সুগন্ধি ফুল পর্ব-১৯

0
441

#সুগন্ধি_ফুল
#পর্ব_১৯
#জান্নাত_সুলতানা

আবরাজ বউ নিয়ে সোজা ব্যালকনিতে এলো। সেদিনের বেলুন গুলো রয়েছে। রাতের পরিবেশ বাহিরে বেশ মনোমুগ্ধকর। কাচের দেয়ালের ওপাশের তুষারপাত নজর পড়ে না দম্পতির। আবরাজ বউ নিয়ে সোফায় বসলো। ফিজা নিজে কে ততক্ষণে সামলে নিয়েছে। কোথায় আছে এই মূহুর্তে কি ঘটছে মস্তিষ্ক জানান দিতে মেয়ে টা দ্রুত সরে যেতে চাইলো। আবরাজ ঘাড় নেড়ে বলে উঠলো,

-“ডোন্ট প্যানিক। এই মূহুর্তে আমি তোমায় ছাড়ছি না সুগন্ধি ফুল।”

-“আপনি কোথায় ছিলেন তিন দিন?”

ফিজা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আবরাজ কে। আবরাজ এর দৃষ্টি বউয়ের ওষ্ঠপুটে। কেমন সুন্দর তারা কথা বলার সময় একে-অপরের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায়। তার ভালো লাগে এই ঝাঁঝালো কণ্ঠে যখন ফিজা রমণী তার সাথে কথা বলে। আবরাজ শান্ত স্বরে জবাব দিলো,

-“তোমার আশেপাশে।”

-“মজা করিয়েন না।”

-“আমরা বাংলাদেশ ব্যাক করছি ফাস্ট।”

-“কতদিন?”

-“তিন দিন।”

-“একবারে চলে যাব?”

ফিজা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো। আবরাজ মাথা নাড়ে। মেয়ে টার ফোলা গালে হাত রাখলো। বললো,

-“না। আমি আসবো আবার।”

-“ডিভোর্স কবে দিচ্ছেন?”

এমন মূহুর্তে আবরাজ কল্পনা করে নি ফিজা এমন কিছু বলতে পারে। আবরাজ থতমত খেলো। রাগ নিজের উপর হচ্ছে না-কি সামনে বসা সুদর্শনা রমণীর উপর বুঝতে পারছে না আবরাজ। তবে রাগ নিয়ন্ত্রণ সে করতে পারে। কঠিন স্বরে বলে উঠলো,

-“এমন কোনো কথা ছিলো না-কি আমাদের মাঝে?”

-“আমার ছিলো।”

-“আমার নেই।
সৌ ডিভোর্স এর প্রশ্নই আসে না।”

মুড যেন মিনিটে মিনিটে চেঞ্জ হয় আবরাজ খান এর। ফিজা অবাক হলো। এই এক মিনিট সময় আগে ও পুরুষ টার কণ্ঠে ছিলো রুষ্ট। অথচ এখন আবার বদলে গিয়েছে। ফিজা গম্ভীর স্বরে বললো,

-“সব আপনার মর্জি অনুযায়ী হবে না।”

-“ইয়েস সব আমার মর্জি অনুযায়ী হবে মাই ডিয়ার সুগন্ধি ফুল।”

ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে আবরাজ। ফিজা আবরাজ এর গালে হাত ছোঁয়াল। ইশ কবে ছুঁয়েছে এভাবে বউ তাকে? ভুলে গিয়েছে। মনে পড়ছে না এই মূহুর্তে। মনে করতে চাইলো না। ফিজা বললো,

-“আপনি ভালো হয়ে যান।”

-“তুমি সুযোগ দাও।”

-“দিয়ে রেখেছি। আপনি কাজে লাগাচ্ছেন না।”

ফিজার কণ্ঠে একরাশ হতাশা এসে ভর করেছে। আবরাজ ফিজার শরীর টা আরো একটু নিজের দিকে টেনে নিলো। মুখ গুঁজে দিলো বুকে। ফিজা কিছু টা চমকে উঠে আবরাজ এর চুল সহ ঘাড়ের কাছে ওভার কোট টা খামচে ধরে বসে রইলো। আবরাজ সময় নিয়ে বলে উঠলো,

-“সংসার চাই একটা।”

-“আপনার ইচ্ছে নেই।”

-“শতভাগ ভুল তুমি সুগন্ধি ফুল।”

আবরাজ শান্ত স্বরে বলে। ফিজা হতাশার সুরে বলে,

-“আপনার মধ্যে তেমন কিছু খুঁজে পাচ্ছি না আমি।”

-“তুমি কি আমার পুরুষত্ব নিয়ে সংশয় আছো?”

আবরাজ ফিজার দিকে তাকিয়ে ভ্রু জোড়া কুঁচকে সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো।
ফিজা কণ্ঠ খাদে এনে বললো,

-“এটা ভাবা বোকামি। আমি আপনার পূর্বে সব ঘটনা জানি।”

-“ছেড়ে দিয়েছি সব।”

-“এটা কথা না আবরাজ। বাড়ি যেতে চাই আমি।”

ফিজা মলিন স্বরে বললো। মন টা ইদানীং বড্ড ছটফট করে। কিছু একটা ঠিক নেই মনে হয়। ভালো লাগে না কিছু। তারউপর আবরাজ এতোদিন ছিলো না। মন টা আরো বিষিয়ে আছে। আবরাজ ঘাড় নেড়ে বলে,

-“ওকে।”

তখন ও বসা ফিজা আবরাজ এর কোলে। আবরাজ এর মুখশ্রী জুড়ে ক্লান্তির ছাপ। চোখের নিচ গুলো কালচে দেখাচ্ছে। ঠোঁট গুলো অতিরিক্ত খয়েরী রঙের হয়ে গিয়েছে। ফিজা চট করে প্রশ্ন করলো,

-“তিন দিন শুধু সিগারেট এর ওপর ছিলেন আপনি?”

সিগারেট এর আগুনে পোড়া অধর। বাজে দেখালো আবরাজ সুদর্শন মুখে। না-কি সুন্দর লাগছে? বুঝতে পারে না মেয়ে টা। আবরাজ নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

-“কে বলে তোমায়?”

-“আপনার ওষ্ঠদ্বয় মিথ্যা বলে?”

-“তুমি ছিলে না এতোদিন।”

বলতে বলতে আবরাজ নিজের হাত চালায় বউয়ের ঘাড়ে। ঝট করে মেয়ে টার মুখ এগিয়ে এনে ঠোঁটে চুমু খায় আলতো করে।
পরপর কয়েকবার। এতোদিনের তৃষ্ণা মেটে না। দীর্ঘ একটা অধর চুম্বন আবরাজ খান কে শান্ত করতে পারে না। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে হারাতে বউয়ের সেদিন এর আবদার এর কথা মনে পরে। অতঃপর নিজে কে সামলে নিলো। ছেড়ে দিলো বউ কে। স্বাভাবিক হতে সময় দিলো। এতো সময় নিঃশ্বাস নিতে না পারার ফলে দ্রুত শ্বাস নিয়ে নিজে কে স্থির করে ফিজা। আবরাজ বউ কে শান্ত হতে দেখে আবারও কোলে তুলে রুমে চলে এলো। ফ্রেশ হলো না। খেলো না। বাহিরের পোশাক পরিবর্তন করে না। বিছানায় শুইয়ে বউ কে নিজেও পাশে শুয়ে জড়িয়ে ধরলো। চোখ বন্ধ করে ঘুমঘুম স্বরে বললো,

-“ঘুমিয়ে পড়ো। আমার ঘুম পাচ্ছে। সকালে কথা বলবো আমরা।”

ফিজা কথা বাড়ায় না। আবরাজ এর চোখ দেখে বুঝে ছিলো ফিজা আবরাজ তিন দিনে হয়তো তিন ঘন্টা সময় ঠিকঠাক ঘুমায় নি। কি কারণ হতে পারে? কোথায় গিয়েছিল? কেনো গিয়েছিল? সব প্রশ্ন। উত্তর নেই কোথাও। কিভাবে পাবে এসব এর উত্তর ফিজা জানে না। তবে জানতে হবে। যে করে হউক।

————-

রাত বাজে দেড় টা। মেহরিন ঘুমে ছিলো৷ কিন্তু ফোনের শব্দ ঘুম ভেঙে গেলো মেয়ে টার। ঘুমঘুম চোখে ফোন বালিশের তলায় থেকে বের করে রিসিভ করে কানে তুলে “হ্যালো” বললো। ওপাশে আব্রাহাম। সে ল্যাপটপ এর সামনে বসে আছে। কাল একটা প্রেজেন্টেশন আছে। এটার প্রস্তুতি করছিলো। যদিও এটার দায়িত্ব টা মেহরিন এর। মেহরিন তেমন কাজ টা নিজের আয়ত্তে আনতে পারে নি পুরোপুরি। সেইজন্য আব্রাহাম করে সাহায্য করেছে মেয়ে টাকে৷ কেনো করছে কি কারণে করছে সে নিজেও জানে না। শুধু কি ফিজার কথা ভেবে করে দিচ্ছে? হতে পারে। যদিও ফিজা তাকে কখনো বলে নি আমার বোনের খেয়াল রেখো। তবুও আব্রাহাম কেনো জানি বারবার ফিজা ভেবে মেহরিন কে সাহায্য করে যাচ্ছে। সে জানে না। তবে মেহরিন এর এক্সাম আছে এটা বলে নিজে কে শান্ত করলো। এতো সময় কোনো উত্তর না পেয়ে মেহরিন আবার বললো,

-“কে বলছেন?”

-“আব্রাহাম খান।”

গুরুগম্ভীর কণ্ঠে মেহরিন ধপ করে চোখ মেলে শোয়া থেকে ওঠে বসলো। কাল তার একটা এক্সাম আছে। পড়ছিলো সে৷ পাশে খাতা মচমচ করে। আব্রাহাম এর কণ্ঠ আগের ন্যায় রেখে জিজ্ঞেস করলো,

-“এক্সাম আপনার। হেল্প করছি আমি। আর আপনি ঘুমিয়ে আছেন? হোয়াট দ্য হেল ইজ দিস মেহরিন সিদ্দিকী!”

মেহরিন কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ার ফলে কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই। যদিও মেহরিন বরাবর চুপচাপ। মুখেমুখে কথা বলার অভ্যাস মেয়ে টার নেই। আব্রাহাম গম্ভীর স্বরে আদেশ করলো,

-“আমাকে কল দিয়ে হেল্প করবে। আমি কাজ করছি। তুমি দেখো। প্রতিবার আমি হেল্প করবো না।”

মেহরিন কিছু বলার আগে কল কেটে দিলো আব্রাহাম। পরপর ভিডিও কল দিলো। মেহরিন গায়ে ওড়না জড়িয়ে নিলো। মাথায় ভালো করে ঘোমটা টেনে কল রিসিভ করলো।
এমনিতেই মেহরিন নাদুসনুদুস। ঘুম থেকে উঠার ফলে গাল আরো নাদুসনুদুস দেখাচ্ছে। আব্রাহাম হয়তো কয়েক সেকেন্ড এর জন্য ঘোরে চলে গিয়েছিল। তবে পরপর নিজে কে সামলে নিলো। স্ক্রিন রেকর্ড অন করলো। মেহরিন নিজেও ক্যামেরা অফ করে দিয়েছে ততক্ষণে। আব্রাহাম কাজ করতে করতে বুঝিয়ে দিতে লাগলো। আর মেহরিন ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে আব্রাহাম এর বকবকানি শুনতে লাগলো।

—–

-“তুমি ঘুমিয়ে থাকলে আমার লোভ হয়। আমি কি তোমার জন্য লোভী হয়ে যাচ্ছি, সুগন্ধি ফুল?”

মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে ফিজা আর হঠাৎ আবরাজ এর কথায় সাথে সাথে ভ্রু কুঁচকে নিলো।
ফিজার মুড মোটামুটি ফুরফুরে আছে। কারণ টা কি জানে না। তাই দুষ্টমি করে বললো,

-“আপনি লোভী। নারী লোভী।”

ফিজা কথা টা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আবরাজ ঝট করে ফিজা কে নিজে ওপর তুলে নিলো। ফিজা কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে আবরাজ এর শার্ট জড়িয়ে ধরে। গতকাল রাতে তো ফ্রেশ হয় নি আবরাজ। ফিজা আবরাজ এর উন্মুক্ত বুকের দিকে তাকিয়ে সেকেন্ড সময় ব্যবধানে আবরাজ এর মুখের দিকে তাকালো। আবরাজ ফিজার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-“রং। নারী না শুধু তোমার জন্য লোভ হয়।”

আবরাজ এর কথায় গললো কি ফিজা? কে জানে। মাথা নিচু করে মুচকি হাসলো মেয়ে টা। তখন ফোন বাজলো। আবরাজ এর ফোন। ফিজা যেহেতু আবরাজ এর ওপর ছিলো সেক্ষেত্রে ফোনের স্ক্রিনে ফিজার দৃষ্টি আগে পরলো। তৎক্ষনাৎ মুখের আদল পরিবর্তন হলো মেয়ে টার। চোয়াল শক্ত করে ফোন টা হাতে নিয়ে কল রিসিভ করলো। যেহেতু দু’জন কাছাকাছি রয়েছে ফোন টা ফিজা কানে না ধরে হাতে নিয়ে দু’জন এর মুখের সামনে রাখলো। ওপাশ থেকে তৃণার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো,

-“সুইটহার্ট আই মিস ইউ। তুমি কখন আসবে আবার?”

আবরাজ বিরক্ত হলো। ফিজা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো আবরাজ এর মুখের দিকে। কাকে বিশ্বাস করা উচিৎ? আবরাজ এর বিরক্তিকর চেহারা বলে দিচ্ছে সে তৃণার কথায় বিরক্ত। আর তৃণা যা বলছে সে-সব কি? ফিজা আবরাজ খান কে বিশ্বাস করলো। রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলো,

-“বেহায়া মেয়ে মানুষ। একদম উলটো পালটা বলবে না।”

বলে কল কেটে দিলো ফিজা। আবরাজ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো ফিজার মুখের দিকে। অবিশ্বাস্য কণ্ঠে জানতে চাইলো,

-“তুমি বিশ্বাস করো আমায়?”

-“দাম টা রাখবেন আমি আশাবাদী।”

আবরাজ ফিজা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে দিলো। সেখানে বৃষ্টির ন্যায় টুপটাপ চুমুতে ভরিয়ে দেয়। সে মেয়ে টার মায়ায় আঁটকে যাচ্ছে। বাঁচার ইচ্ছে প্রবল হচ্ছে। তবে মনে সংশয় কিছু একটা নিয়ে থেকেই যায়।

#চলবে….

[ছোট বলে অস্বস্তিতে ফেলবেন না প্লিজ। আজকে এটুকু পড়েন। পরপর দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]