#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#Season_2
#পর্ব_০১
একদম সিম্পল কালো শাড়ী,,ডিপ নেকের থ্রি কোয়াটার হাতার কালো ব্লাউজ,, গলায় ছোট্ট একটা ডায়মন্ডের প্যান্ডেন্ট। কোমড় সমান কোঁকড়ানো চুল গুলো আধ খোপা করে রাখা,,কানের দুই পাশ দিয়ে কিছু খুচরো চুল বের হয়ে আছে। এতো সাধারণ সাজেও যে কাউকে এতো মোহনীয় লাগতে পারে সেটা জাভিয়ানের জানা ছিলো না। আচ্ছা সব মেয়েকেই কি এত সিম্পল সাজে এত সুন্দর লাগে,, নাকি জাভিয়ানের রমণীকেই এতো সুন্দর লাগে এই সিম্পল সাজে? প্রশ্নটা জাভিয়ানের জানা নেই,,আপাতত সে জানতেও চাচ্ছে না। সে যে ব্যস্ত তার প্রেয়সী,, একান্ত ব্যক্তিগত রমণী টিকে দেখতে,, যে কিনা ফুল পাড়তে ব্যস্ত।
রমণীটি একটু পরপর লাফ দিয়ে উঠছে তার পছন্দের কাঠগোলাপ ফুলটি পাড়ার জন্য,, কিন্তু ফুলের গোছাটা একটু বেশিই উপরে যেনো। বেশ কিছুক্ষণ লাফালাফি করার পর রমণীটি যখন ক্লান্ত হয়ে ফুল পাড়তে ব্যর্থ হয় তখন জাভিয়ানের বেশ মায়া লাগে। কেমন মুখটা মলিন করে,, অভিমানী চোখ জোড়া দিয়ে ফুলের গোছাটার দিকে তাকিয়ে আছে। জাভিয়ান বুঝি তার প্রেয়সীর মলিন মুখ সহ্য করতে পারে? উঁহু,, একদম না। তাই তো সে আর দাঁড়িয়ে না থেকে হেঁটে উপস্থিত হয় রমণীটির অতি নিকটে।
জাভিয়ান হানিয়ার পেছনে এসে একদম গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। হানিয়া চমকে যায় নিজের গায়ে একজন পুরুষের স্পর্শে। ঘাড় ঘুড়িয়ে পেছনে তাকালে জাভিয়ানকে দেখতে পায়। কিছুটা স্বস্তি পায় সে। ঠোঁট ফুলিয়ে বলে–
–ফুল গুলো সুন্দর না?
জাভিয়ান চোখে হেঁসে মাথা নাড়িয়ে ইতিবাচক মতামত জানায়। তার উত্তরে হানিয়া যেনো খুশি হয়। চটপট করে বলে–
–তাহলে পেড়ে দেন না। কতক্ষণ ধরে চেষ্টা করছি পাড়ার জন্য কিন্তু কিছুতেই নাগাল পাচ্ছি না।
জাভিয়ান এবার বলে–
–ফুল পেলে খুশি হবে?
–হ্যাঁ ভীষণ।
–চোখেমুখে এই মলিনতা থাকবে না তো?
–একটুও না।
জাভিয়ানের সব প্রশ্নে চটপট করে উত্তর দেয় হানিয়া। যেন তার ভীষণ তাড়া। জাভিয়ান আর প্রশ্ন না করে ব্যস্ত হয়ে পরে ফুলগুলো পাড়তে। পায়ের আঙ্গুলের সাহায্যে একটু উঁচু হয়ে ফুলগুলো যেই ডালে আছে সেই ডালটা ধরে ফুলগুলো পেড়ে নেয়। হানিয়ার কাছে এসে ফুলগুলো তাঁর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে–
–আমার ফুলের জন্য এই ফুলগুলো। আশা করি সে আমার ভালোবাসার দান গ্রহণ করবে।
হানিয়া মিষ্টি হেঁসে হাত বাড়ায় ফুলগুলো নেওয়ার জন্য। কি মনে করে আবার থেমে যায়। মুখটায় পুনরায় মলিনতা ছেয়ে যায়। বাড়ন্ত হাতটা নামিয়ে বিষাদ মাখা চোখে জাভিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে–
–আপনি তো আমার না জাভিয়ান। আমি তো আপনার ভালোবাসা না,,শুধুমাত্র মায়া। আপনি অনুতপ্ত আমার প্রতি করা কর্মকান্ড গুলোর জন্য,, সেই অনুতাপ থেকেই আপনার মনে হচ্ছে আপনি আমায় ভালোবাসেন।
–না হানি। আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। আমার বধূয়া,,প্রেয়সী আমার! আমি ক্ষমাপ্রার্থী তোমার কাছে। অনুগ্রহ করে আমায় ফিরিয়ে দিও না।
হানিয়া এক পা এক পা করে পিছিয়ে যেতে থাকে। জাভিয়ান তার কাছে গিয়ে তাকে নিজের বাহুতে আনার চেষ্টা করা কিন্তু ততক্ষণে হানিয়া ধরাছোঁয়ার বাহিরে চলে গেছে। হানিয়ার চোখ বেয়ে অশ্রুরা গড়িয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে তার চিবুক,, গলদেশ। একসময় হানিয়া হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে যেতে বলে–
–আপনি আমার হয়েও কেন আমার হলেন না জাভিয়ান??
জাভিয়ান চিৎকার করে বলে–
–আমি তোমারই হানি। প্লিজ আমায় ছেড়ে চলে যেও না।
হানিয়া পুরোপুরি হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার আগে একটা কথাই বলে–
–ভালে থাকবেন আমার ভালোবাসা অন্য কারো ভালোবাসা হয়ে।
কথাটা শেষ করার সাথে সাথেই হানিয়া অস্তিত্বের শেষ চিহ্নটুকু হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। জাভিয়ান ধপ করে মাটিতে বসে পরে। হানিয়া? কই তার বধূয়া? নেই,,কোথাও নেই। হারিয়ে গেছে হানিয়া। চলে গেছে দূর অজানায়। জাভিয়ান শরীরের সব শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠে —
–হানিয়াআআআআআ। ফিরে এসো প্লিজ।
_______________
ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো জাভিয়ান, বুক ধড়পড় করছে। আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে একটাই নাম ছিটকে এলো তার ঠোঁট থেকে— “হানিয়া!”
জাভিয়ান ঘাড় ঘুড়িয়ে নিজের ঘরের প্রতিটি কোণা চেক করে। নেই হানিয়া। শোয়া থেকে উঠে দাড়িয়ে ওয়াশরুম,,বেলকনি সব জায়গায় হানিয়াকে খুঁজতে থাকে। পায় না। জাভিয়ান আস্তে আস্তে হাইপার হতে থাকে। চিৎকার করে বলতে থাকে–
–হানিয়া কই তুমি? আর লুকোচুরি খেলো না হানি। আমার বুকে ব্যথা করছে। কোথায় তুমি? জবাব দাও।
আসে না কোন জবাব। হানিয়াকে না পেয়ে এবার জাভিয়ান ভাঙচুর শুরু করে। হাতের সামনে যা পাচ্ছে তাই ভেঙে ফেলছে আর চিৎকার করে হানিয়াকে ডাকছে। নিস্তব্ধ রাতে জাভিয়ানের চিৎকার আর ভাঙচুরের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তালুকদার বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের।
সর্বপ্রথম ঘুম ভাঙে মিসেস তালুকদারের। ডানপাশ প্যারালাইজড মিসেস তালুকদার ছেলের ঘর থেকে জিনিস ভাঙার আর চিৎকারের আওয়াজ শুনে বেশ ভালো করেই বুঝতে পারেন, তার ছেলে আজ ঔষধ গুলো না নিয়েই হয়ত শুয়ে পরেছিলো। ফলস্বরূপ মাঝরাতে এই পাগলামি। মি.তালুকদারের দিকে তাকিয়ে দেখেন লোকটা গভীর ঘুমে মগ্ন। মিসেস তালুকদার বেশ বুঝতে পারে লোকটা একটু আগে ঘুমিয়েছে তাই ঘুমটা গভীর। মিসেস তালুকদার বহু কষ্টে ডান কাত হয়। তারপর বাম হাত দিয়ে স্বামীকে ধাক্কা দিতে দিতে মুখ দিয়ে অস্ফুট স্বরে ডাকতে থাকে। মিনিট দুয়েক ধাক্কানোর পর মি.তালুকদারের ঘুমটা পাতলা হয় কিন্তু ছাড়ে না। ঘুমের ঘোরেই ছেলের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।
শোয়া থেকে উঠে স্যান্ডেল পায়ে দিয়ে দৌড়ে ছেলের রুমে যেতে চাইলে মিসেস তালুকদার পিছু ডেকে উঠে অস্ফুট স্বরে। মি. তালুকদার পেছন ফিরে স্ত্রীর দিকে তাকালে দেখতে পায় মিসেস তালুকদার অস্ফুটে স্বরে বলছে–
–আ..মাকেও নি…য়ে যাও।
[বি.দ্র: আমার সঠিক জানা নেই প্যারালাইজড মানুষ অস্ফুটস্বরে কিভাবে কথা বলে,,কিন্তু তারা যে কথা বলতে পারে এটা জানি। এই দৃশ্যটুকু ভুল হতে পারে।আশা করি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ]
মি.তালুকদার দরজার সামনে দাড়িয়েই বলে–
–তুমি ওখানে গিয়ে কি করবে? তোমায় দেখলে ও আরো হাইপার হয়ে যাবে এটা তুমি ভালো করেই জানো।
মিসেস তালুকদার অশ্রুশিক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে স্বামীর দিকে। চোখ দিয়েই যেনো বলছে—আমায় নিয়ে যাও আমার ছেলের কাছে। মি.তালুকদার বোধ হয় তার চোখের ভাষা বুঝতে পারে। শব্দ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে আসে বেডের কাছে। বেডের পাশে রাখা হুইলচেয়ারটা নিয়ে তাতে স্ত্রীকে বসিয়ে পা চালায় ছেলের রুমের দিকে। রুমের সামনে এসে মিসেস তালুকদারকে রেখে দরজার কাছে গিয়ে নক করতে থাকে দরজায়। ছেলেকে ডাকতে থাকে। কিন্তু জাভিয়ান যেন অন্য জগতে মেতে আছে। পুরুষালী গলার আর্তনাদ ভরা কান্না তাদের দু’জনের বুকেই যেন আগুন লাগিয়ে দেয়। সন্তানের কান্না কোন বাবা-মা’ই সহ্য করতে পারে না। সেখানে তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে যদি এমন আর্তনাদ করে কান্না করে সেটা কি সহ্য করার মতো?
কুলসুমও এসে পরেছে ততক্ষণে। মি.তালুকদার যখন বুঝলেন ছেলে দরজা খুলবে না তখন তিনি পুনরায় নিজের রুমে চলে গেলে। জাভিয়ানের রুমের ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে ফিরে আসেন। সেই চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা তিনজন। দেখতে পান হাজারো ভাঙা কাঁচের মধ্যে হাঁটু গেড়ে পিঠ তাদের দিকে দিয়ে বসে আছে জাভিয়ান। বিড়বিড়িয়ে কিছু একটা বলছে। মি.তালুকদার সাবধানে হেঁটে তার কাছে যায়।
জাভিয়ানের কাছে এসে শুনতে পায়,, জাভিয়ান বলছে–
–হানি,,আমি তোমার। প্লিজ ফিরে এসো। আমি তোমায় আর কষ্ট দিবো না বউ। ভীষণ ভালবাসবো,,আগলে রাখবো। মিসেস তালুকদারও তোমায় কিছু বলবে না। যদি বলে আমি তোমায় নিয়ে অনেেেক দূরে চলে যাবো। সেখানে গিয়ে নতুন করে সংসার পাতবো। আমার ঘরের আর মনের একমাত্র রাণী শুধু তুমি হবে। ফিরে আসো জান,,আমি প্রমিজ করছি তোমার কাছে।
তারপরের কথাগুলো ঠিক বুঝতে পারে না মি. তালুকদার। ছেলের পিছনে এসে তার ঘাড়ে হাত রেখে বলে উঠেন–
–জাভিয়ান,,এসব কি করছো বাবা? কার সাথে কথা বলছো??
জাভিয়ান তার লথা বলা থামিয়ে বাবার দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায়। অশ্রুতে পরিপূর্ণ লাল চোখ আর অগোছালো ছেলেকে দেখে মি. তালুকদারের বুকে একটা চাপ লাগে। ছেলেটা ছোট থেকে বড্ড গোছালো ছিলো। বেশিরভাগ সময় হোস্টেলে থাকার কারণে নিজের সব কাজ নিজেই করতো। তার সেই গোছালো ছেলের জীবন আজ এতো অগোছালো দেখে বৃদ্ধ লোকটা ভীষণ ভেঙে পরতে মন চায়। কিন্তু পারে না সে ভেঙে পরতে। সে যদি ভেঙে পরে তাহলে তসর এত বছরে কষ্ট করে গোড়ে তোলা ব্যবসা,,সংসার সব যে ভেঙে মাটির সাথে গুঁড়িয়ে যাবে।
বত্রিশ বছরের প্রাপ্তবয়স্ক জাভিয়ান বাবাকে দেখে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উলটে কেঁদে ফেলে। তার হাতে ধরে রাখা হানিয়ার ফটো ফ্রেমটা দেখিয়ে বলে–
–আমি হানিয়ার সাথে কথা বলছি বাবা। ও আমায় ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে বাবা। ওকে বলো না আমার কাছে ফিরে আসতে। ও তোমার কথা ফেলতে পারে না বাবা,,তুমি বললে ও নিশ্চয় ফিরে আসবে। ও বাবা,,ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দাও না আমি প্রমিজ করছি ওকে আর কষ্ট দিবো না। বাবা,বাবা প্লিজ ওকে এনে দাও না আমার কাছে।
মি.তালুকদার দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছেলের এমন আবদারে। এছাড়া আর কি-ই বা করার আছে তার। কম তো খুঁজে নি তারা হানিয়াকে। যে হারিয়ে যায় তাঁকে খুঁজে বের করা যায় কিন্তু যে স্বেচ্ছায় হারায় তাকে কি আদোও খুঁজে বের করা সম্ভব হয়? মি.তালুকদার ছেলেকে ধরে উঠানোর চেষ্টা করে। জাভিয়ানও বাবার সাহায্যে উঠে দাঁড়ায়। তাঁকে বেডে বসিয়ে বেডসাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে ঔষধের বক্স বের করে। সেটা থেকে জাভিয়ানের ঔষধটা বের করে জাভিয়ানকে দিয়ে বলে–
–এটা নাও। আজকের ঔষধ নাও নি কেন?
জাভিয়ান বাবার কথার উত্তর দেয় না। হানিয়ার ছবিটা বুকের সাথে চেপে ধরে বিড়বিড় করতে থাকে। মি.তালুকদার বেশ কয়েকবার ঔষধটা নিতে বলার পরও যখন জাভিয়ানের মধ্যে কোন হেলদোল দেখা যায় না তখন মি.তালুকদার কড়া গলায় ধমকে বলে উঠে —
–জাভিয়ান রাতদুপুরে নাটক ভালো লাগছে না। ঔষধটা নাও।
বাবার কথায় জাভিয়ান কষ্ট পায়। অভিমানী চোখে বাবার দিকে তাকালে মি.তালুকদার আর রাগ দেখাতে পারে না। সে জাভিয়ানের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে–
–ঔষধটা নাও আব্বা।
জাভিয়ান হাত বাড়িয়ে ঔষধটা নিজের হাতে নেয়,,তারপর তা মুখে চালান করে দেয়। মি.তালুকদার ছেলেকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার মাথার কাছে বসে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। জাভিয়ান শোয়ার পর খেয়াল করে বাবা একা আসে নি,,তার মা-ও এসেছে যিনি কিনা দরজার কাছে হুইলচেয়ার বসে আছে। তার চোখেও পানি।
জাভিয়ান আবারও হাইপার হতে শুরু করে। শোয়া থেকে তড়াক করে উঠে বসে। বাবাকে নালিশ জানানোর মতো করে বলে–
–বাবা মিসেস তালুকদার এখানে কি করছে? সে কি আবারও আমার হানিয়ার স্মৃতি গুলোও আমার থেকে কেড়ে নিতে চায়? তাঁকে চলে যেতে বলে বাবা। আজ তার আর আমার নিজের জন্য হানিয়া হারিয়ে গেছে।চলে যেতে বলো তাঁকে।
জাভিয়ান কেমন উন্মাদের মতো করতে করতে ঝিমিয়ে পরছে। ঔষধ তাঁর কাজ দেখানো শুরু করে দিয়েছে। মি.তালুকদার জাভিয়ানের মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।তার চোখেও অশ্রুদের আনাগোনা চলছে। জাভিয়ানকে ঘুম পাড়াতে পারাতে বলেন–
–তুমি ঘুমাও বাবা। কেউ তোমার থেকে তোমার হানিয়ার স্মৃতি নিবে না। বাবা তোমায় কথা দিয়েছি না।
বাবার বুকেই ঘুমিয়ে পরে জাভিয়ান। মি.তালুকদার জাভিয়ানকে ভালো করে শুইয়ে দিয়ে কুলসুমকে বলেন —
–কাঁচ গুলো ঝাড়ু দিয়ে একসাইড করে রেখে ঘুমাতে যা। সকালে বাদ বাকি ঠিকঠাক করিস।
কুলসুম তার কথা মতো কাজ করতে থাকে। মি.তালুকদার স্ত্রীকে নিয়ে নিজেদের রুমে চলে আসে।স্ত্রীকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও তার পাশে শুয়ে পরে।চোখজোড়া বন্ধ করতেই চোখের কোল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে। বাবা হয়ে সন্তানের এমন করুণ অবস্থা মেনে নিতে তার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। মেয়ের মতো বউমা’টা নিজের সাথে করে এই বাড়ির সকল সুখ,,হাসি,,আনন্দ নিয়ে গেছে। ছেলেটাও প্রিয়তম স্ত্রীকে হারিয়ে আজ উন্মাদ।
____________________
আরো একটি রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দেয় জাভিয়ানের মনে শাসন করা রমনীটি। একটা স্বপ্ন দেখে তার ঘুমটা ভেঙে গেছে,,কিন্তু ঘুম ভাঙার পর স্বপ্নটা আর মনে করতে পারছে না। অস্থির অস্থির লাগায় কি করবে কি করবে ভাবতে ভাবতেই মন বলে উঠে–
–সকল অস্থিরতা থেকে মুক্তি যার কাছে তার সেজদায় কেন লুটিয়ে পরছিস না হানিয়া?
মনের কথা হানিয়া বরাবরই শুনে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। অজু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পরে হানিয়া। মনের সকল অস্থিরতা থেকে মুক্তি চেয়ে দীর্ঘক্ষণ সময় নিয়ে মোনাজাত করার মাধ্যমে নামাজ শেষ করে। প্রিয় মানুষ গুলোর সুখ চেয়েও দোয়া করতে ভুলে না। তারপরই এসে দাড়িয়েছে ফাইভ স্টার হোটেলের বিলাশ বহুল রুমের বেলকনিটায়।
ফিরতে চায় নি এই স্বার্থপরের শহরে। এই শহরে পা রাখার পর থেকেই অস্থিরতা কাজ করছে তার মধ্যে। যত তাড়াতাড়ি আবার বিদায় নিতে চাইছে। এক মাসের একটা ট্রেনিংয়ের জন্য তাকে পুনরায় পা রাখতে হয়েছে এই শহরে। আসতে চায় নি,, অনেক চেষ্টা করার পরও যখন ঢাকায় আসাটা আটকাতে পারে না তখন সবটা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েই এখানে আসে। নানা শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দশটা দিন পার করে ফেলেছে। বাকি আছে আর বিশ দিন। আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে এই বিশ দিন পার হয়ে গেলে সে আবারও হারিয়ে যাবে এই শহরের বুক থেকে। এই শহরে থাকলে তার অবাধ্য মন একবার হলেও চাইবে তার প্রণয় পুরুষটিকে দেখতে। হানিয়া তা সহ্য করতে পারবে না।
কি ভাবে দেখবে সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে অন্যের সাথে সংসার করতে? নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা না যাবে হানিয়া। লোকটা তো মনে হয় সুখের সংসার করছে। আচ্ছা তাদের কি সন্তান হয়েছে? হবে না কেন? তাদের বিয়ের তো কম বয়স হলো না। কি নাম রেখেছে তার সন্তানদের? নানা ধরণের উদ্ভট চিন্তা ভাবনা করতে করতেই হানিয়ার কানে আসে ফজরের আজান দিচ্ছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের ভেতর এসে পরে। রুমানা নামের তার কলিগকে ডেকে দেয় নামাজের জন্য,,যে কিনা তার সাথেই রুম শেয়ার করছে। রুমানা মেয়েটা কাল তার মেয়ের জন্য মন খারাপ করে বেশ রাত করে ঘুমিয়েছে। একবছরের মেয়েটাকে রেখে আসতে কোন মায়ের মন কাঁদে না। মেয়েটার জীবন কাহিনি হানিয়ার থেকে একদম বিপরীত। স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় আজ সে বিসিএস ক্যাডার হতে পেরেছে।
হানিয়া আর রুমানা ফজরের নামাজ পড়ে একটু হাঁটতে বের হয়। রুমানা এখনকার কিছু না চিনলেও হানিয়া কিছুটা হলেও চিনে। একঘন্টা হাটাহাটি করে হোটেলে ফিরে আসে। নাস্তা করে সকাল আটটায় বের হয়ে যায় ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্য।
শব্দসংখ্যা~১৯৫৫
~~চলবে?