হৃদয়ে প্রণয়ের বাস ২ পর্ব-০৯

0
862

#হৃদয়ে_প্রণয়ের_বাস
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_০৯
লেখনীতেঃ রোদসী রঙ্গন

মৃধা যখন হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হবে তার ঠিক আগ মুহুর্তেই বাসায় ফের চলে এল নিশীথ। মৃধাকে একদম তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকাল কেমন করে। পরমুহুর্তেই মৃধাকে একহাতে টেনে রুমে এনে বসাল। শুকনো ঢোক গিলে পাশে বসে টানটান গলায় বলল,

“ আমি তোকে বলেছিলাম আমার বাচ্চা প্রয়োজন? এতোটা ডেস্পারেট হয়ে আছিস কেন বেবির জন্য? কেউ কিছু বলেছে তোকে? কি হলো বল? বলেছে কেউ কিছু? ”

মৃধা কেঁপে উঠল। বুঝে গেল নিশীথ কেন বলছে এসব। মৃধা শুকনো ঢোক গিলল। পাশে বসা পুরুষটিকে ঠিক যতোটা শান্ত দেখাচ্ছে ততোটাই ভীতকর লাগল যেন। অথচ নিশীথ কিন্তু রাগ দেখাচ্ছে না। রেগে কথাও বলছে না। শান্ত গলাতেই বলল কথাটা৷ তবুও মৃধার কেমন লাগল। উশখুশ স্বরে বলল,

“ আমাদের আগে পরে যাদের বিয়ে হয়েছে সবার বেবি আছে নিশীথ। ”

নিশীথ ভ্রু উঁচু করল। মৃধার পরনের শাড়িটা গলিয়ে হাত রাখল মসৃন উদরে। টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

“ তো? ”

মৃধা বিরক্ত হলে যেন। বলল,

“ আমার তো জানা উচিত আমার সমস্যা কি। কেন বেবি হচ্ছে না আমার।আদৌ আমি মা হতে পারব কিনা। সে সক্ষমতা আমার আছে কিনা। জানা উচিত নয়? সারাটা জীবন আমি তোকে মিথ্যে আশা দেখিয়ে থাকবই বা কেন? যদি মা হওয়ার ক্ষমতা না থাকে তাহলে মেনে নিব সবটা। ব্যস! ”

নিশীথের নাকটা লাল হয়ে আসল। যেন খুব রেগে যাচ্ছে সে। পরমুহুর্তেই এই টপিক বাদ দিয় অন্য কথায় নিয়ে যেতে বলল,

” বেশি কথা বলছিস না? মেজাজ খারাপ লাগছে আমার। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, রাহি আর লিয়নের বিয়েটা গোপণে সেরে ফেলেছি আজ। লিয়ন বেচারার দিকেেতাকিয়ে মায়া হলো। ভালো করলাম না বল? ”

“ কথা ঘুরাচ্ছিস? নিশীথ? সত্যি করে বল তো। তুই কি কিছু জানিস? আমার কেন জানি মনে হয় তুই কিছু জানিস অথচ আমায় বলিস না। নয়তো প্রতিবার ডক্টর দেখানোর কথা কেন এড়িয়ে যাস তুই? এবারও আমায় টেনেটুনে নিয়ে চলে এলি। কারণ কি? তুই কিছু লুকোচ্ছিস না তো? ”

নিশীথ ভ্রু উঁচিয়ে বলল,

“ কি লুকাব? ”

মৃধা সন্দেহী চাহনিতে তাকিয়ে শুধাল,

“ সত্যিই লুকোচ্ছিস না? শিওর তুই? ”

নিশীথ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। শাড়ি পরিহিত মৃধার দিকে তাকাল ঘোর ঘোর চাহনিতে। ঠোঁটজোড়া মৃধার কাঁধে ছুঁইয়ে শুধাল,

“ সুখ! তোকে ছুঁতে ইচ্ছে হচ্ছে।”

মৃধার আগের মতোই বলল,

“ ভুলাচ্ছিস আমায় নিশীথ? ”

নিশীথ হাসল। মৃধাটা বুদ্ধিমতী? সব বুঝে যায় কেন? তবুও কথা ভুলাতে বলল,

“ একদমই নয়।মনে করাতে চাইছি, আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসা দেই তা। ”

মৃধা এই পর্যায়ে হাসল না। খুশিও হলো না। বরং কেঁদে ফেলল। নিশীথের ঠোঁটজোড়া যখন তার গলার কিনারায় ঠিক তখনই চোখজোড়া বেয়ে অশ্রু নামে। নিশীথ হতবাক হয়ে যখন চাইল ঠিক তখনই মৃধা বলল,

“ নিশীথ, ”

নিশীথ মুখ আগলে ধরে বলল মুহুর্তেই,

“ কাঁদছো কেন? আমার ভালোবাসা অসহ্য লাগে? কান্না আসে এখন আমার ছোঁয়ায়? ”

মৃধা কাঁদোকাঁদো চোখেই তাকিয়ে থাকল। বলল,

” নিশীথ, আমরা ডক্টরের সাথে একবার আলোচনা করে দেখিই না। প্লিজ! হতেই তো পারে আমাদের ঘরে… ”

নিশীথ কথা বাড়াতে চাইল না যেন। মৃধার ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে বলল,

“ আমাদের ঘরে আমি আর তুমি যথেষ্ট সুখ। নয়তো ভালোবাসায় ভাগ বসবে আমার। ”

মৃধা আকুতি নিয়েই বলল,

“ প্লিজ! ”

নিশীথ এবারে ফিসফিস স্বরে বলল,

” হুশশ! কাঁদে না। জানিস তো, তোকে কাঁদতে দেখলে বুকের ভেতর অস্থিরতায় ছারখার লাগে। ”

“ নিশীথ, প্লিজ! ”

নিশীথ মানল না। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

“ আর কোন কথা বলবি না। এর চাইতে বেশি কাঁদলে কিন্তু এখনই বেলকনি দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে আসব তোকে। ”

.

রাহির আর লিয়নের বিয়েটা নিরবে, গোপণেই একটা দুপুরে সেরে ফেলা হলো। রাহি এখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারল না ঘটনাটা তার আগেই লিয়ন রাস্তার ধারে এসে তাকে দেখার অপেক্ষা করছে। আশ্চর্য! রাহি উঁকি দিয়ে দুয়েক পলক দেখেছেে।পরমুহুর্তেই কল দিয়ে শুধাল,

“আশ্চর্য! কি শুরু করেছেন এসব লিয়ন ভাই? আপনি ভাইয়াকে ভুলবাল বুঝিয়ে বিয়েটা সেরে ফেলেছেন। ভালো কথা! কিন্তু এসব অভদ্রতা কেন দেখাচ্ছেন? মানুষ কি ভাববে? ”

লিয়ন হাসল। উত্তরে বলে উঠল,

“ ভাববে তোমার আর আমার মাঝে কিছু একটা আছে। তারপর ধরেবেঁধে বিয়ে দিয়ে দিবে। ”

রাহি দাঁতে দাঁত চাপে। এমনিতেই আজ বিয়েটা লিয়ন কৌশলে সারিয়ে নিয়েছে।নিবির, নিশীথ সহ আরো দুয়েকজনের উপস্থিতিতে। রাহির এভাবে বিয়ে করার মোটেই ইচ্ছে ছিল না। অথচ এইলোক আবার ও বিয়ের কথা বলছে। । বিরক্তি নিয়ে বলল,

“ কয়বার বিয়ে করবেন? ”

লিয়ন বাঁকা হেসে উত্তর করল,

“ যতবার তুমি চাও। ”

“ ফ্লার্ট করছেন আপনি? যান এখান থেকে। ”

লিয়ন এবারেও হেসে উঠে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সুন্দর ভাবে বলে উঠে,

“ নতুন নতুন বউয়ের প্রতি ভালোবাসা বেশি থাকে শুনেছি রাহি। তাই আমার সদ্য বিয়ে করা বউটাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। আমি সেজন্যই এসেছি। সে দেখাটা দিয়ে দিলেই চলে যাব। প্রমিজ।”

রাহি নিরস গলায় বলল,

“ লোকজন খারাপ বলবে লিয়ন ভাই। ”

লিয়ন কপাল কুঁচকে বলল,

“ কেন বলবে? ”

“লোকজন জানে না আমার সাথে আপনার বিয়ে হয়েছে। ”

লিয়ন মুখ কালো করল। বলল,

“ জানে না তো কি হয়েছে, জেনে তো যাবেই। ”

“ যখন জানবে তখন দেখা যাবে। ”

লিয়ন মেয়েটার এতো অবহেলা সইতে পারল না যেন। গম্ভীর গলায় বলে উঠল,

“ ঠিকাছে। ”

কথাটা বলেই লিয়ন কল রাখল। রাহি স্বস্তি পেল যেন। আরেকবার জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল রাস্তায় লিয়ন নেই। রাহি খুশি হয়।আবার ভাবে লিয়ন রাগ করল কিনা। পরমুহুর্তেই ভাবনা বাদ দিয়ে ফোনটা রেখে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় শুঁয়ে চোখজোড়া বন্ধ করতে নিতেই আচমকায় দরজায় টোকা পড়ল। রাহি অবাক হয়। তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতে যেতে নিতেই ওপাশ থেকে শোনা গেল মাহমুদ সাহেবের গলা। রাহি হতচকিত হয়ে দরজা খোলা মাত্রই উনি বলে উঠলেন,

” তুই লিয়নকে ভালোবাসতি রাহি? সত্যি? তোদের গোপণে বিয়েও হয়ে গিয়েছে? কবে? কতদিন ধরে তোরা বিবাহিত? ”

রাহি গোল গোল চোখে চেয়ে থাকল। কিসব বলে বসেছে।কেনই বা বলছে? কেই বা বলেছে এসব? রাহি লজ্জ্বায় যেন মিইয়ে গেল। এপাশ ওপাশ তাকাতেই চোখে পড়ল লিয়নকে। ভদ্র ছেলের মতো দাঁড়িয়ে আছে সুন্দর করে। যেন কিছুই জানে না। অথচ রাহি তাকানো মাত্রই উপহার দিল এক ভোলাবালা হাসি। রাহির রাগ হলো লিয়নের উপর। এভাবে বলে দিল সব? বলে দিল সবটা? লজ্জায় তার নাক কেটে ফেলল? রাহি আমতা আমতা করে উত্তর দিতে নিতেই নিবির বলে উঠল,

“আব্বু, রাহি আপুর সাথে লিয়ন ভাইয়ের বিয়েটা আজই হয়েছে মাত্র। তাও আমাদের সামনেই। আর লিয়ন ভাই? তুমি কেমন? বিয়ে হয়ে একদিন হয়ে পারল না, অথচ নির্লজ্জের মতো বউ চাইতে চলে এসেছো? ”

লিয়ন ফাঁটা বেলুনের মতো তাকাল। বলল,

“ তুমি আমায় নির্লজ্জ বললে নিবির? ”

রাহি দাঁতে দাঁত চাপল। বিরবিরিয়ে বলল,

“ তো কি আপনার এই মহান কাজের জন্য আপনাকে সলজ্জ বলবে? আমার মাথাটা পর্যন্ত শেষ করে দিল। ”

মৃধা হাসল এসব দেখে। নিশীথ মাহমুদ সাহেবের সামনে এসে সবটা বুঝিয়ে বলে উঠল,

“ আব্বু, রাহির সাথে লিয়নের বিয়ের অনুষ্ঠানটা করে তুলে দাও বেচারার বউটাকে। বেচারা বহুদিন অপেক্ষারত। ওর আসলে সত্যিই দোষ নেই। বুঝলে তো? ”

মাহমুদ সাহেব যেন বুঝলেন। একবার রাহি তো একবার লিয়নের দিকে চেয়ে বলল,

“ আমরা বরং কাল লিয়নের বাসায় যাব। কথা বলব। কি বলো লিয়ন? ”

লিয়ন ভদ্র ছেলের মতো মাথা নাড়াল। বিগলিত হেসে বলল,

“ ঠিকাছে, ঠিকাছে আঙ্কেল। আমি এতেই খুশি! ”

#চলবে…..