#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_৬
#Saji_Afroz
-আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে ফখরুলের হাত থেকে বেঁচে গেছি আমি! আমি কখনো রক্ষা পাব ভাবিনি। সবটাই তোর জন্য সম্ভব হয়েছে। তুই আমায় সাহস দিয়েছিস, রুজাইনের সাহায্য নিয়েছিস। নাহয় আমি বোকার মতো ওরে বিয়ে করে লাইফটা শেষ করতাম। তোর জন্য আমার নতুন জীবন শুরু হলো ইধা! কীভাবে আমি তোকে ধন্যবাদ জানাব বুঝছি না!
মাইশার কথা শুনে মৃদু হেসে ইধা বলল, আর তুই যে আমাকে বেঁচে থাকার সাহস দিয়েছিস! তুই না থাকলে এই পৃথিবীতে থাকার ইচ্ছেটাই চলে যেত আমার।
মাইশা নরমস্বরে বলল, ইধা! এসব বলিস না অন্তত!
-সত্যিটাই বলছি। ফেইসবুকে পরিচয়ের বান্ধবীর জন্য কেউ এতটা করে! আমার সব সত্যি লুকিয়ে নিজের বাসায় নিয়ে আসলি। তুই না থাকলে কী হত আমার!
মাইশা আবেগপ্রবণ হয়ে ইধাকে জড়িয়ে ধরে। মায়াভরা কণ্ঠে ও বলল, ফেইসবুকে মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছি। ভুতের সঙ্গে নয়। আর তোকে জীবনে পেয়ে আমি আরও একটা বোন পেয়েছি। বান্ধবী কম বোন বেশি তুই আমার। ওসব উলোটপালোট কথা আর বলবি না। আর কেউ না থাকলেও আজীবন ছায়া হয়ে থাকব তোর সাথে আমি।
মাইশাকেও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে ইধা বলল, ভালোবাসি অনেক তোকে।
কয়েকদিন যাবত রুজাইনের বাসার সামনে ঘুরঘুর করছে আলিম। এটা দারোয়ান খেয়াল করে। আজও আলিম বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালে বের হয় দারোয়ান। আলিমকে দেখে বলল, কী ব্যাপার? কিছু লাগবে?
আলিম ভ্রু কুচকে বলল, আপনি কী দোকানদার?
-দারোয়ান।
-তবে! আপনার কাছ থেকে কী লাগতে পারে আমার?
-আমার বাসা থেকে কিছু লাগবে?
-ওরে বাবা! এমন ভাব যেন এটা নিজের বাসা!
-যতদিন কাজ করব ততদিন নিজের বাসায়ই মনে করব। মালিকও এটা বলছেন। এইবার বলো, ঘুরঘুর করো এখানে? মতলব কী?
-ডাকাতি করার!
এই বলে হো হো শব্দে হেসে উঠে আলিম। দারোয়ান বিরক্ত হয়ে বলল, সেই তুমি করবে না আমি জানি। এলাকার স্থানীয় ছেলে বলে কথা! মনেহচ্ছে অন্যকিছু।
-এক কাজ করো। দারোয়ানের কাজের সঙ্গে এইবার গোয়েন্দাগিরি শুরু করো।
এই বলে হেসে আলিম চলে যায়। মূলত ও এখানে ইধাকে দেখার জন্য আসে। এতবার এসেছিল কিন্তু একবারও ইধার দেখা ও পেল না। মাইশারও কোনো খোঁজ নেই। ওরা কবে কোথায় যায়, কবে আসে সময়টা জানতে পারলে ভালো হত। কীভাবে জানা যায়!
আতিয়াতকে পড়ানোর জন্য সন্ধ্যার সময়টা বেছে নিয়েছে ইধা। বিকেলে রুজাইনের বন্ধুর ভাইকে পড়াবে ঠিক করে। আতিয়াত যেহেতু একই বাড়িতে রাতে পড়ালেও অসুবিধে নেই। অন্য আরেকটা টিউশনি পেলে ওকে রাতেই পড়াবে জানায় রুজাইনকে। রুজাইনের বাসার সবাই এটা মেনে নেয়।
আজ আতিয়াতকে প্রথম পড়াতে এসেছে ইধা। এর আগে রুজাইনের বন্ধুর ভাই ফাহিমকে পড়িয়ে এসেছে। ফাহিম ছাত্র ভালোই। ওকে পড়াতে তেমন কষ্ট হবে না বোঝা যাচ্ছে। আতিয়াত কেমন দেখার পালা। এর বাদেও অন্য চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ইধার। বাড়ির মালিকের বাসায় আসছে ও। সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। ভুলবশতও কোনো কাণ্ড ঘটানো যাবে না। আতিয়াতকেও অনেক আদর যত্ন করতে হবে। ধৈর্য নিয়ে পড়াতে হবে ছাত্রী ভালো না হলেও৷ নাহলে এই বাড়িতে থাকাটা ওর জন্য কঠিনতম হয়ে যাবে।
দরজায় কড়া নাড়তেই কাজের মহিলা খুলে দেয়। ইধা চিনতে না পেরে বলল, আমি আতিয়াতকে পড়াতে এসেছি। আপনি কে?
একগাল হেসে মহিলাটি বলল, কাজ করি এইখানে। আপনি আসেন ভেতরে।
মধ্যবয়স্ক মহিলাটিকে দেখে মনেই হয়নি কাজের মহিলা তিনি। বেশ পরিপাটি করে রেখেছে নিজেকে।
তার কথায় ভেতরে এসে বসে ইধা। কাজের মহিলা রেণুর কথায় ড্রয়িংরুমে আসে আশামনি ও শারমিন আক্তার। দু’জনেই ইধাকে দেখে মুগ্ধ হয়। ওর পাশে যাওয়ার আগে দু’জনে বলাবলি করে, মেয়েটা ভারী মিষ্টি! এত সুন্দর মেয়ে সচারাচর দেখা যায় না। এই মেয়েকে মা বাবা একা শহরে ছাড়লো কীভাবে!
ওরা কাছে আসতেই ইধা দাঁড়িয়ে পড়ে। ও মুখে হাসি এনে বলল, আসসালামু আলাইকুম।
দু’জনে সালামের জবাব দিয়ে বসতে বলে ইধাকে৷ ইধা বসলে তারাও বসে। শারমিন আক্তার বললেন, আমি রুজাইনের মা। বাড়ির মালকিন হিসেবে তোমার সঙ্গে একবার দেখা করব ভেবেছিলাম। ভালো হলো দেখা হয়েছে। কেমন আছ তুমি?
-জি আন্টি ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?
-ভালো। এই হলো আতিয়াতের আম্মু।
আশা বলল, প্রথমেই একটা কথা বলি৷ আতিয়াত পড়াশোনায় অমনোযোগী। এক্সট্রা কেয়ার ওকে তোমার করতে হবে।
যা ভয় পেয়েছে তাই হলো! অমনোযোগী মানেই বেশ কষ্ট পোহাতে হবে ইধাকে। বাড়ির মালিকের আত্নীয় বলে ধমকও দেওয়া যাবে না। এই ভেবে মনে মনে বিরক্ত হয় ও। তবে ওকে চিন্তামুক্ত করে আশা বললেন, ধমক দেওয়ার প্রয়োজন হলে দেবে। আদরের সঙ্গে শাসনেরও প্রয়োজন। নতুবা শিক্ষিকাকে ভয় পাবে না।
এইবার ইধা কিছুটা আনন্দিত হয়। অনেক বেশি বিরক্ত করলে বকা দেওয়া যাবে ভেবে খুশি হয় ও।
আশা আরও বলল, সব সাবজেক্ট পড়াবে তাই কখন কী পড়াবে আজই একটা রুটিন করে আমায় দেখাও।
-ঠিক আছে।
রুজাইন আতিয়াতকে সাথে নিয়ে আসে। ইধার পাশে ওকে বসিয়ে বলল, এই হলো তোমার স্টুডেন্ট।
ইধা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, হ্যালো আতিয়াত!
আতিয়াতও হেসে বলল, হ্যালো ম্যাম।
আশামনি বলল, তবে তোমরা পড়া শুরু করো। আমরা বরং ভেতরে যাই।
ওদের ডাইনিং রুমে নিয়ে আসা হয়। এখানের টেবিলে পড়ানো হবে। আর ডাইনিং রুম রুজাইনের রুমের পাশে লাগানো। ইধার কণ্ঠস্বর শোনা যাবে ভাবতেই আনন্দ পাচ্ছে ওর। এছাড়া সপ্তাহে পাঁচদিন কোনো কষ্ট ছাড়াই দেখা যাবে ইধাকে। ইচ্ছে হলে একটু কথাও বলে আসবে।
ইধার জন্য রুজাইনের এই ছটফট অবশ্যই ভালোবাসা। ভালোবাসা ছাড়া কিইবা হতে পারে!
রুজাইন রুমে এসে বসে। স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে পাশের রুম থেকে ইধার কণ্ঠস্বর। যেমন মিষ্টি দেখতে ও ঠিক তেমনি কণ্ঠটাও! এই মুহুর্তে ইধার কণ্ঠে একটা গান শুনতে পেলে মন্দ হত না। এই ভেবে আনমনে হাসে রুজাইন। ওকে কেন গান শোনাবে ইধা? রুজাইন যেমন ওকে নিয়ে ভাবছে ইধা তো ভাবছে না। ইধার কাছে ও কেবলই বাড়ির মালিকের ছেলে। আর কিছু নয়।
রুজাইনের ফোন বাজে। ওর এলাকার এক বন্ধু ফোন করেছে। রিসিভ করতেই ওকে বাইরে যেতে বলে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য। রুজাইনের প্রিয় খেলা এটি। কিন্তু ও বেরুলো না। এখন বের হওয়া যাবে না। সরাসরি না করে ফোন রাখে ও৷ এরপর আবার ফোন বাজলে বিরক্তি নিয়ে স্ক্রিনে তাকায়। ভাবে আবারও সেই বন্ধুর ফোন। কিন্তু সাদ্দামের ফোনকল দেখে রিসিভ করে ও। সাদ্দাম বলল, কেমন আছিস জুনিয়র?
-আমি ভালো। তুমি ভাইয়া?
-আছি আলহামদুলিল্লাহ। মাইশা, ইধা ওদের সঙ্গে আর কথা হয়েছে?
-এখনো না। ইধা আছে পাশে। জিজ্ঞাসা করব মাইশার ব্যাপারে ।
-পাশে?
-আতিয়াতকে ও পড়াবে।
-ওহহো!
-এভাবে সুর টেনে বললে কেন?
-তুই যেন বুঝছিস না! তোর লাইন ক্লিয়ার হচ্ছে। আমারটাও কর না!
-কী করব?
-মাইশার ফোন নাম্বার জোগাড় করে দে।
-লাগবে?
-বুঝতে পারছিস না!
-কিন্তু ফোন করে কী বলবে?
-হালচাল জিজ্ঞাসা করব। আর কিছু না।
-আচ্ছা দিচ্ছি।
ইধার কাছে এসে হালকা কেশে রুজাইন বলল, একটু ডিস্টার্ব করি?
ওর দিকে তাকিয়ে ইধা বলল, হ্যাঁ বলুন না?
-মাইশার ফোন নাম্বারটা দেওয়া যাবে? ওই যে আমার কাজিন পুলিশ, ওর হালচাল জিজ্ঞাসা করার জন্য চায়ছে।
-নিশ্চয় দেওয়া যাবে। উনি ভালো মনের মানুষ বলেই দায়িত্ব নিয়ে আবার হালচালও জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছেন। নিন নাম্বার!
আপনমনে হেসে রুজাইন বলল, নিজ স্বার্থেই চায়ছে। বুঝবে বুঝবে।
টিউশনি করিয়ে বাসার দিকে আসছে মাইশা। ওর ফোন বেজে উঠে। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে অপরিচিত নাম্বার দেখে ঘাবড়ায় ও। ফখরুল নয়তো! আবার কী চায় ও!
.
চলবে