প্রতিশোধের অঙ্গীকার পর্ব-১০+১১

0
514

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_দশম

দুপুরে সকলে একসাথে বসেই লাঞ্চ করে। তারপর রেস্ট নেওয়ার জন্য যে যার রুমে চলে যায়। জাভিয়ান হানিয়ার রুমে এসে ফোনে কারো সাথে কথা বলতে থাকে। হানিয়া তাকে কথা বলতে দেখে রুমে ঢুকে না,,চলে যায় সোনিয়ার রুমে। জাভিয়ান কাউকে শাসিয়ে বলে–

–পরশুর মধ্যে ওই রুমটা সুন্দর করে ডেকোরেট করে দিবে। তারপরের দিন তাকে নিয়ে আসা হবে ওইখানে। আমি আবার বলছি,,সবকিছু যেন একদম পার্ফেক্ট হয়,, নাহলে তোমার কপালে কি আছে তুমি তা কল্পনাও করতে পারছ না।

ওপাশের ব্যক্তিটি ভয়ে ভয়ে বলে–

–চিন্তা করবেন না স্যার। আপনি যেমনটা বলেছেন তেমনটাই হবে।

–হুম,,ঠিক আছে। আর রুমের বাহিরে দুটো সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দিও।

–আচ্ছা স্যার।

জাভিয়ান তার কথার মাঝেই বাহির থেকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ পায়। তাই সে তাড়াতাড়ি করে কল কাটে।

–আমি তোমার সাথে পরে কথা বলছি।

কথাটা বলেই খট করে কলটা কেটে বাহিরের দিকে হাটা দেয়। আওয়াজটা সোনিয়ার রুম থেকে আসছে বলে সে ওইদিকেই যায়। সোনিয়ার রুমের দরজাটা হা করে খোলা থাকায় সে সহজেই ভেতরে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো দেখতে পারছিলো। সেই সকল ঘটনা দেখে তার তো আক্কেল গুড়ুম।

হানিয়া আর সোনিয়া কোন একটা বিষয় নিয়ে তুমুল ঝগড়া লেগেছে। ঝগড়ার মাত্র এতটাই প্রখর যে তা চুলোচুলির পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তাদের এই ঝগড়ার আওয়াজ শুনে তাদের ভাই-মা’ও এসে পরেছে তাদের থামাতে।কিন্তু কেউ কাউকে ছাড়ছে না। জাভিয়ান এতোটা হতভম্ব হয়ে গেছে যে সে তাদের কাছে গিয়ে আটকাবে কি নিজেই হা করে তাকিয়ে তাদের চুলোচুলি দেখছে।(এত অবাক হওয়ার কি আছে আজব😒চুলোচুলির কোন বয়স লাগে নাকি?আমি আর আমার বোনও তো এখন পর্যন্ত করি😁🫣)

জাভিয়ান তার অবাকতার রেশ কাটিয়ে উঠলে দেখে অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে তাই সে তাড়াতাড়ি করে হানিয়ার কাছে গিয়ে তাকে আটকানোর চেষ্টা করে। অনেক মানা করার পরও যখন তারা থামে না তখন আবরার বলে–

–জাভিয়ান আপনি ওকে রুমে নিয়ে যান,,নাহলে এই দুই পাগল আজ থামবে বলে মনে হয় না।

জাভিয়ানও তাই করে। সে হানিয়ার পেছনে গিয়ে হাত দিয়ে কোমড় চেপে ধরে উচু করে,, তারপর সেই ভাবে করেই হানিয়াকে রুমে নিয়ে যায়। রুমে যাওয়া সময়টুকুতেও হানিয়া হাত-পা ছুঁড়তে থাকে জাভিয়ানের থেকে মুক্ত হয়ে সোনিয়াকে মারার জন্য। জাভিয়ান তাকে রুমে নিয়ে এসে পা দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দেয়,,তারপর বেডের কাছে এসে তাকে বেডে ছুঁড়ে ফেলে কোমড়ে দু’হাত রেখে হাঁপাতে থাকে। হাঁপিয়ে গেছে সে।হানিয়া বেড থেকে উঠে রুমের বাহিরে যেতে লাগলে এইবার দেয় জাভিয়ান এক সেই লেভেলের ধমক।

–এক পা যদি বেড থেকে নামিয়েছ তাহলে পা ভেঙে সারাজীবনের জন্য বেডেই বসিয়ে রাখব।

জাভিয়ানের ধমকে কাজে দেয়। হানিয়া বেড থেকে নামার আর দুঃসাহস দেখায় না। জাভিয়ান আবার ধমকে বলে–

–অ্যাই মেয়ে অ্যাই,,তোমরা না অনার্সে পড়ো তারপরেও এমন বাচ্চাদের মতো চুলোচুলি করো?? তারউপর তোমার না বিয়ে হয়ে গেছে,,তাও এমন করো লজ্জা করে না?

হানিয়া মিনমিনিয়ে জবাব দেয়–

–চুলোচুলি করার যে নির্দিষ্ট বয়স আছে জানতাম না। একদিন কলেজ থেকে আসার সময় দেখেছিলাম একটা বুড়ো কাপল,,মানে একটা বুড়ো দাদু আর উনার বউ মিলে চুলোচুলি করছিলো। তাই ভাবলাম চুলোচুলি করার কোন বয়স নেই হয়তো।

জাভিয়ান আজ যেনো জাভিয়ানের অবাক হওয়ারই দিন। সকাল থেকে সে শুধু অবাকই হচ্ছে বারবার।নিজের অবাক হওয়াটাকে পাশে রেখে গম্ভীর গলায় বলে–

–যাই হোক,,আমি এখন ঘুমাবো। ঘুম থেকে উঠে যাতে তোমাকে রুমে পাই। আর একটা চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ পেলে আমি আজই কিন্তু চলে যাব।

হানিয়া ভদ্রমেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। হানিয়া বেড থেকে নেমে জাভিয়ানকে শোয়ার জায়গা করে দেয়। জাভিয়ান শুয়ে পরে,,হানিয়া রুমের মধ্যেই টুকটাক ঘুটুর মুটুর করতে থাকে।

সে দিন সন্ধ্যায় আর রাতে বিশেষ কিছু হয় না। অবশ্য হানিয়া-সোনিয়া একটু ভয়ে ছিলো,,তাদের ঝগড়ার কথা যদি কেউ বাবাকে বলে দেয় তাহলে বাবা তাদের ভীষণ বকা দেবে। আসলে তখন তাদের বাবা বাসা ছিলেন না। ডাক্তার তাকে খাবারের পর দশমিনিট করে হাঁটতে বলেছেন বলে তখন সে বাহিরে ছিলো যখন তারা ঝগড়া করেছিলো। তার বাসায় আসার আগেই তাদের ঝগড়া থেমে গিয়েছিলো বলে সে জানে না।

শীত শীত থাকায় সকলেই তাড়াতাড়ি রাতের খাবার সেড়ে নেয়। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে যায়। হানিয়া রুমে এসে বিছানা ঠিক করে জাভিয়ানকে ঘুমাতে বলে নিজে বালিশ নিয়ে সোনিয়ার রুমে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়,,তখনই জাভিয়ান তাকে থামিয়ে দেয়।সে তাকে জিজ্ঞেস করে–

–কই যাচ্ছ?

–ঘুমাতে যাচ্ছি সোনিয়ার রুমে।

–কেন এই রুমে কি হয়েছে?

হানিয়া একহাত দিয়ে বালিশটা চেপে ধরে আরেক হাত নিজের কোমড়ে রেখে বলে–

–আমরা তো আপনাদের মতো এতোোোোোোো বড়লোক না তাই আমাদের রুমে সোফাও নেই। আর এই ঠান্ডার মধ্যে আমি যদি নিচে বিছানা করে থাকি তাহলে কাল সকালে উঠে আমাকে “ফ্রিজড হানিয়া” হিসেবে পাবেন। আপনি চাইতেই পারেন আমি অসুস্থ হয়ে মরে-টরে যাই,,কিন্তু ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমি এতো তাড়াতাড়ি মরতে চাই না। তাই শোয়ার জন্য সোনিয়ার কাছে যাচ্ছি।

হানিয়া একদমে কথাগুলো বলে পুনরায় পা চালাতে শুরু করে। জাভিয়ান তাকে আটকাতে চেয়েও পারে না। কোন এক অদৃশ্য বাঁধা তাকে কাজটি করতে দেয় না। হানিয়া চলে যায় রুম থেকে,,জাভিয়ানও শুয়ে পরে। কিন্তু আজ আর তার ঘুম আসছে না। বিয়ের পর থেকে হানিয়াকে দেখেই তার দিন শুরু হয় আর হানিয়াকে দেখেই তার দিন শেষ হয়। কিন্তু আজ তারা আলাদা থাকছে,,এই বিষয়টা কেন যেন জাভিয়ানের অবচেতন মন মানতে নারাজ।

অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করে জাভিয়ান তাও ঘুম আসে না। একটু পর রুমে কারো প্রবেশের আভাস পেয়ে সে পেছন ফেরে। হানিয়া? ও আবার চলে আসল কেন? কথাটা নিজের মাঝে না রেখে জিজ্ঞেসই করে ফেলে হানিয়াকে।

–কি ব্যাপার ফিরে এলে যে?

হানিয়া মুখ গোমরা করে বলে–

–আম্মু বকে পাঠিয়ে দিলো। বলে নাকি বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকতে হয় না রাতে। এটা কোন কথা বলেন?

কেন জানি জাভিয়ানের মনটা খুশি হয়ে যায়। মনে মনেই সে তার অপছন্দের বউয়ের মাকে ধন্যবাদ দেয় কাজটা করার জন্য। হানিয়া তাকে বলে–

–আপনি ঘুমাননি কেন?

–এমনি। নতুন জায়গায় আমার ঘুম আসে না সহজে(ডাহা মিথ্যা কথা)

–ওহ্হ।তা তুমি এখন কই শুবে?

–কোথায় আর শুবো। চেয়ারে বসেই রাতটা কাটাবো। আপনি তো আর আমার সাথে বেড শেয়ার করবেন না। বসে বসেই রাতটা পার করতে হবে।

হানিয়া ইচ্ছে করেই কথা গুলো বলে,যদি জাভিয়ান তার সাথে বেড শেয়ার করে তাহলে তো ভালোই। অন্য দিকে জাভিয়ানের কেমন একটা খারাপ লাগে হানিয়ার কথাটা শুনে। সে ভাবে হানিয়ার রুমেই তার বেডেই নাকি সে হানিয়াকে শোয়ার পারমিশন দিচ্ছে না। বিষয়টা ভালো দেখায় না। সে আর কিছু চিন্তা না করেই বলে দেয়–

–বেডে এসে শুতে পার,, কিন্তু শুধু মাত্র আজকে জন্য। আর কোনদিন আমি বেড শেয়ার করব না তোমার সাথে।

কথাটা বলেই অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পরে।হানিয়া তো এমন একটা কথারই অপেক্ষায় ছিলো,,তাই সে জাভিয়ানের পারমিশন পেতেই ধপ করে গিয়ে তার পাশে শুয়ে পরে। হানিয়ার বেডটা বেশি বড় না হওয়ায় দুজনেরই দুজনের শরীরে স্পর্শ লাগছে। জাভিয়ান দাঁত-মুখ খিঁচে চোখ বন্ধ করে আছে। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে তার। এই অস্বস্তির মধ্যেই একসময় ঘুমিয়ে পরে তারা দু’জন।

~চলবে..?!

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_এগারো

অফিসের কলিগের সাথে কথা বলে রুমে আসে আবরার। এসে দেখে তার বউ আয়নার সামনে বসে হেলেদুলে নাইটকেয়ার করছে। সে বেলকনির দরজা দাড়িয়ে ভাবতে থাকে–

–আগেকার মনিষীরা ঠিকই বলে গিয়েছেন। অল্প জলের মাছ বেশি জল পেলে এমনই লাফায়। হায় রে,,কোথায় ছিলো আর কোথায় এসেছে।উপরওয়ালই ভালো জানেন ভবিষ্যতে কোথায় যাবে।

কথাটা ভেবে আবরার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর হেটে চলে যায় বেডে। চোখ বন্ধ করে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে তার হৃদমোহনীর কথা। চোখের পাতায় ভেসে উঠে নদীর জলের ন্যায় শান্ত এক মানবীর ছবি। নিমিষেই আবরারের মনটা শান্ত হয়ে যায়।ভাবতে থাকে আজ থেকে তিনবছর আগের কথা।

______________________

৩বছর আগে~~

সেইবার আবরার পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের নিয়ে কক্সবাজারে গিয়েছিলো ঘুরতে। সমুদ্রে পাড়ে যখন বন্ধুরা মিলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল তখনই এক অপরিচিত রমণীর হাসির কলকল আওয়াজে এক মুহূর্তের জন্য তার হৃৎস্পন্দন থেমে যায়। বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি থামিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে আশেপাশে খুজতে থাকে হাসির উৎস দাতাকে। বেশি খোঁজ করতে হয় না তাকে,,তার থেকে কদম দশেক দূরেই হাসির মালিককে খুঁজে পায়। খুঁজে পায় তার হৃৎস্পন্দন থামিয়ে সেই রমনীটিকে। তারপর? হুট করেই গায়েব হয়ে গেলো রমণীটি। হারিয়ে গেলো মানুষের ভীরে।

______________________

বর্তমান~

নিজের পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে ভাবনার জগতে থেকে বাস্তবে ফিরে আবরার। এশা(আবরারের বউ) তার পাশে এসে শুয়েছে। ঘুমানোর উদ্দেশ্যে শুলেও না ঘুমিয়ে ফোন চালাচ্ছে। কারো সাথে চ্যাট করছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে। আবরার তার দিকে ধ্যান না দিয়ে ঘুমানোর ট্রাই করে। কিছু সময় পর ঘুমিয়েও যায়। ঘুমায় না এশা। সে তখন ব্যস্ত তার এক বান্ধবীকে আজকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বলতে। তাদের কথার কেন্দ্রবিন্দুতে আজ আছে জাভিয়ান। হ্যাঁ,,জাভিয়ান। লুজ ক্যারেক্টারের এশা বিশাল আকারের ক্রাশ খেয়েছে জাভিয়ানের উপর। সেটা নিয়েই কথা বলছে এশা আর তার বান্ধবী লিজা।

–বান্ধবী,, আমার ননদ টার ভাগ্য সেই রে। যেমন দেখতে বর তেমনই তার ঘর। ছবি পাঠাচ্ছি দাড়া তোকে।

সেম ক্যারেক্টারের হওয়ায় লিজাও ক্রাশ খায় জাভিয়ানের উপর।

–আসলেই দোস্ত, সেইইই দেখতে মা*লটাকে। দেখ না আমার একটা ব্যবস্থা করতে পারিস নাকি।

–সম্ভব না রে। যদি এখানে থাকতাম তাহলে হয়ত একটু চেষ্টা করে দেখতাম কিন্তু সেই কপাল কি আছে আমার। দু’দিনর পর আবার সেই চলে যেতে হবে রাজশাহী। ভাল্লাগে না আর। তুই তো জানিসই ওখানে গেলেই আমার জন্য ভালো। এখানে আসলে আর্দশ বউ হওয়ার নাটক করা লাগে।

–হুম বুঝতে পারছি। তোর কিছু করা লাগবে না,,শুধু পারলে একটু নাম্বারটা মেনেজ করে দিস।

–আচ্ছা তা হয়ত করতে পারবো।

–ধন্যবাদ দোস্ত। তা ফাহিম ভাইয়ার খবর কি দোস্ত?

–কি আবার। ও বলছে আর ছয়মাস এই বিয়ের সম্পর্কটা চালিয়ে যেতে,,ততদিনে ও একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে ফেলবে। তারপর আমি এই হাঁদারাম(আবরারের দিকে তাকিয়ে) টাকে ডিভোর্স দিয়ে ওর কাছে নিয়ে যাবে আমাকে।

–যাই বলিস না কেন দোস্ত,,তোর বরটা আসলেই হাঁদারাম,, নাহলে বিয়ের দু’বছর হয়ে যাওয়ার পরও নাকি কেউ অন্যের প্রেমিকাকে পালে। ভাবা যায়?(কতগুলো হাসির ইমোজি দিয়ে ব্যঙ্গ করে কথাটা বলে)

–ঠিক বলেছিস। আমার তো মাঝে মধ্যে সন্দেহ হয়,,ভেতরের যন্ত্রপাতি সব ঠিক আছে তো তার?(আবরারকে হেয় করে কথাটা বলে এশা)

–আচ্ছা দোস্ত ঘুমা এখন। কাল কথা হবে,,সকালে আবার ভার্সিটি যেতে হবে।

–আচ্ছা। বায় দোস্ত।

–বায়।

আজ এই পর্যন্ত গিবত করে নিজেদের থেকে বিদায় নেয় এশা আর লিজা নামক দুই চরিত্রহীন রমণী।

_______________________

এইবার নভেম্বরে এক অজানা কারণে তেমন একটা শীত পরছে না ব্যস্তার নগরী ঢাকাতে। অবশ্য ভোরের দিকে মোটা কথা না নিলেই নয়। জাভিয়ানের গরম বরাবরই বেশি,,সেই দিক দিয়ে হানিয়া শীতল রক্তের প্রাণী(একদম আপনাদের লেখিকা আপার মতো🐸)। যেখানে জাভিয়ান কাঁথা ছাড়াই হালকা স্পিডে ফ্যান ছেড়ে দিব্যি ঘুমাচ্ছে সেখানে হানিয়ার যেন হাড় কেঁপে যাচ্ছে ঠান্ডায়। তার গায়ে কাঁথা থাকা স্বত্বেও শীত মানছে না। একটু উষ্ণতার জন্য হাঁতড়াতে হাতড়াতে জাভিয়ানের কাছে চলে যায়।জাভিয়ান তার দিকেই মুখ করে শুয়ে ছিলো। হাতে উষ্ণ কিছুর পরশ পেতেই সেটাকেই আঁকড়ে ধরে নিজের শীত কমাতে চায় হানিয়া। একসময় জাভিয়ানের একদম কাছে গিয়ে তার বুকের সাথে লেপ্টে যায়।

ঘুমের মধ্যে নিজের বুকে কারো অস্তিত্ব অনুভব হওয়ায় জাভিয়ানের ঘুমটা ভেঙে যায়,,কিন্তু ছাড়ে না। ছাড়বেই বা কিভাবে,,মাত্র বাজে ভোর ছয়টা। সূর্যটাও আজ উঠেনি এখনো। জাভিয়ান হালকা একটু চোখ খুলে দেখে হানিয়া তার বুকের সাথে লেপ্টে আছে একদম বিড়াল ছানার মতো। চোখটা আরেকটু খুলে দেখে,, হালকা করে কাঁপছেও। বুঝতে পারে শীত লাগায় কাঁপছে হানিয়া। তারও অল্পবিস্তর শীত লাগছে। তাই বেশি কিছু চিন্তা না করে হানিয়ার কাঁথায় ঢুকে পরে জাভিয়ান। হানিয়ার মাথাটা নিজের হাতের বাহুতে রেখে তার এক হাত দিয়ে হানিয়ার মাথাটা চেপে ধরে নিজের বুকের মধ্যিখানে,,আরেক হাত পিঠে রেখে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে হানিয়াকে।কাথাটা হানিয়ার মাথা পর্যন্ত ঢেকে দেয়। তার সেই অবস্থাতেই আবার নিদ্রাপরীর কোলে ঢলে পরে। হানিয়া জাভিয়ানের বুকের উষ্ণতা পেয়ে আরে গভীরভাবে ডুবে যায় নিদ্রাতে। তাদের বিয়ের এতোগুলো দিন পর আজ তারা এতোটা কাছে আসলো, অথচ তা হলো তাদের অচেতন অবস্থায়। জেগে থাকলে কি পারত তারা নিজেদের এতটা কাছাকাছি আসতে?

_______________________

সকাল সাড়ে আটটায় ঘুম ভাঙে হানিয়ার। নিজেকে একটু উষ্ণ জায়গায় পেয়ে খানিক অবাকই হয়। সে বু পারে না এতটা উম পাচ্ছে কোথা থেকে সে। মিনিট দুয়েক পর বুঝতে পারে এটা কারো শরীরের উম। রুমে তো সে আর জাভিয়ান ছাড়া আর কেউ নেই,,তাহলে কি সে জাভিয়ানের কাছাকাছি শুয়ে আছে?

কথাটা ভাবতেই হানিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। নিজের মাথার উপর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে দেয়। হ্যাঁ,,যা ভেবেছিলো সে। বরংচ তার ভাবনার চেয়েও বেশি কাছে শুয়ে আছে হানিয়া। জাভিয়ান তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। মাথাটা একটু ঘুরিয়ে দেখে শুধু জাভিয়ান না হানিয়াও জাভিয়ানকে খামচে ধরে আছে। সে ঝটপট করে নিজের হাত সরিয়ে জাভিয়ান থেকে সরতে চায়। কিন্তু জাভিয়ানের মতো একটা চালের বস্তাকে কি আর হানিয়ার মতো চিপসের প্যাকেট সরাতে পারে?( চিপসের প্যাকেট কেন বললাম আশা করি আমার পাঠক সমাজ বুঝতে পেরেছেন 🤭)

বেশ কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কি করে হানিয়া জাভিয়ানকে সরাতে। জাভিয়ান না সরলেও এতে কিছুটা কাজ হয়।জাভিয়ানের ঘুমটা হালকা হয়। সে বিরক্ত নিয়ে আধো আধো চোখ খুলে হানিয়াকে ধমকে বলে–

–সমস্যা কি?? দেখছ না ঘুমাচ্ছি??

হানিয়া তাকে পাল্টা ধমক দিয়ে বলে–

–তো আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছেন এটা দেখতে পারছেন না? কালকে তো কত বড় গলায় বলেছিলেন,, আজকেই লাস্ট আর কোনদিন বেড শেয়ার করবেন না,,গায়ে জানি টাচ না লাগে। এখন কি করছেন এগুলো?

হানিয়ার কথাবার্তায় জাভিয়ানের ঘুম পুরোটাই ছুটে যায়। এবং সে এ-ও বুঝতে পারে মেয়েটার সকালের কথা মনে নেই। মনে থাকবে কিভাবে? ম//রার মতো ঘুমাচ্ছিলো তো। জাভিয়ান কথাগুলো ভেবেই রাগ উঠে যাচ্ছে। সে ঝট করে হানিয়াকে হাতের বাহু থেকে সরিয়ে বালিশে শুইয়ে দেয়,,তারপর নিজের প্রায়ই পুরোটা ভর দিয়ে হানিয়ার উপর আধশোয়া হয়৷ হানিয়া তার এমন কান্ডে হতভম্ব হয়ে যায়। জাভিয়ান তার উপর নিজের ভরটা কিছুটা ছাড়তেই হানিয়া ব্যথায় ককিয়ে উঠে বলে–

–আল্লাহ গো!!! এ কোন গন্ডারের পাল্লায় পরলাম সকাল সকাল। আমার হাড়গোড় সব শেষ করে দিল গো!

জাভিয়ান হানিয়ার কথায় মজা পেলেও তাকে গন্ডার বলায় পুনরায় রেগে যায়।কিন্তু তা প্রকাশ করে না,,বরং হানিয়ার গালে নিজের হাত দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলে–

–বধূয়া! এতটুকু ভর যদি না নিতে পার তাহলে যখন পুরোটা ভর ছেড়ে সম্পূর্ণ তোমার সাথে লেপ্টে থাকব তখন কিভাবে সইবে?

হানিয়া জাভিয়ানের কথা শুনে থ হয়ে যায়। জাভিয়ানও থতমত খেয়ে যায় কি বলতে কি বলছে আর করছে। কিন্তু সে তার ভুল স্বীকার করতে নারাজ। তারা নিজেদের কথা আর বাড়ানোর আগে দরজায় টোকা পরে। জাভিয়ান হানিয়াকে ছেড়ে দিয়ে পাশে শুয়ে পরে বুকের উপর ভর করে। হানিয়া তাড়াতাড়ি করে শোয়া থেকে উঠে নিজেকে ঠিক করে দরজা খুলে দেখে। তার ভাবী এসেছে।

সে তার ভাবীকে জিজ্ঞেস করে–

–কোন দরকার ছিলো ভাবী??

এশা তাদের ঘরে উঁকিঝুঁকি মারতে মারতে বলে–

–আসলে নাস্তার সময় হয়ে গিয়েছে,, তোমার বাবা আর ভাইয়া তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তোমরা কি এখন করবে??

হানিয়া বলে–

–উনি তো এত তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করে না। আমিও পরে উনার সাথেই করে নিব। তুমি ভাইয়া আর আব্বুকে বলে দিও তারা যাতে ব্রেকফাস্ট করে নেয়।

পেছন থেকে জাভিয়ান শোয়া থেকে উঠে নিজের টি-শার্ট ঠিক করতে করতে বলে–

–নাহ ভাবী। আমিও এখনই করবো,,আমার একটা জরুরি কাজ পরে গেছে তাই তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করেই বেরিয়ে পরব। আপনি যান,,আমরা আসছি।

জাভিয়ান এশাকে “ভাবী” আর “আপনি” বলে সম্বোধন করায় এশার মনটা খারাপ হয়ে যায়। সে মুখ গোমরা করে বলে–

–আচ্ছা তোমরা আসো।

কথাটা বলে সে হনহনিয়ে চলে যায় এশা। হানিয়াও জাভিয়ানকে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করে না,, নিজেদের মত ফ্রেশ হয়ে চলে যায় ব্রেকফাস্ট করতে।

চলবে।