলাম আগে তোমার সাথে বোঝাপড়া করে নেই। কি বলতো, ইনায়ার সাথে তো তোমার কিছুই ছিলোনা। কিন্তু আজকাল তার প্রতি বেশিই ভাব দেখাচ্ছো? পড়ে যে তোমার ওই বাচ্চা বোনের মতো বাচ্চা বউটারও যে এমন হাল হবেনা। তার গ্যারান্টি আমি দিতে পারবোনা। ”
কথাটা বলেই অদিতি ফোনটা কেটে দেয়। নাভান রাগে দিশেহারা হয়ে যায়। তার ভুলের মাশুল নিধিকে দিতে হচ্ছে এই ভেবেই নাভানের বুকটা কেঁপে ওঠে। প্রচুর চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছিল তার। সবশেষে নাভান ফাহাদের কাছে এসে সবটা জানায়। ঘরের সবাই জানলে এখন আরো টেনশন করবে। বিশেষ করে নিধি। সবটা শুনে জায়ান বাঁকা হাসে। বাকি দুজনের দিকে তাকিয়ে সরু কন্ঠে বলে উঠে,
-” অদিতি বাংলাদেশেই আছে। ”
জায়ানের কথায় ফাহাদ আর নাভান আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকায়। জায়ান নাভান কে বলে সকালের নাম্বারটা বের করতে যেটা দিয়ে অদিতি তাকে কল করেছিল। নাভান কল লগে গিয়ে নাম্বার টা দেখতেই অবাক হলো। এগারো ডিজিটের বাংলাদেশের নাম্বার। ফাহাদ জায়ানের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
-” তোর কি মনে হয়? এই নাম্বারের মাধ্যমে ওকে ধরা এতো সহজ হবে। আমার মনে হয় না। সে খুব চতুর। ”
-” কিন্তু অদিতি যে বললো, আমাকে কানাডায় ফিরে বিয়ে করতে। সেটা? ”
-” হয়তো সেটাও ওর চাল। ”
নাভানের কথায় উত্তর দেয় জায়ান। মাথার মধ্যে কিছুই ঢুকছে না তাদের। কিভাবে কি করবে? তাদের এই ভাবনার মধ্যেই সেখানে হাজির হয় ফাহাদের দলের এক ছেলে। সে জানায় সোহানা মির্জা তার সাথে দেখা করতে এসেছেন। হঠাৎ করে সোহানার এহেন আগমনে তাদের তিনজনের মন একটু অবাক হয়। কারণ ছাড়া সোহানা ফাহাদের অফিসে কেনো আসবে? ফাহাদ তার কেবিনে সোহানা মির্জাকে নিয়ে আসতে বলে। কিছুক্ষণ পরে সেখানে গম্ভীর মুখে ঢুকে সোহানা। নাভান কে এখানে দেখে একটু অবাক হন। তার পরেও মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে তাদের সামনে এগিয়ে যায়। ফাহাদ দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বলে ওঠে,
-” আন্টি আপনি হঠাৎ এখানে? কোনো সমস্যা? ”
সোহানা সে কথার কোনো উত্তর না দিয়ে নাভানের দিকে ফিরে ঠান্ডা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-” তুমি এখানে কখন আসলে? সারাদিন তো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়না। দেবদাস বনে গেছো? ”
নাভান মায়ের এমন হঠাং কথায় চমকালো কিছু। তারপরও বলল,
-” আসলে, নিধির বিষয় টা নিয়ে কথা বলছিলাম। ”
-” সেটার জন্য বাড়ির লোকজন আছে নাভান। ”
কথাটা বলে সোহানা মির্জা ফাহাদের দিকে তাকিয়ে আবারো শান্ত গলায় বলে ওঠে,
-” তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো ফাহাদ। আর তোমার সাথেও জায়ান। ”
ফাহাদ মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। সোহান মির্জা ফাহাদের পাশের চেয়ারে বসে পরলেন। জায়ান আর ফাহাদ একে অপের দিকে দৃষ্টি বদল করে সোহানা মির্জার দিকে তাকালো। সোহানা খানিকক্ষণ চুপ থেকে দুজনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করেন।
– ” তোমারা দুজনেই আমার মেয়ের জন্য অনেক করেছো। আসলেই এমন বিপদের সময় তোমাদের কাছে পেয়ে আমি খুশিই হয়েছিলাম। কিন্তু আমি এখন চাই না তোমরা আর নিধির বিষয়ে ইনভলভ হও। ”
সোহানার কথায় তারা তিনজনের ভ্রু কুঁচকে যায়। ফাহাদ কিছু বলবে তার আগেই জায়ান জিজ্ঞেস করে উঠে,
-” আমারা কি কোনো ভুল করেছি আন্টি? আমার জানা মতে তো নয়। ”
জায়ানের কথায় হাসলো সোহানা। তিনি মলিন কন্ঠে বলে উঠেন,
-” ভুল নেই কোনো। শুধু একটা বাদে। নিধির এই বিপদে তোমরা পাশে থেকেছো, এর চেয়ে পাওয়া আমার কাছে আর কিছুই নেই। কিন্তু ফাহাদ? নিধি কে বিয়ে কেনো করতে চাইছো তুমি? আমার মেয়েকে দয়া দেখিয়ে? ”
রুমের একজন বাদে বাকি তিনজন অবাক হয়ে যায এমন কথায়। জায়ান আর ফাহাদ দৃষ্টি মেলায়। তাদের মনে বাজে একটা কথা। বাবা-মা কি কিছু বলেছে? তা নাহলে তো সোহানার এখন কিছু জানার কথা না। নাভানও বিস্ময় হলো। ফাহাদ নিধিকে পছন্দ করে সে এটা জানতো। কিন্তু বিয়ের কথা কি করে বললো?
-” বাবা-মা কি আপনাকে কিছু বলেছে আন্টি? ”
জায়ানের কথায় সোহানা মির্জা গম্ভীর গলায় বলে,
-” তারা আমাকে কিছু বলেনি জায়ান। কিন্তু কি বলতো, তারা আমাকে সত্যিটা দেখিয়েছে। ফাহাদ তোমার নিধির বিপদে পাশে থাকা অবধি ঠিক ছিলো। কিন্তু, দয়া করে বিয়ে করতে চাওয়াটা না। লোকে কি বলবে? সমাজ কি বলবে? আমরা যাই বলি। আমার মেয়ের জীবনে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। সেটা মুছা যাবেনা কখনো। আমি যানি, নিধি কে এখন সমাজের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হবে। সেটা ওর একার হোক। কারো সিমপ্যাথি ওর জন্য দরকার নয় এখন। সে নিজেই নিজেকে গড়ে তুলুক। তোমার হঠাৎ আগমন সে তার জীবনকে আরো গুটিয়ে দিতে পারে। তোমার বাবা-মায়ের সাথে আমি একমত। কে চাইবে এমন মেয়েকে মেনে নিতে? যে একটা রেপিড গার্ল। বাবা-মা সবারই সব সময় ভালো চায়। তোমাদেরও একটা সোসাইটি আছে। সেখানে যে আমার মেয়ের নামে গুঞ্জন আসবে না, তা তো নয়। সবটা ভেবে চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আমি চাই না নিধি কারো কোনো পরিবারে নিত্য নতুন কটাক্ষ শুনুক। এরচেয়ে ওর সারাজীবন একা থাকাটাকেই আমি সাপোর্ট করবো।
তাই তোমার কাছে রিকোয়েস্ট ফাহাদ। এই বিষয় টা এখানেই আজকে মেষ করে দিবে। যাতে পরবর্তীতে এই কথা নিধির কানে না যায়। আর একটা কথা, তোমার জন্য যাতে তিথি আর ইশানের বিয়ের যেন কোনো সমস্যা না হয়ে যায়। ”
কথা গুলো একদমে বলে থামলেন সোহানা মির্জা। জায়ান এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ফাহাদের দিকে। যার চোখমুখ এখন অত্যাধিক পরিমাণের লাল হয়ে আছে। সবসময় মজা খুনসুটিতে মেতে থাকা মেয়র ফাহাদ করিমের ভেতরটা শুধু একমাত্র জায়ান করিম ভালো চেনে। সে জানে, সবসময় চুপচাপ থেকে হঠাৎ রাগলে ফাহাদ কি পরিমাণের কান্ড ঘটাতে পারে। সোহানা বসা থেকে উঠে ফাহাদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলে ওঠে,
-” আমি জানি ফাহাদ তুমি খুব বুঝদার। বিষয়টা ভালো ভাবে বুঝে নাও। বাবা মায়ের দিকটাও ভেবে দেখবে। আর নিধির নামটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও। আমরা ওর পাশে আছি, ওর পরিবার। যাদের এখন নিধির পাশে থাকা সবার চাইতেও এগিয়ে। ”
কথাগুলো বলে সোহানা মির্জা দরজার দিকে এগিয়ে যায়। নাভানও মায়ের পেছন ছুটে। জায়ান ফাহাদের হাত ধরতেই ফাহাদ রক্ত চোখে তার দিকে তাকালো। রাজনীতি তে ঢুকে কিছুতে ভয় না পাওয়া জায়ান করিম, তার ভাইয়ের এই বিশাল বড়ো রাগটাকে ভিষন ভয় পায়। ফাহাদ জায়ানের হাতটা ছাড়িয়ে সোহানা মির্জা কে পিছন থেকে ডেকে উঠে। সোহানা থামলেও পিছু ফেরে না। ফাহাদ নাভান আর জায়ান কে ডিঙিয়ে সোহানার সামনে এসে মুচকি হেসে বলে উঠে,
-” বিষয় টা কি আন্টি, জনেন তো? আমি নিধি কে ভা-লো-বা-সি। শুনলেন তো ভালোবাসি। চৌত্রিশ বছরের টাইমপাসের জীবনে, এই প্রথম আসল ভালোবাসা খুজে পেয়েছি। তাই আপনারা? নিধি, বাবা-মা আর বাকি সবাই। চাইলেও নিধি আমার হবে আর না চাইলেও। কারণ ওকে আমি আজকালের মধ্যেই তুলে নিয়ে বিয়ে করবো। দেখি কে আটকায় আমাকে। ”
এমন বিস্ফোরণ কথা গুলো বলে ফাহাদ রেগে রণমুর্তি ধারন করে পার্টি অফিস থেকে বেড়িয়ে পড়ে। সোহানা ফাহাদের এমন হঠাৎ রিয়াকশন দেখে অবাক হলো বটে। শুধু হয়নি নাভান। সে ফাহাদের এমন রাগের তোপে পড়েছে বহুবার। জায়ান কপাল চাপড়ায়। যার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে তাকেই আবার হুমকি? জায়ান সোহানার সামনে এসে ঠান্ডা কন্ঠে বলে,
-” টেনশন নেবেন না আন্টি। ভাই অতিরিক্ত রেগে গেলে মাথা ঠিক রাখতে পারে না। আমি ভাই কে বুঝিয়ে বলবো। ”
জায়ান কথাগুলো বলে নাভান কে ইশারা করে সোহানা কে নিয়ে যেতে। নাভান ও সম্মতি জানিয়ে সোহানা মির্জা কে নিয়ে যায়। জায়ানও হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।
,
,
,
,
তিথি আজ ভার্সিটি থেকে সোজা বাড়িতে এসেছে। সাথে নিয়ে এসেছে ইয়ানা কেও। মিনারা বেগম আর মিজানুল করিম ইয়ানা কে দেখে খুব খুশি হয়েছেন। নানা রকম গল্প জুড়ে দিয়েছেন তার সাথে। অনেক সময় গল্প গুজব শেষ করে তিথি লেগে যায় তার বিয়ের কথা নিয়ে। হাতে ধরে আর মাত্র ২৭ দিন আছে রেজিস্ট্রি মেরিডের। তিথির অলমোস্ট সব মার্কেট করা শেষ। কালকে আবার ইয়ানা কে নিয়ে বেরুবে। কথার ফাকে তিথি ইনায়া কে বলে উঠে,
-” কাল নিধিকে সাথে নিয়ে আসবে ইনায়া? দেখবে শপিংয়ে গেলে মনটা কিছুটা ভালো হবে। ”
তিথির কথায় তিনজনেই তার দিকে তাকায়। মিনারা বেগম ওর মিজানুল করিমের নিধির কথা শুনে মনটা একটু ভার হয়ে যায়। কি আর কারার, সমাজ বলেও তো একটা কথা আছে। সোসাইটির লোকেরা কি বলবে? এই ভেবেই দুজনেই ফাহাদের ডিসিশনটা মানতে পারেননি। ইয়ানা তিথির কথায় ম্লান হেসে বলে উঠে,
-” দেখা করতে বললে তো দরজাই খুলে না। আসবে বলে মনে হয় কি? তারপরও চেষ্টা করবো। ”
তিথির মনটাও সামান্য খারাপ হয়ে যায়। নিধি মিষ্টি একটা মেয়ে। তার এমন নিস্তেজ হয়ে যাওয়াটা খুব খারাপ লাগে। ইনায়া আর তিথি আবার বিভোর হয় তিথির বিয়ের আলাপে। বিয়ে সমস্ত প্ল্যানিং তিথি করবে। ও সব ইচ্ছে গুরুত্ব দেবে তার পরিবারের লোকজন৷ তাদের এই কথার মধ্যে বাড়িতে ঢোকে ফাহাদ। গম্ভীর আর আকাশচুম্বী রাগ নিয়ে বাবা-মার দিকে তাকিয়ে থাকে সে। হলরুমে বসা চারজন ফাহাদের এমন অগোছালো রুপ দেখে অবাক হয়। মিনারা বেগম আর মিজানুল করিম একটু আঁচ পেয়েছেন। ছেলে কেনো চটে আছে। কিন্তু তারা কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। নিধির ঘটনায় সবারই মন খারাপ হয়েছে সত্যি। তার ভবিষ্যতের চিন্তাও হয়। তাই বলে আবেগের বসে তার ছেলের নিধিকে বিয়ে করতে হবে? এ কেমন সিমপ্যাথি? ফাহাদ মেযর নিধির হেল্প করতেই পারে। তাই বলে বিয়ে? এই জন্য মিনারা বেগম আর মিজানুল করিম বিষয়টা আর আগাবেন না। হলরুমে পিনপতন নীরবতা চলছে। এরমধ্যেই বাড়িতে ঢুকে জায়ান। ইনায়ার দিকে সে একনজর তাকিয়ে ফাহাদ কে বলে উঠে,
-” ভাই রুমে চল কথা আছে। ”
ফাহাদ এক পাও নড়ে না। আচমকা মিনারা বেগম কে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে বলে ওঠে,
-” কংগ্রাচুলেশনস মা! বলো তো কেনো? কারণ তোমার মনের আশা ঠিক হতে চলেছে। তুমি শীগ্রই শাশুড়ী মা হবে। কারণ আমি নিধি কে বিয়ে করতে যাচ্ছি। ”
ফাহাদের এমন কাজ আর কথায় সবার চোখ কপালে। বিশেষ করে ইনায়া আর তিথি। নিধি আর ফাহাদ কেমনে কি? তাদের মাথায় ঢুকছে না। মিনারা বেগম আর মিজানুল করিম কিছু বলতে গেলেই ফাহাদ মৃদু হেসে বলে উঠে,
-” আমি ওকে ভালোবাসি। শুনেছো? তাই আমি চাই না তোমরা এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলো। কেমন? ”
এই বলে ফাহাদ উপরের দিকে অগ্রসর হতেই মিনারা বেগম ঝাঁজালো শাসানি কন্ঠে বলে উঠে,
-” তাহলে আমার কথাও মনে রেখো তুমি ফাহাদ। আমি নিধি এই বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নেবো না। ”
ফাহাদ মায়ের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে হেসে উপরে চলে গেলো। মিনারা বেগমও গমগমে মুখ নিয়ে হলরুম ছেড়ে চলে গেলেন। মিজানুল করিম জায়ানের দিকে হতাশ দৃষ্টিতে তাকিয়ে তিনিও চলে গেলেন। তিথি আর ইনায়া এবার জায়ানের দিকে তাকায়। জায়ানের চোখ এবার ইনায়ার দিকেই নিবদ্ধ ছিলো।
-” এইসব কি হচ্ছে ব্রো? ভাই আর নিধি ইম্পসিবল। কেমনে কি? ”
জায়ান তিথির দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বলে উঠলো,
-” শুনলি না তুই? ভাই কি বলেছে? সে তাকে ভালোবাসে। ”
তিথি কনফিউজড হয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মাথায় খেলছে না। তারা দুজনেই তো দুজনকে দেখলে তেতে উঠতো। কিন্তু ইয়ানার মাথায় আস্তে আস্তে সব ধরা দেয়। ফাহাদ প্রথম থেকেই নিধির প্রতি কোমল ছিল। আর নিধিও ফাহাদকে দেখতে না পারার কারণ বুঝে যায় সে। ইনায়া গম্ভীর মুখে জায়ানের পানে তাকায়। আসন্ন পরিস্থিতি তার সুপ্ত অনুভূতিতেও। এই দুনিয়া টা আসলেই বড্ড কঠিন। কোনো কিছুই অনুকূলে নয়। জায়ান ইনায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসলো। যেন ইনায়া চোখের দিকে তাকিয়ে তার মনের ভিতর ঘটে যাওয়া ঝড়ের তান্ডব দেখতে পাচ্ছে সে।
,
চলবে……………………
,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)