প্রতিশোধের অঙ্গীকার ২ পর্ব-০৪

0
206

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#Season_2
#পর্ব_০৪

[পর্বটা একটু রোমান্টিক। একটু না বেশিই রোমান্টিক।😬 যাদের রোমান্টিক পর্ব ভালো লাগে না তারা প্লিজ স্কিপ করবেন।]

বিরতিহীন ভাবে ফোনের রিংটোন বাজার শব্দে জাভিয়ানের ঘুমটা ভেঙে যায়। ঘুমের ঘোরে বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেলে। চোখ বন্ধ রেখেই বিরবির করে বলে–

—যে ফোন করেছিস আজ তার চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে তারপর দম নিবো। আমার স্বাধের ঘুম টার সাথে তোর এমন মীরজাফরি মার্কা শত্রুতা একদম ছুটিয়ে দিবো।

কথাটা বিড়বিড়িয়ে হাত হাতড়ে হাতড়ে ফোনটা খুজতে থাকে। বালিশের পাশে পায় ফোনটা,, একচোখ খুলে ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। ভয়াবহ এক ধমক দিয়ে বলে–

—এই কোন শালা রে তুই? সাতসকালে ফোন দিয়ে আমার শান্তির ঘুমের মাথা খেলি কেন?

ফোনের অপর পাশে থাকা রাশেদ এমন বিশাল সাইজের ধমক খেয়ে মুখ গোমড়া করে ফেলে। বিবশ মুখে বলে–

—স্যার আমি আপনার শালা না আপনি আমার শালা।

জাভিয়ান ঘুমের ঘোরেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে। কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নাম্বারটা দেখে। রাশেদের নাম্বার দেখে আবার কানে লাগিয়ে বলে–

—কি হয়েছে? এত সকালে ফোন দিয়েছো কেন?

—স্যার সাড়ে এগারোটা এত সকাল হয়? একটু পর দুপুর হবে। বারোটায় আমাদের একটা মিটিং আছে,, ভুলে গেছেন সেটার কথা? আমি আপনাকে হোটেল থেকে পিক করতে আসছি।

সাড়ে এগারোটা বাজছে শুনে জাভিয়ান তড়াক করে শোয়া থেকে উঠে পরে। চোখ ঘুরিয়ে বিছানার দিকে তাকালে দেখতে পায় সে ব্যতীত আর কেউ নেই। হানিয়া,, তার বউ কই? নাকি সে স্বপ্ন দেখেছিলো কাল রাতে? কিন্তু এতটা জীবন্ত হয় স্বপ্ন? কাল হানিয়া তার কত যত্ন নিলো,,শেষে জাভিয়ানও তার প্রিয়তমাকে কতটা আদর দিলো? এসবই কি জাভিয়ানের স্বপ্ন ছিলো? প্রশ্ন অনেক কিন্তু উত্তর জানা নেই জাভিয়ানের।

সেফোন কানে রেখেই পুরো রুম খুঁজতে খুঁজতে বলে–

—রাখ তুই তোর মিটিং। এইদিকে আমার বউ আবার হারায় গেছে,,আমি সেটা নিয়ে চিন্তার মরছি।

কথাটা বলেই জাভিয়ান ফোনটা খট করে কেটে দিয়ে বিছানায় ছুঁড়ে মেরে বেলকনির দিকে যায়। না ওয়াশরুম,, না বেলকনি কোথাও নেই হানিয়া। এবার জাভিয়ান ভয় পেয়ে যায়। নিচ থেকে শার্ট তুলে তা গায়ে দিয়ে বাটান গুলো লাগাতে লাগাতেই রিসেপশনের দিকে দৌড় লাগায়।

হাঁপাতে হাঁপাতে রিসেপশনিস্টের কাছে এসে জিজ্ঞেস করে–

—হানিয়ার রুম নাম্বার কতো?

রিসেপশনে থাকা মেয়েটি জাভিয়ানের এমন কাজে থতমত খেয়ে ভ্যাবলার মতো জাভিয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেয়েটি প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না দেখে জাভিয়ানের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ধমক দিয়ে বলে–

—আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে বলি নি। যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর দিন।

মেয়েটি জাভিয়ানের ধমক খেয়ে নিজের ধ্যানে ফিরে। মেয়েটি বলে–

—স্যার এভাবে একজন গেস্টের রুম নাম্বার আমি আপনাকে জানাতে পারবো না। এটা আমাদের হোটেলের রুলসের বর্হিভূত। আপনি যার খোঁজ করছেন সে যদি আমায় ফোন দিয়ে বলে রুম নাম্বারটা বলতে তাহলে আমি বলতে পারি। নাহলে দুঃখিত আমি আপনার সাহায্য করতে পারলাম না।

জাভিয়ানের মেজাজের পারদ তো তড়তড় করে বেড়েই চলছে। এই বান্দরের মতো একটা বউ তাঁকে যে আর কত নাচাবে আল্লাহ মালুম। জাভিয়ান বড়বড় নিশ্বাস ভেতরে নিয়ে বাহিরে ছাড়ে। রাগ কন্ট্রোল করার একটা ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা তার। তারপর ভীষণ নরম গলায় বলে–

—দেখুন মিস,, আমার ওয়াইফ রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে। ভীষণ অভিমানী সে। এখন আমি যদি সময়ের মধ্যে তার অভিমান না ভাঙাতে পারি তাহলে সে হয়ত দূরে কোথাও চলে যাবে আবারো। প্লিজ একটু বুঝার চেষ্টা করুন। আপনি প্লিজ তার রুম নাম্বারটা আমায় বলুন।

জাভিয়ান এক প্রকার আকুতি করেই কথাগুলো বলে। রিসেপশনিস্ট মেয়েটির ভীষণ মায়া হয়। কিন্তু তারও যে হাত-পা বাঁধা। মেয়েটি নিজেও আকুতি নিয়ে বলে–

—আমি বুঝতে পারছি স্যার কিন্তু আমারও যে হাত-পা বাঁধা। ম্যানেজার স্যার যদি জানতে পারেন আমি এমন একটা কাজ করেছি তাহলে আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিবে ।

এবার জাভিয়ান আর নিজের রাগ আটকে রাখতে পারে না। সে চিৎকার করে বলে–

—ডাক তোর ম্যানেজারকে,,উনি যদি পারমিশন দেয় তাহলে তো বলতে পারবি?

মেয়েটি জাভিয়ানের এমন চিৎকার করে বলায় ভয় পেয়ে যায়। ম্যানেজারও দৌড়ে আসে জাভিয়ানের চিৎকার শুনে। এসেই জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। তখন রিসেপশনিস্ট মেয়েটি তাকে সবটা খুলে। ম্যানেজারও রুম নাম্বার জানাতে অস্বীকার করলে জাভিয়ান তাদের নিজের পাওয়ারের ভয় দেখায়। বলে তাদের হোটেল বন্ধ করে দিবে। জাভিয়ানের হুমকি ধমকিতে ম্যানেজার রাজি হয় তাকে জানাতে। রিসেপশনিস্ট গেস্টদের এন্ট্রি চেক করে দেখে “হানিয়া” নামের কয়েকজন আছে। এই কথা জানালে জাভিয়ান বলে–

—হানিয়া তালুকদার নামের কেউ আছে কি-না?

রিসেপশনিস্ট লিস্টে চেক করে দেখে হানিয়া তালুকদার নেই কিন্তু মির্জা নামের একজন ছিলেন। কিন্তু সে আজ সকালেই চেক আউট করে নিয়েছেন। এই কথাটাও সে জাভিয়ানলে জানায়। হানিয়া চেক আউট করে নিয়েছে শুনে জাভিয়ান আবারও ভেঙে পরে। মেয়েটাকে পেয়েও কি হারিয়ে ফেললো??

এতক্ষণে রাশেদও এসে পরেছে। সে পেছনে দাঁড়িয়ে সব অলরেডি শুনে ফেলেছে। তার কেন জানি জাভিয়ানের কথায় বিশ্বাস হচ্ছে না। সে জাভিয়ানের কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে–

—কি হয়েছে স্যার? এনিথিং রং?

জাভিয়ান হতাশ হয়ে রিসেপশন এরিয়ায় রাখা সোফায় ধপ করে বসে পরে। দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে। রাশেদ জাভিয়ানের থেকে কোন উত্তর না পেয়ে হোটেল ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে ঘটনা। এটা সেই গতকাল রাতের ম্যানেজার। সে গতকাল রাত থেকে আজ জাভিয়ানের জিজ্ঞেসবাদ সব কিছু খুলে বলে। রাশেদ সবটা শুনে অবাক হয়ে যায়। এত সহজে খুজে পেয়ে আবার হারিয়েও ফেললো? ভাগ্য এবার একটু বেশিই নির্দয় হয়ে পরছে না জাভিয়ানের প্রতি?

রাশেদ ম্যানেজারের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চায় এই হানিয়া মির্জাই তাঁদের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটি কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। ম্যানেজার প্রথমে গাইগুই করলেও পরে দেখাতে সম্মতি দেয় ফুটেজ। ফুটেজে রাশেদ দেখতে পায়,, সকাল ৮টার দিকে হানিয়া বেশ কয়েকজন মহিলা ও পুরুষের সাথে হোটেল থেকে বের হচ্ছে। সকলে খালি হাতে বের হলেও হানিয়ার হাতে একটা লাগেজ। বুঝাই যাচ্ছে তার লাগেজ এটা। পরবর্তীতে সকলে দুটো টিমে ভাগ হয়ে দু’টো মিনিভ্যানে চড়ে নিজেদের গন্তব্যে রওনা হয়।

এই বিষয়টা রাশেদকে ভীষণ অবাক করে। হানিয়ার সাথে বাকিদের সে চিনতে পারে না। সে অবশ্য তাদের ফ্যামিলির কাউকেই চিনে না তেমন। হানিয়ার সাথে থাকা মানুষ গুলো জাভিয়ানেরও চেনা নাকি বিষয়টা জানতে সে ল্যাপটপে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে জাভিয়ানকে দেখায়। রাশেদ জাভিয়ানের দিকে ল্যাপটপটা দিয় বলে–

—দেখেন তো স্যার ম্যামের পাশে থাকা লোকদের চিনেন নাকি আপনি?

জাভিয়ান পুরোটা ফুটেজ দেখে ভালো করে। পরবর্তীতে জানায় সে এদের মধ্যে কাউকেই চিনে না। তাহলে এরা কারা? বিষয়টা জানতে তারা আবার ম্যানেজারকে ধরে। পরবর্তীতে ম্যানেজার যা জানায় তা শুনে তাদের দু’জনের হুঁশই উড়ে যায়।

______________________

সময় এখন বিকেল পাঁচটা। মিটিং শেষ নিজের চেয়ারে গা এলিয়ে দেয় জাভিয়ান। ক্লান্ত লাগছে ভীষণ। এই ক্লান্তি সেই নিষ্ঠুর রমণীই দূর করতে পারবে একমাত্র। চোখ বন্ধ করে মনে মনে সেই রমণীকে নিয়ে ভাবতে থাকে নানান কথা। ভাবতে ভাবতে হঠাৎই তার বন্ধ চোখের পাতায় ভেসে উঠে কাল রাতে তার নিজের করা পাগলামিগুলোর কথা।হানিয়াকে অনেকটা আপন করে নিতে গিয়েও ফিরতে আসতে হয়েছিলো মাঝ পথেই। কেনো? তাহলে যে জানতে হবে কি হয়েছিলো কাল রাতে।

গতকাল রাতে~~~

জাভিয়ান তার শার্ট খুলে ছুড়ে ফেলে দূরে কোথাও। হানিয়া জাভিয়ানের এমন কান্ডে ভয় পেয়ে যায়। সে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে জাভিয়ান লাফ দিয়ে বেডে এসে তাঁকে নিজের চার হাত পায়ের মাঝে বন্দি করে নেয়। হানিয়ার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে।

সে সাহস করে নিজের কাঁপতে থাকা হাতজোড়া দিয়ে জাভিয়ানকে দূরে সরিয়ে দিতো চায়। কিন্তু জাভিয়ান এবারও তার পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দেয়। জাভিয়ান হানিয়ার দুই হাতের আঙুলের মাঝে নিজের আঙুল গুলো ডুবিয়ে দিয়ে বেডের সাথে চেপে ধরে হানিয়ার হাত। হানিয়ার শরীর এবার অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপতে থাকে। জাভিয়ান নিজের মুখটা একদম হানিয়ার মুখের কাছে নিয়ে আসে। গভীর চোখ দিয়ে হানিয়ার মুখটা পুরোটা স্ক্যান করে কয়েকবার।

হানিয়া জাভিয়ানের এমন দৃষ্টি দেখে অস্বস্তিতে পরে যায়। জাভিয়ান তার মুখ আরো এগিয়ে নিয়ে এসে হানিয়ার ললাটে গভীরভাবে নিজের পুরুষালী ওষ্ঠের স্পর্শ দেয়। অদ্ভুত ভাবে হানিয়ার সব কাঁপাকাঁপি,, ভয় দূর হয়ে যায়। একদম নদীর পানির মতো শান্ত হয়ে যায় সে। জাভিয়ান আগে থেকেই অবগত কিভাবে তার রমণীকে শান্ত করতে হয়। হানিয়ার এই শান্তভাব জাভিয়ানকে যেন আরো উৎসাহিত করে তুলে তাকে ভালোবাসতে। তাঁকে গভীর ভালোবাসায় ডুবিয়ে দিতে।

মিনিট খানেকের মতো হানিয়ার ললাটে ওষ্ঠ স্পর্শ দিয়ে জাভিয়ান এবার নেমে আসে তার চোখে। সেখানেও সময় নিয়ে আদর দেয়। পরপর কপোল,, থুতনি বলতে গেলে হানিয়ার পুরো মুখে আদর দিতে থাকে। ক্রমেই হানিয়ার নিঃশ্বাস ভারী হতে শুরু করে। জাভিয়ানের যে হয়নি তা কিন্তু না। তার শরীরের শিরা উপশিরায় যেন হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে।

সবশেষে বাকি থাকে হানিয়ার ওষ্ঠ। জাভিয়ান হানিয়ার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে দেখে হানিয়া দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে। বিষয়টা তার ভালো লাগে না। আজ পর্যন্ত সে একটা কামড় দিতে পারলো না,,সেখানে তার জিনিসের উপর এমন অত্যাচার। জাভিয়ান হানিয়ার একটা হাত উন্মুক্ত করে হানিয়ার ঠোঁট স্পর্শ করে। বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে কয়েকবার স্লাইড করে ঠোঁটটা ছাড়িয়ে নেয় হানিয়ার দাঁত থেকে।

অনেকটা ফিসফিসানির মতো করে বলে–

—আমার জিনিসে অন্যকারো হস্তক্ষেপ আমার কোন কালেই পছন্দ ছিলো না। এখনো নেই।

কথাটা বলে সেকেন্ডের ব্যবধানে হানিয়ার ওষ্ঠ নিজের অধীনে নিয়ে নেয়। আকস্মিক এমন হওয়ায় হানিয়ার মুক্ত থাকা হাতটা দিয়ে খামচে ধরে জাভিয়ানের ঘাড়ের পেছনের চুলগুলো। কোন তাড়াহুড়ো ছাড়াই বিনিময় হতে থাকে গভীর ভালোবাসা। এতগুলো বছর পর প্রিয়তমের এমন ভালোবাসাময় স্পর্শে হানিয়া কিছু সময়ের জন্য ভুলে যেতে থাকে তাদের অতীত,,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। মন,,মস্তিষ্ক আর শরীর শুধু এই একজনের স্পর্শ পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে উঠে। জাভিয়ান আস্তে আস্তে নিজের অর্ধেক ভাড় ছেড়ে দেয় হানিয়ার উপর।

সেকেন্ড পেরিয়ে মিনিট হয়ে যায়। সময় বইতে থাকে নিজের মতো,, কিন্তু কেউ কাউকে মুক্ত করছে না বা করার তাগিদ দেখাচ্ছে না। দেখাবে কেন? তারা দু’জনই তো ভালোবাসার মানুষটির থেকে ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। জাভিয়ান ঘোরের মধ্যে হানিয়ার অপর হাত টাও মুক্ত করে দিলে হানিয়া এবার জাভিয়ানের উন্মুক্ত পিঠ খামচে ধরে। হানিয়ার আঙুলের হালকা মাঝারি সাইজের নখ ডাবিয়ে দেয় একদম পিঠে। কিন্তু জাভিয়ানের সেসব দিকে নজর নেই। বরংচ,,হানিয়ার দেওয়া এই ক্ষীণ পীড়াই যেন জাভিয়ানের ধৈর্যের সকল বাঁধ ভেঙে দেয়। উন্মাদের মতো শুষে নিতে থাকে হানিয়ার ওষ্ঠসুধা।

একসময় হানিয়ার শ্বাস ফুলে উঠে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হতে থাকে। কিন্তু জাভিয়ান তো তখনও নিজের মতো উন্মাদ হয়ে আছে। আদো আদো করে চোখ খুলে হানিয়া। দেখতে চায় প্রাণপ্রিয় পুরুষটির করা উন্মাদনা। মন ভরে দেখে নেয় তার প্রতি জাভিয়ানের উন্মাদনা। শ্বাস নিতে অস্বাভাবিক রকম কষ্ট হওয়ায় এবার হানিয়া ছটফট করতে শুরু করে। জাভিয়ানের ঘাড়ের পেছনের চুলগুলো আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে জাভিয়ানকে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছু তো হয় না উল্টো আহত হতে হয় তাঁকে।

নিজের কাজে ব্যাঘাত ঘটা এবং তার জিনিসে অযাচিত অত্যাচার করার কারণে জাভিয়ান এবার তার তীক্ষ্ণ ধারালো দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে হানিয়ার ঠোঁট। নিজের রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে বল প্রয়োগ করে,, যতক্ষণ না নোনতা অনুভব হয় মুখের মধ্যে। বুঝতে বাকি থাকে না ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে গেছে হানিয়ার।

শুরুতে হানিয়া ব্যথায় ছটফট করলেও একসময় থেমে যায়। নিজের সবটা রাগ প্রকাশ করে হানিয়ার ঠোঁট থেকে দাঁত সরায় জাভিয়ান। চোখ তুলে হানিয়ার দিকে তাকালে দেখতে পায় হানিয়ার বন্ধ চোখের কোল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরেছে। চোখ থেকে নজর সরিয়ে ঠোঁটের দিকে তাকালে দেখে সেখান থেকেও রক্ত গড়াচ্ছে। হানিয়ার চোখের অশ্রু আর ওষ্ঠের রক্ত দু’টোই জাভিয়ানের বুকে জ্বালা ধরিয়ে দেয়। এতগুলো বছর পর একটু আদর দিলো তাও এমন কাঁদিয়ে,, রক্তাক্ত করে? নিজের প্রতিই এবার রাগ হলো জাভিয়ানের।

হানিয়ার ঠোঁট থেকে সরে মুখ নিয়ে আসে তার গলদেশে। সেখান টায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে কিছু খুচরো আদর দিতে দিতে নিজেকে শান্ত করতে থালে জাভিয়ান। ওষ্ঠ ভালোবাসার মতো শুরুতে মিষ্টিমধুর স্পর্শ থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তা পীড়াদায়ক হতে শুরু করে। হানিয়ার গলায় মুখ ডুবিয়েই জাভিয়ান তার এক হাত হানিয়ার পিঠের কাছে নিয়ে তার জামার চেইন খুলতে শুরু করে। চেইনটা অর্ধেক খোলার পর হঠাৎই হানিয়ার অচল প্রায় মস্তিষ্কে যেন সচল হতে শুরু করে।

এতক্ষণ সুখের সাগরে ভেসে গিয়ে সে বাস্তবতা ভুলে গিয়েছিলো। সে ভুলেই গিয়েছিলো জাভিয়ান আর তার ডিভোর্স হয়ে গেছে এবং জাভিয়ান বর্তমানে অন্য একজনের স্বামী। কথাটা মনে পরতেই হানিয়া তার মুক্ত হাতদ্বয় দ্বারা জাভিয়ানকে ধাক্কা দিতে থাকে। জাভিয়ান হানিয়ার ঘোরে ডুবে ছিলো। হানিয়ার ধাক্কাধাক্কিতে আগের ন্যায় বিরক্ত হওয়ায় এবার সে হানিয়ার দুই হাত নিজের একহাতের মধ্যে বন্দি করে নেয়।

অপর হাত দিয়ে হানিয়ার কাঁধ থেকে জামা সরিয়ে সেখানে মুখ ডুবিয়ে দেয়। তার উদ্দেশ্য আজ হানিয়াকে পুরোপুরি নিজের করে নেওয়া। হানিয়া নিজের হাত ব্যবহার করতে না পারায় এবার মুখ খুলে। অনেকটা আকুতির মতো করে বলে–

—এসব ঠিক হচ্ছে না মি.তালুকদার। আপনি ভুল করছেন। প্লিজ থামুন।

জাভিয়ান হানিয়ার কাঁধে মুখ রেখেই ঘোর নিয়ে বলে–

—হুশশ! মি. তালুকদার না জাভিয়ান। শুধু জাভিয়ান,, তোমার জাভিয়ান। প্লিজ একবার তোমার মুখে নিজের নামটা শুনতে চাই। জান বলো জাভিয়ান।

—না আপনি আমার না মি.তালুকদার। আপনি সোহার। ভুলে গেছেন আমার আর আপনার ডিভোর্সের কথা? আপনার আর সোহার বিয়ের কথা?
সরুন মি.তালুকদার। এভাবে আপনি আপনার স্ত্রীকে ঠকাতে পারেন না। এটা পাপ। অন্যায় হচ্ছে এটা।

জাভিয়ানের না পছন্দ হয় হানিয়ার কথা আর না-ই হানিয়ার মোচড়ামুচড়ি। নিজের কাজে বারংবার ব্যাঘাত ঘটান জাভিয়ান এবার না চাইতেও নিজের রাগের বহিঃপ্রকাশ করে ফেলে। ঠোঁটের ন্যায় হানিয়ার কাঁধেও সজোরে কামড়ে ধরে। ব্যথায় হানিয়া কুঁকড়ে যায়। সহ্য করতে না পেরে শব্দ করে কেঁদে দেয়।

হানিয়ার কান্না যেনো জাভিয়ানকে নিজের ধ্যানে ফেরায়। হানিয়ার কান্না যেন তার বুকে শতশত খঞ্জরের আঘাত দেয়। হানিয়ার কাঁধ ছেড়ে দিয়ে তড়াক করে তার উপর থেকে নিজের ভড় সরিয়ে নেয়। হানিয়ার দিকে তাকালে দেখতে পাশ হাপুস নয়নে কাঁদছে হানিয়া। নিমিষেই জাভিয়ানের মাথা উলোট পালোট হয়ে যায়। বারংবার তার দ্বারা আঘাত পেয়ে হানিয়ার কেঁদে উঠা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

হানিয়ার হাত দুটো মুক্ত করে দিয়ে অস্থির হয়ে প্রশ্ন করে–

—জান ব্যথা পেয়েছো?আমি সরি কলিজা। ভীষণ ভীষণ সরি। আমি তোমায় কষ্ট দিতে চায় নি কিন্তু কেমনে কেমনে জানি হয়ে গেলো। আই এম সরি হানি। দেখি কই ব্যথা পেলে?

কথাগুলো বলে জাভিয়ান নিহেই চেক করতে থাকে হানিয়ার কাঁধ। হানিয়ার ডান কাঁধের একটা বড় জায়গা জুড়ে নিজের দাঁতের আঘাত দেখে জাভিয়ানের অন্তর ব্যথিত হয়। কি করবে কি করবে ভেবে না পেয়ে পুনরায় মুখ ডুবিয়ে চুমু দিতে থাকে। তার ধারণা তার চুমুতে হানিয়ার ব্যথা কমে যাবে।

নিজেকে মুক্ত পেয়ে এবার হানিয়া একচুল সময়ও অপচয় করে না। সর্বশক্তি দিয়ে জাভিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর নিজেও গড়িয়ে বেডের অপর পাশ দিয়ে বেড থেকে নেমে যায়। বিষয়টা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে যায় যে জাভিয়ানের মস্তিষ্ক বিষয়টা সাথে সাথে বুঝতে পারে না। কিন্তু যতক্ষণল বুঝতে পারে ততক্ষণে হানিয়া তার জামা ঠিক করে দরজার দিকে ছুট লাগিয়েছে।

জাভিয়ানও তার পেছন পেছন ছুট লাগিয়ে তাঁকে পুনরায় নিজের বাহুডোরে নিয়ে আসে। হানিয়া ছটফট করে সেখান থেকে সরে আসতে চাইলে জাভিয়ান তাকে বেডে এনে ফেলে। হানিয়াকে নিজের আয়ত্তে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু এবার কিছুতেই হানিয়া তার আয়ত্তে আসে না। বরং হানিয়া নিজেকে মুক্ত করতে না পেরে শব্দ করে কাঁদতে থাকে যা জাভিয়ানের বুকে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে জাভিয়ান হানিয়াকে ধমকে বলে–

—সমস্যা কি? এমন করছো কেন?

—ছাড়ুন আমাকে। আপনি ভুলে গেছেন আমাদের ডিভোর্সের কথা। আপনি পরপুরুষ হয়ে আমায় এভাবে অপবিত্র করতে পারেন না।

অপবিত্র? জাভিয়ানের স্পর্শ হানিয়াকে অপবিত্র করছে? এটাই হানিয়া মনে করে? জাভিয়ান হানিয়ার কথা শুনে ভীষণ কষ্ট পায়। কিন্তু পরক্ষণেই তার এটা মনে পরে যে,,হানিয়া জানে না সেদিন তাদের ডিভোর্স হয় নি এই বিষয়টা। জাভিয়ান হানিয়াকে বিষয়টা জানানোর জন্য বলে–

— আমাদের কোন কালেই ডিভোর্স হয়নি। ঐ পেপার্সগুলো জাস্ট তোমায় একটু কষ্ট দেওয়ার জন্য ছিলো আর সোহার সামনে নাটক করার জন্য। তুমি আমার জন্য হালাল হানিয়া। আমার বউ তুমি আজও। প্লিজ এমন করে না বউ।

হানিয়ার মনে হয় জাভিয়ান এসবই বানিয়ে বলছে। সে আরো উচ্চস্বরে কেঁদে বলে–

—না আপনি মিথ্যা বলছে। প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন। আমায় যেতে দিন।

হানিয়া এমন ভাবে আকুতিমিনতি করছে যেন জাভিয়ান তাকে ধ**র্ষণ করছে। যেমনটা একজন ভিক্টিম একজন রে**পিস্টের কাছে করে। জাভিয়ানের সহ্য হয় না হানিয়ার এমন আকুতিভরা কান্না ও কথা। সে হানিয়াকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসে। হানিয়াও ছাড়া পেয়ে তড়াক করে শোয়া থেকে বসে যায়। হাত-পা তার আগের চেয়েও দ্বিগুণ হাড়ে কাঁপছে।

বেড থেকে নামতে চাইলে জাভিয়ান তার হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে পুনরায় শুইয়ে দেয়। তারপর নিজেও হানিয়ার বুকের উপর মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। হানিয়া তাকে সরানোর চেষ্টা করলে জাভিয়ান এবার সিরিয়াস রেগে যায়। বুক থেকে মাথা উঠিয়ে হানিয়ার চোয়াল একহাত দিয়ে চেপে ধটে রেগে হিসহিসিয়ে বলে–

—আজকের জন্য যথেষ্ট করেছো,, এবার থামো। চুপচাপ ঘুমাতে দাও। নাহলে যেটা করতে চেয়েছিলাম সেটা করেই তবে নিবো।

হানিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বলে–

—আ..মি নিজের রুমে চলে যাই। তার পরে আপনি ঘুমান।

–তোমাকে তোমার রুমে যেতে দেই তারপর তুমি আবার পালাও আমার থেকে,,তাই না? সেটা তো হচ্ছে না। একবার যখন তোমায় ফিরে পেয়েছি নিজের দেহে প্রান থাকতে আর ছাড়ছি না। ভেবো না অসুস্থ তাই ছাড় পেয়ে গেছো। এই শরীরে এখনো যেই স্ট্যামিনা আছে তা দিয়ে তোমায় আগামী এক সপ্তাহ বিছানায় রাখতে সক্ষম। কিন্তু না,,আমি এখনি তোমায় নিজের করবো না। আমার কথা প্রমাণ করে তবেই তোমাকে পূর্ণ অধিকারে নিজের করবো। কিন্তু আজ তুমি যেটা করলে আর বললে সেটার জন্য একদিন তুমি ভীষণ লজ্জিত হবে। মিলিয়ে নিও।

জাভিয়ান হানিয়ার চোখে চোখ রেখে কথাগুলো বলে। হানিয়া জাভিয়ানের কথার দৃঢ়তা দেখে বিভ্রান্তিতে পরে যায়। এতটা দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে কেউ মিথ্যা বলতে পারে না। তাহলে জাভিয়ান যা বলছে তাই সত্যি? কথাটা মনে হতেই তার বুকটা কেঁপে উঠে। চোখ তুলে জাভিয়ানকে দেখে যে কিনা বর্তমানে তারই বুকে আয়েশ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জাভিয়ান গমগমে আওয়াজে বলে —

—মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।

কথাটা একপ্রকার ধমকের মতোই শোনা যায়। হানিয়া ভয় পেয়ে সাথে সাথে জাভিয়ানের চুলে হাত ডুবিয়ে দেয়। আলতো হাতে টেনে দিতে থাকে। জাভিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে এক পর্যায়ে সেও ঘুমিয়ে পরে।

বর্তমান~~~

কারো ডাকে জাভিয়ান ধ্যান ভঙ্গ হয়। চোখ খুলে দেখে রাশেদ এসেছে। সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে–

—স্যার কাজটা হয়ে গেছে।

কথাটা শুনে জাভিয়ানের মুখে একটা বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ারের পেছনে ঝুলিয়ে রাখা কোর্ট হাতে নিয়ে যেতে যেতে যেতে বলে–

—চলো অবাধ্য পাখির উড়াউড়ি থেমে আসবে এবার,
বন্দি হবে সে, তড়পাতে থাকবে আমার ঠিক করে দেওয়া আকাশ সীমার মাঝে।

শব্দসংখ্যা~২৭০০
~চলবে?

[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং মাই লাভিং রিডার্স 🫶🖤]