আমার হয়ে যা পর্ব-১৪

0
322

আমার হয়ে যা _পর্ব-১৪
.
৬.
নূপুরকে আমি চুমু খেয়েছি, জড়িয়ে ধরেছি। এগুলো যেন আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। স্বপ্নের মতো লাগছে। এমন তো না আজই প্রথম, কিছুদিন আগেও ওর হাত ধরেছি। তবুও সবকিছু প্রতিবারই আমার কাছে কেমন প্রথমের মতো অনূভুতি দেয়। আমি উঠান পেরিয়ে রাস্তায় এলাম, দূরের একটি বাড়ি থেকে দুইজন মহিলার সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেল। আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। খুব একটা ভয় পেলাম না আমি। হতে পারে চাচা-চাচি বাড়িতে যে নেই ওরা জানে না। আমি বাড়িতে এসে গোসল করে খেয়ে-দেয়ে বাজারে চলে এলাম। একটা সিগারেট ধরিয়ে টান দিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি নূপুর মেসেজ দিয়েছে।

– ‘খেয়েছিস?’

নিজেকে ভীষণ বিশেষ কেউ মনে হয় আমার। নূপুরের মতো কেউ একজন আমার আছে, যে আজকাল আমি খেয়েছি কি-না জিজ্ঞেস করে। রিপ্লাই দিলাম, ‘হ্যাঁ খেয়েছি, গোসল করে খেয়ে দোকানেও চলে এসেছি।’

– ‘বাবা কত ফাস্ট তুই।’

– ‘তুই খেয়েছিস?’

– ‘হ্যাঁ, আচ্ছা শোন৷ তোকে তো আমি কিছুই এখনও গিফট করিনি। তোর জন্য অনলাইনে একটা পাঞ্জাবি অর্ডার করেছি। বাজারে সুন্দরবন কুরিয়ারে আসবে। কল দিলে রিসিভ করে নিস।’

আমি অবাক হয়ে গেলাম। সত্যিই কিছুটা রেগে বললাম, ‘এটা কেন করলি নূপুর, তুই আমাকে না বলেই কাজটা করলি কেন!’ কথাটি বলে খেয়াল করলাম কর্মচারিরা তাকাচ্ছে। আমি দোকানের বাইরে চলে এলাম।

ও মিষ্টি হেসে বললো, ‘কেন? তুই গিফট করতে পারলে আমি পারবো না কেন?’

– ‘না, তুই আমাকে গিফট করতে হবে না। তুই নিজেই তো আমার জন্য একটা গিফট। তুই আমার সঙ্গে কথা বললেই হলো।’

– ‘আর কিছু লাগবে না?’

আমি ওর ইঙ্গিত বুঝে বললাম,
– ‘না, তোর ভালোবাসাও লাগবে না৷ শুধু আমাকে ভালোবাসতে দিলেই হবে।’

ও আবার হাসলো। অকারণই যেন হাসছে। তবুও আমার বড়ো ভালো লাগে। আমি ওকে আজকাল হাসাতেও পারি। ও ক্ষীণ সময় পর হাসি বন্ধ করে গাম্ভীর্যের গলায় বললো, ‘এরকমটা কি হয়? আমি কি রোবট? আমাকে কেউ কেবল ভালোবাসবে, আমার কি ইচ্ছা করবে না? যাইহোক, পাঞ্জাবি রিসিভ করিস। আর শোন, তোকে লম্বা চুলে বেশ লাগে। চুল খাঁটো করে কাটবি না।’

আমার প্রতি ওর এই সামান্য মনযোগের সংকেতও ভেতরে তুমুল আলোড়ন তুলে। ব্যাপারটা একটু টেনে লম্বা করার লোভও আমি সামলাতে পারি না। তাই লাজুক হেসে বলি, ‘তোর কি আমার এসবে খেয়াল থাকে? আমার তো বিশ্বাসই হয় না।’

– ‘থাকবে না কেন? তোকে যে পাঞ্জাবিতেও সুন্দর লাগে বলিনি? ঢাকায় যাওয়ার দিনও তো বলেছিলাম।’

ও বলেছিল। আমার স্পষ্ট মনে আছে। ওর কাছে প্রশংসা শুনতে কীযে ভালো লাগছে। আমি ভান করে বললাম, ‘না তো, কই বললি।’

– ‘ও তাহলে বলিনি হয়তো। তবে সত্যিই পাঞ্জাবিতে সুন্দর লাগে।’

আমি টের পাই কিশোরদের মতো আমার কান গরম হয়ে যাচ্ছে। নূপুরের মতো রুচিশীল মেয়ের থেকে প্রশংসা! আমার নিজেকে বোম্বের হিরোদের থেকে কম মনে হচ্ছে না। আমরা দীর্ঘ সময় ফোনে কথা বললাম। ফোন রেখে দোকানে এসে কাজে মনযোগ দিলাম। এরপর রাতে ঘুমানোর আগে ওর সাথে কথা হলো। পরদিন ঘুম থেকে উঠেছি খানিক দেরিতে। উঠে দরজা খুলে ফ্রেশ হতে বাথরুমে যাব। আম্মু তেড়ে আসলেন। এসে বললেন, ‘তুই শুরু করেছিসটা কী? তুই কি চাস? তুই কি চাস আমরা আর কারও সামনে মুখ না দেখাই?’

আচমকা এমন আক্রমণে আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘কি হয়েছে?’

– ‘নূপুরের মা ভোরে এসে নালিশ দিয়ে গেল। তুই না-কি তাদের মেয়ের কলঙ্ক লাগাচ্ছিস। ওরা গতকাল বাড়িতে ছিল না, তুই তাদের বাড়িতে গিয়েছিস। লোক দেখে যা-তা বলছে।’

আমি বুঝতে পারলাম ঘটনটা। ক্ষীণ সময় চুপ থেকে বললাম, ‘তাতে কলঙ্ক লাগার কি আছে৷ একজন আরেকজনের বাড়িতে যায় না?’

– ‘তুই খালি বাড়িতে কেন যাবি?’

– ‘আমি তো জানতাম না ওরা বাড়িতে নেই।’

– ‘তুই যাবিই বা কেন? তোর আর ওর বিষয়ে লোকে এমনিতেই কত কথা বলে। তুই আবার যদি যাস তাহলে লোকে কি মুখ বন্ধ করে থাকবে?’

আমি রেগে গিয়ে বললাম ‘বলে বলুক। আমার কিছু যায় আসে না’ বলে বাথরুমে চলে গেলাম। আব্বু রুম থেকে বললেন, ‘সে কি ভাবছে৷ দুই পয়সা রোজগার করে বইলা কি যা ইচ্ছা করে বেড়াবে? আমাদের কি এলাকায় মান-ইজ্জত নিয়ে বেঁচে থাকা লাগবে না না-কি।’

আমি এগুলো আর কানে নিলাম না। হাত-মুখ ধুয়ে রুমে এসে নাশতা না করেই মোবাইল-মানিব্যাগ নিয়ে বাইরে এলাম। বাইক নিয়ে চলে এলাম বাজারে। এসে একটা রেস্তোরাঁয় ঢুকে ফোনের ডাটা অন করতেই মেসেজ এলো নূপুরের, ‘শোন নিষাদ, গতরাতে ফোনে কথা বলার সময়ই বলা দরকার ছিল। তখন ভাবিনি আম্মু ঘটনাটা তোদের বাড়ি অবধি টেনে নিবে। আসলে তুই যে এসেছিলি। ওটা আম্মু-আব্বু জেনে গেছে৷ আমাকে অনেক বকেছে। ভোরে উঠে দেখছি আবার তোদের বাড়িতে যাচ্ছে। তুই চাচা-চাচিকে বলিস কেউ বাড়িতে নেই জানতি না। পরে এসে দরজার সামনে থেকে চলে গেছিস।’

আমি মুচকি হেসে রিপ্লাই দিলাম, ‘সেটাই আমি বলেছি। কিন্তু তোর আব্বু-আম্মু এটা বিশ্বাস করবে কি-না বুঝতে পারছি না।’

ওর বোধহয় ফোন হাতেই ছিল। সাথে সাথেই রিপ্লাই দিল, ‘তা ঠিক, আম্মু বলছে সেদিন বিদায় করার পর আর আসেনি, আজ কেউ নেই দেখেই চলে এলো কীভাবে! ওর তো মতলব ভালো না।’

বুঝতে পারলাম বিষয়টা জটিল হয়ে গেছে। নূপুর আমাকে বুঝতে দিতে চাচ্ছে না। আমি ইতস্তত করে বললাম, ‘তোকে অসুবিধায় ফেলেছি মনে হয়।’

– ‘আরে ব্যাপার না, এত ভাবিস না। আচ্ছা পরে কথা হবে।’

ও অফলাইনে চলে গেল। আমি রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতা করছি। আম্মু কল দিয়ে নাশতা না করে চলে আসার জন্য বকলেন। আমি উলটো রাগ দেখিয়ে ফোন রেখে দোকানে চলে গেলাম। দুপুরেও বাড়িতে গেলাম না। আজ বৃহস্পতিবার। সন্ধ্যায় নূপুর লাইভে আসার কথা। আজ ও এলো না। এলো না কেন জিজ্ঞেস করতে যেতেও করিনি। রাতে করা যাবে। আমি এগারোটায় বাসায় ফিরলাম। চুপচাপ রাতের খাবার খেয়ে রুমে বিছানায় এলাম। মোবাইল হাতে খানিকক্ষণ স্যেশাল মিডিয়া স্ক্রল করে নক দিলাম তাকে, ‘কি করিস, আজ লাইভে যে এলি না।’

– ‘এমনিই।’

– ‘মন খারাপ?’

– ‘না, আজ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাব, তুই ঘুমা।’

সত্যিই আমি ঘুমিয়ে গেলাম। আরও তিনদিন এভাবে কেটে গেল। চ্যাটে কথা হলো কেবল। আমি ওদের বাড়ির দিকে গেলাম না। আমার বাড়িতেও থমথমে পরিবেশ। তিনদিন পর রাতে ও মেসেজ দিয়ে বললো, ‘নিষাদ শোন, আমি সেদিন রাগারাগি করে তোকে বিয়ে করবো বলে দিয়েছিলাম। ওরা দেখছি এখন আর তোর কাছে বিয়েই দিতে চায় না। তারা আকাশ সাহেবের সাথে বিয়ে দেবে। ওর বোনের সাথে কথাবার্তা এগিয়ে নিচ্ছে। এদিকে তোর পরিবারও তো রাজি না। কি করবো বল? তুই পরিবারকে ম্যানেজ কর। না হলে তো আমি আকাশ সাহেবকে বিয়ে না করে বাড়িতেই থাকতো পারবো না।’

আমি মেসেজ দেখে চিন্তিত হয়ে গেলাম। আব্বু-আম্মু তো কোনোভাবেই রাজি হবে বলে মনে হচ্ছে না। চিন্তায়, অস্থিরতায় আমি রিপ্লাই দিলাম, ‘নূপুর, এসব ঝামেলা ভালো লাগে না। চল কোথাও দু’জন পালিয়ে চলে যাই।’

ও রিপ্লাই দিল, ‘বোকার মতো কথা বলিস না। পালিয়ে গেলে তোর ব্যবসার কি হবে? তখন আমরা চলবো কীভাবে?’

সত্যিই তো পালিয়ে গিয়েও তো সম্ভব না। আমি ক্ষীণ সময় চুপ থেকে বললাম, ‘তাহলে চল, কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে তোকে আমাদের বাড়িতেই তুলি।’

– ‘আর তোর বাড়ির সবাই আমার চুল কি একটাও রাখবে? এভাবে আমি গিয়ে থাকতে পারবো?’

ও ঠিকই বলছে। এসব নিয়ে আরও অনেকক্ষণ আমাদের কথা হয়। আমি কি করবো ভেবে পাই না। পুরো রাত আর ঘুমাতে পারলাম না। ভোরে আম্মুকে গিয়ে নূপুরকে মেনে নেয়ার জন্য অনেকক্ষণ মিনতি করলাম। ফলাফল শেষমেশ রাগারাগি আর চিল্লাচিল্লি অবধিই গেল। তাদের মন আর গললো না। আমি ব্যর্থ হয়ে দোকানে চলে আসি। নূপুরকে মেসেজ দেই না। দিয়ে কি বলবো বুঝতে পারি না। দুপুরর আর রাতে আমাদের অল্প অল্প কথা হলো। এর ভেতরে আমি কুরিয়ার থেকে পাঞ্জাবি রিসিভ করলাম। ক্রিম কালার পাঞ্জাবি, বেশ ভালো লেগেছে আমার। আমি রাতে রুমে এটা পরে একা একা ছবি তুলে পাঠালাম।
এরপর এভাবেই দোদুল্যমান অবস্থায় এক সপ্তাহ কেটে গেল। আজ ঘুরে-ফিরে আরেক বৃহস্পতিবার চলে এলো। ওর লাইভ শুনলাম। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলাম। আজকাল কমেন্ট করলে নূপুর সেটা লাইভে না পড়লেও লাভ রিয়েক্ট দেয়। আমি যথারীতি এগারোটায় বাড়ি ফিরলাম। রাতের খাবার খেয়ে বিছানায় গেলাম। গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখি ও নিজেই আজ বলছে, ‘তোকে দেখতে ইচ্ছা করছে নিষাদ৷ এক সপ্তাহ হয়ে গেল দেখা হয় না।’

আমার গা কাটা দিয়ে উঠলো। কী আশ্চর্য! আমার নূপুর আমাকে মিস করছে? আমাকে দেখতে চাচ্ছে ও। আমার এই মুহূর্তে মনে হলো পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাক তবু ওর সামনে আমার যেতেই হবে। ওর বাড়ির সামনে সমুদ্র হলে সাঁতরে যাব। পাহাড়া হলে আরোহীদের মতো তা ডিঙাবো। আমি কিছু না বলেই গেঞ্জি গায়ে দিয়ে বের হয়ে গেলাম। হেঁটে হেঁটে খুব সাবধানে নূপুরদের উঠানে এসে ওকে মেসেজ দিয়ে বললাম, ‘জানালাটা খুলে দে।’

ও বিস্ময়ের ইমুজি দিয়ে বললো, ‘তুই কি চলে এসেছিস?’

– ‘তোর দেখতে ইচ্ছা করবে আর আমি বাসায় ঘুমাবো?’

– ‘তুই সত্যিই একটা পাগল, দাঁড়া খুলছি।’

ভেবেছিলাম রাগারাগি করবে। ও তা করলো না। নূপুরের আসলে ভয়ও কিছুটা কম আছে। ওর জানালা খুলে গেল। আমি তাকালাম ভেতরে, ওর পরনে একটা কামিজ। ওড়না গলায় ঝুলানো। মুখ শুকনো। চোখের নিচে ঈষৎ কালি। আমি নয়ন ভরে ওকে দেখে নিয়ে বললাম, ‘কিরে তোর এই অবস্থা কেন? তুই কি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করিস না-কি? আমি থাকতে এত চিন্তা কীসের বল? দরকার হলে বিয়ে করে বাজারে একটা বাসা ভাড়া করে দু’জন থাকবো৷ তুই কেন এত ভাবিস?’

ও স্মিত হেসে জানালা দিয়ে দুই হাত বের করে বললো, ‘কাছে আয়।’

আমি কাছে গেলাম। আমার মুখটা দুই হাতে ধরলো। এত আদর করে ধরলো, যেন আমি বাচ্চা কোনো ছেলে।

– ‘এত অস্থির হচ্ছিস কেন নিষাদ, আমি ঠিক আছি।’

আমি অভিমান করে বললাম, ‘তুই একা একা খুব ভুগছিস মনে হচ্ছে। আমাকে বলিস না কেন?’

ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ‘আরে না, তেমন কিছু না। তুই জাস্ট দেখ চাচা-চাঁচি মেনে নেয় কি-না। তাহলে আর কোনো অসুবিধা নেই। আমরা বিয়ে করে নেব।’

আমি ওর হাতটায় গাঢ় চুমু খেয়ে বললাম, ‘ওরা না মানলেও কোনো না কোনো ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তুই এত ভাবিস না।’

ও মাথা নেড়ে ‘জি আচ্ছা স্যার’ বললো। দুষ্টুমির একটি হাসি খেলে গেল ওর মুখে। আমি খানিক তাকিয়ে থেকে বললাম, ‘তুই হঠাৎ আমাকে এত ভালোবেসে ফেললি কি করে?’

– ‘জানি না, একবার মেনে নেয়ার পর সব বাঁধ ভেঙে গেছে। তাছাড়া তুই আমাকে যতটা হৃদয়হীন ভাবিস তা তো আমি কখনওই ছিলাম না।’

জানালার বাইরে অনেক নিচু। আমি হাত বাড়িয়ে ওর মুখটা ধরতে পারছি না। ও সেটা বুঝতে পেরে খানিক নিকটে এলো। আমি মুখটা আদর করে ধরে কিছু বলতে চাইছিলাম। কিন্তু ভুলে গেলাম সেটা। ইস ওর গালটা কি ভীষণ মসৃণ, তুলতুলে। আমি কি বলতে চেয়েছিলাম সেটা ভুলে গিয়ে বললাম, ‘তোর গালে চুমু খেতে ইচ্ছা করছে নূপুর। তুই এত মায়াবী কেন বলতো?’

ও ক্ষীণ সময় তাকিয়ে থেকে বললো, ‘তোর মনটা অনেক পবিত্র নিষাদ, তুই তোর পবিত্র মন নিয়ে আমাকে দেখিস বলেই এমন মায়া লাগে৷ কুলষিত মন নিয়ে দেখলে অনেক ত্রুটি খুঁজে পেতি।’

ওর কথা শুনেই মনে পড়লো। আমি বললাম, ‘শোন তুই হৃদয়হীনের মতো আমার সাথে আচরণ করতি ঠিকই, কিন্তু তোকে সব সময়ই দেখে আমার কাছে মায়াবতী মনে হতো। শোন, তোর হয়তো মনেই নেই। আমরা দু’জন তখন ক্লাস ওয়ান বা টুতে পড়ি। স্কুল থেকে ফিরছি। বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় কাদাপানি ছিল। তুই, তিশা, রেবেকা পেছনে। আমি সামনে দিয়ে হাঁটছি। আচমকা পা পিছলে পড়ে গেলাম। সবাই খিলখিল করে হেসে একজন আরেকজনের গায়ে পড়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু তুই দৌড়ে এসে আমাকে হাত ধরে তুললি। নিজের বই ওদের কাছে দিয়ে আমার কাদায় ভেজা বইগুলো ঝেড়ে-মুছে দিলি। এই ঘটনা মনে আছে তোর?’

ও খানিক ভেবে বললো, ‘না মনে নেই। কিন্তু তোর এত আগের কথা মনে আছে কীভাবে?’ তারপর স্মিত হেসে বললো, তুই কি তখন থেকে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলি না-কি?’

– ‘ধ্যাৎ তখন হাফপ্যান্ট পরে স্কুলে যেতাম।’

ও হেসে ফেললো। ওর হাসি দেখলে ভীষণ ভালো লাগে আমার। আমার বুকটা আবার কেমন করে উঠে। ওকে আদর করতে মন চায়। আমি জানালার ভেতর দিয়ে হাত বাড়িয়ে খানিক কাছে আসার আহবান করি। আমার নূপুর খানিক নিকটে আসে। আমি ওর মুখটা আঁজলা করে ধরি। মুখে হাত বুলিয়ে এনে ঠোঁটে ছুঁই। ও আমার দিকে বড়ো আদর নিয়ে তাকায়। তারপর উদাস গলায় বলে, ‘অতীত যদি এডিট করা যেত। আমার জীবনে তিন বছর আগের বিয়েটা রিমুভ করে নিতাম। তোকে বিয়ে করে নিলে আমার জীবনটা এমন হতো না। তোকে চোখের সামনে রেখে কীভাবে এড়িয়ে গিয়েছিলাম তা ভেবে পাই না নিষাদ।’

আমি ওর মুখে হাত বুলিয়ে বললাম, ‘অতীত নিয়ে ভেবে মন খারাপ করিস না তো নূপুর। তাছাড়া তোর আগে বিয়ে ছিল, ডিভোর্স হয়েছে বলে কীসের বদনাম। এসব মুখে আনবি না।’

ও আমার চুলে আঙুল ডুবিয়ে বললো, ‘তুই আমাকে ভালোবাসার যে প্রমাণ দিলি, তা সত্যিই বিরল। তুই সত্যিই একটা পা*গল। পা*গল ছাড়া কেউ এরকম ভালোবাসতে পারে না, ডিভোর্সি মেয়ের পেছনে ঘুরতে পারে না।’

– ‘এসব কথা বাদ দে। শুধু এখন আমাদের মিলটা যেন হয়।’

সে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ছেড়ে বললো, ‘আচ্ছা এখন যা নিষাদ, বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।’

আমি ওর দুইহাতে পা*গলের মতো অনেকগুলো চুমু খেয়ে নিলাম। তারপর মাথা তুলে তাকিয়ে বললাম, ‘যাই।’

ও ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো, ‘আমার কি তোকে আদর করতে মন চায় না। নিজে হাতে চুমু খেয়ে চলে যাচ্ছিস।’

নূপুরের থেকে উপেক্ষা পেয়ে পেয়ে অভ্যস্ত আমি, তাই ওর এসব কথা আমার কাছে কেমন অবিশ্বাস্য লাগে। আমি জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দেই। ও আমার হাতে সত্যি চুমু খায়। তারপর নিজের গালে চেপে ধরে। আমার পুরো গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। আমি ভেতর থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি, আমার নূপুর আমাকে এত ভালোবাসে। ওকে পাওয়ার জন্য আমি পৃ*থিবী তোলপাড় করে ফেলবো। কোনো শক্তি নেই আমাদের আলাদা করবে। ওকে আমার করে পেতেই হবে। ও পুনরায় জানালা দিয়ে হাত বের করে আমার চুলে বুলিয়ে দিয়ে বললো, ‘এখন চলে যা।’
আমার একটুও ফিরে যেতে ইচ্ছা করে না। তবু অনিচ্ছা সত্বেও বিদায় নিই। ও ছলছল চোখে জানালা বন্ধ না করে আমার প্রস্থানের পথে তাকিয়ে থাকে।
__চলবে___
লেখা: জবরুল ইসলাম