প্রার্থনায় রবে তুমি পর্ব-১৫+১৬

0
342

#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_১৫
#Saji_Afroz

হুট করে এ কী করে ফেললো রুজাইন? এভাবে হঠাৎ ইধাকে মনের কথা জানিয়ে ভুল করলো না তো ও! ইধার নিশ্চয় বিষয়টি পছন্দ হয়নি। তাই এভাবে ছুটে চলে গেছে ও৷ রুজাইন নিজের আবেগকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না। ইধাকে মনের কথা জানানোর লোভ ও সামলাতে পারেনি। তবে কোনো আয়োজন ছাড়া এই কাজটা করা উচিত হয়নি ওর। সাদ্দাম কত সুন্দরভাবে মনের কথা উপস্থাপন করেছিল মাইশার কাছে। আর রুজাইন? সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে হুট করেই ভালোবাসে বলে দিলো!
আফসোস ছাড়া কিছু করার নেই এখন।

রুজাইন উপরে আসে। ইধাকে দেখে ও৷ সাদ্দামকে আপ্যায়নে ব্যস্ত ও। রুজাইনকে দেখে সাদ্দাম বলল, কোথায় ছিলি? কাছে আয়।

মাইশা বলল, আপনাকে ছাড়া খাওয়া শুরু করছে না।

সাদ্দামের পাশের চেয়ারটা রুজাইনের জন্য খালি রাখা ছিল। ও এখানেই এসে বসলো। ওকে দেখে ইধা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মাইশার পাশে এসে বসলো ইধা।

সবার প্লেট ভর্তি খাবার। রুজাইনের প্লেট খালি দেখে সাদ্দামই ওকে খাবার পরিবেশন করতে শুরু করে। তা দেখে মাইশা বলল, ইধা আছে। ও করবে।

এটা শুনেই ইধার দিকে প্লেট বাড়িয়ে দেয় রুজাইন।
ইধা ভ্রু কুচকে বলল, আপনি নিজেই নিন না! নতুন বর গো আর নন!

এই বলে ইধা খাওয়া শুরু করে। ওর আচরণে মাইশা অবাক হয়। ও পরিস্থিতি সামলাতে বলল, দুলাভাই এর কাজিনের সঙ্গে মজা না করে কার সঙ্গে করবে?

রুজাইন প্লেট নিজের দিকে টেনে এনে বলল, বুঝলাম।

ও নিজেই প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে।

খাওয়া শেষে রুজাইনকে ছাদের একপাশে টেনে এনে সাদ্দাম বলল, ইধা তোর দিকে ওভাবে তাকাচ্ছিল কেন?
-ঘটনা একটা ঘটে গেছে।
-কী?
-প্রপোজ করে ফেলেছি ইধাকে।
-কীভাবে?
-হুট করেই। কোনো পরিকল্পনা ছাড়া। ভুল করলাম, তাই না?
-উহু! যখন মনে করেছিস জানানোর দরকার, জানিয়ে দিয়েছিস। সিম্পল!
-কিন্তু ইধাকে দেখো! পছন্দ করেনি নিশ্চয় ব্যাপারটা। ছুটে চলে এসেছিল তখন। আর এখন তো ফিরেও তাকাচ্ছে না।
-হতাশ হলে চলবে না। ইমপ্রেস করে যা।
-তোমারই ভাগ্য ভালো। একেবারে বিয়েই করে ফেললে।
-কারণ আমার বিয়ের বয়স হয়েছে। তোর সেটাও হয়নি। আপাতত প্রেমই করতে পারবি।

এই বলে হো হো শব্দে হেসে উঠে সাদ্দাম। রুজাইন বলল, নাও মজা!

অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হলো। এখন বিদায় এর মুহুর্ত। যদিও মাইশাকে সাদ্দামের বাড়ি নেওয়া হবে না। সাদ্দাম একটি হোটেল রুম বুকিং করেছে। আজ রাতের জন্য ওখানেই যাবে।

মাইশা বেশ হাসিখুশি ছিল। কিন্তু ইধা যখন ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে ওর চোখেও চলে আসে পানি। মরিয়ম জান্নাতও ওদের দেখে কেঁদে উঠলেন। মুহুর্তের মধ্যেই ওদের কান্নার শব্দে চারপাশ ভারী হয়ে উঠলো।

সাদ্দাম বলল, আরেহ কী হলো? মাইশা কেবল এক রাতের জন্যই যাচ্ছে।

মাইশাকে ছেড়ে ইধা বলল, জানি। তবুও মনে হচ্ছে অনেক পর হয়ে যাবে আজ থেকে ও।
-সে তো হবেই। আজ থেকে ওর প্রিয় এর লিস্টের নাম্বার ওয়ানে থাকব আমি।

মাইশা ধমকের সুরে বলল, মোটেও না। আমার কাছে সবসময় ইধা আপনার আগেই থাকবে।
-আচ্ছা তাই!
-হু।

ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ইধার বুকটা ধুক করে উঠলো। মাইশা বিহীন রুমটা একদমই খালি খালি লাগছে। রুমের চেয়েও খালি মনেহচ্ছে ওর অন্তরটা। মাইশা মেয়েটা ওর হৃদয় এর কতটা জায়গা জুড়ে আছে সেটা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। অল্প সময়ে কাউকে এত ভালোবাসা যায়! সত্যিই বন্ধুত্ব কেবল মধুর সম্পর্ক নয়, প্রাণের সম্পর্কও বটে।
বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয় ও। আজকের দিনে অনেক কিছুই ঘটে গেছে ওর জীবনে। ওর প্রিয় বান্ধবীর বিয়ে হলো, মা এর ফোনকল আসলো আর রুজাইন ওকে ভালোবাসার কথা জানালো। এটা মনে পড়তেই বসে পড়লো ইধা। রুজাইন ওকে ভালোবাসার কথা জানালো, কিন্তু ও কেনো না করলো না রুজাইনকে? সেদিন আলিমকে না করেছিল ও। জানিয়েছিল নিজের সত্যিটা। কিন্তু আজ কেন রুজাইনের মুখের উপরে কিচ্ছুটি ও বলতে পারলো না! তবে কী ওর মনেও রুজাইনের জন্য ভালো লাগা রয়েছে?

-তুমি করেই বলতে হবে আমায়। এই যুগে এসেও কেউ স্বামীকে আপনি ডাকে?

সাদ্দামের কথা শুনে মাইশা বলল, স্বামী একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাকে আপনি করে বলাই যায়।
-আমি মনেকরি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা অতিব জরুরি। আর এটির শুরু তুমি দিয়েই করতে হয়৷ তুমি করে বলবে তো?

মাইশা হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়ে।
বাসর ঘরে বসে রয়েছে ওর৷ লাল গোলাপ দিয়ে পুরো রুম আর খাটটি সাজানো হয়েছে। মাইশার প্রিয় ফুল লাল গোলাপ। এটি জেনেই সাদ্দাম গোলাপ ফুলে সাজিয়েছে বাসর।
সাদ্দাম একটি গোলাপ ফুল আর একটি রিং নিয়ে মাইশাকে দেখিয়ে বলল, তোমাকে যদি এখান থেকে একটা বেছে নিতে বলি কোনটা নেবে?

মাইশা বলল, দু’টোই আমার জানি৷ তাই ফুল বলে মহৎ সাজতে চাই না।

ও হাসে। সাদ্দাম ওর দিকে ফুল এগিয়ে দেয়। এরপর ওর একটি আঙুলে রিংটি পরিয়ে দিয়ে বলল, যেমন আছ তেমনি থেকো সবসময়। এই মুখের হাসিটা আমার ভীষণ প্রিয়।

মাইশা গোলাপ ফুলে নাক ডুবিয়ে বলল, আর আমার ফুলের ঘ্রাণ বেশ প্রিয়।
-বেশ সুভাষ তাই না?
-হু।
-আমিও সুভাষিত হতে চাই। তবে তোমার ঘ্রাণে।

এই বলে মাইশার কাছে আসে সাদ্দাম। ও কপালে আলতোভাবে ঠোঁটটা বসিয়ে দেয়। মাইশা কেঁপে উঠে।
সাদ্দাম ওর ঘোমটাটা সরায়। মাইশাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আজ রাতটা স্মরণীয় করে রাখতে চাই৷ রাখতে দেবে কী?

মাইশা কিছু বলতে পারে না। ভেবেছিল আজ সাদ্দামকে কাছে আসতেই দেবে না। কিন্তু ওকে দূরে সরাতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। আরও কাছে পেতে ইচ্ছে করছে ওকে। না চাইতেও মাইশাও জড়িয়ে ধরে সাদ্দামকে। ওর সম্মতি আছে বুঝতে পেরে সাদ্দাম মাইশার সঙ্গে হারিয়ে যেতে থাকে ভালোবাসার সমুদ্রে।

আজ আতিয়াততে সকালেই পড়াতে এসেছে ইধা। বিকালে মাইশা আসবে৷ তাই আজ বিকালের আগেই সব টিউশনি শেষ করবে বলে মনস্থির করলো ইধা।
আতিয়াতকে পড়াতে এলে দরজা খুলে রুজাইন। ওকে দেখে কী করবে বুঝে উঠতে পারে না ইধা।
রুজাইন ওকে ভেতরে আসতে বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। ইধা ভেতরে এসে আতিয়াতকে পড়ানো শুরু করে।
রুজাইনের রুমে এসে শারমিন আক্তার বললেন, ক্লাসে যাবি বলেছিস না?
-আজ আর যাব না। ক্লান্ত লাগছে।
-মুহুর্তের মধ্যেই ক্লান্তি এসে ভর করলো কাঁধে?
-কাল কী কম ধকল গেল?
-কী জানি বাপু! তোর মতিগতি কিছুই বুঝি না। এই বললি কলেজ যাবি, এই আবার যাবি না!

বকবক করতে করতে নিজের রুমে ফিরে যান শারমিন আক্তার। ইধা সবই শুনেছে। আজ ও বুঝলো, যখনি আতিয়াতকে পড়াতে আসে রুজাইনকে কেন দেখে ও। মূলত ইধার জন্যই রুজাইন বসে থাকে। এসব দেখেও ইধা কিছু বুঝলো না এতদিন!

মাইশার আসার পর দুই বান্ধবী জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর ওদের দেখা হয়েছে।
মাইশা নিজেকে সামলাতে না পেরে সাদ্দামের ডাকে সাড়া দিয়েছে শুনে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা ইধার। ও ব্যঙ্গসুরে বলল, বড়ো মুখে বলেছিস না? কাছেই আসতে দিবি না সাদ্দাম ভাইকে!
-কী বলব তোকে! রোমান্সের সুখ যখন বিয়ে করবি তখনি বুঝবি। দূরে সরানোর কথা মাথায়ও আসবে না। কেবল ইচ্ছে হবে কাছে যাই, কাছে যাই! এখন মনে হচ্ছে সাদ্দামের বাড়িতেই চলে যেতে হবে তাড়াতাড়ি।

হা হা শব্দে হেসে উঠে ইধা। মাইশা বলল, একটা কথা বলাই হয়নি তোকে। রুজাইন ভাই এর বিষয়ে।
-কিছু জানিস?
-হু। বেচারা মন দিয়ে বসেছে তোকে। আজ আমায় ফোন করেছিল। তোকে রাজি করানোর দায়িত্ব দিয়েছে। সাদ্দামও সব জানে।
-কিন্তু এটা সম্ভব না। তুইও জানিস।
-জানি। কী করা যায়?
-সত্যিটা জানাতে হবে।
-কিন্তু জানিয়ে যদি এই বাসায় থাকাটা অসুবিধা হয় তোর জন্যে?
-হলে হবে। তবে আমি তাকে সত্যিটা জানাব।

মাইশার ফোন বেজে উঠে। রুজাইনের ফোনকল। এটা দেখে মাইশা বলল, আমারও মনেহয় সত্যিটা জানানোই শ্রেয়। এবং খুব তাড়াতাড়ি!
.
চলবে

#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_১৬
#Saji_Afroz

মাইশা ফোন রিসিভ করতেই রুজাইন বলল, বাসায় এসেছ? ওহ স্যরি! আমার ভাবী হয়ে গেলেন এটা মনেই থাকে না। বাসায় এসেছেন?

জবাবে মাইশা বলল, আবারও আপনি আমায় লজ্জা দিচ্ছেন। ভাবীর আগেও আমি আপনার ছোটো বোন হই।
-কিন্তু এখন সম্পর্কে আপনিই আমার বড়ো।
-এসব বলে আমাকে ছোটো করবেন না। ভাবী ডাকতে পারেন তবে আমাকে তুমি করেই বলেন।
-আচ্ছা ঠিক আছে। ইধা আছে বাসায়?
-আছে। কথা বলেছি। ইধা আপনাকে কিছু বলতে চায়।

একথা শুনে খুশি হয়ে যায় রুজাইন৷ ও ভাবলো, ইধাও বুঝি ওকে ভালোবাসে জানাবে? নতুবা কী নিজে কথা বলতে চাইতো! ও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, হ্যাঁ দাও ওকে ফোন!
-নিন।

কাঁপা হাতে ফোন নেয় ইধা। গলাও যেন কাঁপছে ওর। ওকে এই অবস্থায় দেখে ভ্রু কুচকায় মাইশা। তাকিয়ে থাকে ইধার দিকে এক নজরে। ইধা শান্ত কণ্ঠে বলল, হ্যালো?

সঙ্গে সঙ্গেই রুজাইন বলল, হাই! কেমন আছ?
-ভালো। আপনি?
-মোটেও না। আসলে কালকের ওই ঘটনার জন্য আমি লজ্জিত। প্রপোজের জন্য নয় আবার!
-তবে?
-ঘটা করে কিছু করতে পারিনি তাই। এভাবে হুটহাট মনের কথা জানানো ঠিক হয়নি। স্পেশাল কিছু করার প্রয়োজন ছিল। তুমি আরেকবার সুযোগ দাও, আমি স্পেশাল কিছু করেই আবারও প্রপোজ করব তোমাকে।
-তার আর প্রয়োজন নেই৷ আমার কিছু জানানোর ছিল আপনাকে।
-বলো?
-আমার সম্পর্কে কিছু না জেনেই এতটা আগানো উচিত হয়নি আপনার।
-আচ্ছা তাই! জানার মতো এমন কী আছে! তুমি মানুষ। আমার মনের মানুষ! এর চেয়ে বেশি কিছু জানার প্রয়োজন নেই।
-আমার সাথে আপনার যায় না। কোনো ভাবেই না।
-কেন? আমি কী তোমার যোগ্য না? আমারই সমস্যা?
-আপনি অনেক ভালো একজন ছেলে। আমিই আপনার যোগ্য না।
-এমনটা আমি ভাবি না।
-আমার বাবা অন্য এক নারীর জন্য আমাদের ছেড়ে ছিল। নানা বাড়িতে বড়ো হয়েছি। ওখানে আমাদের কোনো কদর নেই। আমাকে জীবনে জড়িয়ে কিছুই আপনি পাবেন না।
-এই শোনো! আমার ঘর জামাই হওয়ার ইচ্ছে ছিল না। তোমার নানা বাড়ির কদর নিয়ে আমার চিন্তা নেই৷ তুমি কদর করলেই হবে।
-এসব আপনার পরিবার কখনোই মানবে না।
-মানতে বাধ্য। আমি ওদের একমাত্র ছেলে। আমার খুশিতেই ওদের খুশি। না মানলে আমি লড়াই করব। তাও মানাব।
-প্রেমের আগে এসব সবাই বলে৷ বিয়ের সময় এলে পিছু হটে।
-তবে বিয়ের কথা বলব বাসায়?
-এই না!

রুজাইন হাসে। ইধা বলল, সাদ্দাম ভাই হতে যাবেন না। উনার বিয়ের বয়স হয়েছিল।
-হু। তবে তুমি বললে সাদ্দাম ভাই কেন! সম্রাট শাহজাহানও হতে পারি!

ইধা মুচকি হাসে। এইবার ভ্রু এর সঙ্গে মাইশার কপালও কুচকে যায়। ইধার দিক থেকে এখনো নজর ওর সরে না।
মাইশাকে খেয়াল করে ইধা নড়েচড়ে বসে বলল, আমি আপনার প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারব না। ক্ষমা করবেন।

এই বলে ফোনের লাইন কাটে ইধা৷
মাইশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও বলল, কী দেখছিস ওভাবে?
-আসল কথাটাই বললি না। কেন?
-বলতে পারলাম না।
-কারণ জানতে চাচ্ছি।
-নিজেও জানি না।
-মন দিয়ে বসছিস রুজাইন ভাইকে?

অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ইধা বলল, কীসব বলছিস! এটা সম্ভব না তুইও জানিস।
-জানি। কিন্তু মন যখন কিছুতে সাই দিতে চায় তখন মনকে মানানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এখুনি নিজেকে সামলে নে ইধা।

হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়ে ইধা।

সাদ্দামের ফোন আসে। মাইশা বারান্দায় এসে ফোন রিসিভ করে৷ ওপাশ থেকে সাদ্দাম বলল, কী করে আমার মেম সাহেবা?
-বসে ছিলাম।
-আমায় মনে পড়ছে না?
-অনেক বেশি।
-এইজন্যই বলছি তাড়াতাড়ি ঘরে নিয়ে আসি।
-সেটা হচ্ছে না মশাই।
-কাল রাতের মতো চাই আমি প্রতিটা রাত।
-সবুর করো।
-আচ্ছা তবে আবারও হোটেল বুকিং করি?
-ইশ! বাসায় কী বলব?
-অসুবিধে কী! হাজবেন্ড আমি তোমার।
-তবুও! খারাপ দেখায়!

সাদ্দামের সাড়া না পেয়ে মাইশা বলল, কী হলো?
-রুজাইনের ফোনকল এসেছে। পরে রিসিভ করব।
-করে দেখো। জরুরি হতে পারে।
-ইধার কথা বলবে। ওর চক্করে পড়ে বউ এর সঙ্গে প্রেমটাও শান্তিতে করতে পারছি না।
-অশান্তির কী হলো এতে?
-এই যে বারবার ফোনকল দিচ্ছে। ওর বিষয়ে মাথা ঘামাব নাকি বউকে কীভাবে আরও কাছে পাওয়া যায় ভাববো!

মাইশা হাসে। সাদ্দাম বলল, ইধাকে রাজি হতে বলো। দুই বান্ধবী আত্মীয়ও হয়ে যাবে। এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে?
-এটা সম্ভব নয়।
-এক কথা শুনে আসছি সম্ভব নয়! কিন্তু কেন নয় এটা বলছ না!
-ইধা আগে বলুক। আমি চাই না ওর ব্যক্তিগত বিষয় আমি তুলে ধরি। ও বললেই আমি ব্যাখ্যা করব।
-আজব! কী এমন বিষয় বুঝি না। আগে বিয়ে টিয়ে হয়নি তো?
-এখন মনে হচ্ছে ওমন হলেও মন্দ হত না।
-তার মানে আরও গুরুতর কিছু! এই? ও কী কখনো মা হতে পারবে না?
-এটা গুরুতর বিষয়? আমি যদি মা না হতে পারতাম তবে আমাকে তুমি বিয়ে করতে না?
-উহু! কথা অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছ তুমি।

মাইশার ফোনেও রুজাইনের ফোনকল আসছে। ও তা দেখে বলল, আমি একটু পরে কথা বলি?
-রাগ করলে?
-নাহ।
-সত্যি?
-আরে সত্যি!
-তবে ভালোবাসো বলো!
-ভালোবাসি। হয়েছে?
-আদর মাখা সুরে বলো!
-কীসব বাচ্চামো করো না তুমি!
-প্রেম করি, প্রেম!

মাইশা মৃদু হেসে সুর টেনে বলল, ভালোবাসি অনেক বেশিই…..

রুজাইনের ফোন রিসিভ করে মাইশা। রুজাইন বলল, ইধা এসব কী লজিক দেখাচ্ছে বলো তো?

মাইশা বলল, ও ঠিকই বলেছে ভাইয়া! এমন ছন্নছাড়া পরিবারের মেয়েকে আপনার পরিবার মেনে নেবে না।
-এটা আমি ম্যানেজ করে নেব। ওকে রাজি করাও প্লিজ!
-ভালোবাসা এভাবে জোর করে হয় না ভাইয়া। ইধাকে জোরাজোরি করে কী ওর মন পাওয়া যাবে?

এইবার নিশ্চুপ হয়ে যায় রুজাইন। মাইশা বলল, নিশ্চয় ভালো কিছু অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

ফোন রাখলেও মাইশা জানে, এর শেষ এখানেই নয়! এসবের জন্য ওর বৈবাহিক জীবনে কোনো ঝামেলা হবে ভেবেও মনের মাঝে ভয় কাজ করছে ওর। জানে না সামনে কী হতে চলেছে!

আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী হলো মাইশার। সারা রাত সাদ্দামের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল। ফজরের নামাজ আদায় করে ঘুমিয়েছিল।
ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে আসতেই অবাক হয় ও। ইধা দুপুরের রান্নাবান্নাও করে ফেলেছে। এখন রাইস কুকারে ভাত বসাচ্ছে। মাইশা বুঝতে পারলো, ও নিজেকে ব্যস্ত রাখতে কাজ করছে। নিশ্চয় ভোর থেকেই কাজ শুরু করেছে। নাহলে এতকিছু করা সম্ভব হত না। কী চলছে ইধার মনে!
মাইশাকে দেখে ইধা বলল, ফ্রেশ হয়ে আয়। নাস্তা নিয়ে আসি।

ও ফ্রেশ হয়ে আসে। আলু ভাজি, পরোটা আর ডিম ভাজি নিয়ে হাজির হয় ইধা। ও এসব দেখে বলল, তুই করেছিস তাই না এসব?
-আন্টি চেয়েছিলেন করতে। কিন্তু আজ আমার ইচ্ছে হয়েছে। সদ্য বিবাহিতা বান্ধবীর জন্য মন ভরে রান্নাবান্না করলাম আজ।
-অহেতুক এত কষ্ট করছিস।
-কী যে বলিস না! খেয়ে বল কেমন হয়েছে।

মাইশা মুখে খাবার নিয়ে বলল, মারাত্মক!
-খারাপ?
-উহু! মজা।

মাইশার ফোন বাজতে থাকে। রুজাইনের ফোনকল। ইধা ভেবেছে সাদ্দামের ফোন এসেছে। তাই ও প্রস্থান নেয়। মাইশা ফোন রিসিভ করলে রুজাইন বলল, আমাকে সাহায্য তোমার করতেই হবে। ভাই মানো তো আমায়?

মাইশা বিচলিত হয়ে বলল, অবশ্যই মানি! কেমন সাহায্য?
-আমি ইধার সঙ্গে দেখা করতে চাই। সেটা এখুনি।
-মানে!
-আমি জানি তোমার বাসায় কেউ নেই এখন।
-কিন্তু!
-আমি তোমার দেবর। ভাবীর সঙ্গে দেখা করতেই পারি।

হতাশ কণ্ঠে মাইশা বলল, রুজাইন ভাইয়া!
-সাদ্দাম ভাই হতাশ না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে রাজি করিয়েছে না তোমায়, বলো?
-হু।
-আমাকেও একটা চেষ্টা করতে দাও। প্লিজ মাইশা!

একটু থেমে মাইশা বলল, ওকে ফাইন। আসুন।

মিনিট পাঁচেক পরেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শোনা যায়। ইধা ওর রুমের বিছানা গোছাচ্ছে। তাই মাইশা দরজা খোলে। মাইশাকে দেখে রুজাইন ধীরকণ্ঠে ইধা কোথায় জানতে চায়। নিজের রুমে জেনে সেদিকেই পা বাড়ায়। মাইশা তাড়াহুড়ো করে আঁটকে দেয় দরজা।
ড্রয়িংরুমে পায়চারি করা শুরু করে ও৷ এদিকে রুজাইন ইধার রুমে আসতে চমকে উঠে ইধা। ও বলল, আপনি এখানে?

রুজাইন রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। ইধা চ্যাঁচিয়ে বলল, দরজা কেন বন্ধ করছেন?
-উত্তেজিত হবে না প্লিজ। আমি জাস্ট কথা বলতে এসেছি।

ইধা নিজেকে শক্ত করে বলল, কী কথা?
-তুমি আমাকে কেন মেনে নিতে পারছ না?
-সেটা আমি জানিয়েছি। এত বড়ো স্বপ্ন আমি দেখতে চাই না। যে স্বপ্ন কখনো পূরণই হবে না।
-পূরণ করার দায়িত্ব আমার। এটাই যদি কারণ হয় এই কারণ আমি মানি না।
-মানা না মানা আপনার বিষয়৷ আমি আমার মতোই কাউকে চাই লাইফে। অহেতুক অশান্তি নিজের জীবনে চাই না।
-ওকে ফাইন! আমি তোমার জন্য সব ছেড়ে দেব। বাবার পরিচয়ে পরিচিত হব না। নিজের পরিচয় গড়ে তুলব। সেই পরিচয়ে তুমিও পরিচিত হবে। চলবে?
-না। প্লিজ আপনি যান এখান থেকে।
-যাব না। কেন জানো?
-কেন?
-কারণ তুমি কেবল অহেতুক কিছু কারণই বলছ। একবারও বলোনি আমায় ভালো তুমি বাসো না।

ইধার দু-চোখ ছলছলে হয়ে উঠে। ও কী বলবে ভেবে পায় না। রুজাইন বলল, তাই না বলো?

ইধা নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না, কী বলবে ও রুজাইনকে! কবে, কখন, কীভাবে ওর মনেও রুজাইনের জন্য ভালো লাগা তৈরী হয়েছে জানে না ও। কেবল জানে, রুজাইনকে প্রত্যাখ্যান করতে ওর কষ্ট হচ্ছে অনেক বেশি!

রুজাইন ইধার কাছে এসে হাতটা ধরে বলল, ভালোবাসো তো আমায়? একবার মুখ ফুটে বলো! সব সম্ভব করে দেব আমি।

ইধা নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, কিছুতেই পারবেন না।

এইবার উত্তেজিত হয়ে রুজাইন বলল, কেন! কেন তুমি এমনটা ভাবছ!

ইধা প্রায় চ্যাঁচিয়ে বলল, কারণ আমাদের দু’জনের ধর্ম আলাদা! আমি হিন্দু! আমার নাম ইধা রায়!

কথাটি বলেই লম্বা একটা দম ছাড়ে ইধা৷ রুজাইন যেন নিজের কানে কথাটি শুনেও বিশ্বাস করতে পারছে না। চারপাশে ঝাপসা মনে হচ্ছে ওর। ইধা ওর অবস্থা বুঝতে পারে৷ দরজাটা খুলে দেয় ও৷ রুজাইনও আর অপেক্ষা করলো না। হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় ও। মাইশার সঙ্গেও কোনো কথা বলে না। ইধার কাছে ছুটে আসে মাইশা। ও বলল, কী হলো?

জবাবে ইধা বলল, সত্যিটা জানিয়েছি ওকে।

মাইশা ইধার কাঁধে হাত রেখে বলল, ভালো করেছিস। যেটা হওয়ার নয় সেটা ঝুলিয়ে রাখারও কোনো মানে নেই!
.
চলবে