#গল্পঃ_গোপনে |১৬| #সমাপ্ত
#লেখাঃ_অনন্য_শফিক
‘
অসীম বললো,’ আমার বাচ্চাটাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিছে এই হারামজাদি! ওর জন্য আমার সব শেষ হয়ে গেছে। সবকিছু শেষ হয়ে গেছে!’
অসীম কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে সে আঙুল দিয়ে দেখালো অলকাকে। তারপর কথাগুলো বললো।
নাঈম বললো,’ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে বলতে? পরিষ্কার করে বলুন।’
অসীম বললো,’ আশফাক সুমন নামের এক লোক। অনেক প্রভাবশালী! সে আমার বাচ্চাটাকে আটক করে রেখেছে। আমার ছোট্ট বাচ্চাটা। আমার নিষ্পাপ বাচ্চাটা।’
নাঈম বললো,’ কেন আটক করেছে? কোন কারণে?’
অসীম বললো,’ এরে জিজ্ঞেস করেন আপনি। এই ডাইনিটার কাছে জিজ্ঞেস করেন!’
রাগে দুঃখে কথাটা বললো অসীম।
নাঈম এবার অলকার কাছে এলো।অলকা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
নাঈম বললো,’ অলকা, তুমি আমার সঙ্গে চালাকি করো তাই না? আমার সঙ্গে এসব করে কুলিয়ে উঠতে পারবে? ‘
অলকা কথা বলে না।
নাঈম বললো,’ গু*লি খেয়ে লাশ হবা নাকি সব সত্য খুলে বলবা।বলো।’
অলকা বললো,’ আমি সত্য বললে বিশ্বাস করবেন আপনি? করবেন না।’
নাঈম বললো,’ অলকা, এসব চালাকি করে কোন লাভ হবে না। তুমি বাঁচতে পারবে না। তুমি যদি সত্য বলো তবেই কেবল তুমি বাঁচতে পারবে। তুমি বলো, তোমার মেয়েকে আশফাক সুমন আটকে রেখেছে কেন?’
অলকা এবার নরম হলো। শুধু নরম না তার চোখ ভিজে উঠলো জলে।গলা জড়িয়ে এলো কান্নায়। সে বললো,’ শানু আর জেবা ধরা পড়ার পর আশফাক সুমন ভয় পেয়ে গেল। সে ভাবলো এই লাইনের লোকদের যখন আপনি ধরতে শুরু করেছেন তবে শিগগির তাকেও ধরে ফেলবেন। তার সম্পর্কে সব জেনে ফেলবেন।তাই সে আমার উপর সব দোষ চাপিয়ে সে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকার জন্যই এই পরিকল্পনা করেছে।’
নাঈম বললো,’ কি পরিকল্পনা করেছে?’
অলকা বললো,’ আমি কিচ্ছু বলতে পারবো না এই বিষয়ে। কিচ্ছু বলতে পারবো না।’
অলকা শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
নাঈম বললো,’ কেন বলতে পারবে না? কেন?’
অলকা বললো,’ সে বলেছে আমি মুখ খুললেই সে আমার মেয়েকে মেরে ফেলবে।আমি আমার মেয়েকে পাবো না। সে বলেছে আমি যদি আমার কাঁধে সব দোষ টেনে নেই তবে আমার মেয়েকে ছেড়ে দিবে সে।আমি আমার মেয়েকে বাঁচাতে চাই।আমি আর কিছু বলতে পারবো না!’
নাঈম বললো,’ অলকা, তুমি আমার উপর বিশ্বাস রাখলে তোমার মেয়ের কোন রকম ক্ষতি হবে না। তোমার বরং উপকার হবে।
কথা দিচ্ছি। তুমি আমার কাছে সবকিছু খুলে বলো। আশফাক সুমনের সম্পর্কে কি কি জানো এর সব আমায় বলো।’
অলকা বললো,’ আমার স্বামীর দুটি কিডনিই বিকল। রেগুলার ডায়ালেসিস করাতে হয়।ওর চিকিৎসাটা অনেক ব্যয়বহুল। এই টাকা আমি কোথায় পাবো? চিকিৎসা না হলে ও বাঁচবে কি করে? নিরূপায় হয়ে আমি যে ধরনের কাজ পাই তাই করতে থাকি।এভাবেই হুট করে আশফাক সুমনের বাসায় একটা কাজ পাই আমি। তার ছেলে কাননকে গান শেখাতে হবে। সপ্তাহে পাঁচদিন যেতাম তাদের বাসায় । আশফাক সুমনের স্ত্রী ফাহমিদা ম্যাডাম জানতেন আমার স্বামী সম্পর্কে। তিনি বলেছিলেন, তোমার ভাইকে ( আশফাক সুমনকে) বলো, সে তার পরিচিত কোন হসপিটালে বলে দিলে সহজেই এর চিকিৎসা করাতে পারবে।টাকা লাগবে না অতো।
এরপর আমি একদিন আশফাক সুমনের কাছে সব বলি।সব কথা শোনার পর সে আমায় বলে আমার স্বামীর সব চিকিৎসাই সে করাবে। এমনকি কিডনিও একটা সংগ্রহ করে দিবে সে। আমি বললাম, কিডনি সংগ্রহ করতে হবে না আপনার।আমিই আমার থেকে একটা কিডনি তাকে দিবো। আপনি শুধু খরচটা দিলেই আমি কৃতজ্ঞ থাকবো।
আশফাক সুমন বললো, লাখ লাখ টাকার বিষয় কিন্তু অলকা। তুমি কি মনে করো কেউ কাউকে এমনিতেই এতো টাকা দিবে?
আমি বললাম, তাহলে?
আশফাক সুমন বললো, তুমি সুন্দরী মেয়ে। তোমার জন্য টাকা ইনকাম কোন বিষয় না!
তারপর সে ওই নোংরা প্রস্তাবটা দেয় আমায়।বলে, বিভিন্ন পুরুষদের কাছে আমার যেতে হবে তাদের মনোরঞ্জনের জন্য।শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তাকে বকাবকি করি খুব। চাকরিটাও ছেড়ে দেই। কিন্তু এর সপ্তাহ খানেক পরেই আমার স্বামীর অবস্থা ভীষণ খারাপ হয়ে পড়ে। তাকে আইসিইউতে নিতে হয়। এই সময় অনেক গুলো টাকার প্রয়োজন ছিল।টাকা পরিশোধ না করে ওখান থেকে রোগীকে ছাড়িয়ে আনতে পারছিলাম না। তখন বাধ্য হয়েই আশফাক সুমনের কাছে যেতে হয় আবার আমার।মনের বিরুদ্ধে গিয়েই স্বামীকে বাঁচাতে পাপের পথে পা ফেলি আমি।’
নাঈম আমার দিকে একবার তাকালো। তারপর আবার অলকাকে বললো,’ কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছে তোমার স্বামীর? ‘
অলকা বললো,’ হয়নি।টাকা দেয়নি আশফাক সুমন। মিথ্যে বলেছিল আমায়।ও এমনি।সবার সঙ্গেই প্রতারণা করে বেড়ায়।এর শাস্তি ভগবান একদিন দিবেন! ‘
নাঈম বললো,’ তুমি যে আশফাক সুমনকে বার বার কল দিয়ে ব্লাকমেইল করছো এটা কেন করছো?তাও তার কাছে দশ কোটি টাকা দাবি করছো।আমি নিজের কানেই শুনেছি।’
অলকা বললো,’ এই পরিকল্পনা তার। আমার বাচ্চাকে আটক করে রেখেছে সে। বলেছে আমাদের স্বামী- স্ত্রীর দুজনের থেকে একজনকে পুলিশের কাছে স্বীকার করতে হবে এসবের মূলে আমি বা আমার স্বামী। দোষ স্বীকার করে দুজনের একজনের শাস্তি হলে আশফাক সুমন আমার বাচ্চাকে ছেড়ে দিবে। আমরা যদি এই শর্ত ভঙ্গ করি তবে সে আমাদের বাচ্চাকে মেরে ফেলবে।’
নাঈম এবার বললো,’ শানুকে তুমিই নিয়ে গিয়েছিলে আশফাক সুমনের কাছে?’
অলকা বললো,’ শানু নিজেই কিভাবে যেন বুঝে ফেলেছিল আমার ঘরে বাইরের পুরুষ আসে। তারপর একদিন তার সঙ্গে আমার এই বিষয়ে আলাপ হয়। সে নিজেই আমায় প্রস্তাব দেয়। বলে তার টাকার প্রয়োজন।টাকা ছাড়া মানুষের কোন মূল্য নাই।’
নাঈম এবার বললো,’ ঘুমের ওষুধ গুলো তুমিই এনে দিতে শানুকে?’
অলকা বললো,’ না।শানু নিজেই আনতো গিয়ে।’
‘ তাহলে জেবা? জেবাকে কে এই লাইনে নিয়ে এলো?’
অলকা বললো,’ আশফাক সুমন নিজেই।আমি তাই জানি।’
নাঈম বললো,’ তোমাদের স্বামী স্ত্রী দুজনকেই আমার সঙ্গে থানায় যেতে হবে। এই সমস্যা সলভ হওয়ার আগ পর্যন্ত তোমরা থানা হেফাজতে থাকবে।’
নাঈম সঙ্গে করে ওদের দুজনকেই থানায় নিয়ে এলো।
এরপরই সে আশফাক সুমনকে ফোন করলো। বললো,’ ওদের দুজনকেই অ্যারেস্ট করেছি। আপনি আমার সঙ্গে দ্রুত দেখা করুন।’
আশফাক সুমনকে ফোন করার পর পর অলকার কাছ থেকে আশফাক সুমনের স্ত্রীর নম্বর নিয়ে নিলো। তার দুই মেয়ের নম্বরও সে নিলো। তারপর তাদের সবাইকে সে বললো, বিকেল ঠিক চারটায় নির্দিষ্ট একটা জায়গায় থাকতে। নির্দিষ্ট একটা জায়গা বলতে আশফাক সুমন যে জায়গায় আগে দেখা করেছিল, সেই জায়গায় থাকার কথা বললো। ওখানে গিয়ে নিজেদের আঁড়াল করে রাখতে বললো।
আশফাক সুমন দেখা করলো সেদিন বিকেল চারটা দশ মিনিট যখন বাজে তখন। তাকে আজ খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। আগের মতো রোগা চেহারা আর নাই।
নাঈম বললো,’ বাকি টাকাটা কোথায়? এনেছেন সাথে?’
আশফাক সুমন বললো,’ দিবো। আপনি এতো বড় উপকার আমায় করে দিয়েছেন, আমি এর প্রতিদান অবশ্যই আপনাকে দিবো।’
নাঈম বললো,’ এসব বলে লাভ নাই। এখন টাকা দিন। এই মুহূর্তে।’
আশফাক সুমন সম্ভবত ভেবেছে যেহেতু তার কাজ শেষ সেহেতু সে টাকা না দিয়েই সটকে পড়বে।
আশফাক সুমন বললো,’ অস্থির হয়ে পড়েছেন কেন? আপাতত হাতে ক্যাশ নাই। কদিন পর দিবো বাকি টাকা।’
নাঈম রহস্যময় একটা হাসি হাসলো। তারপর বললো,’ অলকার বাচ্চাটা কোথায়?’
আশফাক সুমন চমকে উঠলো। বললো,’ মানে? ‘
নাঈম রাগ না নিয়ে শান্ত গলায় বললো,’ অলকার বাচ্চাটা কোথায়?’
আশফাক সুমন রাগ দেখিয়ে বললো,’ ফাজলামো করছেন আমার সঙ্গে? তার বাচ্চা কোথায় আমি কি করে জানবো?’
নাঈম বললো,’ সত্যিই জানেন না?’
আশফাক সুমন বললো,’ আরে ভাই, আমি বললাম তো আমি নিজেই ভুক্তভোগী। আপনি নিজের চোখেই তো দেখেছিলেন আমায় কিভাবে হুমকি দিয়েছিল অলকা। সব দেখেও কেন আমায় জেরা করছেন এসে?’
নাঈম এই বিষয়ে আর কথা বললো না।সে সরাসরি বললো,’ আপনার ফোন দিন। আপনার ফোন দিন আমার কাছে।’
আশফাক সুমন ফোন দিতে চায় না।
নাঈম জোর করেই তার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো। তারপর হোয়াটসঅ্যাপ চেক করতে গিয়েই সে দেখলো আশফাক সুমনের কাছেই সেই হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট, যে অ্যাকাউন্ট দিয়ে আমার ফোনে ছবি পাঠানো হয়েছিল জেবা এবং শানুর।
নাঈম সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠলো। বললো,’ আশফাক সুমন, আপনার দিন শেষ! আপনি ধরা পড়ে গিয়েছেন। আপনার বাঁচার সব পথ এখন বন্ধ।’
আশফাক সুমন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল একেবারে।সে বললো,’ আচ্ছা ধরুন সব কিছুই আমি করেছি। এখানে আর লুকোচুরি করার কোন দরকার নাই। আপনি আমার নিজের মানুষ। এবার আপনার দাবি কতো টাকা তা খোলাসা করে বলে ফেলুন। আপনারও ইনকাম হোক , আমিও এই বিপদ থেকে বাঁচি।’
নাঈম বললো,’ আমি আপনাকে রক্ষা করবো তা আগেই বলেছি। কিন্তু এসব ঝামেলায় শিশু একটা বাচ্চাকে কেন টেনে আনলেন? অলকার বাচ্চাকে অপহরণ করে কোথায় রেখেছেন? আগে তার মুক্তি দিন। তারপর আপনাকে আমি মুক্তি দিবো।’
আশফাক সুমন কি যেন বলতে চাইলো।নাঈম সেই কথা না শুনে আশফাক সুমনকে বললো, ‘ আমার লোকেরা থানার মোড়ের মসজিদের গলিতে দাঁড়িয়ে থাকবে। আপনার লোকদের ফোন করে বলুন বাচ্চাটাকে আমার লোকদের হাতে তুলে দিতে।দ্রুত! ‘
আশফাক সুমন ফোন করলো তার লোকদের কাছে। ফোন করে বললো, বাচ্চাটাকে থানার মসজিদের মোড়ে নাঈমের লোকদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য।
আর তার ফোনে কথা বলে শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই দরজা ঠেলে একের পর এক করে ওই গোপন জায়গায় এসে হাজির হলো, আশফাক সুমনের স্ত্রী, দুই মেয়ে।মেয়েরা এসে বললো,’ বাবা, তুমি নিষ্পাপ একটা বাচ্চাকেও ছাড় দিতে জানো না! তুমি এতোই জালেম হয়েছো যে দুধের শিশুদের অপহরণ করা শুরু করেছো! ছিঃ ছিঃ ছিঃ!’
এরপরই নাঈম তার স্ত্রী আর মেয়েদের কাছে আশফাক সুমন সম্পর্কে সবকিছু খুলে বললো।
মেয়ে দুজন এসব শুনে তার বাবাকে বললো,’ তোমার ঔরসজাত সন্তান আমরা এটা ভাবতেই ঘেন্না হচ্ছে আমাদের! মানুষ তাদের সন্তান খারাপ হলে সন্তান ত্যাজ্য করে।আমরা আমাদের জন্মদাতা কুলাঙ্গার বাবাকে ত্যাজ্য করলাম! ‘
ছোট মেয়ে নাঈমকে উদ্দেশ্য করে বললো,’ এই ইবলিশকে এখনও ধরে নিয়ে যাচ্ছেন না কেন? আমি ওর মেয়ে হয়ে আদালতের কাছে ওর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করবো!’
আশফাক সুমন কথা বলার মতো সুযোগই পাচ্ছে না। এরমধ্যে তার স্ত্রীও মুখ খুললো। তার স্ত্রী রাগে দুঃখে বললো,’ ও অনেক আগেই আমার সঙ্গে ভয়াবহ রকমের বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমার বড় মেয়ে যখন আমার পেটে তখন আমার ছোট বোন আমার কাজে সাহায্য করার জন্য আমাদের বাসায় এসেছিল। তখনই জোর করে আমার বোনকে এই শুয়োর ধ*র্ষণ করেছিল। সেদিন নিজের আত্মসম্মানের দিকে তাকিয়ে বোনকে চুপ করিয়েছিলাম আমি।নিজেও চুপচাপ সব হজম করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে সেদিনই সবচেয়ে বড় ভুলটা আমি করেছিলাম। সেদিন তার পাপের শাস্তি তাকে পাইয়ে দিলে আজ এতো গুলো মেয়ের সর্বনাশ সে করতে পারতো না! ‘
আশফাক সুমনের স্ত্রীর কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম।নাঈম তার স্ত্রীকে বললো,’ আপনি আপনার বোনের সঙ্গে করা অনাচারের জন্য আপনার স্বামীর শাস্তি চান?’
আশফাক সুমনের স্ত্রী বললো,’ এই জগতের সব ভুক্তভোগী মেয়েই আমার বোনের মতো।যেসব মেয়ে ওর কাছে জুলুমের শিকার হয়েছে।অন্যায়ের শিকার হয়েছে। তাদের সবার জন্য আমি বিচার চাই । আশফাক সুমন তো আমার স্বামী, সে যদি আমার নিজের জন্মদাতা পিতা কিংবা সন্তান হতো তাদের বিরুদ্ধেও আমি দাঁড়াতাম। তাদের জন্য আমি সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করতাম আদালতের কাছে।
‘
আশফাক সুমনকে তখনই অ্যারেস্ট করা হলো।
নিয়ে যাওয়া হলো থানায়। এরপর আদালত বসলে একের পর এক ভুক্তভোগী মেয়েরা এসে আদালতে আশফাক সুমনের কাছে তাদের নিজেদের শিকার হবার ঘটনা স্বীকার করে গেল।অলকা, জেবা এরকম অনেকেই।সবার শেষে আশফাক সুমনের স্ত্রী তার সঙ্গে করে ছোট বোনকে নিয়ে হাজির হলো। তার ছোট বোন নিজে থেকেই তার ধ*র্ষিতা হবার ঘটনা বললো।আদালত পনেরো দিনের জন্য সময় নিয়ে এই মামলা সমূহের তদন্ত করলো। নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা হলো। শেষমেশ আশফাক সুমন অনেক গুলো মামলায় ফেঁসে গেল।ধ*র্ষণ, অপহরণ , প্রতারণা এরকম অসংখ্য মামলা। আদালত তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করলো। তিন মাস পর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো।
‘
আশফাক সুমনের মৃত্যুর পর নাঈমকে দেয়া আশফাক সুমনের পাঁচ কোটি টাকা থেকে জেবার মাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলো সে।অলকার স্বামীর কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের ব্যবস্থা করলো। এছাড়াও আরো যেসব অসহায় মেয়ে আশফাক সুমনের শিকার ছিল, তাদেরকে নাঈম অর্থনৈতিক সাহায্য করলো। এবং তাদের সবাইকে একটি কথাই বুঝিয়ে বললো সে, বিপদ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই আসে। তিনি তার প্রিয় বান্দাদের বিভিন্ন বিপদ আপদ দিয়ে ধৈর্য্যের পরীক্ষা করেন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে সৎ ভাবে চেষ্টা করে। ধৈর্য্য ধরে। আল্লাহর উপর ভরসা করে।
এরপরই শানুর সঙ্গে কথা বললো নাঈম।সে বললো, শানু যেন আমার কাছে এসে ক্ষমা চেয়ে নেয়। শানু আমার কাছে এলো। এসে বললো সে ভুল করেছে। তাকে যেন আমি ক্ষমা করে দেই।আমি হাসলাম। হেসে বললাম, ‘ অসহায় অবস্থায় নিরূপায় হয়ে কেউ ভুল পথে পা বাড়ালে তাকে ক্ষমা করা যায়, কিন্তু সজ্ঞানে, টাকার লোভে যে এসব করে তাকে ক্ষমা করার কোন প্রশ্নই আসে না।আমি তোমাকে কোনদিন ক্ষমা করবো না। দয়া করে আমার সামনে থেকে চলে যাও।’
শানু সেদিনই এখান থেকে চলে গেল। তার মধ্যে কোন রকম অনুশোচনা আমি দেখিনি।আমি জানি এই পাপের পরিণাম সে ঠিকই একদিন পাবে!
এর ঠিক চার বছর পর সত্যি সত্যিই শানু তার নিজের শাস্তি পেলো। হঠাৎ করেই সে কি যেন এক রোগে আক্রান্ত হলো। শরীর শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতে লাগলো। তার যে সুন্দর চেহারা ছিল তা মলিন হয়ে যেতে থাকলো। এবং এর কদিন পর তার চোখের সমস্যা শুরু হলো। প্রথমে একটা চোখ, পরে দ্বিতীয় চোখ।দুটি চোখই তার অন্ধ হয়ে গেল। এর আরো মাস তিনেক পর সে চলাফেরার অযোগ্য হয়ে বিছানায় পড়ে গেল। তাকে দেখার কেউ নাই। চিকিৎসা করাবার কেউ নাই। কোন আত্মীয় স্বজন তার পাশে নাই।এভাবেই অসহায় অবস্থায় রোগে ভুগতে ভুগতে তার মৃত্যু হলো।
___সমাপ্ত___