ধরিয়া রাখিও সোহাগে আদরে পর্ব-০৮

0
262

#ধরিয়া_রাখিও_সোহাগে_আদরে
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_আট

“যাকে ডিভোর্স দিয়েছো তার কাছে ফিরে আসতে চাইছো? তুমি ছ্যাচড়া মেয়েদের কাতারে পড়ে গেল, মেহরিশ?”
আহিলের মুখোমুখি বসে আছে মেহরিশ। আহিল উপরোক্ত কথাটি বলতেই মেহরিশ হেসে ফেলল। আহিলের চোখে চোখ রেখে হাস্যজ্বল বাক্যে বলে উঠল,
“আমি কি আপনাকে বলেছি যে, আমি আপনার কাছে ফিরে যেতে চাই?”
“কিন্তু তোমার কথায় তাই বুঝায়।”
“আপনি একটু বেশিই বুঝেন, মিস্টার আহিল। আপনি হয়তো মেহরিশকে এখন চিনতে পারেননি। মেহরিশ ইউজলেস, সেকেন্ডহ্যান্ড জিনিস ব্যবহার করেনা।”
আহিল রেগে তাকাল। গর্জে উঠে বলল,
“ইউজলেস, সেকেন্ডহ্যান্ড কাকে বলছো তুমি?”
“অবশ্যই আপনাকে, আহিল।”
“মেহরিশ, মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ।”
“স্যরি, মিস্টার আহিল। আমি সব সামলাতে পারলেও মুখের ভাষাটাই সামলাতে পারিনা। আর আপনার ক্ষেত্রে তো আরো সম্ভব না।”
আহিল চোখ গরম করে তাকাল। বলে উঠল,
“তোমার তো দেখি এখন মুখে ফুল ফুটেছে?”
মেহরিশ হাসল। হেসে বলল,
“ফুল তো আগেই ছিল এখন তো ফুলের সাথে কাটা ফুটেছে। তাই আমি কথা বললেই অন্যের গায়ে কাটা ফুটে যায়। ইশ! সো, স্যাড।”
আহিল আর কথা বাড়াল না। বুঝল এই মেহরিশ আগের বোকাসোকা মেহরিশ নেই। ওর সাথে কথা বলা মানে নিজের গালে নিজে জুতা মা°রা। আহিল সব কথা এড়িয়ে গিয়ে বলল,
“আমাকে কেন এখানে ডেকেছো?”
মেহরিশ হেসে জবাব দিল,
“এই তো এবার এসেছেন লাইনে।”
মেহরিশ হালকা থেমে সোজাসাপটা প্রশ্ন ছুড়ে মা°রল,
“আপনি কি রাস্তার কুকুর নাকি, আহিল?”
আহিল উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে পড়ল। টেবিলে থাবা মে°রে চিৎকার করে বলে উঠলেন,
“মেহরিশ!”
মেহরিশও কম কিসে? হাসতে হাসতে ঠান্ডা মাথায় বলে উঠল,
“নিজেই নিজেকে কুকুর প্রমাণ করে দিলেন।“
আহিল দাঁত কটমট করছে৷ রাগে শরীর কম্পিত হচ্ছে বার বার৷ উত্তেজনায় কিছু বলতেও পারছে না। সায়র পাশের টেবিলে বসে মুখ চেপে হাসছে। চাপা স্বরে নিজে নিজে বলে উঠল,
“মেহরিশ, আপনি হাসতে হাসতে মানুষ খু°ন করার ক্ষমতা রাখেন।”
মেহরিশ এবার আহিলকে শান্ত স্বরে বলল,
“মিস্টার আহিল, এটা শ্যুটিং স্পোর্ট না। তাই বেশি উত্তেজিত না হয় বসে পড়ুন। কথা আছে আমার। প্লিজ, সীট।”
আহিল নিজেকে অতি কষ্টে শান্ত করল। বসতে বসতে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি কি বুঝাতে চাইছো?”
মেহরিশ পাল্টা প্রশ্ন করে উঠল,
“আপনার বর্তমান গার্লফ্রেন্ডের থেকে দূরে থাকুন, মিস্টার আহিল। সে আমার বোন। আপনাকে সাবধানে করার জন্য এখানে ডাকা।”
আহিল অবাক পানে তাকাল। বিস্ময়ে চোখের পাতা পড়ছে না। বিস্মিত বাক্যে বলে উঠল,
“সানায়া! সানায়া, তোমার বোন মানে? তোমার বোন তো মেহনূর।”
মেহরিশ বিরক্ত হলো। বিরক্তিতে বলে উঠল,
“আপনার সাথে এত কথা বলার রুচি নেই আমার। আপনি নিজেকে রাস্তার কুকুরের সমতুল্য করে ফেলেছেন। রাস্তার কুকুর যেমন এক কুকুর ছেড়ে আরেক কুকুরের পেছনে ঘুরে। আপনিও তেমন আজ এই মেয়ে তো কাল ওই মেয়ের পেছনে ঘুরেন। এর বাজে টেস্ট কেন আপনার? ছিহ!”
বলেই উঠে দাঁড়াল মেহরিশ। আহিলকে শেষ বার সাবধান করার বাক্যে বলে উঠল,
“আহিল, সময় থাকতে নিজেকে সংযত করুন। ভুলে যাবেন না আপনিও একটা মেয়ের ছেলে, ভাই এবং একজনের বাবা। দেখবেন, এমন দিন আসবে যেদিন আপনি শূন্য থাকবেন৷ আশেপাশে, আগেপিছে কাউকে পাবেন না। তখন না রাস্তায় পড়ে থাকেন।”
বলেই মেহরিশ উঠে চলে গেল। সায়রও মেহরিশের পেছন পেছন বেরিয়ে আসলো। সায়র গাড়িতে উঠেই মেহরিশকে প্রশ্ন করল,
“সায়র কি জেনে বুঝে সানায়ার পেছনে লেগেছে?”
মেহরিশ ভাবুক স্বরে বলল,
“কিন্তু ওর মুখের ভঙ্গি বলে না জেনেই পেছনে লেগেছে। তবে কেন যেন মনে হলো আহিলের মুখে এই প্রথম অসহায়ত্ব দেখলাম।”
সায়র অবাক পানে জিজ্ঞেস করল,
“যেমন?”
মেহরিশ দীর্ঘশ্বায়া ফেলে বলল,
“বুঝতে পারছি না ঠিক। আপনি সানায়াকে কয়েকদিনের জন্য দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিন। আহিলকে আমি বিশ্বাস করিনা, যদি ও সানায়ার কোনো ক্ষতি করে দেয়।”
সায়র মত দিল মেহরিশের পক্ষে। চিন্তা গ্রাস করে নিল দুজনের মুখ।


“এই প্রথম কারোর প্রতি আমি ভীষণ ভাবে দূর্বল হয়ে পড়েছিলাম, ভাইয়া। আর সেই মানুষটা কিনা?”
সানায়ার অসহায় বাক্যে সায়র চুপ করে বসে রইল। শাহিনা বেগমের মুখেও কথা নেই। নিস্তব্ধ হয়ে বসে আছেন। সায়র শান্ত বাক্যে বলল,
“তুই কয়দিনের জন্য বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আয়। আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”
সানায়া বলে উঠল,
“ভাইয়া আহিল খারাপ মানছি। কিন্তু ও যে কখনো ভালো হবে তার কি গ্যারান্টি?”
সায়র চোখ গরম করে তাকাল। কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই শাহিনা বেগম গর্জে উঠে বললেন,
“ওই ছেলের থেকে তুই একশো হাত দূরে থাকবি। কোন সাহসে তুই সায়রের মুখের উপর এসব কথা বলছিস?”
সানায়া এবার গুমরা মুখে বলল,
“মেহরিশ আপু এত ভালো হলে এখন সায়র ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক গড়ছে কিভাবে?”
সায়রের কানে কথাটা যেতেই সায়র চিৎকার করে উঠল। চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“তুই এভাবে কথা বলছিস কোন সাহসে? তোর কি মনে হয় আমরা মিথ্যা বলছি? এতগুলো প্রমাণ দেওয়ার পরেও তুই ওই ছেলের পক্ষে কথা বলছিস? কয়দিনের পরিচয় তোদের? ৮-৯দিন তার মাঝেই এত বিশ্বস্ত হয়ে গেল যে নিজের ভাইয়ের কথা বিশ্বাস হচ্ছে না?”
সানায়া মিনমিন করে বলল,
“মেহরিশ আপু এত ভালো হলে বিয়ের আগে প্রেগন্যান্ট হলো কিভাবে?”
কথাটা বলতে দেরি সানায়ার গালে থা°প্পড় পড়তে দেরি হলো না। সায়র চিৎকার করে বলে উঠল,
“কোন সাহসে তোর মুখ থেকে এসব বাক্য বের হচ্ছে, সানায়া? মেহরিশ বিয়ের আগে প্রেগন্যান্ট হয়নি। আনায়া অবৈধ সন্তান না। আনায়া, মেহরিশ আর আহিলের ভালোবাসার ফুল। তোকে আমার বোন বলতে লজ্জা করছে। লাস্ট একটা কথা বলি, আমার খারাপ রুপটা বের করিস না। যা এখন এখান থেকে।”
সানায়া গালে হাত দিয়ে কাঁদছে। আর কিছু না বলে চলে গেল নিজের রুমে। সায়র এখনো রাগে কাঁপছে। শাহিনা বেগম ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছেন। কথা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। শাহিনা বেগম সায়রকে কিছু বলতে গিয়েও পারল না। সায়র দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
“দেখেছো মা, অন্যের মেয়ের গায়ে কাঁদা ছুড়লে নিজের গায়েই পড়ে। এক মাত্র তোমার জন্য তোমার মেয়ের আজ এই অবস্থা। ওর অধঃপতনের জন্য তুমি দায়ী।”
বলেই সায়র বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।


“ওইটুকু একটা বাচ্চা মেয়েকে কিডন্যাপ করা কি পসিবল? এ দেশের আইনকানুন সম্পর্কে তো আপনি জানেন। একবার ধরা পড়লে কি হবে ভাবতে পারছেন? আমি এ কাজ করতে পারবো না।”
রুবেল কথাটা বলতেই সামনে বসে থাকা ব্যক্তিটি বলল,
“কিন্তু আমার যে মেহরিশের মেয়েকে চাই। মেয়ে হারানোর যন্ত্রণা মেহরিশকে বুঝতে হবে।”
রুবেল পুনরায় বলল,
“একটা বছর খানেকের মেয়েকে খু°ন করার পরিকল্পনা করছেন? আপনি তো পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্ট ব্যক্তি। আমার আজ থেকে আপনার সাথে কোনো চুক্তি নেই। তবে একটা কথা শুনে রাখুন আমিও একজনের বাবা। আমি একজন বাবা হয়ে ওইটুকু একটা বাচ্চার কোনো ক্ষতি করতে দিব না। যতবার আপনি ওই বাচ্চাটার দিকে হাত বাড়াবেন ততবার আমি ঢাল হয়ে দাঁড়াব। আর মেহরিশকে তো এখন জানেন? মেহরিশ এখনো আর সেই আগের মতো ছোট নেই। এখন মেহরিশ নিজেই নিজের মেয়ের জন্য যথেষ্ট। আর আপনার আসল রুপটা যদি একবার মেহরিশ জানতে পারে তাহলে আপনাকে শেয়াল, কুকুরে ভাগাভাগি করে খাবে।”
বলেই রুবেল সেখান থেকে বেরিয়ে গেল। রুবেল বেরিয়ে যেতেই ব্যক্তিটি সামান্য হাসল। নিজে নিজেই বলে উঠল,
“কিন্তু মেহরিশকে যে ওর মেয়েকে হারাতেই হবে।”

#চলবে