#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_২৩
#সারিকা_হোসাইন
________
দিনের মৃদু আঁচের সূর্যটা কিছুক্ষন আগেই মেঘের আড়ালে তলিয়েছে।গোধুলি লগ্নে ইলসেগুড়ি বৃষ্টি ঝড়লেও রাত বাড়ার সাথে সাথে টিপটিপে ফোটায় রূপ নিয়েছে।ঝাপসা প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে কুলাতে পারছে না কৃত্রিম সোডিয়াম বাতি।বাতি গুলো যতোই অন্ধকার দূর করবার চেষ্টা করছে ঝাপসা বর্ষণ ততোই সব কিছু ঢেকে নিচ্ছে ধুসরতায়।অসহনীয় প্যাচপ্যাচে বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটে খুব একটা মানুষের দেখা মিলছে না।আধ ঘন্টা বা এক ঘন্টা পর পর একটা করে প্রাইভেট কার নজরে লাগছে।তবুও তাদের ঘরে ফেরার খুব তাড়া।
জাকজমক ফেন্সি বার টি আজকে প্রায় মানব শূন্যই।নিয়মিত খদ্দের গুলোর দেখাও নেই আজ।মনোরঞ্জন কারী মেয়ে গুলোর দেখাও মিলছে না আজ।হয়তো কারো শয্যাসঙ্গী হয়ে শীতল বৃষ্টিতে উষ্ণতা ছড়াচ্ছে।ব্যাক বারের কোনে দুজন ব্যক্তি ইতোমধ্যে ভারী এলকোহল গিলে ভবের দেশে পাড়ি জমিয়েছে।টেবিলে মাথা হেলিয়ে আবোল তাবোল বকবক করছে তারা।
ফ্রন্ট বারের উঁচু চেয়ারে বসে নিম্ন মানের মদ গিলছে এরিক।বিশ্ৰী তেতো স্বাদের সাদা পানির দিকে তাকিয়ে একবার তাচ্ছিল্য হাসলো সে।যেখানে প্রতি রাতে বিদেশি ব্রান্ডের লাল পানি গলাধঃকরণ করে মৃদু নেশায় ঢুলুঢুলু করতে করতে রাত কাটিয়েছে সে ।সেখানে এই কম দামি সাদা বেস্বাদ পানি মুহূর্তেই তাল হারিয়ে দিচ্ছে তাকে।ছোট গ্লাসটায় দ্বিতীয় চুমুক দিতেই চোখ মুখ কুঁচকে গলা জ্বলে উঠলো।কোনো মতে ঢোক গিলে পানি টুকু পেটে চালান করে শব্দ করে গ্লাস খানা টেবিলের উপর রাখলো এরিক।এরপর তেজী কন্ঠে বলে উঠলো।।
“আমার সাথে পাঙ্গা নিয়ে খুব খারাপ করেছো তুমি পাপা।আমার গালের প্রত্যেকটা চড়ের হিসেব আমি কড়ায় গণ্ডায় আদায় করে নেবো।আমি তোমাকে ছাড়বো না।আ উইল কিল ইউ।
এরিকের এসব কথা শুনে পাশে থেকে হেসে উঠলো প্রিয়ম ।দামি একটা ড্রিংক্স এরিকের দিকে এগিয়ে ফিচেল হেসে বলে উঠলো
“এসব বাংলা মাল এরিক চৌধুরীর পেটে হজম হবে কি?
খোঁচা মারা টাইপ কথা শুনে মাথা তুলে পাশে তাকালো এরিক।শ্যাম বর্ণের উঁচু লম্বা এক বখাটে টাইপ যুবক তার পানে তাকিয়ে রয়েছে হাসি হাসি মুখে।এই যুবকের সাথে কোনো পরিচয় নেই এরিকের।কিন্তু যুবক তাকে খুব ভালো করেই চেনে।প্ৰথমে রাগ হলেও লাল পানির দিকে তাকিয়ে চোখ চকচক করে উঠলো এরিকের।বহু দিন এই পানির স্বাদ নেয়া হয়না।কোনো কিছু চিন্তা না করেই এক ঢোকে এক প্যাগ মেরে আবেশে চোখ বুজে বলে উঠলো এরিক
“থ্যাঙ্কস ইয়ার।জান টা শুকিয়ে চৌচির হয়ে ছিলো এ’কদিন।নেক্সট টাইমে এর থেকেও দামি ড্রিংক্স তোমাকে খাওয়াবো আমি,প্রমিস।
এরিকের কথায় প্রিয়ম অল্প হেসে হাতে থাকা সিরিঞ্জ টা কথার ছলে সুযোগ বুঝে ঘাড়ে পুশ করে বলে উঠলো।।
“কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয় অবৈধ চৌধুরী।তোমার ড্রিংক্স তুমিই খেও।ওসব লাল নীল পানির প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।জেই অপরাধ তুমি করেছো চাঁদু,ভিয়ান নাওয়াফ তোমার ছাল তুলে নেবে।যাতে ব্যথা না পাও তাই প্রতিষেধক দিলাম।
ঘুমে দুই চোখের পাতা ভারী হয়ে উঠলো এরিকের সহসাই।প্রিয়মের কথা গুলো শুনেও শুনলো না।মুহূর্তেই যেনো প্রতিটা নিউরন দুর্বল হয়ে উঠলো।শরীরের ভার ছেড়ে দিতেই মাঝারি সাইজের এরিক কে জাপ্টে ধরলো বিশাল দেহি প্রিয়ম।হ্যাচকা টানে কাঁধে তুলে নিজের সহকারী সজীব কে আদেশ দিলো
“কিছুক্ষন আগে দুশো টাকার বাংলা পানি গিলেছে এই চৌধুরী।বিলটা দিয়ে দ্রুত গাড়িতে আয়।
আর দাঁড়ালো না প্রিয়ম ।জনমানবহীন বারের সামনে দাঁড় করানো নিজের আধ ভাঙা মাইক্রো বাসে এরিক কে অবহেলায় পেছনের সিটে শুইয়ে ইঞ্জিন স্টার্ট করে ছুটে চললো নিজের গন্তব্যে।মালটাকে হ্যান্ড ওভার করতে পারলে মিলবে মোটা এমাউন্ট।বড় লোকদের এসব ধর পাকড়াও খেলার সঙ্গী হতে খুব পছন্দ করে প্রিয়ম ।এসব চুনোপুঁটি ধরে যদি ব্যঙ্ক একাউন্ট ভারী করা যায় তবে ক্ষতি কি?
*********
নিজের পরিচিত ফ্যামিলি ডক্টর পিটার উইলসন কে দিয়ে তাথৈ এর ট্রিটমেন্ট করানোর বৃথা চেষ্টা করে পুরো একটি রাত কাভার করে দিয়েছে রেইন।এর মাঝে মেয়েটির আরো দুবার জ্ঞান ফিরেছে এবং কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পুনরায় জ্ঞান হারিয়েছে।সারা রাত তাথৈ এর জ্ঞান ফিরেনি।নার্ভ প্রচন্ড দুর্বল।খুব ক্ষীন গতিতে শ্বাস চলছে।সকালের দিকে লোক মারফত চিন্তিত রেইন আবার ডক্টর পিটারের কাছে খবর পাঠালেন।এবার আর এলেন না প্রবীণ ডক্টর।ফোন করে এক প্রকার উঁচু গলায় বলে উঠলেন
“মি:রেইন দ্যা গার্ল নিড টু বি এডমিটেড টু দ্যা হসপিটাল।এজ ফার এজ আই নো দেয়ার ইজ নো আদার হোম ট্রিটমেন্ট ফর হার।শী ইজ ভেরি সিক।গেট রিড অফ ইউর চাইলডিস থিংকস।
কথাগুলো বলে কপাল কুঁচকে খট করে ফোনের লাইন কেটে সুইচড অফ করে ফেলে রাখলেন।বিদেশি ডক্টর এর অজানা মায়া এসে ভর করেছে মেয়েটার প্রতি।এমন কঠিন হৃদয়ের মানুষের কাছে এমন নিরীহ মেয়ে কে সোপর্দ করেছে তা ভেবে পেলেন না পিটার।শধু মনে মনে বলে উঠলেন
“হাই জেসুস সেভ দ্যা চাইল্ড।
পিটারের এমন রাগান্বিত কন্ঠে কিছুটা ক্ষিপ্ত হলো রেইন।কিন্তু পরক্ষনেই নেতিয়ে পরা মেয়েটির পানে তাকিয়ে কপাল স্লাইড করতে করতে বলে উঠলো
“যেখানে মেয়েটিকে আমি বাইরের আলোই দেখাতে চাচ্ছি না সেখানে হসপিটালে ডক্টর,নার্স,পেশেন্টের মুখোমুখি করতে হবে।মেয়েটি চূড়ান্ত ধূর্ত।সুযোগ পেলে অবশ্যই পালানোর চেষ্টা করবে।হসপিটালে পাঠালেও কড়া পাহারায় পাঠাতে হবে।
নিজের ভাবনা ফেলে হাতে থাকা দামি ব্র্যান্ডেড ঘড়িতে নজর বুলালো রেইন।সময় এখন সকাল সাতটা বেজে পনেরো মিনিট।হসপিটালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরো ত্রিশ মিনিট।সেখানে গিয়েও আরো কত প্যারা।হসপিটালের পরিবেশ চিন্তা করতেই বিতৃষ্ণায় মুখ তেতো হয়ে উঠলো দাম্ভিক মানুষটির।তার পক্ষে এক মুহূর্ত টেকা সম্ভব নয় ওই হসপিটাল নামক জেল খানায়।কোনো মতে মেয়েটিকে ভর্তি করিয়ে টাইট সিকিউরিটির ব্যবস্থা করে বাড়ি ফিরে আসবে সে।আজ তার অনেক কাজ।মিস্টার ফক্স এর ডিল টা নিয়েও কাজ করতে হবে।
“লোকটার কোনো কিছুর অভাব নেই তবুও দেখলে বিষন্ন অনুভূত হয়।পেছনের কাহিনী কি?লাভ কেস?ইজ দেয়ার এনিওয়ান টু হার্ট হিম?
মুহূর্তেই ভিয়ানের চিন্তা ফেলে তাথৈ এর দিকে নজর দিলো রেইন।মেয়েটার পুরো মুখশ্রী ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে।ঠোঁট গুলো গোলাপি বর্ণ হারিয়ে কালো কালো হয়ে উঠেছে।প্রাণহীন মানুষের ন্যয় চেতনা হারিয়ে দখল করেছে রেইনের বেড রুম।আহ কি লাকি গার্ল।
লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের সেক্রেটারি আর্থার কে ডেকে উঠলো রেইন।আর্থার দৌড়ে আসতেই রেইন শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“টেইক হার টু দ্যা হসপিটাল উইথ হেভি সিকিউরিটি এন্ড ওয়ান থিং..মেইক সিউর দ্যাট শী ক্যান্ট এস্ক্যাপ।
রেইনের নির্দেশ পেতেই হোম সার্ভেন্ট লিয়ানা কে আর্থার ডেকে বলে উঠলো
“প্রিপেয়ার হার”
*********
সকাল থেকেই তিহানের আড়াই বছর বয়সী ছেলে নিনাদ বিরামহীন কেঁদে চলেছে।কোনো কিছুতেই তার কান্না থামানো যাচ্ছে না।তিহানের স্ত্রী বাচ্চা কে পরখ করে বুঝতে পারলো সে পেট ব্যথায় কান্না করছে।ফুটফুটে সন্তানের কান্না বুকে এসে বিধলো বাবা মায়ের।কোনো কিছু বিবেচনা না করেই ছুটলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে।ইমারজেন্সি পেডিয়াট্রিক সার্জন দেখানো দরকার।পার্কিং এরিয়া থেকে গাড়ি বের করে যাত্রা শুরু করলো সিডনি সেন্ট্রাল হসপিটালে।
হসপিটালে আনার পর জানা গেলো বেবির ফুড পয়জন হয়েছে।বাসায় অবস্থা খারাপ হতে পারে বলে হসপিটালে এডমিট করা হলো নিনাদ কে।ছেলের চিন্তায় তিহান শ্বাস নিতেও যেনো ভুলে গেলো।স্ত্রী আর সন্তানকে কেবিনে শিফট করে হসপিটাল ফার্মেসি তে ছুটলো ডাক্তার এর লিখে দেয়া প্রেসক্রিপশন নিয়ে।লিফটের জন্য অপেক্ষা করতেই মিনিট পাঁচেক পর খুললো লিফট।লিফট ভর্তি কালো কোট পরিহিত সিকিউরিটি গার্ড দেখে অবাক হলো তিহান।তাদের সাথে একজন পেশেন্ট রয়েছে ।স্ট্রেচারে শুইয়ে রাখার কারনে সেভাবে নজর দিলো না তিহান।অবয়বে মনে হলো একটা মেয়ে শুয়ে আছে।ডক্টরস,নার্স এর দৌড়াদৌড়ি আর স্পেশাল খাতিরে তিহান বুঝলো বড়লোকি কেইস।তামাশা দেখা বাদ দিয়ে লিফট ধরে নীচে নেমে এলো তিহান।বোকা তিহান কি আদৌ জানে তার সামনে দিয়ে কাকে নিয়ে যাওয়া হলো?
********?
রাত পেরিয়ে দুপুর গড়াবার উপক্রম তবুও ঘুম ভাঙলো না এরিকের।ইকবালের ঘুটঘুটে অন্ধকার টর্চার সেলে কাঠের চেয়ারে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে এরিক কে।কিন্তু সে যেনো এই দুনিয়াতেই নেই।
ঘন্টা দুই ধরে এরিকের সামনে স্টিলের চেয়ারে বসে হকি স্টিক নিয়ে অপেক্ষা করছে ভিয়ান।কিন্তু বেচারা এরিকের উঠার নাম নেই।কীয়তখন দাঁত মুখ কামড়ে মোটা ভারী কন্ঠে ভিয়ান ইকবালের উদ্দেশ্যে শুধালো
“ওকে কি আরামের ঘুম ঘুমানোর জন্য ধরে আনতে বলেছি তোকে?সিরিয়াসলি ঘুমাচ্ছে নাকি ইনজেকশন এর ওভার ডোজে কোমায় চলে গিয়েছে সেটাই বুঝতে পারছি না।এক টেনশনের মধ্যে আরেক টেনশনের উপস্থিতি।দেবো নাকি মাথা ফা*-টি*-য়ে?
ভিয়ানের কথায় দাঁত দিয়ে নখ কেটে ইকবাল চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে উঠলো।
“কয়েক দিন ধরে ঘুমুতে পারছে না মেবি।সাইফ আজমী ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে ওই বাড়ি থেকে।মেহেরিন আন্টিও বলে দিয়েছে সে বাস্টার্ড।আসল ঘটনা এখনো অজানা।সকল কিছুর খোলাসা এরিক ই ভালো করতে পারবে।
হকি দিয়ে এরিকের শরীরের গুঁতো দিয়ে ভিয়ান বলে উঠলো
“এক বালতি পানি আন।ওকে চুবাবো।শ্বাস বন্ধ হলেই আরামের ঘুম ছুটবে।
কার্যকরী বুদ্ধি ভেবে যথাযথ পানির ব্যবস্থা করলো ইকবাল।কিন্তু পানিতে চুবানোর আগেই জ্ঞান ফিরলো এরিকের।পিটপিট চোখে চারপাশে নজর বুলিয়ে ভিয়ানের পানে তাকালো।কিন্তু কোনো পরিবর্তন হলো না মুখায়বের।তাচ্ছিল্য হেসে ধীর কন্ঠে এরিক বলে উঠলো
“সালা আজ এতো নেশা কি করে হলো?মৃত মানুষকেও জীবিত দেখছি।
এরিকের কথায় ভিয়ানের রাগ সপ্তম আসমানে উঠলো।কোনো প্রকার দরদ না দেখিয়ে ঠাস করে এরিকের বা হাত পেঁচিয়ে এক বারি বসিয়ে বলে উঠলো
“মরা মানুশ তোকে আঘাত ও করে দেখ দেখ।
ভিয়ানের আঘাত করা স্থান থেকে মুহূর্তেই ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়লো।ব্যাথা পাওয়া স্থানে নজর বুলাতেই ভুত ভুত করে চিৎকার করে উঠলো এরিক
‘ভুত ভুত।কে আছো বাঁচাও।
এরিকের এসব সস্তা নাটক সহ্য হলো না ভিয়ানের।ইচ্ছে মতো নাকে মুখে শক্ত কয়েক পাঞ্চ মেরে গমগমে কন্ঠে শুধালো
“নেশা কেটেছে?নাকি আরো দু’ঘা দেবো?
সহসাই তন্দ্রা ভাব ছুটলো এরিকের।হাত পা নাড়ানোর চেষ্টা করতেই নিজেকে বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করলো।এবার ভীত হলো এরিক।হলুদ বাতির ক্যাট ক্যাটে আলোয় ভিয়ানের চেহারা স্পষ্ট।যাকে বছর দুই আগে নিজেই গাড়ি চাপা দিয়েছে সে কি করে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে?আর যাকে বিভৎস অবস্থায় পাওয়া গিয়ে ছিলো তবে সে কে?
ভয়ানক সব চিন্তায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এলো এরিকের।বুকে সাহস বেঁধে পানি ও চাইতে পারলো না সে।এরিকের কান টেনে ধরে গর্জে উঠা কণ্ঠে ভিয়ান শুধালো
“তাথৈ কোথায়?
কি জবাব দেবে এই প্রশ্নের এরিক জানেনা।ফাঁকা মস্তিষ্ক হাতড়ে শুধু শুধালো
“তুমি কিভাবে বেঁচে আছো?
“তুই আমাকে না মে*-রে ভুল মানুষকে মেরেছিস।তাই বেঁচে আছি আমি।কিন্তু এবার তোর বোনের জামাই নই।জম হয়ে ফিরে এসেছি।তাই বাঁচতে চাইলে বল তাথৈ কোথায়?
হঠাৎই শয়তানি বুদ্ধি এসে ভর করলো এরিকের মাথায়।ভিয়ান কে নাকানি চুবানি খাওয়াতে খুব পছন্দ করে এরিক।বছর দুই আগে অনেক বার এমন হেনস্থা করা হয়েছে তাকে।এরিক জানে ভিয়ান তাকে প্রাণে মারবে না।তাথৈ কে খুঁজে বের করতে হলে তাকে অবশ্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে।তাই শয়তানি হাসি হেসে এরিক বলে উঠলো
“প্রাণ চলে গেলেও বলবো না।ইউ ক্যান কিল মি।হা হা…
#চলবে
#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_২৪
#সারিকা_হোসাইন
ভারী বৃষ্টির পর জানালার মোটা কাঁচে যেমন হিরের মতো বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি কণা লেপ্টে থাকে ঠিক তেমনি ঘর্ম বিন্দু লেপ্টে আছে ভিয়ানের সারা গায়ে।অধিক ক্রোধে চোখ দুটো অগ্নিবর্ণ ধারণ করেছে।নিঃশ্বাসের গতি হয়েছে ভার।হৃদগতি ধকধক রব তুলেছে ইকবালের সাউন্ড প্রুফ এই টর্চার সেলে।ভিয়ানের গায়ের পাতলা শার্ট স্থান নিয়েছে পরিস্কার মেঝেতে।কপালের উত্তর জমা হওয়া ঘাম হাতে মুছে হাঁপাতে হাঁপাতে এরিকের নিথর দেহের উপর ঘৃণা যুক্ত নজর বুলালো ভিয়ান।ইকবাল না থামালে আজই ওর সলিল সমাধী গেড়ে দিতো সে।কতো বড় দুঃসাহস! তাথৈ এর খুজ দিবে না!..
“ওকে তো আমি…..
আরেকবার পরে থাকা হকিস্টিক নিয়ে তেড়ে গেলো ভিয়ান।ইকবাল তার বলিষ্ঠ দুই হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে বলে উঠলো
“প্লিজ ভিয়ান কাম ডাউন।বেশি বাড়াবাড়ি হতে যাচ্ছে।হি উইল ডাই।
ইকবালের কথায় কিছুটা হুসে এসে হনহন করে ওই সেল থেকে বেরিয়ে এলো ভিয়ান।বাপ আর ছেলে একই ধরনের জঘন্য কি করে হতে পারে?সমাজের জরা এরা।ভিয়ানের মতে এদের বেঁচে থাকার অধিকার শেষ হয়েছে আরো বহু আগে।ক্ষমতা থাকলে বাপ ব্যাটা দুটোকেই ফাঁ*-সির কাষ্ঠে ঝুলাতো সে।সমস্ত কুটিলতা নিংড়ে বের করে তবেই কেড়ে নিতো তাদের জান।মেয়েটা কোন তবিয়তে আছে তার কিছুই জানেনা ভিয়ান অথচ সে শয়তানি জুড়েছে এখানে।
“আমি কি তার সাথে মশকরা করতে এসেছি?
এরিকের র*-ক্তাক্ত দেহের উপর একবার নজর বুলালো ইকবাল।এরপর ফুঁস করে শ্বাস টেনে নিজের ফোন বের করে ডায়াল করলো বন্ধু মাহিরকে।রিং হতেই ক্লান্ত কন্ঠে ফোন তুললো মাহির।হ্যালো বলে কেইস কি জানতে চাইলে ইকবাল ভীত কন্ঠে বলে উঠলো
“সাইফ আজমীর ছেলেকে ভিয়ান পিটিয়ে সেন্সলেস করে ফেলেছে।মাথা মুথা ফে*-টে একাকার।হাত টা ভে*-ঙেছে কিনা জানিনা।তাড়াতাড়ি এসে ঠিক কর এটাকে।প্রচুর ব্লি*-ডিং হচ্ছে,এভাবে চলতে থাকলে ম*-রে যাবে।আপাতত ব্লা*-ড বন্ধের ব্যাবস্থা করছি আমি।
ওপাশ থেকে মাহির বুঝলো ঘটনা কি ঘটেছে ওখানে।তবুও নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে শুধালো
“ব্যাটা কি মুখ খুলেছে?তাথৈ কোথায় আছে জানা গিয়েছে?.
ঠোঁট কামড়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ইকবাল বলে উঠলো
“প্রথম বা*-ড়ি*-টাই মাথায় মেরেছে।এবার তুই বুঝ।মুখ খুলেছে নাকি মগজ!
ইকবালের গম্ভীর কন্ঠে মাহির অনুধাবন করলো ঘটনা আসলেই খারাপ ঘটেছে।আর সময় অপচয় না করে বলে উঠলো
“পনেরো মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবো।বাসায়ই আছি।ফোন রেখে দে।আমি এসে কল দেবো।
নিজের ফোনটা পকেটে ভরে আরেকবার এরিকের পানে নজর বুলালো ইকবাল।র*-ক্তে রঞ্জিত অবস্থা।সাপের মতো পি*-টিয়েছে ভিয়ান তাকে।কিন্তু মাথায় না মেরে প্রথমেই শরীরে এগুলো থেরাপি হিসেবে দিলে গলগল করে সব উগলে দিতো।ভিয়ানকে আজ প্রথমবারের মতো ইকবালের কাছে মাথা মোটা মনে হলো।হয়তো তাথৈ এর ভাবনায় মাথা ঠিক নেই।এতো কাঁচা কাজ করার মানুষ ভিয়ান নয়।নয়তো এরিকের উপর জমানো ক্ষোভ থেকেও হতে পারে।
আর দাঁড়ালো না ইকবাল দ্রুত পদে কিচেনে এসে টুটুল কে ডেকে বলে উঠলো
“মাটিতে পরে আছে, র*-ক্ত বন্ধের ব্যবস্থা কর না হলে ওপাড়ে চলে যাবে।মাহির আসলে যা যা হেল্প চায় সব করবি।।
কথাগুলো ক্লান্ত কন্ঠে বলে প্রস্থান নিলো ইকবাল।এসব রক্তারক্তি দেখতে দেখতে টুটুল যেনো দিনে দিনে ডোমে পরিণত হয়েছে।দক্ষ রাঁধুনি থেকে দক্ষ চিকিৎসক ও হয়ে উঠেছে বটে।এইজে এখুনি সে হাতা খুন্তি ফেলে এন্টিসেপটিক আর তুলোর বান্ডেল নিয়ে ছুটবে ওই বদ্ধ করে।তার পর যত্ন সহকারে বন্ধ করে দেবে র*;ক্তের ধারা আর ছোট ছোট ক্ষততেও ব্যান্ডেজ লাগাবে।এই কৃতিত্ব কার?অবশ্যই ইকবালের।পড়াশোনা জানা থাকলে মাহিরের সমকক্ষ ই বোধ হয় হয়ে যেতো টুটুল।তখন সেলাই থেকে শুরু করে ঘচঘচ করে প্রেসক্রিপশন ও লিখতে পারতো সে।আজ পড়াশোনা না করার বেদনা এসে জাপ্টে ধরলো কম বয়সী টুটুলের।
“আজ ডক্টর হলে এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আগুন পানি ধরা লাগতো না আর সারাদিন এতো এতো মেনুও ঘাটতে হতো না।
কি যেনো মনে করে ইকবাল পুনরায় ফেরত এসে অন্যমনস্ক আবিস্কার করলো টুটুল কে।চোখ মুখ কুঁচকে গম্ভীর গলায় ধমকে উঠলো
“এই টুটুল…
ধমকের স্বরে একপ্রকার লাফিয়েই উঠলো টুটুল।এরপর কোনো বাক্য ব্যয় না করেই ছুটলো এরিকের কাছে।
********
বিভিন্ন টেস্ট,রিপোর্ট আর কন্সাল্টেনিং এর পর অভিজ্ঞ ডক্টর রেইনের উদ্দেশ্যে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো
“দেখুন মেয়েটি শারীরিক ভাবে প্রচন্ড দুর্বল।সেই সাথে নিয়মিত খাওয়াদাওয়া না করায় আলসার এর ব্যথা এসেছে।এই মুহূর্তে তার প্রচুর বেড রেস্ট আর পরিমিত খাবার খাওয়া প্রয়োজন।আর সব চেয়ে বড় যেই কথা সেটা হলো পেশেন্ট ডিপ্রেসড।
ডক্টর এর কথায় রেইনের চোখ মুখের কোনো পরিবর্তন হলো না।নীরব ভঙ্গিতে ডক্টর এর দিক তাকিয়ে শুধালো
“হুয়াট উইল হ্যাপেন নাও ডক্টর?..
ডক্টর রিপোর্টস গুলো আরেকবার চেক করে বলে উঠলো
“আপাতত কিছু মেডিসিন প্রেসক্রাইব করছি।আর দুদিন হসপিটালে এডমিট রাখবো।শারীরিক দুর্বলতা কেটে গেলেই বাড়িতে নিতে পারবেন।কিন্তু তার খাওয়া দাওয়া মেইক সিউর করতে হবে।আলসার থেকে কিন্তু পাকস্থলী ক্যান্সার পর্যন্ত হয় এটা মাথায় রাখবেন।
বিদেশি ডক্টর সুন্দর ইংলিশ ভাষায় রেইনকে সব কিছু বুঝিয়ে কিছুটা আগ্রহ দেখিয়ে শুধালো
“হুয়াট ইজ ইউর রিলেশন শিপ উইথ দ্যা গার্ল?
ডক্টর এর আকস্মিক প্রশ্নে কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমতা আমতা করলো রেইন।এরপর ফট করে বলে উঠলো।
“শী ইজ মাই ওয়াইফ”
এবার কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো ডক্টর।চোখের চশমাটা ঠিক করে প্রবীণ ডক্টর বলে উঠলো
“স্ত্রীর দিকে খেয়াল দিন।আপনার স্ত্রী মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত।তার কথা বার্তা এলোমেলো।তাকে খোলা আকাশে মেলে ধরুন।ঘুরতে নিয়ে যান।সময় কাটান বেশি বেশি এবং অবশ্যই বেশি বেশি কথা বলুন।
ডক্টর কে কিছু বুঝতে না দিয়ে এক প্রকার ব্যস্ততা দেখিয়ে উঠে গেলো রেইন।এতো কঠিন কঠিন কথা তার মাথায় ঢুকছে না।আবার মেয়েটির অসুস্থতাও বেশ পীড়া দিচ্ছে তাকে।সারাক্ষন বিজনেস মিটিং,ক্লায়েন্ট এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকে সে।এই মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাবার সময় কোথায় তার?যেখানে তাকে কিডন্যাপ করে এখানে আনা হয়েছে সেখানে খোলা আকাশে মেলে ধরার অবকাশ আছে কি আদৌ?
“মেয়েটার সাথে একবার দেখা করা প্রয়োজন।
মনে মনে ভাবে লিফট ধরে পৌঁছে গেলো কাঙ্খিত কেবিনের সামনে।দরজায় দুজন সিকিউরিটি গার্ড কঠিন পাহারায় নিয়োজিত আছে।এদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোথাও পালানো সম্ভব না।আর চাইলেই কি রেইন তাকে পালাতে দেবে নাকি?
রেইন কে দেখতে পেয়েই সিকিউরিটি বলে উঠলো
“শী ইজ স্লিপিং।
তবুও রেইন কক্ষের ভেতর প্রবেশ করলো।কেবিনে ঢুকেই আকাশি রঙের পাতলা ব্ল্যাঙকেট এ আবৃত ছোট শরীরটা নজরে এলো।এক দিনেই শোচনীয় অবস্থা হয়েছে মেয়েটির।গোলাপি ঠোঁট দুটো ফ্যাকাশে শুষ্ক হয়ে রয়েছে।মলিন হয়েছে মুখশ্রী।বুকের উপর ভাঁজ করা শীর্ন হাত টায় স্যালাইন পাস হচ্ছে ধীর গতিতে।এক মুহূর্তের জন্য নিজেকে বেঁশ অপরাধী মনে হলো রেইনের।কিন্তু পরক্ষণেই নিজের দাম্ভিকতায় সেই অপরাধ বোধ গুঁড়িয়ে বলে উঠলো
“কোন ভুল করিনি আমি।নিজের পছন্দের জিনিস হাসিল করা কোনো অপরাধ নয়।মেয়েটি আমার দৃষ্টি কেড়েছে।তাই তাকে আজীবন আমার দৃষ্টির সীমানায় কাটাতে হবে।পাক সে কষ্ট।মরে তো আর যাচ্ছে না।
কথা গুলো বলে পুনরায় মলিন মুখটার কাছে এগিয়ে গেলো।হাতের উল্টোপিঠে জ্বর পরিমাপ করার চেষ্টা করলো।উষ্ণতা স্বাভাবিক ই ঠেকলো।গায়ের কম্বল টা ভালো করে টেনে দিলো রেইন
“কি জাদুই না করেছো তুমি আমাকে।নিজেকে নিজেই চিনতে পারছি না।তোমার জন্য বড় বড় বিজনেস মিটিং ফেলে উন্মাদের ন্যয় হসপিটালের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছি।অথচ কোনো ব্যস্ততা আমায় ছুতেই পারছে না।তবে কি তোমার মধ্যেই আমার সর্বনাশ নিহিত?আয়াজ আমিরের জীবনের গতি কি এখনই থেমে যাবে?যাই হোক মন্দ লাগছে না।
আর দাঁড়ালো না রেইন।নিজের জরুরি কিছু কাজ রয়েছে।সেগুলো করতে হবে তাকে।এদিকে মেয়েটিকে টুরিস্ট ভিসায় আনা হয়েছে।সেটাও টাকা ছিটিয়ে পারমন্যান্ট করতে হবে।না হলে সময় ফুরাবার সাথে সাথেই তাকে আবার দেশে পাঠাতে হবে।এতো বড় রিস্ক কিছুতেই নিতে পারবে না সে।আজই ভিসা অফিসে কথা বলতে হবে।
*******
পেরিয়ে গেছে একটা দিন।হসপিটালের বিছানায় আধ শোয়া হয়ে বসে আছে তাথৈ।রেইনের বদ্ধ কামরার চাইতে এই হসপিটাল অনেক ভালো লাগছে তার।এটলিস্ট শান্তিতে শ্বাস নেয়া যাচ্চে।পরিচিত মানুষ না হলেও ডক্টর নার্স দের দেখা পাওয়া যাচ্ছে।তাদের সাথে কথা বলা যাচ্ছে এই তো অনেক।মুহূর্তেই রেইন নামক লোকটির প্রতি চূড়ান্ত ঘৃণা আর বিতৃষ্ণা এসে ভর করলো তাথৈ এর মনে।কোন অধিকারে লোকটি তাকে আটকে রেখেছে সে নিজেও জানে না।কিন্তু যেই আশা সে বুকে বেঁধেছে দেহে এক বিন্দু প্রাণ থাকতে কখনো সেই আশা পূরণ হতে দেবে না তাথৈ।
ভিয়ানের সুন্দর মুখটা মনে পড়তেই ছলছল হলো চোখ দুটো।নোনা জল গড়িয়ে পড়ার আগেই তা রোধ করে দুর্বল কন্ঠে তাথৈ বলে উঠলো
“আমি ভালো নেই ভিয়ান।প্লিজ সেভ মি বিফোর আই ডাই।
কিছু সময় গড়াতেই একজন সুন্দরী অল্প বয়সী নার্স প্রবেশ করলো কেবিনে।তার সাথে একজন হেল্পিং এসিস্ট্যান্ট এলো একটা হুইল চেয়ার নিয়ে।নার্সটি তাথৈ এর শুকনো মুখের দিক তাকিয়ে মুচকি হাসি উপহার দিয়ে উইশ করলো
“গুড মর্নিং লিটল এঞ্জেল।হ্যাভ এ গুড ডে।
এরপর হাতের ক্যানলা চেক করে মেয়েটি আবার বলে উঠলো
“লেটস গো টু দ্যা গার্ডেন।ইটস টাইম টু রিল্যাক্স।
********
হসপিটালের বৃহৎ এরিয়ার এক পাশে ভর্তিরত সকল অসুস্থ বাচ্চারা খেলছে আর অনাবিল আনন্দে খিলখিলিয়ে হাসছে।সেই সুন্দর খেলা আর প্রণোচ্ছল হাসি উপভোগ করছে অন্যান্য পেশেন্ট রা।এখানে কেউ কেউ মৃত্যু পথযাত্রী ও বটে।হুইলচেয়ার আর দৃষ্টি এই দুটিই প্রধান সম্পদ তাদের।জীবনের বাকি দিন গুলো হসপিটালের বদ্ধ কামরায় কাটলেও সকাল বিকাল যেই আনন্দ আর খুশির রোশনাই তারা দেখতে পায় মৃত্যুর আগে এটাই অনেক বড় প্রাপ্তি।
হুইল চেয়ারে করে তাথৈকেও সেই দলে শামিল করা হলো।সবাই বাচ্চাদের আনন্দ দেখতে ব্যস্ত।বাচ্চাদের আনন্দে মুহূর্তেই তাথৈ এর মনের সকল বিষাদ কেটে গেলো।বুকের ভেতর এর শক্ত ভারী পাথরটা যেনো কিছুটা হালকা হলো।মানুষ ঠিকই বলে,শিশুরা সত্যিই বেঁচে থাকার নতুন প্রেরণা।
তিহানের ছেলে নিনাদ কিছুক্ষন পর এসে সেই দলে যোগদান করলো।আজ তিহান আসেনি।অফিসে জরুরি মিটিং আছে।দুপুরের দিকে নিনাদের রিলিজ হবে।তিহানের স্ত্রী বাচ্চাটিকে অন্য সকল বাচ্চাদের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে কাছে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে লাগলো সেই খেলা।হঠাৎই নিনাদ একটা প্রজাপতি দেখতে পেলো।
এবং খেলা রেখে সেটার পেছনেই দৌড়াতে লাগলো।তিহানের স্ত্রী তূর্ণা একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার।ছেলের এই দৃশ্য বেশ মনে ধরলো তার।চারপাশের কোনো কিছুই খেয়াল না করে ছেলের এই সুন্দর মুহূর্ত ক্যাপচারে ফোকাস দিলো সে।এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে সফল ও হলো।
ছবিটা এতো সুন্দর এসেছে সে তূর্ণা নিজের ফেসবুকে শেয়ার না করে থাকতে পারলো না।
ছবির ক্যাপশনে লিখলো
“টু বাটারফ্লাইস টুগেদার।
ছবিটা নিজের ওয়ালে পোস্ট করে ট্যাগ করলো তিহান সহ নিজের ক্লোজ ফ্রেন্ড দের।মুহূর্তেই সেই ছবিতে লাইক কমেন্টস এর ঝড় উঠলো।
*******
রাতের আধারের সাথে মিলিয়ে ব্যাথায় চিনচিনে হয়ে উঠেছে ভিয়ানের দগ্ধ হৃদয়।আজ প্রায় সপ্তাহ খানেক হতে চললো অথচ তাথৈ এর কোনো খবর জানা যাচ্ছে না।কোথায় আছে কি করছে সেটাও অজানা।এরিক মুখ না খুললে সকল আশা নিরাশায় পরিণত হবে।এরিকের বিদঘুটে নোংরা চেহারাটা দেখলেই রাগের নিয়ন্ত্রণ হারায় ভিয়ান।ওকে মেরে চাটনি বানাতে ইচ্ছে করে তার।কিন্তু এখন তার মনে হচ্ছে এটা মোটেও রাগের নিয়ন্ত্রণ হারানোর সময় নয়।এরিককে তার খুব প্রয়োজন।এরিক ছাড়া তাকে পথ দেখানোর কেউ নেই।দরকার পড়লে এরিকের পা ধরবে সে।তবুও তার তাথৈ এর ঠিকানা চাই।
নির্ঘুম রাতের দীর্ঘতা কমানোর জন্য নিজের ফেসবুকে ঢু মারলো ভিয়ান।যদিও সে এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় রেগুলার না।তবুও এটাকেই সময় কাটানোর উত্তম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলো সে।
স্ক্রলিং করতে করতে হঠাৎই তিহানের কাছে ট্যাগ করা ছবিটায় নজর আটকালো ভিয়ানের।নিনাদের উচ্ছল মুখের দিকে তাকিয়ে বুক ভেঙে কান্না পেলো তার।সেই সময় তাথৈ তার হলে আজ তাদের ঘরেও এমন ফুটফুটে এক সন্তান থাকতো মেবি।ভিয়ান কতোটা বাচ্চা সুলভ এটা তাথৈ জানতো।সেজন্য তাথৈ প্রায়ই লজ্জায় রাঙা হয়ে বলতো
“বিয়ের প্রথম বছরেই আমরা একটা বেবি নিয়ে নিবো।তুমি আমি আর আমাদের বেবি।হ্যাপি ফ্যামিলি হবে আমাদের তাইনা বলো?
ছবিটায় বার কয়েক নজর বুলিয়ে নিচের দিকে স্ক্রল করলো ভিয়ান।পুনরায় কি যেনো মনে করে সেই ছবি বের করলো।এরপর ছবিটা জুম করতেই বুক কেঁপে উঠলো বজ্রমেঘের ন্যয়।গভীর চক্ষুদ্বয় যেনো বাধা হীন হলো।কেঁপে উঠলো লালচে ঠোঁট জোড়া ও।নিজের চোখ দুটোকে বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে।ফোনের স্ক্রিনে হাজারো চুমু একে ভিয়ান অস্ফুট স্বরে ডেকে উঠলো
“তাথৈ আমার জান”
চলবে……