#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_১০
#Saji_Afroz
ইধা ভয়ে ভয়ে বলল, ডাকাত দল এল নাকি?
রুজাইন ওকে অভয় দিয়ে বলল, দেখছি।
ইধাকে জড়িয়ে ধরেই রুজাইন চ্যাঁচিয়ে বলল, কে?
ওপাশ থেকে বলল, চার তলার ভাড়াটিয়া। নিচে কী যেন হয়েছে। জানাতে এলাম।
-হয়তো ডাকাত এসেছে। নিজের ঘরে দ্রুত গিয়ে দরজা লক করুন। আমি পুলিশকে জানাচ্ছি।
ডাকাত নয় শুনে রুজাইনের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় ইধা। শান্ত কণ্ঠে বলল, দু:খিত।
-ইটস ওকে।
-আমি আসি।
-মাথা খারাপ! অন্ধকারে কোথায় যাচ্ছ? ডাকাত দল যদি চলে আসে!
-চার তলার মানুষ এল না!
-চলেও গেছে। তুমি এখন যেতে পারবে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো। আমি পুলিশ ডাকি।
রুজাইন পুলিশকে ফোনকল দেয়। তারা দ্রুত আসছে জানায়।
হৈচৈ শোনা যায়৷ সম্ভবত গ্রিল ওরা ভেঙে ফেলেছে।
রুজাইন ঘরের আলো নিভিয়ে দেয়। ইধার হাত ধরে টেনে ওকে নিজের রুমে নিয়ে আসে। ইধা অনেকটা ঘাবড়ে আছে। ওর ফোন বাজে। মাইশার ফোন। মাইশা বলল, বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা বুঝতে পারছি না। আম্মু দরজা আঁটকে বসে আছে।
-হয়তো ডাকাত দল এসেছে। দোতলার ভাড়াটিয়া এমনি জানালো।
-কী বলছিস! তুই ঠিক আছিস?
-আমি রুজাইন ভাই এর বাসায় আছি। সেইফ আছি এখনো।
-আচ্ছা। সাবধানে থাক।
-তুইও।
রুজাইন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে বারান্দার দরজা বন্ধ করলো। জানালা আগেই বন্ধ করলো। এরপর নিজের রুমের দরজাও বন্ধ করলো ও। ইধা বলল, দরজা কেন বন্ধ করছেন?
রুজাইন হেসে ফেললো। ইধা বলল, আমি অন্যকিছু বুঝাইনি। এমনেই জানতে চাচ্ছিলাম।
-ডাকাত দল এলে দরজা ভাঙবে। এরপর কাউকে না পেয়ে লুটপাট শুরু করবে৷ এই রুমে এলেও দরজা ভাঙবে। দরজা ভাঙতে ভাঙতে পুলিশ চলে আসবে আশাকরি। না আসলে আমরা রুমের ওয়াশরুমে চলে যাব। ততক্ষণে নিশ্চয় চলে আসবে।
রুজাইনের ফোন আবারও বেজে উঠে। সাদ্দামের ফোন। ও কথা বলতে শুরু করে।
ফোন রাখতেই দরজা ভাঙার শব্দ কানে আসে ওদের।
ইধা আবারও রুজাইনের কাছে চলে আসে। ও বলল, এত তাড়াতাড়ি চলে এল? দোতলায় গেল না ওরা?
-হয়তো দু’টো টিম! অথবা সরাসরি বাড়ি ওয়ালার বাসায় চলে এসেছে।
-এখন কী হবে!
রুজাইন পুলিশকে ফোনকল দেয়। তারা কাছাকাছি এসেছে জানায়।
ইধাকে শান্তনা দিয়ে রুজাইন বলল, কাছেই আছে।
দরজা ভেঙে ওরা ভেতরে চলে আসে। এরপর কাউকে না পেয়ে ভাঙচুর শুরু করে। একজন বলতে শুরু করে, কোথায় কে লুকিয়ে আছ বের হয়ে আসো। আমাদের কোথায় কী লুকিয়ে রেখেছ জানাও। জলদি করো!
ওরা সাড়া না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়৷ দরজা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ইধা ফিসফিস করে বলল, আমার অনেক ভয় করছে। আমাদের কোনো ক্ষতি করবে ওরা?
-ওদের কাজ ডাকাতি করা। সেটাই করবে। এত ভেবো না। মোবাইল সাইলেন্ট করো।
ওরা নিজেদের মোবাইল সাইলেন্ট করে দেয়। কিন্তু ডাকাত দলকে বোকা বানানো এত সহজ নয়। ওরা এই রুমের দরজা ওপাশ থেকে বন্ধ দেখে ভাঙা শুরু করে। ইধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, চলে এল ওরা!
রুজাইন ওকে কাছে টেনে নেয়। নিজের বুকে ওর মাথাটা রেখে বলল, এর মধ্যেই যেন পুলিশ চলে আসে দোয়া করো!
রুমের দরজা ভেঙে কাউকে না পেয়ে বারান্দায় যায় ওরা। ওয়াশরুমে বুঝতে পেরে দরজা ভাঙা শুরু করে৷ এইবার কাঁদতে শুরু করে ইধা৷ রুজাইনও ঘাবড়ায়। জিনিসপত্র নিয়ে ওর কোনো চিন্তা নেই। চিন্তা ওর ইধাকে নিয়ে৷ ওরা যদি ইধার কোনো ক্ষতি করতে চায়!
ওয়াশরুমের দরজা ভেঙে যায়। ওরা টর্চের আলোতে দেখলো, ভেতরে দু’জন দাঁড়িয়ে আছে।
একজন বলল, বের হয়ে আসো। আমরা যা জিজ্ঞাসা করব বলবে। কোনো ক্ষতি করব না।
ওরা একে অপরের হাত ধরে বেরিয়ে আসে।
ডাকাত দল ওদের জিজ্ঞাসা করলো, গয়না ও টাকা কোথায় রাখা আছে।
রুজাইন এই বিষয়ে জানে না। হাত খরচ লাগলে মা দেয়। কিন্তু কোথায় টাকা রাখে ওর জানা নেই। ইধার তো জানার প্রশ্নই আসে না।
এটা ওদের জানালে ওরা বিশ্বাসই করে না। ইধা এই বাড়ির কেউ নয় এটাও বিশ্বাস করে না। বরং অট্টহাসি দিয়ে একজন বলল, যেমনভাবে দাঁড়িয়ে ছিলে বউ ভেবেছিলাম। বউ যখন না তখন তাহলে একটু দুষ্টুমি করাই যায়।
এই বলে রুজাইনের হাত ছাড়িয়ে ইধাকে টেনে ওদের কাছে নিয়ে আসে। রুজাইন সামনে এগুতে চাইলে ওকে আঁটকে রাখা হয়।
গয়না ও টাকা কোথায় বারবার জানতে চাওয়া হয়। রুজাইন বলল, আম্মু তার আলমারি থেকেই টাকা দেয়।
-ওসব নেওয়া শেষ। গয়না ও বড় এমাউন্টের টাকা কোথায়? প্রবাসীর বউ লাখ টাকা আর গয়না বাড়িতে রাখবে না এটা হয় না!
-আমি সত্যিই জানি না কিছু!
-তাহলে দেখ কী হয়!
এই বলে ইধার ওড়না নিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয় ছেলেটি। ইধা শব্দ করে েকঁদে উঠে। রুজাইনের মাথায় যেন রক্ত উঠে যায়। রাগে সেও চ্যাচিয়ে উঠে। ওকে ধরে রাখা ছেলেটিকে এক ধাক্কায় ফেলে দেয় ও। এরপর ইধার ওড়না যে ফেলেছে সোজা তার কাছে আসে। ওর গলা টিপে ধরে। অন্যরা এসে রুজাইনকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ও গলা ছাড়ে না। কোথাথেকে ওর এত শক্তি এসেছে জানে না। শুধু মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে, এই ছেলেটাকে এখুনি মেরে ফেলবে ও।
কিন্তু এতজনের সঙ্গে কী আর রুজাইন পারবে! ওরা রুজাইনকে ছাড়িয়ে নেয়। এরপর বন্দুক তাক করে ওর দিকে।
ওকে গুলি মারতে বলা হয়। ইধা বারবার অনুরোধ করতে থাকে এমনটা না করার।
রুজাইনের দিকে গুলি তাক করা হয়। আর তখনি পুলিশ এসে হাজির হয়। মুহুর্তের মধ্যেই ঘেরাও করা হয় চারপাশ। বিদ্যুৎও চলে আসে। সবাইকে আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
ওদের নিয়ে যাওয়া হয়। রুজাইন মেঝে থেকে ওড়না নিয়ে ইধার শরীরে প্যাঁচিয়ে দেয়। ইধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, আপনি ঠিক আছেন?
-তুমি ঠিক আছ?
-হতে দিলেন কই কিছু!
সিনিয়র অফিসার এসে বলল, আপনি তো রুজাইন?
-জি।
-ওরা বাড়িওয়ালার ঘর কোনটা জেনেই সরাসরি এখানেই আক্রমণ করতে আসে।
-অনেক বড়ো সাহস দেখিয়েছে। রাত ন’টায় ডাকাতি করতে এসেছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়!
-ওদের টার্গেট ছিল শুধুই আপনারা। বাইরের গেইট বন্ধ করে দিয়েছিল। ভেবেছে একটা ঘর ডাকাতি করতে কতক্ষণই বা লাগে!
-অনেক বড়ো সাহস দেখিয়েছে। ওদের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করুন।
-হবে। আপনাদের থেকে সবটা বিস্তারিত জানতে হবে।
ইধার দিকে তাকিয়ে রুজাইন বলল, ওকে যেতে দিন। আমি সব বলব।
-উনি কে?
-পঞ্চম তলায় থাকে। আমার বোনকে পড়ায়। পড়াতে এসেছিল আর ওরা বাসায় ছিল না। এর মধ্যে এসব ঘটে যায়।
-উনারও থাকা প্রয়োজন।
-প্লিজ! আমিই বলছি সব। ও ঘাবড়ে আছে।
-আচ্ছা।
-আপনি বসুন। আমি ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে খুলে মাইশা। ইধাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলল, ঠিক আছিস তুই? তোর আসার অপেক্ষা করছিলাম। পুলিশ এসেছে শুনেছি।
-ঠিক আছি।
রুজাইন বলল, ওকে পানি দাও। ঠিক নেই ও।
এই বলে রুজাইন চলে যায়। মাইশা বলল, কিছু হয়েছে?
ইধা ভেতরে এসে বলল, রুজাইন ভাই আজ আমার জন্য নিজের প্রাণ হারাতে পারতো। এটা ভাবতেই বুক কেপে উঠছে আমার। উনি আসলেই ভালো মানুষ। প্রথম সাক্ষাতে অথচ ভুল ভেবেছিলাম।
-এইজন্য কাউকে নিয়ে আগেই কোনো মন্তব্য করতে নেই।
-তুইও সাদ্দাম ভাইকে নিয়ে ভাব একবার।
এই বলে ইধা ভেতরে চলে যায়। সাদ্দাম একটু আগেও ফোনকল দিয়েছিল। মাইশা যদিও ওই ঘটনার পর আর তার ফোন রিসিভ করেনি। আজ ও রিসিভ করলো সাদ্দাম পেশায় পুলিশ তাই। আর ডাকাতের কথা শুনে সাদ্দাম রুজাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রুজাইন ওকে জানায়,
কাছের থানায় ও যোগাযোগ করেছে। তবুও সাদ্দামও রওনা দিয়েছে। যদিও মাইশা জানিয়েছে পুলিশ চলে এসেছে। সাদ্দামের ফোন আসে আবার। মাইশা রিসিভ করলে ও বলল, তোমার রুমের বারান্দায় আসো।
-কেন?
-একটু দেখব তোমায়।
-আমি ঠিক আছি।
-নিজের চোখে না দেখে শান্তি পাচ্ছি না।
মাইশা বারান্দায় আসে। নিচে সাদ্দামকে দেখতে পায়। সাদ্দাম হেসে হাত নাড়ায়। মাইশাও তাই করে। সাদ্দাম ওকে ফোনে বলল, ঠান্ডা মাথায় কী আরেকবার আমাকে নিয়ে ভাবা যায় না? এই তোমাকে আমি কীভাবে ভুলে যাব বলো! অসম্ভব মনে হচ্ছে আমার কাছে। আরেকটু ভেবে দেখো না প্লিজ! তোমার অতীত বলতে কিছু ছিল আমি মনেই রাখব না৷ প্লিজ ভাবো!
.
চলবে