প্রতিশোধের অঙ্গীকার পর্ব-২৭

0
363

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_সাতাশ

হসপিটাল থেকে অনেক চেষ্টা করার পরও দুপুরের আগে ফিরতে পারে না হানিয়া। সে বাসায় আসতে আসতে দুপুর দু’টো বেজে যায়। ইনায়াই তাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছে। হানিয়া বাড়িতে ঢুকে ড্রয়িংরুমে কাউকে দেখতে পায় না। তারা দুপুর একটা বড় জোর দেড় টার মধ্যে লাঞ্চ শেষ করে ফেলে। আজ যেহেতু দু’টো বেজে গেছে আর ডাইনিং টেবিলেও কেউ নেই তার মানে সকলে খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেছে। আর জাভিয়ান যদি আসত বাসায়,, তাহলে সে এইসময় নিচেই থাকত। সে নেই মানে জাভিয়ান আজ বাসায় আসেনি লাঞ্চ করতে। সে খুশি মনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রুমে চলে যায়। পা’টা ভালো করে ঠিক হয়নি তার,,তার উপর আজ আবার একটু বেশিই হাটাহাটি করা হয়েছে। ফলস্বরূপ আবার ব্যথা করায় খুঁড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে।

রুমে এসে বোরকা-হিজাব খুলে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সকালের দিকে ঠান্ডা থাকলেও দুপুরের দিকে বেশ ভালোই গরম পরে। ঘাম ঝরানোর মতো গরম পরে। ক্লান্ত লাগার কারণে শাওয়ার নেওয়াই ভালো মনে করে হানিয়া। চটপট শাওয়ার নিয়ে অজু করে বের হয় হানিয়া। তারপর নামাজের হিজাব পরে নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ শেষ হলে জায়নামাজ আর নামাজের হিজাব গুছিয়ে রেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে যায়। চুলের টাওয়াল খুলে একপাশে সবগুলো চুল এনে কাত হয়ে চুল মুছতে থাকে। চুল মুছতে মুছতে আয়নায় চোখ পরলে তার পিলে চমকে উঠে। থমকে যায় হাত,,শুকাতে থাকে গলা।

জাভিয়ান বেলকনির থাই’য়ে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। এক পা থাই’য়ে ঠেকিয়ে বুকে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে। চোখমুখ অস্বাভাবিক রকমের শান্ত। চোখজোড়া তার দিকেই তাক করা। হানিয়া ড্রেসিং টেবিলের আয়নার মাধ্যমে জাভিয়ানকে দেখছে জাভিয়ানও তাই। হুট করে জাভিয়ান হেঁটে তার দিকে আসতে থাকে। হানিয়া ভয়ে সেখানেই জমে যায়। আজ সে বড় একটা অপরাধ করে ফেলেছে। জাভিয়ান তাকে কড়াকড়ি ভাবে মানা করে গিয়েছিলো বাহিরে না যাওয়ার জন্য,, হানিয়া সেটা অমান্য করেছে। আজ সে শেষ। কথাটা মাথায় আসতেই হানিয়া শুকনো একটা ঢোক গিলে।

জাভিয়ান হাঁটতে হাঁটতে হানিয়ার একদম পেছনে সে দাঁড়ায়। চোখ তার এখনো হানিয়ার চোখে রাখা। জাভিয়ান হাত বাড়িয়ে হানিয়ার থেকে টাওয়ালটা নিয়ে নেয়। তারপর হানিয়াকে টুলে বসিয়ে নিজেই হানিয়ার চুল মুছে দিতে থাকে। চুল মোছানো শেষ হলে সুন্দর করে আচড়িয়েও দেয়। হানিয়ার যেন আজ অবাক হওয়ার দিন। এত এত অবাক করা কান্ড আজ তার সাথে হচ্ছে যে সে সামলাতে পারছে না।

হানিয়ার চুল আঁচড়ানো শেষ হলে জাভিয়ান তাকে বসা থেকে উঠিয়ে মুখোমুখি দাঁড় করায়। হানিয়ার বাম গালে হাত রেখে আলতো করে স্লাইড করতে করতে জিজ্ঞেস করে–

–আমি মানা করার পরও বাহিরে কেন গিয়েছিলে হানি?

একে তো জাভিয়ানের এমন উদ্ভট কাজ তার উপর তার এত শান্ত স্বর,,দুটোই হানিয়ার হাড়ে হাড়ে কাঁপন ধরিয়ে দেয় ভয়ে। জাভিয়ানকে সে এখনো বেশ ভয় পায়,,তার কথা অমান্য করে সে ভীষণ রেগে যায়। আর যখন রেগে যায় তখন রাগের মাথা কি থেকে কি করে ফেলে সে নিজেও জানে না। হানিয়া ভয়ে কিছু বলতে পারে না,,শুধু ভয়ে হালকা করে কাঁপতে থাকে। জাভিয়ান আবারও জিজ্ঞেস করে–

–এন্সার মি বধূয়া। আমার কথা অমান্য করার সাহস পেলে কোথা থেকে?

সেই বিয়ের পরপর জাভিয়ান তাকে “বধূয়া” বলে ডাকত আর এতদিন পর আজ ডাকল। সম্বোধনটা তাকে একটা সুন্দর অনুভূতিতে ডুবিয়ে দেয়। বেশ ভালো লাগে তার এই ডাকটা। কিন্তু আজ হানিয়া সেই সুন্দর অনুভূতিতে ডুব দিতে পারছে না। কারণ আজ যে রাক্ষসরাজ ভীষণ ক্ষেপে আছে। হয়ত তার কপালে চরম মা’রও জুটতে পারে।

জাভিয়ান তাকে বলে–

–আমার মম খারাপ,,অনেকটা ঝগড়ুটে মহিলাও বলতে পারো। একটু মেন্টাল হেল্থেও প্রবলেম আছে,, কিন্তু তাকে আজ পর্যন্ত বাবার কোন কথার অমান্য করতে দেখেনি। বাবা আমার আর সোহার বিয়েটা মানে নি,,মম শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছে কিন্তু বাবার কথা অমান্য করে নিজের জেদ বজায় রেখে আমাদের বিয়ে দেয় নি। সেখানে আমার বউ আজ বিয়ের দু’মাস হতে না হতেই আমার এই সামান্য কথা মানতে পারলে না তুমি? এটা তোমার থেকে আশা করি নি আমি হানি। ইউ হার্ট মি টুডে ভেরি মাচ।

কথাটা বলে জাভিয়ান হানিয়াকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ায়। হানিয়া অবাক হয়ে জাভিয়ানের কথাগুলো শুনে। একটু না হয় অমান্য করেছিল কিন্তু এতে করে যে জাভিয়ান এতটা কষ্ট পাবে সে ভাবে নি। সে জাভিয়ানের কাছে এগিয়ে এসে বলে–

–আমার একটা জরুরি…..

হানিয়া কথাটা শেষ করতে পারে না তার আগেই জাভিয়ান তাকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয়। তারপর বলে–

— এক্সপ্লেইন করা লাগবে না। বসো তুমি আমি আমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

কথাটা বলে জাভিয়ান নিচে চলে যায় তাদের জন্য খাবার আনতে। হানিয়া ছলছল চোখে তার যাওয়া দেখতে থাকে।

____________________

–হ্যাঁ জানু,,বলো।

–কি করছো বাবু?

–কিছু না জান। তুমি কি করছো?

–মাত্র অফিস গেলে আসলাম।

ফাহিমের টাটকা মিথ্যা কথায় এশা নামক বলদ রমনীর ভীষণ মায়া হয় । এশার সাথে ফাহিমের চার বছরের প্রেমের সম্পর্ক। ফাহিম এশাদের এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলে। যে কিমা এক নাম্বারের বখাটে,, মেয়েবাজ আর ক্যারেক্টারলেস ছেলে। এশাও যে ভালো তা কিন্তু নয়। এসএসসির পর এই ফাহিমের সাথেই ভেগে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু পালাতে পারি নি। বাবার হাতে ধরা পরে যায়,,তার কিছুদিন পরই বাবার বন্ধুর ছেলে আবরারের সাথে এশার বিয়ে হয়ে যায়। এশার বাবা ভেবেছিলো বিয়ের পর মেয়ে হয়ত ওইদিকে আর মন দেবে না,,গুছিয়ে সংসার করবে। কিন্তু তার সেই আশায় গুড়া বালি। পরিবারের সকলের সামনে তারা সুখী দম্পতি হলেও আসলে কিন্তু তারা তা নয়। বরং এশা বাসর রাতেই তার আরও ফাহিমের কথা বলে দিয়েছে। এবং এটাও বলেছে সে ফাহিমের সাথে ফিজিক্যাল এটার্চও হয়েছে। এসব কথা শুনার পর আবরার সেই ক্ষনেই তাকে তালাক দিতে চায় আর সকলকে তাদের বিষয়ে বলতে চায়। কিন্তু এশা তার হাতে পায়ে ধরে অনেক আকুতিমিনতি করে কাউকে জানাতে নিষেধ করে,,আর বলে ফাহিমের একটা চাকরি হলেই সে নিজে সকলকে সবটা জানিয়ে আবরারকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে।

আবরার তার কথা মানতে না চাইলেও এশা পরবর্তীতে তাকে সুইসাইডের ভয় দেখালে আবরার মেনে যায়। বিয়ের কিছুদিন পরই আবরার নিজের চাকরীর জন্য রাজশাহী চলে আসে,,তার সাথে এশাকেও আসতে হয়। রাজশাহীতে এসে আবরার দুই রুমের একটা ফ্ল্যাট উঠে,, যার একটাতে আবরার আরেকটাতে এশা থাকে। এশা এতক্ষণ তার তথাকথিত ভালোবাসার মানুষের সাথেই কথা বলছিলো। ফাহিমের এমন ক্লান্ত কণ্ঠ শুনে এশা মায়া মায়া গলায় বলে–

–কিছু খেয়েছো জান?

–নাহ বাবু। কাল একজন বড় ভাইয়ের বউয়ের বাচ্চা হয়েছে,,সে কয়েক হাজার টাকা ধার চেয়েছিলো। হাতে মাত্র তিন হাজার টাকা ছিলো সেটাই দিয়ে দিয়েছি। এখন হাত একদমই খালি,,বেতন পেতে আরো ২-৩ দিন লাগবে। খাবারও নেই,, কি খাবো বলো? তাই না খেয়েই আছি।

কতগুলো বানোয়াট মিথ্যা কথা বলে এশাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে ফাহিম। এশাও তার এই মিথ্যা গুলো শুনে গলে পানি হয়ে যায়। সে ফাহিমকে বলে–

–তুমি দুই ঘন্টা একটু কষ্ট করে থাকো আমি তোমার জন্য রান্না করে আনছি।

–তোমার শুধু শুধু কষ্ট করা লাগবে না। এই দু-তিন দিন না খেয়ে থাকলে কিছু হবে না। আমি পুরুষ মানুষ,, কতকাল এমন না খেয়ে খেয়ে অফিসে অফিসে চাকরীর জন্য ঘুরেছি। তুমি শুধু শুধু টেনশন করো না তো।

এশা কপট রাগ নিয়ে বলে–

–তুমি চুপ করো। আমি যা বলেছি তাই হবে। আমি তোমার জন্য ভুনাখিচুড়ি আর গরুর কালা ভুনা করে আনছি। তুমি বাসায়ই থেকো।

ফাহিম তো মনে মনেই রাজি। এই বলদটাকে এমন একটু ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলেই সে গলে জল হয়ে যায়,,আর তাকে এমনই ভালোমন্দ রেঁধে এনে খাওয়ায়। টাকাও নেয় এশার থেকে। কিন্তু প্রতিবার টাকা নেওয়ার সময় বলে ধার নিচ্ছে,, কিন্তু সে ধারগুলো আজ পর্যন্ত পরিশোধ করেনি। আদৌও করবে কিনা সন্দেহ।

এশা ফাহিমকে ফোন রাখতে বলে সে দৌড়ে চলে যায় রান্না ঘরে। তাড়াতাড়ি করে কেটে,,বেছে,,ধুয়ে রান্না চড়ায় চুলায়। দুই চুলায় দু’টো দেওয়ায় তাড়াতাড়িই হয়ে যায়। রান্না শেষ হয়েছে এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠে। এশা বুঝতে পারে আবরার এসেছে। সে আবরারকে দরজা খুলে দিয়ে আবার রান্নাঘরে চলে আসে। তারপর বড় একটা টিফিনবক্সে বেশি বেশি করে খাবার বেড়ে নিতে থাকে। সেও ফাহিমের সাথেই খাবে বলে ঠিক করেছে তাই বেশি করে নিচ্ছে।

আবরার ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে এশা রেডি হয়ে কোথাও বের হচ্ছে। সে এশার বিষয়ে তেমন একটা মাথা না ঘামালেও মাঝে মধ্যে তার সেফটির জন্য টুকটাক প্রশ্ন করে,,যেটার জবাব দিতে এশা বাধ্য। সে এশাকে এই ভরসন্ধ্যায় বের হতে দেখে জিজ্ঞেস করে–

–কোথায় যাচ্ছেন এশা?

–একটু ফাহিমের কাছে যাচ্ছি। ওর বাসায় খাবার নেই আজ কয়েকদিন,,হাতে টাকাও নেই কেনার। তাই আমিই রেঁধে নিয়ে যাচ্ছি। না খেয়ে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পরেছে।

এশার কথাটা শুনে আবরারের সন্দেহ হয়,,তারপরেও সে বেশি একটা ঘাটায় না। শুধু বলে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে। এশাও সম্মতি দিয়ে চলে যায়। এশা চলে গেলে আবরার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে যায়। অতীতের কিছু স্মৃতিচারণ করতে। এই কাজটা করতে সে ভীষণ ভালোবাসে।

________________________________

সেই দুপুরের পর থেকে জাভিয়ান হানিয়ার সাথে কথা বলছে না। হানিয়া তার কলেজে যাওয়ার বিষয়ে কিছু বলতে গেলেও জাভিয়ান শুনতে নারাজ। বিকেলের দিকে জাভিয়ানকে লাগেজ গুছাতে দেখে হানিয়া অবাক হয়ে যায়। মাঝারি সাইজের একটা ব্যাগে নিজের জামাকাপড় নিচ্ছে সে। হানিয়া যে তাকে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছে না,,কারণ জাভিয়ানের কাছে একটার পর একটা ফোন এসেই চলছে অফিসের। হানিয়া জাভিয়ানের লাগেজ গুছানো আর ফোনের কথাগুলো শুনে এটা বুঝতে পারে জাভিয়ান কোন একটা কাজে দেশের বাহিরে যাচ্ছে। তারপর থেকে হানিয়ার মনটা আরো খারাপ। কিন্তু সে সেটা বুঝতে দেয় না জাভিয়ানকে। নিজের রুম থেকে উঠে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেটে রোজি বেগমের রুমে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে। দেশের বাহিরে যাবে তাকে একটু বললোও না। জাভিয়ান তার প্রতিটা কাজের মাধ্যমে হানিয়াকে বুঝিয়ে দিচ্ছে হানিয়া তার জীবনে কতটা ভ্যালুউলেস। তাহলে হানিয়ার ওই এক্সিডেন্টের পর জাভিয়ান কেন তার এতো যত্ন নিলো? কেন প্রতিদিন নিয়ম করে একবার তার পায়ে গরম তেল মালিশ করে দিতো? কেনই বা প্রতিদিন জোর করে তাকে বেডে শোয়াত? হানিয়া না শুতে চাইলে জোর করে বুকে আগলে নিয়ে ঘুমাতো কেন? এতো প্রশ্নের জবাব কে দিবে হানিয়াকে?

এই কথাগুলোই হানিয়া রোজি বেগমের রুমের বেলকনিতে বসে বসে ভাবছিলো। সময় এখন রাত আটটার বেশি। বিকেলে যে সে ওই রুম থেকে বের হয়েছে আর একবার ওই রুমের মুখ হয়নি। হানিয়া বসে বসে রাতের আকাশ দেখছিলো,, তখনই রোজি বেগম এসে তাকে ডাকতে থাকে।

–অ্যাঁই মেয়ে,,যা তোর রুমে যা। জাভিয়ানকে বিদায় দিয়ে আয়। ছেলেটা তোর থেকে বিদায় নিবে বলে বসে আছে কখন থেকে,, আর তুই এখানে বসে বসে মশার কামড় খাচ্ছিস। যা তাড়াতাড়ি রুমে যা।

হানিয়া ঘাড় ঘুড়িয়ে রোজি বেগমের দিকে তাকায়,,তারপর মলিন হেঁসে বলে–

–আমি তার কে হই যে,,আমার থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য বসে আছে? চলে যেতে বলো তাকে। আমি আজ এখানেই তোমার সাথে থাকব,,তার রুমে থাকব না সে যতদিন না আসছে ততদিন। তারপর কিছু উলোটপালোট হলে বা চুরি হলে আমাকে অপবাদ দিতে দু’বার ভাববে না তোমার ছেলে। তুমি এখন যাও মনি,,আমাকে একটু একা থাকতে দাও।

হানিয়া কথা শেষ করার সাথে সাথেই জাভিয়ানের গলার আওয়াজ শোনা যায়। বেশ জোরেই তার নাম ধরে ডাকছে। রোজি বেগম হানিয়ার কাছে এসে তাকে হাত ধরে বসা থেকে উঠায়,,তারপর রুমের বাহিরে নিয়ে যেতে যেতে বলে–

–যা দেখে আয় কি জন্য ডাকছে। পরে আমার কাছে আসিস।

কথাটা বলতে বলতে হাটতে থাকে রোজি বেগম আর হানিয়া। হানিয়াকে তাদের রুমের সামনে নিয়ে এসে রোজি বেগম চলে যায়। হানিয়া একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে। তারপর রুমের ভেতরে ঢুকে। রুমে যাওয়ার পর জাভিয়ানের কর্মকান্ডগুলো হানিয়াকে একটু না বরং অনেকটা অবাক করে।

শব্দসংখ্যা~১৬২০

~~চলবে?

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_সাতাশ(বর্ধিতাংশ)

[পর্বটা রোমান্টিকধর্মী,,যারা রোমান্টিক পছন্দ করেন না তারা প্লিজ স্কিপ করবেন।]

হানিয়া রুমে ঢুকে দেখে জাভিয়ান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল সেট করছে। হানিয়া চুপচাপ রুমের ভেতরে যেয়ে সোফায় বসে তার কার্যকলাপ দেখতে থাকে। জাভিয়ান চুল সেট করে হ্যান্ডওয়াচ পরতে পরতে হানিয়ার সামনে এসে বলে–

–আমি ১৫/২০ দিনের জন্য লন্ডন যাচ্ছি,, বিজনেসের কাজে। তোমায় তো স্বাধীনতা দেই না,,এই কয়েকদিন স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করো। যত খুশি উড়াউড়ি করো,,পারলে হাত-পা ভেঙে ঘরে বসে থেকো। (কথাটা ভীষণই তাচ্ছিল্য করে বলে জাভিয়ান)

জাভিয়ানের এমন তাচ্ছিল্য পূর্ণ কথায় হানিয়ার চোখে পানি এসে পরে,,কিন্তু সে চোখমুখ শক্ত করে বসে তার কথা শুনতে থাকে। জাভিয়ানের দিকে একবারও তাকায় না। জাভিয়ান নিজেই আবার বলে–

–যাই হোক,,আমি যাচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।

কথাটা বলে লাগেজ টানতে টানতে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। হানিয়া তখনো বসে থাকে সোফায়,,একবারও চোখ তুলে তার যাওয়া দেখে না। জাভিয়ান রুম থেকে বের হওয়ার সময় দরজাটা ঠাশ করে লাগিয়ে দিয়ে নিজের সুপ্ত রাগটা প্রকাশ করে যায়। দরজা লাগানোর আওয়াজে হানিয়া বুঝতে পারে জাভিয়ান চলে গেছে,,সাথে সাথে তার চোখে জমা পানিগুলো ঝরতে শুরু করে। বাসার নিচে গাড়ির আওয়াজে হানিয়া বুঝা যায়,, জাভিয়ান বাসা থেকে রওনা হয়েছে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য। হানিয়া বসা থেকে আস্তে ধীরে উঠে দূর্বল পায়ে হেঁটে বেলকনিতে যায়। বেলকনির একদম মাঝে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে,,হুট করে হাঁটু গেড়ে বসে কান্নায় ভেঙে পরে হানিয়া। মনে তার হাজারো দুঃখ,, অভিমান-অভিযোগ কিন্তু শুনার মতো কেউ নেই তার। সে কাদতে কাঁদতে বলে–

–আল্লাহ!! আমায় কেন এতো কষ্ট দিচ্ছো? একটু সুখ,,একটু ভালোবাসা কি আমি ডিজার্ভ করি না? কেন সে আমায় ভালোবাসে না? আমি কেন এতো দূর্বল?? মেরুদণ্ডহীন লাগছে আমার নিজেকে। তার এত অবহেলা,,অপমান,,অত্যাচারের পরও মনটা তাকেই কেন এতে চায়? কেন তার ভালোবাসা পাওয়ার আশায় আমি আজও প্রহর গুনি? কেন এতো বেহায়া আমি আল্লাহ?। আমাকে শক্ত হৃদয়ের অধিকারী বানিয়ে দাও,,যাতে তার এই অবহেলা,,অপমান,, কষ্ট আমাকে বিন্দু পরিমাণে ছুঁতে না পারে। আমাকে এতটাই শক্ত বানিয়ে দাও যাতে তার করা অন্যায়ের জবাবগুলো দিয়ে তাকে ছাড়তে আমি দু’বার না ভাবি। আমার বুক যেন না কেঁপে উঠে তাকে ছাড়ার কথা ভেবে,, ঠিক এতটাই কঠিন বানিয়ে দাও।

এমনি হাজারো কথা বলতে থাকে আর কাঁদতে থাকে। কথাগুলো বেশি জোরে না বলায় সে ছাড়া আর কেউ শুনতে পারবে না। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় হানিয়া কাঁদা থামিয়ে দিয়ে চুপ করে হাঁটুতে মাথা রেখে বসে থাকে। কতক্ষণ ছিলো? হয়ত আধা ঘণ্টা বা একঘন্টা। হানিয়া বসে ছিলো তখনই হাতে জোরদার একটা টান অনুভব করে। কেউ থাকে বসা থেকে টান দিয়ে উঠিয়ে দাঁড় করায়। চোখে তখনও পানি ছিলো বিধায় তাঁকে দাড় করানো ব্যক্তিটিকে সে সাথে সাথে দেখতে পারে না। কয়েক সেকেন্ড পর নিজের নরম ঠোঁট জোড়ায় অন্য কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে ভয়াবহ রকমে চমকে যায়। সে বুঝতে পারে সামনের ব্যক্তিটি অনেকটা তৃষ্ণা ভাবে তাকে চুমু খাচ্ছে। কিন্তু কার এতো সাহস? হানিয়া ব্যক্তিটিকে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কাতে থাকে,,কিন্তু ব্যক্তিটির শক্তির কাছে তার শক্তি কিছুই না। রাতের আকাশে আজ চাঁদ নেই তারউপর বেলকনির লাইটগুলোও হানিয়া না জ্বালালে জাভিয়ানও জ্বালায় না।

হানিয়া তো আজ বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজি বেগমের কাছে ছিলো তাই বেলকনির লাইটগুলোও জ্বালানো হয়নি। হানিয়া চোখজোড়া বন্ধ করলে চোখের কার্নিশ বেয়ে জমে থাকা অশ্রু গুলো গড়িয়ে পরে। সে তার ঠোঁট আঁকড়ে ধরা ব্যক্তিটিকে এখনো ঠেলছে,,কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ব্যক্তিটি চুমু খেতে খেতেই ঝট করে তাকে কোল তুলে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা দেয়। রুমে আসার পরও হানিয়া ব্যক্তিটিকে দেখতে পায়। জাভিয়ান? সে এখানে কেন? সে তে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য বের হয়ে গিয়েছিলো না? তাহলে আবার আসলো কেন বাসায়?

জাভিয়ান হানিয়াকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিয়ে তার একহাত দিয়ে হানিয়ার দু-হাত মাথার উপরে চেপে ধরে। আরেক হাত হানিয়ার ঘাড়ের পেছনে শক্ত করে চেপে ধরে আয়েশ করে চুমু খেতে থাকে। সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিট হয়ে যায় কিন্তু জাভিয়ান হানিয়াকল ছাড়ে না। হানিয়া এখনে মোচড়ামুচড়ি করছে নিজেকে ছাড়াতে কিন্তু পারছে না। এদিকে তার শ্বাসও আটকে আসছে।

হানিয়া এমন মোচড়ামুচড়ি করায় জাভিয়ানের কাজে ডিস্টার্ব হয় । সে হানিয়ার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে মাথা তুলে চোখে চোখ রাখে। ঘাড়ের পেছনের হাতটা সামনে এনে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে আলতো করে হানিয়ার ঠোঁট মুছিয়ে দিতে দিতে বলে–

–মোচড়ামুচড়ি বাদ দিয়ে একটু রেসপন্স করো প্রমিজ করছি,,যতদিন ওখানে থাকব একটা মেয়ের দিকেও চোখ তুলে তাকাব না। এমন কিছু করো যাতে আমি ওখানে গিয়ে সারাদিন তোমার কথা ভাবি,, অন্য মেয়েদের কথা আমার মাথায় না আসে।

হানিয়াও যেহেতু জাভিয়ানের চোখের দিকেই তাকিয়ে ছিলো তাই সে জাভিয়ানের চোখ দেখে তার কথার সত্যতা পায়। জাভিয়ান আবার মুখ এগিয়ে আনে হানিয়ার ঠোঁটের কাছে,,কয়েক সেকেন্ড দেখে আবারও নিজের দখলে নিয়ে নেয়। হানিয়া মোচড়ামুচড়ি করছে না দেখে জাভিয়ান তার ধরে রাখা হাত দুটোও ছেড়ে দেয়। হাত ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথেই হানিয়া এক হাত দিয়ে জাভিয়ানের মাথার পেছনের চুল খামচে ধরে আরেক হাত দিয়ে তার পরনের ব্লেজার। সাথে নিজেও রেসপন্স করতে থাকে।

দুজনে অনুভূতির সাগরে এতোটা ডুবে যায় যে সময়ের খেয়ালও থাকে না। একটা সময় গিয়ে দু’জনেরই নিশ্বাস নিতে কষ্ট হলে জাভিয়ান হানিয়ার ঠোঁটজাড়াকে মুক্ত দেয়। নিজের মাথা এলিয়ে দেয় হানিয়ার বুকে,,শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে। হানিয়া জোরে জোরে নিশ্বাস নেওয়ায় তার বুক হাপড়ের ন্যায় উঠানামা করতে থাকে। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে জাভিয়ান-হানিয়া স্বাভাবিক হয়।

জাভিয়ান নিজেকে স্বাভাবিক করে মাথা তুলে হানিয়ার দিকে তাকায়। দেখতে পায় হানিয়াও তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নিজের মুখটা আরো একবার এগিয়ে নিয়ে যায় হানিয়ার মুখের কাছে,,হানিয়াকে জড়িয়ে ধরা হাত দু’টো দিয়ে আঁকড়ে ধরে তার গালজোড়া। কন্ঠে একপ্রকার মাদকতা নিয়ে বলে–

–কাজটা শেষ করে ফিরে আসি ভালোই ভালোই,, নতুন করে সবটা শুরু করব আবার। এর চেয়েও বেশি আদর-ভালোবাসা দিয়ে একদম পাগল করে রাখব। এতদিন এই জাভিয়ান তালুকদারের নিষ্ঠুরতা দেখেছ কিন্তু কাজ শেষ করে আসার পর এক নতুন জাভিয়ান তালুকদারকে দেখবে। তার পাগলকরা ভালোবাসা দেখবে,,মুখে ভালোবাসি না বলেও দিনে হাজারবার ভালোবাসা প্রকাশ করব। আমি আবারও তোমার অশ্রু ঝরানোর কারণ হবো,,কিন্তু তখন অশ্রু ঝরবে সুখের কারণে,,পাগলকরা ভালোবাসার কারণে।

কথাটা শেষ করে জাভিয়ান হানিয়ার পুরো মুখ জুড়ে ভালোবাসার স্পর্শ দিতে থাকে। হানিয়াও বিনাবাক্য গ্রহণ করে তার নিষ্ঠুর স্বামীর পবিত্র ভালোবাসাগুলো। ভালোবাসা দেওয়া নেওয়া শেষ হলে জাভিয়ান শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ায়,, হানিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে সে একবার বাড়ানো হাতটা আরেকবার জাভিয়ানের দিকে তাকায়। জাভিয়ান বুঝতে পারে হানিয়া তাকে এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না। তাই সে নিজেই হানিয়ার হাতের বাহু ধরে উঠায়। তারপর হানিয়ার এলোমেলো হয়ে যাওয়া চুলগুলো সুন্দর করে কানের পাশে গুছিয়ে দিয়ে বলে–

–তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আর অজানা অনেক কিছু অপেক্ষা করছে বধূয়া। সামতালে পারবে তো?

কথাটা বলে হানিয়ার কপালে গভীরভাবে ভালোবাসার পরশ দেয়। তারপর হানিয়ার উত্তর না শুনেই রওনা হয় আবার।পেছনে ফেলে রেখে যায় ভ্যাবলাকান্ত হানিয়াকে,,যে কিনা জাভিয়ানের কোন কথা-কাজ কিছু না বুঝতে পেরে হা করে দাঁড়িয়ে তার যাওয়া দেখছে।

_______________________

জাভিয়ান লন্ডনে গেছে আজ তিনদিন পেরিয়ে চারদিন হলো। সময়টা এখন সন্ধ্যা। হানিয়া মাগরিবের নামাজ শেষ করে বেলকনিতে আসে। ভীষণ ঠান্ডা পরেছে ঢাকায়। শীতের কাপড় ছাড়া বাহিরে যাওয়া মানে ফ্রিজের ভেতর ঢুকে পরার মতো ফিলিংস নেওয়া। এত ঠান্ডার মধ্যেও হানিয়া জাস্ট নামাজের হিজাবটা পরেই বেলকনিতে এসে পরেছে। হাতে তার ফোন। বেলকনিতে এসে হানিয়া পাশে রাখা বেতের চেয়ারে বসে পরে। বসে বসে অপেক্ষা করতে থাকে কাঙ্ক্ষিত এক ফোনের।

বেশি অপেক্ষা করতে হয় না তাকে। বেলকনিতে এসে বসার মিনিট দশেক পরেই কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটির ফোন আসে। ব্যক্তিটির ফোন পেয়ে হানিয়ার চিত্ত আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠে। কিন্তু হানিয়া তা নিজের মুখে না ফুটিয়ে তুলে খানিকটা গম্ভীর মুখে ফোনটা রিসিভ করে। ভিডিও কলটা রিসিভ করতেই হানিয়ার চোখে ভেসে উঠে তার প্রণয় পুরুষের মুখাবয়ব। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে লোকটাকে। হানিয়া তাকে সালাম দিলে জাভিয়ান সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করে–

–আজ সারাদিন ফোন না দেওয়ায় অভিমান করেছ বুঝি?

–নাহ।

একবাক্যে দেওয়া উত্তরে জাভিয়ান সহজেই বুঝতে পারে তার বধূয়ার ভীষণ অভিমান হয়েছে। হবেই না কেন? নতুন নতুন প্রেম করছে তারা,,সেখানেও যদি জাভিয়ান এমন অবহেলা করে তাহলে কোন প্রেমিকার সেটা সহ্য হবে। প্রেম? প্রেমিক-প্রেমিকা? আইডিয়াটা জাভিয়ানেরই। সে লন্ডন আসার পরের দিন হানিয়াকে বলে আসা কথাগুলো ক্লিয়ার করে হানিয়াকে। সে হানিয়াকে বলে” তারা শুরুতে সংসারে না জড়িয়ে প্রেমের সম্পর্কে জড়াবে। শুরুটা হবে ভালোলাগা থেকে এরপর ভালোবাসা,, তারপর সারাজীবনের পথচলা”। তাদের সম্পর্কের সমীকরণটা যেহেতু আর পাঁচটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মতো না তাই তার এই ভাবনা। হানিয়ার কাছে বিষয়টা অদ্ভুত লাগলেও কিছু বলে না।

তারপর থেকে আজ চার দিন তারা প্রমিক-প্রমিকার ন্যায় কথাবার্তা বলছে। হানিয়া যেন সত্যি এক নতুন জাভিয়ানকে আবিষ্কার করছে। লোকটা এতো হাসায় ইদানীং তাঁকে যে হাসতে হাসতে তার রুহ বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। হানিয়া যখন জাভিয়ানের ফানি সব কথায় হাসতে হাসতে কাহিল হয়ে পরে তখন জাভিয়ান মুগ্ধ হয়ে হানিয়াকে দেখে।

–মিথ্যা বলা আমার একদমই পছন্দ নয় বধূয়া তুমি এটা ভালো করেই জানো। তাও বললে কেন?

হানিয়া উত্তর দেয় না। আসলে তার দেওয়ার মতো কোন উত্তর নেই। জাভিয়ান মাত্রই অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় এসেছে,,ঘরে ঢুকে ফ্রেশ না হয়েই হানিয়াকে কল করেছে। জাভিয়ান বুঝতে পারে হানিয়ার অভিমানের গভীরতা। এবং এ-ও উপলব্ধি করতে পারে এই অভিমান ভাঙাতে বেশ সময় লাগবে,,আপাতত তার একটু ফ্রেশ হওয়া ভীষণ জরুরি। তাই সে হানিয়াকে বলে–

–আমার কাবার্ড খুলে দেখো একটা ব্রাউন কালারের প্যাকেট রাখা আছে। প্যাকেটা পেয়ে নিজের কাছে রাখবে। আমি যেদিন আসব সেদিন ওটা খুলবে। আর তার পাশে ছোট্ট আরেকটা প্যাকেট পাবে ওটা এখনি খুলবে। কাজটা তাড়াতাড়ি করে তারপরে আমায় ফোন দিবে,,আমি ততক্ষণে একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি।

–আচ্ছা।

লোকটা ক্লান্ত। তাই হানিয়া বেশি কথা বাড়ায় না। তাছাড়া তার মধ্যে এখনো একটা জড়তা রয়েই গেছে। জাভিয়ান এই কয়েকদিনে তার সাথে বেশ স্বাভাবিক ভাবে কথা বললেও হানিয়া একটা অজানা কারণে তেমন স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারে না। জাভিয়ান ফোন দিয়ে নিজেই কথা বলে,, হাসায়,,কথা শেষ করে ফোন কেটে দেয়। হানিয়া তেমন একটা আগ্রহ পায় না তার সাথে কথা বলতে। কিছু একটা বাঁধা দেয় তাকে।

হানিয়া ফোনটা কেটে জাভিয়ানের কথা মতো তার কাবার্ড খুলে,, তারপর কাপড়ের মিডেল তাকে কথা অনুযায়ী দুটো প্যাকেট পায়। ব্রাউন কালারের প্যাকেটটা পরে ধরে,,আগে ছোট প্যাকেটটা বের করে সেটা ছিড়ে। প্যাকেটটা খোলার পর সেটা অনেক গুলো চকলেট,,আর অনেক প্রকারের আচার পায়। চকলেট আর আচার তার ভীষণ পছন্দ। এটা জাভিয়ান জানল কীভাবে? হানিয়া জিনিস গুলো দেখে যেমন খুশি হয় তেমন অবাকও হয়।

দুটো প্যাকেট কাবার্ড থেকে নিয়ে কাবার্ডের দরজা লক করবে তখন দেখতে পায় কিছু কাপড়ের ভাজে সেদিনের সেই ব্রাউন কালারের ডায়েরিটার কোণা দেখা যাচ্ছে। ডায়েরিটা দেখে হানিয়ার অবচেতন মন বলে উঠে “” আজ তো জাভিয়ান নেই,,আজই সুযোগ ডায়েরীটা পড়ে দেখার।” পরক্ষণে আবার ভাবে “নাহ থাক,,সে মানা করেছে,, এত কথা শুনিয়েছে পড়ার দরকার নেই এমন ডায়েরি।” কিন্তু আমরা মনুষ্য জাতি ভীষনই কৌতূহল প্রবণ হয়ে থাকি। হানিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। সে নিজের কৌতূহল সামলাতে না পেরে ডায়েরিটা কাপড়ের ভাজ থেকে টান দিয়ে বের করে। ডায়েরিটার সাথে কয়েকটা ছবিও তার হাতে আসে। হানিয়া ছবিগুলো উল্টে যখন সেগুলো দেখে,,তখন যেন তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।

শব্দসংখ্যা ~১৬১২

~~চলবে?