আমার হয়ে যা পর্ব-১০

0
254

আমার হয়ে যা _পর্ব-১০
.
৪.
বাস থেকে নেমে দেখি আম্মু দাঁড়িয়ে আছেন। আমি নিষাদের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘অনেক কষ্ট করলি, এখন তাহলে তুই দোকানে চলে যা। আমি আর আম্মু বাসায় চলে যাচ্ছি।’

সে সম্মত হয়ে চলে গেল। আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রিকশায় বসলাম। আম্মুকে নিয়ে বাসায় ফিরছি। নিষাদের জন্য খারাপ লাগে আমার। আমি বুঝতে পারি ও এখনও আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। কিন্তু আমি যে বিয়ে করতে চাই না। সে যতই ভালো হোক, তার তো একটা পরিবার আছে। ওরা কী বিয়ের পর আমার এই জীবন মেনে নিবে? নিবে না।
তাছাড়া বিয়েটাও মানবে কি-না সন্দেহ। বলবে আমি ফাঁসিয়েছি, তাবিজ করেছি। নতুন করে আরও অনেক যন্ত্রণা শুরু হবে। বারবার ওর থেকে দূরে থাকতে চেয়ে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। কিছুটা আম্মুর দোষ, কিছুটা আমার মায়া। ওর প্রতি আমার কেমন মায় হয় আজকাল। এইযে ঢাকা গেল, আসলো। সিএনজিতে বসলে আয়নার দিকে তাকিয়ে আমাকেই দেখবে। আকাশ সাহেবের পাশে বসায় তার মুখ কী ভীষণ মলিন। একটা মানুষ কীভাবে এত নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারে আমার মাথায় আসে না। আম্মুর সাথে আমি বাসায় চলে এলাম। মনে মনে ভাবছি নিষাদের পরিবার টের পায় কি-না। পেলে কি ভাববে কে জানে। আজ সন্ধ্যায় ও আর এলো না। আমি খুশিই হলাম। বোকাটা এসব বুঝতে চায় না। লোকে কী বলবে ভাবে না। আকাশ সাহেব রাতে কল দিলেন। কথা হলো খানিকক্ষণ। এরপর রেখে দিলেন। নিষাদের সাথে মেসেজে কথা হলো, খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে গেলাম। এরপর আরও প্রায় পনেরোদিন চলে গেল। নিষাদ সন্ধ্যায় আসে, গল্প করে, লুডু খেলে চলে যায়। একদিন ওকে লুডু খেলায় রেখে আমি আকাশ সাহেবের সাথে ফোনে কথা বলতে বারান্দায় গিয়েছি। কথা শেষে আসার পর দেখি ওর মুখ মলিন। লুডু খেলা রেখে আচমকা আমার হাত ধরে বললো, ‘নূপুর, আমি তোকে কিছু কথা বলতে চাই। তুই প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবি না। নইলে আমি মরে যাব। আমাকে তুই না করা থেকে নিজে খু*ন করে ফেল।’

আমার বুক কাঁপতে শুরু করলো। ও কী বলতে চায় আমি বুঝতে পারছি। এখন আমি কীভাবে ওকে ফিরিয়ে দেবো? আমি ইতস্তত করে বললাম, ‘পাগলের মতো কথা বলছিস কেন? শান্ত হয়ে বল, হাত ছাড়।’

– ‘নূপুর, তুই প্লিজ আকাশ সাহেবের সাথে এত কথা বলিস না। প্লিজ।’

আমার ক্ষীণ রাগ হলো একথা শুনে। আমি রূঢ় গলায় বললাম, ‘এটা কেমন কথা? আমি কার সাথে কথা বলবো না বলবো তাতে তোর কী?’

– ‘তুই কথা বললে কোনো সমস্যা নেই নূপুর, কিন্তু যদি উনার সাথে তোর কোনো সম্পর্ক হয়ে যায়?’

– ‘সো হোয়াট? হলে তোর কী?’

নিষাদ শুকনো ঢোক গিলে শান্ত গলায় বললো, ‘দেখ নূপুর, তুই যে অবুঝ তা তো না। তুই বুঝিস না আমি কেন ডেইলি তোর কাছে চলে আসি? বল, বুঝিস না?’

আমার মমতায় বুকটা ‘হু-হু’ করে উঠলো। সত্যিই তো আমি বুঝি। তবুও ওকে বললাম, ‘কিন্তু আমি তোকে চার মাস আগেই তো বলেছিলাম আমি বিয়ে-শাদি করতে চাই না।’

– ‘কিন্তু নূপুর, আমি আশা করেছিলাম হয়তো তোর সিদ্ধান্ত চেঞ্জ হবে। হলে হয়তো আমাকেই বিয়ে করবি। এখন আমার ভয় হয়, তুই না আকাশ সাহেবকে বিয়ে করে নিস।’

আমিও ক্ষীণ সময় চুপ করে থেকে বললাম, ‘বিয়ে করলে তো উনাকেই আমার করা উচিত। উনাকে বিয়ে করলে আমার ক্যারিয়ারের কোনো অসুবিধা হবে না। কেউ কটু কথাও বলবে না। তোকে করতে গেলে তোর পরিবারই তো রাজি হবে না। তার উপর কত বাজে কথা বলবে।’

– ‘নূপুর, আমাকে বিয়ে করলেও তোর ক্যারিয়ারের কিচ্ছু হবে না। আমার পরিবারকেও আমি মানিয়ে নিব। তুই শুধু একবার বল বিয়ে করবি।’

তখনই আম্মু এসে ঢুকে গেলেন, তিনি চুপ করে দাঁড়িয়ে আড়াল থেকে বোধহয় সবই শুনছিলেন। এসে বসলেন বিছানায়। নিষাদ স্বাভাবিক হয়ে দূরে সরে গেল। আম্মু কোনো প্রকার ভূমিকায় না গিয়ে দ্বিধাহীন গলায় বললেন, ‘দেখো বাবা নিষাদ, তোমাকে আমার এবং তোমার চাচারও পছন্দ। কিন্তু আমার মেয়ে তো বিয়েই করতে চায় না। তবুও তোমার পরিবার মানলে হয়তো মেয়েকে বুঝাইতাম…।’

আমি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করে বললাম, ‘আম্মা কি বলছো এসব? এরকম করলে আমি ঘর থেকে বাইর হয়ে যাব।’

মা ক্ষুব্ধ গলায় বললেন, ‘এখন চুপ থাক পরে বলিস যা বলার।’

আমি নিষাদের সামনে আর কিছু বলতে না পেরে এখান থেকে রাগ করে উঠে চলে এলাম। ওরা কি কথা বললো জানি না। নিষাদ চলে গেল। পরের দুইদিন ও এলো না। তিনদিন পর সন্ধ্যায় বিধ্বস্ত অবস্থায় এসেছে। মা আর আমি কিচেনে। এসেই আম্মুর পা জড়িয়ে ধরে শিশুদের মতো কান্না শুরু করে দিল। আমি নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। ওর কান্না দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম যদি ওর পরিবার রাজি হয়, তাহলে ব্যাপারটা ভেবে দেখবো।
সে বারবার বলে যাচ্ছে ‘আমি নূপুরকে ছাড়া বাঁচবো না চাচি, তুমি আমার আম্মা, তুমি আমার অভিভাবক, তুমি ওর সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে দাও।’

আম্মু ওকে বারবার সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন ‘আরে কি হয়েছে, কান্নাকাটির কি হলো, উঠো, উঠো বলছি। খুলে বলো কি হয়েছে?’

সে উঠে চোখের পানি মুছলো। তারপর বললো, ‘চাচি আমার আব্বা-আম্মা কেউ রাজি হয় না।’

আমি দীর্ঘশ্বাস গোপন করলাম। যা ভেবেছিলাম তাই হলো। আম্মু ক্ষীণ সময় নিয়ে বললেন, ‘দেখো বাবা, তোমার কাছে মেয়েটা বিয়ে দিতে পারলে খুশিই হতাম। আর কোনো সন্তান নাই আমার। ঘরের কাছে থাকতো মেয়েটা। কিন্তু মেয়ে তো শুধু জামাই নিয়ে খেতে পারবে না, সংসার নিয়ে থাকতে হয়। গ্রাম-গঞ্জের কারবার তো বুঝোই। তোমার পরিবার না মানলে কি করার আছে?’

নিষাদ পাগলের মতো আবার আম্মুর পা জড়িয়ে ধরে বললো, ‘চাচি কেউ রাজি না থাকলেও আমি ওকে বিয়ে করবো। ওর আর কাউকে লাগবে না। তোমরা শুধু রাজি হলেই হবে। প্লিজ চাচি। আমার কীসের অভাব আছে…।’

আমার কেমন বুকে চাপা কষ্ট হচ্ছিল। আমি এখান থেকে উঠে চলে এলাম৷ আম্মু বিরক্ত হয়ে একটু কড়াভাবেও কথা বলতে শুরু করেছে। এরপর বোধহয় পরিবারকে রাজি করানোর জন্য আবার চলে গেল। আম্মু আমার রুমে এসে বসে বললেন, ‘মা’রে দেখলে তো ওর অবস্থা। যদি ওর মা-বাপ রাজি হয় আর তুই বিয়ে না করিস মরে যাবে।’

আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, ‘আচ্ছা আম্মু করবো। কিন্তু ওর পরিবার তো রাজি হতে হবে। নয়তো আগের মতো আমার জীবন নরক হয়ে যাবে।’

আম্মু বোধহয় একটা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেলেন। তিনি খুশি হয়ে বললেন, ‘এখন সে তার পরিবার রাজি করতে পারলে হলো, নয়তো না।’

আমি এরপর নানান কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে যাই। কবিতা পড়ি। বই পড়ি। মুভি দেখি। তবুও আমার কেন যেন নিষাদের জন্য মন পু*ড়ে। এমন না যে ওর আমি প্রেমে পড়ে গেছি, তবুও বারবার মনে হয়, ইস ছেলেটা এত পাগল আমার জন্য। বিয়ে করলাম তাকে ফিরিয়ে দিয়ে। তবুও ডিভোর্স হতেই সে পুনরায় চেয়ে বসলো। এখন এভাবে কান্নাকাটিও করে। একটা জীবনে আর কি লাগে এমন নিখাদ ভালোবাসা পেলে। আমি এসব ভাবনা থেকে বের হতে চাই পারি না। এভাবে সপ্তাহ খানেক চলে গেল। সে মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসে, আব্বা-আম্মার সাথে কথা বলতে শুনি। ওরা আমার সাথে আর ওকে দেখা করতে না দিয়ে বিদায় করে দেয়। মাঝে মাঝে আম্মু আসে আমার কাছে। আমি এটা-ওটা জিজ্ঞেস করি। সে জানায় নিষাদ পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে। পুরো এলাকার মানুষ জেনে গেছে। তার মা-বাবাকে রাজি করানোর জন্য লোক লাগিয়েও পারছে না।

আমি ওর জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলি। তারপর বলি, ‘এখন তো আমার রুমেও আসে না।’

– ‘বলেছি তুই রাজি হয়েছিস বিয়ে করতে। তার পরিবার মানলে বিয়ে করবি।’

– ‘এজন্য না আসার কারণ কি?’

– ‘আমিই বলেছি এখন আর তোর রুমে না যেতে, কোনো পাগলামি করলে শেষে আবার মত পালটে ফেলবি।’

‘ভালো করেছো’ বলে আমি মোবাইল হাতে নিই। আম্মু চলে যান। হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে দেখি ওর কয়েকশো মেসেজ জমে গেছে। ওর নাম্বার মিউট করে রাখা। আমি তবুও সিন করলাম না। যা বলার আম্মু তো বলেছেনই। আরও প্রায় দুই সপ্তাহ গেল।
একদিন আম্মা-আব্বা আমার রুমে এলেন। এসে বসলেন। আম্মু প্রথমে বললেন, ‘নূপুর, এলাকার মানুষ তো যা-তা রটিয়ে ফেলেছে।’

– ‘কি হয়েছে?’

– ‘বলে নিষাদ ডেইলি এখানে আসতো। ফষ্টিনষ্টি করেছে। এজন্য বিয়ের জন্য পাগল হয়েছে। ওর পরিবারও মানুষকে এসব বলে। আমরা না-কি তাদের ছেলের মাথা খেয়েছি।’

– ‘দেখেছো অবস্থা? আমি আগেই এগুলো বলেছিলাম না? এখন তো বদনাম ঘুরেফিরে আমাদের ঘাড়েই এসেছে।’

আব্বু তখন বললেন, ‘সে তো বলে বিয়ে করে নিলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আগে পরিবার ছাড়া বিয়ে করে নিতে চায়। আমিও ভাবছি এটাই করি, যেহেতু বদনামও রটে গেছে।’

আমি তীব্র প্রতিবাদ করলাম। বদনাম লেগে গেছে মানে! আমি কড়া ভাষায় বললাম, ‘না, এভাবে আমি বিয়ে করবো না। আমার দিক থেকে কোনো দূর্বলতা নেই। নিষাদকে আমি আগে থেকেই সাবধান করেছি।’

তারা আরও অনেক কথা বললেন। কোনো কাজ হলো না। হতাশ হয়ে শেষদিকে আম্মু বললেন, ‘এত জেদ নিয়ে আছো যে তোমাকে পরে বিয়ে করবে কে?’

আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম। ওরা জানে না আকাশ সাহেব ইতোমধ্যে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসে আছেন। আমি নিষাদের কথা ভেবে ওকে প্রত্যাখ্যান করেছি।

৫.
নূপুর আমার মেসেজ সিন করে না। কল রিসিভ করে না। চাচি আমাকে কল দিয়ে জানিয়েছেন ও আমার পরিবার ছাড়া রাজি হয়নি। মরে যাচ্ছি ওর জন্য, আমার রাতে ঘুম হয় না। রোজ ঘরে চিল্লাচিল্লি করে না খেয়ে ঘুমাই। ও এসব বুঝতে চায় না। আমি একবার বুঝিয়ে বলতাম, হয়তো বুঝতো। একবার বিয়ে করে নিলে ঠিকই সবাই মানবে। সে তাদের বাড়িতেই থাকলো। আমি খরচ দিলাম। ওদের বাসায় মাঝে মাঝে গিয়ে থাকলাম। এক সময় সবাই মেনে নিলে বাসায় নিয়ে আসতাম। অন্তত একটা বাচ্চা হয়ে গেলে সবাই ঠিক মেনে নিতো। আমি ওর সাথে দেখা করতে চাইলেও চাচি দেখা করতে দেন না। এলাকার মানুষের কানাঘুঁষায় তারা রক্ষণশীল হয়ে গেছেন।

এভাবে দিন যাচ্ছে। সপ্তাহ খানেক পরে দেখি আকাশ সাহেব কালো গাড়ি নিয়ে তাদের বাড়িতে এসেছেন। সাথে উনার পরিবারের মানুষ৷ আমি এদিক-ওদিক থেকে খবর পাই বিয়ের কথাবার্তা চলছে। আমার মাথায় আগুন লেগে যায়। কল-মেসেজ দিয়ে নূপুরকে পাই না।

তিনদিন পর দুপুরে, আমার মন বিষণ্ণ হয়ে উঠলো। মন কেমন করছিল। তখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। আমি ছাতা ছাড়া ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। কে কী বলবে না ভেবে পাগলের মতো ছুটলাম। এসে নূপুরদের দরজায় ওর নাম ধরে ডাকতে শুরু করি। ও এসে দরজা খুলে দেয়। আমাকে ভেজা দেখেই বললো, ‘পাগল না-কি, এভাবে বৃষ্টিতে ভিজে কেন এসেছিস?’

আমি উত্তর না দিয়ে ভেতরে যেতে চাইলে বললো, ‘দাঁড়া তোয়ালে দিচ্ছি।’
ও তোয়ালে নিয়ে এলো। আমি মাথা মুছে নিয়ে ভেতরে গেলাম। সে দরজা ভিজিয়ে বললো, ‘লোকে দেখলে কি বলবে? আব্বা-আম্মা বাসায় নেই।’

‘নূপুর তুই আমার কল মেসেজ রিসিভ করিস না। আন্টিও দেখা করতে দেয় না। আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি কেউ বুঝতে চায় না…।’

সে থামিয়ে দিয়ে বললো, ‘চুপ কর, বস গিয়ে, আসছি আমি।’

আমি ওর বিছানায় এসে বসলাম। নূপুর খানিক পর দুই কাপ চা নিয়ে এসে বললো, ‘তুই আসার আগেই চা বসিয়েছিলাম’ বলে একটা কাপ টেবিলে রেখে আরেকটা বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। আমি চায়ের কাপটা নেয়ার সময় ওর ফরসা হাতটার দিকে নেশাতুর চোখে তাকিয়ে থাকি। ও স্মিত হেসে বললো, ‘হা করে না তাকিয়ে কাপ নে।’
আমি ওর নরম হাতটা ধরে ফেললাম। চায়ের কাপটি মেঝেতে পড়ে ভেঙে গেল। সে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো, ‘এটা কি করলি তুই, পড়ে গেল কাপ।’ তারপর দাঁত কটমট করে তাকিয়ে কাপটি তুলতে গেল। তখনই ওর কালো শাড়ির আঁচল সরে গেল। ওর ফরসা পিঠ উম্মুক্ত হলো।
আমি ঠিক থাকতে পারলাম না। জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো ওর পুরো পিঠে চুমু খেতে শুরু করলাম৷ সে মোচড়া-মুচড়ি শুরু করলো। আমি না ছেড়ে ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘নূপুর, তুই আমার জান, আমার কলিজা, তুই কীভাবে আকাশ সাহেবকে বিয়ে করতে রাজি হলি বল। কীভাবে হলি। তুকে না পেলে আমি মরে যাবরে, তুই আমাকে বিয়ে কর নে।’

সে আমাকে কিল-ঘুষি দিয়ে বারবার বলছে ‘ছাড় নিষাদ, ভালো হচ্ছে না ছাড় বলছি।’

আমার এতদিনের লজ্জা-শরম, ধৈর্য সবকিছুর বাঁধ যেন ভেঙে গেল। বিস্ফোরণ হলো। ওকে জড়িয়ে ধরে ওর শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ আমাকে মাতাল করে দিল। আমি ওকে বুকের সঙ্গে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি, আর ছাড়তে ইচ্ছা করে না। ছাড়লেই বুঝি আকাশ সাহেন গাড়ি তুলে নিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যাবে। আমি ওর কপালে, মুখে, গলায় চুমু খাই। ওর নরম গরম দেহ আমাকে ক্রমশই উত্তেজিত করে তুলে। খানিকক্ষণ নূপুর পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বললো, ‘ছাড়বে কি-না বল।’

– ‘না নূপুর, তুই একবার বল আমাকে বিয়ে করবি। আমাদের কেউ লাগবে না। আমরা দু’জন খুব ভালো থাকবো। তোক আমি কত ভালোবাসি তুই জানিস না নূপুর।’

নূপুর খুব দৃঢ় গলায় বললো, ‘তুই আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরে আছিস। এরপরও তোকে আমি বিয়ে করবো?’

আমি ওর শীতল গলা শুনে ভয় পেয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি ওকে ছেড়ে দিয়ে বললাম, ‘এইতো ছেড়ে দিয়েছি নূপুর, আমার মাথায় কাজ করছে নারে। আমি কতদিন থেকে ঠিক মতো খাই না, ঘুমাই না। এর মাঝে তুই বিয়ে করে নিচ্ছিস শুনে মাথা ঠিক নেই।’

‘তুই এখনই আমার রুম থেকে বের হয়ে যা।’

আমি ওর হাত ধরে বুঝাতে গেলাম। ও পুনরায় শীতল তবে ভয়নাক গলায় বললো, ‘তুই আর স্পর্শ করবি না। আবার জোর করে স্পর্শ করলে আমি মনে করবো তুই আমাকে ধ*র্ষণও করতে পারিস। আমার চোখের সামনে থেকে যা।’

আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওর চোখে-মুখে কিছু ছিল। আমি আর কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে আসলাম।

__চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলাম