#চিত্তে_অঙ্কিত_কৃষ্ণরেখা
#পর্বঃ|০৬|
#ফাহমিদা_নূর
আকাশ যেন এক বিশাল রূপকথার ক্যানভাস, যেখানে কিছু মুহূর্তের ব্যবধানে সূর্যের সোনালি আলো মুছে ফেলে ধূসর রঙের আঁচড় পড়েছে। দিগন্তজুড়ে ঘন মেঘেরা যেন এক মহাসমাবেশে মিলিত হয়েছে, তাদের গাঢ় কালচে ধূসর রঙের ছোঁয়ায় আকাশকে ঢেকে ফেলেছে। মেঘেদের মধ্যে গভীর এক রহস্যময় নীরবতা বিরাজমান, মাঝে মাঝে বজ্রের ক্ষীণ গর্জন সেই নীরবতাকে ভেঙে দিচ্ছে। হাওয়া যেন বিষণ্ণ সুরে গান গাইছে, তার ছোঁয়ায় চারপাশে অদ্ভুত শীতলতার পরশ।আকাশ দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতি যেন বৃষ্টির অপেক্ষায় গভীর চিন্তায় নিমগ্ন। যত্রতত্র পরখ না করেই নির্জনচিত্তে এয়ার পোর্টের ভেতরে দৌড়ে ছুটে চলে শ্রেয়াণ। তাকে আটকাতে পেছন থেকে গার্ড রা আসতে গিয়েও থেমে যায়।পিছ ফিরে একবার সেদিকে তাকিয়ে ফের দৌড়ে যায় শ্রেয়াণ। উম্মাদের মতো বিমান বন্দরের এদিক ওদিক ছুটে টার্মিনালের বাইরের অংশ থেকেই একে একে সব বিমান পর্যবেক্ষণ করে একটির উদ্দেশ্যে স্থির চেয়ে রয়। এগুতে নিলে গার্ডরা আঁটকে দেয় তাকে।চুরমার হয়ে হৃদয়টা যেনো ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে আসতে চাইছে তার।সামনে হাত বাড়িয়ে দুই হাঁটু গেড়ে সেখানেই বসে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে।ঔই তো বিমানে নিউইয়র্ক লেখা ভাসমান।তার মানে এটাতে চড়েই প্রথা আর তাদের অনাগত ছোট প্রাণ চলে গেছে বহু দূরে? যাদের দেখা কতো দিনে মিলবে সেটা এখনো অজানা।ছোটদের মতো হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো শ্রেয়াণ।তার সাথে সঙ্গী হয় দূরের অম্বর।হঠাৎই নেমে এলো তুমুল বৃষ্টি, যেন প্রকৃতির অশ্রুধারা।হয়তো তারাও শ্রেয়াণের কান্নার সাথী হতে চাইছে। সঙ্গ দিতে চাইছে তার হৃদয় ভাঙা আর্তনাদের।ভারী জলকণার টুপ টুপ আঘাতে চারপাশের ধুলো ধুয়ে মুছে গেল, আশ্রয়ের অযুহাতে আশপাশের মানুষ ছোটাছুটি করছে অথচ শ্রেয়াণ নির্বিকার।বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ মিশে চারদিকে এক শীতল নীরবতা সৃষ্টি করল। মনে হচ্ছে আকাশের ক্রন্দন থামার কোনো ইঙ্গিত নেই, আর এই আঁধার প্রকৃতির গভীর কোনো গল্প শোনানোর অপেক্ষায়।হয়তো শ্রেয়াণ প্রথার বিচ্ছেদের গল্প।
শ্রেয়াণ কে খুঁজতে খুঁজতে বন্দরে ঢুকে আফিফ । অস্থির চিত্তে এদিক ওদিক পলক ঝেড়ে দ্রুত কদমে হেঁটে শ্রেয়াণের চেহারা খুঁজছে সে। অল্পক্ষণ পরিশ্রম করে এক সময় পেয়েও যা য়।ঔ তো শ্রেয়াণ।তাকে ফ্লোর থেকে তুলার চেষ্টা করছে দুজন সাদা ইউনিফর্ম গায়ে জড়ানো গার্ড। সকলে ভিজে জুবুথুবু।গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মাথায় হাত দিয়ে বৃষ্টি থেকে বাঁচার প্রয়াস চালিয়ে দৌড়ে এগিয়ে যায় আফিফ।গার্ডদের ফিরে যেতে বললে তারা বিরক্ত মুখশ্রীতে জায়গা প্রস্তান করে।
-” প্লিজ স্যার উঠুন!ম্যাম এখানে নেই!
শ্রেয়াণের এক বাহুতে ধরে দাঁড় করানোর চেষ্টা করতে করতে বলে আফিফ।শ্রেয়াণের কানে হয়তো ওসব কথা পৌঁছায় না।সে সম্মুখের বিমানের দিকে আঙুল তাক করে ক্রন্দনরত কন্ঠে বলে-“ আফিফ?ঔ বিমানেই আছে আমার প্রথা , আমার সন্তান।
-“ ম্যাম এখানে নেই স্যার।আমরা পরে তাকে খুঁজে বার করতে পারি, এখন বাড়ি ফিরে চলুন। বৃষ্টিতে ভিজলে আপনার তো হাঁপানি হয়!
-“ ও কি করে পারলো এভাবে চলে যেতে?একবারো ভাবলো না আমার কী প্রতিক্রিয়া হবে?ওতো আমার না বলা সব কথা বুঝে নিতে পারতো তাহলে এবার কেন ব্যার্থ হলো?কাছে থেকে শাস্তি না দিয়ে কেনো ছেড়ে চলে গেলো?
শ্রেয়াণ কে সামলাতে অপারগ হয়ে আফিফ নিজেও তার পাশে বসে পড়লো। অসহায় চোখে দেখতে লাগলো প্রিয়জন হারানোর দহনে পুড়তে থাকা মানব কে।একসাথে পথচলা প্রায় পাঁচ বছর অথচ যাকে কখনো এতোটা ভেঙে যেতে দেখেনি।
তার ভাবনার মাঝে আচমকাই শ্রেয়াণ সর্বস্ব দিয়ে চিৎকার করে উঠলো -“ প্রথা!
ফিরতি বলে-” প্লিজ ফিরে এসো?তার হৃদয় ভাঙা আর্তনাদ বৃষ্টির শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো। শেষ বারের মতো আবারো প্রথার নাম জপে আফিফ কে আঁকড়ে ধরলো শ্রেয়াণ।
ভালোবাসা কখনো মরে যায় না।চিরকাল বেঁচে থাকে হৃদয়ের গভীরে,এক অদৃশ্য সুরে,যা মুছে যাওয়া সম্ভব নয়।
কিছু কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েও পূর্ণতা পায়না।কেননা তা হয়ে ওঠে অমীমাংসিত।আর সেই অসমাপ্ত ভালোবাসা একদিন ফিরে আসে, এক নতুন রূপে, নতুন আঙ্গিকে,হয়তো প্রথাও একদিন ফিরবে তবে একা নয়।তার হাত বন্দী থাকবে একটি ছোট্ট হাত।
–
বাইরে যেন আকাশটা অবিরাম কাঁদছে, মেঘের গর্জন আর বৃষ্টির ধারা একাকার হয়ে সারা পৃথিবীকে ভিজিয়ে তুলছে।ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ গুলোও আজ ভয়ংকর শুনাচ্ছে যা একসময় আনন্দ দিতো।রাত একটা ছুঁই ছুঁই।লিভিং রুমে কপালে হাত ঠেকিয়ে বিষাদগ্রস্ত মুখশ্রীতে বসে আছে সায়লা।তার সঙ্গে দিচ্ছে বাড়ির প্রতিটি সদস্য।শ্রেয়া বারে বারে উদ্বিগ্ন ভাবভঙ্গিতে সদর দরজার দিকে তাকাচ্ছে ভাইয়ের ফেরার অপেক্ষায় আবার কখনো কখনো তাকাচ্ছে ফোন স্ক্রিনে। উপস্থিত সকলের মাঝে শাহাদও আছে। হসপিটাল হতে মাত্রই ফিরেছে সে।
তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একসময় কলিং বেল বেজে উঠলো।দেহে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে সায়লা সবার আগে ছুটে গেলো দরজার দিকে। দরজা খুলতেই আঁতকে উঠল, দেখতে পেলো শ্রেয়াণ ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার ভেজা শার্ট থেকে ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে ক্ষণে ক্ষণে। পাশেই আছে আফিফ। অধৈর্য সায়লা শ্রেয়াণ কে ধরতে যাবে তার আগেই শ্রেয়াণ কঠোর গলায় বলে উঠে -“ ডোন্ট টাচ্ ম্যি! তোমার অনুমতি পেয়েই প্রথা আমাকে ছেড়ে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছে।আমি তোমায় ক্ষমা করবো না মা।তুমি শুধু প্রথা কে আমার কাছ থেকে দূরে যেতে সাহায্য করো নি। সন্তান কেও বাবার কাছ থেকে দূরে করে দিয়েছো!
দম নিয়ে ফের বলে-“ অবশ্যই আমি নিউইয়র্ক যাবো।যদি প্রথা কে খুঁজে না পায় তাহলে তাহলে…আমি কী করবো নিজেও জানি না!
শ্রেয়াণের কাঁধে হাত রেখে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে সায়লা বলে-“ একটু ধৈর্য ধরো।প্রথা পৌঁছাতেই আমাকে ফোন করবে বলেছিল!
-“ করেছে?
সন্দিহান চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে শ্রেয়াণ।
-“ এখনো করেনি!
তাচ্ছিল্য ভরে বলে উঠে শ্রেয়াণ-“ করবেও না।ও আমাকে কষ্ট দেবে বলে পালিয়ে গেছে ,সেখানে তোমার সাথে যোগাযোগ রাখবে ভাবলে কি করে?ওকে এতোটা বোকা মনে হয় তোমার।
-“ শান্ত হও শ্রেয়াণ।ভেতরে এসো_
শাহিন জাওয়ানের কথার পিঠে শ্রেয়াণ বলে-“ নাহ! যতোদিন না প্রথা কে খুঁজে পেয়েছি ততোদিন এবাড়িতে ঢুকবো না আমি!
–
সেদিন সারারাত অপেক্ষার ফলাফল শূন্য পায় সায়লা।প্রথার কোন খবর পায়নি কেউ। দুদিন ধৈর্য্য ধরার পরে উপায়ান্তর না পেয়ে চৌধুরী বাড়িতে ছুটে যায় সায়লা এবং শাহিন। চৌকাঠের ওপারে তাদের দেখে কিছুটা ইতস্তত বোধ করে সৌজন্য হেসে ভেতরে প্রবেশ করতে বলেন প্রতাপ চৌধুরী।সায়লা, শাহিন এঁকে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। তারপর নম্র ভাষায় শাহিন বলে উঠে-“ভাইসাব প্রথা মায়ের ফোন কিংবা কোন খবর আছে আপনার কাছে?
প্রতাপ চৌধুরীর চোখে অস্বস্তি,কিছুটা ইতস্তত ভাব। সন্দিহান চোখে তাকায় সায়লা। বুঝাতে চেষ্টা করছে তিনি কি কিছু লুকাতে চাইছে? কিন্তু তার ভাবনা কে পাল্টে দিয়ে প্রতাপ চৌধুরী আহাজারি করে উঠে, কান্না রত গলায় বলতে লাগে-“আমার মেয়ে একলা অচেনা দেশে গেছে অথচ চার দিন ধরে কোন খুঁজ নেই ?প্লিজ ওর কোন একটা খবর হলেও আমাকে দিন। তার সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিন?
তখন সায়লা কিংবা শাহিনের তাকে শান্তনা দেয়ার ভাষা ছিল না। কয়েক দিন পর ফের চোধুরী বাড়িতে গিয়ে দেখে দরজায় তালা ঝুলানো।সেদিনের পর না পেয়েছে চৌধুরীর খুঁজ আর না প্রথার।
—————-
বসন্ত এক আনন্দমুখর, প্রাণবন্ত সময়,তখন প্রকৃতির রূপ ও সৌন্দর্য নতুন জীবনে পূর্ণ হয়। ঠান্ডা শীত চলে যায়, আর আসে উষ্ণতা, নরম হাওয়া মিষ্টি সুরে বয়ে চলে। গাছপালায় নতুন পাতা ফুটে ওঠে, ফুলের রঙের মেলা যেন এক উজ্জ্বল প্রদর্শনী। পাখিরা গায় তাদের সুরেলা গান, আকাশে উড়ে যায় রঙিন পাখিরা। মৃদু রোদে প্রকৃতি জেগে ওঠে, পৃথিবী যেন এক নতুন শুরুর প্রতীক হয়ে ওঠে। কিন্তু এই বসন্ত শ্রেয়াণের মনে বিগত পাঁচ বছর ধরে কোন আঁচ ফেলতে পারেনি।বারে বারে যেনো তার অনুভূতি উজ্জীবিত করতে ব্যার্থ হয়ে ফিরে গিয়েছে ঋতু রাজ বসন্ত। পাক্কা পাঁচ বছর ভিড়িয়ে প্রকৃতিতে আবারো বসন্ত এসেছে। সাদা কালো ডোরাকাটা ট্রাউজার সাথে সবুজ টিশার্ট পড়ে একহাত পকেটে গুঁজে অন্যহাতে কফির মগে চুমুক দিয়ে ব্যালকনির বাইরে চোখ রাখে শ্রেয়াণ। বাগিচায় ফুল ফুটেছে মোগরা, গোলাপ, চামেলী, জবা, দোলনচাঁপা। সুভাসে মৌ মৌ করছে চারিপাশ।সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে ভাবছে অতীতে কেটে যাওয়া মুহূর্তে গুলো।এই পাঁচ বছর তার কাছে মনে হয়েছে কতো সহস্র যুগ পেরিয়েছে।প্রতিটি মুহূর্তে মনে হতো পৃথিবী থেমে গেছে, সময় যেন চলতে চাইছে না।
সে গিয়েছিলো তার ভালোবাসার খুঁজে। কিন্তু নিউইয়র্ক স্টেটে’র প্রায় ১৪৭,০৩৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে কোটি কোটি মানুষের ভিড়ে একটি সত্তা খুঁজে পাওয়া এতোই সহজ?শ্রেয়াণও খুঁজে পায়নি তার প্রথাকে।আর না দুচোখ জুড়িয়ে তৃষ্ণা মেটাতে পেরেছে তার সন্তান কে দেখে।সে হতভাগা এটাও জানে না যে তার সন্তান ছেলে না মেয়ে! বেঁচে আছে না মৃত! চোখ বন্ধ বুক ভর্তি প্রলম্বিত শ্বাস টানলো শ্রেয়াণ।সায়লাকে শাস্তি স্বরূপ বিগত কয়েক বছর অফিসেই বিতিয়েছে শ্রেয়াণ তবে মাঝে মাঝে যখন খুব করে প্রথার কথা মনে পড়তো ছুটে চলে যেত সকল কাজ বাজ ছেড়ে।আজো এসেছে নিজেদের কক্ষে।সব জিনিস স্ব স্ব জায়গায় আছে কেবল মাত্র প্রথা ছাড়া।প্রথা কে হারানোর দোষ এখন সে মাকে কিংবা অন্যকে দেয় না বরং নিজেকে নিজেই দেয়। তার একটি ভুলের জন্য প্রথা আজ ধরাছোঁয়ার বাইরে!জে.কে নামক ওই কিডন্যাপার কেউ খুঁজে বার করার বহু প্রচেষ্টা চালিয়েছে শ্রেয়াণ কিন্তু জে.কে এর পর থেকে যেনো উধাও!শ্রেয়াণ কে কোন ডিস্টার্ব করেনি এক বারের জন্যেও।
-“ আসবো বস?
তপ্ত শ্বাস টেনে পেছনে না ফিরেই জবাব দেয় শ্রেয়াণ -“ এসো?
আফিফ এসে দাঁড়ায় পাশাপাশি।তার হাতে কালো ফাইল।সেটি সন্তর্পণে এগিয়ে দিয়ে বলে-“ বিদেশি যে কোম্পানির সাথে ডিল কোলাবারেট করার কথা ছিল তারা মিটিং ডেট ফিক্স করেছে বস!
ফাইল হাতে নিল শ্রেয়াণ।প্রথা হারানোর যন্ত্রণা ভুলে থাকতে অফিসের এই একটা মাধ্যম ই এ্যাপ্লাই করে এসেছে শ্রেয়াণ।গত পাঁচ বছর সে কাজেই ডুবেছিল। কিন্তু যন্ত্রণা ভুলে থাকা এতোই সোজা? গভীর রাতে যখন চোখ বুজতে যায় তখনই চোখের সামনে ভেসে উঠে প্রথার নিষ্পাপ চেহারা। সেদিনের সেই ক্রন্দনরত মুখশ্রীটা।
ফাইলে সিগনেচার করতে করতে প্রশ্ন করে শ্রেয়াণ -“ ডেড কখন?
-“ আগামী তিন তারিখ!
-“ মাঝখানে কয়দিনে বাঁচে?
-“ চারদিন বস!
-“ ওকেহ!ডিল ডান।
-“ বস ফাইলে ওই কোম্পানির সিইও এর ছবি আছে। আপনি চাইলে _
শ্রেয়াণের চোখের দিকে তাকিয়ে বাকি কথা গিলে নেয় আফিফ।একটু পর ইতস্তত গলায় মিনমিনিয়ে বলে-“ পরে কিন্তু আফসোস _
-“ আবার মুখ খুলেছো
-” স্যরি বস! কিন্তু _
-“ ফের?
এই পর্যায়ে ঠোঁটে আঙুল সেঁটে দেয় আফিফ।তবে সে মন প্রাণ দিয়ে চাইছে তার বস ওই ছবিটা একবার দেখুক।
#চলবে__
#চিত্তে_অঙ্কিত_কৃষ্ণরেখা
#পর্বঃ|০৭(বোনাস)|
#ফাহমিদা_নূর
-“ ফিহা তা’তাড়ি রেডি হয়ে নাও আমাদের বেরুতে হবে কিন্তু!
ফাইজা,ফিহার কক্ষে প্রবেশ কালে উক্ত কথাটি বলে উঠে শ্রেয়া।তার হাঁটা চঞ্চল। চোখ মুখের ভাব ভঙ্গি অস্থির ।হাত দুটোও যেনো থেমে নেয়,পড়নের সাদা পাড়ের নীল শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে মুখ তুলে সামনে তাকায় শ্রেয়া।বড়ো বোন ফাইজা কে একহাতে জড়িয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে ফিহা।কানের লতি অব্দি চুলগুলো কপালে ছড়িয়ে আছে।তপ্ত শ্বাস ফেলে শ্রেয়া।এগিয়ে যায় বিছানা দিকে।ফিহার মা নিলিশা রান্না ঘরে।তাই প্রতিদিন ফিহাদের ঘুম থেকে জাগিয়ে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব শ্রেয়া’র।শ্রেয়া এখন শহরের বাইরে একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক।সেই সুবাদে ফিহা সেখানেই প্লে তে পড়ছে।যদিও ফিহার বয়স কম কিন্তু শাদাত বলেছে স্কুলের সাথে আসা যাওয়া থাকলে পরবর্তীতে আনইজি ফিল হবে না।যেহেতু শ্রেয়াও সেখানে থাকে, তাই আরো সুবিধা।
সকাল বাজে আটটা।এতো সকালে কোন বাচ্চাই কি উঠতে চাইবে?শ্রেয়া হাসলো স্মিত।ফিহার শিয়রে বসে গালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবছে এমন ভঙ্গিতে বলে-“ গতকাল ক্লাসে কার সাথে যেনো বন্ধুত্ব হয়েছিল আমাদের ছোটি ফিহা’র?
আগে থেকেই জাগনা পেয়েছিল ফিহা। কেবল অলসতার জন্য চোখ বুজে আছে কিন্তু ফিফিন তো বন্ধুর ব্যাপারে জানতে চাইছে?ফিহা তো কিছুতেই ঘুমিয়ে থাকার ভান ধরে থাকতে পারে না আর।খুশিতে গদগদ হয়ে তড়িৎ উঠে বসে ফিহা।শ্রেয়ার গলা জড়িয়ে বলে-“ ফিফিন জানো আমার ঔ বন্ধুকে খুউব ভাল্যো লেগেছ্যে।
-“ তাই?
-“হুম!ওর আম্মু আমাদের আইসক্রিম নিয়্যে দিয়্যেছিলো।
-“ওলে বাবা আইসক্রিম নিয়ে দিয়েছিলো?
-“চককেট ও দিয়েছ্যে!
-“চকলেট,আইসক্রিম দিয়েছে বলেই ওকে এতো ভালো লেগেছে?
ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো শ্রেয়া।
-“হুঁমমমম।
চোয়াল ঝুলিয়ে তার দিকে চেয়ে রইলো শ্রেয়া।গত কাল থেকে বন্ধুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে যাচ্ছিল ফিহা।এই তাহলে আসল ব্যাপার?
-“ রাক্ষসের ঘরের কুক্ষস বাচ্চা। চকলেট আইসক্রিম দিয়েছে বলে আজ তারা খুব ভালো? এরপর যদি না দেয় তাহলে খারাপ হয়ে যাবে তাইনা?
কথাগুলো বলতে বলতে শুয়া থেকে উঠে বসে ফাইজা।চোখে রাগত আভার ছড়াছড়ি। কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে ফিহার দিকে। ফ্যালফ্যাল করে বোনের দিকে চেয়ে রয় ফিহা।এতো কঠিন বাক্যের ভাবার্থ তার ছোট মাথায় ধরতে পারছে না।ফাইজার মুখে এমন কথা আর তার প্রতিক্রিয়া দেখে আশ্চর্যান্বিত চোখে তার দিকে তাকালো শ্রেয়া।ফিহা অন্যের কাছ থেকে পাওয়া জিনিস খেতে ভালোবাসে।আর শ্রেয়া প্রায় লক্ষ্য করেছে ফিহা যখনি তার সামনে বলে আজ তাকে কেউ কিছু দিয়েছে এবং ওই মানুষ কে তার ভালো লেগেছে ঠিক তখনই ফাইজা যেনো কেমন ক্রুদ্ধ হয়ে উঠে। ছোট্ট ফিহা কে কঠিন গলায় কথা শুনাতেও দুবার ভাবে না।
-“ ফাইজা ও এখনো ছোট।ওর সাথে এভাবে কথা বলছো কেন?
-“ ছোট হলে অন্যের জিনিসের প্রতি এতো নজর কেন?..ঠিক তার মায়ের মতো!
শেষের কথাটি দাঁতে দাঁত পিষে মুখের ভেতরেই বলে ফাইজা।যেটা শ্রেয়ার কান অব্ধি পৌঁছায় নি।
-” ওর কোন আচরণ ভালো না লাগলে বুঝিয়ে বলবে কিন্তু এভাবে নয়!
-“ ও যত বারি অন্যের জিনিস খেয়ে এসে গুণগান গাইবে আমি তত বারি তাকে এভাবেই বলবো।
শক্ত কন্ঠে কথা শেষ করে দ্রুত কদমে ওয়াশ রুমের দিকে চলে যায় ফাইজা। অবাক লোচনে তার দিকে স্থির তাকিয়ে থাকলো শ্রেয়া। বোধগম্য হচ্ছে না এমন স্বাভাবিক বিষয়ে ফাইজার এতো কঠোর প্রতিক্রিয়া কেনো?
ফাইজা এ বছর ক্লাস সেভেনে পড়লেও তার চিন্তা ভাবনা বড়োদের মতো বুদ্ধিভিত্তিক।বয়সের তুলনায় তার চিন্তাধারা যেনো গভীর, তীক্ষ্ণ।মাত্র তেরো বছর বয়সে বাহ্যিক পৃথিবী সম্পর্কে সে যেনো অনেক কিছুই বুঝে।
–
-“ প্রেগন্যান্সি সার্টিফিকেট অনুযায়ী আজ আমার বাচ্চার বয়স কতো বছর?
খাবারের প্লেটে র দিকে এক দৃষ্টিতে অনুভুতি শূন্য তাকিয়ে জানতে চাইলো শ্রেয়াণ। চোখ তুলে না মোটেও।তার গম্ভীর মুখ , সুদৃঢ় চোখ বুঝিয়ে দিচ্ছে সে কি ইঙ্গিত করতে চাইছে।ছেলের কথা কর্ণকোহরে পৌঁছাতেই পুরোনো ক্ষত যেনো তাজা হয়ে উঠলো আবারো,চোখের চশমাটা ঠেলে চোরা চোখে তাকিয়ে নড়েচড়ে বসে সায়লা খানম।স্ব স্ব অবস্থান থেকে ব্রেকফাস্ট টেবিলের প্রত্যেকে তাকায় শ্রেয়াণের উদ্দেশ্যে।তবে ফাইজা সরাসরি তাকায় তার মায়ের চোখের দিকে।তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে পড়ে নিতে চাইলো নিলিশার চোখের ভাষা।বুঝে নিতে চেষ্টা করলো তার মনের ভেতর উড়ো উড়ো কথাগুলো।কিছুটা সক্ষম হলো হয়তো ফাইজা।শ্রেয়াণের অভিমান, ব্যাথিত আর তাচ্ছিল্য মিশ্রিত কন্ঠে ওই তো নিলিশার চোখ খুশিতে চিকচিক করে উঠছে, যেটা অনেক বছর আগে ছোট্ট ফাইজা দেখতে পেয়েছিলো তার জন্মদাত্রী মায়ের চোখে। সেদিন শ্রেয়াণের বুকভাঙা আর্তনাদ চাক্ষুষ দেখে এভাবেই চিকচিক করে উঠেছিল নিলিশার চোখ!যেটাতে ছিল তৃপ্তি, প্রাপ্তি।সেদিনের কিছু একটা মনে পড়তেই তীর্যক দৃষ্টি ধীরে ধীরে রূপান্তরিত হয় ঘৃণা ভরা চাহনিতে।
শ্রেয়াণের দিকে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ ই ফাইজার দিকে চোখ যেতেই অ’প্রস্তুত তাকালো নিলিশা।ফাইজার এভাবে তাকানোর অর্থ বুঝতে অক্ষম হয়ে ইশারায় জানতে চাইলো -“ কী?
বিনিময়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় ফাইজা।একপল শ্রেয়াণের দিকে তাকিয়ে পরপরই সায়লার দিকে তাকায়।নিজ বক্তব্যের যথাযথ উত্তর না পেয়ে শ্রেয়াণ মায়ের দিকে মস্তক উঁচু করে স্বাভাবিক চোখে তাকায়।সায়লা এদিক ওদিক পলক ফেলে জবাব দেয়-“ পাঁচ বছর!
অপলক মায়ের দিকে তাকিয়ে রয় শ্রেয়াণ। কেনো জানি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে অলসতা জেঁকে বসেছে। এভাবেই তাকিয়ে থাকে অল্পক্ষণ অতঃপর চেয়ার ছেড়ে উড়ে দাঁড়ায়।প্লেটে পানি ঢেলে চলে যেতে পা বাড়াতেই শুনতে পায় ফাইজার কন্ঠ-“ ডোন্ট ওয়্যারি চাচ্চু।আমাদের ছোট বনু বা ভাইয়া অবশ্যই ফিরবে ।সাথে ছোট মাও। কোন কুটনির কুটনামি বেশিদিন তোমাদের আলাদা রাখতে পারবে না।
-“ কি ধরণের ভাষায় কথা বলছো ফাইজা? ছোট ছোটর মতোই থাকো_
নিলিশার চোখ রাঙানি কে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে বলে উঠল ফাইজা -“ আমি তোমার সাথে নয় চাচ্চুর সাথে কথা বলছি!
মেয়েকে মুখের উপর কথা বলতে দেখে অপমানে মুখ থমথমে হয়ে আসে নিলিশার। হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে সে। বিগত দু’বছর যাবত মায়ের সাথে এভাবেই কথা বলে ফাইজা অথচ এর মুখ্যম কারণ কেউই ধরতে পারে নি।স্মিত হেসে ফাইজার মাথায় হাত রেখে দুবার আলতো হাতে চাপড় মেরে তারপর শ্রেয়াণ বেরিয়ে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে।কয়দিনে ফিরে আসবে কেউই অবগত নয়।
–
মধ্যাহ্নের সময় প্রকৃতির এক অদ্ভুত নাট্যমঞ্চ, যেখানে সূর্য তার পূর্ণ তেজে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তপ্ত রোদে পৃথিবীর প্রতিটি কণা যেন সোনার আলোয় ঝলমল করে।এই সময়টায় জীবন যেন ধীর হয়ে আসে, সমস্ত কর্মকাণ্ডে একরকম অলসতা ভর করে। তবুও, এই নির্জনতার মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক অদ্ভুত মাধুর্য, যা শুধুমাত্র অনুভবে ধরা দেয়।
অফিস কক্ষে ইজি চেয়ারে টানটান হয়ে হেলান দিয়ে আছে শ্রেয়াণ। পরিধানে রয়েছে সাদা শার্ট এবং নীল কোট।মুখের উপর হুমায়ূন আহমেদের অপেক্ষা বই মেলে ঠেসে ধরা।ডান হাতের আঙ্গুল গুলো অস্থির ভাবে চালিত হচ্ছে চেয়ারেরে হাতলে।যার ফল স্বরূপ আওয়াজ উঠছে থ্প থ্প।
-” ম্যে আই কাম ইন স্যার?
ক্ষণকালের নিরবতা ভিড়িয়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে জবাব দেয় শ্রেয়াণ -“ ইয়্যেস!
অনুমতি পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে আফিফ।শ্রেয়াণের মুখের উপর তখনো বই সেঁটে আছে যার কারণে তার চেয়ারা দেখতে পারছেনা আফিফ।
-“ বসো!
চেয়ার টেনে ধীরে সুস্থে বসল আফিফ। উশখুশ করতে করতে নিম্ন স্বরে বলল-” বস?
অল্পক্ষণ পর মুখ থেকে বই সরিয়ে সিঁধে হয়ে বসে শ্রেয়াণ। কাঁচের টেবিলে হাত রেখে ছোট ছোট আঁখিতে তাকিয়ে ভ্রু সংকুচিত করে জিজ্ঞেস করে-“ কি ব্যাপার?
মনঃখুন্ন মুখে উত্তর দেয়-“ আর.জে.এস কোম্পানির সাথে যেই ডিল কোলাবারেট মিটিং ছিল ওটা একদিন পিছিয়ে দিয়েছে বস!
ঠোঁটে ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে থেকে শ্রেয়াণ বলল-“ কোন প্রব্লেমের কারণে হয়তো পিছিয়েছে। আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু তুমি মুখটা এমন করে রেখেছো কেন?
-“ বস আমি তো চাই মিটিং টা এখনি সেরে ফেলতে কিন্তু কি ভাগ্য আমার?আরো তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে!
হতাশার সুরে বলল আফিফ।তার মুখাবয়ব পরখ করে আড়ালে হাসল শ্রেয়াণ। অতঃপর মুখে গাম্ভীর্যতা এনে শক্ত গলায় বলল-“ বস আমি না কি তুমি?
-” আপনিই বস!
-“ ডিল নিয়ে আমার টেনশন করার কথা? নাকি তোমার?
-“ আপনার বস!
-“ তাহলে তুমি এতো উদ্বিগ্ন হচ্ছো কেন?
-“ স্যরি বস!
-“ গুড!
-“ থ্যাঙ্কস বস!
-” ওকে, এখন আমার জন্য একটা কড়া করে কফি অর্ডার করো।
-” ইয়্যেস বস!
-“ বস শব্দ ছাড়া কি কথা বলা যায় না?
-” নো বস!আপনি রেসপেক্টেবল পার্সন।
-” গেট আউট ফ্রম হ্যেয়ার!
-“ ইয়্যেস বস!
প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কর্মচারীর ন্যায় বুক ফুলিয়ে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে যায় আফিফ।সেদিকে তাকিয়ে ঠোঁট এলিয়ে হাসে শ্রেয়াণ। হাসির মাঝে একসময় কপাল কুঞ্চিৎ হয়ে আসে তার। মস্তিষ্কে কিলবিল করে উঠে আফিফ মিটিং নিয়ে এতোটা এক্সাইটমেন্ট দেখাচ্ছে কেনো?পরপর মাথা ঝাঁকিয়ে এই চিন্তা বাদ দিয়ে দেয়।তিন দিন পরই তো মিটিং এ্যারেঞ্জ হবে তখন নাহয় দেখে নেবে!
–
-“ আমাক্যে তোমাদের সাথে খ্যেলায় নেব্যে?
টিফিন পেরিয়ডে কয়েক জন মেয়ে বাচ্চা মিলে গোল করে মালা গো মালা খেলছিল স্কুলের বড়ো মাঠটায়।মধ্যে আরেকটি অপরিচিত বাচ্চা কন্ঠ শুনে খেলা স্থগিত করে সকলে কন্ঠের অধিকারীর দিকে তাকায়। কপাল কুঁচকে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে একজন বলে উঠে-“ তোর নাম কি রে পিচ্চি?
-” আমার নাম ফিহা।আমি কিন্তু পিচ্চি না।প্লে তে পড়ছ্যি!
একযোগে হেসে উঠে মেয়েগুলো। তাচ্ছিল্য ভরা গলায় একজন বলে-“ তাই তো?তোকে তো পিচ্চি বলা যাবে না কারণ তুই প্লে তে পড়িস?
আরেকজন বলে-” এখানে কি চাস তুই?
গোলগোল চোখে তাকিয়ে ফিহা ফের বলে-“ আমাকে তোমাদের সাথে খ্যেলতে দেব্যে?
-“ তুই জানিস আমরা তোর এক বছর সিনিয়র?বড়দের সমান হতে চাস?তুই তো দেখছি মহা অভদ্র একটা মেয়ে?
ফিহা এবার এপাশ ওপাশ নজর বুলিয়ে দেখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে খেলায় মত্ত ছেলে মেয়েদের। ইতোপূর্বে দুয়েক দলের কাছ থেকে বিতাড়িত হয়ে এই দলে এসেছে ফিহা।এই দলও যদি তাকে না নেয়?ফিহা আবার বলে-” আমাকে ক্যেও খ্যেলায় নিচ্ছে না। তোমাদের সাথে ন্যাও প্লিইজ”
-” এই সর এখান থেকে। আমাদের আর প্লেয়ার লাগবে না!
ফিহা অস্থির ভঙ্গিতে আবারো এদিক সেদিক তাকালো।ভিন্ন ভিন্ন খেলায় সবাই ব্যস্ত।কেউ কানামাছি, লাফালাফি কেউবা ছাব্বিশ।পেছনে ঘুরে একবার তানিয়ার দিকে তাকায়।যার সাথে কাল বন্ধুত্ব হয়েছিল কিন্তু খেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরে এখন ফিহা কে ছেড়ে দিয়েছে সে।
-“ প্লিইজ ন্যাও?
-” এমনিতেই খেলার বারোটা বাজিয়ে এখন প্লিজ প্লিজ করছিস?সরবি নাকি ধাক্কা দেবো?
বলেই একটি মেয়ে এগিয়ে এসে ফিহা কে ধাক্কা দেয় কিন্তু পুরোপুরি সফল হয়না তার আগেই আরেকটি মেয়ে এসে ফিহা কে আগলে নেয়।ফিহা বাচ্চা বাচ্চা চোখে চকিতে তাকায় আগলে নেয়া মেয়েটির দিকে।কোমরে দু’হাত রেখে ছোট ছোট চোখে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি।ড্রেসের উপরের অংশ সাদা শার্ট নিচের ধূসর স্কার্ট হাঁটু অব্দি পৌঁছেছে।
-“ এই পঁচা মেয়ে?তুমি ওকে ধাক্কা দিলে কেনো?আমি না ধরলে তো ও পড়েই যেতো?
ধাক্কা দেয়া মেয়েটি বলে-“ পড়ার জন্য ই ধাক্কা দিয়েছি!তুই ধরেছিস কেনো?
-“ এই মুখ সামলে কথা বলো পঁচা মেয়ে!তুই তোকারি করছো কেনো?শুনতে পাচ্ছো না আমি তোমাকে তুমি করে বলছি?
-“ পঁচা মেয়ে কাকে বলছিস রে?ও পড়েনি তো কি হয়েছে এখন তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবো। তখন বুঝবি কেমন লাগে?
বলেই মেয়েটি এসে তাকে ধাক্কা দিতে হাত বাড়াতেই নেহমাত দু’হাতের থাবায় উল্টে মেয়েটিকে নিচে ফেলে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু পল কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েটির সহসাথীরা এসে তাকে নিচ থেকে তুলার চেষ্টা করে।
-“ আসফি ব্যাথা পেয়েছিস?
রাফসা ‘র কথায় জবাব না করে ভ্যা ভ্যা কান্না জুড়ে মেয়েটি নেহমাতের দিকে রাগত চোখে তাকিয়ে থাকে।আর নেহমাত কোমরে দুহাত রেখে মুখ ভেংচি দেয় যেটার প্রতিক্রিয়ায় আসফি আরো ক্রুদ্ধ হয়।
-” তুমি ওকে ধাক্কা দিলে কেনো?
ফিহার কথায় নেহমাত ঠোঁট চুকা করে তার দিকে তাকায়।
-” তো কি হয়েছে?আমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাবো?
-“ এখন তো ওরা তোমার নামে অফিসে বিচার দেবে? তখন কি করবে?
-“ আমি ওসব বিচার টিচারে ভয় পায়না!বুঝেছো?
পড়ে যাওয়া মেয়েটি তখনো নিচে বসে ইচ্ছে করেই চিৎকার দিয়ে কান্না করতে লাগলো।যাতে শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়।তার ইচ্ছা সফলতা পায় কিছুক্ষণ পর। কান্নার শব্দে খেলারত সকল শিক্ষার্থী এগিয়ে আসে এবং খবর পৌঁছে যায় অফিস কক্ষেও।শ্রেয়াও আসে দুজন শিক্ষকের সাথে।ফিহা র কাছে কিছুটা জিজ্ঞেস করে নেহমাতের কাছে আসে।নেহমাত তখনো গভীর দৃষ্টিতে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল।শ্রেয়া মুখ ফুটে কিছু বলার আগে নেহমাত বলে-“ ম্যাম আপনি একদম আমার ফিফিনের মতো দেখতে!
–
#চলবে ইনশা-আল্লাহ
🤍