গোপনে পর্ব-০৯

0
522

#গল্পঃ_গোপনে |০৯|
#লেখাঃ_অনন্য_শফিক

অলকা বললো,’ কিভাবে ধরিয়ে দিবো? বাসায় এলে পরে?’
নাঈম বললো,’ সে বাসায় আসবে না।কারণ সে জানে বাসায় এলেই বিপদ হবে।ধরা পড়বে।’
অলকা বললো,’ তাহলে?’
নাঈম বললো,’ তুমি এক ঘন্টা পর তাকে কল করবে। কথা বলবে তার সঙ্গে। তবেই হবে।’
অলকা বললো,’ কি কথা বলবো ? বাইরে কোথাও আমার সঙ্গে দেখা করার কথা বলবো নাকি?’
নাঈম বললো,’ এসব কিছুই না। তুমি ফোনে তার সঙ্গে তোমার মতো করেই কথা বলবা। সাংসারিক আলাপ করবা।আমি তখন তার নম্বর ট্রেক করবো।দেখবো সে কোথায় আছে। কোন জায়গায় আছে।’
অলকা বললো,’ আচ্ছা।’

অলকার স্বামী অসীম ধরা পড়লো বিকেলের মধ্যেই।অলকা যখন অসীমের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলো নাঈম তার নম্বর ট্রেক করে জানতে পারলো, অসীম আশে পাশেই আছে। সিএনজি স্টেশনের পেছনের একটা বস্তিতে।সাপের খেলা দেখছিল। তাকে ধরতে নাঈমের খুব একটা বেগ পেতে হলো না। অসীমকে থানায় এনে খুব বেশি মারধোরও করতে হলো না।মার সে সহ্য করতে পারে না সম্ভবত।অথবা মারাত্মক ভীতু লোক সে।দুটা বেত চালাতেই হড়হড় করে কথা বলতে শুরু করলো।
নাঈম জিজ্ঞেস করলো,’ শানু কোথায়?’
অসীম ব্যথায় ককিয়ে উঠে বললো,’ উনি কোথায় আমি কিভাবে বলবো স্যার? উনার স্বামীকে রেখে আমায় এই কথা জিজ্ঞেস করছেন কেন?’
অসীম আঙুল দিয়ে আমায় দেখালো।
নাঈম ধমকে উঠলো।বললো,’ চুপ বেয়াদব।যা বলছি এর সোজা উত্তর দিবি। বল, শানু কোথায়? তাকে কোথায় রেখেছিস তুই?’
অসীম হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। বললো,’ স্যার, আপনি এসব কি বলছেন? আমি উনার সম্পর্কে কিছুই জানি না! উনার সঙ্গে আমার কোন ধরনের সম্পর্ক নাই।শিহাব ভাই এইখানে আছে। তার কাছে জিজ্ঞেস করেন, আমি উনার ওয়াইফের সাথে কোনদিন কথা বলেছি কি না তা বলুক উনি? যার সঙ্গে কোনদিন কথাও বলিনি তার খবর আমি কিভাবে জানবো?’
নাঈম রাগের চোখে তাকিয়ে বললো,’ তাহলে তুই কিছুই জানিস না?’
অসীম বললো,’ স্যার কিছুই জানি না। ভগবানের দিব্যি। ঘরে আমার বাচ্চা শিশু আছে। সেই শিশুর দিব্যি।আমি যদি মিথ্যা বলি তাইলে যেন আজকের মধ্যে আমার মরণ হয়।’
নাঈম বললো,’ চুপ।একদম চুপ। আহাজারি শুরু করেছিস এখানে! তুই বলবি।সব বলবি। উচিৎ শিক্ষাটা দিলেই সব বলবি।’
অসীম ভয়ে কঁকিয়ে উঠলো। সে বললো,’ স্যার কি করবেন আমারে? ফাঁসি দিবেন? স্যার আমি কিছু জানি না।’
নাঈম হোয়াটসঅ্যাপের নম্বরটা বলে বললো, এই নম্বর তোর না?’
অসীম বললো,’ স্যার, আমার অনেক সিম। মুখস্থ নাই নম্বর।’
নাঈমের রাগ লাগছে। সে রাগ দেখিয়ে বললো,’ তুই হোয়াটসঅ্যাপ থেকে শিহাবকে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে কি মেসেজ পাঠিয়েছিলি? এখন কিছু না জানার ভান করছিস কেন?’
অসীম বললো,’ স্যার, হোয়াটসঅ্যাপ আমার নাই। আমার ইমু আর মেসেঞ্জার আছে।’
নাঈম তার পকেট থেকে পি*স্তলটা বের করলো। তারপর মিছেমিছি অসীমের কপালে তাক করে ধরতেই কান্ডটা ঘটলো। ভয়ে কাপড় ভিজিয়ে দিয়েছে অসীম।
নাঈম আমার দিকে তাকালো।হাসলো। তারপর বললো,’ এই লোক এসব কাজ করা তো দূরের কথা চুরিটাও করতে পারবে না! ভীতুর ডিম একটা! ‘
বলে অসীমের কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো।এক এক করে সব ঘাঁটাঘাঁটি করে বললো,’ শুধু সময় নষ্ট করলাম। ভুল লোক ধরেছি আমরা।ওর স্ত্রী সব ভুল তথ্য দিয়েছে। সমস্যা ওখানেই।অলকার কাছে যেতে হবে আবার।’
বলে নাঈম আমায় নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লো। অসীম আটকই রইলো।আরো বিবেচনা করে তারপর তাকে ছাড়া হবে।

গাড়ি করে আমরা আবার অলকার কাছে এলাম।অলকা নাঈমকে দেখে ভয়ে এতো টুকু হয়ে গেছে!
নাঈম বললো,’ কাল তুমি ভুল তথ্য দিলে কেন? ‘
অলকা কাঁপছে থরথর করে।বললো,’ ভয়ে স্যার।আমি পুলিশ ভয় পাই! ‘
নাঈম হাসলো। বললো,’ তোমার স্বামী তোমার চেয়েও বেশি ভীতু। আচ্ছা তোমায় আমি মুক্তি দিবো। তোমার স্বামীকেও ছেড়ে দিবো। দুটা সত্য কথা বলতে হবে তোমার। তুমি বলবে দুটো সত্য কথা?’
অলকা বললো,’ বলবো স্যার।’
নাঈম বললো,’ আচ্ছা বল তো তুমি কিভাবে কানের দুল চুরি করেছিলে শানুর? কোথায় ছিল সেই দুল? ‘
অলকা চুপ করে রইলো।
নাঈম বললো,’ মিথ্যে বললে ধরা খাবা। আমার কাছে মিথ্যে বললে যে আমি বুঝতে পারি তা এতোক্ষণ বুঝতে পেরেছো নিশ্চয় তুমি?’
অলকা বললো,’ আমাদের ফ্ল্যাট আর ওদের ফ্ল্যাটের মাঝখানে যে বারান্দা ওখানে পড়ে ছিল। সারাদিন পড়ে ছিল।কেউ নেয়নি। সন্ধ্যা বেলায় গিয়ে দেখি তখনও পড়ে ছিল। একবার ভাবলাম,ডেকে বলবো। কিন্তু পরে লোভে পড়ে তুলে নিয়ে এসেছিলাম স্যার!’
নাঈম মুচকি হাসলো। হেসে বললো,’ আচ্ছা ওটা তুমি সত্য বলেছো আমি বুঝতে পেরেছি।
এবার বলো, তোমার কাছ থেকে কোনদিন কেউ সিম নিয়েছিল কি না।সিম কার্ড! ‘
অলকা বললো,’ আমি জানি না স্যার।এসব সিম বাবুর বাবা কিনেছে। নতুন সিম কিনলে অফার থাকে,এমবি থাকে ।তাই কদিন পর পর সে সিম কিনে। নিজের আইডি কার্ড দিয়ে অনেক গুলো কিনে ফেলছে। এখন আর কিনতে পারে না বলে আমার আইডি কার্ড দিয়ে কিনে।’
নাঈম বললো,’ তুমি মনে করে দেখো। খুব ভালো করে চিন্তা করো।চোখ বন্ধ করে চিন্তা করো।মনে করে দেখো কোনদিন কেউ কোন প্রয়োজনে সিম নিয়েছিল কি না তোমার কাছ থেকে চেয়ে!এটা মনে করে বলতে পারলেই তোমার সঙ্গে আমার কাজ শেষ। এরপর কোনদিন আমি এখানে আসবো না।আর তোমার স্বামীকে আজ সন্ধ্যার আগেই ছেড়ে দিবো।’
অলকা অনেক সময় ধরে ভাবলো। তারপর হঠাৎ করেই বললো,’ মনে পড়েছে স্যার।’
নাঈম বললো,’ বাঁচার জন্য মিথ্যে বলবে না কিন্তু।ধরা পড়বে।কথাটা মাথায় রেখে তারপর বলো।’
অলকা বললো,’ স্যার মিথ্যে বললে যেন আমার নরক হয়।’
তারপর সে কথাটা বললো।বললো,’
অনেক আগে শানু এসে সিম চাইলো একটা। তার খুব দরকার। আমি বক্স থেকে বের করে একটা সিম দিলাম। বললাম, এটা নিয়ে নেও তোমার দরকার হলে। বাবুর বাবা অফার শেষ হয়ে গেলে আর সিম ব্যবহার করে না।শানু
তার মোবাইলে সিম ঢুকিয়ে মিনিট পাঁচেক পর আবার বের করে ফেললো। বললো, এটা দিয়ে হবে না ভাবী। রেখে দিন।’
নাঈম বললো,’ সিম নেয়নি তাই তো?’
অলকা বললো,’ হুম।’
নাঈমের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।বড় রহস্যময় এই হাসি।নাঈম বললো,’ অলকা, আপনার সঙ্গে ‘তুমি ‘ করে কথা বলেছি। ছোট করে কথা বলেছি আপনাকে। আপনার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।সরি অলকা!’
অলকা কাঁদতে শুরু করলো। হয়তো সে যে নিরপরাধ এবং তার স্বামী নিরপরাধ এটা প্রমাণ হয়েছে এই জন্যই সে কাঁদছে। মুক্তির আনন্দে সে কাঁদছে।

নাঈম বেরিয়ে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। সিগারেটে টান দিয়ে সে বললো,’ শিহাব, তোরে একটা কথা বলি?’
আমি বললাম,’ বল। ‘
‘ মন খারাপ করিস না কেমন?’
আমি বললাম,’ আচ্ছা।’
নাঈম আমার দিকে দীর্ঘ সময় ধরে তাকিয়ে রইল। তারপর বললো,’ আমি সম্ভবত মূল ক্রিমিনালকে সনাক্ত করে ফেলতে পেরেছি। এবং সে কোথায় আছে তাও আন্দাজ করে ফেলতে পেরেছি।’
আমি বললাম,’ কে? কে মূল ক্রিমিনাল?’
নাঈম বললো,’ যার জন্য এতো কিছু করছিস? যাকে আবার ফিরে পেতে চাইছিস সে।’
আমি বললাম,’ শানু? শানুর কথা বলছিস?’
নাঈম বললো,’ হুম। অনেক কেস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি তো। এখন সহজেই বুঝতে পারি মূল আসামি কে হতে পারে!’
আমি বললাম,’ তাহলে আশফাক সুমন? আশফাক সুমন কি এসবের কেউ না?’
নাঈম বললো,’ তা বলা যাবে না আপাতত। শানু কে আটক করার পর সব বোঝা যাবে।’
আমি খানিক সময় চুপ করে রইলাম। তারপর বললাম,’ তুই বুঝলি কি করে এসবের মূল শানু?’
নাঈম বললো,’ ওই যে অলকা বললো, তার থেকে একদিন সিম নিয়েছিল শানু।সিম কার্ডটা ওপেন করে সে হোয়াটসঅ্যাপ আইডি খুলেছিল ওই নম্বর দিয়ে।যেন কেউ বুঝতে না পারে। এরপর শানু বুদ্ধি করে তার কানের দুল দুই ফ্ল্যাটের মাঝখানে ফেলে রেখেছিল। সারাদিন ফেলে রেখেছিল।কারণ সে জানতো মানুষ মাত্রই লোভী। স্বর্ণের প্রতি, টাকার প্রতি মানুষের লোভ একটু বেশিই।অলকা লোভ সামলাতে না পেরে জিনিসটা নিয়ে নিলো।আর এই সুযোগে অলকাদের সঙ্গে তোদের পরিবারের সম্পর্ক নষ্ট করে দিলো শানু।সম্পর্ক নষ্ট করলো এই জন্য যে তাদের সিম এনে শানু হোয়াটসঅ্যাপ খুলতে পারে এটা যেন কেউ কল্পনা করতে না পারে।
সবাই তো জানবে ওদের সঙ্গে ঝগড়া।আর ঝগড়া থাকলে তো ওদের সিম এনে হোয়াটসঅ্যাপ খোলার কথা কেউ ভাববেই না।’
কথাটা আমার মাথায় ধরলো।আমি অবাক হলাম।নাঈম এতো সব বুঝে ফেলে কিভাবে!

নাঈম সিগারেট শেষ করে আকাশের দিকে একবার তাকালো। তারপর বললো,’ জেবা মেয়েটা তোর কলিগ ছিল?’
আমি বললাম,’ হুম।’
নাঈম বললো,’ জেবার ডিভোর্স হয়েছে তাই না?’
আমি বললাম,’ হুম।’
নাঈম বললো,’ ওর পরিবার সম্পর্কে বল।কে আছে পরিবারে?’
আমি যতোটা জানি তাই বললাম। বললাম,’ মা আছে।বড় ভাই আছে।ভাই বিয়ে করে বউ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে। এখানে আসে না।আর তার মায়ের ক্যান্সার।জেবার কাঁধেই মায়ের চিকিৎসার ভার।’
নাঈম সব শুনে বললো,’ বুঝেছি।’
আমি বললাম,’ কি বুঝেছিস?’
নাঈম বললো,’ কাকে আটক করতে হবে আগে তা বুঝেছি।’
বলে হাসলো নাঈম।একটু পর পর সে হাসছে।কেন এভাবে হাসছে কে জানে!

#চলবে…