#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_২৪
#Saji_Afroz
-ভাবী! তুমি এইটা কী করছ?
আশামনির কথা শুনে শারমিন আক্তার বললেন, কী করছি?
-ওই মেয়ে আমাদের রুজাইনের যোগ্য? তুমিই বলো?
-তুমি ওত ভেবো না।
-আমি ভাববো না?
-দেখো না কী হয়৷ ধর্ম ত্যাগ করা কোনো সহজ বিষয় নয়। ইধা যদি আসলেই এটা করে, তবে বুঝতে হবে ও সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে রুজাইনকে।
আশামনি তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন। বুঝতে পারছেন না, কী চলছে শারমিন আক্তারের মনে!
ইধাকে ওর ছোটো কাকা ফোনকল করেছিল। কান্নাকাটির জন্যে কথা ইধা বলতে পারছিল না। তিনি এই কান্নার কারণ জানতে চাইলে ইধা সংকোচ ফেলে তাকে সব খুলে বলে। তিনিও বিষয়টা সহজভাবে নেন৷ তিনি বললেন, এই ক’দিনেই ছেলেটা তোকে এতটা ভালোবেসে ফেললো?
-আমার জন্য সব ছাড়তে রাজি ও।
-আর তুই?
-আমি না কী করব বুঝতে পারছি না। ওর মা এর ডিমান্ড আমি মুসলিম হই। কিন্তু ও আমাকে জোর করছে না। প্রয়োজনে পরিবার ছাড়বে বলেছে।
তিনি একটু থেমে বললেন, আমার মনেহয় তোর সেটাই করা উচিত।
ইধা অবাক হয়ে বলল, কাকা!
-সারাজীবন দু:খ পেয়েছিস। এই ছেলে তোকে সুখী রাখলে ওর জন্য সেক্রিফাইস তো করতেই হবে!
-কিন্তু মা আর পরিবার?
-দিদিকে আমি সামলে নেব। আর কোন পরিবারের কথা বলছিস? যারা আজীবন তোকে দু:খ দিয়েছে তারা! এই যে বাড়ি ছাড়া হয়ে আছিস তুই, কোনো খোঁজ নেওয়ার চেষ্টাও করেছে?
ইধা একটু থেমে বলল, ওর মায়ায় এতটা জড়িয়ে গেলাম আমি! আসলে কখনো এত ভালোবাসা পাইনি তো, তাই হাত ছাড়াও করতে পারছি না।
-তাই বলছি সুখে থাক ওকে নিয়েই।
-বলছ?
-বলছি। এমন কত কেউই আছে! ধর্ম আর ভালোবাসার মধ্যে ভালোবাসাকে বেছে নিয়েছে। রুজাইন তো অনেক করেছে তোর জন্যে, তুই নাহয় এটা কর!
কাকার সঙ্গে কথা শেষ করে রুজাইনকে ফোনকল দেয় ইধা।
ইধার ফোনকল পেয়ে রুজাইন রিসিভ করে বলল, ইধা? ঠিক আছ তুমি?
-হু। তুমি?
-আছি। মনোবল শক্ত রাখো। খুব তাড়াতাড়ি বাসা ঠিক করে নেব আমি। তোমার মা কে এনে বিয়েতে রাজিও করাব।
-আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
-কী? এই! তুমি আমায় ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে না তো?
ইধা হেসে বলল, নাহ!
-হাসছ?
-হাসা বারণ?
-তা নয়! দু:খের মুহুর্ত চলছে। তাই আরকি।
-সুখের মুহুর্তে পরিণত হবে এখন।
-বলো?
-আমি মুসলিম হতে চাই।
একথা নিজের কানে শুনেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে রুজাইনের। ও বলল, কী বলছ?
-তোমার জন্য ধর্ম ত্যাগ করতে প্রস্তুত আমি।
-প্রেসারে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছ?
-উহু! মন থেকে।
-তোমার মা?
-কাকা ম্যানেজ করবে। তিনি সব জানেন।
রুজাইনের খুশি আর দেখে কে! সে প্রায় লাফ দিয়ে উঠে বলল, তবে আমি বিয়েটাই সেরে ফেলব।
ইধাও হেসে বলল, ইশ! পিচ্চি ছেলের বিয়ের কী শখ!
-বিয়েটা হোক! পিচ্চি কি-না দেখিয়ে দেব।
-মানে?
-পরে বোঝাব। আম্মুকে এইটা জানিয়ে আসি।
রুজাইনের মা এর কাছে এসে এটা বলতেই তার মুখে হাসি ফুটলো। তিনি বললেন, সত্যি ইধা মুসলিম হবে?
-হ্যাঁ আম্মু!
-আর ওর মা ও রাজি?
-এখনো জানায়নি। মা রাজি হয়ে যাবে। এটা শিওর থাকো। এইবার তো ইধাকে আর বাসা ছাড়তে হবে না?
-না।
-ও যেহেতু মুসলিম হতেই চাচ্ছে, কার্যক্রম শুরু করে দেই? না মানে মুসলিম হলে অন্তত কাবিনটা সেরে রাখি। বিয়ে সাদির অনুষ্ঠান নাহয় পরেই হবে। তখন আব্বুকে জানিও৷ এখুনি কিছু না৷ আমিও নিজের পায়ে দাঁড়াই।
আশামনি বললেন, বাবাহ! এতদূর ভেবে ফেলেছ?
-ও ধর্ম ত্যাগ করছে আমার জন্য। এটা কী বড়ো কিছু নয়? আমারও ওকে সম্পর্কটা নিয়ে নিশ্চিত করা উচিত।
আশামনিকে কিছু বলতে না দিয়ে শারমিন আক্তার বললেন, একদম! তুই ইধাকে ডাক।
-কেন?
-ডাক না!
ইধাকে ফোনকল দিয়ে ডেকে আনা হয়। ওর সঙ্গে আসে মাইশা। দু’জনে নিশ্চুপভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
শারমিন আক্তার ইধার সামনে এসে বললেন, হাতটা দাও দেখি!
ভয়ে ভয়ে ইধা তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। তিনি ইধার আঙুলে একটি সোনার রিং পরিয়ে বললেন, আজ থেকে রুজাইনের হবু বউ তুমি।
একথা শুনতেই ইধার চোখে পানি চলে আসে। মাইশা ওকে বলল, কী দেখছিস ওভাবে? সালাম জানা হবু শাশুড়ী মা কে।
ইধা সালাম করতে যাবে তখনি তিনি বাঁধা দিয়ে বললেন, তার প্রয়োজন নেই। আজ থেকে তোমার স্থান আমার বুকে। কারণ রুজাইনের স্থানও সেটা। তোমার এই সিদ্ধান্তে আমার রাগ সব চলে গেছে। তুমিই রুজাইনের যোগ্য।
এই বলে ইধাকে কাছে টেনে নিলেন তিনি।
রুজাইনের দিকে চোখ যায় ইধার। ওর চোখও ছলছলে। সত্যিই ওর মতো একটা মানুষ জীবনে পেয়ে ইধা ধন্য!
রুমে এসেই ইধা উত্তেজিত হয়ে বলল,
মাইশা মাইশা মাইশা! আমি মনেহয় খুশিতে ভেসেই যাব।
ইধার কথা শুনে মাইশা বলল, কোথায়?
-প্রেমের সাগরে। সত্যিই আমার জীবনে এত আনন্দ এসেছে!
-সত্যিই এসেছে। আমার তো এটা ভেবে আনন্দ পাচ্ছে, আমরা আত্মীয় হয়ে যাব। সবসময় একে অপরের সঙ্গী হয়ে থাকব!
মাইশাকে জড়িয়ে ধরে ইধা বলল, আসলেই। তুই আমার প্রথম ভালোবাসা। তোকেও আমার কোনোদিন হারাতে হবে না এখন!
নিজেদের এই সুখের মুহুর্তটাকে আরও রাঙিয়ে তুলতে বেড়াতে আসে রুজাইন ও ইধা।
পতেঙ্গা সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে ইধা। রুজাইনের কাঁধে মাথা রেখে উপভোগ করছে ঢেউ এর সৌন্দর্য। মাঝেমধ্যে ডান হাতের আঙুলে থাকা আংটিটা সামনে এনে দেখছে ইধা। ওর এরূপ কাণ্ড দেখে রুজাইন হেসে বলল, মনে হচ্ছে রিংটা তোমার বেশ পছন্দ হয়েছে? একটু পর পর দেখছ!
-সুন্দর। তবে এটা তোমার আম্মু আমায় দিয়েছে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। তাই আরকি বারবার দেখি।
-জানো? আম্মু আমার হবু বউ এর জন্যই এটা বানিয়ে রেখেছে। প্রথম দেখায় দেবে বলে ঠিক করেছে। আর সেটা তোমাকেই দিলো।
-সব কেমন যেন কল্পনা মনে হচ্ছে।
-এসব সত্যিই ঘটছে ম্যাডাম। এখন তুমি তোমার মা কে আসতে বলো একদিন।
-ছোটো কাকা মা কে ফোনকল দেবেন বলেছেন। বিষয়টা ছোটো না। বুঝিয়ে বলতে হবে। ছোটো কাকা নিজেও এত সহজে রাজি হবেন আমি ভাবিনি।
-উনি যখন রাজি হয়েছেন তোমার মা ও হবেন। তাড়া দাও।
-দেব।
ইধার হাতটা শক্ত করে ধরে রুজাইন বলল, তাড়া দাও আর তাড়াতাড়ি আমার বিবি জান হয়ে যাও!
ক’টা দিন কেটে যায়। মধুর সময় পার করে রুজাইন ও ইধা। কিন্তু গতকাল থেকে ইধার আচরণে কেমন যেন পরিবর্তন লক্ষ্য করছে রুজাইন। কথা কম বলছে রুজাইনের সঙ্গে। ব্যস্ততা দেখাচ্ছে ও৷ আর তাই আজ রুজাইন ফোনকল দিয়ে কোনো কথা না বলেই জিজ্ঞাসা করলো, কী হলো তোমার? ইগনোর কেন করছ তুমি?
ইধার কাছে কোনো সাড়া না পেয়ে রুজাইন বলল, কিছু তো বলো!
ইধা শান্তস্বরে বলল, আমি দু:খিত। তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
রুজাইন হেসে বলল, মজা নিচ্ছ?
-এই বিষয়ে তোমার সঙ্গে মজা করব এটা ভেবেছ কিভাবে?
এইবার চিন্তিত হয় রুজাইন। ও বলল, কী বলতে চাচ্ছ?
-আমার মা সম্পর্কটা মানতে নারাজ। তিনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। সবার উপরে ধর্ম। আমি কেন এটা ত্যাগ করব!
রুজাইন একটু সময় নিয়ে বলল, ওকে ফাইন। করো না ত্যাগ। আমি আগেও বলেছি তোমাকে, এটা আমার জন্য কোনো সমস্যা নয়।
-তারপরেও সম্ভব না।
-কেন?
-উনি চায় না আমি মুসলিম কোনো ছেলেকে বিয়ে করি। আর আমার মা কে কষ্ট দিয়ে এটা আমি করতেও পারি না।
রুজাইন অবাক হয়ে বলল, কীসব বলছ তুমি! আমি তোমার জন্য সব ত্যাগ করছি আর তুমি কি-না এটা একটা অজুহাত দেখাচ্ছ?
-তোমার কাছে অজুহাত হতে পারে৷ কিন্তু আমার কাছে আমার মা সব৷ যখন কেউ ছিল না পাশে তিনিই আমাকে আগলে রেখেছেন। নিজের বাড়িতে বুয়ার মতো থেকেছেন আমাকে ভালো রাখার জন্য। সেই মা কে আমি কিভাবে কষ্ট দিই বলো!
-আর আমি? আমি তোমার ভালোবাসা ইধা!
-ক্ষনিকের হয়তো। নাহয় এত সহজে তোমাকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম না। আমার মা কে আমি কষ্ট দিতে পারব না। তুমিও তোমার মা এর কথা শোনো। আমি মুসলিম না হলে তিনিও নারাজ হবেন। তার চেয়ে বরং আমরা নিজেদের মতোই থাকি।
-ইধা!
ফোনের লাইন কেটে দেয় ও। রুজাইন নিজের জায়গায় বসে থাকে শক্ত হয়ে। কী হচ্ছে এসব!
.
চলবে