প্রতিশোধের অঙ্গীকার ২ পর্ব-০৩

0
196

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#Season_2
#পর্ব_০৩

হানিয়া চোখ বড়বড় করে জাভিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো সহজে ধরা পরে যাবে সে কল্পনাও করতে পারে নি। কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতেই যেন সে ভুলে গেছে। জাভিয়ানের চোখ জোড়া বেয়ে যে অশ্রু গড়িয়ে পরছে তা হানিয়া ভালোভাবেই দেখতে পারছে। কিন্তু কেনো? ঘরে বউ রেখে প্রাক্তন বউকে দেখে তার কান্না করার কি আছে ?

হানিয়া জাভিয়ানের হাত নিজের গাল থেকে সরিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ায়। কথা বলার জন্য কোন শব্দ আপাতত তার ভাণ্ডারে খুঁজে পাচ্ছে না। তাও আমতাআমতা করে জিজ্ঞেস করে–

—কেমন আছেন মি.তালুকদার?

জাভিয়ানের বোধহয় এই দূরত্ব পছন্দ হলো না। সে তড়াক করে হানিয়ার সামনে এসে একহাত দিয়ে তার কোমড় খপ করে ধরে তাকে একদম নিজের সাথে লাগিয়ে ফেলে। ধরা গলায় বলে–

—যতটা খারাপ পরিণতি দেখতে চেয়েছিলে বলে ছেড়ে গিয়েছিলে তার চেয়েও হাজার গুণ খারাপ আছি।

—উপরওয়ালা সাক্ষী আছেন,,আপনার বা আপনাদের কারো কোন ক্ষতি আমি হানিয়া চাই নি। নিজের অজান্তেও না। আপনাদের সকলের ভালো চেয়েছিলাম,,তাই তো ছেড়ে গিয়েছিলাম। আমার কারণে আপনারা ভালো থাকতে পারছিলেন না,,তাই ছেড়ে গিয়েছিলাম।

—ওহহ্ ভালো করতে চেয়েছিলে বুঝি? কিন্তু হয়ে তো গেলো উল্টোটা। তোমার শূন্যতা আমাদের কতটা ভুগিয়েছে,,ভোগাচ্ছে তা তুমি যদি জানতে মেয়ে!!

হানিয়া পুরানো কাসন্দি ঘাটতে চায় না। গার্ডেনের আবছা আলোয় জাভিয়ান-হানিয়া দু’জন দু’জনকে বেশ ভালোভাবে দেখতে পারছে। না চাওয়া সত্ত্বেও হানিয়ার চোখ চলে যায় জাভিয়ানের শিক্ত মুখ টার দিকে। আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গিয়েছে জাভিয়ান। চোখের নিচের ডার্কসার্কেলস জানান দিচ্ছে তার নির্ঘুম রাত্রিগুলোর কথা। উষ্কখুষ্ক চুলগুলো বলে দিচ্ছে তাদের কতটা অযত্ন করা হয়। এমন জাভিয়ানকে তো রেখে যায় নি।

সে তো চোখ ধাধানো,, নজরকাড়া জাভিয়ানকে রেখে গিয়েছিলো সোহার কাছে। যেই জাভিয়ানকে একবার দেখলে শুধু দেখতেই মন চাইতো। কই সেই জাভিয়ান? সোহা কি এতটাই ব্যস্ত থাকে যে হানিয়ার প্রণয় পুরুষের খেয়াল রাখতে পারে না ঠিক মতো? এই লোকটা তো শুধু হানিয়ার প্রণয় পুরুষ না সোহার স্বামীও। কথাটা মনে হতেই বুকেট ভেতরটা জ্বলে উঠে।

নিজেকে জাভিয়ানের বাহুডোর থেকে মুক্ত করার জন্য হানিয়া তার হাত দু’টো ব্যবহার করে। ধাক্কা দিতে দিতে বলে–

—সরুন মি.তালুকদার। আপনার স্ত্রী আমাদের এভাবে দেখলে খারাপ ভাববে। নারী যতই খারাপ হোক না কেনো নিজের স্বামীকে অন্য নারীর সাথে কল্পনাও করতে পারে না।

— তাহলে তুমি কিভাবে আমায় অন্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলে?

—অন্যের হওয়ার সিদ্ধান্তটা আপনার ছিলো। আর আমি পালিয়ে যায় নি,,আপনাদের মুক্তি দিয়ে গিয়েছিলাম।

হানিয়ার কথার পরিপ্রেক্ষিতে জাভিয়ান বলার মতো কোন উত্তর পায় না। হানিয়া ডিভোর্সের কথা বললেও বিয়ের কথাটা তো সে নিজেই বলেছিলো। শুরুর থেকে নিজের করা ভুলগুলোর জন্য আজ তাদের মধ্যে এতটা দূরত্ব,,এত এত কমপ্লিকেশনস। জাভিয়ান ড্রিংকস করা বর্তমানে,,সকালে ছোট খাটো এক্সিডেন্টের কারণে শরীর টাও বেশ দূর্বল। হানিয়া এবার নিজের শরীরের সব শক্তি কাজে লাগিয়ে জাভিয়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।

দৃঢ় এবং কঠোর গলায় বলে–

—আমরা একে অপরের জন্য নই তাই আলাদা হতে হয়েছে,,যে আপনার জন্য আপনি যার জন্য তৈরি তার কাছেই আছেন। অতীতকে টেনে নিজের সুন্দর বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না। যে আছে তার কদর করুন। আগেও বলেছি আজ আবারও বলছি,,সময় গেলে সাধন হবে না।

কথাটা বলে হানিয়া গটগট করে চলে আসতে নেয়। কিন্তু তখনই ভারী কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজে থমকে যায়। কৌতূহল বসত পেছনে ফিরে তাকালে তার অন্তরআত্মা কেঁপে উঠে। জাভিয়ানে মাটিতে পরে কাতরাচ্ছে। দূর্বল কণ্ঠে কিছুটা একটা বলছে আর হাত দিয়ে ইশারা করছে। এমন কিছু দেখেও বুঝি হানিয়া ইগনোর করে চলে যেতে পারে? কস্মিনকালেও না। হানিয়া দৌড়ে জাভিয়ানের কাছে চলে আসে। জাভিয়ানের পাশে বসে মাথাটা নিজের কোলে তুলে নিয়ে অস্থির হয়ে ডাকতে ডাকতে বলে–

—অ্যাঁই আপনার কি হলো? দাঁড়ানোর থেকে পরে গেলেন কিভাবে? কোথায় খারাপ লাগছে আমায় বলুন। অ্যাঁই জাভিয়ান।

অর্ধ অচেতন জাভিয়ান হানিয়ার সব কথাই শুনেছে। নিজের দূর্বল হাতটা দিয়ে হানিয়ার একটা হাত চেপে ধরে নিজের বুকের বামপাশে নিয়ে এসে রাখে। তারপর ক্ষীণ কন্ঠে বলে–

—এখানে ক..কষ্ট হ..চ্ছে বউ। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তু..মিহীনা আমি ম..মরে যাচ…ছি। এতো কষ্ট না দিয়ে প্লিজ মেরে ফেলো আমায়।

জাভিয়ানের এমন কথা শুনে হানিয়া নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারে না। হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। জাভিয়ানের বুকে হাত দিয়ে মালিশ করতে করতে বলে–

—এখন কেন আপনি এমন পাগলামি করছেন? আপনি আমার না জাভিয়ান,,আপনি সোহা’র। আমি আপনার জন্য নিষিদ্ধ।

—তু..মিই একমাত্র আমার জন্য হালাল। আমার জীবনে তুমি ব্যতীত আর কেউ…

—কি হয়েছে ম্যাম? আপনি এভাবে কাঁদছেন কেনো?

জাভিয়ান তার পুরো কথা শেষ করতে পারে না।একটা পুরুষালী কন্ঠ তার কথায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে উপরিউক্ত প্রশ্নটি করে। হানিয়া যেন এই দুঃসময়ে আশার আলো দেখতে পায়। লোকটি পেছন থেকে সামনে আসলে দেখতে পায় হোটেলের ম্যানেজার। লোকটি জাভিয়ানকে এভাবে দূর্বল হয়ে নিচে পরে থাকতে দেখে ভীষণ অবাক হয়ে যায়।

হানিয়া তড়িঘড়ি করে ম্যানেজারকে বলে–

–আপনি প্লিজ আমার একটু সাহায্য করতে পারবেন? উনার ওয়াইফকে একটু ডেকে দিবেন?

–কিন্তু ম্যাম স্যার তো একা চেক-ইন করেছে। উনার সাথে আরেকজন ছেলে ছিলো অবশ্য,, কিন্তু সে স্যারকে হোটেলে ড্রপ করেই চলে গিয়েছে।

হানিয়া যেন মাঝ সমুদ্রে পরে। চোখেমুখে অন্ধকার দেখছে। এই অসুস্থ জাভিয়ানকে নিয়ে কোথায় যাবে সে বুঝো উঠতে পারে না। হানিয়া খেয়াল করে সে সেই পাঁচ বছর আগের মতো জাভিয়ানকে নিয়ে অস্থির হয়ে পরছে। জাভিয়ানের অসুস্থতা তাঁকে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। এতোটাই পীড়াদায়ক যে সে দিশেহারা হয়ে একটা সন্ধান খুঁজছে জাভিয়ানকে সুস্থ করে তোলার জন্য।

ম্যানেজার লোকটা হানিয়াকে প্রশ্ন করে–

—ম্যাম,, স্যারের কি হয়েছে? উনাকে দেখে তো অসুস্থ লাগছে।

হানিয়া অস্থির হয়ে বলে–

—জ্বি উনি হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পরেছে। আপনি একটু হেল্প করুন না আমায় উনাকে উনার রুম পর্যন্ত দিয়ে আসতে। প্লিজ।

—অবশ্যই ম্যাম।

কথাটা বলে ম্যানেজার লোকটি নিজেও জাভিয়ানের পাশে বসে পরে তাঁকে নিচে থেকে তোলার জন্য। জাভিয়ান আগের থেকে শুকিয়ে গেলেও হানিয়ার একার পক্ষে সম্ভব নয় জাভিয়ানকে মাটি থেকে তুলে রুম পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। হানিয়া ম্যানেজার আর হোটেলের আরেকজন স্টাফের সহায়তায় জাভিয়ানকে তার রুম পর্যন্ত নিয়ে আসে। হানিয়া ম্যানেজারকে বলে–

–আপনি একটু কষ্ট করে কোন ডাক্তারকে ম্যানেজ করে দিতে পারবেন? উনার একটু আগে বুকে ব্যথা করছিলো বলছিলো,, ডাক্তার আসলে আমার মনে হয় ভালো হতো।

ম্যানেজার বিনয়ের সাথে বলে–

—রাত তো এখন অনেক বেজে গেছে,, তাও আমি চেষ্টা করছি ম্যাম।

—ধন্যবাদ।

স্টাফটি আর ম্যানেজার রুম থেকে বের হয়ে যায় ডাক্তারের খোঁজে। হানিয়া থেকে যায় জাভিয়ানের কাছে। সেই সকালে এক্সিডেন্টের পর একটু স্যুপ খেয়ে ঔষধ নিয়েছিলো জাভিয়ান,, দুপুরেও খায় নি। রাশেদ শত জোর করার পরও খাওয়াতে পারে নি। বলেছিলো পরে খেয়ে৷ নিবে কিন্তু পরে আর খায় নি জাভিয়ান। সন্ধ্যার সময় হোটেলে আসে। তারপর অফিসের কিছু কাজ করতে করতে প্রায় দশটা বেজে যায়। তখনও খাবার না খেয়ে ড্রিংকস করতে থাকে। বলতে গেলে আজ সারাদিন না খাওয়া সে। তাই এতোটা দূর্বল হয়ে পরেছে।

হঠাৎই জাভিয়ান পেটে হাত চেপে গড়গড় করে পেটের অখাদ্য যা ছিলো বের করে দেয়। হানিয়া তার এমনে কাজে হতভম্ব হয়ে যায়। আবারও পেট চেপে ধরে মাথাটা বেডের বাহিরে এনে “ওয়াক ওয়াক” করতে থাকে। পেটে কিছু না থাকায় দ্বিতীয় বারের সময় কিছুই বের হয় না। হানিয়া তার পিঠে হাত বুলিয়ে শান্ত করতে থাকে। জাভিয়ানের ” ওয়াক ওয়াক” করা থেমে গেলে পানি খাইয়ে দেয়।

তার মিনিট দুয়েক পরেই ম্যানেজার একজন ডাক্তার নিয়ে আসে। ডাক্তার জাভিয়ানকে চেক-আপ করে বলে–

—খাওয়াদাওয়ায় ভীষণ অনিয়মের জন্য আজ তার এই অবস্থা। তার এক্সিডেন্ট করেছে,,ড্রিংকসের গন্ধও পাচ্ছি। আপনি ওয়াইফ হয়ে একটু খেয়াল রাখবেন না আপনার স্বামীর প্রতি? আমি মনে করছি তার এই অবস্থার জন্য আপনি ৫০% দায়ী।

ডাক্তারের শেষের ভর্ৎসনায় হানিয়া থতমত খেয়ে যায়। হ্যাঁ সে জাভিয়ানের স্ত্রী। কিন্তু প্রাক্তন। বর্তমানে সে জাভিয়ানের লাইফের কোথাও নেই। কথাটা বলার জন্য হানিয়া মুখ খুলবে তখনই ম্যানেজার বলে উঠে –

—আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে ডাক্তার। ম্যাম উনার ওয়াইফ নন। ম্যামও আমাদের হোটেলের একজন গেস্ট। স্যার যখন অসুস্থ হয়ে পরেন গার্ডেনে তখন তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার কান্নার আওয়াজে আমি সেখানে গিয়ে স্যারকে অসুস্থ অবস্থায় পাই।

মধ্যবয়স্ক ডাক্তারটি ভীষণ তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন। সে হানিয়ার কান্না মাখা মুখ আর অস্থিরতা দেখে শুরুতেই বুঝে গিয়েছিলেন হানিয়া জাভিয়ানের স্ত্রী। ডাক্তার খাতায় জাভিয়ানের জন্য কিছু ঔষধ লিখতে লিখতে বলেন–

–উনি যদি উনার ওয়াইফই না হন তাহলে উনার অসুস্থতায় এমনভাবে কাঁদছে কেনো? আর উনার চোখেমুখে এমন অস্থিরতাই বা কেনো? একজন আননোন পার্সনের জন্য এমনভাবে কান্না আর অস্থিরতা নিতান্তই মানবিকতার কয়েক ধাপ বেশি দেখানো হয়ে গেলো না?

ডাক্তারটির এমন প্রশ্নে ম্যানেজার এবার নিজেও থতমত খেয়ে যায়। সত্যিই তো। হানিয়া কেনো একজন আননোন পার্সনের জন্য এতো অস্থির হচ্ছে। হানিয়া ডাক্তারের প্রশ্নে ভীষণ বিব্রত বোধ করে। সে আমতা আমতা করে বলে–

—উনি আমার পূর্ব পরিচিত।

হানিয়ার কথা শুনে ডাক্তারটির মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে আর ম্যানেজারের মুখে দেখা দেয় বিস্ময়। ঔ লেখা শেষ হলে ডাক্তার কাগজটি হানিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে–

—ঝগড়া,, মান-অভিমান দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটা বিষয়। মান অভিমান বা ঝগড়া না থাকলে দাম্পত্য জীবন কেমন পানসে লাগে। কিন্তু সেটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। আপনাকে দেখে বুঝদার লাগছে। আশা করি আর খুলে বলা লাগবে না।

কথাটা শেষ করে ডাক্তার উঠে দাঁড়ান। হানিয়া চুপ করে তার কথা শুনে যায়। ডাক্তারের ফিস দেওয়ার সময় মনে পরে তার কাছে কোন টাকা নেই। আবারো একবার বিব্রত অবস্থায় পরে। চোখ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কীভাবে ডাক্তারের টাকা দিবে এর উপায় খুঁজতে থাকলে। তখনই তার নজর যায় বেডসাইড টেবিলের উপর রাখা জাভিয়ানের ওয়ালেটের উপর। কোন ভাবাভাবি ছাড়াই সেটা তুলে নেয় নিজের হাতে। ওয়ালেটটা খুললে সর্বপ্রথম তার নজর যায় ওয়ালেটের এক কোণায় যত্ন করে রাখা নিজের ছবিটার দিকে

ছবিটা দেখে সে ভীষণ,, ভীষণ এবং ভীষণ অবাক হয়ে যায়। পাশে একজনকে রেখে ওয়ালেটে আরেকজনকে নিয়ে ঘুরে জাভিয়ান। বিষয়টা অবাক করার মতোই। সে কোথায় জানি শুনেছিলো,, একজন পুরুষের মনে রাজত্ব করার একটা চাক্ষুষ প্রমাণ হলো তার ওয়ালেটের এই ছোট্ট জায়গায় নিজের ছবি থাকা। তার মানে হানিয়াও জাভিয়ানের মনে রাজত্ব করে? হানিয়া নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে।

ডাক্তারকে ফিস দিয়ে বিদায় করে হানিয়া। ম্যানেজারকে বলে দেয় ভাত বা স্যুপ পাঠিয়ে দিতে আর কাউকে দিয়ে ঔষধগুলো আনিয়ে দিতে। ম্যানেজার তার কথামতো কাজ গুলো করতে চলে যায়। হানিয়া একমনে ভাবে নিজের রুমে চলে যাবে,, কিন্তু অসুস্থ জাভিয়ানকে ছেড়ে যেতেও ভয় করছে। আর জাভিয়ান টাও তার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে। অজ্ঞান হয়নি কিন্তু জ্ঞানও নেই তেমন। অগ্যাত হানিয়া জাভিয়ানের পাশে বসে তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

বিশ মিনিট পর ম্যানেজার আর একজন স্টাফ ঔষধ আর খাবার নিয়ে আসে। হানিয়া তাদের ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় করে। তারপর খাবারের প্লেটটা বেডসাইড টেবিলে রেখে জাভিয়ানকে শোয়া থেকে উঠিয়ে বেডের হার্ডবোর্ডের সাথে বালিশ দিয়ে আধশোয়া লরে বসায়। রাত অনেক হয়ে যাওয়ায় স্যুপ শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাই ভাত,,ডাল আর মাছের তরকারি দিয়ে পাঠিয়েছে ম্যানেজার। হানিয়া খাবার মাখিয়ে জাভিয়ানের মুখের সামনে ধরলে,, জাভিয়ান মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

তার এমন কাজে হানিয়ার ললাটে ভাজ পরে। পেটের থেকে মদ বের হয়ে গেলেও নেশার ভাবটা এখনো কিছুটা আছে। জাভিয়ান বিরবিরিয়ে কিছু একটা বলছে৷ হানিয়া তার মুখের কাছে কান নিয়ে গেলো শুনতে পায়, জাভিয়ান বলছে–

—খাবো না তোমার হাতে। তুমি শুধু আমায় কষ্ট দাও। খাবো না।

রাত প্রায়ই বারোটা বাজতে চললো। এখন এমন নাটক কার ভালো লাগে? তার উপর সারাদিন বাহিরে ছিলো,,এখন একটু ঘুমাবে তখনই দেখা হলো তার জীবনে হুটহাট করে চলে আসা এই ঝড়ের সাথে। এতক্ষণ ধৈর্য ধরে সবকিছুর তদারকি করলেও এখন আর হানিয়া ধৈর্য ধরতে পারে না। খাবারের প্লেটটা বিছানায় রেখে বাম হাত দিয়ে জাভিয়ানের গাল শক্ত করে চেপে ধরে ঠেসে খাবার ঢুকিয়ে দেয় তার মুখে। রাগে গজগজ করত করতে বলে–

—আমিও আপনাকে এখানে খাওয়ানোর জন্য বসে থাকবো না সারাজীবন। একসময় ভালোবেসেছিলাম সেটার টান এখনো আছে,, তাই এই এতো রাতে আলগা প্যারেগুলো নিচ্ছি। ঢং বাদ দিয়ে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসায় গিয়ে আপনার মায়ের পছন্দ করা যোগ্য মেয়ের হাতে খেয়েন।

হানিয়া রাগে এতটাই জোরে গালটা চেপে ধরেছে যে গালের মাংস দাঁতে লেগে কেটে যাওয়ার অবস্থা। জাভিয়ান হানিয়ার এমন কান্ডে অবাক হয়ে যায়। ব্যথায় ককিয়ে উঠে বলে–

—হানি ব্যথা পাচ্ছি।

—পান আপনি ব্যথা। একসময় আমাকে এর চেয়ে বেশি ব্যথা দিয়েছেন। বেশি কথা না বলে খাবার শেষ করুন,,নাহলে খবর খারাপ করে ছাড়বো আজ।

হানিয়ার এমন রাগ দেখে জাভিয়ান সত্যিই ভয় পেয়ে যায়। চুপচাপ একের পর এক লোকমা মুখে নিতে থাকে। জাভিয়ান ভদ্রলোকের মতো খাচ্ছে দেখে হানিয়া তার হাত ছেড়ে দেয়। বেশি করে লেবু চিপকে একদম টকটক করে ফেলেছে ভাত হানিয়া। জাভিয়ান চিবানো ছাড়াই শুধু গিলছে গপাগপ। আমরা বাঙালি,, ভাত ছাড়া কি আর চলে। পুরো একদিন পর পেট ভরে খেলো। খেয়ে যেনো জাভিয়ানের জ্ঞান আর শক্তি দুটোই ফিরে এসেছে।

হানিয়া খাওয়ানো শেষ হলে হাত ধুয়ে ঔষধগুলো জাভিয়ানকে বের করে দেয়। জাভিয়ানের সব কাজ শেষ হলে হানিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে–

—দরজা লক করে শুয়ে পরুন।

কথাটা বলেই সে হাঁটা শুরু করে। জাভিয়ান তার যাওয়া দেখে একটা বাঁকা হাসি দেয়। আনমনেই বলে–

—এতো সহজে চলে যেতে দিবো আমি তোমাকে? বিষয়টা কেমন দেখায় না।

কথাটা বলেই জাভিয়ান একপ্রকার লাফ দিয়ে বেড থেকে নেমে ধপাধপ পা ফেলে হানিয়ার কাছে যায়। হানিয়ার ডান হাত টেনে ধরে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে একটু ঝুকে হানিয়ার হাঁটুর পেছনে হাত দিয়ে ঝট করে কাঁধে তুলে নেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হানিয়া স্তব্ধ হয়ে যায়। জাভিয়ান হানিয়াকে কাঁধে করে বেড পর্যন্ত নিয়ে আসে। তারপর ধপ করে হানিয়াকে বেডে ফেলে দেয়।

বেডের ম্যাট্রেস যথেষ্ট নরম হওয়া সত্বেও হুট করে ফেলায় হানিয়া কোমড়ে কিছুটা ব্যথা পায়। একহাত কোমড়ে দিয়ে ব্যথায় বলে উঠে –

—আহ মাাাাাাা,,,কোমড় গেলো আমার।

জাভিয়ান তার শার্টের বাটান খুলতে খুলতে বলে–

—মাত্র তো কোমড় গেলো। এরপরে তোমার নিজের উপর থেকে নিজের রাজত্বও চলে যাবে,,সেখানে রাজত্ব করবে শুধু আমি,,জাভিয়ান তালুকদার।

কোমড় ব্যথার মাঝেও জাভিয়ানের এমন কথা ঠিকই শ্রবণ করে হানিয়া। জাভিয়ানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আর শার্ট খোলা দেখে হানিয়া একটা শুকনো ঢোক গিলে,,তার অবচেতন মন প্রশ্ন করে উঠে –

—খাইয়েদাইয়ে সুস্থ করে কি নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলাম?

শব্দসংখ্যা~২০৬১
~চলবে?

[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং মাই লাভিং রিডার্স 🌹🫶]