বছর দুয়েক পর পর্ব-০৮

0
1175

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৮
#সারিকা_হোসাইন

********
মাঘের ভারী কুয়াশার বেষ্টন ভেদ করে সকালের টকটকে সূর্য খানা পুব আকাশে লালিমা লেপনে ব্যর্থ হয়েছে যেনো।বৃষ্টির ফোটার ন্যয় টুপটুপ শব্দে গাছের পাতা গড়িয়ে শিশির ঝরে যাচ্ছে সমানে।গত দিন গুলোর তুলনায় আজকের শীতের প্রকোপ খানিক টা বেশি।কিছুটা শীতের তাড়নায় ঘুম ভেঙে গেলো তাথৈ এর।কিছুক্ষণ পিটপিট করে দৃষ্টি খুলে ঘুম জড়ানো চোখে বালিশের তলা হাতড়ে ফোনটা বের করলো।এরপর হাই তুলতে তুলতে ওয়েদার ফোরকাস্ট এ নজর বুলালো সে।
তাপমাত্রা বারো ডিগ্রি সেলসিয়াস।ভারী কুয়াশার সাথে বাতাস ও প্রবাহিত হচ্ছে।তুলতুল মেয়েটা বিড়াল ছানার ন্যয় কম্বলের নীচে গুটিয়ে রয়েছে।চোখের ভ্রু কপাল আর ঝলমলে খয়েরি রঙা চুলের উপরিভাগ দৃষ্টি গত হচ্ছে তার।বাকি সব কিছু নরম কম্বলের তলায়।
হঠাৎই গত সন্ধ্যার ঘটনা মাথা চাড়া দিতেই লজ্জায় মিইয়ে গেলো তাথৈ।পুরুষালি সুগন্ধ টা এখনো নাকে লাগছে।স্নেহ ভরা হাতের স্পর্শ টা যেনো মাথায় শক্ত হয়ে গেড়ে বসেছে।আর তপ্ত শরীর ঝলসানো শ্বাস টা?

মুহূর্তেই লজ্জায় রাঙা হলো তাথৈ এর শুভ্র হিমায়িত গাল দুটো।শোয়া থেকে উঠে বসে তুলতুলকে ভালো করে ঢেকে দিয়ে দুই হাত ঘষতে ঘষতে বিছানা ছেড়ে নীচে নেমে এলো তাথৈ।
গায়ে একটা মিকি মাউসের হুডি জড়িয়ে লুজ ট্রাউজার টাইট করে বেঁধে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে এলো।বাড়ির বড় দের সেভাবে এখনো ঘুম ভাঙে নি।ময়নালের মা আর সালেহা কে দেখা গেলো খড়ের ভুসি দিয়ে উঠোনের এক কোনে আগুন ধরাতে।সারা রাতের কুয়াশায় খড় গুলো ভিজে যাওয়ায় বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে সালেহা কে।বাঁশের তৈরি চোঙ দিয়ে দাঁত হীন ময়নালের মা অল্প অল্প ফু দিয়ে সেই আগুন গনগনে করার প্রয়াস চালাচ্ছে।
রেহনুমা গায়ে একটা ভারী শাল জড়িয়ে রান্না ঘরে এসে কি কি নাস্তা বানাবেন সকালের জন্য তার চিন্তা ভাবনা করছেন।

মুহূর্তেই তাথৈকে একা একা দাঁড়াতে দেখে মুখে হাসি ঝুলিয়ে রেহনুমা বলে উঠলেন

“এতো সকালে কেনো উঠেছো বাবা?আজ যে বেশ ঠান্ডা পরেছে।যাও যাও ঘরে যাও।ঠান্ডা লেগে যাবে।

রেহনুমার দরদ ভরা উদ্বিগ্নে স্মিত হাসলো তাথৈ।এরপর ঘুম জড়ানো ভাঙা কন্ঠে বলে উঠলো

“বেশ লাগছে বড় মামী।আমার কিচ্ছুটি হবে না তুমি চিন্তা করো না”

হঠাৎই বাড়ির বাইরে থেকে ময়নালের গুন গুন গান কানে এলো সেই সাথে গরুর হাম্বা হাম্বা।গতকাল রাতেই তিহানের বিয়ে উপলক্ষে তিনটে গরু কিনে আনা হয়েছে।রাত বেশি হওয়ায় তাথৈ আর সেগুলো দেখতে পারেনি।ময়নালের গলার স্বর পেয়ে তাথৈ মনে মনে ভাবলো

“ময়নাল আংকেল মেবি গরু গুলোকে খাবার দিচ্ছে,এই সুযোগে একটু দেখে আসি গিয়ে”

শহুরে মানুষের কাছে গ্রামের ছোট একটা ঘাস ও অনেক কৌতূহলের সেখানে বিয়ে উপলক্ষে কেনা বড় বড় গরু তো বিশেষ কিছু।
শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে এক’পা দু’পা করে বাড়ির পেছনের গোয়াল ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো তাথৈ।গোয়ালের সামনে আসতেই বেশ অবাক হলো তাথৈ।
গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে বিশাল এক গরু।ময়নাল তাকে সমানে লালু লালু করে ডাকছে আর বিশেষ খাতির করছে।
তাথৈকে দেখেই ময়নাল বিজ্ঞের ন্যায় বলে উঠলো

“ঢাকাইয়া আম্মা কাছে আইয়েন না।গরু ডা গুতাইন্যা”

“কাছে ঘেঁষলেই গুঁতো দেবে ময়নাল আংকেল?

“হ আম্মা,এইডার রাগ একটু বেশি।আপ্নে দূর থাইকাই দেহেন”

ময়নালের কথাটা তাথৈ এর খুব একটা বিশ্বাস হলো না।সে মনে মনে ভাবলো

“উনাকে তো গুঁতো দিচ্ছে না তবে আমাকে কেনো দেবে?

তাথৈ মনে মনে ভাবলো ময়নাল চলে গেলেই পেড়ে রাখা কাঁঠালের ডাল গুলো লালু কে খেতে দেবে সে।

মনের সুপ্ত বাসনায় ময়নালের যাবার অপেক্ষায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো তাথৈ।

********
হঠাৎই মিহি রিনরিনে স্বরের উৎসুক কৌতূহলী প্রশ্নে ঘুম ভাঙলো ভিয়ানের ।চতুর মস্তিষ্ক কণ্ঠটি কার বুঝতে এক পিকো সেকেন্ড সময় ও নিলো না।স্বর টি কোথা থেকে আসছে সেটা দেখতে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।কথার আওয়াজ অনুসরণ করে পেছনের বেলকনিতে দাঁড়াতেই চোখে পড়লো ছোট হ্যামস্টার টাকে।কোরাল রঙের হুডিটা গায়ে বেশ লাগছে।মাথার উপরের ছোট ছোট দুটো কান দেখে ফিক করে হেসে দিলো ভিয়ান।পেটের কাছের পকেটে দুই হাত গুঁজে ময়নাল কে এটা সেটা প্রশ্ন করে বেশ জ্বলিয়ে মা/র/ছে।বুকের উপর পেশী বহুল হাত দুটো ভাঁজ করে মেয়েটির কর্মকান্ড দেখতে ব্যস্ত হলো ভিয়ান।

হঠাৎই সুলতান দফাদার হাঁক ছাড়লো ময়নালের উদ্দেশ্যে।গরুটাকে ফেলে রেখে তাথৈকে পুনরায় সাবধানী বাণী ছুড়ে লুঙ্গির গিট টাইট করতে করতে ছুটলো ময়নাল।

ময়নাল চলে যেতেই চারপাশে নজর বুলালো তাথৈ।

“নাহ এই দিকটায় কেউ নেই।

পরে থাকা কাঁঠালের ছোট একটা ডাল নিয়ে গরুর দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তাথৈ।
ভিয়ান হঠাৎই লক্ষ্য করলো গরুটি বেশ জোরে জোরে ফুঁস ফুঁস শব্দ করছে।দেখেই মনে হচ্ছে গরুটির লক্ষণ ভালো নয়।হঠাৎই ছুটোছুটি শুরু করলো লালু।তাথৈ পিছিয়ে আসতেই শান্ত হলো লালু।কিন্তু বোকা তাথৈ আবারো এগিয়ে গেলো।পুরো ঘটনা খোলা বেলকনি থেকে অবলোকন করে ভ্রু কুচকালো ভিয়ান।বিষয়টা তার কাছে বেশ অদ্ভুত লাগছে।গায়ে একটা টিশার্ট জড়িয়ে সে এক প্রকার দৌড়েই কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেলো।

এদিকে খাটো করে বেঁধে রাখা লালু ছুটোছুটি করতে করতে গলার কাছের দড়িটা ছিড়ে ফেললো।
বাধন মুক্ত গরু দেখে তাথৈ এর হাত থেকে ছোট কাঁঠালের ডালটা পরে গেলো।ভীত তাথৈ ভয়ে যেনো নড়তেও ভুলে গেলো।বৃহৎ লালু নাক দিয়ে ফসফস শব্দ করতে করতে মাথা নিচু করে লাফিয়ে উঠলো
ভয়ে চিৎকার করে উঠলো তাথৈ।মুহূর্তেই সব কিছু ভুলে প্রানপনে ছুটতে লাগলো তাথৈ।বড় ভুলটা যেনো এখানেই হলো।
মাংসল লালু গুঁতো দেবার ভঙ্গিতে লাফাতে লাফাতে দৌড়ে আসছে তাথৈ এর পিছু পিছু।
ভিয়ান যখন গোয়ালের কাছে পৌঁছালো তখন তাথৈ আর লালু দুজনেই অনেকটা দূর দৌড়ে গিয়েছে।
অস্থির কন্ঠে মুখে হাত বুলিয়ে ভিয়ান গর্জে উঠলো

“ওহ শীট”

তাথৈ চিৎকার করতে করতে দৌড়ে চলেছে পুকুরের পাড় ঘেষে।মুহূর্তেই তাথৈ এর চিৎকারে ধরফড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো মেহেরিন।মেয়ের এহেন ভয়ানক অবস্থা দেখে সকলের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে উঠলেন মেহেরিন।নিমিষেই পুরো বাড়ির মানুষ বাইরে আসতেই ভয়ে তাদের প্রাণ বেরিয়ে যাবার উপক্রম।
গরুর পিছু পিছু দৌড়ে চলেছে ভিয়ান।পশুর চাইতেও যেনো তার পায়ের গতি আজ শত গুন বেশি।ময়নাল আর সুলতান দফাদার একটা লাঠি নিয়ে ছুটলো সেই গরুর উদ্দেশ্যে।বৃদ্ধ মকবুল ধপ করে শিশির ভেজা ঘাসে বসে বলে উঠলেন

“ওরে কেউ আমার নাতনি কে বাঁচা”

তিহান অনন্যা আর রেহনুমা কোনো মতেই মেহেরিন কে সামলাতে পারছেন না।

প্রানপনে দৌড়াতে দৌড়াতে সামনে থাকা গাছের ভা/ঙা গুঁড়ির সাথে পা বাধিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো তাথৈ।লালু আর তাথৈ এর মাঝে হাত তিনেকের ব্যবধান।ঝড়ের গতিতে ভিয়ান এসে গরুর গলায় ঝুলে থাকা ছোট দড়িতে খামচে ধরে সামান্য থামাতে পারলো ক্ষিপ্ত লালুকে।শক্ত দেহের ছয় ফুট উচ্চতার যুবক ও যেনো এই পশুর সামনে টিকতে পারছে না।লালুর ভয়ানক ছোটাছুটি তে ভিয়ান তার পায়ে আর হাতে বেশ খানিক ব্যাথা পেলো।কিন্তু মনে যেই ভয় একটু আগেই বাসা বেঁধেছে সেই ভয়ের কাছে এই ব্যথা কিছুই নয়।গরুটি যখন এক দম আয়ত্তের বাইরে তখন কোনো উপায় না পেয়ে গরুর মাথায় শক্ত হাতে এক ঘুষি বসিয়ে দেয় ভিয়ান।ঘুষির পাউন্ড এতোই শক্ত ছিলো যে গরুটি লাফিয়ে পা ভাঁজ করে মাটিতে বসে যায়।এতক্ষনে ময়নাল আর সুলতান দফাদার গরুটির কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।দুজনে গরুটিকে টেনে হিচড়ে সরিয়ে নিতেই বাজ পাখির মতো তাথৈ কে ছো মেরে কোলে তুলে নেয় ভিয়ান।মেয়েটির শরীর থরথর করে কাঁপছে।কোনো প্রকার নড়াচড়া করছে না ছোট তাথৈ।হয়তো জ্ঞান হারিয়েছে।পায়ের কাছটা বেশ খানিক কে/টে র/ক্ত ঝরছে।মুখ থুবড়ে পড়ার কারণে ঠোঁটে আর গালেও সামান্য জখম দেখা যাচ্ছে।বড় বড় পাপড়ি যুক্ত বন্ধ চোখের কার্নিশ বেয়ে বিন্দু বিন্দু জলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।পুরো মুখমন্ডলে রক্তিম আভার উপস্থিতি।
মেয়েটির এহেন করুন অবস্থা দেখে কঠিন হৃদয়ের পুরুষটির হৃদয় মুষড়ে উঠলো।শক্ত হাতে তাথৈকে বুকের সাথে চেপে ধরে লম্বা দম নিয়ে ছুটে এলো বাড়ি অভিমুখে।ভিয়ানের পিছু পিছু ছুটলো সকলে।এরপর একটা ফাঁকা কক্ষে কোনো মতে তাথৈ কে শুইয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো ভিয়ান।তার ও পা থেকে র/ক্ত ঝরছে।মেহেরিন দৌড়ে এসে মেয়ের গালে হাত বুলিয়ে কান্না যুক্ত কন্ঠে ডেকে উঠলেন

“ও তাথৈ,তাথৈ রে,এই বাবা?

মেহেরিনের উদ্দেশ্যে ভিয়ান ব্যথিত কন্ঠে বলে উঠলো

“ভয় আর দৌড়ের কারনে প্যানিক এট্যাক এসেছে মনে হচ্ছে।ভয় পাবেন না।মাথায় একটু পানি দিলেই অল্প কিছুক্ষন পরেই জ্ঞান ফিরবে।

সালেহা কুসুম কুসুম গরম পানির বালতি নিয়ে দৌড়ে এলো।রেহনুমা একটা বালিশের উপর প্লাস্টিকের কাগজ বিছিয়ে তাথৈকে শুইয়ে ধীরে ধীরে পানি ঢালতে লাগলো।চিন্তায় সকলের মুখ খানা শুকিয়ে এই টুকুন হয়ে গেলো।সকালে আর কারো নাস্তা হলো না।

*********
ভিয়ানের কথাই সত্যি হয়েছে।মিনিট পনেরো পরেই জ্ঞান ফিরেছে তাথৈ এর।কিন্তু জ্ঞান ফিরতেই ভয়ে চিৎকার করে মেহেরিন কে খামচে ধরেছে আর কান্না জড়িত কন্ঠে বার বার শহরে ফিরে যাবার জন্য জেদ ধরেছে।কিন্তু এই অবস্থায় তাথৈ কে বাড়ি নিয়ে গেলে সাইফ আজমী কটু কথা আর ব্যঙ্গ করতে ছাড়বেন না।তাই মেয়ের কান্না অবজ্ঞা করে শক্ত হয়ে রইলেন মেহেরিন।মেয়েকে বুঝ দিলেও তাথৈ সেসব বুঝ মানতেই রাজি নয় এই মুহূর্তে।শেষমেষ কোনো উপায় না পেয়ে তিহান তার এক বন্ধুকে কল করলো।ছেলেটি ডক্টর।তাথৈ এর সকল অবস্থা শুনে ডক্টর ছেলেটি একটা ইনজেকশন এর নাম বলে দিলো।

“ভয় থেকে এমন হচ্ছে ওর পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।ঘুম হলে ব্রেন শান্ত হবে”

তিহান আর দেরি না করে নিজের বাইক নিয়ে ছুটে চললো উপ জেলায়।

*******
সারাটা দিন ভিয়ানের খুবই খারাপ ভাবে কাটলো।মনটা বড্ড অশান্ত লাগছে।তাথৈকে বুকে জড়াতে খুব ইচ্ছে করছে।কয়েক ঘন্টায় মেয়েটি বেশ নেতিয়ে পড়েছে।এই পর্যন্ত তুলতুল এর সহায়তায় দুই বার তাথৈ এর কক্ষে যেতে পেরেছে সে।পায়ে আর হাতে সাদা গজের ব্যান্ডেজ লাগানো হয়েছে পাশের বাড়ির এক নার্স কে দিয়ে।ইনজেকশন টি ও তিনি ই পুশ করেছেন।নিস্তেজ হয়ে ঘুমুচ্ছে তাথৈ।গালের আর ঠোঁটের জখম গুলো নীলচে বর্ণ ধারণ করেছে ইতিমধ্যে।সকলের অলক্ষ্যে সেই ব্যাথার স্থানে আঙ্গুল ছুঁইয়ে দিয়েছিলো ভিয়ান।ব্যাথায় ঘুমের মধ্যেই কপাল আর ঠোঁট কুঁচকে কষ্ট জাহির করেছিলো তাথৈ।সেই অসহনীয় দৃশ্য খানা বার বার ভিয়ান এর চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

“আজকে তোমার যদি কিছু হয়ে যেতো তবে কি এই ভিয়ান নাওয়াফ এতোক্ষন জীবিত থাকতো?এ কেমন এক তরফা যন্ত্রনা?দু দিনেই যে তুমি আমাকে নিঃস্ব করে দিলে মেয়ে।যতক্ষন না দলিল সমেত তুমি আমার হচ্ছো ততক্ষণ এই বুকের ব্যথা কমবে না।হৃদয় হরিণী কোথাকার।

হঠাৎই ভিয়ানের দামি ফোনটা ভোঁ ভোঁ শব্দ তুলে কাঁপতে থাকলো।অসময়ে কে ফোন করেছে ভেবেই ভ্রু কুঁচকে এলো ভিয়ানের।পকেট হাতড়ে ফোন বের করতেই স্ক্রিনে জ্বল জ্বল করলো পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট “তুহিন তাইয়েফ ” এর নম্বর খানা।

বৃদ্ধাঙ্গুলীর সহায়তায় ফোন রিসিভ করে কানে তুলতেই তুহিন শুধালো

“কবে ফিরবেন স্যার”

“আর ফিরবো না তুহিন”

বসের মুখে এমন অদ্ভুত কথা শুনে ভরকালো তুহিন।তার বস মোটেও কোনো রসিক মানুষ নয়।ফালতু কথা বলার মতো লোক এই ভিয়ান নাওয়াফ নয়।তবে?
নিজের মনের কৌতূহল দমিয়ে তুহিন নমনীয় কন্ঠে বলে উঠলো

“সরি স্যার বুঝতে পারিনি’

স্মিত হাসলো ভিয়ান।এরপর মুখে হাসির রেখা টেনে বলে উঠলো

“আমার শাখা অফিস ঢাকায় ট্রান্সফার করার ব্যবস্থা করো তুহিন ।তোমাদের ম্যাডাম এখনো অনেক ছোট।বছর দুয়েক একটু পাল পোষ করতে হবে”

চৌকস তুহিনের মাথায় নিমিষেই ক্যচ করলো তার বস কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে।নিজেকে স্বাভাবিক রেখে তুহিন বলে উঠলো

“অফিস ট্রান্সফার সময় সাপেক্ষ কাজ স্যার”

ফিচেল হাসলো ভিয়ান।এরপর আভিজাত্য ভরা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো

“টাকা ছিটাও।জীবনে বহুত কামিয়েছি।এখন খরচ করতে চাই আমার বউয়ের পিছনে।তাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকলে দম বন্ধ লাগে।আর কোনো প্রশ্ন করো না।এক মাস টাইম দেয়া হলো তোমাকে।

অনুগতের ন্যয় ভিয়ান কে আশ্বাস দিয়ে ফোন কেটে দিলো তুহিন।ফোন টা হাতের মুঠোয় চেপে ধরে ভিয়ান বিড়বিড় করে আওড়ালো

“শুধু অফিস কেনো পারলে পুরো দুনিয়া তোমার কাছে এনে হাজির করতাম তিলোত্তমা তাথৈ নাওয়াফ”

#চলবে।