প্রতিশোধের অঙ্গীকার পর্ব-১৮+১৯

0
456

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_আঠারো

–কিভাবে মারা গেলো আপু??

–“ভালোবাসায় ঠকে যাওয়া,, সইতে পারে কয়জন?
দূর্বল চিত্তের অধিকারী যে,,সে-ই দেয় আত্মহনন”

মলিন মুখে জবাব দেয় রোজি বেগম। হানিয়ার বুঝতে বাকি থাকে না কীভাবে মারা গিয়েছে স্পর্শীয়া। তার আগ্রহ হয় পুরো ঘটনা শোনার। সে রোজি বেগমকে বলে–

–মনি মা আমায় পুরো ঘটনা বলো না প্লিজ। আমি শুনতে চাই আপুর সাথে কি হয়েছিলো আর ধোকা পেয়ে মারা গেলো কিভাবে? প্লিজ বলো না,,, বলো না,,,

–আচ্ছা বলবো কিন্তু একটা শর্তে।

–কি শর্ত?? আর যেই শর্ত হোক না কেন আমি সব শর্ত মেনে নিবো। তুমি তাও বলো।

-শর্তটা হলো পুরো ঘটনা শুনে তুই এক ফোটাও চোখের পানি ফেলতে পারবি না বা মন খারাপ করতে পারবি না। যদি শর্তে রাজি হোস তাহলে আমি বলবো।

হানিয়া কয়েক মিনিট সময় নিয়ে ভাবে,,মন যে তার খারাপ হবে এটা সিউর কিন্তু ঘটনাটাও শুনতে মন চাচ্ছে। তাই আর কিছু না ভেবে সে বলে দেয়–

–ওকে ঠিক আছে। করবো না মন খারাপ।

–আচ্ছা শোন। আমি আমার ভাই মানে তোর শ্বশুরের খুবই আদরের ছিলাম। তাই সে তার আদরের বোনের লাইফ পার্টনার হিসেবেও একজন ভালো,,সৎ মনের মানুষের খোঁজ করে। বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হয় না ভাইয়াকে,,কারণ তারই বেস্ট ফ্রেন্ড আদিব আমাকে আমাকে ভালোবাসতো এবং সে একদমই ভাইয়ার মন মতো একজন ছেলে ছিলো। তো আমার বিয়ের জন্য যখন পাত্র খোজাখুজি করা হয় তখন আদিব কোনভাবে এই কথা জেনে যায়,,ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়ার জন্য সে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই ভাইয়া আর বাবাকে তার মনের কথাটা জানায়। প্রতিষ্ঠিত ছেলে,, তারউপর চেনা জানা তাই তাকে না মেনে নেওয়ার কোন কারণই ছিলো না। তার একটা অপূর্ণ দিক ছিলো,, তা হলো সে এতিম। এছাড়া বাকি সব দিক দিয়ে সে ভালো ছিলো। তো এই বিষয়টাও আমাদের বিয়ের সময় তেমন একটা ফ্যাক্ট করে না। খুবই ভালো ভাবে তার সাথে আমার বিয়েটা হয়ে যায়। ওহহ,,তোকে তো বলাই হলো না সে কোন পেশায় নিয়োজিত ছিলো??

–কোন পেশায়?

–সে পুলিশের আন্ডার কভার অফিসার ছিলো। তো বিয়ের ছ’মাস ভালোই সুখে দিন কাটে। কিন্তু তারপরই একদিন তার একটা মিশনের ডাক আসলো,,ঢাকার শহরের মাফিয়াদের গডফাদার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে মিশনটা ছিলো। চলে গেলো সে মিশনে,,আমি হয়ে গেলাম একা। সে যাওয়ার প্রথম কয়েকদিন আমাকে লুকিয়ে চুরিয়ে ফোন দিলেও দিন বিশেক পর থেকে আর ফোন দিতো না। তার বড় অফিসারদের আমি এবিষয়ে জিজ্ঞেস করলো তারা বলতো আদিব তখন যেখানে অবস্থান করছিলো সেখানে থেকে তাকে ফোন করতে চাইলে সন্ত্রা//সীরা সন্দেহ করতে পারে তাই দিচ্ছে না। তার কিছুদিন পরই জানতে পারি আমি মাঝে হবো,,আমার মধ্যেই বেড়ে উঠছে আমাদের ভালোবাসার একটা অংশ।

কথাটা বলতে বলতে রোজি বেগম চোখের পানি ছেড়ে দেন। হানিয়া তার আরেকটু কাছে এসে তার হাতদুটো নিজের হাতে নিয়ে শক্ত করে ধরে,,চোখ দ্বারা আস্বস্ত করে। তার চোখের পানি মুছে দেয়। রোজি বেগম আবার বলতে থাকেন–

–আমি যখন দু’মাসের গর্ভবতী তখন খবর পাই আমার আদিব আর নেই। কথাটা শুনে আমি কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলাম। আমার ব্রেন কথা মানতে পারে নি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। জ্ঞান ফেরার পর ভাইয়ার থেকে জানতে পারি আদিবের মিশনের একদম শেষের দিকে সে ধরা পরে যায় আর সন্ত্রা//সীরা তাঁকে অনেক অত্যাচারের মাধ্যমে মেরে ফেলেছে। একে তো প্রথমবার মা হচ্ছিলাম তারউপর এমন সময় ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেললাম এতো চাপ না হইতে পেরে ভীষণ ভাবে ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। এই ডিপ্রেশনই আমার জন্য আরেকটা দুঃখের খবর নিয়ে আসলো। আমি আমার ভালোবাসার মানুষটির শেষ চিহ্নটাও হারিয়ে ফেললাম,, মিসক্যারেজ হলো আমার। এক প্রকার পাগল হয়ে গেছিলাম সেই সময়টা। ভাইয়া আমাকে আমাদের মানে আমি আর আদিব যে ফ্ল্যাটে থাকতাম সেখান থেকে এবাড়িতে নিয়ে আসলো। এবাড়িতে এসে আমার মানসিক অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন হয় নি,,তখনই আল্লাহর আমার উপর একটু রহম হলো। ভাবীর কোল আলো করে আসলো জাভিয়ান। সদ্য নবজাতক জাভিয়ানকে যখন আমার কোলে ভাইয়া তুলে দিলো তখন মনে হয়েছিলো আমিই ওর মা। সে যে কি অনুভূতি আমি তোকে বুঝাতে পারব না হানিয়া।

হানিয়া রোজি বেগমের মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিলো বলে একটা জিনিস খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করতে পারলো যে,, যখন রোজি বেগম জাভিয়ানের জন্মানোর কথা বলছিলো তখন তার মুখে এক আলাদা প্রশান্তি ছিলো। রোজি বেগম একটু শ্বাস নিয়ে আবার বলা শুরু করেন–

–জাভিয়ানকে আমি আর ভাবী দু’জনই মিলে বড় করছিলাম,,তুই শুনলে অবাক হবি আজ তুই যেই শায়লা তালুকদারকে দেখছিস সে একসময় এমন ছিলো না। কিছু মানুষের প্ররোচনায় আজ সে এত নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়ে গেছে। জাভিয়ান হওয়ার ছ’মাস পরেই আমরা খবর পাই ভাবী আমার প্রেগনেন্ট। একটা বাবু হওয়ার এতো পরেই আবার বাবু এসে যাওয়ায় ভাইয়া ভাবী একটু চিন্তিত ছিলো,,কিন্তু আমি তাদের বুঝালাম আমি সাহায্য করবো ভাবীকে। তারা আমার কথা শুনে স্বস্তি পায় আর সেকেন্ড বেবিটা নেয়,,যে ছিলো স্পর্শীয়া তালুকদার। তালুকদার পরিবারের একমাত্র কন্যা। আমি বলেছিলাম না আমি আমার ভাইয়ের সবচেয়ে আদরের ছিলাম কেন জানিস?

হানিয়া না বোধক মাথা নাড়ায়।

–কারণ আমাদের পরিবারে মেয়েদের একটু বেশিই ভালোবাসা হয় এক অজানা কারণে। স্পর্শীয়া জন্মানোর পর ভাবী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরে,,আমিই দিনের বেশির ভাগ সময় বাবুদের খেয়াল রাখতাম। বাবুদের খেয়াল রাখতে গিয়ে আমি আমার দুঃখটা ভুলে যাচ্ছিলাম বলে পরিবারের সবাই সবটা হাসিমুখে মেনে নেয়। ছোট থেকেই আমার জাভিয়ান ছিলো প্রচন্ড মেধাবী একজন ছেলে। অন্য বাচ্চারা যখন “ক,,খ,,” শিখত আমার জাভিয়ান তখন যোগ,, বিয়োগ শিখে সুন্দর করে করতে পারত। তার এমন মেধা দেখে ভাইয়া জাভিয়ানকে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি মা করিয়ে একেবারে টু’তে ভর্তি করিয়ে দেয়। জাভিয়ান আর স্পর্শীয়ার মধ্যে সাপে নেউলে সম্পর্ক হলেও দু’জন দু’জন বলতে পাগল ছিলো। ভাই বলতে বোন প্রাণ দেয় তো বোন বলতে ভাই প্রাণ দেয়। জাভিয়ানের এসএসসি কমপ্লিটের পর ভাবীর জোরাজুরিতে জাভিয়ানকে পড়ালেখার জন্য দেশের বাহিরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জাভিয়ানের ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও সে যায় আর এদিকে ভাই দূর দেশে পড়তো যাওয়ায় স্পর্শীয়া একা হয়ে যায়। তখন সে তার বন্ধু হিসেবে বেছে নেয় আমাকে। স্কুল,, কলেজে যাই হতো না কেন আগে এসে মাম্মামকে তার বলা লাগবেই। এভাবেই সুখে শান্তিতে আমাদের দিন কাটছিলো। কিন্তু অশান্তি মেঘ দেখা দেয় তখন যখন স্পর্শীয়া অনার্সের শেষ বর্ষে উঠে। প্রায় ওকে আমি গভীর রাতে কারো সাথে কথা বলতে দেখতাম, একা একাই মিটমিটিয়ে হাসতো যা সবগুলো প্রেমে পরার লক্ষণ ছিলো। একদিন ওকে আমি এই বিষয়ে কঠিন ভাবে জেরা করলে সে স্বীকার করে সে প্রেম করছে। ভালো কথা,,মেয়ে বড় হয়েছে নিজের ভালো বুঝতে শিখেছে।আমি তাকে বললাম,,তার ভালোবাসার মানুষটিকে বলতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাসায় আসতে। সে বলে এখনি প্রেম শুরু করলাম কয়েকটা দিন যাক তারপর বলবে বিয়ের কথা। আমি প্রথমে মানতে নারাজ হলেও সে একটু কান্নাকাটি করায় মেনে যাই। কিন্তু এটাই যেন আমার জীবনের চরম ভুল ছিলো।

এতগুলো কথা একসাথে বলায় রোজি বেগম একটি হাঁপিয়ে উঠে। হানিয়া তাকে এক গ্লাস পানি এনে দেয়। সে সেটা পান করে।

~চলবে?

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_উনিশ

এতগুলো কথা একসাথে বলায় রোজি বেগম একটি হাঁপিয়ে উঠে। হানিয়া তাকে এক গ্লাস পানি এনে দেয়। সে সেটা পান করে।আবার বলা শুরু করে–

–স্পর্শীয়া সম্পর্কে জড়ানোর ছ’মাস পর থেকে তাকে একটু অদ্ভুত লাগছিলো। কেমন ছন্নছাড়া,, উদাসীন হয়ে বসে থাকতো। আমি তাকে এমন উদাসীন হয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে? কিন্তু সে আমাকে কোন না কোনভাবে কথা কাটিয়ে দেয়। এর মধ্যে খবর আসে জাভিয়ান খুব শীঘ্রই ফিরছে দেশে। বাড়ির ছেলে এতগুলো বছর পর বাড়িতে ফিরে আসবে সে এক অন্য রকমের আনন্দ হচ্ছিল। আমরা জাভিয়ানের আগমন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পরেছিলাম যে আমার যত্নে গড়া ফুলটাকে ভুলেই যাই। সে হয়ে যায় একা,,নিঃসঙ্গ। জাভিয়ান যেদিন আসবে সেদিন সকাল সকাল স্পর্শীয়া বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়,,আমি তাকে জিজ্ঞেস করি কোথায় যাচ্ছে? বলে,,কি নাকি একটা জরুরি কাজ আছে সেটা করতে যাচ্ছে,, যাওয়ার আগে আরো বলে যায় তার ভাই ফিরে আসার আগেই সে চলে আসবে। কিন্তু সেই যাওয়াই তার শেষ যাওয়া ছিলো,, আর ফিরে নি আমার ফুল।

লাস্টের কথাটা বলে রোজি বেগম হাউমাউ করে কান্না করে দেয়। হানিয়া তাকে নিজের বুকে আগলে নেয়। সময় দেয় তার কষ্টগুলো বের করার। বেশ সময় নিয়ে রোজি বেগম শান্ত হয়। হানিয়া তাকে আরেকবার পানি খাইয়ে দেয়। রোজি বেগম শান্ত হয়ে নিজে থেকেই বলে–

–আমরা সকলে জাভিয়ানকে এয়ারপোর্টে নিতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে আমাদের আগেই মানা করে দিয়েছিলো,,বলেছিলো সে আর তার দুয়েকটা ফ্রেন্ড নাকি আসবে তাদের সাথে শহর ঘুরতে ঘুরতে তারপর বাড়ি আসবো। আমরা মানতে চাই না কিন্তু তার জেদের কাছে পরাজিত হই। সন্ধ্যা হয়ে যায় কিন্তু স্পর্শ- জাভিয়ান বা তার বন্ধুদের কেউই বাড়ি ফিরে না। আমরা দুজনকেই সমান ভাবে কল দিতে থাকি কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করে না। আমি কি মনে করে আমার What’s app এ ঢুকি,,দেখি স্পর্শর নাম্বার থেকে একটা ভয়েজ মেসেজ। ভয়েজটা অন করলে শুনতে পাই স্পর্শ আমাকে বলছে–

–“মাম্মাম আজ আমি চরম ভাবে ঠকে গেলাম,,এত ভালোবাসার পরও এমন পরিনতি তো আমার হওয়ার কথা ছিলো না।”

–ব্যস এইটুকুই। ওইদিন সারা রাত চলে যায় কিন্তু জাভিয়ান বা স্পর্শ কেউ ফিরে আসে না। জাভিয়ানের খোঁজ পাই আমরা সকালে,,সেই আমাদের ফোন দিয়ে বলে সে নাকি তার কোন এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছে,,আসবে কয়েকদিন পর। কথাটা বলেই আমাদের কোন কথা না শুনেই কেটে দেয়। আমরা তাকে কিছু জানাতেই পারি না স্পর্শ সম্পর্কে। ভাইয়া পুলিশে রিপোর্ট করে কিন্তু কোন খবর পায় না। পাঁচদিন পর খবর আসে শহর থেকে একটু বাহিরের দিকে এক পুকুরে স্পর্শের লা//শ পাওয়া গেছে। আমরা ছুটে যাই খবর পাওয়ার সাথে সাথে গিয়ে দেখি,, আসলেই আমার স্পর্শ আর নেই। অনেকদিন পানিতে থাকার কারণে তাকে তেমন একটা চেনা যাচ্ছিলো না,, শরীর ফুলে যাতা অবস্থা হয়ে গেছে।শুধু তার পোশাক আর শারীরিক গঠন দেখে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম ওটা স্পর্শ ছিলো।ভাবী সইতে পারে না মেয়ের মৃত্যু,, হার্ট অ্যাটাক করে বসে। তাকে হসপিটালে এডমিট করে,,স্পর্শের বেড বডি নিয়ে আসা হয় বাসায়। জাভিয়ান কীভাবে যেন খবর পেয়ে যায় বোনের মৃত্যু আর মায়ের অসুস্থতার কথা। ছুটে আসে বাসায়,,পরবর্তীতে সেই সব দিক সামলায় শক্ত হাতে। ভেঙে পড়তে গিয়েও শক্ত থাকে পাথরের মতো। বোনকে কবরে শোয়ানোর আগে একটাই কথা বলেছিলো সে– বোন তোর এই অবস্থা যে করেছে তাকে তোর ভাই কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দিবে। তারপর থেকেই আমাদের সেই হাসিখুশি পরিবারটি হারিয়ে যায়,,যেই বাড়ির আনাচে-কানাচে খুশিরা ঘুরে বেড়াত সেখানে এখন বিষাদেরা মেলা বসায়। স্পর্শ নেই আজ দুই বছর ছ’মাসের কিছু দিন কম হবে,, এই এতোগুলো দিন পর বাড়িটায় আবার খুশি দেখা গিয়েছিলো তোদের বিয়ের সময়। তুই আসলি বউ হয়ে,,ভাইয়া একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে লাগলো। ভাবীর হতে একটু সময় লাগবে,, কারণ সে যখন হার্ট অ্যাটাক করে তখন একটা মিনি স্টোকও করে। তখন থেকেই মেজাজ কেমন খিটখিটে হয়ে গেছে তার। আর তোর সাথে এমন অমানবিক আচরণ করার পেছনে আরেকটা কারণও আছে।

–কি কারণ মনি মা?

–সোহা,,তার বোনঝি। সে ছোট থেকেই জাভিয়ানের সাথে তার বিয়ে দিতে চাইছিলো। ভাইয়াকে এই বিষয়ে বললে সে হ্যাঁ-না কিছুই বলে না। ভাবী নিজের মনে মনেই সব ঠিক করে। হুট করে কয়েকমাস আগে ভাইয়া তোর ছবি এনে জাভিয়ানকে বলে তোর সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে,,তোকেই বিয়ে করতে হবে ওর। জাভিয়ান তো সে কি রাগ,,করবে না এই বিয়ে,,কোথাকার না কোথাকার মেয়ে। এটা আসল কারণ না আসল কারণটা হলো,,জাভিয়ান স্পর্শের ডায়রি পড়ে তার সম্পর্কের কথা জানতে পারে। মূলত তার পর থেকেই তার প্রেম-ভালোবাসার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায়। সে বলেই দেয় সে জীবনে বিয়েশাদি করবে না। ছেলের এমন কথা শুনে ভাইয়া অসুস্থ হয়ে পরে। পরে জাভিয়ান বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে যায়। আমি এতদিন ভাবতাম তোর সাথে জাভিয়ান আর ভাবীর খারাপ আচরণের কারণ জাভিয়ানের সাথে জোর করে বিয়ে দেওয়া বা সোহার সাথে জাভিয়ানের বিয়ে না হয়ে তোর সাথে হয়েছে তাই।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই ছোট একটা কারণে জাভিয়ান তোকে ওইদিন ওমন কুকুরের মতো মা//রত না। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন বড় কারণ আছে।

–সে শুধু ওইদিন এমন ভাবে মারে নি। এর আগেও আমাকে ওমন ভাবে মেরেছে মনি।

মলিন হেসে হানিয়া কথাটা বলে। রোজি বেগম তার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। আগেও এমন ভাবে মেরেছে,,সেদিন না হয় রোজি বেগম দেখে তাকে উদ্ধার করেছিল কিন্তু তার আগে যখন মেরেছিল তখন মেয়েটার কি অবস্থা হয়েছিল??

সে অস্থির হয়ে বলে–

–কবে? আমায় তো কিছু বলিস নি।

–আমাদের বাসর রাতেই সে আমার গায়ে প্রথম হাত তুলেছিলো,,কিন্তু কিছুদিন আগে যে মারল না ততটা প্রখর ভাবে মারে নি। আর বলি নি কারণ তোমার আদুরে বাচ্চাটা (মুখটা বেকিয়ে বলে) আমাকে হুমকি দিয়েছিল যদি আমি কাউকে তার এমন ব্যবহার সম্পর্কে বলি তাহলে আমার অবস্থা আরো খারাপ করে দিবে। তাই বলি নি।

হানিয়ার থেকে জাভিয়ান সম্পর্কে একের পর এক চমকপ্রদ কথাগুলো শুনে রোজি বেগম ভীষণ দুঃখী হয়ে যায়। সেই তো ছোট থেকে জাভিয়ান-স্পর্শকে লালন পালন করে বড় করল,,সে তো সবসময় বলত মেয়েদের সম্মান দিতে। তার সামনে তো জাভিয়ান কখনো মেয়েদের সাথে এমন কুকুরের মতো আচরণ করে নি তাহলে নিজের বিবাহিত স্ত্রীর সাথে এমন আচরণ কেন তার? শুধুমাত্র বাবার পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করায়?

______________________

তাদের কথাবার্তার মাঝে মাগরিবের আজান দিয়ে দেয়,,তারা দু’জনে অজু করে নামাজ পরে নেয়। বাহিরে তখনও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরছে। হানিয়া ঠিক করে সন্ধ্যার নাস্তায় গরম গরম চপ আর চা বানাবে। রোজি বেগম তাকে হেল্প করতে চাইলে হানিয়া তাকে নিষেধ করে। তাও রোজি বেগম করতে চাইলে হানিয়া তাকে ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখে।

–হাঁটুর ব্যথায় কাল কে ঘুমাতে পারে নি হ্যাঁ? একটা কথা বললে কিন্তু ডাক্তারকে বলবো বড় বড় ইনজেকশন দিতে তোমাকে।

রোজি বেগম চোখ ছোট ছোট করে বলে–

–আমাকে কি তুই বাচ্চা পেয়েছিস? ইনজেকশনের ভয় দেখাচ্ছিস যে?

–বাচ্চা ভাববো কেন? তুমিতো বাচ্চাদের মা। যার তিন তিনটে বাচ্চা আছে,,তাকে কি কোন কিছুর ভয় দেখানো যায়? কিন্তু তোমাকে যায়।(কথাটা বলে হানিয়া ক্লোজআপ মার্কা একটা হাসি দেয়) কারণ তুমি আসলেই ইনজেকশন ভয় পাও।

রোজি বেগম এক প্রকার ধরা পরে যায়। তার আসলেই ইনজেকশন ভীতি আছে। এই বিষয়টা হানিয়া সেদিন জানতে পারে যেদিন রোজি বেগম তার অসুস্থতার জন্য তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন আর ডাক্তার হানিয়াকে ইনজেকশন দিচ্ছিলেন সেদিন। তারপর থেকেই হানিয়া তাকে ইনজেকশনের কথা বলে রাগায়।

রোজি বেগম নিজের হার স্বীকার করে নেন। হানিয়া খুশি মনে রান্নাঘরে চলে যায়। কুলসুম আর সে হাতে হাতে খুব কম সময়েই চপ আর চা বানিয়ে ফেলে। হানিয়া চপের প্লেটটা নিয়ে ড্রয়িংরুমে এনে মাত্রই সেন্টার টেবিলে রাখে তখনই কলিংবেল বেজে উঠে। কুলসুম তাড়াতাড়ি করে গিয়ে খুলতে গেলে হানিয়া তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে–

–তুমি চায়ের কাপগুলো নিয়ে আসো,,আমি দেখছি কে আসলো।

কুলসুম মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় সে। হানিয়া মেইনডোরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ভাবো–

–এই অসময়ে আবার কে আসলো? জাভিয়ান? কিন্তু সে তো এইসময়ে আসে না। তাহলে?

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই সে দরজার সামনে উপস্থিত হয়। আর কোনকিছু না ভেবেই সে দরজা খুলে। সামনের ব্যক্তিটিকে দেখে সে একটু অবাকই হয়। ব্যক্তি বললে ভুল হবে,,কারণ একজন নয় দু’জন এসেছে। জাভিয়ানের সাথে আরো একজনকে দেখতে পায় হানিয়া। তাকে সে চিনে না এমনকি তাদের বিয়ের সময়ও দেখে নি। হানিয়া তাদের সালাম দিয়ে দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়ে তাদের ভেতরে প্রবেশের জায়গা দেয়। রোজি বেগম হানিয়াকে জিজ্ঞেস করে–

–কে এলো হানিয়া?

হানিয়া জবাব দেওয়ার আগেই জাভিয়ান আর অপরিচিত সেই ব্যক্তিটি রোজি বেগমের সম্মুখে এসে দাঁড়ায়। লোকটি যেয়ে রোজি বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে–

–সারপ্রাইজজজজজ!! আমি আন্টি।

রোজি বেগম ছেলেটিকে দেখে প্রথমে একটু অবাকই হয় কি পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে–

–রাহাত!! তুই? কেমন আছিস বাবা?

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো ছিলাম আর এখন তোমাকে দেখে আরো ভালো হয়ে গিয়েছি আন্টি।তুমি কেমন আছো?

রাহাত ছেলেটি রোজি বেগমকে ছেড়ে তার গাল আগলে ধরে কথাটা বলে। রোজি বেগমও খুশি মনে জবাব দেয় —

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এতদিন পর বুঝি আমার কথা মনে পরলো?

–না গো আন্টি অনেক আগেই মনে পরেছিলো কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তোমাদের সাথে দেখা করতে আসতে পারছিলাম না।

–সে যাই হোক,,আয় বোস। (তারপর হানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে) ওকে চিনতে পেরেছিস?

রাহাত না বসে হেটে হানিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর নিজের গালে হাত রেখে কেমন একটা চাহনি নিয়ে বলে–

–চিনতে পারি নি কিন্তু গেস করি দাঁড়াও। ইনি আমার ভাবী মানে জাভিয়ানের বড় তাই না আন্টি??

–হুম ঠিক বলেছিস।

–কেমন আছেন ভাবীসাহেবা??

হানিয়া নিজের এতটা কাছে একটা অচেনা পুরুষকে দাঁড়াতে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে নিজেই দুই কদম পেছনে সরে গিয়ে বলে–

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া। আপনি?

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

বেশ হাসি হাসি মুখ নিয়ে কথাটা বলে রাহাত। জাভিয়ান এতক্ষণ দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনছিলো। জাভিয়ান শুনছিলো বললে ভুল হবে,,সে আঁড়চোখে হানিয়াকে দেখছিলো। কিন্তু হানিয়া একবারও তার দিকে তাকায় না। রাহাত যখন হানিয়ার কাছে দাঁড়িয়ে কেমন কেমন চাহনি নিয়ে হানিয়ার দিকে তাকায় তখন কেন জানি বিষয়টা জাভিয়ানের ভালো লাগে না। তারউপর সে হানিয়ার অপ্রস্তুত হয়ে যাওয়াটা বুঝতে পারে। সে তাদের কথাটা বাগড়া দিয়ে বলে–

–রাহাত তুমি বসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

তারপর হানিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে–

–এক গ্লাস পানি নিয়ে রুমে আসো।

এবার রাহাত জাভিয়ানের কথায় বা হাত ঢুকিয়ে বলে–

–আহা ভাবীর সাথে কথা বলছি দেখছো না? তোমায় পানিটা যদি কুলসুম দেয় তাহলে কি বেশি সমস্যা হয়ে যাবে?

বেশ দুষ্টুমি স্বরেই কথাটা বলে রাহাত। মুহূর্তেই জাভিয়ানের শান্ত মেজাজটা অশান্ত হয়ে যায়। কিন্তু সে নিজের রাগটা চেপে নেয়,,তারপর রাহাতের একদম কাছে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে–

–বুঝো না সারাদিন অফিসে গাধারখাটুনি খেটে প্রচুর এনার্জি লস হয়েছে,, তাই এখন একটু এনার্জি নেওয়ার জন্য বউটাকে রুমে না নিলেই নয়।

হানিয়া যেহেতু রাহাত আর জাভিয়ানের কাছাকাছি দাড়িয়ে ছিলো তাই সে জাভিয়ানের কথার কিছুটা অংশ শুনতে পায়। প্রথম গুলো শুনতে না পেলেও শেষের কথাগুলো শুনতে পায় আর সেগুলো শুনে সে হতভম্ব হয়ে যায়। কি ঠোঁটকাটা লোকটা মাইরি!!!

রাহাতের হাসি হাসি মুখটা চুপসে যায়। তাও সে জোড়াতালির একটা হাসি দিয়ে বলে–

–বুঝতে পেরেছি,,তোমার বউ তুমি নিবে আমি বলার কে। ইনজয় ইউর টাইম ব্রাদার।

কথাটা বলে রাহাত জাভিয়ানকে একটা চোখ টিপ দেয়। জাভিয়ান প্রতিউত্তরে তাকে সুন্দর একটা হাসি ফেরত দেয়। তারপর হানিয়াকে পুনরায় বলে–

–কাম ফাস্ট।

কথাটা বলে সে গটগট করে উপরে চলে যায়। হানিয়া পরে যায় মাইনকার চিপায়। এই এক সপ্তাহে সে একবারও জাভিয়ানের রুমে যায় নি আর না তার এখন যাওয়ার ইচ্ছে আছে। রাহাতকে বসতে বলে কুলসুমকে নিয়ে কিচেনে চলে যায়। তারপর রাহাতকে হালকা পাতলা নাস্তা দিয়ে কুলসুমকে নিয়ে উপরে যায় জাভিয়ানের রুমের উদ্দেশ্যে এক গ্লাস পানি নিয়ে। একজন বাহিরের মানুষের সামনে স্বামীর কথা অমান্য করে তাকে অপমান করার মতো শিক্ষা তার মা তাকে দেয় নি। সে জাভিয়ানের কথাটা মানবে কিন্তু তার উপায়ে। সে জাভিয়ানের রুমের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কুলসুমকে বলে —

–যাও এটা (পানির গ্লাসটা কুলসুমকে দিয়ে বলে) তোমার ভাইজানকে দিয়ে আসো। আমি এখানে দাঁড়িয়ে আছি।

কুলসুম হানিয়ার কথা মতো পানির গ্লাসটা জাভিয়ানের রুমে নিয়ে যায়। মিনিট দুয়েক পরই রুমের ভেতর থেকে গ্লাসটা ভাঙ্গার আওয়াজ আসে।

শব্দসংখ্যা~১৭০০+

~চলবে?

[দেখলেন আমি কিন্তু আপনাদের মতো কিপ্টা না।😒 আমি কত্তোোোোোো বড় করে দিলাম পর্বটা,,কিন্তু আপনারা কিপ্টামি করে একটু রিয়েক্ট কমেন্টও করেন না😔কাট্টি আপনাদের সাথে 🥲

আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু। ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং]